নিরুপমার নীলটিপ
লিখেছেন লিখেছেন আরোহি হাছান ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:১৫:৩২ রাত
রাত ৮টা, আজ সে খাবেনা প্রায় সময়ই রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।
ছাদে গিয়ে জ্যোৎস্নার আলোয় কিছু সময় ফেসবুকে ব্যবহিত করে।
১০টায় রুমে যায় ঘুমোতে তার যে ঘুম আসেনা।
শুয়ে শুয়েও ফেসবুকের নিউজফিডের এফ তাকিয়ে থাকে।
১২টায় চোঁখ দুটো ছোট হয়ে আসে, তবুও তার ঘুমোতে ইচ্ছে করনা! ঘুমোতে গেলে কে যেনো তাকে ঝাঁপটে ধরে।
আবেগিয় মানুষগুলো বোধহয় এমনই হয়. সবসময় অতীত নিয়ে ভাবে আর থমথমে চোঁখ দুটো ভিজিয়ে নেয়।
আবেগ তাড়া করতে গিয়ে তাকে _____/ ____ আর _____ কয়েকটা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তে হয় প্রতিদিন! তবুও তার চোঁখের আশপাশেও ঘুম আসেনা........
অঝোরে চোঁখ দুটো ভিজে যায়।
বালিশের কণে টুপটুপ করে অশ্রু পড়ে,
আর ভাবতে থাকে কোনো এক শরৎতের বিকেলে কোনো কাশফুলের ঝোপের ছায়ার নিছে কেউ একজন কপালে নীল টিপ পড়িয়ে দিয়ে বলেছিল
যতদিন তোমার কপালে নীল টিপ থাকবে ততদিন আমি তোমার চির সঙ্গী হয়ে থাকবো।
তোমার আশপাশেই দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মিশে থাকবো।
আরো বলেছিল যদি কখনো আমি হারিয়ে যাই! আমার অপেক্ষায় পথের নিশানায় হারিয়ে যেওনা তুমি।
আমি আসবো তোমার কাছে কোনো এক গ্রীষ্মের প্রখর রোদে বটের তলে শীতল বাতাস হয়ে,
কিংবা শরৎ এর প্রহর শেষে!
বা গ্রীষ্মের খড়ায় হঠাৎ ঝিরি ঝিরি বাতাসে টুপটুপ করে বৃষ্টি হবে যেদিন!
সেইদিন দুজনে ভিজে যাবো তোমার হাত আমার হাতে রেখে।
নিরুপমার চোঁখ থেকে ঘরিয়ে ঘরিয়ে পানি পড়তে থাকে! মনে হচ্ছে সত্যি বৃষ্টি হচ্ছে।
কিন্তু হ্যা বৃষ্টি হচ্ছে তার মনে তার চোঁখে।
নোলাজ্বলে ভিজে যাচ্ছে তার বালিশ।
নিরুপমা একাই বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে নিরবে গোপনে।
শুন্যতায় হাহাকারে চোঁখ দুটো ভেসে যাচ্ছে জলে।
প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ছটফট করতে করতে নিরুপমার ঘুম আগমনের মাঝে হারিয়ে পেলে নিজেকে! দিক হারায় এক স্বপ্নের হিমালয়ে।
বৃষ্টি হচ্ছে প্রবল বৃষ্টি নিরুপমা একা একা ভিজে যাচ্ছে আর কেউ একজনের অপেক্ষার পহর গুনছে।
সে আসবে নীল টিপ নিয়ে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গম্ভীর চোঁখে বলবে নিরুপমা তুমি একা একা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছো কেন?
তোমাকে আর কতবার বলতে হবে
যখন বৃষ্টিতে ভিজবে তখন আমাকেও ডাকবে।
বৃষ্টির স্পর্শ শীতল বাতাস অনুভব করে তুমি আমি মিলে আমরা একসাথে ভিজব।
তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারোনা নিরুপমা?
যাও তোমার সাথে আর কোনো কথাই নেই তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসনা।
এই বলে ছেলেটি বিষাদময় চোঁখে একটু অভিমান নিয়ে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তার হাতে ছোট একটি ব্যাগ! ব্যাগের ভিতর নীল একটি ডায়েরি।
যে ডায়েরি জুড়ে ছিলো শত শত গল্প-কবিতা।
নিরুপমা তার হাত থেকে ডায়েরী নিয়ে অসম্ভব মনযোগ দিয়ে প্রতিটি গল্প পড়তে থাকে!
চুপিচুপি প্রতিটি গল্পের অলিগলিতে নিজেকে খুঁজে ভেড়ায়।
আর নিজেকে নিজে বলে
নিরুপমা নামে এখানে কোনো গল্প নেই
তবে কতোগুলো নামে আছে।
যার নাম কখনো আরোহি,
কখনো শিব্রান্তি,
কখনো অর্পিন্দিতা,
কখনো কলমিলতা,
কখনো শুধ্রতা,
কখনোবা শুঞ্চিতা।
নিরুপমা ঐ নামগুলোর ছায়ায় নিজেকে খোঁজার চেষ্টায় অসম্ভব আগ্রহী হয়ে থাকে! আর নিজেকে উপহাস করে বলে এগুলো সব কাল্পনিক চরিত্র।
নিরুপমার হাতে ডায়েরী রেখেই এলোমেলো মেঠোপথে হাঁটা ধরে ছেলেটি।
নিরুপমাও তার পথেই হেঁটে যাচ্ছে গন্তব্যহীন আঁকাবাঁকা পথে।
কিছুদূর যাওয়ায় কুয়াশার আবৃতিতে হারিয়ে যায় ছেলেটি।
নিরুপমা হাঁটলো নতুন এক পথে! হারিয়ে যাওয়টাই যেখানে ছিলো একমাত্র গন্তব্য।
নিরুপমা হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়! কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা, কোথায় হারিয়ে গেলো সে।
নিরুপমা বুঝেনি, ছেলেটি তাকে বুঝতে দেয়নি।
তার আগেই কে যেনো এক নিমিষেই সব শেষ করে দেয়।
নিচে তাকিয়ে দেখে ছেলেটির নিথর দেহ পরে আছে!
বর্ষার জল আর রক্তের ঢল মিলেমিশে একাকার।
প্রচণ্ড কল্পনায় আগলে রাখা ঘুমেও নিরুপমা চিৎকার দিয়ে উঠে।
তার পুরো শরীর ঘেমে যায়, কপাল ভর্তি ফোঁটা-ফোঁটা ঘাম।
জানালা দিয়ে মধ্যরাতের জোসনার উঁকিঝুঁকি।
ইচ্ছে করছে ছাদে গিয়ে জ্যোৎস্নার আলোর স্পর্শ করতে।
দেয়াল ঘড়িটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! টকটক করে আওয়াজ দিচ্ছে।
ঘড়ির দিকে দৃষ্টিটা তাকিয়ে মধ্যরাতের ৩:২৪ বাজে।
ঘড়ির কাঁটা অসহায় হয়ে কটকট করে ঘুরতে থাকে যেনো তার গন্তব্য কোথায় খুঁজে পাচ্ছেনা।
বাড়ীর সবাই ঘুমে বিভোর হয়ে
আছে।
নিরুপমার টেবিলের উপর হাত দিয়ে টিপের পাতায় নীল একটি টিপ কপালে লাগিয়ে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
জোনাকিরা তাদের আলো জ্বালিয়েই যাচ্ছে।
আর ঝিঁ ঝিঁ পোকাগুলো এমনভাবে ডাকছে যেনো সেই হারিয়ে যাওয়া চেনা জানা কোনো স্বরে বলছে নিরুপমা যতদিন তোমার কপালে ঐ নীলটিপ থাকবে ততদিন আমি তোমার চির সঙ্গী হয়ে তোমার আশপাশেই অমলিন হয়ে থাকবো।
নিরুপমার অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলো! কপালে নীল টিপ আছে কিন্তু হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষটি আর ফিরে এলোনা!
কিংবা ঝিরি ঝিরি বাতাসে টুপটুপ করে বৃষ্টিও হয় নিরুপমা হাত বাড়িয়ে দেয় কিন্তু হারিয়ে যাওয়া কেউ তার হাত ধরতে আসেনা।
এই মিথ্যে আশ্বাস
কিছু ভুল কিছু সৃতি নিয়ে
নিরুপমা তীক্ষ্ণ গলায় চিৎকার করতে করতে বলে।
যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো
চলে এসো
এক বর্ষায়
যদি মন কাঁদে।
-Aarohi Hasan
বিষয়: সাহিত্য
১৪০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন