আলিম-এর সংজ্ঞা এবং পথভ্রষ্ট ’আলিমগণ অপমানিত হওয়ার দলীলসমূহ।
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:৫৩:৪৬ সকাল
ইসলামের বেশীর ভাগ ’আলিমগণই ‘আলিমকে এরূপে ব্যাখ্যা/বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালাকে ভয় করে। কিন্তু, এই ধরনের ভয় নির্ভেজাল ‘ইল্ম-এর ফলাফলস্বরূপ হয়ে থাকে, উদাহরণস্বরূপ, জিবরীল -এর ভীতি, যখন তিনি সর্বাপেক্ষা বাহিরের পরিধির গাছ (সিদরাত উল-মুন্তাহা)-এর নিকটবর্তী আসমানে আরোহণ করলেন। এই স্তরে পৌছে রসূল ﷺ বিস্ময়ের উক্তি প্রকাশ করলেন, “আমি সে দিন অধিবাসীদের অতিক্রম করেছিলাম, যেদিন আমি আরোহণ করেছিলাম, এবং জিবরীল আল্লাহ্র ভয়ে একটি পুরানো কাপড়ের ন্যায় হয়ে পড়েছিল, যা বাড়ির প্রবেশদ্বারে থাকে।” (২২২) ঠিক এই হাদীসটির কারণেই কতক ’আলিমগণ বলেছেন, “দ্বীনের ‘ইল্ম হল আল্লাহ্র প্রতি ভয়।” আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালা এই ব্যাপারটির সম্পর্কে বলেছেন,
“আল্লাহ্র বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরা (‘উলামা)-ই তাকে ভয় করে”-সূরা আল-ফাতিরঃ ২৮
‘উমার ইব্ন আল-খাত্তাব (রদিঃ) এবং অন্যান্য সাহাবা ت, যখনই তাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালাকে ভয় করতে বলা হত, তারা তাদের ‘আমলে এই উক্তির প্রতিফলন ঘটাতেন। কিন্তু, দুই প্রকারের প্রকৃত আল্লাহ্ভীতি রয়েছে,
১. স্থিতিশীল ভয়ঃ এই ধরনের ভীতি ব্যক্তিকে ধরে রাখে এবং তাকে এরূপ করে যে, সে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার রাহে, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার দ্বীনের দিকে দা’ওয়াহ্ দেওয়ার জন্য এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার দ্বীনের সমৃদ্ধি ও এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য নিজের অধিকারের কথা ভুলে যায়, নিজের অর্থ, অবস্থান এবং এমনকি মর্যাদারও পরোয়া করে না। এই কারণে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালা বলেছেন,
“আর তারা মু’মিনদের প্রতি নম্র-কোমল হবে এবং কাফিরদের প্রতি হবে অত্যন্ত কঠোর। তারা আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না,”-সূরা আল-মাইদাহঃ ৫৪
আর যখন মানুষ দুনিয়ার দিকে ছুটে যায়, তারা পিছে অবস্থান করে, যেমন আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালা তাদের ব্যাপারে বলেছেন,
“আর আর্-রহ্মান-এর ‘ইবাদ (বান্দাগণ) তো তারাই, যারা পৃথিবীতে বিনয়ের সাথে চলাফেরা করে এবং যখন জাহিলূন (অজ্ঞ-মূর্খ লোকেরা) তাদেরকে সম্বোধন করে, তখন তারা বলে ‘সালাম’,”-সূরা আল-ফুরক্বানঃ ৬৩
২. গতিশীল ভয়ঃ এই ভীতিটি সর্বোচ্চ রকমের ‘আমলের ফলাফল, যখন আল্লাহ্ভীরু ব্যক্তি দেখে যে, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার অধিকারের অমর্যাদা ঘটানো হচ্ছে এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার মানুষদের অত্যাচার করা হচ্ছে, অথবা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার শত্রুরা এগিয়ে আসছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার ভীতি গতিশীল হয়ে পড়ে এবং, ইসলাম ও মুসলিমদের নিরাপত্তা ও ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার জন্য যে কোন কিছুর বিসর্জন দেওয়ার আত্ম-অস্বীকৃতির স্থিতিশীল ভয় অবিরাম হয়ে পড়ে। এই দুই ধরনের উদাহরণ, নবী ﷺ, সাহাবা ت এবং মালাইকাহ্ (ফিরিশতাকূল)-এর মধ্যে দেখা যেতে পারে, আর তুমি দেখবে যে, তারা এটি খুব ভাল করেই করেছিলেন, তারা নিজেদেরকে অস্বীকার করেছিলেন এবং তাদের নিজেদের অর্জনের ব্যাপারে কোন আওয়াজ করেন নি। তুমি তাদেরকে দেখতে পাও ক্রন্দনরত, সলাতে দাঁড়ানো অবস্থায়, কাউকে কিছু দিচ্ছেন এরূপ অবস্থায় এবং কখনো কখনো কোন কিছুই বিনিময় নিচ্ছেন না। কিন্তু, যখন আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার দ্বীন অত্যাচারিত হয়, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার অধিকারের অমর্যাদা ঘটানো হয়, অথবা কিছু ফার্দ (বাধ্যতামূলক) বিষয় গোপন করা হয়, তারা হিংস্র সিংহে পরিণত হয়ে যান এবং কখনোই থামেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না সবকিছু পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয় এবং প্রত্যেক অত্যাচার ও অত্যাচারীকে অক্ষম করা হয়, প্রায়ই শাস্তি দেওয়া হয় এবং অপসারিত করা হয়।
এটা বুঝা কঠিন নয় যে, কোন ধরনের ভীতি আজ অনুপস্থিত, যেহেতু উভয় প্রকারের ভীতিই আজ আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত। এই উভয় প্রকার আল্লাহ্ভীতির এই সুন্নাহ পদ্ধতি আজ প্রতিস্থাপিত হয়েছে অবাস্তব ও উপহাসমূলক আল্লাহ্ভীতির দ্বারা, যা আজ ’আলিমরা করছেন। ‘ইল্ম-এর মাধ্যমে দুনিয়া হাসিল করা, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার দ্বীনের অমর্যাদার প্রতি শিথিল দৃষ্টিভঙ্গি থাকা, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার ভয় ও কান্নার পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে মূল বিষয়াদিকে উপেক্ষা করা, এ সবকিছুই তাদের কাজের অন্তর্ভুক্ত, যা ইসলামকে ধ্বংস করছে এবং মুসলিমদের দূর্বল করছে। এই ধরনের পদ্ধতির বৃদ্ধি আমাদের উম্মাহ্, সম্পদ ও আমাদের দ্বীনের প্রতি একটি ক্রমানুসারী ধ্বংস বয়ে এনেছে।
শাইখ উল-ইসলাম ইব্ন তাইমিয়্যাহ্ رحمه الله বলেছেন, “চার প্রকারের ‘উলামা (‘আলিম-এর বহুবচন) রয়েছে,
১. একজন ‘আলিম, যিনি আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার সম্পর্কে জানেন এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার শারী‘য়াহ-এর আইনসমূহ সম্পর্কে জানেন। (২২৩) তারা সর্বোৎকৃষ্ট প্রকারের ‘উলামা।
২. একজন ‘আলিম, যিনি আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালা সম্পর্কে জানেন এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার শারী‘য়াহ সম্পর্কে জানেন না। (২২৪)
৩. একজন ‘আলিম, যিনি আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার সম্পর্কে জানেন না, কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার শারী‘য়াহ সম্পর্কে জানেন। (২২৫)
৪. একজন ‘আলিম, যিনি আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার সম্পর্কে জানেন না, আর তার শারী‘য়াহ-এর সম্পর্কেও জানেন না। (২২৬)
ঈমানদার হিসেবে নিম্নোক্ত উক্তিটি দেখে আমাদের অবশ্যই সতর্ক ও চিন্তাশীল হতে হবে,
আবূ যার (রদিঃ) বলেছেন, “আমি নবী ﷺ-এর নিকটে একদিন উপস্থিত ছিলাম এবং আমি তাকে বলতে শুনেছি, ‘এমনকিছু রয়েছে যেটির ব্যাপারে আমি আমার উম্মাহ্-এর জন্য দাজ্জালের অপেক্ষাও অধিক ভয় করি।’ তখন আমি ভীত হয়ে পড়লাম, তাই আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্র রসূল! এটি কোন জিনিস, যার ব্যাপারে আপনি আপনার উম্মাহ্-এর জন্য দাজ্জালের চাইতেও অধিক ভয় করেন?’ তিনি [নবী ﷺ] বললেন, ‘পথভ্রষ্ট ’আলিম গণ।’”-মুসনাদ আহ্মাদ, হাদীস নং. ২০৩৩৫
নবী ﷺ বলেছেন,
“নিশ্চয়ই আমি আমার উম্মাহ্-এর জন্য কোন কিছুরই ভয় করি না, পথভ্রষ্ট ’আলিমগণ ব্যতীত। এভাবে, যখন আমার উম্মাহ্-এর বিরুদ্ধে তলোয়ার উঠানো হবে, এটা তুলে নেওয়া হবে না বিচার দিবস পর্যন্ত।”
-মুসনাদ আহমাদ, হাদীসঃ নং. ১৬৪৯৩, ২১৩৬০, ৩১৩৫৯, ২০৩৩৪, এবং, আদ্-দারিমী, হাদীস নং. ২১১ ও ২১৬, এবং এ সবগুলো সংগ্রহই যথার্থ/খাঁটি হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
এখন যখন আমরা মূল দলীলসমূহ দেখেছি, আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে, ইসলামের ’আলিমগণ এই ধরনের ’আলিমদের আচরণ সম্পর্কে কি বলেন? আমরা এখন আমাদের প্রথম সাক্ষীর কথা স্মরণ করব,
আল-মুহাদ্দিস, আল-ফাক্বীহ্, তার সময়কার শাইখ উল-ইসলাম, শাইখ ইব্ন হাজার আল-আস্ক্বলানী رحمه الله নিম্নোক্ত কথা বলেছেন,
“এরূপ বিশ্বাস করা বৈধ নয় যে, মাদীনাহ্-এর ’আলিমগণ অন্যান্য জায়গার চাইতে উত্তম, শুধুমাত্র রসূল ﷺ-এর সময়ে এবং সাহাবাগণ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ার পূর্বে যারা এসেছিলেন তারা ব্যতীত। এর কারণ হল মুজতাহিদ্বীন ইমামদের সময়ের পর এরূপ বর্ণিত হয় নি যে, মাদীনাহ্-এর ‘আলিমগণ অন্যান্য ভূখন্ডের অন্য যে কোন ‘আলিম অপেক্ষা উত্তম।
বরং সবচাইতে বিদ‘ঈ পদ্ধতির লোকেরা এতে (মাদীনাহ-এ) বসতি করেছিল।” (২২৭)
ইসলামের মহান ’আলিম , আল ‘আল্লামাহ্ শাইখ হাফিয ইব্ন আহ্মাদ ইব্ন ‘আলী আল-হাকামী رحمه الله (২২৮)এই বিদ‘আহ্ যা কুফ্র, সেটি সম্পর্কে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছেন,
“যে কেউ ‘উলামাগণ-এর ইজমা’ বাতিল ঘোষণা করে, ফার্দ অস্বীকার করার মাধ্যমে, বা এমন কিছু চাপিয়ে দেয় যা আল্লাহ্ চাপিয়ে দেন নি, অথবা হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল করে, এর মধ্যে কতক লোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইসলামকে ধ্বংস করছে। এই ধরনের লোকেরা কুফ্ফার, কোন সন্দেহ ছাড়া। এ ধরনের লোকেরা প্রকৃতপক্ষে এই দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামের সবচাইতে বড় শত্রু। কিছু অজ্ঞ মানুষকে প্রতারিত করা হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে (যারা একটি ফার্দ অস্বীকার করেছে) কুফ্ফার বলা যাবে, যখন তাদের বিরুদ্ধে দলীল প্রতিষ্ঠা করা হয়ে যায়।” (২২৯)(২৩০)
আসুন আমরা বহু বছর পূর্বের মহান স্প্যানিশ মালিকী ইমাম আল ‘আল্লামাহ্, আল-মুহাদ্দিস, আল-ফাক্বীহ্, শাইখ আবূ ‘আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইব্ন আহ্মাদ আল-ক্বুরতুবি رحمه الله-এর শব্দাবলি থেকে উপকৃত হই।
“‘উলামাগণ বলেছেন, একজন, যে অত্যাচারী/যলিম শাসকের ইমাম হয়, তার পিছনে সলাহ্ পড়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার কৈফিয়ত বা কারণ প্রকাশ করে (কেন সে অত্যাচারী/যালিম শাসকের ইমাম) অথবা এর (অত্যাচারী/যলিম শাসকের ইমাম হওয়া) থেকে তাওবাহ্ করে।” (২৩১)
যদি এটা শুধুমাত্র অত্যাচারী শাসকদের জন্য হয়ে থাকে, তবে চিন্তা করে দেখুন, আরোও কত গুরুতর অবস্থা হবে কাফির বা মুরতাদ শাসকদের ক্ষেত্রে?
শাইখ উল-ইসলাম ইব্ন তাইমিয়্যাহ্ رحمه الله আবারও তার ফাতাওয়া-এর পৃষ্ঠাগুলো হতে গর্জন করে উঠেন,
“যখনই কোন ‘আলিম শাসকের হুক্ম (আইন/বিধান)-এর অনুসরণ করে, এবং নিজের জ্ঞান পরিত্যাগ করে, যা ক্বুরআন ও সুন্নাহ্-এর বিরোধী, সে একটা কাফির (অবিশ্বাসী) এবং একটা মুরতাদ (দ্বীনত্যাগকারী), যে এই দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি প্রাপ্য/যোগ্য। এই বিধিটি সেসকল ’আলিম গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা ঝাঁপ দিয়েছে এবং যোগদান করেছে মোঙ্গলদের সাথে তাদের ভয়ে এবং তাদের থেকে সুবিধা গ্রহনের উদ্দেশ্যে। এই ’আলিমরা কৈফিয়ত দেখিয়েছে যে, কিছু মোঙ্গল শাহাদাহ্ (সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্ এক এবং মুহাম্মাদ তার রসূল) বলছে এবং তারা মুসলিম ছিল।” (২৩২)(২৩৩)
“ ‘আলিফ, লাম, মীম, সদ। এটি একটি কিতাব, আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে, আপনার মনে যেন এ সম্পর্কে কোন সংকীর্ণতা না থাকে এর সতর্কীকরণের ব্যাপারে, আর এটি মু’মিনদের জন্য যিক্র/স্মরণিকা। তোমরা অনুসরণ কর যা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে এবং তাকে ছেড়ে অন্য আওলিয়া (সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী)-দের অনুসরণ কোরো না। তোমরা খুব সামান্য উপদেশই গ্রহণ কর।’ -সূরা আল-আ’রফঃ ০১-০৩
এবং এমনকি যদি এই ‘আলিমকে বন্দী করা হয়, জেলের ভিতর রাখা হয়, এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালা তাকে তার কিতাব হতে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা পরিত্যাগ করার জন্য কঠোর নির্যাতন করা হয়, তার এর প্রতি ধৈর্যশীল হতে হবে। যদি সে সবকিছু পরিত্যাগ করে এবং শাসকের অনুসরণ করে, তবে সে তাদের মধ্যে একজন, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার দ্বারা যাদের ধ্বংস অনিবার্য। তার ধৈর্যশীল হতে হবে, এমনকি যদি আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার জন্য তার ক্ষতি সাধিত হয়। এটাই হল সেই সুন্নাহ্ যা নবীগণ এবং যারা তাদের অনুসরণ করেন তাদের থেকে আল্লাহ্ সুবহানুহু তা‘য়ালা চেয়েছেন এবং গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ্ বলেন,
‘আলিফ, লাম, মীম। লোকেরা কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ একথা বললেই তারা অব্যাহতি পেয়ে যাবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো এদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; অতএব আল্লাহ্ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন তাদেরকে যারা সত্যবাদী এবং তিনি অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন মিথ্যাবাদীদেরকেও।’-সূরা আল-‘আনকাবূতঃ ০১-০৩” (২৩৪)
আল ‘আল্লামাহ্, মিশরের মহান ক্বদি, আহ্মাদ মুহাম্মাদ শাকির رحمه الله নিম্নোক্তভাবে মন্তব্য করেছেন,
“না, ইসলাম তা নয়, যা তারা মনে করে। ইসলাম হল দ্বীন, রাজনীতি, সংবিধান এবং শাসনব্যবস্থা। ইসলাম হল শক্তি/ক্ষমতা। ইসলাম এটা গ্রহণ করে না এ ব্যতীত যে, এর সম্পূর্নাংশের অনুসরণ করা হয় এবং এর আইনসমূহ মেনে চলা হয়। আর যারা এর কিছু হুক্ম (আইন-কানুন) অস্বীকার করে, তারা এর সম্পূর্নাংশকেই অস্বীকার করেছে। আর যারা এর কিছু অংশ ত্যাগ করে, তারা এর সম্পূর্নাংশকেই ত্যাগ করেছে। আর তারা, যারা এর কিছু বিধি-বিধান মেনে নিতে অস্বীকার করে, তারা এর সম্পূর্নাংশকেই অস্বীকার করেছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালার শব্দাবলি শোনো,
‘কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা কোন মু’মিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আল্লাহ্ ও তার রসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ দেন, তখন সে কাজে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। আর যে কেউ আল্লাহ্ ও তার রসূলকে অমান্য করলো, তবে সে তো প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হল।’-সূরা আল-আহ্যাবঃ ৩৬
‘তারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য করি,’ কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর তারা আসলেই মু’মিন নয়। আর যখন তাদেরকে আল্লাহ্ ও তার রসূলের দিকে ডাকা হয়, তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেওয়ার জন্য, তখন তাদের একদল সম্পূর্ন অস্বীকৃতির সাথে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর যদি তাদের প্রাপ্য (হাক্ব্) থাকে, তবে তারা একান্ত বিনীতভাবে রসূলের কাছে ছুটে আসে। তাদের অন্তরে কি রোগ আছে, নাকি তারা সন্দেহ পোষণ করে, নাকি তারা ভয় করে যে, আল্লাহ্ ও তার রসূল তাদের প্রতি অবিচার করবেন? বরং তারাই হল প্রকৃত যলিম। মু’মিনদের কথা তো কেবল এ-ই, যখন তাদেরকে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ্ ও তার রসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন তারা বলে, ‘আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।’ আর তারাই প্রকৃত সফলকাম।’ -সূরা আন্-নূরঃ ৪৭-৫১
‘ও হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ্র এবং আনুগত্য কর রসূলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে ফয়সালার অধিকারী। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে মতভেদ কর, তবে তা প্রত্যর্পণ কর আল্লাহ্র প্রতি ও রসূলের প্রতি, যদি তোমরা ঈমান এনে থাকো আল্লাহ্র প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি। আর এটাই উত্তম এবং পরিণামে কল্যাণকর। আপনি কি তাদের দেখেননি যারা দাবি করে যে, আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে, তাতে তারা বিশ্বাসী? অথচ তারা বিচারপ্রার্থী হতে চায় ত্বগুত-এর কাছে, যদিও তাদের বলা হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান/অস্বীকার করতে। আর শাইতন তাদের পথভ্রষ্ট করে বহু দূরে নিয়ে যেতে চায়। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, এসো আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রসূলের দিকে, তখন আপনি মুনাকফিক্বদের দেখবেন আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ন বিমুখতার সাথে মুখ ফিরিয়ে সরে যাচ্ছে। তাদের কি দশা হবে যখন তাদের কৃতকর্মের দরুন তাদের উপর কোন মুসিবত আপতিত হবে? তারপর তারা আপনার কাছে এসে আল্লাহ্র নামে কসম করে বলবে, ‘আমরা তো কল্যাণ ও সম্প্রীতি ছাড়া অন্য কিছু চাইনি।’ তারা এমন লোক যাদের অন্তরের বিষয়ে আল্লাহ্ জানেন। সুতরাং আপনি তাদের উপেক্ষা করুন এবং তাদের সদুপদেশ দিন এবং এমন কথা বলুন যা তাদের মর্ম স্পর্শ করে। আমি তো রসূল শুধু এই উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহ্র নির্দেশ অনুযায়ী তার আনুগত্য করা হবে। আর যদি তারা নিজেদের উপর যুল্ম করার পর আপনার কাছে আসতো, আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো, এবং রসূলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তবে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহ্কে অতিশয় তাওবাহ্ কবুলকারী ও পরম দয়ালু পেত। তবে না; আপনার রবের কসম! তাদের কোন ঈমান থাকবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা আপনার উপর বিচারের ভার অর্পণ করে সেসব বিবাদ-বিসম্বাদের ব্যাপারে যা তাদের মধ্যে সংঘটিত হয়, তারপর তারা নিজেদের মনে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ বোধ করে না আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়/আত্মসমর্পণ করে।’-সূরা আন্-নিসাঃ ৫৯-৬৫
ও হে মানুষেরা! এ সকল আয়াতসমূহ, যা তোমরা পূর্বেও শুনেছ এবং পূর্বেও পড়েছ এবং আমরা এগুলোর ব্যাখ্যা করতে যাচ্ছি না। এই আয়াতসমূহ খুবই দৃঢ় ও পরিষ্কার। তোমরা যদি চিন্তা করে থাকো, এখানে তোমাদের শিক্ষা, আনুগত্য স্থাপন ও উপদেশগ্রহনের জন্য অনেক কিছু রয়েছে। এখন এই আয়াতসমূহের প্রতি অবাধ্যতার সাথে তোমাদের সম্পর্কের কথা চিন্তা করে এবং এই আয়াতসমূহ মেনে চলার জন্য তোমাদের যা কিছু করার প্রয়োজন পড়ে তার প্রেক্ষিতে তোমাদের অবস্থানের কথা চিন্তা কর।
তোমরা এমন আইনসমূহের দ্বারা শাসন করছো, যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। বরং, সেগুলো ইসলামের সম্পূর্ন বিপরীতে যাচ্ছে। যদি আমি উচ্চস্বরে বলি যে, এ সকল আইনসমূহ, যেগুলোর দ্বারা তোমরা তোমাদের মধ্যে শাসন করছো, সেগুলো ইসলামের চাইতে খ্রীষ্টধর্মেরই নিকটবর্তী, তাহলে তা অতিরঞ্জন হবে না।
আমি দিবাস্বপ্ন দেখি না। আমি এ সকল আইনের বিরুদ্ধে এক বিশাল বিপ্লব করার জন্য ডাকছি না। আর আমি বিশ্বাস করি যে, এখন শক্তির দ্বারা অগ্রসর হওয়া, শান্তিপূর্ণভাবে অগ্রসর হওয়ার থেকে অধিক ক্ষতিকর। আমি তোমাদের কাছে এসেছি যেন, আমরা আমাদের সকলকে ধীরে ধীরে সুন্নাহ্-এর উপর প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
ও হে মিশরের আইনের লোকেরা! আমি তোমাদের দ্বারা আমার আহবানের শুরু করছি। তোমরা এই ভূখন্ডে ক্ষমতার অধিকারী মানুষ। তোমাদের হাতে রয়েছে আইন ও আদেশ। তোমাদের কমিটিসমূহ আজ আধুনিক প্রণীত আইনসমূহের অনুসারে আইন প্রণয়ন করছে। আমাদের মধ্যে একটি যথার্থ ইসলামিক পদ্ধতিতে সমঝোতায় আসো এবং আমাদের একসাথে হাত লাগাতে দাও এবং আল্লাহ্র রাহে নির্ভেজালভাবে কাজ করতে দাও। বিদেশী আইনসমূহ ও মতামতসমূহের জন্য তোমাদের বদ-অভ্যাস-সমূহ রাখো।
আমি তোমাদেরকে এরূপ বলবো না যে, আমরা ইসলাম নিয়ে অনেক শক্ত হয়ে পড়বো। আমি তোমাদেরকে আমাদের সাথে ইসলামকে আঁকড়ে ধরতে আহবান করছি। যদি তোমরা প্রত্যাখ্যান কর, আমি আল-আযহার-এর ‘উলামা-দের আহবান করবো এবং তারা আনুগত্য করবে এবং এই কঠিন কাজের ভার বহন করবে এবং আল-ক্বুরআন-এর পতাকা উত্তোলন করবে। তারা তাদের উভয় হাতের দ্বারা ইসলামের পতাকা বহন করবে, যা ১০০০ বছর ধরে ইসলামের আলো বহন করেছিল। এ সকল ‘উলামা-দের মধ্যে কতক আমানতদার, শক্ত এবং ‘ইল্ম অধিকারী।
আমরা যুক্তি দেখাচ্ছি না যে, কিছু আইনসমূহ শারী‘য়াহ-এর বিরোধী এবং কিছু নয়। আমরা যুক্তি দেখাচ্ছি যে, এ সকল আইনসমূহেরর উৎস হল এমন একটি উৎস যাকে ইমাম বানানো কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়, যখন সে আইনপ্রণয়ন করে, এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘য়ালা তাকে আদেশ করেছেন যেন, সবকিছু, বড় ও ছোট, ক্বুরআন ও সুন্নাহ্-এর সাথেই সম্পর্কিত করা হয়। তাদেরকেই (ক্বুরআন ও সুন্নাহ্) অবশ্যই প্রধান (ইমাম) হতে হবে, যার থেকে আমরা প্রত্যেক আইন বের করে আনি, তাদের (ক্বুরআন ও সুন্নাহ্) সীমারেখা অনুসারে এবং তাদেরকে (ক্বুরআন ও সুন্নাহ্) অবশ্যই আনুগত্য করতে হবে, সকল সময় ও জায়গায়।
মানুষেরা যে পদ্ধতিতে এ সকল আইনের সাথে চলছে, তা আমরা অগ্রাহ্য ও প্রত্যাখ্যান করি। যে সকল মানুষেরা এ সকল আইনের প্রণয়ন করছে, তারা ক্বুরআনের বাহিরে যাওয়ার, অথবা ক্বুরআনের সাথে বিরোধী হবার ব্যাপারে কোন পরোয়া করে না। তাদের মূল বিষয় হল, এটিকে ইউরোপিয়ান আইনের সাথে মিলিয়ে দেওয়া, এটা ইসলামের সাথে মিলে যাক, বা না যাক। শারী‘য়াহ-এর অনুসারে, যদি এ সকল আইনসমূহের কিছু ইসলামের সাথে মিলেও যায়, এরপরেও তারা অন্যায়কারী।” (২৩৫)
আল-ক্বদি (বিচারক), শাইখ আহ্মাদ শাকির رحمه الله অপর জায়গায় বলেছেন,
“আমরা দেখতে পাই যে, কিছু আইন মানুষকে হারাম কাজ করতে অনুমোদন দেয়, যে সকল লোক সেই হারাম বস্তুর লেন-দেন-এর সাথে সম্পৃক্ত, তাদের জন্য লাইসেন্স গ্রহণ করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়, একটি লাইসেন্স, যা একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া হয়। আর সেই নিয়োগকারী ব্যক্তি, যাকে লাইসেন্স দিতে জাহিলী আইন আদেশ করেছে, সেই ব্যক্তির শর্তাবলি তাদের জন্য পূরণ করা হয়ে থাকে, যারা এর লাইসেন্স চেয়েছে।
তার জন্য এই লাইসেন্স দেওয়া হারাম, যদিও জাহিলী আইন তাকে লাইসেন্স দিতে আদেশ করে। এর মানে হল, তাকে অন্যায় কাজ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, সে কিছু অন্যায় অনুমোদিত করবে। তার শোনা ও আনুগত্য করা উচিত হবে না। যদি সে মনে করে যে, তাকে লাইসেন্স দেওয়া হালাল, তবে সে একটা মুরতাদ এবং সে ইসলাম পরিত্যাগ করেছে, কারণ সে বাহ্যিকভাবে পরিষ্কার হারামকে হালাল করেছে, এই হারাম, যা মুসলিমরা অপরিহার্যভাবে জানে।
আমরা দেখি যে, ইউরোপ থেকে আসা কিছু আইন ইসলামের মূল-এর সাথে পার্থক্য সৃষ্টি করে। এ সকল আইনসমূহের মধ্যে কতক সামগ্রিকভাবে ইসলামকে ধ্বংস করে দেয়, আর এটা পরিষ্কার। এ সকল আইনসমূহের মধ্যে কতক ইসলামিক আচরণের সাথে মিলে যায়। এ সকল আইনসমূহের দ্বারা মুসলিমদের ভূখন্ডসমূহে কাজ করা হালাল নয়, এমনকি এমন বিষয়াদিতেও, যেগুলোর ব্যাপারে তারা ইসলামের সাথে একমত্, কারণ যখন তারা আইনপ্রণয়ন করে, তাদের উৎস ইসলাম নয়। যে কেউ এরূপ করে, সে একটা পাপী এবং একটা মুরতাদ, সে ইসলামের সাথে মিলে যায় এরূপ আইন প্রণয়ন করুক, বা না করুক।” (২৩৬)
মহান ‘আল্লামাহ্, তার সময়কার শাইখ উল-ইসলাম, তার সময়কার আল-ক্বুরআন-এর হিফ্যকারীদের শাইখ, ফাক্বীহ্, মিশরের সকল শারী‘য়াহ কোর্ট-এর বিচারকদের প্রধান, ইমাম বাদ্র উদ্-দ্বীন আল ‘আয়নী رحمه الله (২৩৭), এই বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন,
“যে কেউ নবীগণের শারী‘য়াহ পরিবর্তিত করেছে এবং তার নিজস্ব শারী‘য়াহ বানিয়েছে, তার শারী‘য়াহ বাতিল। এসকল লোকদের অনুসরণ করা হারাম,
‘তাদের কি এমন কতক শরীক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্য এমন এক দ্বীনের বিধান দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ্ দেননি? আর যদি ফয়সালার বাণী না থাকত, তবে তো তাদের ব্যাপারে মীমাংশা হয়ে যেত। নিশ্চয়ই যলিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক ‘আযাব।’-সূরা আশ্-শূরাঃ ২১
এই কারণে ইহূদী এবং খ্রীষ্টানরা কাফিরে পরিণত হয়েছিল। তারা শক্ত করে তাদের পরিবর্তিত শারী‘য়াহ আঁকড়ে ধরেছিল, এবং আল্লাহ্ মানবজাতির উপর মুহাম্মাদ ﷺ-এর শারী‘য়াহ অনুসরণ করাকে বাধ্যতামূলক করেছেন।” (২৩৮)
এই উম্মাহ্-এর প্রতি ‘ইল্ম-এর অধিকারী মানুষদের দায়িত্ব কিরূপ এবং তারা যখন তাদের দায়িত্ব ত্যাগ করেন বা অপব্যবহার করেন, তখন দিগন্তে যে ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক ধারাবাহিকতার আবির্ভাব ঘটে, সে সম্পর্কে আমাদের মনের মধ্যে এখন আর কোন সন্দেহই থাকা উচিত নয়।
মূল বইঃ Allah Governance on Earth
*********************
(২২২) জাবির ইব্ন ‘আব্দুল্লাহ ت-এর কর্তৃত্বে আত্-তাবারানি-এর দ্বারা বর্ণিত হয়েছে।
(২২৩) এটা হল এমন কেউ, যিনি আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার নামসমূহ ও সিফাতসমূহ জানার সাথে সাথে পরিকল্পনাসমূহ, সুন্নাহ্ এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার বিশ্বাস/ভরসা সম্পর্কেও জানেন। এটা হল ‘ইল্ম, যা একজনকে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার দ্বীনে কোন নব্য আবিষ্কার করা থেকে ধোরে রাখে, এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার সামনে তার দায়িত্ব পালনে তাকে সদাসর্বদা সতর্ক রাখে। তার কাছে শারী‘য়াহ-এর যে ‘ইল্ম রয়েছে, তা আত্ম-ব্যাখ্যামূলক।
(২২৪) এরা সে সকল মানুষ, যাদের কাছে তাওহীদের ‘ইল্ম ও সুফল রয়েছে। এটা জরুরী নয় যে, তারা শারী‘য়াহ-এর সম্পর্কে জানবে, কিন্তু তারা জিজ্ঞেস করবে, এবং তারা উদ্ভাবন করবে না, কারণ তারা তাওহীদের ‘ইল্ম ও তার সুফল দ্বারা সুরক্ষিত। যখন তারা জানে না, তখন তারা ‘ইল্ম-এর অধিকারী মানুষদেরকে জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবে।
(২২৫) এরা হলেন সকল যুগের হতভাগা/জঘন্য শাসকদের ’আলিম। এরা হল সে সকল মানুষ, যারা অবস্থান ও দুনিয়াবী বিষয়াদির জন্য অধ্যয়ন করে থাকেন। আর সেই সাথে তারা সত্যের বিরুদ্ধে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করেন। এই ধরনের মানুষদের জন্য মূল বৈশিষ্ট্য ও মানদন্ড হল, তুমি তাদেরকে সেই ফিত্নাহ্-এর সময়কালে তাদেরকে শাসকদের ও এর মধুর অনেক নিকটবর্তী পাবে, যখন আমানতদার ’আলিমগণ বিলুপ্ত হতে থাকেন এবং তাদেরকে নাজেহাল করা হয়। কিন্তু, শাসকদের ’আলিমগণ সেই সময় খুবই নিরাপদ থাকেন এবং খুব ভাল করেই আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার আয়াতসমূহ ও তার রসূল ﷺ-এর থেকে উপার্জন করতে থাকেন। যাহোক, ক্রন্দন, আর্তনাদ এবং সুন্নাহ্ পোশাকাদি পরা, সকলকে প্রতারিত করতে পারবে না। এটা তাদের মূল গল্পের কিছু অংশ, কিছু পোশাকাদি ও আবহাওয়া, যা শাসকদের ’আলিমদের চারিদিকে বিদ্যমান। তাদের মধ্যে কতক মানুষদেরকে এই পর্যন্ত প্রতারিত করেন যে, তারা নিজেদেরকেও প্রতারিত করেন যে, তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং তারা সর্বোত্তম হবার চেষ্টা করছেন।
‘শাসকদের নিকটে থাকা, শাসকদের থেকে নিরাপদ থাকা এবং শাসকদের থেকে উপার্জন করা’ –এটাই এই গোষ্ঠীর আদর্শ, যখনই শারী‘য়াহ সম্পূর্ন নয় এবং প্রয়োগ করা হয় নি। আমরা তাদেরকে আরোও দেখতে পাই, শাসকদের পক্ষে যুক্তি দেখাতে। যাহোক, তারা সবচাইতে নিকৃষ্টতম প্রাণী। তাদের প্রতি সেই একই বিচার/রায় প্রযোজ্য, যা শাসকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি শাসক একটা কাফির হয়ে থাকে, তবে তারা একটি কুফ্র-এর গোষ্ঠী। যদি শাসক একটা যলিম হয়ে থাকে, তবে তারা একটা যুল্ম-এর গোষ্ঠী [তাদের কোন একজনকে কাফির শিরোনামা দিতে হলে পূর্বের সেই নিয়ম-বিধি অনুসরণ করতে হবে। এটির একটি উপসংহারে পৌছাতে হলে খুবই সতর্ক চিন্তা-বিবেচনা প্রয়োজন। কিন্তু, তাদেরকে একটি কুফ্র-এর গোষ্ঠী-এর লেবেল দেওয়া অপেক্ষাকৃত বেশী নিরাপদ, কারণ তাদেরকে যেভাবেই হোক অপসারণ করতে হবে, যেন আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা তাদের সাথে বোঝা-পড়া করতে পারেন] ।
(২২৬) এরা হল ’আলিমদের আর্মি, যাদের কোন ভয়, ‘ইল্ম নেই এবং সেই সাথে তারা শারী‘য়াহ-এর সম্পর্কে একটি অতি দূর্বল ‘ইল্ম-এর অধিকারী হয়, যা অসম্পূর্ন, এর ফলে তারা কিছু নবাগতদের কাঁধে ভর দিয়ে দ্বীন-কে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই নবাগতরা এমন কিছু ইউনিভার্সিটি হতে আসে, যেগুলো শাসকের প্রতি আনুগত্যকারী, আর এভাবে নবাগতরাও শাসকের প্রতি আনুগত্যস্থাপনকারী হয়ে পড়ে। ৩য় ও ৪র্থ প্রকারের ‘আলিমদের প্রকৃতপক্ষে কোন ‘আলিমই বলা উচিত নয়, বরং তারা নিছক কিছু ধার্মিক মানুষ বা কিছু ভোঁতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানুষ।
(২২৭) ফাত্হ উল-বারি, বাব ইতিসাম উস্ সুন্নাহ্, ভলিউমঃ ১৩, পৃষ্ঠাঃ ৩১২
(২২৮) হিজরী ১৩৪২-১৩৭৭/১৯২৪-১৯৯৫৮ খ্রীষ্টাব্দ। শাইখ আল হাকামি ‘মা‘আরিজ উল-ক্ববূল’-এর লেখক। যারা সত্য কথা বলেছিলেন এবং উম্মাহ্-এর জন্য সম্পদের ভান্ডার রেখে গিয়েছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত। আল্লাহ্ যেন এই হাক্ব্পন্থী ’আলিমকে পুরস্কৃত করেন।
(২২৯) মা‘আরিজ উল-ক্ববুল বাব-আল-বিদ‘আহ্ মুকাফ্ফিরাহ, ভলিউমঃ ০৩, পৃষ্ঠাঃ ১২২৮
(২৩০) কেন তাদের অনুসারীগণ, যারা নিজেদের সালাফী বলে, এই বিদ’আহ্-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না এবং অন্যদের বিদ‘ঈ বলে? আল-হাকামি কি তাদের একজন মহান ’আলিম নন? এর বিপরীতে, যে কেউ এই ইমামের অনুসরণ করে এবং এই বিদ’আহ্-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তারা তাদেরই বিদ‘ঈ বলে!
(২৩১) জামি’ উল-আহ্কাম উল-ফিক্ব্হিয়্যাহ্, ভলিউমঃ ০২, পৃষ্ঠাঃ ২২৭
(২৩২) এটা যেন তিনি আজকের আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করছেন।
(২৩৩) মাজমু‘আ ফাতাওয়া, ভলিউমঃ ৩৫, পৃষ্ঠাঃ ৩৭৩
(২৩৪) মাজমু‘আ ফাতাওয়া, ভলিউমঃ ৩৫, পৃষ্ঠাঃ ৩৭৩
(২৩৫) আল-কিতাব ওয়াস্-সুন্নাহ্ ইয়াজিব মাস্তুর ক্বওয়ানিন
(২৩৬) আস্-সামা’ ওয়াত্-তা‘আ
(২৩৭) মৃত্যু হিজরী ৮৫৫ সনে/১৪৫১ খ্রীষ্টাব্দে। তিনি একজন মহান হানাফী ’আলিম, এই ’আলিম, তার কৃতিত্বসমূহ এবং তার জীবনী তার কাজ, ‘উমদাত উল-ক্বারী, ভলিউমঃ ২৪, পৃষ্ঠাঃ ০১-এ উল্লেখ করা আছে।
(২৩৮) ‘উমদাত উল-ক্বরীঃ ভলিউমঃ ২৪, পৃষ্ঠাঃ ৮১
বিষয়: বিবিধ
১৪৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন