বিজ্ঞানময় কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ত্ব যে ভাবে প্রমাণ করলো পিঁপড়া
লিখেছেন লিখেছেন তারেক বিন জিয়াদ ২১ মার্চ, ২০১৬, ০২:৪৬:১৮ দুপুর
কুরআনের আয়াতগুলো ভাষাতত্ত্ববিদদের জন্য তথ্যের খনি। আল্লাহ তায়ালা কিছু আয়াতে, সাধারণ কিছু গল্প বা কথোপকথনের মধ্য দিয়েই অসাধারণ সব তথ্য প্রকাশ করেন। যখনই কুরআনের কোনো আয়াতে কোনো কথোপকথন আসে, তখনই দেখবেন আল্লাহ আমাদের কথোপকথনের শব্দ, বাক্যগুলোর মধ্যে দিয়ে নিচের তথ্যগুলো দেন। যেমন,
বক্তার সংখ্যা, প্রকৃতি, জ্ঞান, মানসিকতা।
শ্রোতার সংখ্যা, প্রকৃতি, জ্ঞান, মানসিকতা।
বক্তা এবং শ্রোতার মধ্যে সম্পর্ক।
কথোপকথনের আগে কি ঘটে গেছে এবং অনেক সময় তার পরে কি ঘটবে।
আশেপাশের অবস্থা, প্রেক্ষাপট। আশে পাশে যারা আছে তাদের ভূমিকা।
যেমন, নিচের আয়াতটি দেখুন যেখানে আল্লাহ আমাদের একটি স্ত্রী লিঙ্গের পিঁপড়ার একটি মাত্র কথার মধ্য দিয়ে তিনি পিঁপড়া সম্পর্কে কত ধরনের তথ্য দিয়েছেন।
আর যখন তারা পিঁপড়াদের উপত্যকায় পৌঁছিয়েছিল, একটি পিঁপড়া (স্ত্রীলিঙ্গ) বলেছিল, ‘হে পিঁপড়ারা, তোমাদের ঘরগুলোতে প্রবেশ কর, যাতে করে সুলায়মান এবং তার বাহিনী তোমাদের না বুঝে পিষে না ফেলে’। সুরা নামল : ১৮
আপনার কাছে মনে হবে, এটিতো ছোটদের কোনো গল্পের বইয়ের মত। এখানে পিঁপড়াদের সম্পর্কে আল্লাহ নতুন কি জানালেন আমাদের। লক্ষ্য করুন, এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের পিঁপড়া সম্পর্কে কতগুলো তথ্য দিয়েছেন।
‘একটি পিঁপড়া বলেছিল, পিঁপড়া এখানে স্ত্রী লিঙ্গ, পুরুষ লিঙ্গ নয়। বাসার বাইরে স্ত্রীলিঙ্গ পিঁপড়া থাকে, পুরুষলিঙ্গ পিঁপড়া নয়। আমরা এখন জানি স্ত্রীলিঙ্গ পিঁপড়ারা কর্মী পিঁপড়া, পুরুষলিঙ্গরা শুধুই প্রজনন কাজের জন্য বেঁচে থাকে।
‘হে পিঁপড়ারা’ বহুবচন যার অর্থ একটি স্ত্রী পিঁপড়া এক সাথে অন্য একাধিক পিঁপড়াকে নির্দেশ দিতে পারে। পিঁপড়া ফেরোমোন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের প্রতি সংবেদনশীল এবং এর দ্বারা তারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে।
এছাড়াও কিছু প্রজাতির পিঁপড়া নিয়ার-ফিল্ড শব্দ তৈরি করে আশপাশের পিঁপড়াদের সাথে যোগাযোগ করে। এভাবে একটি পিঁপড়া একই সাথে একাধিক পিঁপড়াকে সংকেত দিতে পারে। এই আয়াতে আল্লাহ ‘বলেছিল’ ব্যবহার করেছেন, যা মানুষের কথা বলার বেলায়ও ব্যবহার করা হয়।
যার অর্থ মানুষ যেমন শব্দ দিয়ে কথা বলে, সে রকম পিঁপড়াও শব্দ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে, যা বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর আগে আবিস্কার করেছেন। কয়েক বছর আগেও বিজ্ঞানীরা মনে করতেন পিঁপড়া কোনো শব্দ করতে পারেন না এবং তাদের শব্দ শোনার ক্ষমতা নেই।
‘তোমাদের ঘরগুলোতে প্রবেশ কর’ পিঁপড়াদের একাধিক ঘর রয়েছে। একটি পিঁপড়ার বাসা অনেকগুলো সংযুক্ত ঘর এবং নির্দিষ্ট পিঁপড়া নির্দিষ্ট ঘরে থাকে। স্ত্রী পিঁপড়া জানে পিঁপড়ারা যদি বাসায় ঢুকে পড়ে, তাহলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। পিঁপড়ার বাসা আর্কিটেক্টের জন্য এক বিস্ময় এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অসাধারণ নিদর্শন।
‘যাতে করে সুলায়মান”Ñ স্ত্রী পিঁপড়াটি নবী সুলায়মানকে চিনতে পেরেছিল। যার অর্থ স্ত্রী পিঁপড়া অনেক মানুষের মধ্যে কোনো একজনকে চিনতে পারে। মানুষের গা থেকেও ফেরোমোন বের হয়। ধারণা করা হয় স্ত্রী পিঁপড়া হয়ত নবী সুলায়মানের গা থেকে বের হওয়া ফেরোমোন সিগনেচার দিয়ে তাকে চিনতে পেরেছিল, যেভাবে কুকুর প্রতিটি মানুষকে চিনতে পারে। এছাড়াও এখানে লক্ষণীয় যে স্ত্রী পিঁপড়া আগাম বিপদ অনুধাবন করে সংকেত দিতে পারে। অর্থাৎ তাদের এতটুকু বুদ্ধিমত্তা আছে যে তারা বিপদ আগে থেকেই আঁচ করতে পারে।
‘এবং তার বাহিনী’Ñ পিঁপড়া বুঝতে পেরেছিল যে একটি বাহিনী আসছে। পিঁপড়ারা তাদের পা দিয়ে মাটিতে কম্পন অনুভব করতে পারে। একারণে তারা দূরে থেকেই বুঝতে পারে কেউ তাদের দিকে আসছে কিনা। একটি বাহিনী মাটিতে ব্যাপক কম্পন তৈরি করবে।
‘তোমাদের না বুঝে পিষে না ফেলে’Ñ স্ত্রী পিঁপড়া আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে নবী সুলায়মান এবং তার বাহিনী না বুঝে পিঁপড়াদের পিষে ফেলবে। সুতরাং স্ত্রী পিঁপড়া তার আশপাশের অবস্থা পর্যালোচনা করে বিপদের প্রকৃতি সম্পর্কে আগে থেকেই বুঝতে পারে।
বিজ্ঞানীদের জন্য এই আয়াতে আল্লাহ অনেকগুলো ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। প্রথমত বাসার বাইরে যে পিঁপড়ারা থাকে তারা সবাই স্ত্রী পিঁপড়া। পুরুষ পিঁপড়া সবসময় বাসার ভেতরে থাকে। সমস্ত কর্মী পিঁপড়া স্ত্রী। দ্বিতীয়ত কিভাবে একটি পিঁপড়া হাজার হাজার পিঁপড়ার সাথে যোগাযোগ করে রাসায়নিক পদার্থ এবং গন্ধ দিয়ে, যা একটি অত্যন্ত সফল মাধ্যম নির্ভরযোগ্যভাবে তথ্য সম্প্রচার করার জন্য। তৃতীয়ত কিভাবে হাজার হাজার পিঁপড়া সংকেত পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে বাসায় ঢুকে পড়ে খুবই অল্প সংঘর্ষ করে, যা কিনা বিজ্ঞানিদের জন্য যানবাহনের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নততর করার জন্য আইডিয়া দিয়েছে।
চতুর্থত, এককভাবে প্রতিটি পিঁপড়ার বুদ্ধি অল্প, কিন্তু হাজার হাজার পিঁপড়া সম্মিলিতভাবে উচ্চতর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় যাকে ‘সোয়ার্ম ইন্টেলিজেন্স’ বলে। পঞ্চমত, পিঁপড়ার কোনো সামাজিক শ্রেণি বিন্যাস নেই। তাদের কোনো দলনেতা নেই। কিভাবে হাজার হাজার পিঁপড়া কোনো দলনেতা, রাজা বা রাণী পিঁপড়ার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া প্রত্যেকে নিজের নিজের কাজ সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করে, তা এখনও একটি বিরাট বিস্ময় এবং এ নিয়ে গত বিশ বছর ধরে গবেষণা চলছে।
মানুষ যদি এরকম উন্নততর যান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে যার কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই এবং একটি বিশাল যন্ত্রের প্রতিটি অংশ নিজে থেকেই সবসময় সঠিক কাজ করে যাবে, তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক সমস্যার সমাধান করা যাবে।
সম্ভবত এই কারণেই আল্লাহ বলেছেন, ‘যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর [নিখুঁত] করেছেন’। ৩২:৭
বিজ্ঞান এভাবে অবিশ্বাসীদের কাছে কুরআন যে একটি ঐশ্বরিক গ্রন্থ তা প্রমাণ করে, আর কুরআন বিজ্ঞানকে পথ দেখায়।
মূল : ইয়াহইয়া ইব্রাহিমউৎসঃ আমাদের সময়
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন