কে এই ইলিয়াস মোল্লা ???
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ০৫ মার্চ, ২০১৬, ০২:৩৮:৩৮ দুপুর
ব্লগার রাজীবের জন্য দোয়া না করার জের : মাদরাসা বন্ধ, ইমাম মুয়াজ্জিনকে চাকরিচ্যুত করেছেন এমপি ইলিয়াস মোল্লা
মহানবী (সা.)-এর অবমাননাকারী নিহত নাস্তিক ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনের জন্য মসজিদে দোয়া ও শাহবাগিদের সমাবেশে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর অপরাধে চাকরিচ্যুত হলেন মিরপুরের বেশ কয়েকটি মাদরাসার শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিন। রাজীবের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানো ও শাহবাগিদের সমাবেশে ছাত্ররা যোগ না দেয়ার কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে একটি মাদরাসা। এমনকি ইমামকে কয়েকদিন গুম রাখার ঘটনাও ঘটেছে। এর আগে ওই এলাকার এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার পক্ষ থেকে লিখিত চিঠির মাধ্যমে জুমার নামাজের পর রাজীবের জন্য দোয়া করার এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নাস্তিক ব্লগারের পক্ষে এমপির নির্দেশনা এবং পরে অন্যায়ভাবে আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর তার জন্য দোয়া করতে মিরপুর এলাকার মসজিদ-মাদরাসাগুলোতে লিখিত একটি চিঠি পাঠান ওই এলাকার এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। ২০ তারিখে স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগকেন্দ্রিক গণজাগরণ আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় তার নিজ বাসভবনের সামনে জামায়াতা-শিবির রাজাকারদের ছোবলে নিহত হয়। তার আত্মার মাগফিরাতের জন্য আগামী শুক্রবার বাদজুমা দোয়া করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’ চিঠিটি নামাজের আগে পাঠ করে মুসল্লিদের শোনানো এবং দোয়া করার জন্য ইমামদের প্রতি মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এদিকে নিহত ব্লগার রাজীব হায়দারের ব্লগে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে চরম কটূক্তিপূর্ণ তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর এ নিয়ে সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফুঁসে ওঠে আলেম-ওলামা। ঠিক সেই সময় নাস্তিক ব্লগারের পক্ষে দোয়া করার জন্য এমপির নির্দেশনার ঘটনায় আরও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট ইমাম মুয়াজ্জিনদের মাঝে। মসজিদ মাদরাসা কমিটি এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে কিছু মসজিদে এই দোয়া করা হলেও অনেকেই এই নির্দেশনা উপেক্ষা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা। এছাড়া এর কয়েকদিন পর মিরপুরে অনুষ্ঠিত শাহবাগিদের সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য ওই এলাকার মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের চাপ প্রয়োগ করা হয়। এ নিয়েও বেঁকে বসেন অনেক মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্র। এসব কারণে সংশ্লিষ্ট মাদরাসা এবং ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, এমপির নির্দেশনা অনুযায়ী জুমার নামাজের পর নিহত ব্লগার রাজীবের জন্য দোয়া না করা এবং নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার কারণে এমপির নির্দেশে সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে মিরপুর সি ব্লকের বায়তুল আমান মসজিদের খতিব ও ইমাম, মিরপুর-১১ নম্বরের মুসলিমবাজার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন, মদিনা মসজিদের ইমাম, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসার প্রিন্সিপাল, আদর্শনগর বায়তুন নুর মসজিদের খতিবসহ বেশ কিছু মসজিদের খতিব, ইমাম ও মোয়াজ্জিন এবং মাদরাসা শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মিরপুর ৬ নম্বরে দারুল উলুম মাদরাসার গেটে তৌহিদি জনতার নামে ব্লগার রাজীবের বিষয়ে লেখা একটি পোস্টার লাগানো ছিল। বিষয়টি নিয়ে মাদরাসার ছাত্রদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারি ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি গিয়াসউদ্দিন ব্যাপারীর বাকবিতণ্ডা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ওইসব ছাত্রদের বহিষ্কারের জন্য শিক্ষকদের নির্দেশ দেন। কিন্তু বহিষ্কারের মতো কোনো অন্যায় করেনি উল্লেখ করে শিক্ষকরা ওই নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে শাহবাগিদের সমাবেশে যোগ দিতে অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-শিক্ষকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাতেই প্রিন্সিপাল মাওলানা রুহুল আমিনকে ডেকে নিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে মাদরাসা বন্ধ করে ছাত্রদের সরিয়ে দিতে বলেন কমিটির সেক্রেটারি।
সি ব্লকের বায়তুল আমান মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুর রকিব জানান, এমপির নির্দেশনা অনুযায়ী ব্লগার রাজীবের জন্য দোয়া করার পরিবর্তে ব্লগে নবী-রাসুলদের নিয়ে এসব কটূক্তিকর কথাবার্তা প্রচার করা হারাম আখ্যায়িত করে এর জোর প্রতিবাদ জানাই। তাছাড়া জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের একটি বিক্ষোভে বক্তব্য দিই। এই কারণে গত সপ্তাহে আমিসহ মসজিদের ইমাম হাফেজ ইলিয়াসকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এমপির পক্ষ থেকে এই ফয়সালা হয়েছে বলে কমিটির পক্ষ থেকে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। মিরপুর ১১ নম্বরের আদর্শনগর বায়তুন নুর মসজিদ ও নুরুল উলুম মাদরাসার চাকরিচ্যুত খতিব মাওলানা রুহুল আমিন বলেন, এমপির নির্দেশনা অনুযায়ী মসজিদে ব্লগার রাজীবের জন্য দোয়া করার বিষয়ক চিঠি পড়ে দোয়া করলেও রাজীবের বিরুদ্ধে প্রচারণার অভিযোগে তাকে এবং মাদরাসার প্রিন্সিপাল জহিরুল ইসলাম, মোয়াজ্জিন আকরাম হোসেন ও এক মুফতিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অবশ্য গতকাল কমিটির পক্ষ থেকে তাকে ফের মসজিদে নামাজ পড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগে মিরপুর ১৩ নম্বরের খাদিমুল ইসলাম মাদরাসার প্রিন্সিপাল ইমরান মাযহারীকে অব্যাহতি দিয়ে বের করে দেয় কমিটি। তাকেও আবার ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে বলে গতকাল তিনি জানান।
মিরপুর ১২ নম্বরের মদিনা মসজিদের ইমাম এমপির চিঠি পড়তে অস্বীকার এবং রাজীবের জন্য দোয়া না করায় জুমার নামাজের পর অপহরণের শিকার হন। তিনদিন পর তাকে পল্লবী থানায় পাওয়া যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতের মাধ্যমে তার জামিন নিলেও মসজিদ কমিটি থেকে তার চাকরিচ্যুত করা হয়। মিরপুর ১২ নম্বরের মুসলিমবাজার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন এমপির দেয়া চিঠি খতিবের কাছে না পৌঁছানোর অভিযোগে তাকে সেখান থেকে বিদায় করা হয়। ইমাম খতিবদের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে জানতে আলহাজ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর ০১৭১১৫৩৩৮৬৮ নম্বরে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
বিষয়: বিবিধ
৪১৩৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন