ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের টেন্ডার বানিজ্যে দেশ আজ হরিলুটে পরিনিত হয়েছে।

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ০৩ মার্চ, ২০১৬, ০৭:৪৭:১৬ সন্ধ্যা



রাজশাহীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ‘টেন্ডার সমঝোতা’ চলছেই। নেতা-কর্মীদের ম্যানেজ করতে না পারলে কাজ দেওয়া হচ্ছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তাদের দাপটে অনেকটা অসহায় সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা। গত ছয় মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। এসব কাজে আওয়ামী লীগ নেতারা মধ্যস্থতা করেছেন। এ জন্য নেতারা নিয়েছেন ২০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য দিয়েছে। গত বছরের ২০ নভেম্বর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ৩১ কোটি টাকার দরপত্র ভাগাভাগি হয়। তিনটি গ্রুপের কাজের বিপরীতে ২৮৭টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র ৮টি। জানা গেছে, সমঝোতার মাধ্যমে এ কাজ পায় ঢাকা ও খুলনার তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিনিময়ে রাজশাহীর ঠিকাদাররা এবং দরকষাকষিতে জড়িতরা নিয়েছেন ৩ কোটি টাকা। রেলওয়ে সূত্র জানায়, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং গেটের মানোন্নয়ন, পুনর্বাসন ও নির্মাণকাজের জন্য গত বছরের ১৭ অক্টোবর তিনটি গ্রুপে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রথম গ্রুপের কাজ পাকশী ডিভিশন-২-এর, যার প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ১১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, দ্বিতীয় গ্রুপের কাজটি পাকশী ডিভিশন-১-এর, যার প্রাক্কলিত ব্যয় ১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং তৃতীয় গ্রুপের কাজ লালমনিরহাট ডিভিশনের, এর প্রাক্কলিত ব্যয় ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। রেলের কর্মকর্তারা জানান, ২৮৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও তিন গ্রুপে মাত্র পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে। আর কাউকে দরপত্রে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। বিনিময়ে তিনজন ঠিকাদারকে দিতে হয়েছে ৩ কোটি টাকা। আর এ প্রক্রিয়ার সমঝোতা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা। সমঝোতাকারী পলাশ (পদ নেই) অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত ৯ জানুয়ারি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) অর্ধ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। দরপত্র বিক্রি না করেই কাজগুলো ভাগাভাগি হয়। ঠিকাদাররা দরপত্র কিনতে গেলেও তাদের কাছে দরপত্র বিক্রি করা হয়নি। দুজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজগুলো ভাগাভাগি করে নেন। ৫৬ লাখ টাকার কাজে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হলেও রাসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম বলেন, ‘এত ছোট বিষয়ের খোঁজখবর আমি রাখি না।’

রাসিকের প্রকৌশল শাখা সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের কাছ থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে গ্যাস ও পানির লাইন সংযোগ কাজের সময় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৫২ গ্রুপের দরপত্র

আহ্বান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী (উন্নয়ন) নূর ইসলাম। পরে ওই গ্রুপে আরও একটি কাজ সংযোজন করে ২৯ ডিসেম্বর আবারও সংশোধিত দরপত্র আহ্বান করেন ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাশার। ওই দরপত্রের ৫৩টি কাজের মধ্য ৫১টির দরপত্র বিক্রি করেনি রাসিক। গত ২৪ জানুয়ারি রীতিমতো হাট ইজারার মতো করে সমঝোতা করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ কোটি টাকার ভবন নির্মাণকাজ। নগরীর তালাইমারী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে বসে নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা এ সমঝোতা করেন। তাতে উপস্থিত ছিলেন ১৪-১৫ জন ঠিকাদার। আওয়ামী লীগ নেতাদের ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দেওয়ার বিনিময়ে কাজটি পান রিথিন এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার রণি।

১০ কোটি টাকার কাজের এ সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আবদুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আলাল, নগর যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাচ্চু, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবদুল মমিন, নগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক লেমন। আলাউদ্দিন আলাল জানান, সব ঠিকাদার বসে সমঝোতা করেছেন। মতিহার থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. আবদুল মান্নান সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সব দলের ঠিকাদার ছিলেন বলেও জানান তিনি।

২৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ৬ কোটি টাকার দরপত্র ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমাদানের শেষ সময় থাকলেও ঠিকাদারদের দরপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি। যারা দরপত্র জমা দিয়েছেন তাদের দরপত্র মূল্যের ২০ ভাগ করে অর্থ সরকারি দলের নেতাদের দিতে হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর একটি হোটেলে দরপত্র সংগ্রহকারী ৫০ জন ঠিকাদারকে নিয়ে সমঝোতায় বসেন আওয়ামী লীগপন্থি ঠিকাদাররা। এদের নেতৃত্বে দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা এবং ঠিকাদার ও তার ভাই। সমঝোতা বৈঠকে দরপত্র মূল্যের ২০ ভাগ করে দিতে রাজি হলে অন্য ঠিকাদাররা ওই দরপত্রে অংশ নেবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াইজ করনী বলেন, ‘এর আগেও ঠিকাদাররা কাজটি নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। এবারও শুনেছি ঠিকাদাররা বাইরে কাজ ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।’

গত সোমবার পশ্চিম রেলের ৩৩ কোটি টাকার কাজের সমঝোতা হয়। ৩ কোটি টাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে কাজটি পেয়েছে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, নগর যুবলীগের সম্মেলন সামনে রেখে কাজটির সমঝোতা করা হয়েছে। তবে নগর যুবলীগ সভাপতি রমজান আলী এমন সমঝোতার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘সমঝোতা বৈঠকে আমি ছিলাম না। সম্মেলনের জন্য কোনো টাকাও নেওয়া হয়নি।’

বিষয়: বিবিধ

১০৭৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

361247
০৩ মার্চ ২০১৬ রাত ০৮:১১
শেখের পোলা লিখেছেন : জনগনের এতে আর অবাক হবার কিছু নেই৷ এটাই আসল চরিত্র৷ আমরা এতে অভ্যস্ত৷ এটাই বড় সাফল্য চেতনার বিজনেষে৷ ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File