টার্কি পালন

লিখেছেন লিখেছেন টার্কি রাজ ১০ মার্চ, ২০১৬, ০২:৪২:১৩ রাত

আমাদের কাছে বর্তমানে ১ মাস থেকে শুরু করে ৩/৪ মাস বয়সের টার্কি সাদা ও কালো রংয়ের উন্নতজাতের টার্কি পাওয়া যাচ্ছে....

রানিং পেয়ার টার্কি নব্য এডাল্ট টার্কি পাওয়া যাচ্ছে....

টার্কি মুরগীর ও তিতিরের খামার করতে আগ্রহিরা এই বিষয়ক সকলকিছু বিস্তারিত জানতে 01972221234 নাম্বারে ফোন করে যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের কাছে সকল ধরনের টার্কি পাওয়া যায়। প্রয়োজনে আমাদের টার্কি ও তিতিতের খামার টি দেখে যেতে পারেন। প্রতি শুক্রবার টার্কি পালন পদ্ধতি দেখতে আমাদের খামারটি পরিদর্শন করতে পারেন। যারা টার্কি খামার করতে চান তাদেরকে সকল প্রকার সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করে আজ এই পর্যন্ত।

উত্তর বাড্ডা,সাতাকুল-ঢাকা।

https://www.facebook.com/shomihossain/posts/10207098797085840?pnref=story

আল্লাহ আমাদেরকে সৃস্টির সেরা জীব হিসেবে পৃথিবিতে পাঠিয়েছেন আর আমাদের বেচে থাকার জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। আমাদের রিজিকের জন্য তৈরি করেছেন জীব বৈচিত্র। মানুষের নিয়ন্ত্রাধীন করেছেন অনেক প্রানি যা আমরা আমাদের গৃহে পালন করে থাকি। এগুলো ছাড়াও হাজারো প্রানী বন্য করে রেখেছেন । সে গুলোকে আয়ত্বে আনার কলা কৌশল মানুষকে তিনি শিখিয়ে দিয়েছেণ। আর আমরা এই কলা কৌশল রপ্ত করে বন্য প্রানীকে আমাদের নিয়ন্ত্রনাধীন করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের জন্য তৈরি করেছেন বিশাল এক পক্ষীকুল যেখান থেকে আমরা আমাদের আমিষের ঘাটতি পুরন করে থাকি। দুনিয়াতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। মানুষ এই চাহিদা মিটাতে নিত্য নতুন প্রানীকে তাদের বসে নিয়ে আসছে। পক্ষীকুলের মধ্যে তেমনি একটি প্রানীকে মানুষ আয়ত্ব করেছে । সেটা হলো মুরগী প্রজাতির মধ্যে সব থেকে বড় মুরগী টার্কি। টার্কি এক সময়ের বন্য পাখী হলেও এখন একটি গৃহ পালিত বড় আকারের পাখী । এটি গৃহে পালন শুরু হয় উত্তর আমেরিকায় । কিন্ত বর্তমানে ইউরোপ সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে এই পাখী কম – বেশী পালন করা হয় । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্কি পাখির মাংস বেশ জনপ্রিয় । পাখীর মাংসের মধ্যে হাস, মুরগী, কোয়েল, তিতির এর পর টার্কির অবস্থান । টার্কি বর্তমানে মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে । এর মাংসে প্রোটিন বেশী , চর্বি কম এবং আন্যান্য পাখীর মাংসের চেয়ে বেশী পুষ্টিকর ।পশ্চিমা দেশ গুলতে টার্কি ভীষণ জনপ্রিয় । তাই সবচেয়ে বেশী টার্কি পালন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স,ইতালি,নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড সহ অন্যান্য দেশে । তবে বাংলাদেশেও এখন ব্যাক্তি উদ্যোগে টার্কি চাষ শুরু হয়েছে । যেটা আমাদের জন্য সুখবর । এবং বেকার যুবকদের টার্কি পালনে আগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় আশা করা যায়, আগামী কয়েক বছরে এটা ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করবে ।

টার্কি পালনের সুবিধাসমুহ ---

১। মাংস উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাপক ।

২। এটা ঝামেলাহীন ভাবে দেশী মুরগীর মত পালন করা যায় ।

৩। টার্কি ব্রয়লার মুরগীর চেয়ে দ্রুত বাড়ে ।

৪। টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ অনেক কম, কারন এরা দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাস,লতাপাতা খেতেও পছন্দ করে ।

৫। টার্কি দেখতে সুন্দর, তাই বাড়ির শোভা বর্ধন করে ।

৬। টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশী, চর্বি কম । তাই গরু কিংবা খাসীর মাংসের বিকল্প হতে পারে ।

৭। টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, বি৬ ও ফসফরাস থাকে । এ উপাদান গুলো মানব শরীরের জন্য ভিষণ উপকারী । এবং নিয়মিত এই মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায় ।

৮। টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।

৯। টার্কির মাংসে ভিটামিন ই অধিক পরিমাণে থাকে ।

টার্কি পালনের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট ----

১। ডিম দেয়া শুরুর বয়স = ৩০ সপ্তাহ ।

২। পরুষ ও স্ত্রীর অনুপাত = ১ :৫।

৩। বসরে গড় ডিম = ৮০ – ১০০ টি ।

৪। ডিম ফুটে বাচ্চা বেড় হয় = ২৮ দিনে ।

৫। ২০ সপ্তাহে গড় ওজন পুরুষ পাখী = ৭ – ৮ কেজি ।

স্ত্রী পাখী = ৪ – ৫ কেজি ।

৬। বাজারজাত করনের সঠিক সময় পুরুষ = ১৪ – ১৫ সপ্তাহ ।

স্ত্রী পাখী = ১৭ – ১৮ সপ্তাহ ।

৭। উপযুক্ত ওজন পুরুষ পাখী = ৮ – ১০ কেজি ।

স্ত্রী পাখী = ৫ – ৬ কেজি ।

ডিম উৎপাদন –

সাধারণত ৩০ সপ্তাহ বয়স থেকে টার্কি ডিম দেয়া শুরু করে । প্রয়োজনীয় আলো বাতাস, পরিষ্কার পানি এবং খাবার সরবরাহ করা হলে বসরে ৮০ – ১০০ ডিম দিয়ে থাকে । ৬০ – ৭০ শতাংশ টার্কি মুরগী বিকেল বেলায় ডিম দেয় ।

মাংস উৎপাদন –

টার্কি দ্রুত মাংস উৎপাদনশীল একটি পাখী । দেশী হাস – মুরগীর মত সাধারন নিয়মে পালন করলেও ২৮ -৩০ সপ্তাহে প্রতিটি গড়ে ৫-৬ কেজি ওজন হয় ।

টার্কি পালন পদ্ধতি –

মুক্ত অবস্থায় ও আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায় ।

লিটার ব্যাবস্থাপনা ঃ

এই পদ্ধতিতে টার্কির জন্য সহজলভ্য দ্রব্য ব্যাবহার করা যায় । যেমন নারিকেলের ছোবড়া, কাঠের গুরা, তুষ, বালি । প্রথমে ২ ইঞ্চি পুরু লিটার তৈরি করতে হয় । পরে আস্তে আস্তে আরো উপাদান যোগ করে ৩ - ৪ ইঞ্চি করলে ভালো হয় । লিটারে সব সময় শুকনো দ্রব্য ব্যাবহার করতে হবে । ভিজা লিটার তুলে সেখানে আবার শুকনো লিটার দিয়ে পূর্ণ করতে হবে ।

* খাবার –

টার্কির খাবার সরবরাহের জন্য দুইটি পদ্ধতি ব্যাবহার করা যায় । যেমন ম্যাশ ফিডিং ও পিলেট ফিডিং ।

একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো –

ধান --------------- ২০%

গম ---------------- ২০%

ভুট্টা --------------- ২৫%

সয়াবিন মিল ------- ১০%

ঘাসের বীজ -------- ৮%

সূর্যমুখী বীজ ------- ১০%

ঝিনুক গুড়া -------- ৭%

মোট = ১০০%

* সতর্কতা –

অন্যান্য পাখির তুলনায় টার্কির জন্য বেশী ভিটামিন, প্রোটিন, আমিষ, মিনারেলস দিতে হয় । কোন ভাবেই মাটিতে খাবার সরবরাহ করা যাবে না । সব সময় পরিষ্কার পানি দিতে হবে ।

* সবুজ খাবার –

সব সময় মোট খাবারের সঙ্গে ৫০% সবুজ ঘাস খেতে দিলে ভালো । সে ক্ষেত্রে নরম জাতীয় যে কোন ঘাস হতে হবে । যেমন – কলমি, হেলেঞ্চা ইত্যাদি । একটি পূর্ণ বয়স্ক টার্কির দিনে ১৪০ – ১৫০ গ্রাম খাবার দরকার হয় । যেখানে ৪৪০০ – ৪৫০০ ক্যালোরি নিশ্চিত করতে হবে ।

* প্রজনন ব্যাবস্থা –

একটি টার্কি মুরগীর জন্য ৪ – ৫ বর্গ ফুট জায়গা নিশ্চিত করতে হবে । ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যাবস্থা থাকতে হবে । ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । একটি মোরগের সঙ্গে ৩ বা ৪ টি মুরগী রাখা যেতে পারে । ডিম সংগ্রহ করে আলাদা জায়গায় রখতে হবে । ডিম প্রদান কালীন সময়ে টার্কিকে আদর্শ খাবার এবং বেশী পানি দিতে হবে ।

* বাচ্চা ফুটানো –

টার্কি নিজেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় । তবে দেশী মুরগী অথবা ইনকিউবেটর দিয়ে বাচ্চা ফুটালে ফল ভালো পাওয়া যায় । তাছাড়া বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সময় নষ্ট না হওয়ার কারণে টার্কিও ডিম উৎপাদন বেশী করে ।

* রোগ বালাই –

পক্স, সালমোনেলোসিস, কলেরা , মাইটস ও এভিয়ান ইনফুলেঞ্জা বেশী দেখা যায় । পরিবেশ ও খমার অব্যাবস্থাপনার কারণে অনেক রোগ সংক্রমণ হতে পারে ।

* টিকা প্রদান----

১ম দিন ---------- এন ডি ( বি১ স্টেরেইন ) ।

৪ ও ৫ সপ্তাহে ---- ফাউল পক্স ।

৬ সপ্তাহে ---------- এন ডি ।

৮ – ১০ সপ্তাহে –- ফাউল কলেরা ।

যেহেতু আমাদের দেশে মুরগির রানিক্ষেত রোগ হ্য়। তাই রানিক্ষেত রোগের টিকা দিয়ে নিতে পারেন।

সতর্কতাঃ-- কোন অবস্থায় রোগাক্রান্ত পাখিকে টিকা দেয়া যাবে না। টিকা প্রয়োগ করার পূর্বে টিকার গায়ে দেয়া তারিখ দেখে নিবেন। মেয়াদ উরতিন্ন টিকা প্রয়োগ করবেন না ।

এছাড়া নিয়ম মাফিক, পরিচ্ছন্ন খাদ্য ও খামার ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক রোগ – বালাই এড়িয়ে চলা সম্ভব ।

* বাজার সম্ভবনা –

• টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হতে পারে । পাশাপাশি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাংসের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে । যাদের অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ অথবা যারা নিজেরাই এড়িয়ে চলেন, কিংবা যারা গরু / খাসীর মাংস খায়না , টার্কি তাদের জন্য হতে পারে প্রিয় একটি বিকল্প । তাছাড়া বিয়ে, বৌ –ভাত, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাসীর/গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে টার্কির মাংস হতে পারে অতি উৎকৃষ্ট একটি খাবার । এবং গরু / খাসীর তুলনায় খরচ ও হবে কম ।

• বানিজ্যিক খামার করলে এবং মাংস হিসেবে উৎপাদন করতে চাইলে ১৪/১৫ সপ্তাহে একটি টার্কির গড় ওজন হবে ৫/৬ কেজি । ৪০০ টাকা কেজি দর হিসেব করলে একটি টার্কির বিক্রয় মুল্য দাঁড়াবে ২০০০/২৫০০ টাকা । ১৪/১৫ সপ্তাহ পালন করতে সর্বচ্চ খরচ পরবে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা । তাহলে কম পক্ষে একটি টার্কি থেকে ৫০০ টাকা লাভ করা সম্ভব ।

• তবে মাংস হিসেবে বানিজ্যিক খামার গড়ে উঠতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে । কারন তাতে বিদেশ থেকে আরো উন্নত জাত সংগ্রহ করতে হবে, অধিক বিনিয়োগ করতে হবে । কিন্তু বর্তমানে ছোট আকারের খামার করার যে চাহিদা দেশ ব্যাপী তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী ৩/৪ বসরে কয়েক লাখ টার্কির প্রয়োজন হবে । এবং সে ক্ষেত্রে দাম ও বেশী পাওয়া যাচ্ছে । ৩০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বয়স ও রং ভেদে টার্কির জোড়া কেনা – বেচা চলছে ।

আপনি কেন টার্কির খামার করবেন ??

• যারা বেকার বসে আছেন * যারা নতুন কিছু শুরু করতে চান * পোল্ট্রি ব্যবসা করে যারা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন এবং আপনার স্থাপনা এখন কোন কাজে আসছে না * যারা কম ঝামেলা পূর্ণ কাজ পছন্দ করেন এবং ভালো আয়ের উৎস খুজছেন * যারা অল্প পুঁজি এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা খুজছেন, টার্কির খামার তাদের জন্য আদর্শের । কারন হিসেবে আমার অভিমত – ১। একটি আদর্শ টার্কি খামার করতে খুব বেশী পুঁজির প্রয়োজন হয় না । ২। অন্যান্য পাখীর তুলনায় এর রোগ বালাই কম এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এই খামারে ঝুঁকি অনেক কম । ৩। যেহেতু ৮০% পর্যন্ত ঘাস দেয়া যায়, তাই খবারে খরচ কম । ৪। বাজার চাহিদা প্রচুর । ৫। উচ্চ মুল্য থাকায় খরচের তুলনায় আয় অনেক বেশী ।



















বিষয়: বিবিধ

২১৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File