মীর কাসেম আলীর ফাঁসি বহাল, মিশ্র প্রতিক্রিয়া মীর কাসেম আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মাহবুবে আলম।
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ০৮ মার্চ, ২০১৬, ০৮:০৯:০৭ রাত
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। রায়ে তিনটি অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি এবং সাতটি অভিযোগে সাজা বহাল রাখা হয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান।
এর আগে, ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১২ নং অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিলেও ১১ নং অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। ২, ৩, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নং অভিযোগে দেয়া সাজাও বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। খালাস দেয়া হয়েছে ৪, ৬ ও ১২ নং অভিযোগ থেকে।
মীর কাসেম আলীর রায়ের বিষয়টি আজ কার্যতালিকার ১ নম্বরে ছিল। তবে দুই মন্ত্রীর বিষয়ে প্রথমে আদেশ দেয়ায় তালিকা সংশোধন করে মীর কাসেমের আপিলের রায়কে ১ (এ) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে রায় দেয়া হয়।
ইতিহাস এ রায়ের বিচার করবে : খন্দকার মাহবুব
মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মীর কাসেমের আপিলে রায় নিয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই। ইতিহাস এই রায়ের বিচার করবে বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
আপিল বিভাগের রায়ের পর নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। খন্দকার মাহবুব বলেন, সর্বোচ্চ আদালত এ রায় দিয়েছেন। দুটি অভিযোগে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। একটি থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। ভবিষ্যতে ইতিহাস এর বিচার করবে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতে মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে বক্তব্য রেখেছি। অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্য রেখেছেন। এমন প্রধান বিচারপতিও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। আপনারা সবই শুনেছেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।
খন্দকার মাহবুব বলেন, লিখিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আমরা আইনজীবীরা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব, এ বিষয়ে আমরা রিভিউ আবেদন করব কি-না।
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার: অ্যাটর্নি জেনারেল
মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ আপিল বিভাগ বহাল রাখার পর এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, মীর কাসেমের মতো সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই হচ্ছে। কিছু কিছু সংগঠন এমন ভাব দেখাচ্ছে যে তারাই বিচারের সব করছে।
তিনি আরও বলে, প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বলে দিয়েছেন এটা সরকারের বক্তব্য নয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এ বিচার হচ্ছে। এটা নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা সরকারের ইশতেহার ছিল। সে অনুযায়ীই বিচার হচ্ছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পাকিস্তান ছাত্র সংঘের নেতা ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মীর কাসেম আলী। নিজামী ও মুজাহিদকে দণ্ডিত করা হয়েছে। মীর কাসেম আলীকে দণ্ডিত না করলে বিষয়টি অপূর্ণ থেকে যেত। আদালত সঠিকভাবেই মীর কাসেম আলীকে দণ্ডিত করেছে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি: মীর কাসেমের স্ত্রী
জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় তার পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
মঙ্গলবার রায় প্রকাশের পর পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এমন দাবি করা হয়।
মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন পরিবারের পক্ষ থেকে ওই বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মীর কাসেমের বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য প্রমাণ আনা হয়েছে তা কোনোভাবেই অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট নয়। যা মামলার যুক্তিতর্ক চলার সময় প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন মন্তব্যে থেকে প্রতীয়মাণ হয়। সুতরাং মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আইনগত কোনো ভিত্তি নাই।’
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর প্রকাশ্যে প্রধান বিচারপতিকে হুমকিধামকি আমাদের মনে একটা প্রশ্নের জন্ম দেয় যে বিচার বিভাগ কি আসলেই স্বাধীন? আমরা মনে করি মীর কাসেম আলী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দায়ের করব।’
আদালতের ওপর চাপ ছিল না : আইনমন্ত্রী
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায়ের বিষয়ে আদালতের ওপর সরকারের চাপ ছিল না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টায় সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, ‘আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং স্বাধীনভাবেই বিচার নিষ্পত্তি করে এই রায় দিয়েছেন।’
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আনিসুল হক বলেন, ‘আগে যেসব রায় দেয়া হয়েছিল, তাতে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করেছি। বরাবরের মতো এই রায়টিতেও আমরা সন্তুষ্ট। সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা এই বিচার করে যাচ্ছি এবং কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছি।’
মামলার সারসংক্ষেপ
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা মোট ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। এগুলো হলো ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে দুটিতে (১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগ) মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারটি অভিযোগে তাঁকে খালাস দেয়া হয়েছে।
১১ নম্বর অভিযোগে রয়েছে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। ১২ নম্বর অভিযোগে রয়েছে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়। ১১ ও ১২ নম্বর ছাড়া বাকি ১২টিই অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মীর কাসেমের বিরুদ্ধে।
প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। ৩, ৪, ৬,৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সাত বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এই আটটি অভিযোগে তাঁকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেম আলীর পক্ষে আপিল করেন জয়নুল আবেদীন তুহিন। মীর কাসেমের পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
বিষয়: বিবিধ
৯৮৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিচারপতি তোমার বিচার করবে কে।
নাস্তিকদের কাছে বাংলাদেশের বিচার ব্যাবস্থা বিক্রি হয়ে গেছে।
এই দেশে সুবিচার সম্ভব না।
সব ডালে নাস্তিক বসা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন