নিরুপমার নীলশাড়ী
লিখেছেন লিখেছেন আরোহি হাছান ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৭:১০:৫৫ সন্ধ্যা
কখন রাত ১২টা বাজবে সে অপেক্ষায় ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নিভ্রু।
মাঝে মাঝে আকশের দিকে তাকিয়ে থাকতে বেশ ভালোই লাগে„ যে আকাশটা নীলশাড়ী পরিহিত অবস্থায় গোমটা বিহীন বসে থাকে।
সাদা মেঘগুলো নিজের অধিকারে উপস্থিতির প্রয়াস ঘটায়।
যাকে দেখার পরে অগোছালো মনটা স্থিতিশীলতায় রাতের পর রাত জেগে থাকা যায়।
মনে হচ্ছে আকাশটা আজ সেজে আছে অন্যরকম ভাবে।
চারদিকে নীলরঙে ভড়া আকাশপট! নীল দেখেই নিভ্রুর পুরোনো সেই কথা মনে পরে যায়! সেইদিনের সেই নীলশাড়ীর কথা।
এই নীলশাড়ী নিয়ে কতবার গল্প লিখতে বসেছিলো নিভ্রু।
যতবার লিখতে বসেছে ঠিক ততবারই তার প্রতিভাবনা নেতিয়ে গেছে।
কি লিখবে তখন যেনো মাথায় কিছু আসেনা।
নীলশাড়ী নিয়ে অনেক ধারণা মাথায় আনলেও যখনই লিখতে বসে কোনো না কোনো কাজে নিভ্রুকে আর লিখতে দেয়না।
আজও খুব ইচ্ছে করতেছে তার নীলশাড়ী নিয়ে কিছু লিখতে।
গতকাল নিরুপমাকে বলেছিলো আর কখনো কোনো গল্প লিখবেনা! লিখলেও কোনো পেইজ বা গ্রুপে দিবেনা! শুধু তার ফেসবুকের প্রোফাইলেই থাকবে।
এখন আর এতবেশি লিখালিখি করতে তার একদম ভালো লাগেনা।
নিরুপমার একটা অনুরোধ ছিলো অনেক আগে নিভ্রু বলেছিলো নীলশাড়ী নিয়ে গল্প লিখবে কিন্তু গতকাল হঠাৎ নিরুপমা নিজেই বলে ১৩তারিখ যেনো নীলশাড়ী নিয়ে একটা গল্প লিখে।
১৩তারিখ সে নীলশাড়ী পরে স্বরসতী পূজো দিতে যাবে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ জানালো নিভ্রু।
যেদিন নিরুপমাকে প্রথম দেখে সেইদিন স্বরসতী পূজার দিন ছিলো।
সময় তখন বিকেল ৪টা তাদের বদ্ধভুমি পূজোতে যায়! চোঁখ পড়লো নিরুপমার দিকে„ সে নীলশাড়ী পরিহিত অবস্থায় হাতে নীল চুড়ি, কানে নীলদুল দিয়ে একটি বেতের চেয়ারে বসা ছিলো!! লম্বা লম্বা চুলগুলো বাতাসের দোলনায় দুলছিলো তখন।
ফর্সা না হলেও দেখতে খুবই মায়াবতী! শ্যামলা মেয়েরা বোধহয় বেশিরভাগই মায়াবিনী হয়ে থাকে।
তবে সেইদিন তার দৃষ্টিতে এতোটা আসক্তি না হলেও পরবর্তী তার পিছুনেওয়াই ছিলো একমাত্র উপক্রম।
দ্বিতীয়বার যখন নিভ্রু তাকে দেখে সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিলো
বৃষ্টির কারণে রাস্তার পাশের একটি ছাউনিতে দাঁড়িয়ে থাকে নিরুপমা।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় সেইদিন বাসও ছিলোনা।
তার মাঝে ছিলো একটা বিশেষ দিন„সেইদিন নিরুপমার জন্মদিন ছিলো।
বৃষ্টি অনেকের মনে আনন্দের সঞ্চার করলেও নিরুপমার নিকট ছিলো রীতিমত অস্বস্তিকর।
তবুও অনেকটা বিরক্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কিছুক্ষণ পর আচমকা একটা বাস আসে।
এসময় বাস পাওয়া যায়না কাজেই তাড়াহুড়া করে বাসে উঠে যায়।
সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো সেইদিন সে ছাতা নিতে ভুলে গিয়েছিলো, অবশ্য এ জন্য তাকে যথেষ্ট মূল্যও দিতে হয়েছে।
এই কথা ভেবেই মুখে একরাশ বিরক্তি ফুটিয়ে বাস থেকে নেমে যায়!! বাস তখন তাদের বাড়ীর সামনেই অবস্থান।
বাস থেকে নামলেই নিভ্রু দ্বিতীয়বারের মতো নিরুপমার দেখা পায়।
সেদিনও নিরুপমার পরনে ছিলো নীলশাড়ী হাতে ছিলো কিছু পাঠ্যবই।
নীলশাড়ী পরা সব মেয়েরা দেখতে রূপার মতো হলেও নিরুপমাকে অন্যরকমই লাগে।
মানুষের চেহারায় তার মনের কথা বলে
নিরুপমার মায়াবিনী মুখখানির দিকে তাকালে তাকে সেই হাবাবোবা ভদ্র নীলপরীদের মতই মনে হয়।
সেইদিনই প্রথম তাকে ভাল লেগে যায় নিভ্রুর। এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে নিরুপমার দিকে।
ভেঁজা বৃষ্টির ফোঁটা সবটুকু সরিয়ে সজীবতায় ভরিয়ে গেছে নিরুপমা।
চোঁখ দুটো শীতল হবার উপক্রম, বৃষ্টিতে ভিজে চেহারা টুকু লাল হয়ে গেছে।
বেশিক্ষণ তাকানোর সাহস পাচ্ছেনা, আজকাল ভয় লাগার কারণটাও দুষ্কর।
নিরুপমা বারবার নিভ্রুর দিকে আড়া চোঁখে তাকায়।
নিভ্রু একটু বিরূপ ভঙ্গীতে অন্য দিকে তাকালেই
দেখতে পায় ২তলা ছাদের উপর দুজন আদি মানব মানবী হাত ধরে বৃষ্টির দিকে চোঁখ মুখ বন্ধ করে তাকিয়ে আছে।
দৃষ্টি ফিরিয়ে আবার নিরুপমার দিকে তাকায় কিন্তু নিরুপমাকে আর দেখতে পেলোনা।
টুপটাপ বৃষ্টির রিমঝিম স্বরে কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো নিরুপমা।
মানব মানবী দুইজনকে দেখতে আবার ছাদের উপর তাকালে সেখানেইও তাদের দেখা গেলোনা।
ছাদের ধারের রেলিং এর পাশে ভেঁজা শিক্ত দুটো কাক ভিঁজে জুবথুব হয়ে আছে।
নিভ্রুকে দেখে কাক দুটো গা ঝাড়া দিয়ে উঠে„
প্রবল বৃষ্টিতেও তাদের ভালোবাসায় মেতে উঠলো।
নিভ্রু খোঁজ নিয়ে জানতে পারে নিরুপমা তাদের পাশের কলেজেই পড়ালেখা করে।
নতুন ভর্তি হয়েছে, আগে ঢাকাতেই পড়াশুনা করতো।
দিন যতো যায় নিভ্রু ততোই নিরুপমার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে!! মনে মনে ভালোবাসার জন্ম দিয়ে তাকে নিয়ে ঘরবাঁধার স্বপ্নের জাল ভুনে।
তৃতীয়বার যখন তার সাথে দেখা হয় সেইদিন সামান্যকিছু কথা বলে।
সেই থেকে এক এক করে নিরুপমার সাথে প্রথমে কথা, তারপর মোবাইলে কথা, একসময় নিয়মিত কথা, বন্ধুত্ব, প্রেম, ভালোবাসা, একপর্যায় বিয়ে।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১২টা বাজার আর মাত্র দুই মিনিট বাকি।
অফিস থেকে আসার পর আর রুমে যাওয়া হয়নি, নিভ্রু ছাদ থেকে নেমে রুমে যাওয়ার রওনা হয়।
তার হাতে এক গুচ্ছো পদ্মফুল নিরুপমার জন্য।
গতবছর ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাহিরে থাকায় নিরুপমাকে তার জন্মদিনে উইশ করা হয়নি।
প্রতিবারই তাকে পদ্মফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেও গতবছর মোবাইলে ছাড়া কোনো সুযোগ কপালে ছিলোনা।
নিভ্রু রুমে ঢুকতেই দেখে নিরুপমা নীলশাড়ী পরিধান করে চেয়ারের উপর মুখটাকে ঘাবলা করে অভিমানী চোঁখে বসে আছে।
অভিমান করে থাকলেও নিভ্রুর জন্য নিরুপমার মনটা ঠিকই ছটফট করছিল তখন।
নিভ্রু নিরুপমার কাছাকাছি আসতেই নিরুপমা মুখ ঘুরিয়ে নিভ্রুকে বললো।
-তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসনা না,যদি
বাসতে তাহলে আজ অফিস থেকে এত দেরি করে আসতে না।
-কেন? আজ দেরি করে আসলে কোনো সমস্যা আছে?
সত্যি কি আজ নিভ্রু তার জন্মদিনের কথা ভুলে গেছে এ কথা ভাবতেই নিরুপমার দুই চোঁখে দুই বিন্দু পানি চলে আসে।
নিরুপমা তার চোঁখের জল আড়াল করার জন্য মন ভালো নেই বলেই নিভ্রুর সামনে থেকে চলে যেতে চায়।
নিভ্রু কোনো কিছু না এড়িয়ে তাকে পিছন থেকে হাত টেনে মুখোমুখি দাড় করিয়ে বলে “উইশ করিনি বলে ম্যাডামের এত রাগ”
নিরুপমার চোঁখের পানি ধরে রাখতে পারলনা„ নিভ্রুর বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে তখন।
নিভ্রু নিরুপমাকে তার জন্মদিন উপলক্ষে
তাজা একগুচ্ছ নীলপদ্মের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকে "হ্যাপি বার্ডে টু ইউ`` বলেই নীলপদ্মগুলো উৎসর্গ দিলো।
নিরুপমা সুখের হাসিতে কাঁদো কাঁদো গলার ভঙ্গীতে বলে উঠলো আমাকে কখনো কষ্ট দিওনা, আমি সহ্য করতে পারবোনা।
হাঁ সূচক মাথা নাড়লো নিভ্রু।
অস্বস্তিকর এই রাত তখন অনেক স্বস্তিকর হয়ে উঠলো।
অনুমতির অপেক্ষা না করেই নিভ্রু নিরুপমাকে একদম নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে।
তখনও তাদের পাশে শুয়ে আছে তাদের নিষ্পাপ ৩বছরের মেয়ে।
নিভ্রু নিরুপমার বিয়ে হলো আজ প্রায় ৫ বছর।
নিষ্পাপ মেয়েটার দিকে চোঁখ পড়তেই নিভ্রু নিরুপমা একসাথে আদর করতে লাগলো তাদের ঘুমন্ত অপ্সরীকে।
তারপরের দৃশ্যে আমাদের আর না থাকলেও হবে।
গতকাল রাতে তার জন্মদিন নিয়ে চিন্তা করতে করতে কি এক অদ্ভুত স্বপ্নই না দেখে ফেললাম।
বেঁচে থাকুক খুনসুটিময় ভালোবাসা গুলো চিরকাল।
ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষ গুলো।
ভালোবাসা গুলো পবিত্র সম্পর্ক চিনে নেক সেই প্রত্যাশায় আজকের মতো এখানেই শেষ করলাম আমার লুতুফুতুর গল্প....
-নিরুপমা সংগ্রহ আমার গল্পগুলোঃ
১) নিরুপমার নীলকান্না- goo.gl/LjJ7cw
২) নিরুপমার মধ্যরাত- goo.gl/Jrxpze
৩) নিরুপমার নিলয়- goo.gl/B7fm8O
৪) নিরুপমার নীলটিপ- goo.gl/aTwL17
৫) নিরুপমার নীলশাড়ী- goo.gl/2X2Qly
৬) নিরুপমার নিরুদ্দেশ______
-আরোহী হাসান
বিষয়: সাহিত্য
১২৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন