রাশিদ আল ঘানুশি : তিউনিশিয়ার ইসলামি রাজনৈতিক আন্দোলনের পথিক আত্মজীবনী
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২২ মার্চ, ২০১৬, ০৬:৫১:০৭ সন্ধ্যা
রাশিদ আল ঘানুশি একজন ইসলামি স্কলার এবং রাজনীতিবিদ। তিউনিশিয়ার ক্ষমতাসীন দল এবং সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক আন্দোলন “আননাহদা মুভমেন্টের” প্রতিষ্ঠাতা তিনি। রাশিদ আল ঘানুশিকে আন নাহদার “স্পিরিচুয়াল লিডার” বলা হয়ে থাকে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধর্মনিরপেক্ষ, একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিরক্ত জনগণের কাছে ঘানুশির আননাহদা মুভমেন্ট তিউনিশিয়ার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায় এবং ফলশ্রুতিতে নির্বাচনে জনসমর্থন পেয়ে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করে আরো কয়েকটি দলের সাথে। রাশিদ ঘানুশির মুভমেন্টের নাম “আন-নাহদা”, যে শব্দটির অর্থ রেঁনেসা বা পুনর্জাগরণ।
রাশিদ আল ঘানুশি দক্ষিন তিউনিশিয়ার কাবিস অঙ্গরাজ্যের আলহামা সংলগ্ন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪১ সালে। কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাগ্রহণ শেষে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এগ্রিকালচারে শিক্ষাজীবন শুরু করেন ১৯৬৪ সালে। কিন্তু মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দেল নাসের এবং তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট হাবিব বোরগুইবার সমস্যার কারণে তিনি সিরিয়ায় চলে যান। সেখানে ইউনিভার্সিটি অফ দামস্কতে দর্শনের উপরে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি গ্রাজুয়েশন করেন। দামেস্কতে থাকার সময় তিনি সমাজতান্ত্রিক পার্টিতে যোগদান করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির দিকে ঝুঁকে পরেন।
তিউনিশিয়ার সেকুলার পাশ্চাত্যপ্রেমী প্রেসিডেন্ট হাবিব বোরগুইবার শাসনের বিপরীতে কোন রাজনৈতিক দলই ছিলনা দেশে। ঘানুশি আল-ইত্তিহাদ-আল-ইসলামি বা ইসলামিক টেনডেন্সি মুভমেন্ট নামের একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন। যেই দলটি নিজেদের বর্ণনায় বলে এটি “নন-ভায়োলেন্ট’ ইসলামের উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং তারা আহবান জানায় অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়ে একটি সমন্বয়পূরণ জীবন গঠনের জন্য। তারা বলেছিলো একদলীয় রাজনীতির অবসান করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নিতে তারা জনগণকে আহবান জানায়।
জুলাইয়ের শেষে ঘানুশি এবং তার সহযোগীরা গ্রেফতার হন এবং ১১ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করে বিজার্ত কারাগারে পাঠানো হয় এবং সেখানে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হয়। সেইসময় ধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ কমিউনিটিরা সহ অজস্র রাজনৈতিক সংগঠন তার পক্ষ অবলম্বন করে মুক্তির জন্য র্যালি করে। ১৯৮৪ সালে তাকে কারামুক্ত করা হয়। কিন্তু ১৯৮৭ সালে রাশিদ আল ঘানুশিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করে আবার বন্দী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি মুক্তি পান এবং রাজনৈতিক নির্বাসনে ইউরোপে চলে যান।
[ছবি : ১৯৮০ সালে একটি ইসলামিক র্যালিতে বক্তব্য রাখছেন ঘানুশি]
ফিলিস্তিনের জন্য ইসলামিক কমিটির পক্ষে আয়োজিত কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন ১৯৮৯ সালে। ১৯৯০ সালে কুয়েতের উপরে আক্রমনের পর তিনি সৌদির বাদশাহ ফাহাদকে জঘন্য অপরাধকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেন আমেরিকার সৈন্যদেরকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানোর অভিযোগে।
ইউরোপে গিয়েও ঘানুশি বোরগুইবার পরবর্তী শাসক জাইন আল আবেদিন বেন আলির বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে থাকেন। কিন্তু জানুয়ারি ২০১১ এর পরে তিউনিশিয়ার গণমানুষের আন্দোলনে একনায়ক বেন আলির পতনের পরে তিনি দেশে ফিরে আসেন ২০ বছরের নির্বাসন ভোগের পরে। দেশে ফিরে নির্বাচনপূর্ব জনমত গঠনে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ভ্রমণ করেন, বিশেষজ্ঞরা তার এই কাজটিকে সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বলে অভিহিত করে নির্বাচনের পরে। কেননা একনায়ক শাসনের পরে আননাহদার সমান সংগঠিত হয়ে উঠতে পারেনি আর কোন রাজনৈতিক দল।
২০১১ সালের ২২ জানুয়ারিতে আল জাজিরা টিভির সাথে একটি সাক্ষাতকারে রাশিদ ঘানুশি বলেন, তিনি জোরপূর্বক হিজবুত তাহরিরের মতন ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একমত নন। বরং তিনি উন্নয়নমুখী উদার ইসলামিক ভিত্তির উপর দাঁড়ানো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী, তিউনিশিয়ায় দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা সেকুলার জীবনব্যবস্থায় ভুক্তভোগী জনগনকে ২০১১ আন্দোলন করতে বাধ্য করা জনমানুষের অন্তরকে ইসলামের প্রতি নরম করবে। সৌদি আরব এবং ইরানে শাইখ রাশিদ আল ঘানুশির প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।
তিনি সকল তিউনিশিয়ানের সমতা আনয়নের ব্যাপারে জোর দেন, বিশেষ করে নারীদের। এছাড়া তিউনিশিয়ার জনগণের মত গ্রহণের জন্য একটা সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। গণতান্ত্রিক অ্যাপ্রোচ ঘানুশিকে অন্যান্য হাই-প্রোফাইল ইসলামপন্থীদের চাইতে আলাদা করেছে, যদিও তিনি মধ্যপ্রাচ্যে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর নিজেদের পথ নিজেরাই বেছে নেয়ার উপর জোর দিয়ে থাকেন।
২০১১ সালের মে মাসে একটি সাক্ষাতকারে ঘানুশি বলেন, ফিলিস্তিনের আসল সমস্যা রয়েছে গোটা উম্মাহর হৃদয়ে। আর সেই হৃদয়ের অংশটুকু হলো মক্কা থেকে জেরুজালেমের মাটি — যা ইসলামিক উম্মাহর হৃদয়। তিনি বলেন, এই এলাকার যেকোন বৈদেশিক হস্তক্ষেপই মুসলিম উম্মাহর অন্তর রোগাক্রান্ত হবার লক্ষণ। তিনি আরো বলেন, ইসরাইল খুব শীঘ্রই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
রাশিদ আল ঘা
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১২২৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন