ইসলাম ধর্মে কুনো মানুষকে গালি দেওয়া বা গালিগালাজ করা যায়েজ না বরং নিষিদ্ধ এবং হারাম।
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:৩৮:২৫ সকাল
ইসলাম ধর্মে কুনো মানুষকে গালি দেওয়া বা গালিগালাজ করা যায়েজ না বরং নিষিদ্ধ এবং হারাম। তাই এগুলো থেকে দুরে থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করুনঃ নিচে পবিত্র কুরআন মাজিদ এবং হাদীস শরীফ থেকে গালাগালি বা গালিগালাজ না করার পক্ষে দলিল পেস করা হলো, মানা না মানা আপনার ব্যপার।
যারা গালিগালাজ করে তাদের ব্যপারে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ-
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।
And the servants of ((Allah)) Most Gracious are those who walk on the earth in humility, and when the ignorant address them, they say, "Peace!";
{সূরা আল ফুরকানঃ আয়াত ৬৩}
আল্লাহ্ পাক আরও বলেন:-
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।
And those who annoy believing men and women undeservedly, bear (on themselves) a calumny and a glaring sin.
(সূরা আহযাবঃ আয়াত ৫৮)
মহান আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন:-
إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে গুরুতর শাস্তি।
Those who slander chaste women, indiscreet but believing, are cursed in this life and in the Hereafter: for them is a grievous Penalty,-
(সূরা আন-নূর: আয়াত ২৩)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “মুসলমানদের কে গালমন্দ করা ফাসেকী আর তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা কুফরী।” (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু যর (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে যেন ফাসেক অথবা কাফের এর অপবাদ না দেয়। কেননা সে যদি প্রকৃতই তা না হয়ে থাকে তবে এই অপবাদ তার নিজের ঘাড়ে চেপে আসবে। (বুখারী)
হযরত আবু হোরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পরস্পরকে গালি দানকারীর মধ্যে যে পূর্বে গালি দিয়েছে সে দোষী, যদি নির্যাতিত (প্রথম যাকে গালি দেয়া হয়েছে) ব্যক্তি পরিসীমা অতিক্রম না করে থাকে। (মুসলিম)
হযরত আবু হোরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার কাছে উপস্থিত করা হল। সে মদ পান করেছিল। তিনি বললেন, একে প্রহার কর। হযরত আবু হোরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বর্ণনা করেছেন, আমাদের মধ্যে কেউ হাত দিয়ে, কেউ জুতা দিয়ে, আবার কেউ বস্ত্র দিয়ে তাকে প্রহার করল। যখন সে সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করল, তখন কোন একজন বলল, আল্লাহ তোকে লাঞ্ছিত করুক। এ কথা শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এধরণের কথা বল না। তার বিরুদ্ধে শয়তানকে সাহায্য কর না।” (বুখারী)
আর হাদিস শরিফেঃ- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বসিয়াছিলেন, তাহার উপস্থিতিতে এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (আঃ) উনাকে গালি দিলো। তিনি (ঐ ব্যক্তির বার বার গালি দেওয়া এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক (আঃ) উনার সবর ও খামুশ থাকার উপর) খুশী হইতে থাকেন এবং মুচকি হাসিতে থাকেন। অতঃপর যখন সেই ব্যক্তি অনেক বেশী গালিগালাজ করিল তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (আঃ) তাহার কিছু কথার জবাব দিলেন। ইহার উপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হইয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (আঃ) ও তাহার পিছনে পিছনে তাহার নিকট পৌঁছিলেন এবং আরজ করিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যতক্ষণ) ঐ ব্যক্তি আমাকে গালি দিতেছিল আপনি সেখানে অবস্থান করিতেছিলেন, তারপর যখন আমি তাহার কিছু কথার জওয়াব দিলাম তখন আপনি নারাজ হইয়া উঠিয়া গেলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিলেন, (যতক্ষণ তুমি চুপ ছিলে এবং সবর করিতেছিলে তোমার সহিত একজন ফেরেশতা ছিল, যে তোমার পক্ষ হইতে জওয়াব দিতেছিল। তারপর যখন তুমি তাহার কিছু কথার জওয়াব দিলে (তখন সেই ফেরেশতা চলিয়া গেলো আর) শয়তান মাঝখানে আসিয়া গেলো। আর আমি শয়তানের সহিত বসি না। (এই জন্য আমি উঠিয়া রওয়ানা হইয়া গিয়াছি)-(মুসনাদে আহমদ)।
বিষয়: বিবিধ
২১৫৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন