আওয়ামীলীগ কেন "কল-রেডী" ব্যবহার করে এর ইতিহাস কি?

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১১ মার্চ, ২০১৬, ০৫:৩০:৪৮ বিকাল



খুব পরিচিত একটা নাম। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের

ভাষনেও আমরা এই "কল-রেডী" দেখি। আসুন "কল-

রেডী"র ইতিহাস জানা যাক।

কল-রেডী'র ইতিবৃত্তঃ

"১৯৪৮ সালে সূত্রাপুরের দুই ভাই হরিপদ ঘোষ ও দয়াল

ঘোষ মিলে একটি দোকান চালু করেন। নাম আরজু

লাইট হাউস। লাইট হাউস নাম হলেও লাইটের

পাশাপাশি গ্রামোফোনও ভাড়া দেওয়া হতো।

বিয়ে-শাদিতে লাইটের সঙ্গে গ্রামোফোনও ভাড়া

নিত লোকজন। দোকানটি পরিচিত হয়ে ওঠে অল্প

দিনেই। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভারত থেকে

কয়েকটি মাইক নিয়ে আসেন দুই ভাই। তাতেও

কুলাচ্ছিল না। হরিপদ ঘোষ মাইকের কারিকরি

জানতেন। যন্ত্রপাতি কিনে এনে নিজে কয়েকটি

হ্যান্ডমাইক তৈরি করেন।

১৯৪৮ সালে দেশ ভাগের পর থেকেই পূর্ব

পাকিস্তানে আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে।

আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা মাইক ভাড়া নিতে শুরু

করেন আরজু লাইট হাউস থেকে। চাহিদা বাড়তে

থাকে দিনে দিনে। তাই তাইওয়ান, জাপান, চীন

থেকে আনা হয় মাইক। তবে মাইকের মূল অংশ মানে

ইউনিট বেশি আনা হতো বাইরে থেকে। এরপর

নিজের দোকানের কারিগর দিয়ে হরিপদ ঘোষ

তৈরি করিয়ে নিতেন হর্নসহ বাকি অংশ।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর থেকে সভা-

সমাবেশ বেড়ে যায়। এ ছাড়া সামাজিক আর ধর্মীয়

অনুষ্ঠানেও মাইক ভাড়া যাচ্ছিল। তাই মাইক দিয়ে

নাম দেওয়ার ভাবনা করলেন দুই ভাই। অবশেষে

দয়াল ঘোষ নামটি ঠিক করেন-কল-রেডী। কারণ

বললেন, মানুষ তো কাজের জন্যই আমাদের কাছ

থেকে মাইক ভাড়া নেয়। তারা কল করলে আমরা যেন

রেডি থাকি। এক কথায়, কল করলেই রেডী। সে থেকে

কল-রেডী।

ভালো সেবা দেওয়ার সুনাম থাকায় যেকোনো সভা-

সমাবেশ ও বড় বড় অনুষ্ঠানে ডাক পড়তে থাকে কল-

রেডীর। ১৯৫৪ সালে কল-রেডীর কর্মী ছিল ২০ জন।

সভা-সমাবেশ সুনামের সঙ্গেই সম্পন্ন করতেন

হরিপদ ও দয়াল ঘোষ। মাঝেমধ্যে তাঁদের ছোট দুই

ভাই গোপাল ঘোষ ও কানাই ঘোষও সাহায্য করতেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট

নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯

সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ

নির্বাচনের সভা-সমাবেশেও যোগ দিয়েছে কল-

রেডী। কল-রেডীর মাইক্রোফোনের সামনে

দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছেন পূর্ব পাকিস্তানের বাঘা

বাঘা নেতা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ভাষণের মাইক্রোফোন হলো কল-

রেডী। হাটে-মাঠে-ঘাটে সব জায়গায় তখন

স্বাধিকারের চেতনায় ফুঁসছে মানুষ। সত্তরের

নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকে সারা দেশের মানুষ ভোট

দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী

ক্ষমতা হস্তান্তর করে না। দফায় দফায় মিটিং

করেও হচ্ছে না সুরাহা। চলে এলো মার্চ। কল-রেডীর

মালিক হরিপদ ঘোষ ও দয়াল ঘোষকে ধানমণ্ডির

বাসায় ডেকে পাঠালেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দিলেন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে [তৎকালীন রেসকোর্স

ময়দান] মাইক লাগাতে। কাজে নেমে পড়েন হরিপদ

ও দয়াল ঘোষ। তখন রেসকোর্সে মাইক লাগানো

সোজা ছিল না-শাসকগোষ্ঠীর চোখ ছিল সদা

সতর্ক। রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে মাইক

লাগাতে লাগলেন দুই ভাই। ৭ই মার্চের বাকি আর

তিন দিন। মাইক লাগিয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে

দিলেন হরিপদ আর দয়াল ঘোষ। কিছু বাড়তি মাইক

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মজুদ রাখেন যেন

সমাবেশের দিন তাৎক্ষণিকভাবে লাগিয়ে নিতে

পারেন। তিন দিন ধরে ৩০ জন কর্মী নিয়ে বাঁশ, খুঁটি

গাঁথার কাজ করেন ঘোষেরা। তারপর সেই দিনটি

আসে-৭ই মার্চ। কবি গিয়ে দাঁড়ান জনতার মঞ্চে।

কল-রেডী'তে উচ্চা্রিত হলো ‘এবারের সংগ্রাম

আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম

স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’

বঙ্গবন্ধুর ভাষণকালে যেন কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি

না হয়, সে জন্য নিজে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি

একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিয়েছিলেন

হরিপদ ঘোষ। অতিরিক্ত তিনটি মাইক্রোফোন

সঙ্গে রেখেছিলেন দয়াল ঘোষ।

এত বড় একটি সমাবেশে মাইক সার্ভিস দিয়ে কত

টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিল কল-রেডী? জানতে

চাইলে হরিপদ ঘোষের ছেলে কল-রেডীর বর্তমান

পরিচালক সাগর ঘোষ জানান, সেই সময়

পারিশ্রমিকের কথা চিন্তা করার সুযোগ বাবা ও

জ্যাঠা মশাইয়ের ছিল না। বঙ্গবন্ধু নির্দেশ

দিয়েছেন সেটাই বড় কথা। আর তা ছাড়া দেশের

পরিস্থিতি তখন সবাই কম-বেশি জানতেন। আর

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাবা-কাকার ভালো সম্পর্ক থাকার

কারণে বাবা শুধু খরচটাই নিতেন। আরো বললেন,

‘সেদিন সেই সমাবেশে আমার বাবার হাতে তৈরি

অনেক হ্যান্ড মাইক ব্যবহৃত হয়েছিল।’

৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে কল-রেডীর যে

মাইক্রোফোনে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ

দিয়েছিলেন সেই মাইক্রোফোন, মাইক্রোফোনের

স্ট্যান্ড আজও আছে কল-রেডীর কাছে। দেশ স্বাধীন

হওয়ার পর আর অন্য কেউ সেই মাইক্রোফোনের

সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেননি। এরপর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২

সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আবারও কল-

রেডীর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ

দিয়েছিলেন।

দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত মানুষ কল-রেডীর

মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন

মুহম্মদ এরশাদ, শেখ হাসিনাসহ আরো অনেকে

আছেন এই তালিকায়।

বিদেশের নেতাদের মধ্যে আছেন ভারতের ইন্দিরা

গান্ধী। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে এসে তাঁর জন্য

গড়া ইন্দিরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে কল-রেডীর

মাইক্রোফোনে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। এরপর

১৯৯৬ সালে ইয়াসির আরাফাত, নেলসন ম্যান্ডেলা

কল-রেডীর মাইক্রোফোনে ভাষণ দেন।

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন,

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও সাবেক

প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়িও কল-

রেডীতে কথা বলেছেন। এর বাইরে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সমাবর্তনে মাইক

সার্ভিস দেয় কল-রেডী।

১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এখন পর্যন্ত শেখ

হাসিনার প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশে মাইক

সার্ভিস দিয়েছে কল-রেডী।

কল-রেডী আছে আগের জায়গায়। পুরান ঢাকার

লক্ষ্মীবাজার, বয়স হলো ৬৭।"

বিষয়: বিবিধ

৪১৮৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

362179
১১ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৯
শেখের পোলা লিখেছেন : কল রেডী এখনও অনেক ভাষনের জন্যই রেডি আছে৷ ডাকলেই রেডি৷ তথ্যের জন্য ধন্যবাদ৷
362188
১১ মার্চ ২০১৬ রাত ০৮:৪৯
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : ভালো লাগলো । ধন্যবাদ।
362192
১১ মার্চ ২০১৬ রাত ০৯:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
362195
১২ মার্চ ২০১৬ রাত ১২:২৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
362196
১২ মার্চ ২০১৬ রাত ০২:২২
জীবরাইলের ডানা লিখেছেন : স্বাগতম
362197
১২ মার্চ ২০১৬ রাত ০২:৩৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি ভালো লাগলো আপনাকে ধন্যবাদ
362206
১২ মার্চ ২০১৬ রাত ০৪:১৩
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : ভালো লাগলো, ধন্যবাদ
362210
১২ মার্চ ২০১৬ রাত ০৪:২০
এক্টিভিষ্ট লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
362255
১২ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৪:৫২
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : ইনফরমেটিভ পোস্ট। জাযাকাল্লাহ।
১০
362626
১৬ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০১:৫৬
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File