খালেদা জিয়া ঠিকই বলছে, শহীদের প্রকৃত সংখ্যা ১ লাখঃ সাবেক আওয়ামিলীগ এমপি মোহাইমেন।
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১২ মার্চ, ২০১৬, ০১:৩৬:০৪ দুপুর
১৯৭১ সাল ও তার পরবর্তী সময়ে লোক মারা গেছে অন্তত ৪ পর্যায়ে;
১। ২৫ শে মার্চের পূর্ব পর্যন্ত (অধিকাংশই আওয়ামীলিগ-বামপন্থি বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের হাতে যার স্বীকার মুলত অবাঙালী, বিহারী এবং পশ্চিম পাকিস্তানী নাগরিক,সরকারী অফিসার, আর্মির লোক ও তাদের পরিবার)
২।২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর (মুক্তি বাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনী উভয়ের হাতে এবং তাদের উভয়পক্ষের মধ্যে)
৩। ১৬ ই ডিসেম্বর থেকে অস্র জমা দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত (যেমন; রাজাকার, বিহারী,আল-বদর ইত্যাদি ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পক্ষের লোক)
৪। অস্র জমা দেয়ার পর থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট পর্যন্ত
এই মৃতদের ব্যাপারে চমকপ্রদ কিছু মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামীলিগ নেতা এম এ মোহাইমেন ১৯৯০ সালে। তার বক্তব্য অবশ্য ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সময়কালীন সময়ে মৃতদেরকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছিল বলে প্রতিয়মান। তার বক্তব্য নিন্মরুপ;
“আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত যে ঘোষণা দিয়েছি,তাতে আমরা নিহতের সংখ্যা তিন লক্ষ্য বলে ঘোষণা করেছিলাম এবং এই হিসাবটিও আমরা তখন কলকাতায় বসে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শরনার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে খবরাখবর নিয়ে একটি আনুমানিক সংখ্যা দাঁড় করিয়েছিলাম।পরবর্তিকালে ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে নিহতের সঠিক সংখ্যা বের করার দায়িত্ব গণপরিষদের সদস্য হিসেবে আমাকে দেয়া হয়েছিল।আমি বিভিন্ন থানা ও ইউনিয়নের সংগে যোগাযোগ করে যে সংখ্যা পেয়েছিলাম,সেটা সাত হাজারেরও কম,নিহত রাজাকারদের সংখ্যা ধরেও সাড়ে সাত হাজারের বেশি দাঁড়ায়নি।
তখন বাংলাদেশে ১৯টি জেলা ছিল।সব কয়টি জেলাতেই যুদ্ধ সমভাবে হয়নি।যেসব জেলাতে যুদ্ধের প্রকোপ বেশি হয়েছিল,তার মধ্যে নোয়াখালী একটি।দেশে এমন কয়েকটি জেলাও আছে যেখানে যুদ্ধ তেমন হয়নি,তাই সেসব অঞ্চলে মৃতের সংখ্যাও অনেক কম হয়েছিল বলে মনে করার যথেষ্ঠ কারন আছে।যুদ্ধ সাধারণত বেশি হয়েছিল সীমানতবর্তী জেলাগুলোতে কিন্তু ঢাকা জেলা ব্যতীত আভ্যন্তরীন অনেক জেলায় তেমন উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। তাই নোয়াখালী জেলায় মৃতের সংখ্যা যা দাড়িয়েছিল,গড়ে ঐ সংখ্যা যদি সব জেলাতে ধরা যায়,তাতেও লাখ সোয়া লাখের বেশি মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় না।
কিন্তু ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রষ্টের সংগে সাক্ষাতাকারে শেখ মুজিবুর রহমান তিন মিলিয়ন বলে ফেলেন এবং এরপর থেকেই চালু হয়ে গেল ৩০লক্ষ লোক মারা গিয়েছে। কেউ সেটা শোধরাননি কিংবা প্রতিবাদ করেননি মুজিববাহিনী ও রক্ষীবাহিনীর ভয়ে।এমন কি তখনকার সময়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাজী জহিরুল কাইয়ুম “একাত্তরের রণাঙ্গন” খ্যাত এই লেখকের আর একটি গ্রন্থ “একাত্তরের বিজয়” গ্রন্থে একটি সাক্ষাতকারে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩ লক্ষ লোকের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন,এর প্রতিবাদও কোন আওয়ামীলিগ বেতা-কর্মী করেননি।
৩০ লক্ষ লোক যে মরেনি তার আর একটি উদাহরন দিচ্ছি।১৯৭২ সালে সরকারের তরফ থেকে প্রতি নিহত জনের জন্য ২০০০ টাকা করে ঘোষণা করা হয়েছিল।অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে যতটুকু জানা গেছে মাত্র ৭২ হাজার দরখাস্ত পরেছিল।তার মধ্যে ৫০ হাজার নিহতের আত্নীয়দের ঘোষিত অর্থ দেয়া হয়েছে।এই ৭২ হাজারের মধ্যে আবার বহু ভুয়া দরখাস্তও ছিল, এমনকি অনেক রাজাকারও ছিল।
(আবদুল মোহাইমেন, ভাষা সৈনিক,মুক্তিযোদ্ধা,লক্ষীপুর থেকে ১৯৭০ সালে আওয়ামীলিগ এমপি নির্বাচিত। এই সাক্ষাতকারটি ইয়াহিয়া মির্জা কর্তৃক ২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৯০ ধারনকৃত যা প্রকাশিত হয়,সাপ্তাহিক তারালোক এর পরবর্তী সংখ্যায়]
এক্ষেত্রে, ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত “Liberation Supplement” ডকুমেন্টটিও লক্ষনীয়, যেখানে বিদেশী গন মাধ্যমের বরাতে উল্লেখ করা হয় যে ১.৫ মিলিয়ন মানুষ সেই সময় হত্যার স্বীকার হয়েছেন।
Number of Shaheed in Lib War
এই মৃতদের ব্যাপারে আরেকটি চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন ঐ আওয়ামীলিগ নেতা (উপরে উল্লেখিত সাক্ষাতকারে)।অনেক কথা বলার পর এম এ মোহাইমেন আরো বলেন; এক লক্ষ লোক মারা গেছে যদি ধরা যায়,তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে তাদের সিংহভাগ অবচেতনভাবে মরেছে।একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে মৃতুবরণ এক জিনিস,আর অবচেতনভাবে মৃতুবরণ অন্য জিনিস।২৫ শে মার্চ রাতে যে হত্যাকান্ড হয়েছিল,তার মধ্যে ৯৯জন জানতো না কেন তারা মরছে।শুধু আলতাফ মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় অপারেশন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে এবং যেসব বুদ্ধিজীবি শেষ দিকে প্রাণ দিয়েছে তারাই স্বাধীন্যার জন্য সচেতনভাবে প্রাণ দিয়েছে বলা যেতে পারে।বাকী লোক যারা মরেছে তারা অধিকাংশ অবচেতনভাবে অবস্থার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
যাই হউক, শহীদ শব্দটা ইসলামিক টার্ম।এই মর্যাদা দাবী করে,লড়াই করে অর্জন করার বিষয় নয় বরং ইসলাম শিক্ষা দেয় আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য যাতে তিনি শহীদ হিসেবে কাউকে মর্যাদা দেন, ইসলাম অবশ্য এর কিছু শর্ত নির্ধারন করে দিয়েছে। আল্লাহ যেন প্রত্যেক নিহত ব্যক্তিদের নিয়ত অনুসারে উত্তম জাযা দেন,আমীন।
বিষয়: রাজনীতি
১১৪৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন