#সকল প্রকার নেক আমলই কি মৃত ব্যক্তির জন্য নিবেদন করা যায়?- একটি বিশ্লেষণঃ

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:৩৪:৪৫ রাত

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে মৃত ব্যক্তির

জন্য যে সকল নেক আমল নিবেদনের কথা বর্ণিত হয়েছে বা অনুমোদিত হয়েছে সে সকল আমলের সওয়াব মৃত ব্যক্তির জন্য পাঠানো যায় এ ব্যাপারে কারো দ্বি-মত নেই। এর বাইরে অন্যান্য সকল নেক আমল

যেমন- কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার ইত্যাদি মৃত ব্যক্তির ইছালে ছাওয়াবের জন্য আদায় করা যাবে কি না এ সম্পর্কে ইমামদের মধ্যে একাধিক মত রয়েছে ।

#প্রথম মত:

যে সকল নেক আমল মৃত ব্যক্তির জন্য নিবেদন করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে অনুমতি ও অনুমোদন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, শুধু সে সকল আমলই মৃত ব্যক্তির ইছালে ছাওয়াবের জন্য করা যাবে। এ ছাড়া অন্য কোন নেক আমল ইবাদত-বন্দেগী মৃত ব্যক্তির

ছাওয়াবের জন্য প্রেরণ করা যাবে না। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) সহ বহু আলেম ও ধর্মবেত্তাগণ এ মত পোষণ

করেন।[ মজমু আল-ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ]

#দ্বিতীয় মত: সকল প্রকার নেক আমল যা হাদীস ও কুরআনে নেক আমল বলে স্বীকৃত তার সকল কিছুই মৃত

ব্যক্তির জন্য নিবেদন করা যায়। এ মত পোষণ করেন ইমাম আবু হানিফা (রঃ) ইমাম মালেক (রঃ) ইমাম আহমদ (রঃ)-সহ অনেক ইমাম। তাদের যুক্তি হল- যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দেগী বা কোন নেক আমল করবে তার মালিক সে। সে

যাকে ইচ্ছা তার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করবে। রাসূল (সাঃ)-কে যে সকল নেক আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তিনি সে সকল সম্পর্কে অনুমতি দিয়েছেন,

রোযা, হাজ্ব, ছাদকা ইত্যাদি। তাকে যদি কুরআন তিলাওয়াত, জিকির,

সালাত ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হত, তাহলে তিনি অনুমতি দিতেন এবং বলতেন- হ্যাঁ, এগুলো মৃত ব্যক্তির

উদ্দেশ্যে তোমরা করতে পার। অতএব যে সকল নেক আমল সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) স্পষ্টভাবে অনুমতি দিয়েছেন শুধু সেগুলো মৃত ব্যক্তির ছাওয়াবের জন্য করা যাবে অন্য কিছু করা যাবে না এ কথা ঠিক নয়। [শরহু আল-আকীদাহ আত-তাহাভীয়্যাহ, আলী ইবনে আবিল ইয আল-হানাফী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৬৭৩]

#এর মধ্যে কোন মতটি অধিকতর বিশুদ্ধঃ

.......................

যে সকল নেক আমল শরীয়ত অনুমোদিত তার সবগুলোই কি মৃত ব্যক্তির ইছালে ছাওয়াবের জন্য নিবেদন করা যাবে? নাকি নির্দিষ্ট কিছু বিষয় এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ?

আসলে এক্ষেত্রে ইমাম ইবনে তাইমিয়া প্রমুখ ইমামদের মত অধিকতর বিশুদ্ধ।

কয়েকটি কারণে-

#এক. রাসূল (সাঃ) ছিলেন তার উম্মতের প্রতি সবচেয়ে দয়ার্দ্র। জীবিত ও মৃত সকলের প্রতি। তাকে যখন

জিজ্ঞাসা করা হল মৃত ব্যক্তির উপকারের জন্য কি করা যায়। তখন তিনি সব কিছুর কথা বলে দিতে পারতেন। তিনি উম্মতের শ্রেষ্ঠ

শিক্ষক। উম্মতকে শিক্ষা দিতে কখনো কোন কার্পণ্য করেননি। এটা সকলের কাছেই সত্য। তাই তিনি প্রশ্নের উত্তরে যা বলেছেন সেটুকুই অনুমোদিত। যা বলেননি তা অনুমোদিত নয়।

#দুই. যদি বলা হয়, রাসূল (সাঃ)-কে যদি প্রশ্ন করা হত : মৃত ব্যক্তির

ইছালে ছাওয়াবের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে কি-না? তাহলে তিনি অনুমতি দিয়ে দিতেন। তাই মৃত ব্যক্তির ইছালে ছাওয়াবের জন্য কুরআন তিলাওয়াত জায়েয আছে।’ আমরা যদি এ ধরনের একটি

মূলনীতি প্রণয়নের পথ খুলে দেই, তাহলে সকলে তো এ কথাই বলবে যে, এ বিষয়টি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহকে প্রশ্ন

করলে তিনি অনুমোদন দিয়ে দিতেন, যেমন তিনি অনুমোদন

দিয়েছেন অমুক অমুক বিষয়ে। তিনি যা অনুমোদন করেননি তা কখনো অনুমোদিত বলে ধরা হবে না। এটা

সকলের কাছে যুক্তিসংগত এবং নিরাপদ বলে মনে হবে। দ্বিতীয় মতটি যুক্তি নির্ভর, হাদীস নির্ভর নয়।

অতএব, মৃত ব্যক্তির ইছালে

ছাওয়াবের জন্য শুধু ঐ সকল আমলই করা যাবে যেগুলো করতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অনুমোদন দিয়েছেন। যে সকল নেক আমল মৃত ব্যক্তির ছাওয়াবের জন্য করার কথা তিনি বলে যাননি তা করা যাবে না। এটা যে বিশুদ্ধ ও সবচেয়ে নিরাপদ ও সতর্ক পথ তা ভিন্নমত পোষণকারীরাও স্বীকার করে থাকেন। আল্লাহ আমাদের মিথ্যা গোড়ামী আর জিদকে পরিহার করে হক্ব বুঝার ও তার উপর অবিচল থাকার

তাওফিক দিন-আমীন!!

বিষয়: বিবিধ

১৫১৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366046
১৭ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১১:৪৫
বিন হারুন লিখেছেন : আমরাতো কবর যিয়ারতের সময় কুরআন থেকে বিভিন্ন সূরা তেলাওয়াত করি, এসবের সওয়াব কি মৃত ব্যাক্তিকে দিতে পারব না? আর রাসূল স. কারো কবর যিয়ারত করেছেন কি? জানা থাকলে জানাবেন, নিছক জ্ঞানার্জনের জন্য প্রশ্ন করা.
366048
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২:৫৮
আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ লিখেছেন : ভাই দেখুন, কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে নিম্নের কয়েকটি আমল মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার স্বজনরা করতে পারবে বলে শরীয়ত স্বীকৃত। এবং এ আমল মৃত ব্যক্তির উপকারেও আসবে।
আমলগুলি হল-
(১) মৃত ব্যক্তির জন্য মুসলমানদের দু‘আ
এবং আল্লাহর নিকট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করা।
(২) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান-ছাদকা
করা।
(৩) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোজা রাখা।
(৪) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ বা
উমরাহ করা।
(৫) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী
করা। [একটু সংক্ষেপ করতে গিয়ে দলীল উল্লেখ করলাম না, অন্য কোন দিন দলীল সহ একটা পোস্ট দিব ইনশাআল্লাহ! ]
366049
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২:৫৯
আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ লিখেছেন : তাছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে মৃত ব্যক্তির
পক্ষ থেকে নামায পড়া, কুরআন তেলাওয়াত
করা, যিকির-আযকার পড়া মৃত ব্যক্তির নামে
চল্লিশা করা, প্রতি বছর মৃত্যু বার্ষিকী পালন
করা ও মীলাদ শরীফ পাঠ করা সম্পুর্ণ
বিদআত। এগুলোর পক্ষে কোন দলীল
নাই। আজকাল আমাদের সমাজে হাফেজ ও
কারীদেরকে ভাড়া করে এনে মৃত
ব্যক্তির জন্য কুরআন খতম করানো হয়।
এটাকে আমাদের দেশের পরিভাষায় সাবিনা পাঠ
বলা হয়। অনেক সময় দুপক্ষের মাঝে
দামাদামি করে হাদীয়া নির্ধারণ করা হয়ে
থাকে। সর্ব যুগের সকল উলামা এব্যাপারে
একমত যে, মৃত ব্যক্তির জন্য ভাড়া করা
হাফেজ-কারী দিয়ে কুরআন খতম করানো
হারাম। পূর্বযুগের কোন আলেম বা
নির্ভরযোগ্য কোন ইমাম এব্যাপারে অনুমতি
দেননি। পরবর্তীযুগের কিছু পেট পুঁজারী
দুনিয়াদার আলেম অন্যায়ভাবে মানুষের অর্থ
আত্মসাৎ করার জন্য এ পন্থাটি চালু করেছে।
এটি একটি বেদআতী আমল যা, মৃত ব্যক্তির
কোন কল্যাণে আসবে না।
আল্লাহ আমাদের প্রকৃত হক্ব বুঝার তাওফিক দিন-আমিন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File