তালাক একটি অভিশাপঃ একটি অপপ্রচার ও ইসলাম কি বলে তালাক সম্পর্কে
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১১ জুলাই, ২০১৭, ০৫:৩৮:২৫ বিকাল
আমরা মুসলমান। পৈত্রিক সূত্রে মুসলমান। বাবা-মা মুসলমান, তাই আমিও মুসলমান। কিন্তু অনেকেই জানেনা মুসলমানিত্বের প্রকৃত মর্ম। ইসলামী রীতিনীতি তাই অনেক সময় আমাদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন “তালাক”।
আমরা মুসলমান বলেই ধর্মীয় কিছু বিষয় মানতে আমরা একান্ত বাধ্য। যেমন-ছেলেদের খাৎনা করানো, বিয়ের সময় দু’জন স্বাক্ষ্য রাখা, মৃত্যুর সময় ইসলামী শরীয়ত মোতাবিক কাফন দাফন ইত্যাদী। যেগুলো সারা জীবন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে নাক সিটকালেও আমরা করে থাকি বা করতে বাধ্য হই। এমনি একটি বিষয় হল “স্ত্রীকে তিনি তালাক দিলে তাকে আর রাখা যাবেনা,” এই বিধানটি।
একটি ধুম্রতা
মুখে তিন তালাক বললেই বিশ পঁচিশ বছরের হাজারো সুখ দুঃখের সাথি অর্ধাঙ্গিনী চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে যাবে, এই বিধানটি অমানবিক বলেই মনে হয়। এ কেমন কথা? রাগের মাথায় তিন তালাক বললাম আর আমার এতদিনের জীবন সঙ্গীনী হারাম হয়ে গেল? বড়ই বেমানান লাগে কুরআনের এই বিধানটি আমাদের ধর্মজ্ঞানহীন মনে। কিন্তু আসলেই কী তাই? এই বিধানটির শরয়ী প্রয়োগ পদ্ধতী কী আমরা জানি? জানলে এই উদ্ভট প্রশ্নটি মনে জাগরিত হতোনা।
তালাক দেয়ার শরয়ী পদ্ধতি
তালাক ইসলামে একটি অপছন্দনীয় জায়েজ বিষয়। আল্লাহর নবী বলেন-“ইসলামে নিকৃষ্ট হালাল বস্তু হল তালাক” (আল হাদীস)। তালাকের বিধান একদম না থাকলে নারীরা বা পুরুষেরা জুলুমের শিকার হত, এই হিকমতে তা বৈধ রাখা হয়েছে। এটার অপপ্রয়োগ করার জন্য নয়। তালাক দেবার ইসলামী পদ্ধতি সকল পাঠককে মনযোগ সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
স্বাভাবিকভাবে আমরা জানি তালাক মানুষ রাগের মাথায় দেয়। রাগ উঠলে ইসলামের বিধান হল-হাটা অবস্থায় রাগ উঠলে দাঁড়িয়ে যাও। তারপরও রাগ না কমলে বসে পড়। বসার পরও রাগ না কমলে শুয়ে পড়। শুয়ে পড়লেও রাগ না কমলে অযু কর। অযু করার পরও রাগ না কমলে গোসল কর। তারপরও রাগ না কমলে দু’রাকাত নফল নামায পড়। এর পরও যদি রাগ না কমে তবে বুঝতে হবে তার রাগ করাটা যথার্থ। অযথা বা ঝুঁকের মাথায় তার মেজাজ বিগড়ে যায়নি।
স্ত্রীর উপর রাগ করলে উপরোক্ত কাজগুলি করার পরও যদি মনে হয় স্ত্রীরই দোষ, তখন স্ত্রীকে শান্তভাবে বুঝাবে যে, এই ক্ষেত্রে তোমার ভুল হয়েছে, যদি তুমি না শুধরাও তাহলেতো আমরা একসাথে থাকতে পারবোনা, তারপরও যদি স্ত্রী না শুধরায়, তাহলে ইসলামের বিধান হল, বিষয়টি স্ত্রীর অভিভাবকদের জানিয়ে পারিবারিকভাবে তা সমাধানের চেষ্টা করবে। এরপরও যদি স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়, তাহলে ইসলামের বিধান হল-স্ত্রীর বিছানা আলাদা করে দিবে, অর্থাৎ স্বামী এক স্থানে ঘুমাবে আর স্ত্রী অন্য স্থানে এক বাড়িতেই। যেন উভয়ের প্রতি বিচ্ছেদের যাতনা অনূভুত হয়। এরকম করার পরও যদি স্বামীর সাথে বনিবনা না হয়, তাহলে স্ত্রীর উপর যে স্বামী অসন্তুষ্ট একথা বুঝানোর জন্য স্ত্রীর গায়ে মৃদু আঘাত করবে।(মৃদু আঘাত করার বিধান হল-চেহারায় আঘাত করতে পারবেনা, মাথায় আঘাত করতে পারবেনা, শরীরের কোথায় দাগ হতে পারবেনা। স্পষ্ট দেখা যায় এমন কোথাও আঘাত করতে পারবেনা। বেত দিয়ে আঘাত করতে পারবেনা। পাঠক চিন্তা করুন-এটা কী মূলত শারীরিক আঘাত উদ্দেশ্য না মানসিক আঘাত? অবশ্যই মানসিক আঘাত উদ্দেশ্য, অর্থাৎ স্ত্রীকে একথা বুঝানো যে, আমি তোমার উপর চূড়ান্ত পর্যায়ের অসন্তুষ্ট।) এরপরও যদি স্ত্রীর সাথে মিল না হয়, তাহলে ইসলামের বিধান হল-স্ত্রীকে এক তালাক দিবে, তিন তালাক নয়। যেন স্ত্রীর ইদ্দত শেষ হবার আগে যদি উভয়ের মাঝে বনিবনা হয়ে যায় তাহলে স্ত্রীকে বিনা বাধায় ফিরিয়ে আনতে পারে। আর যদি বনিবনা না হয় তাহলে স্ত্রী এক তালাকে বাইন হয়ে যাবে। স্বামীর সাথে ঘর করতে পারবেনা। এক তালাকে বাইন পতিত হবার পর যদি কখনো স্বামীর সাথে একত্রিত হবার ইচ্ছে হয় তাহলে তারা উভয়ে পুনরায় মোহর ধার্য করে দু’জন স্বাক্ষ্য রেখে বিয়ে করলে আবার তারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।
এক তালাকের পর (বাইন বা রেজয়ী) আবার যদি স্বামী স্ত্রীর মাঝে সমস্যা হয়, তাহলে পূর্বে বর্ণিত সবক’টি স্টেপ পেড়িয়ে এসে (অর্থাৎ প্রথমে রাগ দমন, তারপর বুঝানো, তারপর পারিবারিক মিমাংসা, তারপর বিছানা আলাদা ইত্যাদী) দ্বিতীয় তালাক দেবার অধিকার স্বামীকে দেয় ইসলাম। দ্বিতীয় তালাকের পর প্রথম তালাকের মত ইদ্দতের মাঝে স্ত্রীকে কোন শর্ত ছাড়াই ফিরিয়ে আনতে পারবে। আর ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে প্রথম তালাকের মত তৃতীয়বার বিয়ে করে ফিরিয়ে আনতে পারবে।
দুই তালাকের পর যদি আবার সমস্যা দাঁড়ায়, তাহলে আবার সেই পূর্বের স্টেপগুলি পেড়িয়ে যখন শেষ প্রান্তে এসে উপনিত হবে ইসলাম তখন স্বামীকে তৃতীয় তালাক দেবার অধিকার দেয়। আগে নয়।
বিজ্ঞ পাঠকের কাছে আমার জিজ্ঞাসা-এতগুলি স্টেপ পেড়িয়ে কেউ যদি তৃতীয় তালাক দেয় তাহলে ঐ স্ত্রীর সাথে সংসার করা কী কারো পক্ষে সম্ভব? নিরপেক্ষভাবে বললে নিশ্চয় বলবেন সম্ভব নয়। এই তৃতীয় তালাক দেবার পর ইসলামের বিধান হল-এই স্ত্রী এই স্বামীর জন্য চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে গেছে। এখন এই দু’জন আবার বিয়ে করলেও তা কার্যকর হবেনা। আপনারাই বলেন-ইসলামের বিধান মেনে কেউ তালাক দিলে এদেশে তালাকের হার কি পরিমাণ হ্রাস পেত? আর এতকিছুর পর তালাক দেবার পর ইসলামের বিধান “স্বামীর জন্য ঐ স্ত্রী হারাম হওয়ার” বিধানটি কী অযৌক্তিক? বা অমানবিক?
প্রসঙ্গ হিল্লে বিয়ে
হিল্লে বিয়ে ইসলাম সমর্থন করেনা। আল্লাহর নবী এক হাদিসে বলেন-হিল্লে বিয়েকারী ও যার জন্য করছে উভয়ের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত।(আল হাদিস)
একটি আবেদন
প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা! আসুন ইসলামের বিধান জানি ও প্রচার করি, তবেই সত্যিকার অর্থে সমাজে শান্তি আসবে। তালাক নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ করি। তালাকের ইসলামীক বিধান তৃনমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য প্রচারণা করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিয়ে করছেন এখনও ? করে থাকলে নিকাহনামার ১৮ নং অপশনটি পড়ার সুযোগ হয়েছে ?
তালাক যেই দিক না কেন আর্থিক লাভবান মেয়েরাই হয় এর ফলে। টাকাও পেল , দায়িত্বও পালন করতে হল না।
ছেলেরা তালাক দিতে গেলে বিভিন্ন স্টেপ পার হবার কথা বলা হয়েছে । মেয়েরা তালাক দিলে ?
মৃদু প্রহার করার ব্যাপারে যা জানলাম তাতে মনে হল গুরু পাপের জন্য লঘু দন্ড দেওয়া যা লাই দেবার সামিল। মেয়েরা কি কষ্মিনকালেও নিজের ভুল/অপরাধ স্বীকার করে ? উল্টো নিজের কৃত অপরাধে অন্যকে ফাঁসাতে তারা খুবই পারঙ্গম।
এভাবে (এরকম মৃদু প্রহারে) একটা দাম্পত্য জীবনে শান্তি আসে না কখনই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন