ইসলামে সমকামিতার বিধান
লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ২৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৫:৫১:৫২ সকাল
লেখকঃইমাম আয যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ)
কুরআনের বিভিন্ন স্থানে হযরত লুত(আ) এর কওমের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
যেমন- মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা হুদে বলেছেনঃ “এরপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হল তখন আমি তাদের দেশটির উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ ওপরে ওঠালাম এবং তার উপর পাকা পাথর( যা আগুনে পুড়ে ইটের মত হয়ে গেল) অবিরাম ধারায় নিক্ষেপ করলাম। পাথরগুলো ছিল সুচিহ্নিত। এগুলো তোমার প্রভূর ভাণ্ডারে ছিল।” (অর্থাৎ তাঁর সে কোষাগারে হাত দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত আর কারো ছিল না।)
যা(অপরাধী ব্যক্তিদের নাম-ধামসহ) তোমার মালিকের কাছে চিহ্নিত ছিলো, আর (গযবের) এ স্থান তো এ যালেমদের কাছ থেকে দূরেও নয়! [সূরা হুদঃ ৮২-৮৩]
অর্থাৎ এ উম্মতের লোকেরাও যদি অনুরূপ ঘৃণ্য কাজ করে তাহলে তাদের যে শোচনীয় পরিণতি হয়েছিল তা তাদেরও হবে।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ওপর যে বস্তুটির সবচেয়ে বেশি আশংকা করি, তা হচ্ছে লুত এর জাতির জঘন্য কাজ। অতঃপর তিনি এ কাজে লিপ্তদেরকে তিনবার নিম্নরূপ অভিশাপ দেনঃ “লুতের জাতির কাজ যে করবে তার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ “যাদেরকে তোমরা লূত সম্প্রদায়ের কাজে লিপ্ত পাবে, তাদের উভয়কেই হত্যা করবে।” (আবু দাউদ, তিরিমিযি ও ইবনে মাজাহ)
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ “এলাকার সবচেয়ে উঁচু বাড়ির ছাদের উপর থেকে তাদেরকে ফেলে দিতে হবে এবং ফেলে দেয়ার সাথে সাথে তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করতে হবে, যেমন হযরত লূতের জাতির উপর নিক্ষেপ করা হয়েছিল”। মুসলমানদের মধ্যে এসব ব্যাপারে ইজমা অর্থাৎ সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে, সমকাম একটা কবীরা গুনাহ এবং এটা আল্লাহ কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “পৃথিবীতে তোমরা কেবল পুরুষদের কাছেই আগমন কর এবং তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালক যে জোড়া সৃষ্টি করেছেন তা পরিত্যাগ কর? প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমা অতিক্রমকারী”। (অর্থাৎ হালালের সীমা অতিক্রম করে হারামের সীমায় প্রবেশকারী)। [সুরা আশ শুয়ারাঃ১৬৫-১৬৬]
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হযরত লূত(আ) সম্পর্কে বলেনঃ ” আর আমি তাকে সে জনপদ থেকে উদ্ধার করেছি, যে জনপদ ছিল অশ্লীল কাজে লিপ্ত। এ জনপদবাসীরা ছিল দুরাচারী পাপিষ্ঠ।” [সূরা আল আম্বিয়া-৭৪]
এদের এ জনপদের নাম ছিল সাদূম। সেখানকার অধিবাসীরা যেসব অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল কুরআনে এর বর্ণনা উল্লেখিত হয়েছে। তারা পুরুষদের মলদ্বারে সংগম করত এবং প্রকাশ্য সমাবেশে নানারকম পাপাচারে লিপ্ত ছিল। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যৌন উত্তেজনার সাথে নারীদের পারস্পরিক আলিঙ্গনও ব্যভিচারের শামিল।
তাবরানী ও বাইহাকীতে বর্ণিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন; “চার ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর গযব ও আক্রোশের আওতায় থাকেঃ মহিলাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা গ্রহণকারী পুরুষ, পুরুষদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা গ্রহণকারী মহিলা, জীবজন্তুর সাথে সংগমকারী এবং সমকামী।”
অন্য এক হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, চার শ্রেণীর লোক সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর ক্রোধে অতিবাহিত করে। এরা হল মহিলা বেশধারী পুরুষ, পুরুষ বেশধারী মহিলা, পশু মৈথুনকারী ও পুং মৈথুনকারী।” আরো বর্ণিত রয়েছে, “যখন কোন পুরুষ অপর কোন পুরুষে উপগত হয়, তখন আল্লাহর গযবের ভয়ে আল্লাহর আরশ কাঁপতে থাকে এবং আকাশ পৃথিবীর উপর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। ফেরেশতারা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হওয়া পর্যন্ত আকাশকে তার প্রান্তসীমায় ধরে রাখে এবং সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করতে থাকে।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ সাত শ্রেণীর লোকের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেন,কিয়ামতের দিন এদের দিকে তাকাবেন না এবং এদেরকে জাহান্নামে প্রবেশের আদেশ দিবেনঃ
সমকামীদের,
জীবজন্তুর সাথে সংগমকারী,
কোন মহিলা ও তার কন্যাকে একসাথে বিবাহকারী,
আপন বোনের সাথে ব্যভিচারী,
কন্যার সাথে ব্যভিচারকারী এবং হস্তমৈথুনকারী ।
তবে এরা যদি তাওবা করে তাহলে তারা সবাই হয়ত ক্ষমা পেতে পারে।”
আরো বর্ণিত আছে, “কিয়ামতের দিন এক শ্রেণীর লোক এমনভাবে উঠবে, তাদের হাত ব্যভিচারের ফলে অন্তঃসত্তা থাকবে। যারা দুনিয়ার জীবনে হস্তমৈথুন করত।”
অন্য এক হাদীসে আরো উল্লেখিত রয়েছে, “দাবা ও পাশা জাতীয় খেলা, কবুতরের লড়াই, কুকুরের লড়াই, মেষ লড়াই, মোরগ লড়াই, পোশাক না নিয়ে গোসলখানায় প্রবেশ এবং মাপে কম দেয়া- এসব লূত আলাইহিস সালাম এর জাতির কাজ। এসব কাজে যারা জড়িত থাকবে, তাদের জন্য কঠোর শাস্তি অবধারিত।”
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “কোন পুং মৈথুনকারী বিনা তাওবায় মারা গেলে সে কবরে শূকরের আকৃতি ধারণ করবে”।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন পুরুষ বা নারীর মলদ্বারে সংগম করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দিকে তাকাবেন না।” (তিরমিযি, নাসায়ী)
মূলঃ কবীরা গুনাহ
ইমাম আয যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ)
বিষয়: বিবিধ
১২৫৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার সুন্দর লেখায় মন্তব্য অবশ্বই সুন্দর হবে কিন্তু অনুরোধ অপবিাইদান রেন্ডিটাকে ব্লগ করেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন