কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে মদপান ও ধূমপানের অপকারিতা
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ০৩:২৩:৫৯ রাত
বিষয়
1. অভিমত
2. অবতরণিকা
3. মদ্য পান অথবা যে কোনো মাদকদ্রব্য সেবন
4. মাদকদ্রব্য সেবনের অপকারসমূহ
5. মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত হওয়ার বিশেষ কারণসমূহ
6. মদখোরের শাস্তি
7. ধূমপান
8. ধূমপান সংক্রান্ত আরো কিছু কথা
9. ধূমপানের কাল্পনিক উপকারসমূহ
10. যেভাবে আপনি ধূমপান ছাড়বেন
ভূমিকা
অভিমত
সমাজ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন এবং সমাজ-জমির বুক থেকে যাঁরা আগাছা তুলে ফেলার চেষ্টা করেন, তাঁদের মধ্যে লেখক মোস্তাফিজুর রহমান মাদানী সাহেব একজন। হক জেনে ও মেনে নিয়ে তার প্রচার করার গুরুদায়িত্ব এবং তার পথে তাঁর অদম্য প্রয়াস ও প্রচেষ্টা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
সমাজ-সংস্কারের সহায়করূপে কাজে দেবে তাঁর এ পুস্তিকাটিও। সমাজে এত পাপ ও পাপীর দাপট যে, অনেকের সাপ থেকে বাঁচা সম্ভব, কিন্তু পাপ থেকে বাঁচা সহজ নয়। বিশ্বায়নের যুগে দীন-বিমুখ সমাজ বহুবিধ পাপের বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে। তা দেখে-শুনে প্রত্যেক দায়িত্বশীলের যে কর্তব্য হওয়া উচিৎ, তার কিঞ্চিৎ বহিঃপ্রকাশ এ পুস্তিকার প্রণয়ন।
মহান আল্লাহর কাছে আকুল মিনতি, তিনি যেন আমাদেরকে ও লেখককে কলমের জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিন। দেশে-বিদেশে ইসলামী সর্বাঙ্গ-সুন্দর পরিবেশ গড়ার মহান লক্ষ্যে পুস্তক রচনার কাজ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিন এবং পাঠক-পাঠিকাকে পুস্তিকার নির্দেশানুযায়ী আমল করার প্রেরণা এবং মুসলিম ঘর ও সমাজ গড়ার চেতনা দান করুন। আমীন।
বিনীত
আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী
আল-মাজমা‘আহ, সঊদী আরব। ৩০/১১/১১ইং
অবতরণিকা
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে যিনি আমাদেরকে নিখাদ তাওহীদের দিশা এবং সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্যজ্ঞান দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর জন্য যিনি আমাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত সফল জীবন অতিবাহনের পথ বাতলেছেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।
প্রতিনিয়ত রাস্তা-ঘাটে বিচরণকারী প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমই ঘরে-বাইরে, শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালতে, হাট-বাজারে এমনকি যাত্রীবাহী সব ধরনের যানবাহনে তথা সর্বস্থানে ধূমপায়ীদের সস্পর্ধ অবাধ ধূমপান অবলোকন করে কমবেশি মর্মব্যথা অনুভব না করে পারেন না। আমি ও তাদেরই একজন। তাই সর্বনাশা এ প্রকাশ্য ব্যাধি থেকে উত্তরণের জন্য যে কোনো সঠিক পন্থা অনুসন্ধান করা নিজস্ব ধর্মীয় কর্তব্য বলে আমি জ্ঞান করি। তাই প্রথমতঃ সবাইকে মৌখিকভাবে এ ঘৃণিত বস্তুটির সার্বিক প্রতিরোধের প্রতি প্রয়োজনীয় উৎসাহ প্রদান এবং এর ভয়ঙ্কর পরিণতি বুঝাতে সচেষ্ট হই। কিন্তু তাতে আশানুরূপ তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় নি। ভাবলাম হয়তো বা কেউ মনযোগ দিয়ে শুনছেন না অথবা তা দীর্ঘক্ষণ ক্রিয়াশীল থাকার জন্য প্রয়োজনান্দাযকাল মনোন্তকরণে বিদ্ধকরণকর্ম সম্পাদিত হচ্ছে না। তাই লেখালেখিকে দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি। অথচ আমি এ ক্ষেত্রে নবাগত। কতটুকু সফলকাম হতে পারবো তা আল্লাহ মা‘লুম। তবুও প্রয়োজনের খাতিরে ভুল-ত্রুটির প্রচুর সম্ভাবনা পশ্চাতে রেখে ক্ষুদ্র কলম খানা হস্তে ধারণের দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছি। সফলতা তো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই হাতে। তবে “নিয়্যাতের ওপরই সকল কর্মের ফলাফল নির্ভরশীল” রাসূল মুখনিঃসৃত এ মহান বাণীই আমার দীর্ঘ পথসঙ্গী।
অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে, এ পুস্তিকাটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পৃক্ত যতগুলো হাদীস উল্লেখ হয়েছে সাধ্যমত এর বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা নাসেরুদ্দীন আলবানী রহ.-এর হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধনির্ণয়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সকল যোগ্য গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থাননির্দেশ সংযোজন করা হয়েছে। তবুও সম্পূর্ণরূপে নিরেট নির্ভুল হওয়ার জোর দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না।
শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের চক্ষুগোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ভুল গুরুসামান্য যতটুকুই হোক না কেন লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবো। যে কোনো কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ তা‘আলা সবার সহায় হোন।
এ পুস্তিকা প্রকাশে যে কোনো জনের যে কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কৃপণতা করছি না। ইহপরকালে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেককে আকাঙ্খাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ প্রত্যাশা। আমীন, সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
সর্বশেষে জনাব শাইখ আব্দুল হামীদ ফায়যী সাহেবের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছিনে। যিনি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার আবেদনক্রমে পাণ্ডলিপিটি আদ্যপান্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং তাঁর অতীব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এর উত্তম প্রতিদান দিন এবং তার জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দিন এ আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।
লেখক
মদ্য পান অথবা যে কোনো মাদকদ্রব্য সেবন
মদ্য পান অথবা যে কোনো নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ তথা সেবন (চাই তা খেয়ে কিংবা পান করেই হোক অথবা ঘ্রাণ নেওয়া কিংবা ইঞ্জেকশান গ্রহণের মাধ্যমেই হোক) একটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ, যার ওপর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভিশাপ ও অভিসম্পাত রয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে মদ্যপান তথা যে কোনো নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ অথবা সেবনকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। শয়তান চায় এরই মাধ্যমে মানুষে মানুষে শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে মানুষকে গাফিল করতে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١﴾ [المائدة: ٩٠، ٩١]
“হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় মদ (নেশাকর দ্রব্য), জুয়া, মূর্তি ও লটারীর তীর এ সব নাপাক ও গর্হিত বিষয়। শয়তানের কাজও বটে। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকে। তাহলেই তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো এটিই চায় যে, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ ও সালাত থেকে তোমরা বিরত থাকো। সুতরাং এখনো কি তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকবে না?” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯০-৯১]
উক্ত আয়াতে মদ্যপানকে শির্কের পাশাপাশি উল্লেখ করা, তাকে অপবিত্র ও শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করা, তা থেকে বিরত থাকার ইলাহী আদেশ, তা বর্জনে সমূহ কল্যাণ নিহিত থাকা, এরই মাধ্যমে শয়তান কর্তৃক মানুষে মানুষে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা এবং আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ ও সালাত থেকে গাফিল রাখার চেষ্টা এবং পরিশেষে ধমকের সুরে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ থেকে মদ্যপানের ভয়ঙ্করতার পর্যায়টি সুস্পষ্টরূপেই প্রতিভাত হয়।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَـمَّا حُرِّمَتِ الْـخَمْرُ مَشَى أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ e بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، وَقَالُوْا: حُرِّمَتِ الْـخَمْرُ وَجُعِلَتْ عِدْلاً لِلشِّرْكِ»
“যখন মদ্যপান হারাম করে দেওয়া হলো তখন সাহাবীগণ একে অপরের নিকট গিয়ে বলতে লাগলো: মদ হারাম করে দেওয়া হয়েছে এবং সেটাকে শির্কের পাশাপাশি অবস্থানে রাখা হয়েছে”।[1]
মদ বা মাদকদ্রব্য সকল অকল্যাণ ও অঘটনের মূল
আবূদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আমার প্রিয় বন্ধু (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ মর্মে অসিয়ত করেন:
«لاَ تَشْرَبِ الْـخَمْرَ؛ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ»
“(কখনো) তুমি মদ পান করো না। কারণ, তা সকল অকল্যাণ ও অঘটনের চাবিকাঠি”।[2]
একদা বনী ইসরাঈলের জনৈক রাষ্ট্রপতি সে যুগের জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তিকে চারটি কাজের যে কোনো একটি করতে বাধ্য করে। কাজগুলো হলো: মদ্যপান, মানব হত্যা, ব্যভিচার ও শূকরের গোশত খাওয়া। এমনকি তাকে এর কোনো না কোনো একটি করতে অস্বীকার করলে তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিশেষে উক্ত ব্যক্তি বাধ্য হয়ে মদ্য পানকেই সহজ মনে করে তা করতে রাজি হলো। যখন সে মদ্য পান করে সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে গেলো তখন উক্ত সকল কাজ করাই তার জন্য সহজ হয়ে গেলো।
এ কথা সবারই জানা থাকা দরকার যে, হাদীসের পরিভাষায় সকল মাদক দ্রব্যকেই ‘খামর’ বলা হয় তথা সবই মদের অন্তর্ভুক্ত। আর মদ বলতেই তো সবই হারাম।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ»
“প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই মদ বা মদ জাতীয়। আর প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই তো হারাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক মদ জাতীয় বস্তুই হারাম”।[3]
আয়েশা, আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ, মু‘আবিয়া ও আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মধুর সুরার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
«كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ ، وَبِعِبَارَةٍ أُخْرَى: كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ»
“প্রত্যেক পানীয় যা নেশাকর তা সবই হারাম। অন্য শব্দে, প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই হারাম”।[4]
তেমনিভাবে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, যে বস্তুটি বেশি পরিমাণে সেবন করলে নেশা আসে তা সামান্য পরিমাণে সেবন করাও হারাম।
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ্, আব্দুল্লাহ ইবন আমর ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَمَا أَسْكَرَ كَثِيْرُهُ فَقَلِيْلُهُ حَرَامٌ»
“প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই হারাম এবং যে বস্তুটির বেশি পরিমাণ নেশাকর তার সামান্যটুকুও হারাম”।[5]
শুধু আঙ্গুরের মধ্যেই মদের ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা যে কোনো বস্তু থেকেও বানানো যেতে পারে এবং তা সবই হারাম।
নু‘মান ইবন বাশীর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ مِنَ الْعِنَبِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ التَّمْرِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْعَسَلِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْبُرِّ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الشَّعِيْرِ خَمْرًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَمِنَ الزَّبِيْبِ خَمْرًا»
“নিশ্চয় আঙ্গুর থেকে যেমন মদ হয় তেমনিভাবে খেজুর, মধু, গম এবং যব থেকেও তা হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কিসমিস থেকেও মদ হয়।[6]
নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الْـخَمْرَ مِنَ الْعَصِيْرِ، وَالزَّبِيْبِ، وَالتَّمْرِ، وَالْحِنْطَةِ، وَالشَّعِيْرِ، وَالذُّرَةِ، وَإِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ كُلِّ مُسْكِرٍ»
“নিশ্চয় মদ যেমন যে কোনো ফলের রস বিশেষভাবে আঙ্গুরের রস থেকে তৈরি হয় তেমনিভাবে কিসমিস, খেজুর, গম, যব এবং ভুট্টা থেকেও তা তৈরি হয়। আর আমি নিশ্চয় তোমাদেরকে প্রত্যেক নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করছি”।[7]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মিম্বারে উঠে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পাঠের পর বললেন,
«نَزَلَ تَحْرِيْمُ الْـخَمْرِ وَهِيَ مِنْ خَمْسَةٍ: الْعِنَبِ وَالتَّمْرِ وَالْعَسَلِ وَالْحِنْطَةِ وَالشَّعِيْرِ، وَالْـخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ»
“মদ হারাম হওয়ার আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তখন পাঁচটি বস্তু দিয়েই মদ তৈরি হতো। আর তা হচ্ছে, আঙ্গুর, খেজুর, মধু, গম এবং যব। তবে মদ বলতে এমন সব বস্তুকেই বুঝানো হয় যা মানব ব্রেইনকে প্রমত্ত করে”।[8]
আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশ শ্রেণির লোককে লা‘নত তথা অভিসম্পাত করেছেন, আনাস ইবন মালিক ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন
«لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ رسول الله صلى الله عليه وسلم فِيْ الْـخَمْرِ عَشْرَةً: عَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَشَارِبَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالْـمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَآكِلَ ثَمَنِهَا، وَالْـمُشْتَرِيَ لَهَا، وَالْـمُشْتَرَاةَ لَهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لُعِنَتِ الْـخَمْرُ بِعَيْنِهَا، وَفِي رِوَايَةٍ: لَعَنَ اللهُ الْـخَمْرَ وَشَارِبَهَا»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের ব্যাপারে দশজন ব্যক্তিকে লা‘নত বা অভিসম্পাত করেন: যে মদ বানায়, যে মূল কারিগর, যে পান করে, বহনকারী, যার নিকট বহন করে নেওয়া হয়, যে অন্যকে পান করায়, বিক্রেতা, যে লাভ খায়, খরিদদার এবং যার জন্য খরিদ করা হয়।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সরাসরি মদকেই অভিসম্পাত করা হয়।
কোনো কোন বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা অভিসম্পাত করেন মদ ও মদপানকারীকে ...”।[9]
কেউ দুনিয়াতে মদ পান করে থাকলে আখিরাতে সে আর মদ পান করতে পারবে না। যদিও সে জান্নাতী হোক না কেন। যদি না সে দুনিয়াতে তা থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে নেয়। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ فِيْ الدُّنْيَا لَمْ يَشْرَبْهَا فِيْ الْآخِرَةِ إِلاَّ أَنْ يَّتُوْبَ، وَفِيْ رِوَايَةِ الْبَيْهَقِيْ: وَإِنْ أُدْخِلَ الْـجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করলো সে আর আখিরাতে মদ পান করতে পারবে না; যদি না সে দুনিয়াতে তা থেকে খাঁটি তাওবা করে নেয়। ইমাম বায়হাক্বীর বর্ণনায় রয়েছে, যদিও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়”।[10]
অভ্যস্ত মাদকসেবী মূর্তিপূজক সমতুল্য। সে জান্নাতে যাবে না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مُدْمِنُ الْـخَمْرِ كَعَابِدِ وَثَنٍ
“অভ্যস্ত (Adicted) মাদকসেবী মূর্তিপূজক সমতুল্য”।[11]
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا أُبَالِيْ شَرِبْتُ الْـخَمْرَ أَوْ عَبَدتُّ هَذِهِ السَّارِيَةَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عَزَّ وَ جَلَّ»
“মদ পান করা এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতিরেকে এ (কাঠের) খুঁটিটির ইবাদাত করার মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য করি না। কারণ, উভয়টিই আমার ধারণা মতে একই পর্যায়ের অপরাধ”।[12]
আবূদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ»
“অভ্যস্ত মাদকসেবী জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।[13]
তাছাড়া কোনো ব্যক্তি কোনো মাদকদ্রব্য সেবন করে নেশাগ্রস্ত বা মাতাল হলে আল্লাহ তা‘আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোনো সালাত কবুল করবেন না। আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّـارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْـخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا رَدْغَةُ الْـخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ»
“কেউ মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হলে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবে যদি সে খাঁটি তাওবা করে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তাহলে আবারো তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবুও যদি সে খাঁটি তাওবা করে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তাহলে আবারো তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবুও যদি সে খাঁটি তাওবা করে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব হবে কিয়ামতের দিন তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করানো। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজ”।[14]
মদ্যপায়ী ব্যক্তি মদ পানের সময় ঈমানদার থাকে না
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَزْنِيْ الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِيْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلا يَشْرَبُ الْـخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ؛ وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ حِيْنَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوْضَةٌ بَعْدُ»
“ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। লুটেরা যখন মানব জনসম্মুখে লুট করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেওয়া হয়”।[15]
অনুরূপভাবে কোনো এলাকায় মদের বহুল প্রচলন ঘটলে তখন পৃথিবীতে স্বভাবতই ভূমি ধস হবে, মানুষের আঙ্গিক অথবা মানসিক বিকৃতি ঘটবে এবং আকাশ থেকে আল্লাহর আযাব নিক্ষিপ্ত হবে। ইমরান ইবন হুসাইন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فِيْ هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَتَى ذَاكَ؟ قَالَ: إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْـمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْـخُمُوْرُ»
“এ উম্মতের মাঝে ভূমি ধস, মানুষের আঙ্গিক অথবা মানসিক বিকৃতি এবং আকাশ থেকে আল্লাহর আযাব নিক্ষিপ্ত হবে। তখন জনৈক মুসলিম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেটা আবার কখন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন গায়ক-গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ্য প্রচলন ঘটবে এবং মদ্য পান করা হবে”।[16]
এতদুপরি মদ পানের পাশাপাশি মদ পান করাকে হালাল মনে করা হলে সে জাতির ধ্বংস তো একেবারেই অনিবার্য। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا اسْتَحَلَّتْ أُمَّتِيْ خَمْسًا فَعَلَيْهِمُ الدَّمَارُ: إِذَا ظَهَرَ التَّلاَعُنُ، وَشَرِبُوْا الْـخُمُوْرَ، وَلَبِسُوْا الْـحَرِيْرَ، وَاتَّخَذُوْا الْقِيَانَ، وَاكْتَفَى الرِّجَـالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ»
“যখন আমার উম্মত পাঁচটি বস্তুকে হালাল মনে করবে তখন তাদের ধ্বংস একেবারেই অনিবার্য। আর তা হচ্ছে, একে অপরকে যখন প্রকাশ্যে লা‘নত করবে, মদ্য পান করবে, সিল্কের কাপড় পরিধান করবে, গায়িকাদেরকে সাদরে গ্রহণ করবে, (যৌন ব্যাপারে) পুরুষ পুরুষের জন্য যথেষ্ট এবং মহিলা মহিলার জন্য যথেষ্ট হবে”।[17]
ফিরিশতাগণ মদ্যপায়ীর নিকটবর্তী হয় না
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ثَلاَثَةٌ لاَ تَقْرَبُهُمُ الْـمَلاَئِكَةُ: الْـجُنُبُ وَالسَّكْرَانُ وَالْـمُتَضَمِّخُ بِالْـخَلُوْقِ»
“ফিরিশতারা তিন ধরনের মানুষের নিকটবর্তী হয় না। তারা হচ্ছে, জুনুবী ব্যক্তি (যার গোসল ফরয হয়েছে) মদ্যপায়ী এবং খালূক্ব (যাতে জাফ্রানের মিশ্রণ খুবই বেশি) সুগন্ধি মাখা ব্যক্তি”।[18]
ঈমানদার ব্যক্তি যেমন মদ পান করতে পারে না তেমনিভাবে সে মদ পানের মজলিসেও উপস্থিত হতে পারে না। জাবির ও আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلاَ يَشْرَبِ الْـخَمْرَ، مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلاَ يَجْلِسْ عَلَى مَائِدَةٍ يُشْرَبُ عَلَيْهَا الْـخَمْرُ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন মদ পান না করে এবং যে মজলিসে মদ পান করা হয় সেখানেও যেন সে না বসে”।[19]
যে ব্যক্তি জান্নাতে মদ পান করতে ইচ্ছুক সে যেন দুনিয়াতে মদ পান না করে এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করতে সক্ষম হয়েও তা পান করে নি আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে জান্নাতে মদ পান করাবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّسْقِيَهُ اللهُ الْـخَمْرَ فِيْ الْآخِرَةِ فَلْيَتْرُكْهَا فِيْ الدُّنْيَا، وَمَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّكْسُوَهُ اللهُ الْـحَرِيْرَ فِيْ الْآخِرَةِ فَلْيَتْرُكْهُ فِيْ الدُّنْيَا»
“যার মন আনন্দিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে আখিরাতে মদ পান করাবেন সে যেন দুনিয়াতে মদ পান করা ছেড়ে দেয় এবং যার মনে আনন্দ অনুভূত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে আখিরাতে সিল্কের কাপড় পরাবেন সে যেন দুনিয়াতে সিল্কের কাপড় পরা ছেড়ে দেয়”।[20]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: مَنْ تَرَكَ الْـخَمْرَ وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ لَأَسْقِيَنَّهُ مِنْهُ فِيْ حَظِيْرَةِ الْقُدُسِ»
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যে ব্যক্তি মদ পান করতে সক্ষম হয়েও তা পান করেনি আমি তাকে অবশ্যই পবিত্র বিশেষ স্থান জান্নাতে মদ পান করাবো”।[21]
যে ব্যক্তি প্রথম বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে সালাত পড়তে পারলো না সে যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার উপরিভাগের সব কিছুর মালিক ছিলো এবং তা তার থেকে একেবারেই ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ سُكْرًا مَرَّةً وَاحِدَةً؛ فَكَأَنَّمَا كَانَتْ لَهُ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا فَسُلِبَهَا، وَمَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ سُكْرًا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ طِيْنَةِ الْـخَبَالِ، قِيْلَ: وَمَا طِيْنَةُ الْـخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ جَهَنَّمَ»
“যে ব্যক্তি প্রথমবারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে সালাত ছেড়ে দিলো সে যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার উপরিভাগের সব কিছুর মালিক ছিলো এবং তা তার থেকে একেবারেই ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি চতুর্থ বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে সালাত ছেড়ে দিলো আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব হবে তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করানো। জিজ্ঞাসা করা হলো: ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজরক্ত”।[22]
কোনো রোগের চিকিৎসা হিসেবেও মদ পান করা যাবে না
ত্বারিক ইবন সুওয়াইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিকিৎসার জন্য মদ তৈরি করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
«إِنَّهُ لَيْسَ بِدَوَاءٍ، وَلَكِنَّهُ دَاءٌ»
“মদ তো ঔষুধ নয়, বরং তা রোগই বটে”।[23]
উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيْمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ»
“আল্লাহ তা‘আলা হারাম বস্তুর মধ্যে তোমাদের জন্য কোনো চিকিৎসা রাখেন নি”।[24]
নামের পরিবর্তনে কখনো কোনো জিনিস হালাল হয়ে যায় না। সুতরাং নেশাকর দ্রব্য যে কোনো আধুনিক নামেই সমাজে চালু হোক না কেন তা কখনো হালাল হতে পারে না। অতএব, তামাক, সাদাপাতা, জর্দা, গুল, পচা তথা মদো সুপারি ইত্যাদি হারাম। কারণ, তা নেশাকর। সামান্য পরিমাণেই তা খাওয়া হোক অথবা বেশি পরিমাণে। পানের সাথেই তা খাওয়া হোক অথবা এমনিতেই চিবিয়ে চিবিয়ে। ঠোঁট ও দাঁতের মাড়ির ফাঁকেই সামান্য পরিমাণে তা রেখে দেওয়া হোক অথবা তা গিলে ফেলা হোক। নেশা হিসেবেই তা ব্যবহার করা হোক অথবা অভ্যাসগতভাবে। মোটকথা, এটার সর্বপ্রকার ও সর্বপ্রকারের ব্যবহার সবই হারাম।
আবু উমামাহ বাহিলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَذْهَبُ اللَّيَالِيْ وَالْأَيَّامُ حَتَّى تَشْرَبَ فِيْهَا طَائِفَةُ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ؛ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا»
“রাত-দিন যাবে না তথা কিয়ামত আসবে না যতক্ষণ না আমার একদল উম্মত মদ পান করে। তবে তা মদের নামেই পান করবে না বরং অন্য নামে”।[25]
‘উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَشْرَبُ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ بِاسْمٍ يُسَمُّوْنَهَا إِيَّاهُ»
“আমার একদল উম্মত মদ পান করবে। তবে তা নতুন নামে যা তারা তখন আবিষ্কার করবে”।[26]
কেউ কেউ আবার মদ পান না করলেও মদের ব্যবসার সাথে যে কোনোভাবে অবশ্যই জড়িত। মদ পান না করলেও মদ বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও সিগারেট ও বিড়ি বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও তিনি সাদাপাতা, গুল ও জর্দা খাওয়ায় সরাসরি জড়িত। বরং কেউ কেউ তো কথার মোড় ঘুরিয়ে অথবা কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে তা হালাল করতে চান। অন্যকে ধূমপান করতে নিষেধ করলেও নিজের পেটে কেজি কেজি সাদাপাতা ও জর্দা ঢুকাতে লজ্জা পান না। তাদের অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা উচিৎ। নিজে ভালো হতে না পারলেও অন্যকে ভালো হতে সুযোগ দেওয়া উচিৎ। আল্লাহর লা‘নতকে অবশ্যই ভয় পেতে হবে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَـمَّا نَزَلَتِ الْآيَاتُ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ فِيْ الرِّبَا؛ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ e فَحَرَّمَ التِّجَارَةَ فِيْ الْـخَمْرِ»
“যখন সুদ সংক্রান্ত সূরা বাক্বারাহ্’র শেষ আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয় তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘর থেকে বের হয়ে মদের ব্যবসা হারাম করে দেন”।[27]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ حَرَّمَ الْـخَمْرَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـمَيْتَةَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـخِنْزِيْرَ وَثَمَنَهُ»
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বিক্রিমূল্যও। মৃত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বিক্রিমূল্যও। শূকর হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বিক্রিমূল্যও”।[28]
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ ـ ثَلاَثًا ـ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمَ فَبَاعُوْهَا وَأَكَلُوْا أَثْمَانَهَا، وَإِنَّ اللهَ إِذَا حَرَّمَ عَلَى قَوْمٍ أَكْلَ شَيْءٍ حَرَّمَ عَلَيْهِمْ ثَمَنَهُ وَفِيْ رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَةَ: فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا»
“আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত পড়ুক ইয়াহূদীদের ওপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বদ-দো‘আটি তিন বার দিয়েছেন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর চর্বি হারাম করে দিয়েছেন। তখন তারা তা সরাসরি না খেয়ে বিক্রি করে বিক্রিলব্ধ পয়সা খেলো। অথচ তাদের এ কথা জানা নেই যে, আল্লাহ তা‘আলা কোনো সম্প্রদায়ের উপর কোনো কিছু খাওয়া হারাম করে দিলে তার বিক্রিমূল্যও হারাম করে দেন। ইবন মাজাহর বর্ণনায় রয়েছে, যখন তাদের উপর চর্বি হারাম করে দেওয়া হয় তখন তারা চর্বিগুলো একত্র করে আগুনের তাপে গলিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিলো”।[29]
মদ্যপান কিয়ামতের আলামতগুলোর অন্যতম
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَّظْهَرَ الْـجَهْلُ، وَيَقِلَّ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتُشْرَبَ الْـخَمْرُ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ، حَتَّى يَكُوْنَ لِخَمْسِيْنَ اِمْرَأَةً قَيِّمُهُنَّ رَجُلٌ وَاحِدٌ»
“কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে এও যে, মূর্খতা বিস্তার লাভ করবে, জ্ঞান কমে যাবে, ব্যভিচার বেড়ে যাবে, মদ পান করা হবে, পুরুষ কমে যাবে এবং মহিলা বেড়ে যাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন মহিলার দায়িত্বশীল শুধু একজন পুরুষই হবে”।[30]
মাদকদ্রব্য সেবনের অপকারসমূহ:
ক. নিয়মিত প্রচুর মাদকদ্রব্য সেবনে মানব মেধা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায়।
খ. এরই মাধ্যমে সমাজে বহু প্রকারের খুন ও হত্যাকাণ্ড বিস্তার লাভ করে। তথা সামাজিক সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।
গ. এরই মাধ্যমে অনেক পবিত্র চরিত্রবিশিষ্টা মহিলার ইজ্জত বিনষ্ট হয়। এরই সুবাদে দিন দিন সকল প্রকারের অপকর্ম, ব্যভিচার ও সমকাম বেড়েই চলছে। এমনো শোনা যায় যে, অমুক মদ্যপায়ী নেশার তাড়নায় নিজ মেয়ে, মা অথবা বোনের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে। এমন অঘটন করতে তো মুসলিম দুরে থাক, অনেক সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং বৌদ্ধও লজ্জা পায়।
মদ্যপায়ী ব্যক্তি কখনো কখনো নেশার তাড়নায় তার নিজ স্ত্রীকেও তালাক দিয়ে দেয়, অথচ সে তখন তা এতটুকু অনুভবও করতে পারে না। মূলত এ জাতীয় ব্যক্তির মুখে তালাক শব্দ বেশির ভাগই উচ্চারিত হতে দেখা যায়। আর এমতাবস্থায় সে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে সহবাস করার দরুন তা ব্যভিচার বলেই পরিগণিত হয়।
ঘ. এরই পেছনে কতো কতো মানব সম্পদ যে বিনষ্ট হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মাদকসেবীরা কখনো কখনো এক টাকার নেশার বস্তু একশ টাকা দিয়ে কিনতেও রাজি। তা হাতের নাগালে না পেলে তারা ভারী অস্থির হয়ে পড়ে।
ঙ. এরই মাধ্যমে কোনো জাতির সার্বিক শক্তি ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিনষ্ট হয়। কারণ, যুবকরাই তো জাতির শক্তি ও ভবিষ্যৎ। মাদকদ্রব্য সেবনের সুবাদে বহুবিধ অঘটন ঘটিয়ে কতো যুবক যে আজ জেলহাজতে রাত পোহাচ্ছে তা আর কারোর অজানা নেই।
চ. এরই কারণে কোনো জাতির অর্থনৈতিক, সামরিক ও উৎপাদন শক্তি ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। কারণ, এ সকল ক্ষেত্র তো স্বভাবত যুবকদের উপরই নির্ভরশীল। ইতিহাসে প্রসিদ্ধ যে, খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে চাইনিজ ও জাপানীরা যখন পরস্পর যুদ্ধের সম্মুখীন হয় তখন চাইনিজরা পরাজয় বরণ করে। তারা এ পরাজয়ের খতিয়ান খুঁজতে গিয়ে দেখতে পায় যে, তাদের সেনাবাহিনীর মাঝে তখন আফিমসেবীর সংখ্যা খুবই বেশি ছিলো। তাই তারা পরাজিত হয়েছে।
ছ. মাদকদ্রব্য সেবন করার অনেকগুলো শারীরিক ক্ষতিও রয়েছে। তম্মধ্যে ফুসফুস প্রদাহ, বদহজমী, ব্যথা, অনিদ্রা, অস্থিরতা, খিঁচুনি ইত্যাদি অন্যতম। এ ছাড়াও মাদক সেবনের দরুন আরো অনেক মানসিক ও শারীরিক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যা বিস্তারিত বলার অবকাশ রাখে না।
জ. মাদকদ্রব্য সেবনের মাধ্যমে হিফাযতকারী ফিরিশ্তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়। কারণ, তারা এর দুর্গন্ধে কষ্ট পায় যেমনিভাবে কষ্ট পায় মানুষরা।
ঝ. মাদকদ্রব্য সেবনের কারণে মাদকসেবীর কোনো নেক ও দো‘আ চল্লিশ দিন পর্যন্ত কবুল করা হয় না।
ঞ. মৃত্যুর সময় মাদকসেবীর ঈমানহারা হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে।
মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত হওয়ার বিশেষ কারণসমূহ:
ক. পরকালে যে সর্বকাজের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট জবাবদিহি করতে হবে সে চেতনা ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়া।
খ. সন্তান প্রতিপালনে মাতা-পিতার বিশেষ অবহেলা। যে বাচ্চা ছোট থেকেই গান-বাদ্য, নাটক-ছবি দেখে অভ্যস্ত তার জন্য এ ব্যাপারটি অত্যন্ত সহজ যে, সে বড় হয়ে ধূমপায়ী, মদ্যপায়ী, আফিমখোর ও গাজাখোর হবে। এমন হবেই না কেন অথচ তার হৃদয়ে কুরআন ও হাদীসের কোনো অংশই গচ্ছিত নেই; যা তাকে সঠিক পথ দেখাতে সক্ষম হবে। কিয়ামতের দিন এ জাতীয় মাতা-পিতাকে অবশ্যই কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।
গ. অধিক অবসর জীবন যাপন। কারণ, কেউ আল্লাহ তা‘আলার যিকির ও তাঁর আনুগত্য থেকে দূরে থাকলে, এমনকি দুনিয়ার যে কোনো লাভজনক কাজ থেকে দূরে থাকলেও শয়তান অবশ্যই তাকে বিপথগামী করবে।
ঘ. অসৎ সাথীবন্ধু। কারণ, অসৎ সাথীবন্ধুরা তো এটাই চাবে যে, তাদের দল আরো ভারী হোক। সবাই একই পথে চলুক। এ কথা তো সবারই মুখে মুখে রয়েছে যে, সৎ সঙ্গে সর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
মদখোরের শাস্তি
কারোর ব্যাপারে মদ অথবা মাদকদ্রব্য পান কিংবা সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে। সে যতবারই পান করে ধরা পড়বে ততবারই তার ওপর উক্ত দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা হবে। তবে তাকে এ জন্য কখনোই হত্যা করা হবে না। যা সকল গবেষক আলেমগণের ঐকমত্যে প্রমাণিত।
মু‘আওয়িয়া ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদখোর সম্পর্কে বলেন,
«إِذَا سَكِرَ وَفِيْ رِوَايَةٍ: إِذَا شَرِبَ الْـخَمْرَ فَاجْلِدُوْهُ، فَإِنْ عَادَ فَاجْلِدُوْهُ، فَإِنْ عَادَ فَاجْلِدُوْهُ، ثُمَّ قَالَ فِيْ الرَّابِعَةِ: فَإِنْ عَادَ فَاضْرِبُوْا عُنُقَهُ»
“যখন কেউ (কোনো নেশাকর দ্রব্য সেবন করে) নেশাগ্রস্ত হয়, অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন কেউ মদ পান করে, তখন তোমরা তাকে বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুর্থবার বললেন, আবারো নেশাগ্রস্ত হলে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে”।[31]
ইমাম তিরমিযী রহ. জাবির ও কাবীসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চতুর্থবার মদ পান করেছে এমন ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হলে তিনি তাকে মেরেছেন, তবে হত্যা করেন নি।
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أُتِيَ بِرَجُلٍ عِنْدَ النَّبِيِّ e قَدْ شَرِبَ الْـخَمْرَ، فَجَلَدَهُ بِجَرِيْدَتَيْنِ نَحْوَ أَرْبَعِيْنَ، وَفَعَلَهُ أَبُوْ بَكْرٍ، فَلَمَّا كَانَ عُمَرُ اسْتَشَارَ النَّاسَ، فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنُ بْنُ عَوْفٍ: أَخَفُّ الْـحُدُوْدِ ثَمَانُوْنَ، فَأَمَرَ بِهِ عُمَرُ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একদা জনৈক মদ্যপায়ীকে নিয়ে আসা হলে তিনি তাকে পাতা বিহীন দু’টি খেজুরের ডাল দিয়ে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও তার খিলাফতকালে তাই করেছিলেন। তবে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন খলীফা হলেন তখন তিনি সাহাবীগণের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তখন আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: সর্বনিম্ন দণ্ডবিধি হচ্ছে আশিটি বেত্রাঘাত। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাই বাস্তবায়নের আদেশ করেন”।[32]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এও বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُوْلُ اللهِ e يَضْرِبُ فِيْ الْـخَمْرِ بِالنِّعَالِ وَالْـجَرِيْدِ»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্যপানের শাস্তি স্বরূপ মদ্যপায়ীকে জুতো ও খেজুরের ডাল দিয়ে পেটাতেন”।[33]
আবু সাসান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন ওয়ালীদ ইবন উক্ববাহকেও তার নিকট উপস্থিত করা হলো। সে মানুষকে ফজরের দু’রাকাত সালাত পড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলো: তোমাদেরকে আরো কয়েক রাকাত বেশি পড়িয়ে দেবো কি? তখন দু’জন ব্যক্তি তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিলো। তাদের একজন তার ব্যাপারে এ বলে সাক্ষ্য দিলো যে, সে মদ পান করেছে। অপরজন এ বলে সাক্ষ্য দিলো যে, সে তাকে বমি করতে দেখেছে। তখন উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: সে মদ পান করেছে বলেই তো বমি করেছে? তখন তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন হে আলী! দাঁড়াও। ওকে বেত্রাঘাত করো। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার ছেলে হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, হে হাসান! দাঁড়াও। ওকে বেত্রাঘাত করো। তখন হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাগাম্বিত স্বরে বললেন, বেত্রাঘাত সেই করুক যে উক্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তখন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আব্দুল্লাহ ইবন জাফর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! দাঁড়াও। তাকে বেত্রাঘাত করো। তখন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বেত্রাঘাত করছিলেন আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা গণনা করছিলেন। চল্লিশটি বেত্রাঘাতের পর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন বেত্রাঘাত বন্ধ করো। অতঃপর তিনি বললেন,
«جَلَدَ النَّبِيُّ e أَرْبَعِيْنَ، وَجَلَدَ أَبُوْ بَكْرٍ أَرْبَعِيْنَ، وَعُمَرُ ثَمَانِيْنَ، وَكُلٌّ سُنَّةٌ، وَهَذَا أَحَبُّ إِلَيَّ»
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। আবু বকরও চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন; কিন্তু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আশিটি বেত্রাঘাত করেন। তবে চল্লিশটি বেত্রাঘাতই আমার নিকট বেশি পছন্দনীয়”।[34]
ধূমপান
ধূমপানও মাদকদ্রব্যের অধীন এবং তা প্রকাশ্য গুনাহসমূহের অন্যতম। ব্যাপারটি খুবই ভয়াবহ, তবে সে অনুযায়ী এর প্রতি কোনো গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না; বরং তা বিশেষ অবহেলায় পতিত। তাই ভিন্ন করে সেটার অপকার ও হারাম হওয়ার কারণগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি। যা নিম্নরূপ:
১. ধূমপান খুবই নিকৃষ্ট কাজ এবং বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি অত্যন্ত নিকৃষ্ট বস্তু। আর সকল নিকৃষ্ট বস্তুই তো শরী‘আতের দৃষ্টিতে হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
“আরো তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য পবিত্র ও উত্তম বস্তুসমূহ হালাল করে দেন এবং হারাম করেন নিকৃষ্ট ও অপবিত্র বস্তুসমূহ”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭]
খ. ধূমপানে সম্পদের বিশেষ অপচয় হয়। আর সম্পদের অপচয় তো হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا ٢٧﴾ [الاسراء: ٢٧]
“কিছুতেই সম্পদের অপব্যয় করো না। কারণ, অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ”। [সূরা আল-ইসরা, আযাত: ২৬-২৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ﴾ [الاعراف: ٣١]
“তবে তোমরা (পোশাক-পরিচ্ছদ ও পানাহারে) অপচয় ও অপব্যয় করো না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
একজন বিবেকশূন্যের হাতে নিজ সম্পদ উঠিয়ে দেওয়া যদি না জায়েয ও হারাম হতে পারে এ জন্য যে, সে উক্ত সম্পদগুলো অপচয় ও অপব্যয় করবে তা হলে আপনি নিজকে বিবেকবান মনে করে নিজেই নিজ টাকাগুলো কিভাবে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিতে পারেন এবং তা কিভাবে জায়েয হতে পারে? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تُؤۡتُواْ ٱلسُّفَهَآءَ أَمۡوَٰلَكُمُ ٱلَّتِي جَعَلَ ٱللَّهُ لَكُمۡ قِيَٰمٗا﴾ [النساء: ٥]
“আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জীবন নির্বাহের জন্য তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা তোমরা বেউকুফদের হাতে উঠিয়ে দিও না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫]
গ. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। আর আত্মহত্যা ও নিজ জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া মারাত্মক হারাম ও একান্ত কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ٢٩ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا ٣٠﴾ [النساء: ٢٩، ٣٠]
“তোমরা নিজেদেরকে যে কোনো পন্থায় হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল। যে ব্যক্তি সীমাতিক্রম ও অত্যাচার বশত এমন কান্ড করে বসবে তাহলে অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আর এ কাজটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষে একেবারেই সহজ”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯-৩০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ﴾ [البقرة: ١٩٥]
“তোমরা কখনো ধ্বংসের দিকে নিজ হস্ত সম্প্রসারিত করো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৫]
ঘ. বিশ্বের সকল স্বাস্থ্যবিদদের ধারণামতে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য একান্তই ক্ষতিকর। সুতরাং আপনি এরই মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্য বিনাশ করতে পারেন না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ»
“না তুমি নিজ বা অন্যের ক্ষতি করতে পারো। আর না তোমরা পরস্পর (প্রতিশোধের ভিত্তিতে) একে অপরের ক্ষতি করতে পারো”।[35]
ঙ. ধূমপানের মাধ্যমে মুমিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়। কারণ, ধূমপায়ী যখন ধূমপান করে তখন তার আশপাশের অধূমপায়ীরা বিড়ি ও সিগারেটের ধোঁয়ায় কষ্ট পান। এমনকি নিয়মিত ধূমপায়ীরা কথা বলার সময়ও তার আশপাশের অধূমপায়ীরা কষ্ট পেয়ে থাকেন। সালাত পড়ার সময় ধূমপায়ী ব্যক্তি যিকির ও দো’আ উচ্চারণ করতে গেলে অধূমপায়ীরা তার মুখের নিকৃষ্ট দুর্গন্ধে ভীষণ কষ্ট পেয়ে থাকেন। কখনো কখনো তার জামা-কাপড় থেকেও দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। আর তাদেরকে কষ্ট দেওয়া তো অত্যন্ত পাপের কাজ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ بِغَيۡرِ مَا ٱكۡتَسَبُواْ فَقَدِ ٱحۡتَمَلُواْ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٥٨﴾ [الاحزاب: ٥٨]
“যারা মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কষ্ট দেয় অথচ তারা কোনো অপরাধ করেনি এ জাতীয় মানুষরা নিশ্চয় অপবাদ ও স্পষ্ট গুনাহের বোঝা বহন করবে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৭]
চ. পিয়াজ ও রসুনের মতো হালাল জিনিস খেয়ে যখন সালাতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ অথচ শরী‘আতে জামা‘আতে সালাত পড়ার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। কারণ, ফিরিশতারা তাতে খুব কষ্ট পেয়ে থাকেন তখন ধূমপান করে কেউ মসজিদে কিভাবে যেতে পারে? অথচ তা একই সঙ্গে দুর্গন্ধ ও হারাম। তাতে কি ফিরিশতারা কষ্ট পান না? তাতে কি মুসল্লিরা কষ্ট পায় না?
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّوْمَ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا، فَإِنَّ الْـمَلَآئِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُوْ آدَمَ»
“যে ব্যক্তি পিয়াজ ও রসুন খেলো সে যেন আমার মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ, ফিরিশতারা এমন জিনিসে কষ্ট পায় যাতে কষ্ট পায় আদম সন্তান”।[36]
ছ. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ ছেলে-সন্তানকে অঙ্গহানি ও ত্রুটিপূর্ণ বৃদ্ধির প্রতি ঠেলে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণানুযায়ী নিকুটিন পুরুষের বীর্যকে বিষাক্ত করে দেয়। যদ্দরুন সন্তান প্রজন্মে বিশেষ ব্যাঘাত ঘটে। এমনকি কখনো কখনো প্রজনন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপেই বিনষ্ট হয়ে যায়।
জ. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ ছেলে-সন্তানকে চারিত্রিক অধঃপতনের দিকে বিশেষভাবে ঠেলে দেওয়া হয়। কারণ, তারা ভাগ্যক্রমে জন্মগত অঙ্গহানি থেকে বাঁচলেও পিতার ধূমপান দেখে তারা নিজেরাও ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
আরবী ভাষার প্রবাদে বলা হয়:
وَمَنْ شَابَهَ أَبَاهُ فَمَا ظَلَمَ
“যে নিজের বাপের মতো হয়েছে সে কোনো অপরাধ করেনি”।
আরেক প্রবাদে বলা হয়:
وَكُلُّ قَرِيْنٍ بِالْـمُقَارِنِ يَقْتَدِيْ
“প্রত্যেক সঙ্গী তার আরেক সঙ্গীরই অনুসরণ করে। আর পিতা তো তার বাচ্ছার দীর্ঘ সময়েরই সঙ্গী”।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ مَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ فِي قَرۡيَةٖ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتۡرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٖ وَإِنَّا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم مُّقۡتَدُونَ ٢٣﴾ [الزخرف: ٢٣]
“এভাবেই তোমার পূর্বে যখনই আমরা কোনো এলাকায় কোনো ভীতি প্রদর্শনকারী (নবী) পাঠিয়েছি, তখনই সে এলাকার ঐশ্বর্যশালীরা বলেছে, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এই একই মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি। আর আমরা তো তাদেরই পদাঙ্ক অনুসারী”। [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ২৩]
তিনি আরো বলেন,
﴿وَإِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةٗ قَالُواْ وَجَدۡنَا عَلَيۡهَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَاۗ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٢٨﴾ [الاعراف: ٢٨]
“যখন তারা কোনো অশ্লীল কাজ করে বসে তখন তারা বলে: আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এমনই করতে দেখেছি এবং আল্লাহ তা‘আলাও তো আমাদেরকে এমনই করতে আদেশ করেছেন। হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তুমি ঘোষণা করে দাও যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কখনো অশ্লীল কাজের আদেশ করেন না। তোমরা কি আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে এমন সব কথা বলছো যে বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৮]
ঝ. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ স্ত্রীকেও বিশেষভাবে কষ্ট দেওয়া হয়। কারণ, সে তো আপনার জীবন সঙ্গী। আপনার সবকিছুই তো তার সঙ্গে জড়িত। তাই সে আপনার মুখের দুর্গন্ধে কষ্ট পাবে অবশ্যই। আবার কখনো কখনো তো কোনো কোনো স্ত্রী অসতর্কভাবে নিজেও ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন তার ওপর যুলুম চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
ঞ. ধূমপান সন্তানকে মাতা-পিতার অবাধ্য হতে সহযোগিতা করে। কারণ, ধূমপায়ী স্বভাবত নিজ মাতা-পিতা থেকে দূরে থাকতে চায়। যাতে তারা তার অভ্যাসের ব্যাপারটি আঁচ করতে না পারে। আর এভাবেই সে ধীরে ধীরে তাদের অবাধ্য হয়ে পড়ে।
ট. ধূমপান ধূমপায়ীর নেককার সঙ্গী একেবারেই কমিয়ে দেয়। কারণ, তারা এ জাতীয় মানুষ থেকে দূরে থাকতে চায়। এমনকি কেউ কেউ তো এ জাতীয় মানুষকে সালামও দিতে চায় না।
ঠ. ধূমপানের মাধ্যমে ইসলামের শত্রুদেরকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করা হয়। কারণ, এরই মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিন দিন বেড়ে যায় এবং তা ও তার কিয়দংশ পরবর্তীতে ইসলামেরই বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
ড. ধূমপান ধীরে ধীরে মেধাকে বিনষ্ট করে দেয়। যা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক বিরাট নিয়ামত। কারণ, তা চিন্তা শক্তিকে একেবারেই দুর্বল করে দেয়। এমনকি ধীরে ধীরে তার মধ্যে মেধাশূন্যতা দেখা দেয়। স্কুল ও কলেজের ছাত্রদের মাঝে একদা এক জরিপ চালিয়ে দেখা যায় যে, ধূমপায়ীরা অধূমপায়ীর তুলনায় খুবই কম মেধা সম্পন্ন এবং কোনো কিছু তাড়াতাড়ি বুঝতে অক্ষম।
ঢ. ধূমপানের মাধ্যমে হৃদয়, চোখ ও দাঁতকে ক্ষতির সম্মুখীন করা হয়। অথচ অন্তর মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রাজা। চোখ হচ্ছে জীবনের প্রতি একটি জানালা। দাঁত হচ্ছে মানুষের বিশেষ এক সৌন্দর্য। ধূমপানের কারণে হৃদয়ের শিরা-উপশিরাগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং হঠাৎ রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চোখ দিয়ে এক ধরনের পানি বের হয়। চোখের পাতাগুলো জ্বলতে থাকে। কখনো কখনো চোখ ঝাপসা ও অন্ধ হয়ে যায়। দাঁতে পোকা ধরে। দাঁত হলুদবর্ণ হয়ে যায়। দাঁতের মাড়ি জ্বলতে থাকে। জিহবা ও মুখে ঘা ও ক্ষত সৃষ্টি হয়। ঠোঁট বিবর্ণ হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
ণ. ধূমপান ধূমপায়ীকে তার বাধ্য গোলাম বানিয়ে রাখে। নেশা ধরলেই তার আয়োজন করতেই হবে। নতুবা সে অন্তরে এক ধরনের সঙ্কীর্ণতা ও অস্থিরতা অনুভব করবে। পুরো দুনিয়াই তার নিকট অন্ধকার মনে হবে। আর এ কথা সবারই জানা যে, একজনের গোলামীতেই শান্তি; অনেকের গোলামীতে নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ءَأَرۡبَابٞ مُّتَفَرِّقُونَ خَيۡرٌ أَمِ ٱللَّهُ ٱلۡوَٰحِدُ ٱلۡقَهَّارُ﴾ [يوسف: ٣٩]
“অনেকগুলো প্রভু ভালো না কি এমন আল্লাহ যিনি একক পরাক্রমশালী”। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৩৯]
ত. ধূমপায়ীর নিকট যে কোনো ইবাদাত ভারী মনে হয়। বিশেষ করে রোযা। কারণ, সে সাওম থাকাবস্থায় আর ধূমপান করতে পারে না। গরম মৌসুমে তো দিন বড় হয়ে যায়। তখন তার অস্থিরতার আর কোনো সীমা থাকে না। তেমনিভাবে হজও তাকে বিশেষভাবে বিব্রত করে।
থ. এ ছাড়াও ধূমপানের কারণে অনেক ধরনের ক্যান্সার জন্ম নেয়। তম্মধ্যে ফুসফুস, গলা, ঠোঁট, খাদ্য নালী, শ্বাস নালী, জিহ্বা, মুখ, মূত্রথলি, কিডনী ইত্যাদির ক্যান্সার অন্যতম।
এ ছাড়াও ধূমপানের সমস্যাগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে খাদ্য-পানীয়ে রুচিহীনতা, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, মাথা ব্যথা, শ্রবণ শক্তিতে দুর্বলতা, হঠাৎ মৃত্যু, যক্ষ্মা, বদ্হজমী, পাকস্থলীতে ঘা, কলিজায় ছিদ্র ও সম্পূর্ণরূপে তার বিনাশ, শারীরিক শীর্ণতা, বক্ষব্যাধি, অত্যাধিক কফ ও কাশি, স্নায়ুর দুর্বলতা, চেহারার লাবণ্য বিনষ্ট হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
ধূমপান সংক্রান্ত আরো কিছু কথা
# আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৮৩ সনের রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে সিগারেট কেনার পেছনে যে অর্থ ব্যয় করা হয় তার দুই-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হলে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা অবশ্যই সম্ভবপর হবে।
# আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়, ধূমপানের অপকারিতায় বছরে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৩ লাখ ৪৬ হাজার ব্যক্তি মারা যায়। তেমনিভাবে চীনে ১ লাখ ৪০ হাজার, ব্রিটেনে ৫৫ হাজার, সুইডেনে আট হাজার এবং পুরো বিশ্বে ২৫ লাখ ব্যক্তি প্রতি বছর মারা যায়।
# চীনের সাঙ্গাহাই শহরের এক মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, সেখানকার ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৬০ জনের ৯০ ভাগই ধূমপায়ী।
# আরেক রিপোর্টে বলা হয়, ধূমপানের অপকারিতায় মৃত্যুর হার দুর্ঘটনা ও যুদ্ধ ক্ষেত্রের মৃত্যুর হারের চাইতেও অনেক বেশি।
# ৪৬ বছর ও ততোধিক বয়সের লোকদের মধ্যে ধূমপায়ীদের মৃত্যুর হার অধূমপায়ীদের তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি।
# ধূমপান হচ্ছে পদস্খলনের প্রথম কারণ।
# কেউ দৈনিক ২০ টি সিগারেট পান করলে তার শরীরে শতকরা পনেরো ভাগ হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়।
# ধূমপানের অপকারিতায় ব্রিটেনে দৈনিক ৪৪ ব্যক্তি মারা যায়।
# বিড়ি ও সিগারেটের শেষাংশ প্রথমাংশের তুলনায় আরো বেশি ক্ষতিকর।
# লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে এই যে, চতুষ্পাদ জন্তুর সামনে তামাক রাখা হলে ওরা তা খেতে চায় না; অথচ মানুষ খুব সহজভাবেই তা দৈনিক প্রচুর পরিমাণে গলাধঃকরণ করে যাচ্ছে।
ধূমপানের কাল্পনিক উপকারসমূহ
ধূমপায়ীরা নিজেদের দোষকে ঢাকা দেওয়ার জন্য অধূমপায়ীদেরকে ধূমপানের কিছু কাল্পনিক উপকার বুঝাতে চায় যা নিম্নরূপ:
ক. তারা বলে, মনের অশান্তি দূর করার জন্যই ধূমপান করা হয়। তাদের এ কথা নিশ্চিতভাবেই জানা উচিৎ যে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার যিকিরের মাধ্যমেই মানুষের অন্তরে শান্তির সঞ্চার হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ﴾ [الرعد: ٢٨]
“জেনে রাখো, আল্লাহ তা‘আলার স্মরণেই অন্তর শান্তি পায়”। [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ২৮]
খ. তারা বলে, ধূমপান কোনো ব্যাপারে গভীর চিন্তা করতে সহযোগিতা করে। মূলতঃ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ এর উল্টো, বরং ধূমপান শ্বাসকষ্ট ও গলা শুকিয়ে যাওয়ার দরুন মানুষের চিন্তাশক্তিকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়।
গ. তারা বলে, ধূমপান মানুষের স্নায়ুগুলোকে সতেজ করে তোলে। মূলত ব্যাপারটা সম্পূর্ণ এর বিপরীত। বরং ধূমপান মানুষের স্নায়ুগুলোকে দুর্বল করে দেয় এবং এরই প্রভাবে দ্রুত হৃদকম্পন শুরু হয়ে যায়।
ঘ. তারা বলে, ধূমপানে বন্ধু বাড়ে। এ কথা একাংশে ঠিক। তবে ধূমপানে ধূমপায়ী বন্ধু বাড়ে, ভালো বন্ধু নয়।
ঙ. তারা বলে, ধূমপানে ক্লান্তি দূর হয়। এ কথা একেবারেই ঠিক নয়; বরং ধূমপানে ক্লান্তি আরো বেড়ে যায়। কারণ, ধূমপানে স্নায়ু দৌর্বল্য ও রক্ত চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে।
আবার কেউ কেউ তো অন্যের অনুকরণে ধূমপান করে থাকে। কাউকে ধূমপান করতে দেখে তার খুব ভালো লেগেছে তাই সেও ধূমপান করে। কিয়ামতের দিন তার এ অনুসরণ কোনো কাজেই আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَبَرَزُواْ لِلَّهِ جَمِيعٗا فَقَالَ ٱلضُّعَفَٰٓؤُاْ لِلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُوٓاْ إِنَّا كُنَّا لَكُمۡ تَبَعٗا فَهَلۡ أَنتُم مُّغۡنُونَ عَنَّا مِنۡ عَذَابِ ٱللَّهِ مِن شَيۡءٖۚ قَالُواْ لَوۡ هَدَىٰنَا ٱللَّهُ لَهَدَيۡنَٰكُمۡۖ سَوَآءٌ عَلَيۡنَآ أَجَزِعۡنَآ أَمۡ صَبَرۡنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٖ ٢١﴾ [ابراهيم: ٢١]
“সবাই আল্লাহ তা‘আলার নিকট উপস্থিত হলে দুর্বলরা অহঙ্কারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদের অনুসারীই ছিলাম। অতএব তোমরা কি আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে এতটুকুও রক্ষা করতে পারবে? তারা বলবে: আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক পথ দেখালে অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে তা দেখাতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা ধৈর্যশীল হই তাতে কিছুই আসে যায় না। এখন আমাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার আযাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার আর কোনো পথ নেই”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ২১]
আবার কেউ কেউ তো দাম্ভিকতা দেখিয়ে বলেন, আমি বুঝে শুনেই ধূমপান করছি। এতে তোমাদের কি যায় আসে? এ জাতীয় ব্যক্তিদেরকে এখন থেকেই পরকালের পরিণতির কথা চিন্তা করা উচিৎ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٖ ١٥ مِّن وَرَآئِهِۦ جَهَنَّمُ وَيُسۡقَىٰ مِن مَّآءٖ صَدِيدٖ ١٦ يَتَجَرَّعُهُۥ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُۥ وَيَأۡتِيهِ ٱلۡمَوۡتُ مِن كُلِّ مَكَانٖ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٖۖ وَمِن وَرَآئِهِۦ عَذَابٌ غَلِيظٞ ١٧﴾ [ابراهيم: ١٥، ١٧]
“প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থকাম হলো। পরিণামে তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদেরকে পান করানো হবে গলিত পুঁজ। অতি কষ্টেই তারা তা গলাধঃকরণ করবে; সহজে নয়। সর্বদিক থেকে মৃত্যু তার দিকে ধেয়ে আসবে, অথচ সে মরবে না এবং এর পরেও তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১৫-১৭]
যেভাবে আপনি ধূমপান ছাড়বেন
ধূমপানের উপরোক্ত ব্যক্তিগত ও সামাজিক অপকার জানার পর আশা তো আপনি এখনি ধূমপান থেকে তাওবা করতে প্রস্তুত। তবে এ ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যাপার আপনাকে বিশেষ সহযোগিতা করবে যা নিম্নরূপ:
ক. আল্লাহ তা‘আলার ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে ধূমপান ত্যাগের ব্যাপারে কঠিন প্রতিজ্ঞা তথা তাওবা করতে হবে এবং এ ব্যাপারে পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ তা‘আলার সহযোগিতা চেয়ে তাঁর কাছে বিশেষভাবে ফরিয়াদ করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [النور: ٣١]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রত্যাবর্তন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো”। [সুরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿أَمَّن يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ وَيَجۡعَلُكُمۡ خُلَفَآءَ ٱلۡأَرۡضِۗ أَءِلَٰهٞ مَّعَ ٱللَّهِۚ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٦٢﴾ [النمل: ٦٢]
“তিনিই তো উত্তম যিনি আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে, বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন। আল্লাহ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য কোনো মা‘বূদ আছে কি? তোমরা তো অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো”। [সুরা আন-নামল, আয়াত: ৬২]
খ. ধূমপানের অপকারগুলো দৈনিক নিজে ভাবুন এবং নিজ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও স্ত্রী-সন্তানদের সামনে এগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
গ. ধূমপায়ীদের সঙ্গ ছেড়ে দিন। অন্ততপক্ষে ধূমপানের মজলিস থেকে বহু দূরে এবং কল্যাণকর কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকুন।
ঘ. ধূমপানকে ঘৃণা করতে চেষ্টা করুন এবং সর্বদা এ কথা ভাবুন যে, কেউ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কোনো হারাম বস্তু পরিত্যাগ করলে আল্লাহ তা‘আলা এর প্রতিদান হিসেবে তাকে এর চাইতে আরো উন্নত ও কল্যাণকর বস্তু দান করবেন।
আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য কেউ কোনো হারাম বস্তু পরিত্যাগ করলে তা সহজেই পরিত্যাগ করা সম্ভব। তবে আল্লাহ তা‘আলা সর্ব প্রথম আপনাকে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন যে, আপনি উক্ত হারাম বস্তু পরিত্যাগে কতটুকু সত্যবাদী। তখন আপনি এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে পারলে তা পরিশেষে সত্যিই মজায় রূপান্তরিত হবে।
ধূমপান পরিত্যাগ করলে প্রথমতঃ আপনার গভীর ঘুম নাও আসতে পারে। রক্তে ঘাটতি দেখা দিবে। দীর্ঘ সময় কোনো কিছু নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে পারবেন না। রাগ ও অস্থিরতা বেড়ে যাবে। নাড়ির সাধারণ গতি কমে যাবে। ব্রেইন কেন যেন হালকা নিস্তেজ হয়ে পড়বে। ধূমপানের জন্য অন্তর কিলবিল করতে থাকবে। তবে তা কিছু দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
ঙ. কখনো মনের ভেতর ধূমপানের ইচ্ছে জন্মিলে সাথে সাথে মিসওয়াক করুন অথবা চুইঙ্গাম খেতে থাকুন।
চ. চা ও কপি খুব কমই পান করুন, বরং এরই পরিবর্তে সাধ্যমত ফল-ফলাদি খেতে চেষ্টা করুন।
ছ. প্রতিদিন নাস্তার পর এক গ্লাস লেবু বা আঙ্গুরের শরবত পান করুন। তা হলে ধূমপানের চাহিদা একটু করে হলেও হ্রাস পাবে।
জ. যত্ন সহকারে নিয়মিত ফরয সালাতগুলো আদায় করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ وَلَذِكۡرُ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۗ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُونَ﴾ [العنكبوت: ٤٥]
“আর নামায কায়েম করো। কারণ, নামাযই তো তোমাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আল্লাহ তা‘আলার স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যাই করছো আল্লাহ তা‘আলা তা সবই জানেন”। [সুরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৪৫]
ঝ. বেশি বেশি সাওম পালন করার চেষ্টা করুন। কারণ, তা মনোবলকে শক্তিশালী করা ও কুপ্রবৃত্তি মোকাবিলায় বিশেষ সহযোগিতা করবে।
ঞ. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَم﴾ [الاسراء: ٩]
“নিশ্চয় এ কুরআন সঠিক পথ প্রদর্শন করে”। [সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُم مَّوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٞ لِّمَا فِي ٱلصُّدُورِ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٥٧﴾ [يونس: ٥٧]
“হে মানব সকল! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট উপদেশ, অন্তরের চিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত এসেছে”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭]
চ. বেশি বেশি যিকির করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ﴾ [الرعد: ٢٨]
“জেনে রাখো, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার যিকির বা স্মরণেই মানব অন্তর প্রশান্তি লাভ করে”। [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ২৮]
ছ. সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। কারণ, শয়তানই তো গুনাহসমূহকে মানব সম্মুখে সুশোভিত করে দেখায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿تَٱللَّهِ لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَآ إِلَىٰٓ أُمَمٖ مِّن قَبۡلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَعۡمَٰلَهُمۡ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ ٱلۡيَوۡمَ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٦٣﴾ [النحل: ٦٣]
“আল্লাহর কসম! আমরা তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শয়তান তাদের অশোভনীয় কর্মকান্ডকে তাদের নিকট সুশোভিত করে দেখিয়েছে। সুতরাং শয়তান তো আজ তাদের বন্ধু অভিভাবক এবং তাদেরই জন্য (কিয়ামতের দিন) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৬৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠﴾ [الاعراف: ٢٠٠]
“শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তা হলে তুমি আল্লাহ তা‘আলার আশ্রয় কামনা করো। তিনিই তো সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২০০]
জ. নেককার লোকদের সাথে চলুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَلَا تُطِعۡ مَنۡ أَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهُۥ عَن ذِكۡرِنَا وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ وَكَانَ أَمۡرُهُۥ فُرُطٗا ٢٨﴾ [الكهف: ٢٨]
“তুমি সর্বদা নিজকে ওদের সংস্রবেই রাখবে যারা সকাল-সন্ধ্যায় নিজ প্রভুকে ডাকে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। কখনো তাদের থেকে নিজ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়। তবে ওদের অনুসরণ কখনোই করো না যাদের অন্তর আমি আমার স্মরণ থেকে গাফিল করে দিয়েছি এবং যারা নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে নিজ কর্মকান্ডে সীমাতিক্রম করে”। [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ২৮]
একবার দু’বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও কখনো নিরাশ হবেন না। কারণ, নিরাশ হওয়া কাফিরের পরিচয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَاْيَۡٔسُواْ مِن رَّوۡحِ ٱللَّهِۖ إِنَّهُۥ لَا يَاْيَۡٔسُ مِن رَّوۡحِ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ﴾ [يوسف: ٨٧]
“আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে তোমরা কখনো নিরাশ হয়ো না। কারণ, একমাত্র কাফিররাই তো আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে নিরাশ হয়ে থাকে”। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৭]
আপনি দ্রুত ধূমপান ছাড়তে না পারলেও অন্ততপক্ষে তা কমাতে চেষ্টা করুন এবং তা প্রকাশ্য পান করবেন না তা হলে কোনো এক দিন আপনি তা সম্পূর্ণরূপে ছাড়তে পারবেন।
وَصَلَّى اللهُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ
সমাপ্ত
[1] ত্বাবারানী/কাবীর খণ্ড ১২, হাদীস নং ১২৩৯৯; হাকিম, খণ্ড ৪, হাদীস নং ৭২২৭
[2] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৩৪
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০০৩; আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৫০, ৩৪৫৩
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০০১; আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৮২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৯, ৩৪৫১, ৩৪৫২, ৩৪৫৪
[5] আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৮১; তিরমিযী, হাদীস ১৮৬৪, ১৮৬৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং৩৪৫৫, ৩৪৫৬, ৩৪৫৭
[6] আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৬; তিরমিযী, হাদীস ১৮৭২
[7] আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৭
[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং নং ৪৬১৯, ৫৫৮১, ৫৫৮৮, ৫৫৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩০৩২; আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৬৯
[9] তিরমিযী, হাদীস ১২৯৫; আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৩, ৩৪৪৪
[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০০৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৩৬; বায়হাক্বী খণ্ড ৩, হাদীস নং ৫১৮১; সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ২৩৬১
[11] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৩৮
[12] নাসাঈ, হাদীস ৫১৭৩; সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ২৩৬৫
[13] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৩৯
[14] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪০
[15] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭; আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৮৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০০৭
[16] তিরমিযী, হাদীস নং ২২১২
[17] সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ২৩৮৬
[18] সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ২৩৭৪
[19] আহমদ, হাদীস নং ১৪৬৯২; ত্বাবারানী/কাবীর খণ্ড ১১, হাদীস ১১৪৬২; আওসাত্ব, হাদীস নং ২৫১০; দারেমী, হাদীস নং ২০৯২
[20] ত্বাবারানী/আওসাত্ব খণ্ড ৮, হাদীস নং ৮৮৭৯
[21] সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ২৩৭৫
[22] হাকিম, হাদীস নং ৭২৩৩; বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৬৯৯, ১৭১১৫; ত্বাবারানী/আওসাত্ব, হাদীস নং ৬৩৭১; আহমদ, হাদীস নং ৬৬৫৯
[23] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৮৪; আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৭৩
[24] বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৯৪৬৩; ইবন হিব্বান খণ্ড ৪, হাদীস নং ১৩৯১
[25] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৭
[26] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৮
[27] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৯০, ৩৪৯১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৫
[28] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৮৫
[29] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৮৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৬
[30] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭১
[31] আবু দাউদ, হাদীস ৪৪৮২; তিরমিযী, হাদীস ১৪৪৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬২০; নাসাঈ, হাদীস ৫৬৬১; আহমদ ৪/৯৬
[32] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭০৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৭৯
[33] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৭৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬১৮
[34] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭০৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৮১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬১৯
[35] ইবন মাজাহ, হাদীস নং২৩৬৯, ২৩৭০
[36] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৫৪ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৪
বিষয়: বিবিধ
১০১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন