দারসূল কোরআন বিষয়ঃ- আল্লাহর দীনের সাহায্যকারীদের রয়েছে উচ্চতর মর্যাদা।

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:০৯:০৯ সকাল



ভূমিকা:-

আলহামদুলিল্লাহির রাব্বীল আলামিন ওয়াচ্ছালাতু ওয়াচ্ছালামু আলা আশরাফীল আম্বিয়ায়ে মুরসালীন।আম্মা বাদ। আল্লাহর একক সার্বভৌমত্ব ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহর একক সার্বভৌমত্ব এবং ইসলামের আইন-বিধান প্রতিষ্ঠায় ঈমানদারগণের রাষ্ট্রীয় শাসন ক্ষমতা লাভ একান্ত প্রয়োজন। আর তাই আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ নাবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আল্লাহ্’র একক সার্বভৌমত্ব এবং সত্য দ্বীন-ইসলাম প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করার পর, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে দায়িত্ব যেভাবে পালন করেছেন, যে পদ্ধতিতে পালন করেছেন, আজকের যুগের দা‘ঈ-ইলাল্লাহদের সে ভাবেই পালন করতে হবে। তিনি ঈমানের দাওয়াত, ইসলামের দাওয়াত যে ভাবে, যে শব্দ দ্বারা দিয়েছেন আমাদেরকে সে ভাবেই দিতে হবে। তিনি তাঁর উপস্থাপিত দাওয়াতে ঈমান ও ইসলামকে যেভাবে আন্তরিক উপলব্ধি, বিশ্বাস, আক্বীদাহ এবং সালাত, সিয়াম ও হজ্জের ন্যায় আধ্যাত্বিক আমলের সাথে সাথে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক জীবন ব্যবস্থা হিসেবেও তুলে ধরেছিলেন আমাদের উপস্থাপনায়ও ঈমান ও ইসলামকে তদরূপ তুলে ধরতে হবে।আজকে দরসের আলোচনা

সুরা মুহাম্মদ আয়াত (৭-১১)

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ (7(

হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।

O ye who believe! If ye will aid (the cause of) Allah, He will aid you, and plant your feet firmly.

وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ (8(

আর যারা কাফের, তাদের জন্যে আছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন।

But those who reject ((Allah)),- for them is destruction, and ((Allah)) will render their deeds astray (from their mark).

ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ ) 9(

এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব, আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন।

That is because they hate the Revelation of Allah. so He has made their deeds fruitless.

أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ دَمَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَلِلْكَافِرِينَ أَمْثَالُهَا (10(

তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি অতঃপর দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং কাফেরদের অবস্থা এরূপই হবে।

Do they not travel through the earth, and see what was the End of those before them (who did evil)? Allah brought utter destruction on them, and similar (fates await) those who reject Allah.

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ مَوْلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَأَنَّ الْكَافِرِينَ لَا مَوْلَى لَهُمْ (11(

এটা এজন্যে যে, আল্লাহ মুমিনদের হিতৈষী বন্ধু এবং কাফেরদের কোন হিতৈষী বন্ধু নাই।

That is because Allah is the Protector of those who believe, but those who reject Allah have no protector.

আয়াতের শব্দার্থ:-

إِن – যদি, تَنصُرُوا – তোমরা সাহায্য কর, يَنصُر – তিনি সাহায্য, يُثَبِّتْ- সুদঢ় করবেন, أَقْدَامَكُمْ- তোমাদের অবস্থান, فَتَعْسًا- সে ক্ষেত্রে দুর্গতি, َأَضَلَّ- তিনি নিস্ফল করে দিয়েছেন, أَعْمَالَهُمْ- তাদের কর্মসমূহ, اَفَلَمْ – নাই তবে কি, يَسِيْرُوْا – তারা ভ্রমণ করে, اَلاَرْضِ – পৃথিবীতে, فَيَنْظُرُوْا – তারা দেখে, كَيْفَ – কেমন, كَانَ – ছিল, عَاقِبَةُ – পরিণাম, قَبْلِهِمْ – তাদের পূর্বে, دَمًّرَ – ধ্বংস করে দিয়েছেন, عَلَيْهِمْ – তাদের উপর, لِلْكفِرِيْنَ – কাফেরদের জন্য, اَمْثَالُهَا – তার সমপরিণতি, ‌ذلِكَ – এটা, بِاَنَّ – এ জন্য যে, مَوْلَىْ – অভিভাবক, اَنَّ- যে (এও), لَهْمْ- তাদের জন্য।

সুরার নামকরণ:-

এই সূরার দুই নং আয়াতের অংশ واَمَنُوْا بِمَا نُزِّلَ عَلى مُحَمَّدٍ ـ থেকে এর নাম مُحَمَّدٍ গৃহীত হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময়কাল: -

সূরার বিষয়বস্তু, ৪ নং আয়াতের শব্দাবলী এবং যে পূর্বাপর প্রসংগে এ আয়াত নাযিল হয়েছে তা থেকেও একথা স্পষ্ট জানা যায় যে, আয়াতটি যুদ্ধের নির্দেশ আসার পর, কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে নাযিল হয়েছিল। “যখন কাফেরদের সাথে তোমাদের মুকাবিলা হবে” কথাটিও ইংগিত দেয় যে, তখনও মুকাবিলা হয়নি, বরং মুকাবিলা হলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে পূর্বাহ্নেই দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

ঐতিহাসিক পটভূমি: -

এই সূরা নাযিলের সময়ের পরিস্থিতি এমন ছিল যে, বিশেষভাবে মক্কা নগরীতে এবং সাধারণভাবে সমগ্র আরবদেশে মুসলমানদেরকে যুলুমের স্বীকার ও নির্যাতনের লক্ষ্যস্থল বানানো হয়েছিল। মুসলমানদের জীবন অত্যন্ত দুর্বিসহ করে তোলা হয়েছিল। নির্যাতিত মুসিলম জনতা চারদিক হতে মদীনার শান্তিপূর্ণ ভূমিতে একত্র হচ্ছিল। কিন্তু কুরাইশ কাফেররা এখানেও তাদেরকে নিশ্চিন্তে বসবাস করার সুযোগটুকু দিতেও প্রস্তুত ছিল না। মদীনার ছোট্ট ও স্বল্পায়তন জনপদটি চতুর্দিক থেকে কাফেরদের পরিবেষ্টনে আটকা ছিল। তারা মুসলমানদেরকে নির্মূল করে দিতে উদ্যত হয়েছিল।মুসলিমদের জন্য এ অবস্থায় দুইটিপ মাত্র উপায় অবশিষ্ট ছিল। হয় তারা ইসলাম পালন ও অনুসরণ ত্যাগ করে কাফের-মুশরিকদের নিকট আত্মসমর্পণ করবে (যা ছিল তাদের কাছে সম্পূর্ণ অসম্ভব) অথবা তারা মারার জন্য বা মরার জন্য মাথা তুলে দাঁড়াবে এবং সর্বাত্মক শক্তি নিয়োজিত করে আরব ভূমিতে ইসলাম থাকবে কি জাহিলিয়াত থাকবে- এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে।এ সময়ে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে চূড়ান্ত পর্যায়ের ও উচ্চতর মানের কাজের পথ দেখালেন যা তাদের জন্য একমাত্র পথ। আল্লাহ তায়ালা বলেন:-

أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ(39(

যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।

To those against whom war is made, permission is given (to fight), because they are wronged;- and verily, Allah is most powerful for their aid;-

)সূরা হজ্জ আয়াত ৩৯(

আল্লাহ্‌ তাআলা আরো বলেন:-

وَقَاتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلاَ تَعْتَدُواْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبِّ الْمُعْتَدِينَ )190(

আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

Fight in the cause of Allah those who fight you, but do not transgress limits; for Allah loveth not transgressors.

( সূরা বাকারা আয়াত ১৯০)

কিন্তু এ সময় ও এ অবস্থায় যুদ্ধ করার অর্থ ও তাৎপর্য যে কি তা তখন সকলে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন। মদীনায় ছিল মুষ্টিমেয় মুসলমানদের একটি বাহিনী। তারা এক হাজার যোদ্ধা পুরুষ সংগ্রহ করতেও সমর্থ ছিল না। এ অবস্থায় তাদেরকে বলা হচ্ছিল, সমগ্র আরবের জাহিলিয়াতের সাথে যুদ্ধ করার জন্য তরবারি নিয়ে বের হয়ে পড়। এতদ্বতীত যুদ্ধ করার জন্য যেসব সাজ-সরঞ্জাম অপরিহার্য ছিল, তা মদীনায় ন্যায় এক দরিদ্র জনপদের পক্ষে উপোস থেকে খাদ্য বিক্রি করেও সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না। এ সময়ও শত শত মুহাজির এমন ছিল যাদেরকে পুনর্বাসিত করা সম্ভব হয়নি। আরবের লোকেরা অর্থনৈতিক বয়কট করে তাদের কোমর ভেঙ্গে দেবার উপক্রম করেছিল।

আলোচ্য অংশে বিষয়বস্তু : এ সূরার প্রথমেই যে দু’টি দলের মধ্যে মুকাবিলার কথা বলা হয়েছে, তন্মন্ধ্যে এক দল সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু অপর দলটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর উপর যে সত্য নাযিল হয়েছিল তা মেনে নিয়েছিল। এখন আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত হলো প্রথম দলটির সমস্ত চেষ্টা-সাধনা ও কাজকর্ম তিনি নিস্ফল করে নিবেন এবং দ্বিতীয় দলটির অবস্থা সংশোধন করে দিবেন।

তারপর দ্বিতীয় দলটিকে সামরিক বিষয়ে প্রাথমিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে আল্লাহর সাহায্য ও দিকনির্দেশনার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর পথে কুরবানী পেশ করার জন্য তাদেরকে সর্বোত্তম প্রতিদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তাদেরকে শান্ত্বনা দেয়া হয়েছে যে, ন্যায় ও সত্যের পথে প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না। বরং দুনিয়া ও আখেরাতে তারা ক্রমান্বয়ে আরো অধিক ভাল ফল লাভ করবে।

আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ ـ (৭)

হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।

কুরআন মজীদের অধিকাংশ স্থানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে অংশগ্রহণকে “আল্লাহর সাহায্য করা” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। জীবনের যে পরিসরে আল্লাহ মানুষকে ইচ্ছা ও সংকল্পের স্বাধীনতা দান করেছেন, সেখানেই তিনি নিজের প্রভুত্ব শক্তি ব্যবহার করে কুফর বা ঈমান, বিদ্রোহ বা আনুগত্য কোন একটির পথ অবলম্বন করার জন্য মানুষকে বাধ্য করেননি। এর পরিবর্তে তিনি যুক্তি ও উপদেশের সাহায্যে মানুষের বাধ্য করেননি। এর পরিবর্তে তিনি যুক্তি ও উপদেশের সাহায্যে মানুষের কাছ থেকে এই স্বতস্ফূর্ত স্বীকৃতি আদায় করতে চেয়েছেন যে অস্বীকৃতি, নাফরমানী ও বিদ্রোহ করার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও তার জন্য নিজের স্রষ্টার দাসত্ব, আনুগত্য ও বন্দেগীর পথ অবলম্বন করাই প্রকৃত সত্য ও এটিই তার সাফল্য ও নাজাতের পথ। এভাবে প্রচার, উপদেশ ও নসীহতের সাহায্যে মানুষকে সত্য সঠিক পথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই আল্লাহর কাজ। আর যেসব লোক এই কাজে আল্লাহকে সাহায্য করে তাদেরকেই আল্লাহর সাহায্যকারী গণ্য করা হয়। আল্লাহর কাছে মানুষের এটিই সর্বোচ্চ মর্যাদা। নামায, রোযা ও অন্যান্য ইবাদত- বন্দেগীতে মানুষ নিছক বান্দা ও গোলামের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত থাকে। কিন্তু দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সাধনার মাধ্যমে সে আল্লাহর সাহায্যকারী ও সহযোগীর মহান মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়।

(৮) وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ

আর যারা কাফের, তাদের জন্যে আছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন।

َتَعْسًا- হোঁচট লেগে হুমড়িগ খেয়ে পড়া। أَضَلَّ- নিষ্ফল করে দিয়েছেন তাদের আমলসমূহ।

ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ (৯)

এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব, আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন।

তারা নিজেদের প্রাচীন জাহিলী ধ্যান-ধারণা, রীতিনীতি ও নৈতিক বিবৃতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং তাদেরকে সোজা পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ যে শিক্ষা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করেছে। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদের আমলসমূহ বরবাদ করে দিয়েছেন।

أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ دَمَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَلِلْكَافِرِينَ أَمْثَالُهَا (১০)

তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি অতঃপর দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং কাফেরদের অবস্থা এরূপই হবে।

তারা কি পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করে সেসব লোকের ধ্বংসাবশেষ দেখে না, যারা তাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। অর্থাৎ ফেরাউন, কারূন, নমরূদ, শাদ্দাদ ও ছামূদ। এদের ধ্বংসাবেশেষ দুনিয়াতে এখনও রেখে দেয়া হয়েছে, মানুষের শিক্ষা লাভের জন্য। আগেকার যুগে কাফেররা যে ধ্বংসের মুখোমুখী হয়েছিল, এখন যে কাফেররা মুহাম্মদ (সা) এর দাওয়াত মানছে না তাদের জন্যও ঠিক অনুরূপ শাস্তি নির্ধারিত হয়ে আছে। শুধু দুনিয়ার আযাব দ্বারাই তাদের ধ্বংসের পরিসমাপ্তি ঘটবে না। আখেরাতেরও তাদের জন্য এ ধ্বংস নির্ধারিত হয়ে আছে।

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ مَوْلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَأَنَّ الْكَافِرِينَ لَا مَوْلَى لَهُمْ (১১)

এটা এজন্যে যে, আল্লাহ মুমিনদের হিতৈষী বন্ধু এবং কাফেরদের কোন হিতৈষী বন্ধু নাই।

মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক, কাফেরদের কোন অভিভাবক নেই। ওহুদ যুদ্ধে মুহাম্মদ (সা) যখন আহত হয়ে কয়েকজন সাহাবীর সাথে পাহাড়ের এক গুহায় অবস্থান করছিলেন, তখন আবু সুফিয়ান চিৎকার করে বললো- لَنَا عُزَّى وَلاَ عُزَّّى لَكُمْ ـ “আমাদের আছে উযযা দেবতা, তোমাদের তো উযযা নেই”। তখন নবী করীম (সা) সাহাবীদের বললেন: তাকে জবাব দাও- اَلّلهُ مَوْلاَنَا وَلاَمَوْلى لَكُمْ ـ “আমাদের পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী আল্লাহ, কিন্তু তোমাদের কোন পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী নেই”। নবী করীম (সা) এর এ জবাবটি এ আয়াত থেকে গৃহীত।

দরসের শিক্ষা:-

১। ঈমানদারগণ আল্লাহর সাহায্যকারী হলে, আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী হবেন এবংতাদের অবস্থান মজবুত করে দিবেন।

২। আল্লাহর আয়াত অবিশ্বাসীরা অবিশ্বাস-অপছন্দ করেছে, তাই আল্লাহ তাদের আমলসমূহ বরবাদ করে দিয়েছেন।

৩। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অত্যাচারী লম্পটদের পরিণাম চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারা পৃথিবী ভ্রমণ করে সেই সব পরিণাম দেখে শিক্ষা গ্রহণ না করায় তাদের জন্যও অনুরূপ পরিণতি অপেক্ষা করছে।

৪। নামায, রোযা ও অন্যান্য ইবাদত- বন্দেগীর মাধ্যমে মানুষ নিছক বান্দা বা গোলামের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু দীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সাধনার মাধ্যমে সে আল্লাহর সাহায্যকারী ও সহযোগীর মহান মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়। এই দুনিয়ায় রূহানী ও আধ্যাত্মিক উন্নতির শিখরে আরোহণের এটিই একমাত্র পথ।

বাস্তবায়ন: সমাজে আল্লাহ দীন কায়েমের জন্য যে যত বেশী চেষ্টা, সংগ্রাম-সাধনা করতে পারবে, সে-ই রুহানী ও আধ্যাত্মিক উন্নতির শিখরে উঠে উচ্চতর মর্যাদা ও মাকাকে পৌঁছে যেতে পারবে। আল্লাহ আমাদে সকলকে রূহানী ও আধ্যাত্মিক মাকাম হাসিল করার জন্য উত্তম আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

আরজ

জীবরাইলের ডানা

ভুল হলে আমাকে অবশ্যই অবিহিত করবেন।ধন্যবাদ সবাইকে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File