পর্নোগ্রাফী দেখলে মস্তিষ্ক যেভাবে বদলে যায়
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ০৯ আগস্ট, ২০১৯, ০৪:১১:৫৮ রাত
স্নায়ুবিজ্ঞান (Neuroscience) এখন স্বীকার করে যে, মানুষের মস্তিষ্ক অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন। অর্থাৎ, অভিজ্ঞতা লাভের মধ্যদিয়ে মস্তিষ্কে পরিবর্তন ঘটে এবং আমরা যা দেখি, শুনি বা জানি, তার সবকিছুর সাথেই মস্তিষ্কের সংযোগ গড়ে ওঠে। দর্শন ক্লাসের আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে নতুন কোনো শহরের পথঘাট চেনা, এমনকি আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থেকে কোনো গান শোনা কিংবা টিভি দেখা — আমাদের প্রতিটি কাজের সাথেই মস্তিষ্কের তাৎক্ষনিক সংযোগ গড়ে ওঠে এবং মানুষ হিসেবে আমরা কে, কেমন, এই সংযোগগুলোই সেটা নির্ধারণ করে দেয়। পর্নোগ্রাফী দেখা একটি নীরব অথচ ভয়ঙ্কর সমস্যা যা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। এর মাধ্যমে নারীদের চাইতে পুরুষরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এই বিষয়টির ক্ষতিকারক দিক সংক্রান্ত অধিকাংশ নিবন্ধগুলোতে বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণত মনস্তাত্ত্বিক এবং/অথবা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা হয়। তবে বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে স্নায়ুবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে পর্নোগ্রাফী দেখার ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সম্পর্কে আলোপাত করা হবে।
প্রচলিত যে মডেলটির (model) মাধ্যমে মানুষের শেখা এবং মনে রাখার প্রক্রিয়াটিকে ব্যাখ্যা করা হয়, সেই মডেলটির ভিত্তি হলো সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি (synaptic plasticity)। সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি হলো মস্তিষ্কের সেই ক্ষমতা যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতায় সাড়া দিতে মস্তিষ্ক তার নিউরনসমূহের (মস্তিষ্ক কোষ) মধ্যকার সংযোগগুলোর শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কি পরিমাণ এবং কোন ধরণের স্নায়বিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এবং সেইসাথে কি পরিমাণ নিউরোট্রান্সমিটারের (neurotransmitter – আনবিক গঠন সম্পন্ন স্নায়বিক সংবাহক) নির্গমন ঘটবে, তা নিয়ন্ত্রণ করাও এই ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ মানুষ ডোপামিন সম্পর্কে যা কিছু জানে তা বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি যেমন, মুহাম্মাদ আলি বা মাইকেল জে. ফক্সের পারকিন্সন্ (Parkinson) রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থেকে। শরীরে ডোপামিনের কার্যকারিতায় ত্রুটি দেখা দিলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।
মস্তিষ্কের একটি অত্যাবশ্যক নিউরোট্রান্সমিটার হলো ডোপামিন (dopamine)। এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সচেতন অঙ্গসঞ্চালন, অনুপ্রেরণা দান, প্রতিদান দেওয়া, শাস্তি দেওয়া এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। শিশুদের এডিএইচডি (ADHD – Attention Deficit-Hyperactivity Disorder), বার্ধক্যজনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস (cognitive decline) এবং বিষণ্ণতার (depression) ক্ষেত্রেও ডোপামিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
আনন্দ অনুভব, প্রতিদান, শিক্ষণ প্রক্রিয়া ইত্যাদিতে ডোপামিনের ভূমিকা অবিচ্ছেদ্য। কোকেইনের মতো ড্রাগগুলোর কার্যকারিতা ডোপামিনারজিক সিস্টেম (Dopaminergic System) কেন্দ্রিক। এই ড্রাগগুলোর কার্যকারিতার ফলে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। ফলে শরীরে “উচ্চমাত্রার শক্তি বা আনন্দ অনুভূতি” সৃষ্টি হয় যা ক্রমেই আসক্তিতে পরিণত হয়। একাধিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ডোপামিন আনন্দের আবহ তৈরি করে, নয়তো প্রত্যক্ষ আনন্দ দানে ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে, চরম আনন্দ লাভের মুহূর্তে, নয়তো আনন্দ লাভের পরে, ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। এই নিঃসরণের সময়, ডোপামিন শারীরিক ক্রিয়ার সাথে মস্তিষ্কের নতুন সংযোগগুলোকে আরও বেশি শক্তিশালী (strengthen) এবং দৃঢ় (reinforce) করে যা ব্যক্তিকে পুরনায় ওই আনন্দ লাভের জন্য একই কাজ করতে উৎসাহ যোগাতে থাকে।
পর্নোগ্রাফীর সাথে এর সম্পর্কটা কোথায়? পর্দায় যৌন ক্রিয়াকলাপের দৃশ্য দেখলে যৌন উত্তেজনা তৈরি হয়, যা ডোপামিনারজিক সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। কোকেইনের মতো ড্রাগগুলো ঠিক এই কাজটিই করে থাকে। পর্দায় যৌন ক্রিয়াকলাপের দৃশ্য দেখার ফলে মস্তিকে নতুনভাবে তৈরি হওয়া সংযোগগুলো প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত ডোপামিনের দ্বারা আরও বেশি শক্তিশালী হয়। ফলে পর্দায় দেখা দৃশ্যগুলো ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিপটে না-গিয়ে — যেক্ষেত্রে দৃশ্যগুলো পর্দা বন্ধ হওয়ার পর মন থেকে মুছে যেতো — ডোপামিনের দৃঢ়ীকরণ (reinforcement) প্রক্রিয়ার কারণে স্থায়ী স্মৃতিপটে প্রবেশ করে। এখানে দৃশ্যগুলো দর্শকের মনে রিপ্লেই মোডে (replay mode – বারবার চোখে ভাসতে থাকে) দৃঢ়ভাবে গেঁথে যায়। এক্ষেত্রে সমস্যার কথা হলো, কোনো কিছুকে যতবেশি স্মরণ করা হবে, মস্তিষ্কে তা ততবেশি স্থায়ী রূপ লাভ করতে থাকবে। স্কুলের ওই দিনগুলোর কথা মনে করে দেখুন — পরীক্ষার পড়া মুখস্ত করতে গিয়ে একটা বিষয় বারবার পুনরাবৃত্তির পর তা মাথায় গেঁথে যেতো!
পর্নোগ্রাফী হলো অলীক কল্পনা (fantasy)। প্রতিটি নতুন দৃশ্যে একজন নতুন নারীকে দেখে দর্শকের ভ্রম জাগে যেন প্রতিবার সে নতুন একজন নারীর সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে। পর্নোগ্রাফীর “তারকা” অভিনেত্রীরা ছবিতে পুরুষদের কাছে নিজেদেরকে মর্যাদাহীন এবং অবমাননাকর যৌনকর্মের শিকারে পরিণত করে। এসব যৌন আচরণ মানসিকভাবে সুস্থ অধিকাংশ মানুষের কাছে সম্পূর্ণরূপে অশ্লীল, জঘন্য। পর্নোগ্রাফীর চিত্রনাট্যের কাজই হলো দুএকটা পরিচিত এবং স্বাভাবিকভাবে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী আচরণের মাঝে এমন কিছু যৌন আচরণকে ঢুকিয়ে দেওয়া যেগুলো যৌনভাবে সুখকর নয়। আর এভাবেই দর্শক নতুন নতুন যৌন আচরণের সাথে পরিচিত হয়ে থাকে। পর্দা থেকে অবাস্তব কল্পনার পাশাপাশি এক ধরনের তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ (electromagnetic wave) বিচ্ছুরিত হয় যা মস্তিষ্কে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। ফলে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। পরিণতিতে, এক ধরনের বাস্তব অনুভূতির তৈরি হয় ঠিকই, তবে যে আনন্দ এবং তৃপ্তিবোধ তৈরি হয়, তা নিজেকে ধোকা দেওয়া ছাড়া কিছু নয়। ডোপামিন নতুন করে পাওয়া যৌনতৃপ্তি সাথে সাথে মস্তিষ্কের সংযোগসমূহকে শক্তিশালী করে। ফলে যা ঘটে তা হলো, ব্যক্তি তখন তার স্ত্রীকে নিজের অবচেতন মনে জমে থাকা কল্পিত যৌন আচরণে লিপ্ত হওয়ার আহ্বান করে।
মস্তিষ্কে সংঘটিত ঘটনা প্রবাহ খুবই যৌগিক আবার সরলও। পর্নোগ্রাফী দেখার ফলে সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি মস্তিষ্কে নতুন সংযোগ তৈরি করে। ফলে নতুন করে লাভ করা স্মৃতিগুলো সংরক্ষিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা যেহেতু যৌন উত্তেজনার সাথে সম্পৃক্ত, তাই ডোপামিন নিঃসরণের মাধ্যমে নতুন সৃষ্ট সংযোগগুলো বহুগুণ বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং পর্দায় দেখা দৃশ্যগুলো স্থায়ী স্মৃতিপটে সংরক্ষিত হওয়ার ফলে দুই ধরণের ঘটনা ঘটে :
১) কোকেইন মস্তিষ্কের যে গঠনতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে, পর্নোগ্রাফীও ঠিক সেই গঠনতন্ত্রকেই উদ্দীপ্ত করে। ফলে আসক্তির জন্ম হয়।
২) পুরুষ প্রায়ই তার স্ত্রীর সাথে এসব দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন করতে চায় যার অনিবার্য পরিণাম হতাশা। এই পুনর্মঞ্চায়নের প্রত্যাশা পূরণ হবার নয়। কারণ একাধিক নতুন নতুন নারীর পরিবর্তে স্ত্রী শুধু একজন। আরও ভয়ানক বিষয় হলো, এই একজন নারীর যৌন বাচনভঙ্গি, আচরণ, শারীরিক আবেদন ইত্যাদি পুরুষের মনে জমে থাকা ওইসব নতুন নতুন নারীর সাথে কখনোই মিলবে না। হয়তো প্রথম প্রথম দুএকবার পুনর্মঞ্চায়ন বেশ উত্তেজনাকর এবং আনন্দঘন হতে পারে। তবে শীঘ্রই বাস্তবতা এসে হানা দেবে এবং যখন আনন্দ পাওয়া যাবে না, ডোপামিনের নিঃসরণও তখন বন্ধ হয়ে যাবে।
দুঃখজনক হলো, ঘটনার এখানেই শেষ নয়। অবাস্তব এবং কাল্পনা নির্ভর প্রত্যাশার কারণে বাস্তবে যখন হতাশার সৃষ্টি হবে, মস্তিষ্ক তখন ডোপামিনের নিঃসরণ শুধু বন্ধই করবে না; বাস্তবিক অর্থে, এই নিঃসরণ স্তর তখন সর্বনিম্ন স্তরেরও নীচে নেমে গিয়ে বিষণ্ণতার স্তরে গিয়ে পৌঁছবে। ফলে দাম্পত্য জীবনে হতাশা, অতৃপ্তি এবং অশান্তির জন্ম হবে। কারণ স্ত্রীকে সে “যেভাবে প্রত্যাশা করে, সেভাবে পায় না।” অনেক নারী নিজেদেরকে আরও বেশি আবেদনময়ী করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও, এমনকি স্বামীদের মনের মতো করে আত্মমর্যাদাহীন, বিকৃতরুচির যৌনকর্মের জন্য নিজেদেরকে স্বামীদের হাতে তুলে দিলেও, পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত স্বামীরা খুব সামান্য সময়ের জন্যই আনন্দ লাভ করবে এবং অল্প সময়েই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও স্ত্রী নিজেকে অনাকর্ষণীয় এবং আবেগিক দিক থেকে পরিত্যক্তা মনে করবে। অথচ সে জানবেও না যে, পর্নোগ্রাফীর ডোপামিনের সাথে সে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।
এই সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, মস্তিষ্ক একটি সামগ্রিক সত্ত্বার মতো কাজ করে; এর কার্যকারিতার পরিধি হলো সর্বব্যাপী। ফলে মস্তিষ্কের কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরিবর্তন হলে অন্যান্য অংশও প্রভাবিত হয়। পর্নোগ্রাফী দেখার মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থেই পুরো মস্তিষ্কের সকল স্নায়বিক সংযোগগুলোর পুনর্বিন্যাস ঘটে। ফলে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ এবং তাদের কর্মদক্ষতার উপর কেমন প্রভাব পড়ে, তা গবেষণার ভিন্ন একটি ক্ষেত্র যা গভীর মনোযোগের দাবি রাখে।
স্নায়ুবিজ্ঞান পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বেশ পীড়াদায়ক চিত্র তুলে ধরলেও, এটি পুরোপুরি দুঃসংবাদ নয়। যদিও পর্নোগ্রাফী এবং কোকেইন মস্তিষ্কের একই গঠনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, তথাপি দুটির পরিণতি পুরোপুরি এক নয়। মস্তিষ্কের সংশ্লিষ্ট গঠনতন্ত্রকে বিষমুক্ত করার জন্য, কোকেইনে আসক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই একটি সুশৃঙ্খল এবং ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অন্যথায়, তার জীবনই ঝুঁকিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে, অনেক মানুষ যারা পর্নোগ্রাফী দেখার বাস্তব এবং সুস্পষ্ট ক্ষতির দিক সম্পর্কে জেনে গেছে, তারা কোনো রকম নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ের শিকার না হয়েই, তাৎক্ষনিকভাবে পর্নোগ্রাফী দেখা বাদ দিতে পারে। এজন্য প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে এবং নিজেকে নানা রকম কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখতে হবে। প্রথম প্রথম অতীতের দেখা পর্নোগ্রাফীর মনোযোগ বিনষ্টকারী দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকবে যা পর্নোগ্রাফী পরিত্যাগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ইচ্ছা এবং উদ্যমের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। তবে সুখের কথা হলো, পর্নোগ্রাফী দেখার কারণে মস্তিস্কের স্নায়বিক সংযোগগুলোর যেভাবে পুনর্বিন্যাস ঘটেছিল, সেই পুনর্বিন্যাস ঘটানো আবারও সম্ভব। মস্তিষ্ক খুবই কর্মদক্ষ একটি অঙ্গ যা অব্যবহৃত সংযোগগুলো থেকে মুক্ত হতে পারে। ব্যক্তি যতই পর্নোগ্রাফীর সংযোগগুলোকে পুনরুদ্দীপ্ত না-করে থাকবে, মস্তিষ্কের পক্ষে ওইসব সংযোগগুলো পরিত্যাগ করার সম্ভাবনাও তত বেশি। আবার পূর্বের অভিজ্ঞতায় জড়ালে এবং মস্তিষ্ককে যৌন আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিষয়ে ব্যস্ত রাখলে, অনিবার্যভাবেই তা অন্যান্য সংযোগগুলোকে পুনরুদ্দীপ্ত করবে। কর্ম সম্পাদনের জন্য মস্তিষ্কের শুধু সময় এবং পছন্দ প্রয়োজন। ব্যক্তি তার মস্তিষ্কে যে বিষয়টি বারবার সক্রিয় করবে, মস্তিষ্ক সেটিকেই তার পছন্দ হিসেবে গ্রহণ করবে।
বিষয়: বিবিধ
১১১০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এসব নিয়ে পুরো দাম্পত্য জীবনটাই খিটিমিটি লেগে থাকে , ডিভোর্সও হয়।
বিয়ের পর একজন স্বামী কি পায় তার স্ত্রীর কাছে ? সেক্স - এটা ছাড়া আর কিছু কি? তাও আবার মাসের ১০ দিন সে থাকে অসুস্থ। বাকী ২০ দিনও চলে নানা টালবাহানা।
তো এই সময়ে শরিয়ত সন্মতভাবে একজন স্বামী কি করবে? সবর করার কথা বলা আছে শরিয়তে।
তাহলে একজন নারী যদি তার স্বামীকে স্বামীর সামর্থ্যের বাইরেও চাপ দেয় তাহলে একজন স্বামী কি চাইতে পারে না তার স্ত্রীও তার চাহিদা মত তার সাথে সেক্স করবে?
পর্নোগ্রাফি পুরুষদেরকেই তো নষ্ট করছে যার ফলে সে চাচ্ছে তার স্ত্রীও একজন পর্ন নায়িকার মত ''এমনকি স্বামীদের মনের মতো করে আত্মমর্যাদাহীন, বিকৃতরুচির যৌনকর্মের জন্য নিজেদেরকে স্বামীদের হাতে তুলে দিলেও'' পারফর্ম করবে , তাহলে নারীরা এরকম শিখলো কাদের কাছ থেকে যে স্বামীকে দিয়ে তার সামর্থ্যের বাইরেও চাপিয়ে খেলবে?
নিজের সামর্থ্যের বাইরে হলেও পুরুষরা কি করছে না সেসব চেষ্টা যেটার জন্য সে চায় তার স্ত্রীকে খুশী রাখতে। তাহলে স্ত্রীদের সমস্যা কোথায় আপনার মতে ''এমনকি স্বামীদের মনের মতো করে আত্মমর্যাদাহীন, বিকৃতরুচির যৌনকর্মের জন্য নিজেদেরকে স্বামীদের হাতে তুলে দিলেও'' এরকম কাজ করে তার স্বামীকে আনন্দ দিতে , খুশী রাখতে? একটু সুখে থাকার জন্য বা আনন্দের জন্য বাড়তি কষ্ট করা বা করতে বলা কি খুব অন্যায়? আপনি আপনার স্ত্রীর আবদারে কক্সবাজার কিংবা ব্যাংকক, থাইল্যান্ডে নিয়ে যাচ্ছেন না যাতে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়? এতে কি আপনার কোন কষ্ট হয় না আর্থিক কিংবা মানসিক? চিন্তা করেন না মাসের বাকিটা সময় কি ভাবে চালাবেন?
দাম্পত্য জীবন হচ্ছে একটা খেলার মত - এখানে সবাই চায় প্রতিপক্ষকে চাপিয়ে খেলতে। আপনি যদি মনে করেন আপনার চাহিদার যে স্টাইল সেটা আপনার স্ত্রীর জন্য আত্মমর্যাদাহীন, বিকৃতরুচির হবে যার জন্য এসব আচরণ পরিত্যাজ্য, তাহলে সেটা ভুল হবে।
কারণ সে কিন্তু সন্তানের স্কুলের অন্য অভিভাবকদের কাহিনী শুনিয়ে আপনাকে সব সময়ই প্যারার মধ্যে রাখবে এবং আদায় করে ছাড়বে। তার কাছে কখনই মনে হবে না এটা আপনার উপর বাড়তি চাপ। সে মনে করবে এটা তার অধিকার তা আপনার জন্য সেটা যতই সামর্থ্যের বাইরে হোক না কেন।
আপনি এমন জিনিস চাচ্ছেন যা তার মধ্যেই আছে - সেটা তার কাছ থেকে নিতেও আপনার বিবেকে লাগছে। আর সে আপনার কাছে এমন জিনিস চাচ্ছে যেটা আপনাকে জোগাড় করতে কাঠখড় পুড়াতে হবে এবং সেটা তার বিবেকেও লাগবে না।
এতটা আত্মমর্যাদাহীন হওয়া কি উচিত? উনারা যেমন চাইবে সেরকম দেবার সামর্থ্যও উনাদের থাকতে হবে। এরকম মন মানসিকতা না হলে খিটিমিটি লেগেই থাকবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন