Facebook ( ফেইজবুক ) ব্যবহারের নিয়মাবলী কুরআন ও হাদিসের আলোকে Labels: কবীরা গুনাহ কি, কিয়ামত, জাহান্নাম, ব্যভিচার কি, সকল পোষ্ট সমূহ, হারাম, হালাল
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ০২:২০:৪৬ দুপুর
>>>> ফেসবুক (Facebook) ব্যবহারের নিয়মাবলী -
কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা <<<<
লেখাটা একটু বড় হলেও পড়া দরকার।
===================================================
দার্শনিক বার্ট্রার্ন্ড রাসেল বলেন “Islam is a complete comprehensive and rational code of life”. “একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে ইসলাম বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামের বিজয় আজ অনিবার্য।” সুতরাং, দার্শনিক বার্ট্রার্ন্ড রাসেল এর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলা যায় যে, ফেসবুক এ জগতের এক নতুন শক্তির নাম। এর মাধ্যমে কোনো দেশে বিপ্লব সাধিত হচ্ছে। কোথাও বা সরকারের গদি টালমাটাল হচ্ছে। আবার এর মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারীরা মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে। অশ্লীলতা ও নগ্নতাকে সহনীয় করে তুলছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছেই আজ এই ফেসবুক এক আফিমের মতো। পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য তরুণ-তরুণী এর মাধ্যমে অবৈধ সম্পর্ক গড়ছে যদিও বিবাহ পূর্ব প্রেম ভালোবাসা ইসলামে নিষিদ্ধ। পক্ষান্তরে এর মাধ্যমে মিথ্যার রাজত্বও কায়েম করছে। কেননা বিজাতীয়দের বিজাতীয় নীতিমালা মুুসলিমরা অনুসরন করে আজ তাদের এই দুরাবস্থা। তাই এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা এর একটি হাদীস
প্রণিধানযোগ্য। যেমন রাসূল (সা বলেছেন,
«من تشبه بقوم فهو منهم».
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ, অনুসরণ ও সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে”। [ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ: ২/৫০; আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছে উৎকৃষ্ট সনদে, হাদীস নং-৪০৩১; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ‘সহীহ আল-জামে‘ আস-সাগীর’, হাদীস নং-৬০২৫]।
হে সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! কাফিরদের অনুকরণ, অনুসরণ ও তাদের সামঞ্জস্য বিধান করার বিষয়টি নিঃসন্দেহে মারাত্মক বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়, যা ইসলাম সীমাহীন গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি তার আমানত যথাযথভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণভাবে আদায় করেছেন এবং উম্মতের কল্যাণ কামনা করেছেন, তিনি উম্মতকে বহু হাদীসে এবং বিভিন্ন সময় ও সুযোগে কাফিরদের অনুকরণ করার ব্যাপারে কখনও সার্বিকভাবে আবার কখনও কখনও সবিস্তারে সতর্ক করে দিয়েছেন। অথচ এ উম্মতের মধ্য থেকে কতিপয় দল ও গোষ্ঠী এ অনুসরণ-অনুকরণ করার কাজে জড়িত হয়ে পড়েছে, যদিও তাদের তাতে জড়িত হওয়ার পর্যায় ভিন্ন ভিন্ন স্তরের। আবার সময়ে সময়ে এ কাজের ভয়াবহতাও ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ের, তবে সম্ভবত আমার পক্ষ থেকে বাড়িয়ে বলা হবে না যদি এটা বলি যে, এ যুগের মুসলিমগণ যে হারে কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণ করছে, তা অতীতের যে কোনো সময়ে (উম্মত কর্তৃক কাফিরদের) অনুসরণ-অনুকরণ করার চেয়ে অত্যধিক ভয়ঙ্কর পর্যায়ের।
মূলতঃ বিজাতীয়দের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই ফেসবুকের মাধ্যমে হাজারো মুসলিম ভাই-বোন নিজেদের কল্যাণকর চিন্তা ও জনহীতকর ধারণা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিশুদ্ধ আকীদা ও চিন্তা-চেতনার প্রসারও সহজ হয়ে গেছে। যখন যে উপলক্ষ আসছে সে সম্পর্কে ইসলামের দিক-নির্দেশনা সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে এর মাধ্যমে। কেননা আসলে কোন সৃষ্টি জিনিসই খারাপ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সৃষ্টি করা হয় নি। এর ব্যবহার মূলত কি ভাবে করতে হবে সেটাই হলো বিবেচ্য বিষয়। এছাড়াও প্রত্যেক আবিষ্কারের দুটো দিক রয়েছে। ভালো ও খারাপ। এখন মানুষ বিবেচনা করে দেখবে যে, সে এই সৃষ্ট ব্যবহারকে কোন পথে ব্যয় করছে। কেননা এ প্রসঙ্গে সূরা আস সাফফাতের ৯৬নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেছেন,
وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ
‘অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা সৃষ্টি করেছেন’? [সূরা আস সাফফাত, আয়াত নং - ৯৬]
সুতরাং, উক্ত আয়াতের আলোকে বলা যায় যে, ফেসবুক ব্যবহার করতে হলে আমাদেরকে কতিপয় নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। অতএব, যেহেতু আমরা মানুষ। আর আমাদের বিচার করা হবে সুতরাং, আমরাই চিন্তা করব যে কোন পথে এর ব্যবহার প্রয়োগ করা যাবে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা সূরা শামসে বলেছেন,
وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا
কসম নাফ্সের এবং যিনি তা সুসম করেছেন।
فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا
অতঃপর তিনি তাকে অবহিত করেছেন তার পাপসমূহ ও তার তাকওয়া সম্পর্কে।
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا
নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তকে পরিশুদ্ধ করেছে। [সূরা শামস, আয়াত - ৭-৯]
অতএব, উক্ত আয়াতগুলোর আলোকে বলতে পারি যে, আমাদের নফসকে আমরাই নিজেদের চিন্তা চেতনা দিয়ে আর আল্লাহকে ভয় করে এর সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহার করার কথা চিন্তা করব ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন, আমীন।
অধিকন্তু উক্ত আয়াতগুলোর আলোকে পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, বর্তমানে তাই নেককার মুত্তাকি লোকদেরও দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে। কিন্তু মার্কস জুকারবার্গের এ দুনিয়ায় পা রেখেই তাঁরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন অনেক দুরাচারী বা রুচিহীন লোকের উৎপাতের কারণে। অনেকে অযথা অভব্য বাক্য লিখে কিংবা অশালীন ছবি পোস্ট করে নিজের ওয়ালে। আর তা তাদের কাছে ভালো লাগলেও অনেকের কাছেই যে ন্যাক্কারজনক প্রতীয়মান হয় সেদিকে তারা খেয়াল করে না। এদের দেখে দমে গেলে হবে না। চেষ্টা করে যেতে হবে সাধ্যমত ভালো কথা বলে যেতে। সে লক্ষ্যেই বক্ষমান প্রবন্ধে চেষ্টা করব ফেসবুক ব্যবহারের কয়েকটি ইসলামী নির্দেশিকা তুলে ধরতে। এগুলো মূলত ইসলামের আদর্শ বোধ থেকেই আমাদের সবার খেয়াল করা দরকার। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে বুঝার এবং মানার তাওফীক দান করুন। আমীন।
>>>> ফেসবুক ব্যবহারের নিয়মাবলী <<<<
ফেসবুক ব্যবহার নির্দেশিকা :
(১) লজ্জাই নারীর চরিত্র - এটা জানা কথা যে পরিমিত লজ্জা নারী চরিত্রকে উচ্চতায় নিয়ে যায়। লজ্জা নারীর বিশেষ ভূষণ বৈ কি। আর লজ্জা খোয়ানোকে তার জন্য একটি দুর্যোগ ভাবা হয়। এটি কলংকিত করাকে এক ধরনের বেইজ্জতি গণ্য করা হয়। মেয়েদের বিদ্যা অর্জন করা ফরয তবে তা হতে হবে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী। এছাড়াও মেয়েরা প্রকাশ্যে অশ্লীলভাবে কোন ছবি ব্যবহার করতে পারবে না বা কাউকে দেখাতে পারবে না। সেটা করা অনুচিত। এ কারনেই মেয়েদের কে প্রকাশ্যে সাজগোজ করে বের হওয়া মোটেও উচিত নয় আর ফেসবুকে তো ছবি দেয়ার বিধানই নেই। লাইক ও কমেন্টস তো দূরের কথা। কেননা ইসলামে তা নিষেধও করা হয়েছে। সূরা নূর এর ৩১নং আয়াতে মেয়েদের সম্বন্ধে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট ঘোষনা দিয়েছেন -
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর, আয়াত নং - ৩১)।
(২) আচরন ব্যবহারের বিধি বিধান - এটা সর্বসম্মত বিষয় যে প্রথম যা ব্যক্তির চিন্তা, তার সংস্কৃতি এবং তার আচার-ব্যবহারের পরিচয় প্রদান করে তা হলো তার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলো। অতএব যখন আপনি ফেসবুকে কারও তথ্য শেয়ারের মধ্য দিয়ে অনুধাবন করবেন যে সে প্রেম ও মেকি ভালোবাসার বিদ্যালয় থেকে পাশ করে এসেছে বা এখনও সেখানে অধ্যয়নরত, তবে আপনি তার থেকে নিজের হাত ধুয়ে নিন। অন্য ভাষায়, তাঁকে একপাশে সরিয়ে দিন এবং তার কাছ থেকে সসম্মানে সরে আসুন। অথচ বিবাহপূর্ব প্রেম ভালোবাসা ইসলামে নিষিদ্ধ। এ সম্বন্ধে সূরা বাকারার ২৩৫নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُمْ بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنْتُمْ فِي أَنْفُسِكُمْ ۚ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَٰكِنْ لَا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَنْ تَقُولُوا قَوْلًا مَعْرُوفًا ۚ وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنْفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ
আর এতে তোমাদের কোন পাপ নেই যে, তোমরা নারীদেরকে ইশারায় যে প্রস্তাব করবে কিংবা মনে গোপন করে রাখবে। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা অবশ্যই তাদেরকে স্মরণ করবে। কিন্তু বিধি মোতাবেক কোন কথা বলা ছাড়া গোপনে তাদেরকে বিবাহ পূর্ব প্রেমের (কোন) প্রতিশ্রুতি দিয়ো না। আর আল্লাহর নির্দেশ (ইদ্দত) তার সময় পূর্ণ করার পূর্বে বিবাহ বন্ধনের সংকল্প করো না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে যা রয়েছে তা জানেন। সুতরাং তোমরা তাকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল। [সূরা বাকারা, আয়াত নং - ২৩৫]
সুতরাং, উক্ত আয়াতের আলোকে আমাদের কে এসব ঘৃণ্য কাজ থেকে দূরে সরে আসা উচিত আর তাওবা করা উচিত। তবে আমাদের অবশ্যই স্মরন রাখা উচিত যে, মুমিন নর ও নারী উভয়ের বন্ধু। এর কারন পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে -
وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহাসফলতা। [সূরা তাওবা, আয়াত নং - ৭১]
(৩) বিশ্বস্ততা ও সত্যনিষ্ঠতা - বিশ্বস্ততা ও সত্যনিষ্ঠতা হলো অন্যদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার চাবিকাঠি। এটা গ্যারান্টি দেয়া যায় যে এই সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত বন্ধুরা আপনাকে একদিন আঘাত দেবে না। কিন্তু মিথ্যাবাদী, বিশ্বাস ও আস্থাহীন লোক আপনার জন্য খামোখাই অকল্যাণ ডেকে আনবে। আর তাছাড়া নিজের ক্ষুদ্র পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারে সে মরিয়া, তবে আপনাকে নিশ্চিত হয়ে যেতে হবে যে তাকে আপনি ডিলিট করবেনই। তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক চ্ছিন্ন করতেই হবে। কারণ, তাঁর উপস্থিতি আপনার ক্ষতিই বয়ে আনবে।
(৪) ফেসবুক ব্যবহারে মেয়েদের বিধান - আমার প্রিয় বোন, মেয়েদের ফেসবুকে শুধু যদি মেয়েরা অংশগ্রহণ করে তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কিন্তু যদি কোন ছেলের সাথে অত্যন্ত প্রয়োজনে অংশগ্রহণ করতেই হয়, তবে সেখানে যেন থাকে আপনার আত্মসম্মানবোধ। ছবি শেয়ার করা কখনো আপনার জন্য বৈধ হবে না। তার সাথেই শুধু অতীব প্রয়োজনীয় কোন আলাপ করতে পারেন যে আপনাকে সম্মান করে, আলাপ করতে চাইলে শালিন ও মার্জিত শব্দ চয়ন করে। ভদ্রোচিত পন্থায় আপনার সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করবে। অতএব সে আপনাকে সম্বোধন করায়, আপনার প্রশংসায় কিংবা অভিজ্ঞতায় মুগ্ধ হবার ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করবে না। কিন্তু আপনি যাকে বা যাদের দেখবেন ফেসবুকে রুচিহীনভাবে সম্বোধন করছে কিংবা শ্রদ্ধার সীমা থেকে দূরে গিয়ে সম্বোধন করছে, যেমন : হে চাঁদ, আমার মধু, আমার ভালোবাসা ... ইত্যাদি বলছে, তখন আপনি বুঝে নেবেন যে সে বা তারা প্রেম-ভালোবাসার প্রতারক ভিখিরি। সে আপনাকে অসম্মান করবে, আপনার মর্যাদায় আঘাত দেবে।
অতএব আপনি আর তাদেরকে আপনার সামনে থাকতে দেবেন না। এমনকি দ্বিতীয়বারের মতোও না। কেননা আল্লাহ তাআলা সৌন্দর্য প্রকাশ করার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেন:
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
“এবং তারা যেন প্রকাশ না করে তাদের সৌন্দর্য ততটুকু ভিন্ন যতটুকু স্বভাবত:ই প্রকাশ হয়ে পড়ে”। অর্থাৎ নারীর কোন সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য পুরুষের সামনে প্রকাশ করা বৈধ নয়। অবশ্য যে সব সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য আপনা আপনিই প্রকাশ হয়ে পড়ে তার কথা ভিন্ন, যেমন বোরকা, লম্বা চাদর ইত্যাদি। এগুলো প্রকাশ করাতে গুণাহ নেই। এ জন্য মহান আল্লাহ বলেছেন: ততটুকু ভিন্ন যতটুকু স্বভাবতই প্রকাশ হয়ে পড়ে। তিনি বলেননি যতটুকু তারা প্রকাশ করে। আবার এ আয়াতেই আল্লাহ তাআলা সৌন্দর্য প্রদর্শন করার নিষিদ্ধতা ঘোষণা করেছেন:
এবং তারা যেন তাদের স্বামী (আয়াতে উল্লেখিত মোট বারজন ব্যতিক্রমভুক্ত লোকদের) ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”।
উক্ত আয়াতে দুই জায়গায় যীনাত’ শব্দ ব্যবহার করে ব্যতিক্রম ব্যক্তিদের বিধান বণর্না দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, যীনাত (সাজ-পোষাক) দুই প্রকার, দ্বিতীয়টি প্রথমটি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যথা- প্রথম: যীনাত যা প্রকাশ করা ব্যতিরেকে এমনিই প্রকাশ হয়ে পড়ে। যেমন- উপরের কাপড়, বোরকা ইত্যাদি ওগুলো ঢেকে রাখা অসম্ভব (তাই তা দেখা ইসলামি শরিয়তে অনুমোদিত) দ্বিতীয়: যা অপ্রকাশমান (গোপনীয়) অর্থাৎ, যে সাজের মাধ্যমে নারী নিজেকে সুসজ্জিত করে, যা অনিচ্ছাকৃতভাবে-স্বভাবতই প্রকাশ পায় না। এ দ্বিতীয় প্রকার যীনাত দর্শন করা সকলের জন্য জায়েয এবং দ্বিতীয়টার বেলায় ব্যতিক্রম করার মধ্যে কোন ফায়েদা থাকে না।
(৬) লাইক প্রসঙ্গে বিধান - কোনো বিষয়ে লাইক দিলে তা আপনার দিকে পথ দেখাবে। লাইক পাওয়া ব্যক্তিকে আপনার প্রতি আগ্রহী করবে। যদিও আপনি এমন ব্যক্তি হন যে পড়ে না, দেখে না, কিছু বোঝে না। যে শুধু নিজের ভালোলাগার ইষৎ প্রকাশ ঘটায় এবং খানিক বাদেই চলে যায়। অতএব আপনি কী বলছেন, কী পড়ছেন এবং কোনটাতে লাইক দিচ্ছেন তা জেনে বুঝেই দিন। ফেসবুকে কতই না পেইজ ওপেন করা হয়েছে খারাপ ও কুৎসিত, যা ধর্ম ও চরিত্র বিরোধী। আর কত জনকেই দেখা যায় নির্বুদ্ধিতাবশত এসব পেইজকে লাইক দেন। অথচ তারা খেয়াল করেন না যে এই লাইক দেয়াটা ওই পাতা উন্মোচনকারীকে এসব গাল-মন্দ ও ন্যাক্কারজনক কথাবার্তায় আরও উৎসাহিত করবে। তার লাইক দেয়ার মাধ্যমে বিষয়টি আরও প্রচার পাবে। আপনি ভালো করেই জানেন যে, অন্যায় করা যেমন অপরাধ অন্যায় পছন্দকারী হয়ে তার প্রসার করাও তেমনি অপরাধ। অথচ তারা বুদ্ধিমানের পরিচয় দিতে পারেন এ ব্যাপারে নিরবতা ও নিস্পৃহতা প্রদর্শন করে। এমন করা হলে চটুল প্রচারকামী ওই ব্যক্তি নিরুৎসাহিত হবে, তার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে, অধিক পাঠক টানা কিংবা অন্যকে ক্ষুব্ধ করার অশুভ অভিপ্রায়ে ধাক্কা লাগবে।
(৭) গিভ এন্ড টেক বা বদলা বিধান প্রসঙ্গে - অন্যদের সঙ্গে গিভ এন্ড টেক বা ‘দাও এবং নাও’ নীতি পরিহার করুন। কারণ আপনি যদি এই নীতির ওপর চলেন তাহলে অচিরেই আপনি এমন স্বার্থপর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পাবেন যে কি-না সবকিছুতেই বিনিময় প্রত্যাশা করে- এমনকি অনুগ্রহেরও। ফেসবুকে আপনি ওই বিষয়গুলো বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না যা নতুন কোনো একাউন্ট খোলা ছাড়াই অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা সম্ভব। এবং যাতে আপনার বা তাদের ওয়াল থেকে এ ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। বিনিময় বা বদলার জন্য অপেক্ষায় না থেকে সৌজন্যবোধের পরিচয় দিন। শেয়ারযোগ্য মনে করলে সেটি পোস্টকারীর সঙ্গে পরিচয় বা দীর্ঘ সম্পর্ক আছে কি-না তার প্রতি খেয়াল না করে অবশ্যই শেয়ার করুন। আর স্মরণ করুন যে আপনিও তো তাদের কারও পাতায় কোনো প্রকার জবাব দেন নি। অথচ তারপরও তারা বিষয়টি আপনার জন্য সংরক্ষণ করে গেছেন। বরং আপনি তাদেরটা পড়বেন আর তারাও আপনারটা পড়বে। আর এটিই সবচে গুরুত্বপূর্ণ!
(৮) নিষিদ্ধ বিষয় থেকে সাবধানতা অবলম্বন - আপনার ফেসবুক ওয়ালে শুধু তা-ই রাখবেন যা সুন্দর এবং কল্যাণকর। আর আপনি নিষিদ্ধ বিষয় থেকে হুঁশিয়ার থাকবেন। কারণ তা এক প্রকার গুনাহে জারিয়াহ বা চলমান পাপ কিংবা কোনো বিষণ্ণ বিষয়কে মনে করিয়ে দেবে। কারণ, এমন হতে পারে যে কোনো মেয়ের জন্য গানের কোনো অংশ রেখে দিলেন আর সে মারা গেল –আল্লাহ তার ওপর রহম করুন- তখন তা তার কোনো বন্ধু গ্রহণ করল যা সে অন্যদের মাঝে প্রচার করল। আর আপনি যদি মারা যান? তবে তা তো আরও উদ্বেগের বিষয়। সবসময় আপনি যদি মন্দ বর্জন না করতে পারেন তবে অন্তত চেষ্টা করুন। তা শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। তা অন্যের কাছে প্রচার করে নিজের গুনাহের পাল্লা ভারি করার কোনো প্রয়োজন নেই।
সুতরাং, উপরোক্ত আলোচনার সারাংশে বলা যায় যে, আপনি আপনার নিজের জীবনের পাতাগুলো দিয়ে অমর হতে পারেন। সম্মানের সঙ্গে আপনি আলোচিত হতে পারেন। এমনকি মৃত্যুর পরও। অতএব আপনার ফেসবুকের পাতাটিকে বানান ইসলামের ও শান্তির এবং সৌন্দর্য ও ভালোবাসার। এমন পাতা যা আপনার নাম ও কীর্তিতে সদা সর্বদা আলোচিত ও স্পন্দিত হতে থাববে।
সর্বোপরি মনে রাখবেন আপনার প্রতিটি কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আর আমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রতিটি সময়ের হিসেব দিতে হবে। তাই আমাদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিধান মানতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা তাই বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا
“আখেরী রাসূল তোমাদের জন্যে যা এনেছেন বিনাশর্তে গ্রহণ কর, আর তা থেকে বিরত থেকে থাক যা তিনি নিষেধ করেছেন।” (সূরা হাশর: ৭)।
উপরোক্ত পবিত্র কুরআনের আয়াতটি হাদীসেও এসেছে। নিম্নে হাদীসটি উপস্থাপন করা হলোঃ-
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ قَالَ: حَدَّثَنَا شَرِيكٌ عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا»
:: সুনানু ইবনে মাজাহ্ :: হাদীস ১ [রাসুলুল্লাহ (ﷺ) - এর সুন্নতের বিবরন অধ্যায়] আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ রাক‘আত সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি তোমাদেরকে যা আদেশ দেই, তোমরা তা গ্রহণ করো এবং যে বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করি তা থেকে বিরত থাকো। তাখরীজ কুতুবুত তিসআহ: বুখারী ৭২৮৮, মুসলিম ১৩৩৭, তিরমিযী ২৬৭৯, আহমাদ ৭৩২০, ৭৪৪৯, ৮৪৫০, ৯২২৯, ৯৪৮৮, ৯৫৭৭, ২৭২৫৮, ৯৮৯০, ২৭৩১২, ১০২২৯, ইবনু মাজাহ ২। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: ইরওয়াউল গালীল ১৫৫, ৩১৪; সহীহাহ ৮৫০। অতএব, একজন মুমিনের ঈমানের অবস্থান কোন পর্যায়ে রয়েছে, এ হাদীস তা বুঝার এক মানদণ্ড।
সুতরাং, পরিশেষে বলা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সবাইকে প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো গ্রহণ করার এবং মন্দ দিকগুলো বর্জন করার তাওফীক দিন। সকল মন্দ থেকে বাঁচার এবং কল্যাণে শরীক হওয়ার তাওফীক দান করুন। প্রতিটি সময়কে আখিরাতের সঞ্চয় বাড়ানোর কাজে ব্যয় করবার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১২৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন