মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আতঙ্ক ও অস্থিরতা থেকে জনগণকে মুক্তি দিন।
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২১ আগস্ট, ২০১৭, ১০:১৩:৪০ সকাল
দেশের মানুষের জীবনযাপন ও নিরাপত্তা পদে পদে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে, মানুষ দিনদুপুরে অপহৃত গুম-খুন হবে, সড়ক-মহাসড়কের পাশে লাশ পড়ে থাকবে, নদীতে লাশ ভেসে উঠবে এবং এ অবস্থায় সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে না, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে না_ তাহলে তো জনগণের ভরসার জায়গাই থাকে না। সরকারকেই জনআতঙ্ক দূরসহ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অর্থ এই নয় যে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সান্ত্বনা বা অর্থ সাহায্য দেয়া। অপরাধ প্রতিরোধ করে এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে না দেয়াই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে জনগণের পাশে দাঁড়ানো।
বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অপরাধীদের নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত হচ্ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, এসিড সন্ত্রাস, অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য, মাদক ব্যবসা, গুম-অপহরণ ও খুনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে দেশবাসী আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ ভয়াবহ অবনতিতে জনসাধারণ চরমভাবে আতঙ্কিত। এমন অবস্থায় কারো জীবনে যে নিরাপত্তা নেই তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে এমন নাজুক ও মানবেতর জননিরাপত্তাবিষয়ক পরিস্থিতি ভাবাই যায় না।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একসময়ের ব্যবসা, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ এখন হত্যা-গুম-অপহরণের শহরে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই মানুষ হয় অপহৃত-গুম হচ্ছে না হয় খুন হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ এখন দেশের সবচেয়ে ভীতিকর ও আলোচিত শহর। অবাক ব্যাপার যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকাও রহস্যজনক। সরকার নিজের দোষ স্বীকার না করে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। অথচ রাষ্ট্র পরিচালনা করছে সরকারই। সুতরাং সরকারি কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে যদি গুরুতর অভিযোগ ওঠে, অভিযোগ ওঠে কোনো মন্ত্রী, এমপি বা সরকারি দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে তাহলে সরকার সে দায় এড়াতে পারে না।
মনে রাখতে হবে, দোষ স্বীকারের মধ্যে মহানুভবতা রয়েছে, রয়েছে উদার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। সরকার যদি তার দোষ স্বীকার করে নিয়ে সংশোধনের পথে এগিয়ে যায় এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তবে তা হবে দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলময়।
দেশের মানুষের জীবনযাপন ও নিরাপত্তা পদে পদে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে, মানুষ দিনদুপুরে অপহৃত গুম-খুন হবে, সড়ক-মহাসড়কের পাশে লাশ পড়ে থাকবে, নদীতে লাশ ভেসে উঠবে এবং এ অবস্থায় সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে না, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে না_ তাহলে তো জনগণের ভরসার জায়গাই থাকে না। সরকারকেই জনআতঙ্ক দূরসহ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অর্থ এই নয় যে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সান্ত্বনা বা অর্থ সাহায্য দেয়া। অপরাধ প্রতিরোধ করে এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে না দেয়াই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে জনগণের পাশে দাঁড়ানো।
কাদের কারণে দেশে এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে, পেছনের ইন্ধনদাতাই বা কে তা সরকার চিহ্নিত করতে পারছে না। যদি না-ই পারে তবে জনগণের টাকায় প্রতিপালিত ও পরিচালিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রেখে লাভ কী। তারা ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী একই সঙ্গে সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা (ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৩ জন নিহত এবং বহু লোক আহত হয়েছেন ও পঙ্গুজীবন যাপন করছেন), ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় মর্মান্তিক ও বর্বরোচিত হত্যাকা-, রমনা বটমূল, উদীচী, সিপিবির সমাবেশে বোমা-গ্রেনেড হামলা কোনোটারই আগাম তথ্য দিতে পারেনি। গার্মেন্ট শিল্পে নাশকতা সৃষ্টিকারী-ইন্ধনদাতাদের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। আবার এখন যে দেশব্যাপী গুম-অপহরণ-খুনের ঘটনা ঘটছে সে ব্যাপারেও তারা সক্রিয় নয়। উপরন্তু অপরাধের সঙ্গে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িয়ে যাছে, তাদের মধ্যে অতিমাত্রায় অর্থলোভ থাকার কারণে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপারে, বিশেষ করে র্যাবের ব্যাপারে সাফাই গাওয়া হচ্ছে। জনগণের মাঝে এটা আরো নতুন বিস্ময়ের জন্ম দিচ্ছে।
আমাদের সীমাবদ্ধতা ও বড় ব্যর্থতা হচ্ছে, পেছনের নায়কদের আমরা চিহ্নিত করতে পারি না। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু, ৩০ মে জিয়াউর রহমান হত্যার প্রকৃত নায়করা আজও চিহ্নিত হয়নি। তেমনি পণ্যমূল্য ও গার্মেন্ট শিল্প অস্থির করার পেছনের নায়ক কারা তাও চিহ্নিত হয়নি। একইভাবে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনাও হয়তো একদিন ধামাচাপা পড়ে যাবে। কারণ এ হত্যাকা-ের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। বরং অভিযোগ উঠেছে, অবস্থা বেগতিক দেখে র্যাব তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে হাইকোর্ট যে র্যাবের তিন বরখাস্ত সদস্যকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে তাও কার্যকর হয়নি। এখন বলা হচ্ছে তাদের গ্রেফতার করতে হলে সেনা কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। এত বড় ঘটনার যদি বিচার না হয় তাহলে কীভাবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, আর কীভাবেই বা জননিরাপত্তা নিশ্চিত হবে? অপরাধ অপরাধের জন্ম দেয়। অপরাধ গোপন করার ফল কখনো ভালো হয় না।
বরং প্রকৃত সত্য উদঘাটন না করে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি করছে, যা এর আগেও আমরা বহুবার প্রত্যক্ষ করেছি। সরকারকেও মনে রাখতে হবে, সত্য প্রকাশ মানে বাড়াবাড়ি নয়, নয় দুর্বলতা। সত্য বেশির ভাগ সময়ই অপ্রিয় হয়। বেকন বলেছেন, আগে আমরা স্বপ্ন দেখতে শিখি, তারপর হয়তো আমরা সত্যের সন্ধান পেতেও পারি। সত্য বলার স্বাধীনতা, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও শোভন জিনিস। পবিত্র হাদিসে আছে_ 'সত্য লোকের কাছে অপ্রিয় হলেও তা প্রচার কর।' নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সাত খুনের ব্যাপারে প্রকৃত সত্য কী, কারা এর সঙ্গে জড়িত তা দেশবাসীর জানা উচিত। প্রকৃত সত্য যদি ধামাচাপা পড়ে যায় তবে এ ধরনের ঘটনা যে আরো ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে_ সাত খুনের ঘটনায় কেবল র্যাবকে দায়ী করলে হবে না, এ দায় প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারকেও নিতে হবে। কারণ সরকারের নেতৃত্বেই র্যাব পরিচালিত হচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব বিলুপ্ত করার দাবিও উঠেছে। এ হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে সরকারদলীয় কোনো কোনো নেতা বলেছেন, র্যাবকে বিলুপ্ত না করে এর সংস্কার প্রয়োজন। এর দায় বিএনপি-জামায়াতের ওপরও চাপাচ্ছেন কেউ কেউ। নারায়ণগঞ্জ হত্যাকা-ের বিষয়টি যদি চাপা পড়ে যায় তবে সরকার বিপদে পড়বে এমন আশঙ্কাও ব্যক্ত করা হয়েছে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে। আমরা দেশবাসী চাই প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হোক। প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাক। অপরাধ আড়াল করা কিংবা অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়ার সংস্কৃতি থেকে যদি আমরা বেরিয়ে আসতে না পারি তবে আমাদের জন্য কঠিন বিপদ অপেক্ষা করছে।
স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না কথাটা হয়তো বা ঠিক তবে স্বপ্ন ছাড়া এখন বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচতে হয়। স্বপ্নবিলাসী বাঙালি কঠিন জীবন সংগ্রামের কারণে, দ্রব্যমূল্যের চাপে ও তাপে এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে। স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যৎ গড়বে, না বেঁচে থাকার সংগ্রাম করবে, নিজের প্রাণ বাঁচাবে তারা? দেশের সাধারণ মানুষকে এই প্রান্তিক ও মানবেতর পর্যায়ে নিয়ে এসেছে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা ও শোষক শ্রেণি, কতিপয় অপরাধী, গডফাদার। যারা উচ্চাভিলাষী, ক্ষমতা ও অর্থলোভী। যারা দেশের ও জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিপুল সম্পদ ও টাকার পাহাড় বানিয়েছে। ফলে গরিব আরো গরিব হয়েছে, ধনী আরো ধনী। এ অর্থনৈতিক আকাশ-জমিন বৈষম্যের কারণে সমাজে অপরাধপ্রবণতা ও অস্থিরতা ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক, অস্থিরতা ও সঙ্কট বিরাজ করছে দেশে গণতন্ত্র থাকলে, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা সুগম হলে, সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন থাকলে, অর্থনীতির ভিত শক্তিশালী হলে এসব খিস্তিখেউড় হয়তো করা লাগত না।
গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে বিদ্যুতের দাবিতে কানসাটে এবং শনিরআখড়ায় জনতার বিজয় হয়েছে। ফুলবাড়ী কয়লা খনিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়েও পিছু হটতে হয়েছে। জনতার প্রতিরোধে, গণবিক্ষোভে ও অভ্যুত্থানে এরশাদ তো ক্ষমতায়ই থাকতে পারলেন না। বায়ান্নার ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা না হয় বাদই দিলাম। জনতাকে প্রতিপক্ষ করে বা খেপিয়ে কোনো সরকারের ফলই ভালো হয় না। সুতরাং সরকারকে আরো গভীরভাবে চিন্তা করে সুপরিকল্পিত ও বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত নিতে হবে অপরাধ দমন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। না হলে কেবল জনগণই বিপদের মধ্যে থাকবে না, বিপদে পড়বে সরকারও।
বিষয়: বিবিধ
৬৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন