যতদিন তোমরা কোরআন ও হাদিস আকড়ে ধরবে ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১৪ মার্চ, ২০১৬, ০৫:০৫:০৩ সকাল
.
عَنْ لِعَبَّاسِ بْنِ عَبْد الْمُطَّلِب (رضـ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (صـ) ذَاقَ طُعْمَ الاِيْمَانِ مَنْ رِضِىَ بِاللهِ رَبًّا وَّبِالاِسْلاَمِ دِيْنًا وَّ بِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً –(متفق عليه)
অনুবাদ:
হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মোত্তালিব (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালাকে রব, ইসলামকে জীবনবিধান ও মুহাম্মদ (সা) কে রাসূল হিসেবে শুধু ঈমান আনেনি বরং মনে প্রাণে গ্রহণ করেছেন ও সন্তুষ্ট হয়েছেন, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ পেয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
পটভূমি
বিদায় হজে আরাফাতের মাঠে নবীজি (সা) যে ঐতিহাসিক বক্তব্য রেখেছেন তার প্রতিটি শব্দ মানবতার জন্য একটি সোনালি দলিল। তাতে তিনি বলেন, “আমি তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি দু’টি অমূল্য বস্তু। যতদিন তোমরা তা শক্ত করে ধারণ করবে ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, গোমরাহিতে হারিয়ে যাবে না। একটি আল্লাহর কিতাব অপরটি সুন্নাতে রাসূল (সা)। এ সুন্নাতে রাসূলের (সা) উৎস হচ্ছে হাদিসে নববীর মহা সরোবর। এ হাদিসের আলো ব্যতিরেকে কুরআনের হিদায়াত গ্রহণ সম্ভব নয়। উম্মাহর রাহবার যাঁরা তাদেরকে কুরআনুল কারিম ও হাদিসে রাসূল (সা)কে সমান গুরুত্বের সাথে অধ্যয়ন করতে হবে। কুরআনুল কারিমের সাথে হাদিসের প্রয়োজন নেই বলে-মুনকারীনে হাদিসদের এ দাবি সম্পূর্ণ অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর। সকল যুগের উম্মাহর ফকিহগণ হাদিস অস্বীকারকারীদেরকে পথভ্রষ্ট বলেছেন। এরা নবুয়াত অস্বীকারকারী ও কুফরীর অন্ধকারে নিমজ্জিত।
হাদিসের সনদ
হাদিস বিজ্ঞানীদের নিকট হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের অন্যতম মানদণ্ড সনদুল হাদিস। আর তা হচ্ছে হাদিসের মূল কথাটুকু যে সূত্রে ও বর্ণনা পরম্পরা ধারায় হাদিস গ্রন্থাবদ্ধ হওয়া পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাতে হাদিস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।
السَّنَدُ طَرِيْقُ الحَدِيْثِ وَهُوَ رِجَالُهُ الَّذِيْنَ رَوَاوْهُ
সনদ হলো হাদিসের সূত্র ও বর্ণনাকারীদের পরম্পরা।
আলোচিত হাদিসের উৎস
সনদের বিবেচনায় ইমাম বুখারী তাকে ‘মরফু হাদিস’ বলে গ্রহণ করেছেন। যেহেতু রাবী হাদিসটি মুহাম্মদ (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন, আর হাদিসের সনদ মুত্তাসীল সেহেতু নবীয়ে কারিম (সা) থেকে গ্রন্থাবদ্ধ হওয়া পর্যন্ত কোন রাবী ধারাবাহিকতা থেকে বাদ যায়নি।
বিশুদ্ধতার বিচারে বর্ণিত হাদিসটিকে প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বলে গ্রহণ করা যায়। ইমাম বুখারী (র) ও ইমাম মুসলিম (রা) উভয়ে তাদের সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে হাদিসটি বিশুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
হাদিসের প্রথম রাবী
হযরত আব্বাস ইবনে আবদিল মুত্তালিব (রা)। তিনি রাসূলে কারিমের প্রিয় চাচা। বয়সে নবীয়ে কারিম (সা) থেকে ২-৩ বছরের বড়। তিনি কুরাইশদের প্রতাপশালী ব্যক্তিদের একজন। তিনি আবদুল মোত্তালিবের পর কাবার রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্ব হতে তিনি মুহাম্মদের (সা) অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী ছিলেন।
আকাবার বায়াতের অনুষ্ঠানে ছিলেন ৭২ জন মদীনাবাসী আনসার। অনুষ্ঠান চলছিল নিশীথ রাতে, হজের মৌসুমে ও মুজদালিফার পাহাড়ে। সে সময় খন্জর হাতে এক জন সাহসী ব্যক্তি নবীয়ে করিমের (সা) এর পাহারায় নিয়োজিত ছিলেন। ঈমান না এনেও ঐতিহাসিক এ দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিটি আব্বাস ইবনে আব্দুল মোত্তালিব। আকাবার এ বায়াত অনুষ্ঠানে আনসারের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, “হে মদীনাবাসীরা! মুহাম্মদ (সা) নিজ গোত্রের মধ্যে সম্মান ও মর্যাদার সাথে রয়েছেন। শত্র“র মোকাবেলায় আমরা সার্বক্ষণিক তার পাহারাদারিতে নিয়োজিত আছি। আপনারা তাঁকে মদীনায় যাওয়ার দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, তিনিও যেতে চান। যদি আপনারা জীবন পণ করে তাকে শত্র“র মোকাবেলায় সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকেন তবে আপনারা বায়াত করুন নতুবা বায়াত থেকে মুক্ত থাকুন।”
মক্কার কুরাইশদের চাপে তিনি বাধ্য হয়ে বদরের যুদ্ধে অংশ নেন ও মুশরিকদের সাথে বন্দী হয়ে মদীনায় আসেন। শক্তভাবে বাঁধনের কারণে তিনি রাতে কাতরাতে থাকেন। তার কষ্টে রাসূলুল্লাহ (সা) ঘুমাতে পারছিলেন না, তিনি নির্দেশ দেন, “আমার চাচা আব্বাসসহ সকল বন্দীর বাঁধন হালকা করে দাও ও তাদেরকে বস্ত্র দাও।” ঘটনাচক্রে দীর্ঘদেহী আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে যিনি গায়ের জামা দিয়েছিলেন তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই।
যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। হযরতের চাচা এত বেশি অর্থ প্রদানে অক্ষমতা প্রকাশ করলে নবীজি (সা) বলেন, “আপনি উম্মুল ফজলের নিকট যে অর্থ ও স্বর্ণ রেখে এসেছেন তা থেকে দিন।”
বিম্ময়ের সাথে হযরত আব্বাস বলে উঠলেন, আল্লাহর শপথ উম্মুল ফজলের নিকট গচ্ছিত অর্থের বিষয় আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আমি ঘোষণা দিচ্ছি, “নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল।”
অতঃপর মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
তিনি মক্কায় থাকা অবস্থায় কাফেরদের গতিবিধি রাসূল (সা) কে অবহিত করতেন ও নির্যাতিত মুসলমানদের যথাসাধ্য আশ্রয় দিতেন। মক্কা বিজয়ের কিছু দিন পর তিনি সপরিবারে মদীনায় হিজরত করেন। মক্কা বিজয়ের যুদ্ধে অংশ নেন। হোনায়নের যুদ্ধে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে একটি বাহনে আরোহী ছিলেন। হ্ওায়াজীন গোত্রের তীরন্দাজদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে বিক্ষিপ্ত মুসলমানরা দিগি¦দিক হারিয়ে ফেলেছিলেন। নবীজি (সা) তাঁর চাচা আব্বাস (রা) কে কঠিনভাবে আওয়াজ দেয়ার নির্দেশ দিলে তিনি গর্জন করে বলতে থাকেন : “আইনা আসহাবুস সুমরা” তীরন্দাজরা কোথায়! যা যুদ্ধের গতিকে বদলিয়ে দিয়েছিল।
রাসূলে পাক (সা) তাঁর চাচাকে খুব ভালবাসতেন ও সম্মান করতেন। তাঁর সামনে উঁচু আওয়াজে কথা বলতেন না। এ কারণে হযরত আবু বকর (রা)ও একমাত্র হযরত আব্বাসকে নিজ আসন থেকে সরে গিয়ে জায়গা দিতেন। হযরত ওমর (রা)ও হযরত উসমান (রা) ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়ে তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাঁর সামনে ঘোড়া থেকে নেমে পড়তেন ও বলতেন, “ইনি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (সা) এর সম্মানিত চাচা।” সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) বলেন : একবার হযরত আব্বাসকে (রা) আসতে দেখে রাসূল (সা) বলেন, “আব্বাস (রা) হলেন রাসূলের চাচা কুরাইশদের মধ্যে সর্বাধিক দরাজহস্ত ও আত্মীয়দের প্রতি অধিক মনোযোগী।” রাসূল (সা) থেকে তিনি অনেক হাদিস বর্ণনা করছেন। লোকেরা তাকে দোয়ার জন্য বলতেন। তিনি মাবুদের নিকট হাত উঠালেই অঝোরভাবে কাঁদতেন।
নবী করিম (সা) তাঁর জন্য ও তাঁর সন্তানদের জন্য দোয়া করে বলতেন যা জুমার খুতবায় সারা দুনিয়ায় পড়া হচ্ছে- قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلعم اَللهُمَّ اغْفِر
ْ لِلْعَبَّاسِ وَوَلَدِه مَغْفِرَةً ظَّاهِرَةً وَّباطِنَةً لاَّ تُغَادِرُ ذنْباً
হযরত আব্বাস (রা) ৩২ হিজরির রজব মাসে ৮৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। হযরত উসমান (রা) তাঁর জানাজার ইমামতি করেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) তাঁর সম্মানিত পিতার লাশ কবরে রাখেন। মদীনা শরীফের জান্নাতুল বাকীর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
হাদিস শরীফের তাফসীর
‘ঈমানের প্রকৃত স্বাদ’ ذَاقَ طُعْمَ الاِيْمَانِ বলতে আমরা কী বুঝি?
ইসলামের বিশাল প্রাসাদ ঈমানের বুনিয়াদের ওপর এভাবে দাঁড়িয়ে আছে, বিশাল বটবৃক্ষ যেমন তার মূল ও শিকড়ের ওপর দণ্ডায়মান। ইসলামের বিস্তৃত শাখা প্রশাখা তথা যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে এক পাল্লায় রাখলে যে ওজন ও মূল্য বহন করে, ঈমান একাই সব কিছুর চেয়ে বেশি ভারী ও বেশি মূল্য বহন করে। এই ঈমান গ্রহণকারী একজন কৃতদাস ও তাঁর আল্লাহর নিকট সমগ্র পৃথিবী বিখ্যাত কোন রাজা মহারাজা সম্পদের মালিক এর চেয়ে অনেক বেশি বা অনেক মূল্যবান। যে ঈমানই একজন কাফির জাহান্নামীকে জান্নাতের অন্তর্ভুক্ত করবে। একজন ব্যক্তির চূড়ান্ত সফলতা ও বিফলতা প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ওপর ফয়সালা হয়। নবীদের দাওয়াতের মূল বিষয় ঈমান। আল্লাহতায়ালার নিকট থেকে তার সকল অহি ও কিতাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ঈমান। এ ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত না হলে ব্যক্তি কোন নেক আমলের কোন মূল্য বহন করে না। এ ঈমানই ব্যক্তিকে আল্লাহতালার প্রিয়জন বানায়। তার জীবনের নিরাপত্তা সম্মান আল্লাহর জিম্মায় থাকে। পৃথিবীর সমস্ত শয়তানি শক্তি ঈমানের শত্র“। মুমিনের কারণে পৃথিবীর জীবনে শতশত কারবালা সৃষ্টি হয়েছে কুরআন সাক্ষ্য দিয়ে বলছে তাদের ওপর অত্যাচার ও জুলুমের কারণ ঈমান ছাড়া আর কিছুই ছিল না-
وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْبُرُوجِ، وَالْيَوْمِ الْمَوْعُودِ، وَشَاهِدٍ وَمَشْهُودٍ، قُتِلَ أَصْحَابُ الأُخْدُودِ، النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ، إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ، وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ، وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلاَّ أَنْ يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ،
“শপথ দুর্গময় আকাশমণ্ডলীর। সে কঠিন দিনের, যে দিবসের ওয়াদা করা হয়েছে। শপথ তাদের যারা কিয়ামতকে অবলোকন করবে আর তার শপথ সে কঠিন দিবসে যা কিছু দেখানো হবে। ধংস তাদের জন্য যারা বিশ্বাসীদেরকে আগুনে পুড়ে মারার জন্য গর্ত খনন করছিল তাতে প্রজ্বলিত করল দাউ দাউ অনল। মোমেনদের নিক্ষেপ করা হচ্ছিল সে প্রজ্বলিত অনলকুণ্ডে আর তারা সে গর্তের মুখে তামাশা দেখছিল। ঈমানদারদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণের একটিই কারণ, তারাত মহান পরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালা যিনি সপ্রসংশিত সে মহান প্রভুর ওপর বিশ্বাস ছাড়া আর কোন অপরাধ করেনি। (সূরা বুরুজ : ১-৪)
উপরের আয়াতগুলোতে ঈমানের কারণে নির্যাতনের একটি জীবন্ত চিত্র আল্লাহর অহিতে অঙ্কিত হয়েছে। কুরআনুল কারিম বিভিন্ন সূরায় অনুরূপ চিত্র আরও মর্মস্পর্শীভাবেও এঁকেছেন এগুলো কোন সাহিত্যিকের কল্পনার বুনুনকর্ম নয়। এগুলো মহাকালে ঘটে যাওয়া মহাসত্যের মহাদলিল।
আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হচ্ছে এত নিযার্তন, এত নিষ্ঠুরতা, এত লোমহর্ষক বর্বরতা সহ্য করে ঈমানের ওপর অটল ও দৃঢ়কদমে দাঁড়িয়ে থাকতে কিসে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছিল? শরীরের এক একটি অংশ বিচ্ছেদ করার পর, হাড্ডি থেকে গোশতকে লোহার চিরুনি দিয়ে তুলে নেয়ার পরও তাদের কলিজা থেকে ঈমানকে পৃথক করা যায়নি। এটি সহজ বিষয় নয়। জ্বলন্ত কয়লার ওপর জীবন্ত বেলালকে শুইয়ে পাথর চাপা দেয়া হয়েছে শরীরের চর্বি গলে গলে কয়লা দেহে ঢুকে পড়েছে, রক্ত ও চর্বিতে আগুন নিভে গিয়েছে। সে মর্মান্তিক মুহূর্তেও হযরত বেলাল (রা) ঈমান থেকে এক তিল পরিমাণ দূরে সরেননি। অচেতন অবস্থায় তিনি অস্পষ্ট স্বরে বলছিলেন, ‘আহাদুন আহাদুন’। এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা সাহাবীদের ও পরবর্তীদের জীবনে রয়েছে ও গ্রন্থাবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু সে মজলুম মুসলমানেরা ঈমানের মধ্যে কী রহস্যজনক এক মজা খুঁজে পেয়েছিলেন। পার্থিব কোন আনন্দ বা অসহ্য কোন যাতনা তাদেরকে ঈমানের স্বাদ আস্বাধনে এক মুহূর্তের জন্য বিরত রাখতে পারেনি। তাদের ঈমানের ওপর দৃঢ়তা পৃথিবীর সকল আশ্চর্যকে হার মানায়, সকল হৃদয়কে হতবাক করে, সকল জবানকে ভাষাহীন করে দেয়। অমানবিক অত্যাচার ও জুলুমের হাজার ক্ষত নিজ দেহে ধারণ করে সহাস্য বদনে বিপ্লবীদের নয়ন নিধি সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ ফাঁসির রজ্জু পরানোর সময় নিজ হাতে তা পরেছিলেন। অগণিত সাংবাদিকের ক্যামেরা চঞ্চল হলেও সে দৃশ্যে তারা সকলে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, “জীবন ও মৃত্যুর রহস্য সম্পর্কে তোমরা আজও অজ্ঞতার অন্ধকারে। এ রোমঞ্চকর মুহূর্তটির জন্য আমি অবর্ণনীয় জুলুম বরদাশত করে আসছি বছরের পর বছর।”
প্রিয় পাঠক! আমরা যারা ঈমানদার বলে নিজেদেরকে ঘোষণা দিয়েছি আমরা কি তাদের মতো ঈমানের স্বাদ ও মজা পেয়েছি? আল্লাহতায়ালা তাদের মতো ঈমান আনার আহবান করেছেন কুরআনে পাকে।
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ أَلا إِنَّهُمْ هُمْ السُّفَهَاءُ وَلَكِنْ لا يَعْلَمُونَ،
“যখন তাদেরকে বলা হলো, আর সব লোক যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সে সব লোকের মতো ত্যাগ কুরবানীর সাথে ঈমান আন। তারা বলে আমরা কি বোকাদের মতো ঈমান আনব? হায় এরা যে প্রকৃতপক্ষে বোকা সে ব্যাপারে তারা অজ্ঞতার তিমিরে।” (সূরা বাকারা : ১৩)
আমাদেরকে তাদের মতোই ঈমান আনতে হবে। আল্লাহতায়ালা যাদের ঈমান কবুল করেছেন। মুখে কতগুলো বুলি আর ঈমানের কথাসমূহ উচ্চারণের নাম প্রকৃত ঈমান নয়। আমাদেরকে সে লোকদের মত ঈমান আনতে হবে যাদের মাথার ওপর করাত দিয়ে চিরে দ্বিখণ্ডিত করার পরও ঈমান অখণ্ড ছিল। এক চুল পরিমাণ বিশ্বাস টলেনি যাদের। তাদের ঈমান সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) বলেনÑ
اَلإيْمَانُ فِيْ قُلُوْبَهِمْ اَعْظَمُ مِنَ الْجَبَلْ
“তাদের ক্বালবের জমিনের ওপর ঈমানের পাহাড় অটলভাবে দাঁড়িয়েছিল।” আলোচ্য হাদিসের মধ্যে নবীয়ে করীম (সা) ঐ ঈমান কিভাবে হাসিল সম্ভব তা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সে দুর্বল ঈমান লাভের ও তার রহস্যপূর্ণ ও অমৃতের স্বাদ গ্রহণের তিনটি শর্ত :
নিম্নে হাদিসের আলোকে তা বর্ণিত হলো-
১.مَنْ رِضِىَ بِاللهِ رَبًّا আল্লাহতায়ালই এক মাত্র ‘রব’। যিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন আল্লাহকে রব হিসেবে। এ ‘রব’ শব্দটি কুরআনে পাকে গুরুত্বের সাথে ও বহুমাত্রিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে :
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَক) প্রতিপালক অর্থে :
প্রশংসা শুধু আল্লাহতায়ালার জন্য যিনি সারা জাহানের পালনকর্তা। (সূরা ফাতিহা : ১)
هُوَ رَبَّكُمْ وَإلَيْهِ تُرْجَعُوْنَখ) মালিক ও মনিব অর্থে :
“তিনি তোমাদের প্রভু তারই নিকট তোমাদের ফিরে যেতে হবে।” (সূরা হুদ : ৩৪)
وَلا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَاباً مِنْ دُونِ اللَّهِগ) যার আনুগত্য করা হয় সে অর্থে :
“তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও আনুগত্যের হকদার বানাবে না।” (সূরা আলে ইমরান : ৬৩) قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ ঘ) জিম্মাদার ও তত্ত্বাবধায়ক অর্থে “ইউসুফ (আ) বলেন, ‘আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই! তিনি আমার রব যিনি আমাকে ভাল রেখেছেন।” (ইউসুফ : ২৩) রব হিসেবে আল্লাহতায়ালাকে গ্রহণ করার অর্থ তিনি একমাত্র প্রতিপালক তিনি মালিক ও প্রভু তিনি তত্ত্বাবধানকারী ও তিনি একমাত্র আনুগত্য পাওয়ার হকদার। রবুবিয়াতের পূর্ণ ব্যাখ্যা সহকারে ঈমান আনা একান্ত জরুরি। পৃথিবী বিপর্যয় সৃষ্টিকারী শক্তিগুলো যুগে যুগে নিজদেরকে انا ربٌّكم العلى “আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ রব” বলে দাবি করেছে। অগণিত মানব তাদের রবুবিয়াত মেনেও নিচ্ছে। আজকের বিশ্বে নিজদেরকে যারা ঝঁঢ়বৎ ঢ়ড়বিৎ; ঃযব সরমযঃবংঃ সধহ ড়ভ ঃযব যিড়ষব ড়িৎষফ ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বলছে লালন ও পালনকারী সেজে আর বিশ্ববাসীর আনুগত্য ও বশ্যতা দাবি করছে। এরাই ফেরাউন হাসান ও নমরুদের উত্তরসূরি। নবীগণ এদের মত সকল তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে সংঘাতে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। ভেঙে তছনছ করে দিয়েছিলেন এদের মিথ্যা রবুবিয়াতের তখত তাউস। এ তাগুতদের সাথে সুসম্পর্কের নামে এদের বৈশ্যতা ও আনুগত্যের শিকল যারা গলায় পরেছে, এদের প্রদেয় মিথ্যা নিরাপত্তা আশ্রয় লাভে যারা গুছিয়ে দিয়েছে মাথা, এদের দয়া দাক্ষিণ্য, অনুগ্রহ-অনুকম্পা লাভে হাত পেতে আছে যারা যুগযুগ ধরে এ সমস্ত হীন ও ইতরদের আল্লাহর ওপর ঈমান এর দাবি الله ربًّناএর জিকির সালাত ও সিয়ামের প্রহসন দেখলে শরীরের প্রতিটি পশম ব্যথায় টনটন করে ওঠে। ঈমানের স্বাদ যারা পেয়েছিলেন যে মানুষগুলো আল্লাহতায়ালাকে রব বলে শুধু ঘোষণা দেয়নি বরং তাতে সন্তুষ্ট চিত্ত ছিল
তারা তাদের জীবন যাপনের ওপর উপকরণের জন্য দিনের দিন উপবাস থেকে একমাত্র মহান প্রভুর নিকট হাত পেতেছে। শত্র“র হাতে বন্দী হয়েও ফাসির রজ্জু গলায় পরার মুহূর্তেও তারা জীবন ভিক্ষা চায়নি জালেমের কাছে। আল্লাহর ওপর ঈমানের কসম খেয়ে শির উঁচু করে ঘোষণা দিয়েছিল “হায়াত আওর মাউত কি ফায়সালা জমিন পর নেহি, উয় আসমান পর হোতা হ্যায়।”
তাই নবীজি (সা) এর হাদিস এই পয়গাম নিয়ে এসেছেÑ আল্লাহতায়ালার রবুবিয়াতের ওপর যারা সন্তুষ্ট তারা আলোতে অন্ধকারে, জীবনে-মরণে, সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায়, আল্লাহতে রাজি থাকবে। এক লহমার জন্যও নিরাশ হবে না, কান দেবে না কারো আশ্বাসে বা কারো হুমকিতে তবে তারা ইমানের স্বাদ খুঁজে পাবে।
২. وَّبِالاِسْلاَمِ دِيْنًا দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে : “ইসলামী জীবন বিধান গ্রহণ করে তারা পরিতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট” তারা ইসলামকে আনুষ্ঠানিক একটি সাধারণ ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেনি বরং গ্রহণ করেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে। ইসলাম প্রচলিত অর্থে কোন ধর্ম নয়। ওংষধস রং ধ পড়সঢ়ষবঃব পড়সঢ়ৎবযবহংরাব ধহফ ৎধঃরড়হধষ পড়ফব ড়ভ ষরভব. তা পূর্ণাঙ্গ বিস্তৃতি ও ভারসাম্যপূর্ণ একটি জীবনবিধান।
কুরআনুল করিমে এ দীন শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে সে বিষয়ে আলোচনায় যেতে চাই :
ক) জীবনবিধান অর্থে দ্বীন : أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ طَوْعاً وَكَرْهاً وَإِلَيْهِ يُرْجَعُون َ
“তারা কি আল্লাহরতায়ালার তৈরি বিধান ছাড়া অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা তালাশ করছে, অথচ আকাশ ও জমিনের সবকিছু ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহতায়ালার কানুনের নিকট আত্মসমর্পণ করছে এবং তারই নিকট সবাইকে ফিরে যেতে হবে। (ইমরান: ৮৩)
أَلا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُখ) আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ অর্থে দ্বীন
“সাবধান আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য।” (জুমার: ৩)
إِنْ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلَّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُوا إِلاَّ إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ গ) সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব অর্থে দ্বীন :
“হুকুম দেয়ার অধিকার আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। তার নির্দেশ তিনি ব্যতীত কারো দাসত্ব গ্রহণ করা যাবে না আর এটাই সঠিক দ্বীন। (ইউসুফ: ৪০)
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِঘ) প্রতিফল দিবস তথা সফলতার ও ব্যর্থতার চূড়ান্ত ফায়সালা অর্থে দ্বীন
“যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক।” (ফাতিহা: ৩)
উপরের আয়াতসমূহ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি মানুষের জীবন চলার বিধান সার্বভৌমত্ব, আনুগত্য ও উপাসনা ও বন্দেগির সকল পর্যায় এ শব্দের ব্যাপকতার মধ্যে নিহিত রয়েছে। আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন শুধু একটি তাই ইসলাম তিনি জীবনের কোন অংশে ইসলামী বিধান ছাড়া আর কোন আচরণ বা পদ্ধতির সামান্য অংশও গ্রহণ করবেন না।
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الإِسْلامُ
“আল্লাহর নিকট ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মকবুল দ্বীন।”
দ্বীন হিসেবে ইসলাম এক ব্যাপক ও বিস্তৃত বিষয়ের নাম। তা মানবজীবনের সকল দিক বিভাগ ব্যক্তিগত, পারিবারিক সামজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক, তামুদ্দনিক এবং বৈশ্বিক সর্বত্র বিস্তৃত। পৃথিবীতে বসবাসের সূচনা হয়েছিল আবুল বাশার আদম (আ) হতে। তার ওপর আল্লাহতায়ালার বিধান নাজিল থেকে ইসলামের যে বিকাশ শুরু হয়েছিল সাইয়েদেনা মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে শান্তিময় জীবন যাপনের বিধিবিধান হিসেবে আল্লাহর আখেরি কিতাব চূড়ান্ত কুরআন বলেছেন :
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمْ الإِسْلامَ دِيناً
“আজ আমি ইসলামী দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের জন্য নাজিল হওয়া অহির ধারা পরিসমাপ্তি করলাম আর একমাত্র ইসলামকে তোমাদের সকলের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে দিলাম।”
আমাদের উচিত এ অহির আলোতে সমুজ্জ্বল দ্বীনকে মেনে চলা এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলামী অনুশাসন অনুসরণ করা। এ কথা দিবালোকের মতো সত্য যে মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অতিক্রম করেছে পৃথিবীর গণ্ডি। নিঃসীম নীলিমায় প্রথম নাজিলে উড়িয়ে দিয়েছে বিজয় কেতন। সে অহঙ্কারী মানুষের পক্ষে সকল মানুষের সকল বিষয়ে অনাদিকালের জন্য নির্ভুল কল্যাণপ্রদ ও ভারসাম্যময় হয় এবং পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন বিধান বা দ্বীন রচনা করা চিন্তারও অগম্য বিষয়। সকলের জন্য সকল সমস্যার বিধান রচনা করা দূরের কথা একটি মানুষের একটি দিনের চলার বিধান তৈরি করা আদৌও কি সম্ভব? এক ঘণ্টা পরে নিজ জীবনে কি ঘটবে অথবা পৃথিবীতে কোন বিপর্যয় আসছে যে বলতে পারে না তার পক্ষে বিধান দেয়া কী করে সম্ভব হতে পারে? প্রত্যেকটি সৃষ্টির কী প্রয়োজন? ক্ষুদ্র বৃহৎ কে কী অবস্থায় রয়েছে, কার আকুতি কী? এমনিতর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল বিষয়ে যিনি জ্ঞাত এমন সত্তা ছাড়া অহি প্রণয়ন কি সম্ভব হতে পারে? যার নিজেরও কিছু প্রয়োজন রয়েছে, নিজের সাথে রয়েছে রক্তের সম্পর্ক এমন কেউ কি নিরপেক্ষতা বজায় বাখতে পারে? তাই আমরা বলতে পারি ভবিষ্যতের জ্ঞান রয়েছে বর্তমানের মত, প্রত্যেকটি সৃষ্টির কী প্রয়োজন, কিসে তার ওপর ভালো বা মন্দ এ ব্যাপারে নিশ্চিত জ্ঞানের অধিকারী-আর যিনি নিজে প্রয়োজনের ঊর্ধে যিনি সামাদ অর্থাৎ যার কোন কিছুর কোন প্রকার চাহিদা নেই, তিনি মহান সৃষ্টা। রক্তের বংশের কোন কুফু নেই আল্লাহতায়ালা ছাড়া কোন সৃষ্টি কি এ সমস্ত গুণাবলির অধিকারী হতে পারে? একটাই জবাব-অসম্ভব।
কুরআন সংক্ষিপ্ত অথচ যথার্থ জবাব দিয়ে বলছেÑ
أَلا لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ
“সাবধান সৃষ্টি যার আইন তাঁর চলবে।” ( আরাফ : ৫৪ )
আমরা জানি মানুষ আল্লাহতায়ালার নাজিলকৃত এ ইসলামী দ্বীনকে বাদ দিয়ে নিজেরা যখনই বিধান বানাতে চেষ্টা করেছে ঋবঁফধষরংস, ঈধঢ়রঃধষরংস, ঝড়পরধষরংস, ঈড়সসঁহরংস-এর নামে তখনই বিশ্বের এক একটি অঞ্চলে নেমে এসেছে বিপর্যয় আর মহা বিপর্যয়। সমস্ত মানব গড়া মতবাদ ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে আজ জাদুঘরে আশ্রয় নিচ্ছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত মানব মস্তিষ্ক আর কোন নতুন দ্বীন জন্ম দিতেও পারছে না। কতগুলো বিকলাঙ্গ, অন্ধ, খন্জ, বধির, বোবা ও রুগ্ণ সন্তানের নামে প্রসব করে পৃথিবী আজ যেন প্রজনন ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে। পৃথিবীর জ্ঞানীগণ আবার ইসলামকে সমস্যার সমাধান মনে করতে শুরু করেছে। দার্শনিক বার্ট্রার্ন্ড রাসেল বলেন “ওংষধস রং ঃযব ষধংঃ যড়ঢ়ব ভড়ৎ সধরহঃধরহ, রিঃযরহ ড়হব পবহঃঁৎু ঃযব যিড়ষব বঁৎড়ঢ়ব ঢ়ধৎঃরপঁষধৎু ঊহমষধহফ রিষষ বসনৎধপব রংষধস”.
“একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে ইসলাম বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামের বিজয় আজ অনিবার্য। এর প্রয়োজনীয়তা ও অনিবার্যতাকে কোন অত্যাচার, যুলুম, কামান-গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র এবং মারণাস্ত্র দিয়ে স্তব্ধ করা যাবে না। ইসলাম ছাড়া আর যত দ্বীন পৃথিবীতে আছে- সেগুলো মানবগড়া, ভারসাম্যহীন ও খণ্ডিত। সেগুলো হয় রাজনৈতিক নতুবা অর্থনৈতিক মতবাদ। সম্পূর্ণ জীবন নিয়ে এগুলো রচিত হয়নি। এগুলো পরিত্যাজ্য ও ব্যর্থ পরাশক্তির জনবল, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সমরাস্ত্র মোতায়েন করেও এর মধ্যে প্রাণ স্পন্দন সম্ভব হচ্ছে না।
মুসলমানদেরকে সার্বজনিন, পূর্ণাঙ্গ ও কালজয়ী এ ইসলাম সম্পর্কে খুঁটিনাটিসহ জানতে হবে। একে একমাত্র দ্বীন হিসেবে জীবনের প্রতিটি অংশে গ্রহণ করতে হবে। তাতে এমনভাবে সন্তুষ্ট হবে যেন তৃষ্ণার্ত মানুষ পানির কোন বিকল্প খুঁজে না। এই দ্বীনকে সকল ব্যর্থ দ্বীনের ওপর বিজয়ের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। তবে দ্বীন হিসেবে ইসলাম কবুল করার অমৃত স্বাদ আস্বাদন করা সম্ভব হবে।
হাদিসের শেষাংশে উদ্ধৃত হয়েছে وَّ بِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً ঈমানের মজা তারাই পেয়েছে যারা মুহাম্মদ (সা) কে নবী ও রাসূল হিসেবে পেয়ে পরিতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট হয়েছেন। তার আনীত আদর্শকেই একমাত্র পরিপূর্ণ ও চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আল্লাহতায়ালা তাঁর মাধ্যমে নবুয়ত ও রিসালাত খতম করে দিয়েছে। সকল নবী রাসূেেলক একটি নিদিষ্ট জনবসতির জন্য পাঠানো হয়েছিল। বাইরে তাদের নবুওয়াতের দাওয়াত প্রদানের অনুমতি ছিল না। নবুওয়াতের ইতিহাসের একমাত্র ব্যতিক্রম মুহাম্মদ (সা)। তিনি কোন এলাকার বা আঞ্চলিক নবী নন তিনি আলমি তথা বিশ্বনবী। তার নবুওয়াতের কোন চিহ্নিত সীমানা নেই ও নেই কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ। তিনি সমগ্র বিশ্বের জন্য আর অনাদিকালের জন্য রাসূল। কুরআন বলছে-
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعاً
“বল হে মানবমণ্ডলী আমি তোমাদের সকলের জন্যে রাসূল হয়ে এসেছি।” (সূরা আরাফ: ১৫৮)
তাকে রাসূল বলে ঈমান আনার পর অন্য কোন মহান পুরুষ বা পূর্বের নবীদের কাউকেও আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে তার আদর্শকে পাশ কাটিয়ে চলা মুহাম্মদ (সা) এর নবুওয়তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নামান্তর। তাকে অনুসরণের ব্যাপারে ইচ্ছা অনিচ্ছা, সুবিধা-অসুবিধা, চলমান রীতিনীতি এক কথায় কোন শর্ত পেশ করা যাবে না।
হযরত উমার (রা) একবার রাসূলের দরবারে তাওরাতের পাতা তিলাওয়াত করছিলেন। এতে নবীজি (সা) অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছিলেন-
قَالَ رَسُوْلَ الله صـ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدُ بِيَدِه لَوْبَدَءَ لَكُمْ مُوْس فَاتَّبَعَتُمُوْهُ وتَرَكْتُمُوانِىْ لَعَنكَلْتُمْ عَنْ سَوَاءَ – السَّبِيْل“হে উমর ঐ আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন আজ যদি তাওরাতের রাসূল মূসা (আ) আমার নবুওয়াতের মধ্যে আসতেন আর তোমরা আমাকে বাদ দিয়ে তাঁকে যদি অনুসরণ করতে তবে নিশ্চয়ই তোমরা হিদায়তের পথ থেকে গোমরাহ হয়ে যেতে।” মুসনাদের আহমদ এ বিষয়ে শতশত কিতাব লিখা হয়েছে আরও হাজার কিতাব লিখার প্রয়োজন রয়েছে। আজকের লেখায় অধিক কলম চালানোর সুযোগ নেই- আল্লাহতায়ালা যেমন তার রবুবিয়াত ও উলুহিয়্যাতের ক্ষেত্রে লা শরিক, মুহাম্মদ (সা) এর আগমনের পর তিনি ও তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের ক্ষেত্রে লা-শরিক। তার রিসালতের মধ্যে আর কোন নবী বা রাসূলের আগমন হারাম তাঁর ইত্তেবা ছাড়া বা তাঁর ইত্তেবার শর্ত ছাড়া যে কারও অনুসরণ সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য। আয়াতের প্রতিটি বিষয়ে পছন্দ অপছন্দ গ্রহণ ও বর্জনের চূড়ান্ত দলিল মুহাম্মদ (সা)। কুরআন বলছে-
مَا آتَاكُمْ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
“আখেরি রাসূল তোমাদের জন্যে যা এনেছেন বিনাশর্তে গ্রহণ কর, আর তা থেকে বিরত থেকে থাক যা তিনি নিষেধ করেছেন।” (সূরা হাশর: ৭)
উপসংহার
একজন মুমিনের ঈমানের অবস্থান কোন পর্যায়ে রয়েছে, এ হাদিস তা বুঝার এক মানদণ্ড। যে মুমিন সত্যিকারার্থে ঈমান এনেছে গোটা পৃথিবী সবকিছু ঈমানের মোকাবেলায় তার কাছে একটি পাখির ঝরা পালকের চেয়ে কমমূল্য বহন করে। আর ঈমান থেকে চ্যুত করার সমস্ত অত্যাচার ও জুলুম এবং নিপীড়নের তাবৎ হাতিয়ার তার নিকট এমন সাধারণ ও মামুলি বিষয় যেন লোহার কঠিন দণ্ডের ওপর মাছির ব্যর্থ আক্রমণ। এমন সুস্থ ও নিরোগ ঈমান শুধু কতগুলো কথা উচ্চারণ এর মাধ্যমে অর্জন সম্ভব নয় …নয় পৈতৃক সূত্রে পাওয়া অজ্ঞদের ঈমানের মিথ্যা আস্ফালনে।
কুরআন বলছে তারাই মুমিনÑ
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمْ الصَّادِقُونَ
“সত্যিকারার্থে তারাই মুমিন যারা আল্লাহ ও রাসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং তাতে কোন প্রকার সন্দেহ করেনি আর সংগ্রাম করেছে জান ও মাল দিয়ে।” (হুজরাত: ১৫)
এ সত্যিকার মুমিনদেরকে ঈমানের অমৃত স্বাদ পেতে হলে হাদিসে রাসূলের তিনটি শর্ত প্রণিধানযোগ্য
এক: আল্লাহর রবুবিয়াতের ওপর অটল আস্থা ও তাতে সন্তুষ্ট হওয়া।
দুই : দ্বীন হিসেবে ইসলামকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেনে চলার দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা করা এবং সমস্ত পৃথিবীর চাকচিক্যপূর্ণ মিথ্যা ও মানবগড়া সকল মত ও পথ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। মুহাম্মদ (সা) এর রিসালতের সাক্ষ্য দান ও সমস্ত মহান ব্যক্তি এমনকি পূর্বের নবীদেরকে ও তাঁর মোকাবেলায় পেশ করার সুযোগ নেই বরং তা হবে ধৃষ্টতার নামান্তর।
তিন: জীবনের প্রতিটি কদমে তার সুন্নাতকে এভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে জন্মান্ধ যেমন করে চক্ষুষ্মানের লাঠি শক্তহাতে ধরে পথ চলে।
হে প্রভু! আপনাকে একমাত্র রব, মুহাম্মদ (সা) কে শেষ ও চূড়ান্ত রাসূল এবং ইসলামকে শুধু আল্লাহর মনোনীত দ্বীন হিসেবে আমাদের জন্যে যথেষ্ট বানাও।
যতদিন তোমরা কুরআন ও হাদীস শক্ত করে ধারণ করবে ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না
৪. দারসুল হাদিস
عَنْ لِعَبَّاسِ بْنِ عَبْد الْمُطَّلِب (رضـ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (صـ) ذَاقَ طُعْمَ الاِيْمَانِ مَنْ رِضِىَ بِاللهِ رَبًّا وَّبِالاِسْلاَمِ دِيْنًا وَّ بِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً –(متفق عليه)
অনুবাদ:
হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মোত্তালিব (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালাকে রব, ইসলামকে জীবনবিধান ও মুহাম্মদ (সা) কে রাসূল হিসেবে শুধু ঈমান আনেনি বরং মনে প্রাণে গ্রহণ করেছেন ও সন্তুষ্ট হয়েছেন, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ পেয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
পটভূমি
বিদায় হজে আরাফাতের মাঠে নবীজি (সা) যে ঐতিহাসিক বক্তব্য রেখেছেন তার প্রতিটি শব্দ মানবতার জন্য একটি সোনালি দলিল। তাতে তিনি বলেন, “আমি তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি দু’টি অমূল্য বস্তু। যতদিন তোমরা তা শক্ত করে ধারণ করবে ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, গোমরাহিতে হারিয়ে যাবে না। একটি আল্লাহর কিতাব অপরটি সুন্নাতে রাসূল (সা)। এ সুন্নাতে রাসূলের (সা) উৎস হচ্ছে হাদিসে নববীর মহা সরোবর। এ হাদিসের আলো ব্যতিরেকে কুরআনের হিদায়াত গ্রহণ সম্ভব নয়। উম্মাহর রাহবার যাঁরা তাদেরকে কুরআনুল কারিম ও হাদিসে রাসূল (সা)কে সমান গুরুত্বের সাথে অধ্যয়ন করতে হবে। কুরআনুল কারিমের সাথে হাদিসের প্রয়োজন নেই বলে-মুনকারীনে হাদিসদের এ দাবি সম্পূর্ণ অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর। সকল যুগের উম্মাহর ফকিহগণ হাদিস অস্বীকারকারীদেরকে পথভ্রষ্ট বলেছেন। এরা নবুয়াত অস্বীকারকারী ও কুফরীর অন্ধকারে নিমজ্জিত।
হাদিসের সনদ
হাদিস বিজ্ঞানীদের নিকট হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের অন্যতম মানদণ্ড সনদুল হাদিস। আর তা হচ্ছে হাদিসের মূল কথাটুকু যে সূত্রে ও বর্ণনা পরম্পরা ধারায় হাদিস গ্রন্থাবদ্ধ হওয়া পর্যন্ত পৌঁছেছে। তাতে হাদিস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।
السَّنَدُ طَرِيْقُ الحَدِيْثِ وَهُوَ رِجَالُهُ الَّذِيْنَ رَوَاوْهُ
সনদ হলো হাদিসের সূত্র ও বর্ণনাকারীদের পরম্পরা।
আলোচিত হাদিসের উৎস
সনদের বিবেচনায় ইমাম বুখারী তাকে ‘মরফু হাদিস’ বলে গ্রহণ করেছেন। যেহেতু রাবী হাদিসটি মুহাম্মদ (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন, আর হাদিসের সনদ মুত্তাসীল সেহেতু নবীয়ে কারিম (সা) থেকে গ্রন্থাবদ্ধ হওয়া পর্যন্ত কোন রাবী ধারাবাহিকতা থেকে বাদ যায়নি।
বিশুদ্ধতার বিচারে বর্ণিত হাদিসটিকে প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বলে গ্রহণ করা যায়। ইমাম বুখারী (র) ও ইমাম মুসলিম (রা) উভয়ে তাদের সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে হাদিসটি বিশুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
হাদিসের প্রথম রাবী
হযরত আব্বাস ইবনে আবদিল মুত্তালিব (রা)। তিনি রাসূলে কারিমের প্রিয় চাচা। বয়সে নবীয়ে কারিম (সা) থেকে ২-৩ বছরের বড়। তিনি কুরাইশদের প্রতাপশালী ব্যক্তিদের একজন। তিনি আবদুল মোত্তালিবের পর কাবার রক্ষণাবেক্ষণ ও হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্ব হতে তিনি মুহাম্মদের (সা) অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী ছিলেন।
আকাবার বায়াতের অনুষ্ঠানে ছিলেন ৭২ জন মদীনাবাসী আনসার। অনুষ্ঠান চলছিল নিশীথ রাতে, হজের মৌসুমে ও মুজদালিফার পাহাড়ে। সে সময় খন্জর হাতে এক জন সাহসী ব্যক্তি নবীয়ে করিমের (সা) এর পাহারায় নিয়োজিত ছিলেন। ঈমান না এনেও ঐতিহাসিক এ দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিটি আব্বাস ইবনে আব্দুল মোত্তালিব। আকাবার এ বায়াত অনুষ্ঠানে আনসারের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, “হে মদীনাবাসীরা! মুহাম্মদ (সা) নিজ গোত্রের মধ্যে সম্মান ও মর্যাদার সাথে রয়েছেন। শত্র“র মোকাবেলায় আমরা সার্বক্ষণিক তার পাহারাদারিতে নিয়োজিত আছি। আপনারা তাঁকে মদীনায় যাওয়ার দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, তিনিও যেতে চান। যদি আপনারা জীবন পণ করে তাকে শত্র“র মোকাবেলায় সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকেন তবে আপনারা বায়াত করুন নতুবা বায়াত থেকে মুক্ত থাকুন।”
মক্কার কুরাইশদের চাপে তিনি বাধ্য হয়ে বদরের যুদ্ধে অংশ নেন ও মুশরিকদের সাথে বন্দী হয়ে মদীনায় আসেন। শক্তভাবে বাঁধনের কারণে তিনি রাতে কাতরাতে থাকেন। তার কষ্টে রাসূলুল্লাহ (সা) ঘুমাতে পারছিলেন না, তিনি নির্দেশ দেন, “আমার চাচা আব্ব
বিষয়: বিবিধ
৩৭৮২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একমাত্র জামায়াত দলীয় নেতাকর্মী ছাড়া কাউকেই সত্যিকারের মুমিন বলে মনে হয়না|
এটি খুবই আপত্তিকর কথা। আমার কাছে সত্যিকার মুমিনসুলভ কথা মনে হল না । খোদ ইসলামপন্থীদের মধ্যেও রয়েছে জামায়াত এর ব্যাপক সমালোচনা। ইন্টারনেট ঘাটলেই দেখা যায় প্রচুর দলিল প্রমাণ সহ আলোচনা, বড় বড় বই লেখা হয়েছে মওদুদীর ভুল মতবাদের বিরোধীতা করে, তার সবগুলি অমূলক তা বলা যাবে না।
নীচে কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হল। সবগুলির রেফারেন্স বন্ধনীতে দেয়া আছে । দলিল প্রমান নেই বলার আগে অবশ্যই রেফারেন্স চেক করবেন। আর নিজেকে প্রশ্ন করবেন মওদুদীর অনুসারীরা সত্যিকার মুমিন কিনা।
(১) আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
আল্লাহ তা'আলা যালেম। কেননা যেক্ষেত্রে নর ও নারীর অবাধ মেলামেশা রয়েছে, সেক্ষেত্রে ব্যাভিচারের কারণে আল্লাহর নির্দেশ রজম প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম। (তাফহীমাতঃ ২/২৮১)
(২) ফেরেশতাদের সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
ফেরেশতারা ঐসব মাখলূকের মত যাদেরকে গ্রীক, ভারত ও অন্যান্য অঞ্চলের মুশরিকরা দেব-দেবী স্থির করেছে। (তাফহীমাত)
(৩) নবীগণ সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
অন্যদের কথাতো স্বতন্ত্র, প্রায়শই পয়গম্বরগণও তাদের কুপ্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমণের শিকার হয়েছেন। (তাফহীমাতঃ ২/১৯৫)
(৪) নবীজী(সাঃ) সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের উর্ধে নন এবং মানবীয় দূর্বলতা থেকেও মুক্ত নন। (তরজমানুল কুরআনঃ এপ্রিল ১৯৭৬)
আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।
[তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
(৫) কুরআনুল কারীম সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
"কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় এ শব্দগুলোর (ইলাহ, রব, দ্বীন, ইবাদত) যে মৌল অর্থ প্রচলিত ছিল, পরবর্তী শতকে তা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এক একটি শব্দ ব্যাপকতা হারিয়ে একান্ত সীমিত, বরং অস্পষ্ট অর্থের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে পড়ে।" এক পৃষ্ঠা পর লিখেন- "এটা সত্য যে, কেবল এ চারটি মৌলিক পরিভাষার তাৎপর্যে আবরণ পড়ে যাওয়ার কারণেই কুরআনের তিন চতুর্থাংশের চেয়েও বেশি শিক্ষা এবং তার সত্যিকার স্পিরিটই দৃষ্টি থেকে প্রচ্ছন্ন হয়ে যায়।"
(কুরআন কী চার বুনিয়াদী ইসতিলাহেঃ ৮-১০)
(৬) হাদীস সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত সারা (আঃ) এর ঘটনা সম্বন্ধে বলেন, "এটি একটি মিথ্যা নাটক।"
(রাসায়েল ও মাসায়েলঃ ৩/৩৬)
হাদীস তো কতিপয় মানুষ সুত্রে বর্ণিত হয়ে কতিপয় মানুষের কাছে পৌছেছে। কাজেই এসবের সত্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মিতে পারে না। বড়জোর ধারনা জন্মিতে পারে।
(তাফহীমাতঃ ১/৩৫৬)
(৭) উসূলে হাদীস সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
এ আধুনিক যুগে পূর্ব যুগের বাজে কথা কে শোনে?
(তরজমানুল কুরআন ৪র্থ সংখ্যাঃ ১১১)
(৮) সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
সাহাবায়ে কিরাম সত্যের মাপকাঠি বলে জানবে না এবং তাদের অনুসরন করবে না।
(দস্তুরে জামাতে ইসলামীঃ ৭)
(৯) দাড়ি সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
হাদীসে শুধু দাড়ি রাখার হুকুম আছে। সুতরাং পরিমাণ যাই হোক হাদীসের উপর আমল হয়ে যাবে।
(১০) তাকলীদ সম্পর্কে মওদূদী আকীদাঃ
আমার মতে দ্বীনী ইলমে বুৎপত্তি রাখেন এমন ব্যক্তির জন্য তাকলীদ শুধু না-জায়েয ও গোনাহ নয় বরং এর চেয়েও জঘণ্যতম।
(রাসায়েল ও মাসায়েলঃ ১/২৪৪)
আচ্ছা পবিত্র কুরআনের সুরা নসরে আল্লাহ কেন মহানবী (স) কে ইস্তেগফার করতে বলেছেন? আর মহানবী (স) কেন নামাজের ভেতর দুয়া মাসুরা পড়তেন? সেখানে কি তিনি " ইন্নি জ্বালামতু নাফসী জুলমান কাসীরাও" বলে নফসের উপর নিশ্চিত জুলুমের কথা স্বীকার করতেন না? যেখানে তিনি নিজেই তার ভুলত্রুটির কথা স্বীকার করেছেন সেখানে আপনি তার স্বীকৃতির গুরুত্ব না দিয়ে তাকে অন্যরকম ভাবছেন .| মাওলানা মওদুদী নয় বরং আপনারাই মহানবী (স) এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করছেন | মওদুদী নয় বরং মওদুদী দর্শনের বিরোধীরাই প্রকৃত ইসলাম থেকে অনেক অনেক দুরে আছে। আপনার জবাব আমার জ্ঞানের পরিধি এবং মওদুদী ভক্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে | এজন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ |
পবিত্র কোরআনে মূর্খদের সাথে তর্কে জড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। আমি আপনার বক্তব্যের আর কোন জবাব দিব না । অনুরোধ,আপনার জানাটাকে বিস্তৃত করুন।সালাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন