দিনে দুপুরে রাবি শিক্ষককে জবাই করে হত্যাঃ দেশ কোন দিকে যাচ্ছে..??

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ ২৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:০৮:৪১ সকাল





প্রফেসর রেজাউল করীম সাহেব সকাল সকাল বাড়ী থেকে বের হলেন, যাবেন প্রিয় ক্যাম্পাসে। শালবাগান থেকে বাস ধরবেন বলে খুব তাড়াহুড়া করে বের হলেন। উদ্দেশ্য একটাই, ছাত্রদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ানো। হঠাৎ একদল দুর্বৃত্ত এসে প্রফেসরকে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করলো। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন প্রফেসর গলাকাটা অবস্থায় উপুর হয়ে পরে আছেন। ভাবা যায়? যেন গোটা দেশের মানবতা, মনুষ্যত্ব মুখ থুবরে পরে আছে!

অথচ ঘটনাস্থলের পাশেই থানা। অনেক লম্বা সময় পরে এলেন এদেশের দুধ কলা দিয়ে পোষা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা। এর মধ্যেই সাংবাদিকদের ফটো-সেশন শেষ হয়েছে। উৎসুক জনতার ভিড়ও বেড়েছে। আর ওদিকে প্রফেসরের বাড়ীর লোকেরা ভাবছে, উনি ক্যাম্পাসে প্রিয় পেশাটি নিয়ে ব্যস্ত। অবশ্য প্রফেসরের উচিৎ ছিল পরিবারের লোক জনের কাছে বিদায়ী মাফ চেয়ে বের হওয়া। ব্যাগে বই পত্রের বদলে এক খন্ড কাফনের কাপড় রাখা। ওজু করে হালকা গরম পানি, বড়ই পাতার রস আর কর্পুর দিয়ে গোসল সারতে পারলে আরো ভাল হত। দিন বদলে গেছে, আগের মতো আর কিছুই নাই। আগে মানুষ ফেরার নিশ্চয়তা নিয়ে বগলে ছাতা আর হাতে ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হত, কিন্তু আজকাল বগলে গুম খুনের আতংক আর হাতে জীবণ নিয়ে বের হতে হয়। এখন এদেশে একটি লোকের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেয়ে, সে যে আর ফিরতে পারবেনা এটাই বেশি স্বাভাবিক। চারদিকে গুম খুন আর তাদের স্বজনদের কান্নায় ক্রমেই ভাড়ী হয়ে উঠছে এদেশের আকাশ-বাতাস। এ মিছিল যেন আর কিছুতেই থামছেনা। কেউ বাড়ি থেকে বের হয়ে আবার যে বাড়ীতে ফিরতে পারবে, এ নিশ্চয়তা দেওয়া বড়ই মুশকিল। এ উপত্যকা যেন দিন দিন গুম খুনের স্বর্গ রাজ্য হয়ে যাচ্ছে। শত প্রতিবাদ জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছেনা। কারণ যে সরষে দিয়ে ভূত তাড়ানোর কথা ভাবছি, ভূত যে সে সরষেতেই! দেশ যেহেতু ডিজিটাল, হত্যাকান্ডগুলোও ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। একদিকে কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা দিনে দুপুরে নির্বিচারে গুম খুন করছে। অন্যদিকে দলীয় ক্যাডার বাহিনীর লোকেরা। নিজেদের পারস্পরিক ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারার জের ধরেও মরছে কিছু নিরপরাধ মানুষ। আর আলেম উলামা হলে তো কথায় নাই, জামায়াত-শিবির বা জঙ্গীর মিথ্যা তোকমা দিয়ে নির্যাতন, অবশেষে বিচার বহির্ভূত হত্যা।

উপর মহল থেকে শুধু মাঝে মাঝে বলা হচ্ছে, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশের আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক আছে...। হ্যাঁ, গত তিন মাসে এই দেড়, দু হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার স্বাভাবিক থাকারই লক্ষণ!

কারণ, একদিনেই হাজার লোকের বিচার বহির্ভূত হত্যা কান্ডের পরেও যখন সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিং-এ আইন শৃঙ্খলার স্বাভাবিকতার দাবি করা হয়, সে তুলনায় এ সামান্যই।

যাইহোক, এদেশে যে আর কোন প্রফেসরের সম্মান নাই, জ্ঞানীর কদর উঠে গেছে, তা আমাদের বুঝা হয়ে গেছে। সম্মান যেন সব চোর-বাটপারদের!

আমাদের একথা ভুললে চলবে না যে, একটি জাতি যখন তার জ্ঞানীর কদর ভুলে যায়, তখন সে জাতী মেধা শূন্য হয়ে পরে। আর ফলশ্রুতিতে সে জাতীর কপালে দুর্গতি জোটে।

তাই বলব, তাং ফাং বাদ দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নিন। বিচার বহির্ভূত সকল হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার করুন। আর হ্যাঁ, তারানা হালিমের মতো দু টাকার এমপি মন্ত্রীদের

কথায় শুধু আংগুলের ছাপ নিয়ে এদেশের সন্ত্রাস ঠেকানো সম্ভব না, এর জন্য চাই জনগনের পূর্ন সমর্থনের সরকার ব্যবস্থা।

উল্ল্যেখ্য যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার অদূরেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি।

বিষয়: বিবিধ

১১৬৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366914
২৪ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ১২:০৫
366921
২৪ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ভারতের দিকে যাচ্ছে।
366927
২৪ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০১:২৭
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম

এই কাজের জন্য অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধকরে দিবার দাবি উঠবে না??!!! Crying
মাদ্রাসার ছেলেরা তাদের শিক্ষকের গলা কাটলে অবশ্য ভিন্ন কথা ছিল Tongue

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File