জন্ডিস (Jaundice) বা হেপাটাইটিস বি এর কার্যকরী চিকিৎসা
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৩:৩৩:১২ রাত
রক্তে বিলিরুবিন নামক এক ধরনের পিগমেন্টের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। এ রোগে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। জন্ডিস আসলে কোনো রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণমাত্র। জন্ডিসের মাত্রা বেশি হলে হাত-পা, এমনকি শরীরেও হলদেটে ভাব চলে আসতে পারে। এর পাশাপাশি প্রস্রাবের রং হালকা থেকে গাঢ় হলদেটে হয়ে যায়। জন্ডিসে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লিভারের মতো গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গটি আক্রান্ত হয়। আর ক্ষেত্রবিশেষে এটি জীবন নাশকারী অবস্থায় চলে যেতে পারে। তাই এ রোগটি হেলাফেলা করা উচিত নয় মোটেই।
জন্ডিস যেভাবে হয় :-
আগেই যেমনটি বলেছি, রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একটা সময় স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে, যা পরে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সঙ্গে পিত্তনালির মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় যেকোনো অসংগতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় আর দেখা দেয় জন্ডিস।
জন্ডিস ও লিভার :-
লিভারের রোগ জন্ডিসের প্রধান কারণ। আমরা যা কিছুই খাই না কেন, তা লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়। লিভার নানা কারণে রোগাক্রান্ত হতে পারে। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই জন্ডিসের প্রধান কারণ এই হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলো। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় ভাইরাল হেপাটাইটিস। তবে উন্নত দেশগুলোতে অতিরিক্ত মদ্যপান জন্ডিসের অন্যতম কারণ।
এ ছাড়া অটোইমিউন লিভার ডিজিজ এবং বংশগত কারণসহ আরো কিছু বিরল ধরনের লিভার রোগেও জন্ডিস হতে পারে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও অনেক সময় জন্ডিস হয়। তা ছাড়া থ্যালাসেমিয়া ও হিমোগ্লোবিন ই-ডিজিজের মতো যেসব রোগে রক্ত ভেঙে যায় কিংবা পিত্তনালির পাথর বা টিউমার এবং লিভার বা অন্য কোথাও ক্যান্সার হলেও জন্ডিস হতে পারে। তাই জন্ডিস শুধুই লিভারের রোগ_এমনটি ভাবা ঠিক নয়।
লক্ষণ :-
জন্ডিস হলে চোখ হলুদ হয়। তবে হেপাটাইটিস রোগে জন্ডিসের পাশাপাশি ক্ষুধামান্দ্য, অরুচি, বমিভাব, জ্বর জ্বর অনুভূতি কিংবা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, মৃদু বা তীব্র পেটব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। এসব উপসর্গ দেখা দিলে তাই অবশ্যই একজন লিভার বিশেষজ্ঞের পরমর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক শারীরিক লক্ষণ এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিসের তীব্রতা ও কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
চিকিৎসা :-
ভাইরাল হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করারও প্রয়োজন হতে পারে। ভাইরাল হেপাটাইটিস সাধারণত তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে যায়। এ সময় ব্যথার ওষুধ, যেমন_প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ঘুমের ওষুধসহ কোনো অপ্রয়োজনীয় ও কবিরাজি ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, জন্ডিস হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই বাস্তবে সেবন করা ঠিক নয়। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকিটাই বেশি থাকে।
হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস কিছু কিছু ক্ষেত্রে জন্ডিস সেরে যাওয়ার পরও লিভারের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে, যা লিভার পরবর্তী সময়ে লিভারসিরোসিস আর, এমনকি লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগও তৈরি করতে পারে। তাই এ দুটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দীর্ঘমেয়াদি লিভার বিশেষজ্ঞের ফলোআপে থাকত হয় এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নিতে হয়।
হোমিওপ্যাথিতে জন্ডিসসহ সকল লিভার রোগের অনেক উন্নত এবং সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে যার ফলাফল মাজিকের মত মনে হয়। কারণ যেখানে এ সকল রোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘ কাল অ্যালোপ্যাথি ঔষধ সেবন করতে হয় সেখানে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ততটা সময় লাগে না। সবচেয়ে সাফল্যের বিষয় হলো এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না। তবে আপনাকে অবশ্যই ভালো কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের দারস্থ হতে হবে।
হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় :-
হেপাটাইটিস এ ও ই খাদ্য-পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। আর বি সি এবং ডি দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও প্রচুর পানি খেতে হবে। শরীরে রক্ত নেওয়ার দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিন। ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরি।
হেপাটাইটিস বি ও এ-এর টিকা দেশে পাওয়া যায়। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি'র টিকা প্রত্যেকেরই নেওয়া উচিত। যাঁরা সেলুনে শেভ করেন, খেয়াল রাখবেন যেন আগে ব্যবহার করা ব্লেড বা ক্ষুর আবারও ব্যবহার করা না হয়। জন্ডিস অনেক ক্ষেত্রেই এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
৪৬০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন