ইউরোপজুড়ে আমেরিকার মারণাস্ত্র মোতায়ন, সৌদি ও তুরুস্ক সৈন্য মোতায়েন,তাহলে কি সত্যিই কী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে চলছে?
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৫২:৩৪ রাত
উরোপজুড়ে আমেরিকার মারণাস্ত্র মোতায়ন, সত্যিই কী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে চলছে?
ইউরোপজুড়ে আমেরিকার মারণাস্ত্র মোতায়ন, সত্যিই কী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে চলছে?সিরিয়া সংকট সমাধানের জন্য যেমন নানামুখী চেষ্টা চলছে, তেমনি পর্দার আড়ালে ভিন্ন কাহিনীর আয়োজন করা হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। সে কাহিনী আর কিছু নয়; তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
নানা ঘটনাপ্রবাহে দিনকে দিন এ গুঞ্জন শক্ত ভিত্তি পাচ্ছে। বলা হচ্ছে- এ কাহিনী মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনায় জড়িয়ে গেছে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্ররা, জড়িত রয়েছে অনেক সংকটের মূল হোতা যুদ্ধবাজ ইসরাইল। সেই একই কাতারে রয়েছে সৌদি আরবসহ কয়েকটি আরব দেশ এবং তুরস্ক। তবে বর্তমান দৃশ্যপটে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় রয়েছে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের তুরস্ক।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে এরদোগান স্বৈরতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে নামানোটা জরুরি কর্তব্যের পর্যায়ে জ্ঞান করছেন। বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে এরদোগানের প্রধান অভিযোগ-“আসাদের হাত রক্তে রঞ্জিত”। তবে সমালোচকরা এরদোগানের সামনে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতেও দেরি করেননি।
এ দলের লোকজনের প্রশ্ন হচ্ছে-হঠাৎ করে আসাদ কীভাবে জবরদখলকারী স্বৈরশাসক হয়ে গেলেন? সিরিয়া সংকট শুরুর আগে আসাদ এবং এরদোগান যে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ ছিলেন সে ঘনিষ্ঠতা তাহলে কীভাবে সম্ভব হয়েছিল? তিনি কী না জেনেই আসাদকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন? তখন এরদোগান জানতেন না আসাদের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপট এবং তার আদ্যোপান্ত ইতিহাস?
এরদোগানের সমালোচকদের আরো প্রশ্ন হচ্ছে-বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবেলা করতে গিয়ে যদি আসাদের হাত রক্তে রঞ্জিত হয়, তাহলে এরদোগানের হাতে কাদের রক্তের ছাপ? তার আমলে দেশের প্রচলিত বিরোধীদলের লোকজন কিংবা প্রতিবাদী নাগরিক নিহত হননি? যে কুর্দি গেরিলারা তুরস্কের ক্ষমতা দখল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে এরদোগান সেনা অভিযান চালাচ্ছেন না? কুর্দিদের দেহ থেকে বুঝি রক্ত ঝরে না!
আর সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে এরদোগান যে পরিস্থিতি জটিল করেছেন তার দায় কী তিনি এড়াতে পারেন? পরিস্থিতি জটিল করার কারনেই তো এত মানুষের জীবন গেছে। এ বাদে ও আরো প্রশ্ন আছে এরদোগানের সমালোচকদের।
সিরিয়ার তেল-বাণিজ্যের সঙ্গে এরদোগানের জড়িত থাকার যেসব অভিযোগের প্রমাণ বের হয়েছে তা কি মিথ্যা? যদি সত্য হয়, তাহলে প্রশ্ন ওঠে- আসল উদ্দেশ্য কি এখানেই নিহিত? সমালোচকরা জানতে চান- বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও স্বৈরতন্ত্রের অভিযোগ এনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট সিরিয়ায় আন্দোলনকারীদের নামে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়েছেন কিন্তু ইরাকে কি স্বৈরশাসক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত?
সেখানে আইএস’র মতো ভয়াবহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পাঠানো হয়েছে কেন? সর্বোপরি প্রশ্ন- ইরাক সরকারের বিনা অনুমতিতে তিনি কী করে উত্তর ইরাকে সেনা পাঠালেন? একটি দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে সেনা পাঠানো কী মুসলিম ভ্রাতৃত্বের পরিচয় বহন করে? এরদোগানের সমালোচকদের আরো প্রশ্ন হচ্ছে- আসলে এরদোগান কী চান?
কার হয়ে তিনি ময়দানে নেমেছেন? কেন তিনি মধ্যপ্রাচ্যকে অনেক বেশি উত্তপ্ত করে তুলছেন? সিরিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে মল্লযুদ্ধে নামার পর কেন ইরাকেও ফ্রন্ট খুললেন? এই উত্তপ্ত অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? তুরস্কের সমর্থকেরা রাতদিন যে খ্রিস্টান-নাসারাদের মুণ্ডুপাত করেন সেই এরদোগানের তুরস্ক যে ন্যাটো সামরিক জোটের একমাত্র মুসলিম সদস্য!
জটিলতা এখানেই সবচেয়ে বেশি। ন্যাটোর সদস্য হওয়ার কারণে তুরস্ক যদি ইরাক, সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে ন্যাটো জোটের আর্টিকেল-ফাইভ অনুসারে সব সদস্য রাষ্ট্র তাতে যোগ দিতে বাধ্য। যদি এ আশংকা সত্যি হয় তখন ন্যাটো জোটের হাতে ইরাক ও সিরিয়ার মুসলমানদের আরো জীবনহানি ঘটলে তার দায় কী এরদোগান এড়াতে পারবেন?
যদি ঘটনা আরো বিস্তৃত হয়ে রাশিয়া পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে কী চিত্র তৈরি হতে পারে? অনেকে মনে করেন- তখন বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠবে? ঠিক এই জায়গা থেকে নতুন প্রশ্নের উদয় হচ্ছে- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি শুরুই হয় তাহলে তার শেষ কোথায়? মানব সভ্যতা কী টিকে থাকবে নাকি মুছে যাবে? এ প্রশ্ন মোটেই অবান্তর নয়। পশ্চিমা জগতে এ নিয়ে রীতিমতো নানামুখী গবেষণা চলছে; চলছে বিভিন্ন আঙ্গিকে নানা বিশ্লেষণ।
অনেকেই বলে থাকেন এবং আমরাও বিশ্বাস করতে চাই, এই আধুনিক সভ্যতার যুগে আর বিশ্বযুদ্ধ হবে না। কারণ বিশ্বযুদ্ধ যে ভয়াবহ ধ্বংসলীলা ডেকে আনে তা বিশ্ববাসী দেখেছে কয়েকবার। এমনটাই যেন হয় -আশাবাদী মানুষেরা তাই বিশ্বাস করতে চান। তবে, বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়া মোটেই অসম্ভব নয়। কারণ সর্বাধুনিক যেসব সামরিক উপকরণ বানানো হয়েছে তা এমনি বানানো হয়নি। নিশ্চয় তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে।
কী সেই লক্ষ্য? আর কিছুই নয়- প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা। যখন তা একান্তই অসম্ভব হয়ে উঠবে তখন চূড়ান্ত আঘাত হানার প্রশ্ন আসবে। সে আঘাত যে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে হানা হবে না, তার নিশ্চয়তা কেউ দেয়নি; কেউ দেবেও না। অতএব, আশংকা থেকেই যাচ্ছে বিশ্বযুদ্ধের আর পরমাণু যুদ্ধেরও।
ইউরোপজুড়ে ২০০ মার্কিন পরমাণু বোমা; ইউরোপজুড়ে আমেরিকা প্রায় ২০০ পরমাণু বোমা মোতায়েন করেছে বলে ১১ ডিসেম্বর শুক্রবার অভিযোগ করেছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেছেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর সামরিক তৎপরতার কারণে বিশ্বে সামরিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
তিনি জানান, বেলজিয়াম, ইতালি, নেদারল্যান্ড, জার্মানি ও তুরস্কে এসব মার্কিন পরমাণু বোমা মোতায়েন করা আছে। এছাড়া, আমেরিকা পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিও নবায়ন করেছে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, স্বল্প সময়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটে সদস্য সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।
এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাশিয়াও তার কৌশলগত পরমাণু অস্ত্রের ক্ষমতা বিশাল অংশ বাড়িয়েছে।
তিনি জানান, রাশিয়ার শতকরা ৫৫ ভাগ পরমাণু অস্ত্র নতুন সামরিক সরঞ্জামের সঙ্গে বসানো হয়েছে। রাশিয়া সাধারণত ন্যাটো সদস্য দেশের কাছে পরমাণু বোমা মোতায়েন করার পক্ষপাতী নয় কিন্তু গত জুনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ন্যাটো যদি রাশিয়াকে হুমকি দেয়, তাহলে মস্কোও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
৫ জায়গা থেকে শুরু হতে পারে বিশ্বযুদ্ধ; ১৭৫৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আধুনিক বিশ্ব চারটি ভয়াবহ বৈশ্বিক যুদ্ধ দেখেছে। এর একটি হলো- The Seven Years War. মূলত এ যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৫৬ সাল থেকে ১৭৬৩ সাল পর্যন্ত। এ যুদ্ধের আগুন ছড়িয়েছিল ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা থেকে পশ্চিম আফ্রিকা এবং ভারত থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত। এই ভয়াবহ সেভেন ইয়ার্স ওয়ারের কবলে পড়েছিলেন বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলা এবং পলাশির আম্রকানন। ব্রিটিশ ও ফরাসিদের সেই গোলযোগের ধারবাহিকতায় নবাবের পক্ষে লড়েছিলেন ফরাসি বীর সিনফ্রেঁ।
আরেকটি ভয়ারহ যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ববাসী। সেটি হচ্ছে- The French Revolutionary Wars. ১৭৯২ থেকে ১৮০২ সাল পর্যন্ত চলে সে যুদ্ধ। এরপর ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং চলে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হতাহত হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে মারা গেছে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ এবং আহত হয়েছে প্রায় দুই কোটি। নিহতদের মধ্যে সেনা ছিল এক কোটি ১০ লাখ আর বেসামরিক ছিল ৭০ লাখ। এছাড়া, ৬০ লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। নানা রোগব্যাধি ও ফ্লু’র মহামারিতে মারা গেছে আরো ২০ লাখ মানুষ।
এ যুদ্ধের প্রধান ফল ছিল- রাশিয়া, জার্মানি ও হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য এবং তুর্কি খেলাফতের অবসান। পাশাপাশি ব্রিটেন হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধের ক্ষত শুকিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এ যুদ্ধ ১৯৩৯ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর। এ যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। তবে সবচেয় কম হলো পাঁচ কোটি আর বেশি হলো আট কোটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেখা দিয়েছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এবং মহামারি আকারের রোগব্যধি। সে কারণে বলা হয় আট কোটি মানুষ মারা গেছে এ যুদ্ধে যা ১৯৪০ সালের বিশ্ব জনসংখ্যার শতকরা তিন ভাগ।
সেসময় পৃথিবীতে ২৩০ কোটি মানুষের বসবাস ছিল। নিহত আট কোটি মানুষের মধ্যে বেসামরিক মানুষ ছিল পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি। আর সেনা মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দুই কোটি ১০ লাখ থেকে আড়াই কোটি। এছাড়া, সে সময় যুদ্ধবন্দী মারা গেছে আরো ৫০ লাখ।
আধুনিক সভ্যতায় সবচেয়ে লম্বা সময় বিশ্বে শান্তি বজায় ছিল ১৮১৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ পর্যন্ত ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে। সে কারণে অনেকের মনে বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা দানা বাধে; এ বিশ্ব বুঝি অনেক বেশি দিন শান্ত থেকেছে!
প্রতিটি বিশ্বযুদ্ধের জন্য স্ফূলিঙ্গ দরকার হয়। এ ধরনের যুদ্ধে একাধিক বড় শক্তির স্বার্থের প্রশ্ন জড়িত ও থাকে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ফ্রাঞ্জ ফার্ডিনান্ডের হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। Seven Years War শুরু হয়েছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে কিন্তু তা পৌঁছে গিয়েছিল মিসিসিপি নদী পর্যন্ত। যুদ্ধে জড়িত পক্ষগুলো সবসময় চায় না, সে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বে; কিন্তু ছড়িয়ে পড়েছে বার বার -এটাই বড় সত্য। হয়ত যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার জন্য কিছু কিছু ঘটনা বা উপলক্ষ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
যাতে বিভিন্ন জাতী-গোষ্ঠী জড়িয়ে পড়ে; বড় শক্তিগুলোর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব হয়ত প্রাথমিক কারণ হিসেবে কাজ করে। বর্তমান বিশ্ব এমন একটি জায়গায় অবস্থান করছে যেখানে এমন বড় যুদ্ধের আশংকা মোটেই কম নয়।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেসব কারণে শুরু হতে পারে তার কয়েকটি বাস্তবতা হতে পারে এমন;
সিরিয়া; সিরিয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এতটা ঘনিষ্ঠাবে জড়িয়ে পড়বে তা অনেকের ধারণার বাইরে ছিল। কিন্তু রাশিয়ার মতো বড় শক্তি তার নানা সামরিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থে সিরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। সিরিয়াকে কেন্দ্র করে যেহেতু চলছে মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বের বহু শক্তির নানারকম হিসাব-নিকাশ, সে কারণে তাদের স্বার্থ ধরে রাখার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সময়ের ব্যবধানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াটা অসম্ভব কিছু নয়।
অনেকেই ধারণা করছেন, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানকে সামনে আনা হয়েছে। তিনি শুধু সিরিয়া ইস্যুতে জড়িয়েই ক্ষান্ত হননি; ইরাকেও সেনা পাঠিয়েছেন। পরিস্থিতি দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ইরাকে সেনা পাঠানোর মধ্যদিয়ে দিয়ে তিনি কিংবা তার জোট কী একটি সীমান্তে সেনা পাঠানো আগেভাগেই নিশ্চিত করল? বলার অপেক্ষা রাখে না-মারাত্মক যুদ্ধ লাগলে তাতে সৌদি আরবসহ আঞ্চলিক অনেক দেশ জড়িয়ে পড়বে। সে যুদ্ধ যে শুধু মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে তার নিশ্চয়তা দেয়া মুশকিল।
ভারত-পাকিস্তান; অনেকগুলো কারণে পাকিস্তান ও ভারত আবার যুদ্ধে জড়াতে পারে। বহু সামরিক বিশ্লেষক মনে করেন, মুম্বাই হামলার মতো আর নতুন কোনো হামলা হলে ভারত হয়ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে পারে। আফগানিস্তান নিয়েও দু দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতে পারে। অনেকের ধারণা- সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভেতরে চিন্তাগত ও অবস্থানগত পার্থক্য অনেক।
গত কয়েক বছর ধরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে প্রচলিত সামরিক শক্তির ভারসাম্য নিয়ে বিতর্ক জোরদার হয়েছে। যদি প্রচলিত যুদ্ধে পাকিস্তান বা ভারত পরাজয়ের মুখে পড়ে তাহলে সেই দেশ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে বসতে পারে। তখন বিশ্বযুদ্ধ বা পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে সমস্ত ‘বাজি’ বন্ধ হয়ে যাবে।
গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সামরিক সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছে যদিও তারা পাকিস্তানকেও অস্ত্র দিচ্ছে। ঘটনাক্রমে চীনও তার একমাত্র সামরিক প্রযুক্তির ক্রেতা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। যদিও ১৯৭১ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তবে নতুন সম্ভাব্য সংঘাতে যদি চীন পাকিস্তানের পক্ষ নেয়, তাহলে আমেরিকা কী করবে তা স্পষ্ট নয়। কারণ এখন চীনের সঙ্গে খোদ আমেরিকার বহুমাত্রিক স্বার্থগত দ্বন্দ্ব চলছে।
পূর্ব চীন সাগর; পূর্ব চীন সাগরের সেনকাকু বা দিয়াওয়ু দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে চীন ও জাপান বিপজ্জনক খেলায় মেতে উঠেছে। দু'দেশই এ দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা দাবি করছে এবং এ জন্য নিজেদের এলাকায় সামরিক শক্তি মোতায়েন করেছে। মাঝেমধ্যেই চীন ওই এলাকায় যুদ্ধজাহাজ কিংবা টহল জাহাজ পাঠাচ্ছে। এই ইস্যুতে আমেরিকা জাপানের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন ঘোষণা করেছে।
এ অবস্থায় যদি চীন ও জাপানের মধ্যে কোনো রকম নৌ কিংবা বিমান সংঘর্ষ হয়, তাহলে দু'দেশের জন্যই জাতীয়তাবাদী শত্রুতাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে; যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে আসা টোকিও এবং বেইজিং সবার জন্যই অসম্ভব হবে। মনে রাখতে হবে- দু'দেশই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে; তাদেরকে একদম নিরুত্তাপ ভাবার সুযোগ নেই।
এমন ঘটনা ঘটলে আমেরিকার সঙ্গে জাপানের নিরাপত্তা চুক্তি অনুসারে মার্কিন সরকারকে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে। আমেরিকা জড়িয়ে গেলে চীন প্রথমেই আশপাশের এলাকার সব মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা করবে। ফলে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হবে এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের যে সামরিক ও কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে তাতে রাশিয়াও সে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
জাপানের সঙ্গে রাশিয়ার কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। আবার চীনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে ভারত ও পাকিস্তানের ভূমিকা কী হবে তা ও বিবেচনার বিষয়। ফলে পুরো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় যুদ্ধের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে বলে জোরালো আশংকা রয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগর; দক্ষিণ চীন সাগর নিয়েও আমেরিকার সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব বেশ প্রকট হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার দু'দেশের নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী সংঘাতের কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছেছিল। আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড় অস্বস্থির কারণ হচ্ছে- দক্ষিণ চীন সাগরে চীন যে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ করছে তাতে সমুদ্রসীমার মালিকানা অনেক বেড়ে যাচ্ছে চীনের। এ পথে পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমেরিকা যতটা সহজে বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক রাখতে পারে অন্য কোনো পথে তা সম্ভব নয়।
কিন্তু চীন যদি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে সেখানে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে আমেরিকা সে সুবিধা হারাবে। শুধু দ্বীপ তৈরি করা কেন-প্রায় পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা দাবি করছে চীন। সে দাবি প্রতিষ্ঠিত হলে বলা চলে চীনের দয়া ছাড়া ওই পথে জাহাজ নিয়ে আমেরিকা বা আশপাশের অনেক দেশের পক্ষেই চলাচল করা সম্ভব হবে না।
ফলে আমেরিকা ও তার আঞ্চলিক মিত্ররা চীনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। চীন তার নিজের স্বার্থ ও সুবিধা ছাড়বে বলে মনে হয় না। বড়জোর সময়ক্ষেপণ করতে পারে। সে কারণে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বড় যুদ্ধ এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধও মোটেই অসম্ভব কিছু নয়।
ইউক্রেন; ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে বলা যায়, রাশিয়ার সঙ্গে পুরো ন্যাটো জোটের শক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্র অনেকটাই প্রস্তুত। এই ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্ররা কয়েক দফা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রাশিয়াও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আমেরিকা ও ইউরোপের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পুরো পশ্চিমা জগত যেখানে ইউক্রেনের পক্ষে সেখানে রাশিয়া একাই পূর্ব ইউক্রেনের গেরিলাদের পক্ষে। রাশিয়া কোনোভাবেই যে ছাড় দিবে না তা স্পষ্ট।
আগে থেকেই আমেরিকা ও পশ্চিমারা রাশিয়ার দোরগোড়ায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনসহ নানা সামরিক তৎপরতা চালাচ্ছিল। ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে তাদের সে তৎপরতা বেড়ে গেছে অনেক বেশি। উপায়হীন হয়ে রাশিয়াকে নিজের প্রতিরক্ষা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। ফলে রাশিয়া তার পুরনো অস্ত্রে ধার দিচ্ছে এবং বহু সামরিক কর্মসূচি জীবিত করেছে।
ন্যাটোর হুমকি ও সামরিক তৎপরতার ধরনের ওপর নির্ভর করবে রাশিয়ার জবাব। প্রচলিত অস্ত্র হলে তার মোকাবেলা হবে প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে আর পরমাণু হামলার প্রশ্ন এলে জবাব হবে পরমাণু দিয়ে-রাশিয়ার অবস্থান বার বার সে কথাই বলে দিচ্ছে। এমন যুদ্ধ হলে মানব সভ্যতার কী হবে -তা নিয়ে আলাদা করে আলোচনার ইচ্ছে রইল।
বিষয়: বিবিধ
৩২৯৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন