সাইয়্যেদা আমিনা কতুব মহিয়সী এক নারী। বিপ্লবী ও সংগ্রামী জীবন.....
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৮:২৪:৪৯ রাত
কারান্তরিণ মুজাহিদকে বিয়ে করলেন এক মহিয়সী নারী। মুক্ত অবস্হ্যায় সাক্ষাৎ হল বিয়ের বিশ বছর পর!!
বলছি আমিনা কুতুবের কথা। বিখ্যাত তাফসীর ফি যিলাযিল কোরানের লেখক ইসলামী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা মিসরের ইখওয়ানুল মুসলেমিনের অন্যতম নেতা শহীদ সাইয়েদ কতুবের আপন ছোটবোন।
বিশ বছরে বয়সে আমিনা বিয়ে করেন কামাল আল আনসারীনী নামক ইখওয়ানের এক প্রথম সারির নেতাকে। কামাল ইখওয়ানের শীর্ষ নেতা হওয়ায় জামাল আবদুল নাসেরের সামরিক সরকার ১৯৫৪ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে ফাঁসির আদেশ দেয়। কিছুদিন পর কোন এক অজানা কারণে তাঁর ফাঁসির আদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। কারাগারে তাঁর উপর চলে নির্যাতনের স্টীম রোলার। পাঁচ বছরের ধারাবাহিক নির্যাতনে মারাত্বক অসুস্হ্য হওয়ায় তাঁকে পাঠানো হয় "লিমান তুররা " নামক কারা হাসপাতলে। সৌভাগ্য ক্রমে তাঁর স্হান হয় সাইয়েদ কুতুব শহীদের কেবিনে।
ভাই সাইয়েদ কুতুবের সাথে দেখা করতে মাঝে মধ্যে কারা হাসপাতালে যেতেন বোন আমিনা কুতুব। আমিনা সম্পর্কে এভাবেই কিছুটা ধারণা পান কামাল। একদিন সাহস করে সাইয়েদ কুতুবের কাছে আমিনার বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি।
এ প্রস্তাবে সাইয়েদ কুতুব ও খুশি হলেন। কারণ কামালের যোগ্যতা সম্পর্কের তাঁর সামান্যতম সন্দেহ ও ছিল না তাঁর। তারপরেও ছোটবোনের মতামত নেয়ার প্রয়োজনবোধ করলেন তিনি। তিনি আমিনাকে ভাবার ও ইস্তিখারা করার পরামর্শ দেন। টানা কয়েকদিন ভাবা ও ইস্তিখারা করার পর ইতিবাচক ইংগিত পেয়ে বিয়ের প্রস্তাবে সম্মতি দেন আমিনা।
কুতুব পরিবার ও আমিনা জানতেন যাবজ্জীবন কারাদন্ড মানে ২৫ বছরের কারাবাস। এরপরও আল্লাহর উপর ভরসা করে আমিনা কুতুব বিয়ে করেন কারাবন্দী কামালকে।
অত্যাচারের ভিন্নমাত্রা প্রদর্শের পর তাঁদের কে নিয়ে যাওয়া হয় "ক্বানা" নামক কারাগারে। এটি ছিল কায়রো থেকে অনেক দূরে। একদিন আমিনা তাঁর ননদ সহ দেখা করতে আসেন কামালের সাথে, কথার ফাঁকে তার ননদ ভাইকে কারাগারে আসতে দুর্ভোগের কথা শেয়ার করেন। এসব শোনে কামাল খুবই ব্যথিত হন,আমিনাকে কাছে ডেকে বলেন...... আমিনা অনেকদিন হয়ে গেল ছাড়া পাচ্ছিনা। আর কবে ছাড়া পাব তারও কোন ঠিক নেই। আমাদের বিয়ের সময় তোমাকে বলেছিলাম এইতো কয়টা দিন মাত্র। আমরা একাত্রে থাকতে পারব কয়দিন পরই। কিন্তু এখন বিশ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
আমিনা আমার মনে হয় তোমাকে এতকষ্ট দেয়া তোমাকে ঠিক হবে না। কারাগারের এই কঠিন প্রকোষ্ঠে আমার শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে হতে পারে। তাই আমিনা..... জীবন পথে তোমার সাথে চলতে পারে এমন কাউকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ কর। তোমার সুখের কথা ভেবে তোমার সুখের পথ বেছে নাও। স্বৈরচার জামাল নাসের আমার সাথে আলোচনা করেছে বলেছে আমরা যদি তাকে সহযোগীতার আশ্বাস দিই তবেই আমাদের মুক্তি দিবে। আমি বলে দিয়েছি আল্লাহ চাইলে আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করতে পার। কিন্তু আমার কাছ থেকে এরকম প্রতিশ্রুতি তোমরা পাবেনা। আমিনা এখন ভেবে দেখ আমি তোমাকে সম্পুর্ন স্বাধীন করে দিচ্ছি। আমিনা কথা বলার সাথে সাথে কারার লৌহকপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। আমিনা বাড়ি ফিরে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্বামীকে কবিতার ভাষায় একটি চিঠি লিখেন.... তার একটা অংশ ছিল
নিরন্তর পথ চেয়ে বসে আছি, শুধু তোমার জন্য।না হয় সে পথ হোক জিহাদের
লাল পথ ধরে পাঁয়ে পাঁয়ে যাই চলো। জান্নাতের দ্বারে।
জান যায় যাক, সেই ওয়াদার খাতিরে,
ভয় কি? লজ্জা কি?? কিসের বা বেদনা আমার??
দীর্ঘ বিশ বছর কারাভোগের পর কামাল মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে। আমিনা ও কামাল শুরু করেন তাঁদের প্রতিক্ষিত জীবন। তবে তাঁরা একমূহর্তের জন্য ভুলে যাননি তাদের আন্দোলনের কথা, দায়িত্ববোধের কথা।
এভাবে কিছুদিন চলার পর ১৯৮১ সালের ৬ ই নভেম্বর আমিনার স্বামী কামালকে আবারও বন্দী করেন।বিচারে কামাল কে মিথ্যা অভিযোগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরকার তাঁকে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করেন
১৯৮১ সালের ৬ ই নভেম্বরের ভোর বেলা থেকে আবার ও শুরু হয় আমিনার নিঃসঙ্গ পথ চলা। আর এই নিঃসঙ্গ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে ২০০৭ সালের ৭ই জানুয়ারী। অবসান হয় এক মহিয়সী নারীর সংগ্রামী ও বিপ্লবী জীবন।
স্বামী কামালের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর স্বামীকে উদ্দেশ্য করে লেখা আরেকটি চিঠি..............
এই চিঠি তোমার জন্য। হ্যাঁ আমা তোমার কাছেই এই গভীর রাতে ই লিখছি। মনে আছে আমার কথা?? আমাকে ছেড়ে চলে গেছ, আর ফিরে আসোনি।আমার লেখা এ চিঠি কখনো তুমি দেখবে না, কখনোই তুমি পড়বেনা কখনো তুমি এর উত্তর দিবে না। এতসব জানার পরও আমি লিখছি
জানি তুমি ফিরে আসার জন্য চলে যাওনি। আমার মণ বলছিল তুমি আর ফিরে আসবে না। জালিমের তোমার সাথে আমার শেষ কথা বলার সুযোগ ও দিলনা।
আমি জানি তুমি এখন তোমার সে ঘরের মাঝে বসে আছো, যেখানে থাকার জন্য আমাকে স্বপ্ন দেখাতে। আর নিজে কত সংগ্রাম করতে!
আমার এ চিঠি লেখা সেই জন্য তোমাকে কি এ সফলতার জন্য স্বাগত জানাবোনা??
আমার এই চিঠিটা অশ্রুভেজা বলে যদি না পড়তে পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার কাছে একা একা হেঁটে হেঁটে যাওয়ার জন্য আমাকে ফেলে গেছ, তাই তো একটু কাঁদছি। এ কান্না বিরহ ব্যথায়, এ কান্না তোমাকে পাবার আশায়......
আল্লাহ আমিনা কুতুবকে তুমি কবুল কর। এই আন্দোলনকে তুমি কবুল কর।
আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৯১৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন