#আমার পৃথিবী বলতে বাবা আমি তোমাকেই বুঝি..!!
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ ২০ জুন, ২০১৬, ১০:৫৮:০১ রাত
বাবাকে নিয়ে আমার ভাবনাগুলো অন্যদের চেয়ে একটু আলাদাই। বাবা, তিনি বাবা-ই। বাবার সাথে কখনো কারো তুলনা চলেনা। আমরা প্রায়ই বাবা কে কারো সাথে তুলনা করে দেখতে চাই। বাবা-র একটা ডেফিনিশন দাড় করাতে চাই। কিন্তু পৃথিবীতে বাবার সাথে কখনো কাউরো তুলনা চলেনা। অন্যদের কাছে বাবা-র গল্পটা যেমনি হোক, আমার কাছে বাবা মানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কেউ। যাকে আমি সুখের সময় না পেলেও দুঃখের সময় কখনোই মিস করিনা। বাবা, যিনি বিপদে আমাকে সাহস দিয়ে সামনে এগিয়ে নেন। অন্যদের মতো সুখের দিনের পায়রা হয়ে এসে দুঃখের দিনে হারিয়ে যাননা। বিপদের সময় মাথায় হাত রেখে বলেন, ভয় পাসনা, সামনে এগিয়ে চল, আমরা তো তোর পাশেই আছি। কখনো অসুস্থ হলে শিয়রে বসে সারা রাত কাটিয়ে দিতে পারেন যিনি, তিনিই তো বাবা। কখনো দুরে গেলে সকাল বিকেল ফোন দিয়ে যিনি অস্থির করে তুলেন, কি খাইছস তো? তোর শরীরটা কেমন আছে রে? তিনিই হয়তো বাবা। চলুন এবার বাবাকে নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। এধরনের অভিজ্ঞতা কম বেশি সবারই আছে।
-----------
আগেই শুনে থাকবেন নিশ্চয় যে, আমার বাবা-ই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। আমার কাছে বাবার চাহিদা ভালবাসা মার চেয়ে একটু বেশিই। আমি তখন খুব ছোট। স্কুল মাদরাসায় যাওয়ার বয়স তখনো হয়নি। পাড়ার ছেলেদের সাথে মাঝে মাঝে দূরের মক্তবে যাওয়া হত কেবল। হঠাৎ একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম, একেবারে বিছানাশায়ী অবস্থা। যা শয্যাশায়ীর চেয়ে একটু ভাল। মা চাচীরা বলতেন ছেলেটারে জ্বীন ভুতে আছড় করেছে। তখনকার দিনের ভুতেরা আবার আধুনিকতার ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। মানে এখনকার দিনের মতো ফেইসবুক, হোয়াটএ্যাপ, গুগল ইন্টারনেট এগুলো ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল কিনা। তাই কাউকে একবার ধরলে নাকি সহজে ছাড়তো না। মানে খেয়ে দিয়ে কোন কাজ না থাকলে যা হয় আর কি। যাইহোক, গভীর রাত পর্যন্ত আমার জন্য হ্যারিকেন ল্যাম্প জ্বালিয়ে রাখা হত। তখন আমাদের বাড়ীতে বিশেষ কোন সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ছিল। প্রচন্ড গরম বলে আব্বুর সাথে বারান্দায় ঘুমাতাম। আব্বু সারা রাত ধরে এক হাতে আগলে ধরে পাখার বাতাস করে আমাকে ঘুমানোর চেষ্টা করতেন। বিভিন্ন কিচ্ছা কাহিনী শুনাতেন। যদি আব্বু কখনো একটু ঘুমিয়ে যেতেন, সাথে সাথে ভুতের ভয় পেয়ে তাকে জাগিয়ে তুলতাম। তাছাড়া সারাদিন ডাক্তার কবিরাজ পানি পড়া নিয়ে আব্বু ব্যস্ত থাকতেন। তার সব কাজ ফেলে সারাদিন আমাকে সুস্থ করতে তার যত চেষ্টা। বাজার থেকে আনা ফলমূল আর ভাল ভাল খাবার এনে সামনে রাখতেন। আব্বু বাজারে বেশি টাকা খরচ করে ফেলেন বলে মা মাঝে মাঝেই ঝগড়া করতেন। অবশ্য সেই অতিরিক্ত খরচ আমাদের জন্যই করতে হত। আমাদের নানান চাহিদা মিটাতে গিয়েই তাকে এই অতিরিক্ত খরচ গুনতে হত। তাছাড়া আব্বুকে কখনো দোকানে বসে এক কাপ চা-ও খেতে দেখিনি।
সবাই যে সময় বাড়ীর কাজের পাশাপাশি স্কুলে পড়াশোনা করছে, অথবা বাড়ীর কাজে সহযোগীতা করতে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগই পাচ্ছেনা, সে সময় আমার বাবা আমাকে বগুড়াতে এক উচ্চ মানের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেছেন। যাতে ভাল ভাবে পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হতে পারি। তখন এটাকে আমার প্রতি বাবার নির্মমতা বা নিষ্ঠুরতা বলে মনে হলেও, আজ যখন সম বয়স্ক বাল্য বন্ধুদের দোকানে, ক্ষেতখামারে কাজ করতে বা অটো রিক্সা চালাতে দেখি তখন মনে হয়, এটা আমার প্রতি বাবার কত বড় অনুগ্রহ ছিল।
---------------------
বড় ভাই আমি এক সাথে বাড়ী থেকে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছি। পরীক্ষা উপলক্ষে ঢাকা দারুল হাদীস সালাফিয়্যাহ থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে এসেছি। তখন অনেক রাত জেগে জেগে দুই ভাই পড়াশোনা করতাম। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আম্মা রুটিন করে দুই ভাইকে ডিম সিদ্ধ করে দিতেন। কিন্তু তারপরও আব্বু রাতে বাজার থেকে আসার সময় সিদ্ধ ডিম কিনে এনে জানালা দিয়ে তা দিতেন। যাতে পাছে আম্মা জেনে আবার ঝগড়া বেধে বসেন, সন্ধ্যায় তো ডিম সিদ্ধ করে দিলাম আবার আনতে হবে কেন? টাকা থাকলে আর তুমি সুখ পাওনা বুঝি? এভাবে নানান প্রশ্ন। এটাই হয়তো সন্তানের প্রতি বাবার ভালবাসার বড় উদাহরণ হতে পারে। আর শ্রেষ্ঠ বাবার দৌড়েও এগিয়ে রাখবে নিশ্চয়?
এভাবে বাবার ভালবাসার হাজারো উদাহরণ এই মনে গেঁথে আছে। এখন এত বড় হয়েছি, তারপরেও আব্বু সেই ছোট্র শাকিলটি মনে করেন। কখনো বাজারে দেখা হলেই এটা ওটা খাওয়ানোর হাজারটা অফার দিয়ে বসেন। কোন অপরাধ করলে ছোট মানুষ বুঝেনা বলে এখনও সেইভ রাখার চেষ্টা করেন। বুঝতে চাননা আমি অনেক বড় হয়েছি।
আমি কখনো আব্বুর কাছে টাকা চেয়েছি আর তিনি বলেছেন, নেই, দিতে পারবোনা, এমনটা কখনোই হয়নি। কাছে না থাকলেও ধার করে হলেও এনে দিয়েছেন। কিন্তু কখনোই বুঝতে দেননি, তার কাছে আসলে টাকা ছিলনা, ধার করা টাকা। পাড়াপড়শিরা মাঝে মাঝে বলতেন, এভাবে সবাইকে না পড়িয়ে দু একজন সংসারের কাজে লাগাও, এতে তোমার সংসারের উন্নতি হবে। কিন্তু আব্বু বলতেন, না। আমি কৃষক বলে আমার ছেলেরাও কৃষক হবে তাতো হতে পারেনা। আমার বাবা ছিলনা বলে পড়াশোনা শিখতে পারিনি বলে, আমার ছেলেরা তো মূর্খ হয়ে থাকতে পারেনা। আমার খুব ভাল করে মনে আছে, যখন দাখিল পরীক্ষার রেজাল্ট আব্বা আম্মাকে জানালাম যে আমি এ+ পেয়েছি, তখন আব্বা আম্মা বলেছিলেন, তুই পাস করেছিস তো? বললাম, হ্যাঁ পাস করেছি। তারপরে বললেন, সালামের (আমার ভাগ্নে) চেয়ে কম না বেশি পেয়েছিস? বললাম, এক সমান। তখন বললেন, আরেকটু বেশি পেতে পারলিনা? এটা হয়তো তাদের অজ্ঞতা থেকেই তারা আমাকে বলেছিলেন, কিন্ত এটাই ভালবাসা। সব বাবা মায়েরাই চান তার সন্তান অন্যদের চেয়ে ভাল করুক। শুধু আমরাই তাদের চাওয়া পাওয়াগুলোকে মূল্যায়ন করতে পারিনা।
এভাবে বাবার সাথে অনেক অভিজ্ঞতাই আছে, যেগুলো বর্ণনা করতে পারছিনা, বলতে গিয়ে চোখে অশ্রু চলে আসছে। এখন ভাবি, কতইনা ত্যাগ স্বীকার করেছেন আমাদের জন্য। উনারা বাবা বলেই হয়তো নিঃস্বার্থভাবে এতটা করতে পারেন।
আর আমরা দেখুন, বাবাদের ভালবাসা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট একটা দিন নির্ধারণ করে ফেলেছি। তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পাশ্চাত্যের বাবা দিবস আমদানি করেছি। যাতে একদিনেই বাবাদের থেকে সহজেই দায় মুক্তি পেতে পারি।
বাবার প্রতি যাদের ভালবাসা সংকীর্ণ আর সীমাবদ্ধ, কেবল তাদেরই ভালবাসা দিবস পালন করে "মিস ইউ বাবা" বলতে হয়। আর আমরা প্রতি ক্ষনে প্রতি মহুর্তে বাবাকে ভালবাসি বলে আমাদের কোন দিবস লাগেনা। মিস ইউ বাবা!!
বিষয়: বিবিধ
২১৬৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ কথা সবাই বলুক। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন