লাঙ্গলবন্দে দূষণের কবলে ব্রহ্মপুত্র নদ
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২৫ মার্চ, ২০১৭, ০২:১০:১৩ রাত
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা নগর মহানগর
আপডেট: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মার্চ ২৫, ২০১৭
পাপ মোচনের আশায় প্রতি বছর দেশ-বিদেশের লাখো পুণ্যার্থী হাজির হন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে অবস্থিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান ব্রহ্মপুত্র নদে। তবে কয়েক বছর ধরে সেই নদ পড়েছে দূষণের কবলে। অভিযোগ উঠেছে টোটাল ফ্যাশন, জাহিন নিটওয়্যারসহ কয়েকটি কারখানার বিরুদ্ধে। ওইসব কারখানার নিসৃত তরল বর্জ্য পরিশোধন না করেই ফেলা হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদে। পরিবেশ অধিদফতরের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে ফেলা হচ্ছে তরল বর্জ্য। এছাড়া টোটাল ফ্যাশনের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে জমি দখলের অভিযোগে মামলাসহ শ্রমিকদের নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।
জানা গেছে, ৩ ও ৪ এপ্রিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন সচিব, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতনরা স্নানঘাটগুলো পরিদর্শন করেছেন। এদিকে ওই নদের ১৩টি স্নানঘাটে দেশ-বিদেশের লাখো পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটলেও কয়েক বছর ধরেই ব্রহ্মপুত্র নদটি পড়েছে দূষণের কবলে। অভিযোগ রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে টোটাল ফ্যাশন, জাহিন নিটওয়্যার ও বাশার পেপার মিলসহ কয়েকটি কারখানার অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ওই পানিতে গোসল করে এরই মধ্যে চুলকানি, খোস-পাঁচড়াসহ নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে ওখানকার বাসিন্দারা। নাব্য হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ব্রহ্মপুত্র নদ। এর আগে একাধিকবার অভিযোগ করার পরও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি জেলা প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদফতর। মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব শুরু হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি। এখনই এ দূষণ প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখ লাখ পুণ্যার্থীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির নেতারা।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর বিকেএমইএ’র সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুইটি কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ বিষয়ে মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সরোজ কুমার সাহা জানান, টোটাল ফ্যাশন ও জাহিন নিটওয়্যারসহ আশপাশের কারখানাগুলোর ব্রহ্মপুত্র নদে অপরিশোধিত তরল বর্জ্য নির্গত করা এখনও বন্ধ হয়নি। তারা বিষয়টি স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। তবে এরপরও তরল বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ হয়নি। তারা স্থানীয়দের কাছে শুনেছেন ওই কারখানাগুলোতে ইটিপি থাকলেও তারা ইটিপি না চালিয়ে রাতের আঁধারে তরল বর্জ্য ব্রহ্মপুত্র নদে নিক্ষেপ করে। ২৭ মার্চ স্নানোৎসব উপলক্ষে তাদের সভা রয়েছে। সেদিনও বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে জানান তিনি। বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন জানান, টোটাল ফ্যাশন, জাহিন নিটওয়্যার ও বাশার পেপার মিল অনবরত অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ব্রহ্মপুত্র নদে ফেলছে। একাধিকবার অভিযোগ করার পর টোটাল ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানাকে জরিমানা করা হলেও তরল বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ হয়নি। পরিবেশ অধিদফতর নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, যতবারই ওই কারখানা তিনটিতে গিয়েছেন ততবারই তাদের ইটিপি চালু পেয়েছেন। তাদের কোনো বাইপাস সংযোগ পাইনি। উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হাবিব জানান, স্নানোৎসব উদযাপন পরিষদের নেতারা মৌখিকভাবে তাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
বিষয়: বিবিধ
৮২৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন