২৫ শে ফেব্রুয়ারি ও কিছু অজানা সত্য
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আরিফুর রহমান তুহিন ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:০১:৫৪ রাত
বাঙ্গালী জাতির জন্য ফেব্রুয়ারি মাসটা কখনোই সুখের ছিল না।
ইতিহাসের পাতায় এই মাসটা ছিল রক্ত পিচ্ছিল
ছেলে হারা, স্বামী হারা, ভাই হারা কান্নায় আকাস অনেক বারই প্রকম্পিত হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে।
৪৭ এর ভাষা আন্দলন, ৮২ এর এরশাদ আন্দোলনে অনেক রক্ত ঝড়েছিল
সবাই রক্ত দিয়েছিল দেশের ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনি ও বিডিয়ার বাহিনির ভুমিকা ছিল অতুলনীয়।
বিশেষ করে বিডিয়াররা ক্ষেত্রে যে সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছিল সেটা সেনাবাহিনীকেও হার মানায়।
আমাদের সীমান্ত এলাকাকে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সীমান্তর সাথে তুলনা করলে একটু কমই বলা হবে, কেননা ফিলিস্তিন স্বাধীন না কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও নিয়মিত ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবিলা করতে হত আমাদের এই জওয়ানদের।
বিডীয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এর পরিচালনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে। ফলে জোয়ানদের মাঝে একটা ক্ষোভ শুরু করছিল অনেক আগে থেকেই।
তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে এই দাবি করে আসছিল যে হয় আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অঢীন করা হোক না হয় আমাদের ক্ষমতা আমাদের দেয়া হোক। আমরা পরাধীন হয়ে থাকতে চাইনা।
তাদের দাবির পিছনে যুক্তি ছিল যে, আমরা ফিল্ডে কাজ করি কিন্তু প্রমোশন নেই। আমাদের মধ্য থেকে কেউ অফিসার হতে পারেনা। অথচ আমাদের মধ্যে এমন অনেক সৈনিক আছে যারা অফিসার হওয়ার যোগ্য। তাছাড়া তারা কিছু সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করে আসছিল যে তারা বিডিয়ারদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। বিশেষ করে বিডিয়ার মার্কেটের আয় ও বিভিন্ন সময়ে তাদের জন্য সরকার যে বরাদ্ধ দিত তা তাদের ঠিকমত দেয়া হত না।
এই ইস্যুগুলো নিয়ে তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের কাছে ধরনা ধরা স্বত্বেও কোন ফলাফল পাননি। ফলে তাদের মাঝে অসন্তোষ আরো বাড়তে থাকে।
কি হয়েছিল সেই দিন তার বর্ননা দিয়েছিলেন সাবেক বিডিয়ার সৈনিক ( নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) , আমরা অনেক দিন থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম যে বিডিয়ার সপ্তাহে আমরা আমাদের দাবীগুলো প্রকাশ্যে তুলে ধরব। বিডিয়ার দিবস অর্থাৎ ২৫ শে ফেব্রুয়ারি সবাই পিলখানায় উপস্থিত থেকে আমরা আমাদের মুক্তি চাইব। সেই সাথে দেশের সকল ক্যাম্প গুলোতে সকল জওয়ানরা এক যোগে আন্দোলন করব।
যদি তাঁরা (অফিসাররা) আমাদের প্রত্যাক্ষান করে তবে আমরা তাদের জিম্মি করব এবং সরকারের সাথে আলোচনা করে সমাধান করব। আমাদের আন্দলন হবে শান্তিপুর্ন রক্তপাতহীন।
এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কয়েকদফা মিটিং করি এবং চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই। আমরা সরকারী ও বিরোধীদলীয় কিছু নেতার সাথে আলোচনা করি এবং তাঁরা আমাদের পশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করি।
২৫শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টার দিকে ডিজি শাকিল আহমেদ দরবার হলে প্রবেশ করেন এবং নিয়ম অনুযায়ী সকলে তাকে সালাম জানান। তিনি সালাম গ্রহন করেন।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ডিজি যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন সিপাহী নয়ন অস্ত্র হাতে দরবার হলে প্রবেশ করেন এবং ডিজির দিকে তাক করে স্যার স্যার বলে কাপতে থাকেন।
ডিজি তখন তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
ঘটনার আকষ্মিকতায় সকল অফিসাররা হকচকিয়ে যান। তাঁরা ডিজিকে ঘিরে ধরেন। আর নয়নকে কন্ট্রল করতে সক্ষম হন।
বিডিয়ার জওয়ানরা দরবার হল ত্যাগ করে বিহিরে বের হয়ে যান এবং ফাকা গুলি করে বিদ্রোহের জানান দেন। তারা বাহির থেকে দরবার হল ঘিরে রাখেন। ফাকে ফাকে আকাশের দিকে গুলি ছুরতে থাকেন।
ওই মুহুর্তে তাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যমের কর্মি ছাড়া আমার জানামতে আর কেউ যোগাযোগ করেন নি। তবে ডিজিসহ দরবার হলের কিছু অফিসার আমাদের শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করছিলেন। আমরা আশাবাদি ছিলাম যে কোন রক্ত ঝরবেনা এবং আমাদের দিবীও বানাতে হবে তাই আমরা বিদ্রোহ চালিয়ে যাই।
আমাদের মধ্যে কিছু জওয়ান বিদ্রোহে বাধা দিতে চাইলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছে তাঁরা হার মানে। দু একজন মারাও যান।
সকাল সাড়ে এগারটার দিকে কয়েকজন বিডিয়ার সদস্য হঠাত দরবার হলে প্রবেশ করেন এবং মুহুর্মুহু গুলি করতে থাকেন। আমাদের ধারনা ছিল হয়ত তারা অফিসারদের ভয় দেখানোর জন্য ফাকা গুলি করতেছেন কিন্তু তারা একে একে সকলকে হত্যা করে দরবার হল ত্যাগ করেন।
উক্ত সৈনিক জানান, যারা দরবার হলে প্রবেশ করেছিল তাদের মুখমন্ডল বাধা ছিল এবং আমি তাদের কাউকে চিনতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেশ প্রেমিক আর একজন দেশপ্রেমিক কখনো অন্য দেশপ্রেমিককে হত্যা করতে পারেনা। সুতারাং অফিসারদের হত্যাতো দুদের কথা এই ধইরনের পরিকল্পনাও আমাদের মাথায় ছিলনা। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই ছিল আর তা হল অফিসারদের জিম্মি করে আমাদের দাবি আদায় করা।
জানিনা তাদের কেন হত্যা করা হল আর কারাই বা হত্যা করল।
এইতো গেল অপরাধীর জবানবন্দী। এবার একজন নিরপেক্ষ বিডিয়ার সদস্যের কথা শোনা যাক। যদিও উনি কোন অপরাধ না করেও ৫ বছর জেল খেটেছেন। নিরাপত্তার সার্থে ওনারও নাম উল্লেখ করলাম না।
তিনি ডিজির দিজাইনার ছিলেন, ডিজি মহদয়ের খুব বিশ্বস্ত একজন সৈনিক। খুব কাছাকাছি ছিলেন শাকিল আহমেদের। শাকিল আহমেদের স্ত্রী উনাকে সম্মান করে ভাই বলে ডাকতেন। উনিও বোনের জন্য সব কিছু করতেন। যেহেতু উনি ডিজির কাছের মানুষ তাই ওনার কাছে বিদ্রোহের বিষয়টি অন্য জোয়ানরা গোপন রাখে।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে আমি বাসা থেকে সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে দরবার হলের দিকে আসি। যেহেতু বিডিয়ার দিবস তাই আমাদের মাঝে একটু আনন্দ ছিল, নতুন ড্রেস পরি। আসার সময় লক্ষ করি কিছু সৈনিক কানাঘুষা করছে। তাদেরকে কিছুটা উত্তেজিতও মনে হচ্ছিল।
ডিজি স্যার দরবার হলে ঢুকার সাথে সাথে সৈনিকরা আস্তে আস্তে দরবারের কাছাকাছি আসতে শুরু করে। অনেক সৈনিক ঝরো হলে হঠাত গুলি শুরু হয় আর দরবার হলের ভিতর থেকে কিছু সৈনিক বের হয়ে আসে আর কিছু ঢুকে আসে।
বাহিরে দাঁড়িয়ে আমি শুনতে পাচ্ছিলাম ডিজি স্যার সকলকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, যখন ডিজি স্যার তাদের শান্ত থাকতে বলছিলেন তখন সৈনিকরা তাদের দাবিগূলোর কথা বলতে চাচ্ছিলেন। পরিস্থিতি তখনো স্বাভাবিক ছিল। অনেকটা ডিজি স্যারের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। তিনি তখন তাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যান অন্যদিকে হেডকোয়াটারের সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন যাতে সাহায্য আসে এবং জিম্মিদের উদ্ধার করে। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন যে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে।
তিনি সেনা প্রধান, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সকল দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করেন উদ্ধারের জন্য। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।
দুপুরের দিকে সম্ভাবত একটা হেলিকপটার আসলে সৈনিকরা গুলি করলে সেটাও চলে যায়।
যখন স্যারদের হত্যা করা হয় আমি তখন ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। দূরে চলে আসছি।নিজেকে তখন খুব ছোট ও তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। কিন্তু জীবনের মায়ায় চলে আসছি।
যখন বিচার শুরু হয় তখন দেখি আমাকেও অভিযুক্ত করা হয় এবং ৫ বছরের জেল দেয়া হয়।
স্যারদের এমনি অসহায়ভাবে ফেলে আসার কারনেই হয়তো আল্লাহ এই বিচার করেছেন।
তিনি আফসোস করে বলেন, সরকার যদি ঠিক সময়ে উদ্ধারকারীদের পাঠাতেন তাহলে স্যারদের আর এভাবে জীবন দিতে হত না।
আমরা এপারে সঠিক বিচার পাইনি কিন্তু ওপারে আল্লাহ্ ঠিকই সঠিক বিচার করবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন