পর্নগ্রাফি যা যিনার বিস্তার ঘটাচ্ছে, পরিণাম হলো ঈমান ও সামাজিক অবক্ষয়। এর থেকে বাচাঁর উপায় ।
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৬:৩০:৫৮ সকাল
বর্তমানে পর্ণগ্রাফির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে কম্পিউটার , মোবাইল ও ইন্টারনেটের কারণে । পথে ঘাটে অবাধে প্রকাশ্যে এডাল্ট সিডি বিক্রয় হচ্ছে । ঘরে ঘরে কম্পিউটার ও মোবাইল তা দেখা সহজ করে দিয়েছে । আর ইন্টারনেট থাকলে তো কথাই নেই । বর্তমান যুব সমাজের নিকট ১৮+ ছবি দেখা একটি স্বাভাবিক ও নিয়মিত ব্যাপার । অনেকে এটার প্রতি চরম আসক্ত হয়ে গেছে । এমনও উদাহরণ আছে, যারা নামাজ রোজা করেও এর নেশা থেকে মুক্ত হতে পারছেনা । অথচ এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ, তা মানুষ উপলব্ধি করেনা ।
এটা শয়তানের একটা মারাত্নক ও অব্যার্থ অস্ত্র । শয়তান এই অস্ত্র দ্বারা মানুষের মনে খুব সূক্ষভাবে আস্তে আস্তে স্রষ্টা বিষয়ে সন্দেহ তৈরী করে এবং মানুষের ঈমান ছিনিয়ে নেয় ।তার মনে কুমন্ত্রণা দেয় এসব করার জন্য ও দেখার জন্য । অবোধ মানুষ টেরও পায় না সে তার এই নেশার কারণে দুনিয়া ও আখেরাত সবই হারায় । মানুষ ঈমান হারা হতে তৈরী হয়ে যায় যেনা করার বিনিময়ে । এর ভয়াবহ নেশায় বুদ হয়ে সব কিছূ হারায় । খুব সূক্ষভাবে মনের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয় যে খোদার কাছে মাফ চেয়ে নিলে হবে তারপরে মনে গেথে দেয় খোদা বলে কিছু নেই , মজা লইয়া লও । এভাবেই সে ঈমান হারা হয়ে যায় ।
কুরআন ও হাদীস অনুসারে যেনার পরিণতিঃ
যিনা – ব্যাভিচার একটি মারাত্নক গুনাহ ও সামাজিক ব্যাধি । রাসূলে করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘ আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করার পর নিষিদ্ধ নারীর সাথে সহবাস করার মতো বড় গুনাহ আর নেই ।’ (আহমদ)
চিন্তা করে দেখেন , শিরক হলো এমন গুনাহ যা আল্লাহ মাফ করবেন না বলে কুরআনে বলে দিয়েছেন । তারপরের বড় গুনাহ হলো যেনা ।
হাদিসে আরো আছে, ‘যে ব্যাক্তি কোন নিষিদ্ধ নারীকে স্পর্শ করবে, কিয়ামতের দিন তার হাত ঘাড়ের সাথে যুক্ত থাকবে । আর কেউ যদি কোন নিষিদ্ধ নারীকে চুমু দেয় কিয়ামতের দিন তার ঠোট কাঁচি দিয়ে কাটা হবে । ‘
সহবাস ছাড়াও বিভিন্নভাবে যিনা হতে পারে । এক হাদিসে আছে, ‘কোনো বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের যিনা, অশ্লীল কথা বলা জিহ্বার যিনা, স্পর্শ করা হাতের যিনা, ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেটে যাওয়া পায়ের যিনা, খারাপ কথা শোনা কানের যিনা আর যিনার কল্পণা করা মনের যিনা । (বুখারী)
বর্তমান এই খারাপ সময়ে কয়জনে এরূপ যেনা থেকে মুক্ত থাকতে পারছে ? যেনা করতে না চাইলেও চোখের সামনে দেখে মনের মধ্যে কুচিন্তা এসে যায় ।
আল্লাহতা’য়ালা যিনাকে হারাম ঘোষণা করে বলেন, ‘তোমরা যিনার কাছেও যাবে না । কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং খারাপ কাজ । (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৩২)
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ” যে ব্যাক্তি যেনা করে কিংবা মদ পান করে, আল্লাহ তার কাছ থেকে ঈমান ছিনিয়ে নেন, যে ভাবে কোন ব্যাক্তি তার জামা মাথার উপর দিয়ে খুলে ফেলে । (হাকেম)
এ হাদিসের মর্ম কথা হলো, যেনা করার পরিণতি হলো ঈমান হারা হওয়া । এটা এমন একটা জঘন্য পাপ যে, মানুষ যখন তা করে আল্লাহ মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিষ ঈমানকেই নিয়ে নেন ।
যিনা থেকে বাচার উপায় কিঃ
যিনা একটি মারাত্নক ও ভয়াবহ রোগ , যা নেশা হয়ে গেলে তার থেকে মুক্ত পাওয়া খুব কঠিন । কিন্তু এর থেকে মুক্ত না হলে পরিণতিও হয় ভয়াবহ । ব্যাক্তিগত ও সমাজ জীবনে অশান্তি, নৈতিকতার স্খলন, ব্যাভিচার বৃদ্ধি , যৈান জীবন ধ্বংস এবং বৈবাহিক সম্পর্কের অবনতি হয়।
এর থেকে বেচে থাকার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকতে হবে । সব সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে । বর্তমান কঠিন সময়ে এর থেকে বাচা খুবই কঠিন ।
প্রথমতঃ আল্লাহর কাছে খাস দিলে তওবা করতে হবে এবং কান্নাকটি করে মাফ চাইতে হবে । মনে কঠিন সংকল্প করতে হবে এবং সব সময় এই সংকল্প নতুন করে যাচাই করতে হবে ও আওড়াতে হবে ।
দ্বিতীয়তঃ পাচ ওয়াক্ত নামাজ সহিহ সুন্দর করে জামাতে পড়ার চেষ্টা করতে হবে এবং নামাযের পাবন্দী করতে হবে । নামায নিয়মিত হলে তা মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে ।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
ইন্নাস সালাতা তানহা আনিল ফাহশা-ই ওয়াল মুনকার ।
‘নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে ।’ অর্থাৎ নামাযের হক আদায় করে ব্যাক্তিগত ও সমাজ জীবনে নামায প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে
সমাজ থেকে যাবতীয় অশ্লীল ও অন্যায় কাজ দূর করার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করতে হবে ।
তৃতীয়তঃ সব সময় আল্লাহ যিকিরে থাকতে হবে । মনে মনে সব সময় আল্লাহকে স্মরণ রাখতে হবে । যখন যে অবস্হায় থাকা হয় না কেন মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ সব কিছু দেখেছেন এবং তিনি হাশরের ময়দানে সবকিছুর হিসাব নিবেন । এবং পাপের জন্য কঠিন শাস্তি দিবেন ।
চতুর্থতঃ সময় সুযোগ করে তাবলীগে সময় দিলে মানুষের মনের অনেক পরিবর্তন হয় এবং দিলের মধ্যে নূর পয়দা হয় । নিয়মিত প্রতিমাসে তাবলীগে সময় দিলে মানুষ খারাপ কাজ ত্যাগ করে ধার্মিক মানুষে পরিণত হয় । সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ মানুষের মধ্যে ঈমান বৃদ্ধি করে । তাই মাঝে মাঝে সকলেরই তিনদিন, দশদিন , চিল্লা ও তিন চিল্লা দেওয়া উচিত ।
পন্চমতঃ সমাজ থেকে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ দূর করার জন্য সচেষ্ট থাকা উচিত । এটা একটা সংক্রামক রোগ । একজনের কাছ থেকে আরেকজনে ছাড়ায় । তাই শুধু একা এর থেকে বেচে থাকা যাবেনা । তা দূরীকরণে সচেষ্ট হতে হবে ।
বিষয়: বিবিধ
১২৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন