ঈদের চাঁদ দেখার বিধান,,,,, এবং চাঁদ দেখার পর আমাদের কিছু করণীয় ।
লিখেছেন লিখেছেন ক্রুসেড বিজেতা ০৫ জুলাই, ২০১৬, ০৭:৫০:৩৪ সন্ধ্যা
তোমার নিকট যদি জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম” [ সূরা বাকারা : ১৮৯]
তোমরা (রমজানের) চাঁদ দেখে রোজা শুরু করবে এবং (ঈদের) চাঁদ দেখেই রোজা ছাড়বে। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় (এবং চাঁদ দেখা না যায়) তাহলে মাসের ৩০ দিন পূর্ণ করে। অর্থাত্ আকাশ পরিচ্ছন্ন না থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ করত রমজানের রোজা রাখা শুরু করবে।—সহিহ বুখারি ১/২৫৬, হাদিস : ১৯০৬
ইসলামী দুনিয়ায় চাঁদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ইসলাম তারিখ নির্ধারণ করে হিজরি সাল হিসেবে আর হিজরি সালটি আবর্তিত হয়েছে চাঁদকে কেন্দ্র করে। যেমন ইংরেজি ও বাংলা সাল সূর্যকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত হয়েছে। মুসলমানদের জন্য চাঁদের উদয়-অস্তে অনেক কিছু নিয়ে আসে। রোজা রাখার স্বর্গীয় আনন্দ, দুই দুটি ঈদ ও বিভিন্ন সময় অনেক এবাদত চাঁদকে ঘিরেই হয়। তাই চাঁদ কখন উদয় হচ্ছে বা কখন অস্ত যাচ্ছে তার খবর রাখা মুসলমানদের ওপর কর্তব্য।
যদি তার সঠিক হিসাব না রাখা হয় তাহলে আল্লাহর অনেক হুকুম পালন করতে সমস্যা সৃষ্টি হবে। মুসলমানের কাজই তো আল্লাহর হুকুমগুলো খুঁজে খুঁজে পালন করা।
রমজান ও ঈদের চাঁদ তো অতি অবশ্যই দেখব অন্য চাঁদেরও খবর রাখা প্রয়োজন। আসলে চাঁদ যেমন তার জ্যোৎস্না ছাড়িয়ে দেয় পৃথিবীর বুকে দুনিয়াটিকে রুপালি আলোয় আলোময় করে তুলে তেমনি কোনো কোনো চাঁদ মুমিনের হৃদয়ের জমিনে ছড়িয়ে দেয় স্নিগ্ধ আলো। জেগে তুলে স্বর্গীয় অনুভূতি। অনেক পঙ্কিল হৃদয়ও তার আলোয় আলোকিত হয়ে জান্নাতের পথে চলে। স্রষ্টাও ওই সময়গুলোতে বান্দাকে তার রহমত দিয়ে সিক্ত করে। পূরণ করে বান্দার চাওয়া-পাওয়া। ক্ষমা করে তার অতীতের সব দোষ ও পাপ। হ্যাঁ, তবে চাঁদ দেখা ছাড়া রোজাও রাখা যাবে না আবার ঈদও করা যাবে না। যে এলাকা বা যে দেশে চাঁদ দেখা দেবে ওই চাঁদ ওই এলাকার ওই দেশের জন্য বলে প্রযোজ্য হবে। এক দেশে চাঁদ দেখা দিলে তা সব দেশের চাঁদ হবে না। এটাই শরিয়তের সিদ্ধান্ত।
পশ্চিম আকাশে কোনো মেঘ বা অন্য কোনো চাঁদকে আড়াল করে তা না থকলে অনেক লোকে দেখার সাক্ষ্য দিতে হবে। আর থাকলে রোজার ক্ষেত্রে সত্যবাদী দ্বীনদার একজনের কথাই যথেষ্ট হবে। ঈদের ক্ষেত্রে দু’জন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলা যথেষ্ট হবে। গ্রামে ও শহরে বিশেষ করে রোজা ও ঈদের চাঁদ মানুষ ঘটা করে দেখে। তা দেখতে আনন্দও আছে। যে চাঁদের সঙ্গে কোনো ফরজ আমল সংযুক্ত নেই তা দেখা সুন্নাত আর যে চাঁদের সঙ্গে ফরজ আমল সংযুক্ত আছে তা দেখা ও তার খোঁজ-খবর রাখাও ফরজের সমতুল্য
ঈদের চাঁদ দেখার পর আমাদের করণীয়-
যে কোনো মাসের নতুন চাঁদ, এমনকি রোজা ও ঈদের চাঁদ দেখার দোয়া একটিই—
1*) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়া পড়তেন—
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহল্লিহু আলাইনা বিলয়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলাম। রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এই চাঁদকে সৌভাগ্য ও ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আল্লাহই আমার ও তোমার রব।—জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫১।
2*) ঈদের আগের দিন সূর্যাস্ত থেকে শুরু করে ঈদের সালাত আদায় করা পর্যন্ত তাকবীর তথা ‘আল্লাহু আকবর’’ বলতে থাকা। এ হচ্ছে বিশ্ববাসীর সামনে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যাপূর্ণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য ‘আল্লাহ মহান’ বলে ঘোষণা দাও এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’ [সূরা আল- বাকারাহঃ ১৮৫]
তাকবীরের শব্দগুলো হল: ‘‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’’ পুরুষরা মসজিদে, বাজারে ও ঘরে এ তাকবীর ধ্বনি জোরে দিতে থাকবে। আর মহিলারা তাকবীর বলবে আস্তে।
3*) যাকাতুল ফিতর প্রদান করা, রোযাদারের যে ভুল-বিভ্রান্তি ও পাপ হয়েছে তা মোচন করার জন্য এবং মিসকীনদের খাদ্য যোগানের উদ্দেশ্যে যাকাতুল ফিতর দেয়ার বিধান দেয়া হয়েছে। যাকাতুল ফিতর ঈদের একদিন বা দুইদিন আগেও দেয়া যায়।
তবে সালাতুল ঈদের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না, আগেই আদায় করতে হবে।
4*) ঈদের অভিভাদন জানাতে গিয়ে, ‘‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা’’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন’ বলা ভাল। এছাড়া সুন্দর সুন্দর দোয়ার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করাতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এতে পারস্পারিক সম্পর্ক অনেক মধুর হয়ে উঠে।
5*) ঈদ উৎসবকে উপলক্ষ করে সকল প্রকার পাপাচার ও অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হওয়া থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করা।
সর্বশেষে বলবো- সিয়াম সাধানার পবিত্র মাস রামাদানুল মুবারক ছিল মূলত: আমাদের জন্য তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণ লাভের মাস, সর্বপ্রকার ইবাদাতে অভ্যস্থ হওয়ার মাস, ঈমান মযবুত করার মাস, প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মহান চরিত্রে বিভূষিত হওয়ার মাস, কুরানের মর্ম উপলব্ধি করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআনমুখী হওয়ার মাস, মুসলিম জাতির জেগে উঠার মাস এবং সকল প্রকার অনাহুত শক্তির বলয় থেকে মুক্ত হয়ে হক প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞাকে সুদৃঢ় করার মাস।একটি মাস ধরে আমরা যারা নিজেদেরকে এভাবে প্রস্তুত করেছি, মাসটি অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে যদি তা ভুলে যাই এবং আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য থেকে দুরে সরে যাই, তাহলে তা কুতটুকু সঙ্গত হবে? মূলত: যারা ভাবে যে, রমাদান মাসে ইবাদাত করাই যথেষ্ট, তাদের সে ভাবনা অসঙ্গত ও ভুল। এদিকে ইঙ্গিত করে এক মুসলিম মনিষী বলেছিলেন,
‘‘সে সকল ব্যক্তিবর্গ কতই না মন্দ, যারা রামাদান ছাড়া আল্লাহকে চেনে না।’’
তাছাড়া আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,
‘‘মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক’’। [সূরা আল-হিজর:৯৯]
উপরোক্ত আলেচনার আলোকে আমরা যদি আমাদের কর্তব্য কাজে তৎপর হতে পারি তাহলেই আমার বিশ্বাস আমাদের ঈদুল ফিতরের এ মহোৎসব অর্থবহ ও সার্থক হবে।
বিঃ দ্রঃ- চাঁদ দেখে ঈদ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের একই দিনে রোযা ও ঈদের বিধান নিয়ে সৃষ্ট মতভেদ নিরসন কল্পে "ডঃ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির স্যারের" খুবই চমত্কার একটি লেখা চাঁদ দেখে ঈদের বিধান পড়ে দেখতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
২২৮৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ব্যাক্তিগতভাবে আমি বাংলাদেশে আপাতঃ দৃশ্যমান একটা ট্রেন্ড দেখছি যে তথাকথিত চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে বাংলাদেশী মুসলিমরা বাদ বাকি মুসলিম উম্মাহ হতে বের হয়ে গিয়ে ভিন্ন দিনে রোজা রাখে ও ভিন্ন দিনে ঈদ করে এই ইস্যুতে এক ভিন্ন মুসলিম সেক্ট ন্যায় হয়ে আছে।
যে দলিল সমূহের আলোকে 'চাঁদ দেখা কমিটি' তা করেন - তা আপনার লিখার প্রথমে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু নিচের উক্তিটির কোন রেফারেন্স দেন নি। কোন সময়ে, কোন কোন বিষয়াদি বিবেচনা করে, কারা এ সিদ্ধান্ত বা মতামত বা ফতোয়া দিয়েছেন - তা ও উল্লেখ করেন নি।
''যে এলাকা বা যে দেশে চাঁদ দেখা দেবে ওই চাঁদ ওই এলাকার ওই দেশের জন্য বলে প্রযোজ্য হবে। এক দেশে চাঁদ দেখা দিলে তা সব দেশের চাঁদ হবে না। এটাই শরিয়তের সিদ্ধান্ত''।
সুতরাং দয়া করে যদি সেই রেফারেন্স ও বিবেচ্য বিষয় সমূহ এবং কোন সময়কালে এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল - জানালে উপকৃত হতাম।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন