চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার কাহিনী এবং রাজা ভোজের ইসলাম গ্রহণ

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৫৩:৫৯ সকাল



পবিত্র কোরআনের সূরা ‘আল কামা’র-এর প্রাথমিক আয়াতসমূহে শাক্কল কামার বা চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার মোজেযা প্রমাণিত। বহু মোতাওয়াতের রেওয়াতের দ্বারাও এর অকাট্য প্রমাণ সুপ্রতিষ্ঠিত। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যারা এতদসংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে বিশিষ্ট কয়েকজন হচ্ছেন : হযরত আলী (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.), হযরত জুবাইর ইবনে মোতয়েম (রা.), হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) এবং হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.)। এসব সাহাবা হতে বহু তাবেঈন এবং তাদের কাছ থেকে তাবে তাবেঈনের এক জামাত এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীস গ্রন্থাবলীর মধ্যে বোখারী ও মুসলিম ছাড়াও বহু নির্ভরযোগ্য প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে এ আলোড়ন সৃষ্টিকারী মোজেযার বর্ণনা রয়েছে।

ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী ইবনে হাজেবের ‘মোখতাছার শরাহ’ পুস্তকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, শাক্কুল কামার-এর মোজেযা মোতাওয়াতের পর্যায়ের বলে গণ্য হয়ে থাকে। (মোতাওয়াতির হাদীস শাস্ত্রের একটি বিশেষ পরিভাষায় যার অর্থ হচ্ছে, হাদীস বর্ণনাকারীদের সংখ্যা এত অধিক হওয়া, স্বভাবত যাদের মিথ্যার উপর ঐকমত্য পোষণ করা যায় না।) সুতরাং ঘটনাটি প্রশ্নাতীতভাবে স্বীকৃত ও সত্য।

কিছুটা ভিন্ন আকারে চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনাটির বিবরণ এই : হিজরতের পূর্বে মক্কা মোআজ্জামায় আবু জেহেল, অলীদ ইবনে মুগীরা, আছ ইবনে ওয়ায়েল প্রমুখ কোরাইশ কাফের নেতৃবর্গ সমবেত হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আবেদন জানায় যে, আপনি যদি সত্য নবী হয়ে থাকেন তাহলে চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে দিন। তিনি বললেন, আমি যদি (তোমাদের দাবী অনুযায়ী) এরূপ করে দিতে পারি তা হলে তোমরা কি ঈমান আনবে? তারা বলল, হাঁ, আমরা ঈমান আনব। রসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর এরূপ হওয়ার জন্য দোয়া করলেন। অর্থাৎ চাঁদ দ্বিখ-িত হওয়ার জন্য দোয়া করলেন। তখন তাঁর নির্দেশে চাঁদ দুই টুকরা হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রত্যেক কাফেরের (উপস্থিত) নাম উচ্চারণ করে বলতে থাকেন, হে অমুক! হে অমুক!! সাক্ষী থাক। তখন উপস্থিত সকল লোকেই উত্তম রূপে প্রত্যক্ষ করল যে উভয় খ- এতই পার্থক্য হয়ে গিয়েছিল যে, উভয়ের মাঝে হেরা পর্বত দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। কাফেরগণ বলে উঠল, এটা হচ্ছে তাঁর জাদু। আবু জেহেল বলল, এটা জাদু হলে জাদুর প্রভাব কেবল তোমাদের উপরই পড়ার কথা, এটাতো হতে পারে না যে সমগ্র পৃথিবীর মানুষের উপর পড়বে। আবু জেহেল আরো বলল, শহরের লোকেরা যারা তোমাদের নিকট আসবে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে হবে এবং বিভিন্ন দিক দিগন্ত হতে যারা আসবে তাদেরকেও জিজ্ঞাসা করতে হবে। তাদের আগমনের পর সকলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা সবাই বলল যে, আমরা চাঁদ দ্বিখ-িত হওয়ার দৃশ্য অবলোকন করেছি।

হাদীস সংকলনের তৃতীয় যুগের মোহাদ্দেসীনে কেরামের মধ্যে একজন বিখ্যাত মোহাদ্দেসেুর নাম আবু নোআইম (নাঈম) আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ ইস্কাহানী (৪৩১ হি.)। তার সংকলিত ‘দালায়েলুন নবুওয়াতি’ প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ। এতে আতা ও জেহাক সূত্রে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করা হয়েছে। এ বর্ণনায় পূর্বে উল্লেখিত তিনজন কাফের নেতা ছাড়াও আছ ইবনে হিশাম, আসওয়াদ ইবনে মোত্তালেব এবং নজর ইবনে হারেসের নাম রয়েছে যারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে চাঁদ দ্বিখ-িত করার দাবী জানিয়েছিল। এই বর্ণনায় তারা স্পষ্ট দাবী জানিয়েছিল, ‘ইনকুনতা ছাদেকাফা শাক্কে লানা আল কামারা (কিরকাতাইনো নিছফান আলা আবি কোবাই সে ওয়া নিছকাল আলা কাইকুআনে।’ কাফেররা বলল, আপনি যদি সত্যবাদী হন তা হলে চাঁদকে দ্বিখ-িত করে আমাদেরকে দেখান, যার অর্ধেক আবু কোবাইস পর্বতে এবং অর্ধেক কাইকুআন পর্বতে পতিত হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি যদি তা করে দেই তাহলে তোমরা ঈমান আনবে কি? তারা বলল, হাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, রাতটি ছিল পূর্ণিমার। রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন, তারা (কাফেররা) যা চায় তা যেন আল্লাহ তাকে দান করেন। অতঃপর চাঁদ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অর্ধেক আবু কোবাইল পর্বতে পতিত হয় এবং অর্ধেক কাইকুআন পর্বতে পতিত হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আবু সালমা, হে আবদুল আসাদ এবং হে আরকাম ইবনে আরকাম, তোমরা সবাই সাক্ষী থাক। এ বর্ণনা হতে জানা যায় যে, কাফেরগণের পক্ষে হতেই দাবী করা হয়েছিল যে, চাঁদ দ্বিখ-িত করে উল্লেখিত দুই পর্বতে পতিত করতে হবে।

শাক্কুল কামার একটি বহুল আলোচিত বিষয়। কোরআনে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ থাকায় এবং বহু হাদীসে ঘটনার বর্ণনা থাকায় মোফাসসিরীন-মোহাদ্দেসীন এবং সীরাত লেখকগণ এর নানাদিক নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন এবং যারা আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, শক্কে কমর কেয়ামতের পূর্বে সংঘটিত হবে বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের এ মতবাদকে বাতিল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ মোজেযা সংঘটিত হয়ে যাওয়ার পক্ষের অকাট্য যুক্তি-প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মোজেযা সংক্রান্ত রচনাবলীতে বিভিন্ন ভাষায় স্বতন্ত্র বই পুস্তকও প্রকাশিত হয়েছে মক্কা জীবনে এই ঘটনার পরের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা হচ্ছে মেরাজ।

প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মেরাজে গমনের বিস্ময়কর ঘটনাটি জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীরে ঊর্ধ্ব গগনে গমন এবং আল্লাহর দীদার লাভ করা। মেরাজের ঘটনাকে কাফেররা বিশ্বাস করেনি যেমন তারা শক্কে কামার-এর মোজেযাকেও বিশ্বাস করেনি। তবে মেরাজের ঘটনা ছিল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্বশরীরে প্রত্যক্ষ করার বিষয়। পক্ষান্তরে শক্কে কমর-এর মোজেযা কাফেররা প্রত্যক্ষ করেও বিশ্বাস করেনি। আর এ ঘটনা বহুলোকেই প্রত্যক্ষ করেছিল। তাদেরই দাবি, চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।

মহানবী (সা.)-এর মক্কী জীবনে মেরাজের বিস্ময়কর, অবিস্মরণীয় মোজেযা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার মোজেযা মক্কার হঠকারী কাফের-মুশরিকদের কিছুতেই গুমরাহীর পথ হতে বিরত রাখতে পারেনি তারা জাহান্নামের পথই ধরেছে। তাদের রীতিনীতি, স্বভাব, মন মানসিকতাই ছিল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি আগত প্রত্যেক অহী নির্দেশকে অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা এবং সত্যকে জাদুমন্ত্র বলে আখ্যায়িত করা। এ মোজেযার বাস্তবতা অকাট্যরূপে সকলের চোখের সামনে উদ্ভাসিত হওয়ার পরেও তারা এটাকে জাদু বলে নিজেদের কপটতা ও জঘন্য মনোবৃত্তির প্রমাণ দেয়। আর ঘটনা যখন ক্রমে নানাস্থানে আলোচনা চর্চার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয় এবং আরব বিশ্বের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে তখন ঘটনার সত্যতা নিয়ে ভিন্নভাবে প্রশ্ন দেখা দেয়। আরও পরবর্তীকালের ঘটনা। গ্রীক দার্র্শনিকদের একটি দল তারা কাফের-মুশরিকদেরও ছাড়িয়ে যায় এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার মোজেযাকে অস্বীকারই করে না, তারা তাদের ভ্রান্ত নীতি দর্শন অনুযায়ী বলতে থাকে, আকাশ ও গ্রহ-উপগ্রহের পক্ষে বিদীর্ণ হওয়াও সংযুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। তারা আরও প্রশ্ন উত্থাপন করে যে, চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার মতো মোজেযা সংঘটিত হয়ে থাকলে তা বিশ্ব ইতিহাসে স্থান পেত অথচ ইতিহাসে এই ঘটনার কথা উল্লেখ নেই। সুতরাং এই ঘটনার কোন বাস্তবতা নেই। তাছাড়া গণক, জ্যোতিষীরা চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেনি, ভবিষ্যৎ বক্তারাও এ ব্যাপারে নীরব রয়েছে। এ ধরনের নানা প্রশ্ন উত্থাপন করে দার্শনিক-বিজ্ঞানীরা চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার সত্য ঘটনাটি আড়াল করার চেষ্টা কম করেনি। এ ব্যাপারে তারা গোলক ধাঁধাঁর সৃষ্টি করে একশ্রেণীর মুসলিম সীরাত লেখককেও বিভ্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যার জন্য আরেক সীরাত গ্রন্থে শক্কে কমরের মোজেযা সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে স্থান পায়নি বলে দার্শনিক-বিজ্ঞানীদের অভিযোগ যে কত ভিত্তিহীন তা নিম্নের আলোচনা হতে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

১ ‘শক্কল কামারে’র মোজেযা মক্কার কাফেরদের একটি বিশেষ দাবির প্রেক্ষিতে সংঘটিত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) সেই দাবী পূরণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেন এবং আল্লাহ তাঁর সেই দোয়া কবুল করেন।

২. মক্কাবাসীরা ছাড়াও আশপাশের এলাকা হতে আগত মোসাফিরগণও চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার সাক্ষ্য দান করে।

৩. যদি ধরেও নেয়া যায় যে, ঘটনাটি সকল স্থানে দেখা যায়নি এর কারণ কি? জবাবে বলা যায় চাঁদের উদয়স্থলের পার্থক্যের কারণে কোন কোন স্থানে চাঁদ উদিতই হয়নি। এ জন্য চন্দ্র গ্রহণ সব স্থানে পরিলক্ষিত হয় না এবং কোন কোন সময় অন্যান্য স্থানে মেঘাচ্ছন্ন বা পর্বত ইত্যাদি চাঁদের সামনে প্রতিবন্ধক হয়ে থাকে।

৪. ‘খিরকে ইলতিয়াম’- একটি বিশেষ পরিভাষা। খিরক অর্থ হচ্ছে ফেটে যাওয়া, চিরাচরিত নিয়মনীতি ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে কিছু ঘটে যাওয়া, ব্যতিক্রম, অভিনব, নবী-রাসূলগণের মোজেযা বা অলৌকিক ঘটনা। এর বহু বচন খাওয়ারেকা। আর ইলতিয়াম শব্দের অর্থ, পরস্পর দুই বস্তুর মিলিত হওয়া। সুতরাং ঘিরকে ইলতিয়াম বলা হয়, সৌরম-লে অর্থাৎ আকাশ, তারকারাজি তথা গ্রহ-উপগ্রহ ইত্যাদি ফাটল-মিলন বা ব্যতিক্রমী ঘটনাবলী। মুসলমানদের কাছে আকাশ নক্ষত্ররাজির মধ্যে এসব অবস্থার সৃষ্টি হওয়া খুবই সম্ভব। এর বহু দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, কেয়ামতের সময় আসমান ও তারকারাজি ফেটে তুলাতুলা হয়ে যাবে যার বর্ণনা কোরআনের বহুস্থানে রয়েছে। এতদসংক্রান্ত বহু হাদীসেও এ বর্ণনা এসেছে। ‘হেকমত’ বা যুক্তিশাস্ত্র অনুযায়ী ও দার্শনিকদের যুক্তি বাতিল-অচল এ সম্পর্কে গ্রীসের বিখ্যাত প্রাচীন দার্শনিক ফিসাব্যারাম ‘হাইয়াত’ বা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে গিয়ে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে, তারকারাজি মৃত্তিকার ন্যায় খুব ঘন, পুরু এবং সমস্তই লীন, ধ্বংসযোগ্য এবং তাদেও ফাটল-মিলন ঘটবে। অতএব বিনাদ্বিধায় প্রমাণিত যে, চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনা একটি অকাট্য সত্যরূপে প্রতিষ্ঠিত, এতে সংশয়ের কোন অবকাশ নেই।

৫. প্রাচীন ঐশী গ্রন্থ ‘তওরাতে’ বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইউশা (আ.)-এর জন্য চলমান সূর্য থেমে গিয়েছিল, অথচ এ ঘটনা কোন ইতিহাস গ্রন্থে লিখিত হয়নি, যদিও এটি ছিল দিনের ঘটনা। সুতরাং ঘটনাটি ইতিহাসে লিপিবদ্ধ না থাকলে তার বাস্তবতা মিথ্যা হতে পারে না। কাজেই রাতের ঘটনা ‘শক্কে কমরকেও অস্বীকার করা যায় না। মুসলমান ঐতিহাসিকদের আরবী, ফার্সী, উর্দু, বাংলাসহ বিশ্বের নানা ভাষায় রচিত প্রাচীন ও আধুনিক বহু গ্রন্থে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মোজেযা সংক্রান্ত হাদীসও অন্যান্য অসংখ্য গ্রন্থে, পদ্যে-গদ্যে শক্কে কমরের ঘটনার বিবরণ, আভাস, ইঙ্গিত ছাড়াও কোরআনে সূরা ‘কামার’ অপেক্ষা বড় দলিল আর কি হতে পারে!

৭. শক্কে কমরের মোজেযা অস্বীকারকারী আধুনিক শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সমাজের মধ্যে প্রত্যেকেই চাঁদে মানব অবতরণের বিস্ময়ক ঘটনা অবগত। বিশ্ব ইতিহাসের এই চমকপ্রদ ঘটনাটি সর্বপ্রথম ঘটেছিল ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই রাত ২টা ১৬ মিনিটে। চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানব চাঁদের তথাকথিত ‘কলঙ্ক’ অর্থাৎ ক্ষত চিহ্নের যে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তা কেউ এখনও ভুলে যায়নি। এর পরেও কি অস্বীকারকারীদের বোধোদয় হবে না?

৮. মালাবারের রাজা ভোজের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ছিল শক্কে কমর বা চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার ফল। আমাদের পরবর্তী আলোচনা রাজাভোজ। প্রসঙ্গক্রমে অনেকের মধ্যে বিদ্যমান একটি ভ্রান্ত ধারণা বা অন্ধ বিশ্বাসের অবসান ঘটানো দরকার। তা হচ্ছে এই যে, দ্বিখ-িত চাঁদের এক খ- জমিনে পতিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জামার কলারে ঢুকে পড়ে এবং আস্তিনের (হাতা) ভেতর দিয়ে বের হয়ে যায়, এটি নিছক কল্পনা এবং ভিত্তিহীন ধারণা। বিশিষ্ট মোহাদ্দেসীনে কেরাম যে ব্যাখ্যা করেছেন তাতে এরূপ ধারণার প্রমাণ নেই। তারা বলেন, চাঁদ দ্বিখ-িত হয়ে যায় এবং যথেষ্ট ব্যবধানে উভয় খ- আলাদা হয়ে যায়, উভয়ের মাঝে হেরাপর্বত দৃষ্টিগোচর হয়। চাঁদ সম্পর্কে আরও নানা অলীক কথা শোনা যায়। চাঁদের ফাঁকা স্থান বা ক্ষত চিহ্ন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মোজেযারই অংশবিশেষ। একে চাঁদের ‘কলঙ্ক’ বলে আখ্যায়িত করাও উচিত নয়।

বস্তুত, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অঙ্গুলির ইশারায় চাঁদ দ্বিখ-িত হয়ে দুই পর্বতে পতিত হওয়া, আবার মিলিত হয়ে সাবেক অবস্থায় তা ফিরে যাওয়ার দৃশ্য উপস্থিত ও বহিরাগত লোকজনের অবলোকন করা এবং এই সৌরম-লীয় মহাবিস্ময়কর ঘটনার প্রত্যক্ষ বাস্তব নিদর্শন হিসেবে চাঁদের ‘কলঙ্ক’ নামে সাধারণ্যে প্রচলিত ফাঁক বা ক্ষত চিহ্নকে আল্লাহর অসীম কুদরতের অস্বীকারকারী মানুষের ইবরত বা শিক্ষার জন্য চিরন্তন করে রাখা ইত্যাদি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই একটি মোজেযার বিভিন্ন দিক। অস্বীকারকারীদের জন্য মালাবার রাজ্যের রাজা ভোজের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা এবং তার ফল হিসেবে সমগ্র ভারত তথা উপমহাদেশে ইসলাম বিস্তারের সূচনাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আরেকটি সুদূরপ্রসারী (মোজেযা) রূপে আখ্যায়িত করা যায়। সাবহাতুল মারজান পুস্তকের বর্ণনা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন ‘ইন্নি লাআজিদু রীহালহিন্দ’ আমি ভারতে সুগন্ধি অনুভব করছি। তাঁর এ বক্তব্য রাজা ভোজের ইসলাম গ্রহণের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে নাকি বাংলাদেশসহ সমগ্র উপমহাদেশে ইসলামের আলো বিকশিত হওয়ার প্রতিধ্বনি করে সেটি এক আলাদা কাহিনী। তার উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণীটি রাজা ভোজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিনা সে প্রশ্নও ভিন্ন। তবে চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়ার মোজেযার সাথে সম্পৃক্ত মালাবারের রাজা ভোজের ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি ইতিহাসখ্যাত বিধায় আমাদের পরবর্তী আলোচনা রাজাভোজের ইসলাম গ্রহণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ।

বিষয়: বিবিধ

২২১৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366780
২৩ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১:৫০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি খুবই চমৎকার হয়েছে। খুবই ভালো লাগলো আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File