আরব নারীদের যৌনজীবন

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:৪৯:২৫ দুপুর



উপকূলীয় অঞ্চলের, বিশেষ করে মিশরের পুরুষরা ভুল জায়গায় সেক্স করতে চায়- এক মিশরীয় নারী লেখিকা শিরীন এল ফেকিকে কানে কানে এমনই বলেছেন।রাজনৈতিক দিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে আরব বিশ্বে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। কিন্তু যৌনতা সম্পর্কে তাদের দৃষ্টি ভঙ্গি কতটুকু পাল্টেছে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন পুরষ্কার বিজয়ী সাংবাদিক ড. শিরীন এল ফেকি। এ নিয়ে তিনি সেক্স এন্ড সিটাডেল soudi girl শিরোনামের একটি বই লিখেছেন। বইটি মূলত সাক্ষাৎকার, পরিসংখ্যান, জরিপ, সাংবাদিকতা এবং ব্যক্তি স্মৃতিচারনের মিশেল। শিরীন এল ফেকি পাশ্চাত্যে বড় হলেও তাঁর মা মিসরীয় এবং বাবা ওয়েলসের। এবং ধর্মের দিক থেকে তিনি মুসলিম। বইটির অনেক অধ্যায়ে লেখিকার দাদীর উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। তিনি মজার মজার প্রবচন বলে যান বিভিন্ন প্রসঙ্গে। যেমন, সমকামিতা অধ্যায়ের শুরুতে বলেছেন- যতক্ষণ না এটা আমার সাথে হচ্ছে, ততক্ষন আমার বলার কিছু নেই। ঝরঝরে বলার ভঙ্গিমায় লেখিকা আরবের সামজিক এবং যৌন-বিকাশের সম্পর্ক ঘটাতে চেয়েছেন এভাবেঃ মিশরের সমাজে এমন আমূল পরিবর্তন ছুঁয়ে গেছে আজিজার শোবার ঘরে। যদিও মাটিতে কোন কাঁপন লাগে না যখন সে এবং তার স্বামী পরস্পরের কাছে আসে। আরব সমাজকে ড. এল ফেকি ভিতর থেকে, বাইরে থেকে দেখতে সক্ষম হয়েছেন। বলা যায়, একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে দেখেছেন। বেশীরভাগ আরব দেশে বিবাহ বহির্ভূত সেক্স নিষিদ্ধ। এমন ফতোয়াও দেয়া হয়েছে যে, বিবাহিত দম্পতি নগ্ন হয়ে সেক্স করতে পারবে না। ২০০৯ সালে, এক সৌদি নাগরিক এক স্যাটেলাইট টিভিতে নিজের যৌন জীবন নিয়ে কথা বলেছিলেন। এর ফলে, তাকে ১ হাজার দোররা এবং ৫ বছরের জেল দেয়া হয়েছিল। অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, সে পাপ কাজ প্রচার করেছে। এই ধরনের দৃষ্টি ভঙ্গি ১৭ শতকের মৌলবাদ খ্রিস্টানদের মধ্যে দেখা যেতো। সেখানকার প্রচলিত প্রথা অনুসারে, সতীত্ব যেন পুরুষদের থেকে নারীদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। আর বিয়ে ব্যাপারটি ব্যক্তিগতও নয়, সমানও নয়। ওখানে সতীত্ব ব্যাপারটি এমন তীব্র যে, বিয়ের প্রথম রাতের পর সতীত্বের প্রমান-স্বরূপ রক্তাক্ত বেড শিট সবাইকে দেখাতে হয়। অনেক কণে মনে করেন, যদি তারা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে না চায় তবে তাদের স্বামীরা তাদের মারধর করতে পারে। এটা স্বামীদের অধিকার। পুলিশও অনেকটা এমন মতামত দিয়েছে। ভার্সিটি পড়ুয়ায় এক কম বয়সী মেয়ে এক ফেকিকে বলেছে, সে কেন খুব গোপনে বিয়ে করেছিল। তার ভাষায়- এটা যদি আমার মা বাবা জানত, তবে আমাকে মেরে ফেলত। বিয়ে পূর্ব এমন সম্পর্কের কারণে এমন ঘটনা অনেক পরিবারে হরহামেশাই ঘটে। এমন কি আরব বিশ্বের নামকরা এক যৌন থেরাপিস্ট বিয়ে পূর্ব সেক্সের কট্টর বিরোধী। স্ত্রীদের প্রতি তার উপদেশ হল, ঘরের বাইরে স্বামীরা অনেক প্ররোচনায় থাকে। তাকে সন্তুষ্ট করতে আপনাদের সবসময় রাজি থাকতে হবে। সে যেন কোন কারন না পায় জাহান্নামের আগুনের কাছে যেতে। মিসরীয় পুলিশ নিয়মিত গে-দের গ্রেপ্তার করে। তাদের ইলেকট্রিক শক এবং নির্মম বেত্রাঘাত করা হয়। প্রায় ৮০ শতাংশ মিসরীয় নারীদের যৌনাঙ্গ ছেদ করা হয়। এ ক্ষেত্রে, তাদের ভগাঙ্কুর কেটে ফেলে দেয়া হয়। যৌন লালসা কমাতে মেয়েদের খাতনার এই ব্যবস্থা মিশরে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এল ফেকি অবৈধ সন্তানের খোঁজে শত এতিমখানা ঘুরে বেরিয়েছেন। তিনি গর্ভপাতের এক বিচিত্র পদ্ধতির সন্ধান পান। গর্ভপাত ঘটাতে মেয়েদের ইনজেকশন দিয়ে পিঠে এবং পেটে লাথি মারা হয়, যতক্ষণ না গর্ভপাত হয়। এসব মেয়েদের সাথে দালালদের সাক্ষাত ঘটে। এইসব দালালরা তাদের জন্য গ্রীষ্মকালীন বিয়ের আয়োজন করে। এইসব গ্রীষ্মকালীন বিয়ে পর্যটকরা স্বল্প সময়ের জন্য করে থাকে। যাদের চাহিদা থাকে আইনের মধ্যে থেকে অল্প বয়সী মেয়ের সাথে যৌনাচার করা। আরব নারীরা তাদের যৌন অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চান না। যদিও সব নির্যাতন তারা মুখ বুঝে সহ্য করেন। পুরুষ সঙ্গী দ্বারা নির্যাতন সেখানে মহামারীর মতো। বেশির ভাগ বিবাহিত নারীরা মেয়েদের খাতনার বিপক্ষে। ৯৮% মিশরীয় নারী-পুরুষ সিঙ্গেল মা সমর্থন করেন না। যৌন সম্পর্কের ভিত্তিতে এল ফেকি উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিভাজণের চেষ্টা করেছেন। যদিও তাঁর মূল দৃষ্টি নিবন্ধিত থেকেছে মিশরের উপর। তিউনিসিয়াতে ইসলাম বিরোধী স্বৈরতন্ত্র গর্ভপাতকে বৈধ করেছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল বৈরুত, লেসবিয়ান এবং হিজরাদের জন্য। এল ফেকি এমন নারীদের সাথেও কথা বলেছেন, যারা অনেকটা খোলামেলাভাবে নিজেদের মত দিয়েছেন। ভরসা হয়তো তারাই। ধীরে হলেও পরিবর্তনের একটা সূক্ষ্ম আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সেই ৩০০ বছর আগে পাশ্চাত্য সমাজে নারীদের মতামত মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যা সম্ভব হয়েছে সে সময়ে সংগঠিত নারী স্বাধীনতার কল্যাণে, যৌনতার দিক থেকে এবং সামাজিকভাবে। যখন বারাক ওবামা সিমন পেরেস কে বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের মূল বাধা কি? উত্তরে সিমন পেরেস বলেছিলেন, সেখানকার স্বামীরা! সেক্স এন্ড সিটাডেল বলেছে, উল্টো কথা! ঐ রাজনৈতিক পরিবর্তনই যৌনতার ক্ষেত্রে সেখানে স্বাধীনতা নিয়ে আসবে। আরব দেশগুলোতে মধ্যযুগ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে যৌন স্বাধীনতার ক্ষেত্রে স্বর্ণযুগ বলা যায়। যার প্রমান পাওয়া যায়, সেখানকার ক্লাসিক সাহিত্যগুলোতে। তবে, যৌন স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ধর্ম অবশ্যই বাধা। এল ফেকি বলেছেন, ইসলাম নয়, মূল বাধা মুসলিম। তিনি জোর দিয়েছেন, মাস্টারবেশন থেকে শুরু করে হাইমেন পর্দা পুনর্গঠন বা এনাল সেক্সের প্রতি ধর্ম-যাজকদের মতামতের উপর। এখন পর্যন্ত সেখানে কোরআন এবং রসুলের (দঃ) কথা গুলো অকাট্য হিসেবে ধরা হয়। আর পুরুষ ধর্ম-যাজক কর্তৃক এসব বানীর ব্যাখ্যা যৌন সম্পর্কের নিয়ন্ত্রক। ফলে, ব্যক্তিগত যৌন স্বাধীনতা পাওয়া এখানে অনেক কঠিন। এটা যে শুধুমাত্র ইসলামের সমস্যা তা নয়। কারন, এর মূলে আছে মৌলবাদীদের অপব্যাখ্যা। প্রকৃতপক্ষে, এটি পাশ্চাত্য সমাজের ঐ সময়ের প্রতিরূপ, যখন জাগরণ ঘটেনি ইউরোপীয় সমাজে। এই সমাজ ব্যবস্থায় যৌনতা ধর্মের মত ব্যক্তিগত ব্যাপার ছিল না, ছিল সাধারণ ব্যাপার। পাশ্চাত্য সমাজের অতীত নিশ্চয়ই আরব সমাজকে পথ দেখাতে যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটা পরিস্কার যে, সচেতনতার স্বাধীনতাই ব্যক্তি জীবণের পরিমণ্ডল গঠনের পূর্বশর্ত। কতদিনে বা কত দ্রুত বিষয়গুলো পরিবর্তিত হবে সে বিষয়ে এক একজনের এক এক ধরনের মতামত থাকতে পারে। তবে লেখিকা শিরীন এল ফেকি-র এই বইয়ে যেসব নারী কথা বলেছেন, তাদের অনেকেই হতাশ। একজন বলেছেন, এখন নয়, হতে পারে ২০০ বছর পরে। তবে আশা করা যাক, বিষয়গুলোর পরিবর্তন একটু দ্রুতই হবে।

বিষয়: বিবিধ

৪৯৫৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358710
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:০৩
হতভাগা লিখেছেন :
তবে, যৌন স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ধর্ম অবশ্যই বাধা। এল ফেকি বলেছেন, ইসলাম নয়, মূল বাধা মুসলিম।


০ ইসলাম যেটা একটা পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান আল্লাহর তরফ থেকে , সেই ইসলাম কি যৌন স্বাধীনতা তথা অশ্লীলতার পক্ষে হতে পারে ?
358716
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৮
তট রেখা লিখেছেন : নিজেকে মুসলিম বলে আবার যৌন স্বাধীনতার পক্ষে কিভাবে কথা বলা সম্ভব???
358738
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:০৮
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আরব নারীদের যৌন জীবন সম্পর্কে লিখতে হলে এমন অশ্লীল ছবি দিয়ে পোস্ট দিতে হবে নাকি!!!!
358758
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:৪৬
মাজহারুল ইসলাম টিটু লিখেছেন : যৌনতা নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন ভাল কথা তাই বলে এতো সুন্দর ছবি!!!!!!!!!
358762
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২:৪২
জীবরাইলের ডানা লিখেছেন : এটা আরবিয়ান নারী মডেলের ছবি ভাই পাঠক।আমি প্রত্যেক পোষ্টে ছবি এ্যাড করি
358788
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৩৪
শরীফুল ইসলাম শরীফ লিখেছেন : আপনি লেখা কপি করেছেন! কিন্তু প্রকৃত সোর্স কিংবা লেখককে ক্রেডিট দেননি.....


এখানে ক্লিক করুন।
358800
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:১০
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ফলে, ব্যক্তিগত যৌন স্বাধীনতা পাওয়া এখানে অনেক কঠিন। এটা যে শুধুমাত্র ইসলামের সমস্যা তা নয়। কারন, এর মূলে আছে মৌলবাদীদের অপব্যাখ্যা। ...

তা ইসলামের খাটি ব্যাখ্যা কি এক্ষেত্রে ? আপনি তসলিমা নাসরিনের থেকে জেনে নিয়ে আমাদেরকে জানান। এই লেখিকা তসলিমার হারিয়ে যাওয়া বোন। এখানে ব্লগাররা আবাল না। আরব দেশের কিছু উপজাতিদের মধ্যে উদ্ভট কিছু নিয়ম আছে। অল্প কিছু ব্যক্তির ভেতরও কখনও সমস্যা পাওয়া গেছে। আর সেই ব্যতিক্রমী বিষয়কে এখানে সকলের কথা/অভিব্যক্তি হিসেবে লেখিকা প্রচার করেছে। এরা পিওর আবাল লেখক,লেখিকা।
358802
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:১৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আর এখানে উন্নয়নের একটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে যে ব্যভিচারকে অনুমোদন দিলে উন্নয়ন হবে। এটাকে উন্নতি,স্বাধীনতা বলা হয়েছে। আরবে মধ্যযুগ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়ে নাকি নারীরা এ বিষয়ে বেশ কথা টথাও বলতে পারত। .....এই লেখিকাকে জুতায় গু মাখিয়ে পেটানো দরকার। ইতিহাসও জানেনা। আর ইউরোপে কবে নারীরা স্বাধীন ছিলো !!!...আর তাদের ভাষায় বর্বর আইন প্রয়োগ হওয়াতে গত বছর সৌদী আরবে মাত্র ২টা ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। যেসব ইউরোপীয় ও আমেরিকান দেশে ব্যভিচার বৈধ,,সেখানে প্রতি মিনিটে ৩/৪টা ধর্ষন হয় ক্যান ???

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File