ইয়েমেনে সৌদি আরবের আগ্রাসন ও হুথিদের উত্থানের নেপথ্যের কাহিনী।

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৫৬:২৭ রাত



মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম আরব দেশ ইয়েমেন নতুন করে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে! যদিও ইয়েমেন সংকট নতুন কিছু নয়, দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা কয়েক বছর ধরে চলে আসছে কিন্তু সৌদি আরব ন্যক্কারজনকভাবে এ গরীব দেশটিতে হামলার মাধ্যমে চলমান সংকটকে যেমন উস্কে দিয়েছে তেমনি ইয়েমেনকে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ইয়েমেন চলমান সংকটের জন্য যেমন দেশটির জাতিগত বৈচিত্র, নেতৃত্বের ব্যর্থতা যেমন দায়ী তেমনি দেশটির প্রতিবেশী রাষ্ট্র সৌদি আরবের দাদা গিরিও অন্যতম দায়ী। কারণ দেশটির প্রতিষ্ঠকাল থেকেই দেশটির শাসক গোষ্ঠী সৌদি রাজাকে 'কর্তায় ইচ্ছায় কর্ম' মেনে আসছে আর সৌদি আরবও তার নিজ স্বার্থে মাঝে মাঝে ইয়েমেনে সরকার বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর উপর স্থল ও বিমান হামলা করে আসছে। সৌদি আরব দেশটির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে শুধু হস্তক্ষেপ করে ক্ষান্ত নয়, সৌদি আরব ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে ১৯৩০ এর দশকে দেশটির নাজরান, আসির ও জিজান নামে তিনটি প্রদেশ দখল করে নিয়েছে ও সেখান থেকে তেল উত্তোলন করে সৌদি আরব তা বিশ্ব বাজারে বিক্রিও করে আসছে !



ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২.৫ কোটি। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ সুন্নী যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ও বাদবাকি ওহাবি/সালাফিসহ অন্যান্য সেক্টের অনুসারী। সৌদির ওহাবি ইসলামি ভার্সন দেশটির সুন্নীদের একটি অংশকে উগ্রপন্থী হতে সহায়তা করেছে -এই কারণে সৌদি মদদপুষ্ট আল কায়েদা ও আইএস বর্তমানে ইয়েমেনের একটি রাজনৈতিক শক্তি অন্যদিকে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ জাইদি শিয়া ও শতকরা ৫ ভাগ ১২ ইমামি শিয়া এবং বাদ বাকি অন্যান্য জাতি ধর্মের। দেশটি ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ অংশ নামে বিভক্ত ছিল। দেশটির উত্তর অংশে সংখ্যালঘু হুথি সম্প্রদায়ের বসবাস-এরাই মূলত জাইদি শিয়া।



১৯৯০ সালে উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেন ইউনাইটেড ইয়েমেন গঠন করার পরেও উত্তর ইয়েমেনে অর্থাৎ জাইদি শিয়াদের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও স্বৈরশাসক আলি আব্দুল্লাহ সালেহ একজন শিয়া হওয়ার পরেও তার নিজ সম্প্রদায়ের উন্নয়নের কোনো চেষ্টা করেননি। মূলত দেশটির ক্ষমতার কাঠামো ও সৌদি প্রভাবই এজন্য দায়ী। দীর্ঘদিন অবহেলিত, বঞ্চিত, বৈষম্য ও অন্যায় আচরণের শিকার হওয়ার পর অবশেষে উত্তর ইয়েমেনের শিয়া আলেম বদর উদ্দিন আল হুথি নিজেদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সালেহ সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের ডাক দেন। এই বদর উদ্দন আল হুথির নাম অনুসারে ইয়েমেনের জাইদি সম্প্রদায়কে হুথি সম্প্রদায় বলা হয়।



২০০৪ সালে শিয়া আলেম ও সাবেক পার্লামেন্টারিয়ান বদর উদ্দিন আল হুথির ডাকে উত্তর ইয়েমেনে গণআন্দোলন শুরু হলে প্রেসিডেন্ট সালেহ শিয়া হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। তাকে সহায়তা করে সৌদি আরব। হুথিতের উত্থানে সৌদি আরব শঙ্কিত হয়ে পড়ে কারণ উত্তর ইয়েমেনের লাগোয়া সৌদি সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের বসবাস। সৌদিতে শিয়াদের উত্থান যাতে হতে না পারে ও ইয়েমেন যাতে সৌদির হাতছাড়া না হয় সেজন্য হুথি আন্দোলনের শুরু থেকেই সৌদি আরব হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সৌদি ছাড়াও অন্যান্য রাজতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক আরব নেতারা ইয়েমেনে হুথিতের উত্থানে শঙ্কিত। তবে, হুথিতের কারণে নয় বরং তারা শঙ্কিত ইরানের উত্থানে। তাদের আশঙ্কা হুথিতের মাধ্যমে ইরান পুরো ইয়েমেনে প্রভাব বিস্তার করবে। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন, ইসরাইল ও সৌদির নীতির বিরোধী ইরান হুথিদের উত্থানের সমর্থক।



মধ্যপ্রাচ্যের আরব ও নন আরব রাষ্ট্র তুরস্ক ও ইসরাইল আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসাবে ইরানের উত্থানে শঙ্কিত। শঙ্কিত এই কারণে যে, তাদের মার্কিন প্রভু ও ইউরোপিয়রা ইরানের উপর শত অবরোধ আরোপ করেও যেখানে ইরানের উত্থা্ন ঠেকাতে পারছে না, পরমাণু চুক্তির কারণে ইরানের উপর থেকে অবরোধে উঠে গেলে সেই ইরানকে 'বধ করা' দূরে থাক, ইরান অল্প দিনের মধ্যেই পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি পাল্টে দিতে পারে যা ঠেকানোর সাধ্য মধ্যপ্রাচ্যের কোনো রাষ্ট্রের নেই। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সকল সংকটের মূল কারণটা এখানেই, ইরানের সাথে পশ্চিমা বিশ্বশক্তির পরমাণু আলোচনা যত এগিয়ে চলছে সৌদি ও ইসরাইল তত উন্মত্ত হয়ে পড়েছে । আরব নেতারা এখন প্রকাশ্যেই ইরানের উত্থানে নিজেদের ভীতির কথা রাখঢাক না রেখেই প্রকাশ করছেন। শুধু ইরান ইস্যুতে নয় মধ্যপ্রাচ্যের সকল ইস্যুতেই ইসরাইল ও সৌদির স্বার্থ যেমন অভিন্ন তেমন একই সূত্রে গাঁথা। সিরিয়ায় ও ইরাকে ইরানের প্রভাব রোধ করতে সিরিয়াতে জঙ্গী বাহিনী পাঠানো ও আইএস নামক এক ভয়ঙ্কর দানবের সৃষ্টি কারো অজানা নয়। তেমনি বাহরাইনের নিরস্ত্র জনগণের উপর সৌদির সামরিক বাহিনীর নারকীয় হামলাও একই সূত্রে গাঁথা। মধ্যপ্রাচ্যের সকল অঘটনঘটনপটিয়সি'র মূল নায়ক হল সৌদি ও ইসরাইল। আজকে ইসলামের নামে যতসব জঙ্গীদল দেখতে পাওয়া যায় এদের সকলের মা বাপ ও দাদা হল সৌদি, ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সকল জঙ্গীগোষ্ঠীই সৌদির ওহাবি/সালাফি ভার্সনে কঠোরভাবে বিশ্বাসী।



হুথি আন্দোলনের বর্তমানে নেতৃত্বে আছেন বদর উদ্দিন আল হুথির ছেলে আব্দুল মালেক আল হুথি। উল্লেখ্য, বদর উদ্দিন আল হুথির বড় ছেলে হুসেইন আল হুথি সরকারী বাহিনীর হাতেই নিহত হয়। ইয়েমেনে হুথিদের উত্থানের পাশাপাশি হুথিদের নিষ্ক্রিয় করতে সৌদি আরব দেশটিতে ওহাবি/সালাফি ইসলাম রফতানি করে যার নগদ ফল হল ইয়েমেনে আল কায়েদা ও বর্তমান আইএস এর উত্থান। ইয়েমেনের আল কায়েদা ও আইএস হথিদের উত্থানের শুধু বিরোধী নয় বরং শিয়া হুথিদের হত্যা করা তারা ফরজ মনে করে। প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজে শিয়া হুথিদের মসজিদে আল কায়েদা ও আইএস হামলা যেন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার! ইয়েমেন সরকার অভিযোগ করে, হুথিরা দেশটিকে একটি ইসলামী রাষ্ট্র বানাতে চায় কিন্তু হুথিরা তা প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে দেশটিকে ইসলামি রাষ্ট্র বানানো তাদের আদৌ কোনো পরিকল্পনা নেই এবং তা সম্ভবও নয় কারণ হুথিদের চেয়ে সুন্নীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ বরং তাদের লক্ষ্য সরকারী বাহিনীর আক্রমন প্রতিরোধের পাশাপাশি একটি গণতান্ত্রিক ইয়েমেন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা এমনকি মহিলারাও যাতে সরকারের যে কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেণ।

উল্লেখ্য, হুথিতের উপর সুন্নীদের একটি বিরাট অংশের সমর্থন আছে। আর এ কারণেই হুথিরা রাজধানী সানাসহ দেশটির অধিকাংশ প্রদেশ দখল করতে সক্ষম হয়েছে।

যাইহোক, ২০০৪ সালে ইয়েমেনের সরকারী বাহিনী হুথিতের দমনে হামলা পরিচালনা করলে হুথি ও সরকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। হুথি ও সরকারী বাহিনীর সংঘর্ষ শুধু ইয়েমেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং তা ক্রমান্বয়ে সৌদি অভ্যন্তর উত্তর ইয়েমেন সীমান্তবর্তী শিয়া অধ্যুষিত কয়েকটি প্রদেশেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ২০০৯ সালে পুণরায় সরকারী বাহিনী হুথিদের উপর আক্রমণ চালায়। ইয়েমেনের সরকারী বাহিনীর সাথে সৌদির নিরাপত্তা বাহিনীও হুথিদের উপর আক্রমণ করে। যুক্তরাষ্ট্রও হুথিদের ওপর কয়েকদফা বিমান হামলা চালায়। এ পর্যায়ে হুথিরা বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। যাইহোক,দ্রুত পুরো উত্তর ইয়েমেন ও পরে ক্রমান্বয়ে সারা ইয়েমেনে হুথিদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে যার আংশিক ফলাফল পাওয়া যায় ২০১১ সালে আরব বসন্ত নামে আরবদের নতুন এক জাগরণে যা ইয়েমেনেও আঘাত করেছিল ও সেই আরব বসন্তের ঢেউয়ের আঘাতে পতন হয়েছিল স্বৈরাচারী সালেহ সরকারের। আরব বসন্তের আগে আগে প্রেসিডেন্ট সালেহ প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংশোধন করে আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার কিন্তু গণআন্দোলনের কারণে তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তাবায়িত হয়নি। সৌদির ও পারস্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় ভাইস প্রেসিডেন্ট হাদি, অন্যতম ইসলামী পার্টি ইসলাহ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট সালেহ ও তাঁর ৫০০ সহযোগিকে দায়মুক্তি দিতে রাজি হন যা প্রত্যাখ্যান করে হুথি সম্প্রদায়। প্রেসিডেন্ট সালেহ তার ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদ-রাব্বু মানসুর হাদি কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গমন করেন। মানসুর হাদি ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তার শাসনকার্য পরিচালনা করেননি, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন দূরে থাক দেশটিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনও তিনি দিতে পারেননি। তার পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট সালেহ'র দুর্নীতি, দমন ও পীড়ন অব্যহত রাখেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন! হুথিসহ সকল বিরোধী দল প্রেসিডেন্ট হাদির এ নির্বাচন বর্জন করে। ফলে ইয়েমেনের অস্থিরতা আবারও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। অন্যদিকে হুথি বনাম ইসলাহ পার্টি, আল কায়েদা ও আইএস এর সাথে সংঘর্ষ ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পরে পুরো ইয়েমেন জুড়ে !

আলি আব্দুল্লাহ সালেহ ক্ষমতা ছাড়লেও ইয়েমেনের সরকারী বাহিনী ও প্রশাসনে তিনি অনেক বড় একটা স্থান দখল করে আছেন। আছে তাঁর কিছু সমর্থকও। ফলে ইয়েমেনের রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত তিনি একটা ফ্যাক্টর হয়ে আছেন। সম্ভবত এই কারণেই হোক ও সরকারের দমনপীড়ন নীতির কারণেই হোক সরকারী বাহিনীর একটি বড় অংশ বর্তমানে হুথিদের সমর্থন দিচ্ছে। ২০১৪ সালের আগস্টে জ্বালানি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে হুথিরা রাজধানী সানাতে ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল করে। সেপ্টেম্বরে হুথিরা রাজধানী সানা দখল করে এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বাসিন্দাওয়া পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী বাসিন্দাও এর পদত্যাগের ফলে হুথিরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে নতুন সরকার গঠন নিয়ে একটি চুক্তি করেন কিন্তু সরকারী বাহিনীর একটি অংশ ও আল কায়েদা হুথিদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। হুথিরা অভিযোগ করেন প্রেসিডেন্ট হাদি আল কায়েদাকে অস্ত্রে সজ্জিত করে হুথিদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। যাইহোক ঘটনার দ্রুত পটপরিবর্তন হতে থাকে। এরফলে জানুয়ারিতে হুথিরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ আক্রমণ করে এবং প্রেসিডেন্ট হাদি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। হুথিরা পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয় ও প্রেসিডেন্ট হাদিকে গৃহবন্দী করে কিন্তু প্রেসিডেন্ট হাদি কিছুদিন পর দক্ষিণাঞ্চলিয় বন্দর নগরী এডেন এ পালিয়ে যায় এবং সেখানে যেয়ে নিজের পদত্যাগ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং বন্দর নগরী এডেনকে দেশটির সাময়িক রাজধানী ঘোষণা করেন। হুথিরা এবার এডেনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদির নেতৃত্বে পারস্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। হুথিদের এডেন আগমনের খবর পেয়ে প্রেসিডেন্ট হাদি নৌকা যোগে পালিয়ে রিয়াদে পৌছান! অন্যদিকে হুথিদের এডেন আগমনের খবরের সাথে সাথে আইএস হুথিদের দুটি মসজিদে বোমা হামলা করে ১৫২ জন হুথিকে হত্যা করে !

এর পরপরই সৌদি ইয়েমেন সীমান্তে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ বিপুল সেনা মোতায়েন করে। গত ২৫ মার্চ এ রাতে সৌদির নেতৃত্বে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলি ইয়েমেনের তথাকথিত ’বৈধ সরকারকে’ রক্ষায় ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা শুরু করে। এতে নিহত হয়েছে ইয়েমেনের অনেক শিশুসহ অনেক সাধারণ মানুষ। পাল্টা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে হুথিসহ ইয়েমেনের সেনাবাহিনীর একটি অংশ। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদির ১০০ জঙ্গী বিমান, আরব আমিরাতের ৮৫টি জঙ্গী বিমানসহ মিশর ও এবং উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলি সমন্বিত জোট গঠন করেছে। তুরস্কও সৌদিকে সমর্থন ও সহযোগিতা করার কথা ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও স্যাটেলাইট ইমেজ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সৌদিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে, ইয়েমেনে সৌদির হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে ইরান, রাশিয়া ও চীন। ইরান জানিয়েছে, হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সেনবাহিনীর হাতে ৫০০ কি.মি রেঞ্জের মিসাইল আছে যা দিয়ে তারা সৌদির অভ্যন্তরে অনায়াসেই হামলা চালাতে পারবে।

হুথি নেতারা যে মোটেই বিচলিত নন বরং সৌদির সাথে তাদের লড়াই বহুদিনের পুরনো যা আগেই উল্লেখ করেছি। হুথিদের উত্থান তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে, হুথিদের সংগ্রাম স্বৈরাচারী, দুনীর্তিতে অকণ্ঠ নিমজ্জিত ও স্বাধীন দেশে পরাধীন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। হুথিদের সংগ্রাম ফ্রি এন্ড ফেয়ার গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম, হুথিদের সংগ্রাম অধিকার বঞ্চিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে সংগ্রাম। কাজেই হুথিদের নেতৃত্বে যে গণজাগরণ ইয়েমেনে সংঘটিত হয়েছে তা পাপেট সৌদি আরবের নেতৃত্বে হামলায় নির্মূল হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। হুথিতের এ বিপ্লবী চেতনা শুধু হথি জনগণের মধ্যে নয় বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ইয়েমেনে।

যাইহোক, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর তিন জঙ্গী বিমান ইতোমধ্যেই ভূ-পাতিত করেছে হুথি ও সৌদির কিছু সেনাকেও বন্দী করেছে। হুথিরা চায় মার্কিন ও সৌদি প্রভাব মুক্ত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সৌদির এ হামলার মাধ্যমে ইয়েমেনের যুদ্ধ শুধু ইয়েমেনের মাটিতেই সীমিত থাকবে না বরং সৌদি ভূ-খণ্ডে সম্প্রসারিত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন ইতোমধ্যেই বলেছেন, এ যুদ্ধ শুধু ইয়েমেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না আমরা আশা করছি দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে এ যুদ্ধ। ইয়েমেনে হামলার মাধ্যমে মূলত মার্কিন ও ইসরায়েলী ষড়যন্ত্রই বাস্তবায়ন করছে সৌদি আরব। ঠিক সাদ্দামের মত অবস্থা হয় কি না সৌদি রাজতন্ত্রের সেটাই এখন দেখার বিষয়।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৬৩৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

359086
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:২২
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
359145
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৪৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : মূলত কলকাঠি নাড়াচ্ছে ইরান, হুথী নেতাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নীদেশগুলোতে অশান্তি সৃষ্টি করে যাচ্ছে।

আপনার লিখায় এসকল বিষয় উঠে আসেনি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File