হিমুর রূপালী রাত্রি...

লিখেছেন লিখেছেন আরোহি হাছান ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:১৬:১৮ রাত

-সুন্দর হবেনা কি বলিস?তোর বিয়ের কার্ড আমি নিজে বেছে কিনেছি।

-তামান্না কি আশপাশে আছে খালা?

-হ্যা আছে এখন তার সাথে আড্ডা দিতে যাবিনা, বিয়ের আগে কনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হওয়া ঠিক না।

-আমি শুধু একটা কথা বলে চলে যাবো।

-কি বলবি?

-সেটাতো খালা তোমাকে বলা যাবেনা।

কৌতূহলে খালার চোঁখ চকচক করছে। কি কথাটা বলা হবে তা জানার জন্যে খালার মনে টেনশন তৈরি হচ্ছে।

টেনশন তৈরি হচ্ছে বলেই তিনি বেছে আনন্দ পাচ্ছেন।

খালার হাত থেকে বিয়ের কার্ড নিলাম। প্রথম কার্ডাটা দিলাম তামান্নাকে।

আমার বিয়ের নিমন্ত্রণ আমি আমার হবু স্ত্রী কে কি করবোনা? সেটাই স্বাভাবিক।

তামান্না গম্ভীর গলায় বললো থ্যাংকস।

আমি বললাম-তুমি কেমন আছ তামান্না?

তামান্না বললো ভালো।

আমি বললাম তোমার ঘুম হচ্ছেতো?

তামান্না কিছু বললো না।তার চোঁখে রাগ নেই। দুঃখবোধ নেই। অভিমান নেই।

যেন সে পাথরের একটা মেয়ে।

আমি দাওয়াতের কার্ড নিয়ে রওনা হলাম কার্ড গুলি বিলি করতে হবে।

কার্ড কাকে কাকে দিবো ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি।

-ভিক্ষুক মেছকান্দার..

-ছুক্কু..

-দেশ প্রেমীক জোবেদ আলি..

-রমনা থানার অসি..

-ইয়াকুব সাহেব..

আচ্ছা রূপাকে একটা কার্ড দেব না-কি?

অবশই দেব। সবার শেষে দেব। রূপাকে কার্ড দেবার পর যে কার্ডগুলি বাঁচবে সেগুলো কুচিকুচি করে ছিড়ে ফেলতে হবে।

এক এক করে সবাইকে আমার বিয়ের কার্ড দেয়া হলো, বাকি রইলো শুধু রূপা।

রূপার কাছে যেতে ভয় ভয় করছে। সে কি বলবে কে জানে।

রূপা কার্ড হাতে নিয়ে হাসলো।

-রূপা হাসতে হাসতে বললো কার্ডটা খুব সুন্দর তুমি কিনেছ?

-না আমার খালা কিনেছেন...

-ধবধবে সাদা কার্ডে রূপালি লেখা। জ্যোৎস্না জ্যোৎস্না ভাব। তোমার বিয়েওতো দেখি পূর্ণিমা রাতে।

-ঐদিন কি পূর্ণিমা?

-আজকাল দেখি জ্যোৎস্নার হিসাবও রাখোনা?

-না।

-আমি রাখি তোমার বিয়ে পূর্ণিমা রাতেই হচ্ছে।

-ওউ তাই, রূপা তুমি বিয়েতে যাচ্ছো তো?

রূপা আবারও হাসলো। এম্নিতে সে খুব কম হাসে।ছোটবেলায় কেউ বোধহয় তাকে বলেছিলো কম হাসতে। তাকে বিষণ্ণ অবস্থায় দেখতে ভাল লাগে। ব্যাপার টা তার মাথায় ঢুকে গেছে সে জন্যেই সারাক্ষণ বিষণ্ণ থাকে। আজ হাসছে এরমধ্য তিনবার হাসলো।

-হাসছ কেন রূপা?

-তুমি বদলে যাচ্ছ এই জন্যে হাসছি। মানুষকে আগে তুমি ধোঁকা দিতেনা এখন দিচ্ছ।

-কাকে ধোঁকা দিচ্ছি?

-তামান্না নামের মেয়েটাকে দিচ্ছ।বিয়ের রাতে সবাই উপস্থিত হবে শুধু তুমি হবেনা।তুমি জ্যোৎস্না দেখতে জংগলে চলে যাবে।মেয়েটার কি হবে ভেবেছ কখনো?

-এমন যদি আমি করি তামান্নার কিছুই হবেনা।তামান্নার জন্যে আরেকজন ষ্ট্যান্ডবাই বর আছে। ফাতেমা খালার ম্যানেজার বুলবুল সাহেব। তার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাবে।বাকি জীবন দুইজন সুখেই কাটাবে।

-ওরা দুইজন বিয়ে করবে ভাল কথা মাঝখানে তুমি জড়ালে কেন?

-আমি না জড়ালে বিয়েটা হতনা।

-তোমার সমস্যা কি জান হিমু? তোমার সমস্যা হলো নিজেকে তুমি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে কর।

-সেটা কি দোষের? সামান্য যে বালিকণা সেও নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।

-বালিকণা এই কথা কি তোমাকে বলে গেছে?

-হ্যা গেছে।

রূপা আবারও হাসলো এই নিয়ে সে হাসলো চারবার, পঞ্চমবার হাসলেই ম্যাজিক নাম্বার পূর্ণ হবে। তখন আমাকেই চলে যেতে হবে।

-রূপা?

-বল শুনছি...

-অনেকদিন জ্যোৎস্না দেখা হয়না গাজীপুরের জংগলে আমার সঙ্গে জ্যোৎস্না দেখবে?

রূপা পঞ্চমবারের মতো হেসে উঠলো...

-বললো না।

আমি তার কাছ থেকে চলে আসলাম জ্যোৎস্না দেখতে রওনা হবার পথে তামান্নার সঙ্গে কথা বললাম।

তামান্ন আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে...

-আপনি আসছেন না তাইনা?

-হ্যা, তুমি যা ছেয়েছিলে তাই হচ্ছে।

-শুনুন আমি মত বদলিয়েছি আপনি আসুন। আপনাকে আগে অনেক কঠিন কঠিন কথা বলেছি তার জন্য আমি লজ্জিত। প্লিজ আপনি আসুন।

-ফাতেমা খালার ড্রাইভার ম্যানেজার বুলবুল সাহেব আছেন, তোমার বিয়ে হবে তার সঙ্গে,তিনি তোমাকে খুবই পছন্দ করেন।

-আপনাকে কে বললো?

-আমাকে কেউ বলেনি। তবে ম্যানেজার সাহেব ইচ্ছা পূরণ পাথরে হাত রেখে এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। পাথর তার ইচ্ছা পূর্ণ করেছে।

-প্লিজ আপনি আমাকে রূপকথা শুনাবেন না, পৃথিবীটা রূপকথা নয়।

-কে বললো পৃথিবী রূপকথা নয়?

-আপনি আসবেন না?

-না আজ আমার জ্যোৎস্না দেখার নিমন্ত্রণ।

-হিমু সাহেব শুনুন………।

আমি টেলিফোন রেখে দিলাম

গাজীপুর জংগল শালবনে জ্যোৎস্না দেখতে ঢুকে গেলাম।

আমি ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া জ্যোৎস্না ধরতে যাই।

হাত ভর্তি চাঁদের আলো, ধরতে গেলে নাই।

তামান্নার হাত ধরা হলোনা আর

কারণ হিমুরা কারো হাত ধরেনা।

হাত ধরলেই মায়ায় পরে যাবে, মায়া তখন অসহায়।

পৃথিবীও তখন অসহায় হয়ে যাবে মায়ার কাছে।

-Aarohi Hasan(ব্লগার আরোহী হাসান)

বিষয়: সাহিত্য

১৩৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File