স্মৃতির পাতায় মাহে রামাদান,, (পর্বঃ 01)
লিখেছেন লিখেছেন ক্রুসেড বিজেতা ০১ জুলাই, ২০১৬, ০৭:৫৪:২৬ সন্ধ্যা
1*} 2000/2001 খ্রিস্টাব্দ, সম্ভবত কনকনে শীত ছিলো বঙ্গ মূলুকে।তখন ক্লাস ওয়ানে পড়তাম,চারিদিকে রমজানের উত্সাহ,উদ্দিপনা'র আমেজ। জনসমাগম স্থানে সিজনাল টেম্প্রোরারী দোকানগুলি তে চলছে সাজগোজ ও বাহারী সব আইটেম বানানোর প্রস্তুতি।রমজানের প্রথম তারাবী নামাজ পড়ে পুরো শহর ঘুমিয়ে,,অন্যান্যদের মতো সে রাত্রে আম্মু সেহরী খাওয়ার জন্য পরিবারের সবাইকে জাগালেন। কনকনে শীত আর ঘুমের অবরোধে উঠতে চাইছিলাম না আমি।সোনাজী (কাকু) পাঁজাকোলা করে কম্বলসহ আমাকে উঠিয়ে এনে পাতা মাদুরে কোলে নিয়ে বসলেন।পরক্ষণেই আম্মু ছোট ভাইকে এনে কাকুর কোলে বসিয়ে দিলেন।কম্বল মুড়িয়ে দু ভাইকে বাহুদ্বয়ে বসিয়ে পালাক্রমে কাকু আগে আমাদের খাওয়ালেন, উনি খেলেন পরে। সে রাত্রে বোধহয় কাকু ভালো করে খেতে পারেন নি। পাশে আম্মু আব্বু রিল্যাক্সড মুডে খাচ্ছিলেন আর মুচকি হাসছিলেন।
ভোর বেলা গুনগুন ফিসফিসানিতে তন্দ্রাচ্ছন্ন আঁখি-উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখি নামাজের চৌকিতে জায়নামাজ পেতে আম্মু কোরআন মাজিদ তেলাওত করছেন।
আমাকে দেখে উঠে আসলেন- আম্মুর আদরে পুরোপুরি ঘুম ভেঙ্গে গেল।বললেন- ফ্রেশ হয়ে পায়জামা পাঞ্জাবী পড়ে আসতে,
শেষমেশ- বিছানায় কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে অবনত চিত্তে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রেডী হয়ে এসেছিলাম। পঞ্চাশ টাকার নোট ধরিয়ে বললেন- মাদ্রাসায় গিয়ে "আলিফ লাম" ক্লাসে ভর্তি হতে,, 30 টাকা ভর্তি ফিস 20 টাকা তোমার। রমজান মাসে পড়াশোনা করতে হবে না বলে আগে থেকেই উত্ফুল্ল ছিলাম, আম্মুর কথায় মন খারাপ হলেও 20 টাকার চিন্তায় তেমন একটা পাত্তা পেল না।
আনুমানিক সকাল 07:30 AM. পৌছালাম স্থানীয় মাদ্রাসায়। ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদে। নতুন সব শিক্ষক ও প্রচুর অপরিচিত ছাত্র ছাত্রী দেখে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কোন এক অজানা ভয়,দুশ্চিন্তা,হতাশায় দাঁড়িয়ে ছিলাম মসজিদের বাহিরে। হঠাত্ তিন চারটে বালক আমার নাম ধরে হাঁক দিল। তাকাতেই দেখি- আমার ইবতেদায়ী ক্লাসমেট ওরা। সাহস বেড়ে গেল,স্থির থাকতে না পেরে দৌড় দিলাম।
.
2}"সাইদুর রহমান" হুজুর অত্র মাদ্রাসার নিয়মিত শিক্ষক,, রমজানে ভর্তির দ্বায়িত্বে ছিলেন হুজুর। বন্ধুদের দু জন সূরা জামাতে ও একজন "ক্বায়িদা" জামাতে ভর্তি হল। আমার সিরিয়াল আসতেই-টাকা নিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ কোন জামাতে ভর্তি হবি?
'আলিফ লাম' বলতেই হুজুর হেসে মাথা তুলে তাকালেন। বিশ টাকা ফেরত দিয়ে পরের দিন মাদ্রাসায় আসতে বললেন,,, ।(অবশ্য হুজুর এখন ইটালী সিটিজেন)
তখনো দ্বিধাগ্রস্ত ভাবলেশ কাটেনি- আম্মু কে সব বললাম; পরদিন মাদ্রাসায় উপস্থিত হতেই মসজিদের কোরআন শরীফ দিয়ে আমাকে "আউয়াল" জামাতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো! (উল্লেখ্য:রমজান মাসে পর্যায়ক্রমে- জামাতে সূরা,ক্বায়িদা,আম পারা, আউয়াল,ছানী,ছালিছ,রাবে,খামিছ,ও ক্বারী সনদের জন্যে: ছাদিছ জামাত পাশ করতে হয়)
আলিফ লাম নামে (সূরা বাক্বারা'র আলাদা সংকলন/খন্ড) কোন শ্রেণী ওখানে ছিলো না,, পরে বুঝতে পারলাম সূরা বাক্বারা 'আউয়াল' জামাতের সিলেবাস ভুক্ত হওয়ায় আউয়ালে'ই আমার ভর্তি এন্ট্রি হয়।
প্রথমবারের মতো কোরআন শরীফ পড়ছি,পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সবক নিলাম কোরআন শরীফে,,
বিকালে বাড়ীতে এসে আম্মুকে বলতেইঃ বললেন-আলিফ লাম এবং কোরআন শরিফ সমান। দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই,,রমজান পরে মিষ্টি খাওয়াবো প্রতিবেশীদের,এখন প্রতিদিন পাঁচ টাকা দিব তোমাকে।
"আলিফ লাম (সূরা বাক্বারা) পড়ার পূর্ব পর্যন্ত আমার জীবনে আরবী ও ধর্মীয় শিক্ষক বলতে বাহিরের কেউ নেই এবং ছিলেন না, কখনো মক্তবেও যাওয়া হয়নি" এবং রমজানে ভর্তির পর থেকে রমজান ছাড়া সারা বত্সর বাড়িতেই কোরআন শরিফ চর্চা চলত,, আম্মু একাই ভাইদ্বয় সহ আশ পাশের কিছু আত্মীয় স্বজনদের 'কোরআন শরিফ পড়া ও নামাজ কালাম' শিখাতেন।
আম্মা রান্নাঘরে/পারিবারিক কোন কাজে ব্যাস্ত থাকলে-মাঝে মাঝে পাড়ার বড় বোন (স্পেশালীঃ সাজিয়া আপা) ও চাচাতো ফুফু'রা (সুজানা আন্টি) আমাকেই পড়া শুনাতেন,এ জন্য ছোট কালে খুব মজা পেতাম।
------ (চলবে)।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন