ইমাম গাজ্জালী একটা গল্প

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:১৪:৫২ রাত



এক ব্যক্তি জঙ্গলে হাঁটছিলেন। হঠাৎ দেখলেন এক সিংহ তার পিছু নিয়েছে। তিনি প্রাণভয়ে দৌড়াতে লাগলেন। কিছুদূর গিয়ে একটি পানিহীন কুয়া দেখতে পেলেন। তিনি চোখ বন্ধ করে দিলেন ঝাঁপ। পড়তে পড়তে তিনি একটি ঝুলন্ত দড়ি দেখে তা খপ করে ধরে ফেললেন এবং ঐ অবস্থায় ঝুলে রইলেন। উপরে চেয়ে দেখলেন কুয়ার মুখে সিংহটি তাকে খাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। নিচে চেয়ে দেখলেন বিশাল এক সাপ তার নিচে নামার অপেক্ষায় চেয়ে আছে। বিপদের উপর আরো বিপদ হিসেবে দেখতে পেলেন একটি সাদা আর একটি কালো ইঁদুর তার দড়িটি কামড়ে ছিড়ে ফেলতে চাইছে। এমন হিমশিম অবস্থায় কি করবেন যখন তিনি বুঝতে পারছিলেন না, তখন হঠাৎ তার সামনে কুয়ার সাথে লাগোয়া গাছে একটা মৌচাক দেখতে পেলেন। তিনি কি মনে করে সেই মৌচাকের মধুতে আঙ্গুল ডুবিয়ে তা চেটে দেখলেন। সেই মধুর মিষ্টতা এতই বেশি ছিল যে তিনি কিছু মুহূর্তের জন্য উপরের গর্জনরত সিংহ, নিচের হাঁ করে থাকা সাপ, আর দড়ি কাঁটা ইঁদুরদের কথা ভূলে গেলেন। ফলে তার বিপদ অবিশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ালো।

ইমাম গাজ্জালী এই গল্পের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেনঃ

.ණ এই সিংহটি হচ্ছে আমাদের মৃত্যু, যে সর্বক্ষণ

আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

.ණ সেই সাপটি হচ্ছে কবর। যা আমাদের অপেক্ষায় আছে।

.ණ দড়িটি হচ্ছে আমাদের জীবন, যাকে আশ্রয় করেই বেঁচে থাকা।

.ණ সাদা ইঁদুর হল দিন, আর কালো ইঁদুর হল রাত, যারা প্রতিনিয়ত ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের আয়ু কমিয়ে দিয়ে আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

.ණ আর সেই মৌচাক হল দুনিয়া। যার সামান্য মিষ্টতা পরখ করে দেখতে গেলেও আমাদের এই চতুর্মুখি ভয়ানক বিপদের কথা ভূলে যাওয়াটা বাধ্য।

মে 18, 2013Leave a reply

ন্যায়বিচার ও ইসলামী ভ্রাতৃত্ব

হযরত উমার (রাঃ) এর শাসন আমল, একদিন দু’জন লোক এক বালককে টেনে ধরে নিয়ে আসল তাঁর দরবারে। উমর (রাঃ) তাদের কাছে জানতে চাইলেন যে, ‘ব্যাপার কি, কেন তোমরা একে এভাবে টেনে এনেছ ?’ তারা বলল, ‘এই বালক আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে।’

উমর (রাঃ) বালকটিকে বললেন, ‘তুমি কি সত্যিই তাদের পিতাকে হত্যা করেছ?’ বালকটি বলল, ‘হ্যা, আমি হত্যা করেছি তবে তা ছিল দূর্ঘটনাবশত, আমার উট তাদের বাগানে ঢুকে পড়েছিল তা দেখে তাদের পিতা একটি পাথর ছুড়ে মারল, যা উটের চোখে লাগে। আমি দেখতে পাই যে উটটি খুবই কষ্ট পাচ্ছিল। যা দেখে আমি রাগান্বিত হই এবং একটি পাথর নিয়ে তার দিকে মারি, পাথরটি তার মাথায় লাগে এবং সে মারা যায়।’

উমর (রাঃ) দু’ভাইকে বলেলন, ‘তোমরা কি এ বালককে ক্ষমা করবে?’ তারা বলল, ‘না, আমরা তার মৃত্যূদণ্ড চাই।’ উমর (রাঃ) বালকটির কাছে জানতে চাইলেন, ‘তোমার কি কোন শেষ ইচ্ছা আছে?’

বালকটি বলল, ‘আমার আব্বা মারা যাওয়ার সময় আমার ছোট ভাইয়ের জন্য কিছু সম্পদ রেখে যান, যা আমি এক যায়গায় লুকিয়ে রেখেছি। আমি তিন দিন সময় চাই, যাতে আমি সেই জিনিস গুলো আমার ভাইকে দিয়ে আসতে পারি। আমার কথা বিশ্বাস করুন।’

উমর (রাঃ) বললেন, ‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি যদি তুমি এক জন জামিন জোগাড় করতে পার, যে নিশ্চয়তা দেবে যে তুমি ফিরে আসবে?’ বালকটি দরবারের চারদিকে তাকাল এত মানুষের মধ্যে কেউই তার জামিন হল না। সবাই নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।

হঠাত্‍ দরবারের পেছন থেকে একটি হাত উঠল। কার হাত ছিল এটি? প্রখ্যাত সাহাবী আবু যর গিফারী (রাঃ), তিনি বললেন, ‘আমি তার জামিন হব।’ চিন্তা করুন জামিন মানে হল, যদি বালকটি ফিরে না আসে তবে আবু যর গিফারী (রাঃ) এর শিরচ্ছেদ করা হবে। সুতরাং বালকটিকে ছেড়ে দেওয়া হল। এক দিন গেল, দ্বিতীয় দিনেও বালকটি আসল না, তৃতীয় দিনে দু’ভাই আবু যর গিফারী (রাঃ) এর কাছে গেল।

আবু যর (রাঃ) বললেন, ‘আমি মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’ মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে আবু যর গিফারী (রাঃ) দরবারের দিকে রওনা হলেন। মদিনার লেকজন তাঁর পেছন পেছন যেতে লাগল। সবাই দেখতে চায় কি ঘটে। আবু যর (রাঃ) একটি বালকের ভুলের কারণে আজ জীবন দিচ্ছেন। হঠাত্‍ আজানের কিছুক্ষণ আগে বালকটি দৌড়ে আসল। লোকেরা সবাই অবাক হল।

উমর (রাঃ) বললেন, ‘হে বালক তুমি কেন ফিরে এসেছ? আমি তো তোমার পিছনে কোন লোক পাঠাইনি। কোন জিনিসটা তোমাকে ফিরিয়ে আনল?’

বালকটি বলল, ‘আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলিম কথা দিয়েছিন কিন্তু সে তা রাখে নি তাই আমি ফিরে এসেছি।’ উমর (রাঃ) আবু যর (রাঃ) কে বললেন, ‘হে আবু যর তুমি কেন এই বালকের জামিন হলে?’

আবু যর (রাঃ) বললেন, ‘আমি দেখলাম একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন, আমি চাই না যে, কেউ বলুক একজন মুসলমানের সাহায্য প্রয়োজন ছিল কিন্তু কোন মুসলমান তাকে সাহায্য করে নি।’

এ কথা শুনে দুই ভাই বলল, ‘আমরাও চাই না যে কেউ বলুক একজন মুসলমান ক্ষমা চেয়েছিল কিন্তু অন্য মুসলমান তাকে ক্ষমা করে নি।’ তারপর বালকটি মুক্তি পেল।

মে 18, 2013Leave a reply

হৃদয়ের ব্যাধি সারানোর উপায়

এক ব্যক্তি এসে সুফয়ান আস-সাওরীকে জিজ্ঞেস করলোঃ “আমি হৃদয়ের ব্যাধিতে ভুগছি, আমাকে কোনো প্রতিষেধক দিন।”

সুফয়ান বললেনঃ তুমি ইখলাসের শেকড়, সবরের পাতা ও বিনম্রতার রস জোগাড় কর, এরপর এগুলোকে তাকওয়ার পাত্রে রাখো। এখন এতে আল্লাহ-ভীতির জল ঢালো এবং পাপের অনুশোচনার যে আগুন তাতে গরম কর। এবার একে আল্লাহ্‌র সদা উপস্থিতির ব্যাপারে যে সচেতনতা সেটার ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নাও। অতঃপর একে সত্যবাদিতার মুঠি দিয়ে তোলো এবং ক্ষমা ভিক্ষার পেয়ালা দিয়ে পান করো। ধর্মপরায়ণতা দিয়ে এবার অজু করে নাও এবং হিংসে ও লোভ থেকে দূরে থাকো। আল্লাহ্‌ চান তো তুমি অন্তরের ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবে।

[উস্তাদ শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাস্‌সানের “ফিক্‌হ আদ-দা’ওয়াহ” লেকচার থেকে নেয়া]

বিষয়: বিবিধ

১৮৪১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366384
২০ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৫:২৮
পললব লিখেছেন : ভালো লাগল। ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File