নিরুপমার নিলয়
লিখেছেন লিখেছেন আরোহি হাছান ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৪:০৬:৪৭ বিকাল
Aarohi Hasan
.
ছেলেটির নাম নিলয়, ১২তে পড়ে।
এক বাবার এক সন্তান,নিরুপমাদের পাশাপাশি এলাকায় থাকে।
নিরুপমার বাবা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত।
আর নিলয়ের বাবা সামান্য একজন ছোটখাটো ব্যবসায়ীক।
.
ইতিমধ্যে নিলয়ের বাবার মাঝে মাঝে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা উঠে।
আর কতকাল, বয়সতো কম হয়নি।
এই বুড়ো বয়সেও তাকে ত্যাগ দিতে হচ্ছে সুখ শান্তি প্রসন্নতার মহিমা।
যখনি তার বুকে ব্যথা উঠে তখনি জেনো তার হৃদপিন্ডটা বন্ধ হয়ে আসে।
তার ছেয়েও পৃথিবী অন্ধময় দেখতে পায় নিলয়।
নিলয় এখনো পড়ালেখা করতেছে,
ব্যবসা কিংবা চাকরি বাকরি নিয়েও কোনো চিন্তাভাবনা মাথায় নেয়নি।
নিলয় তার বাবাকে অনেক অনেক ভালবাসে।
এই পৃথিবীতে আপনজন বলতে একমাত্র তার বাবাই আছে।
বাবাই জেনো তার মাথার উপর বটগাছ।
.
নিলয়ের মা নেই ১০বছর বয়স রেখেই তার মা মারা যায়।
এই মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির টানা হিছরা করে নিলয়ের পড়ালেখা সহ যাবতীয় সব ধরণের খরচ তার বাবা এই ছোট ব্যবসা করেই চালিয়ে যায়।
.
নিরুপমার বাবা ডাক্তার, অনেক অহংকারী।
তাদের ফ্যামিলির একমাত্র মেয়ে নিরুপমা।
শুধু একমাত্র মেয়ে না, পড়ালেখা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই তাকে সর্বপ্রথম থাকতেই হবে, তার বাবার কথা।
বাবার আদরের মেয়ে, কলিজার এক অংশ।
সকালবেলা নিরুপমাকে স্কুলে দিয়েই বাবা চিকিৎসালয় যায়।
বিকেলবেলা নিরুপমা একাই আসে, যেহেতু তার বাবা রাত ছাড়া বাড়ীতে ফিরে না।
.
বাবা কিংবা তার ফ্যামিলি থেকে নিরুপমা অন্যরকম, সবার ছেয়ে আলাদা।
মনে কোনো আত্মগৌরব, হিংশা, অহংকার নেই।
সবার সাথে সবসময় হাসিখুশি থাকে।
অনাহারে পরে থাকা কিংবা অসহায় মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে সর্বদাই চেষ্টা করে।
সেচ্ছায় রক্তদানে নিয়োজিত, নিজের ব্লাড গ্রুপ না মিললেও অনলাইনে নিয়মিত রক্তের সন্ধান চালিয়ে যায়।
কিন্তু এগুলো তার বাবা ভাল চোঁখে দেখেনা,
তাকে বার বার নিষেধ করে, তুমি মেয়ে তোমার এগুলো করা ঠিক না।
কে শুনে কার কথা, নিরুপমা তার নিজের সর্বশক্তি আত্মবিশ্বাস দিয়েই চালিয়ে যায়।
.
২০তারিখ সন্ধ্যা ৪টায় নিলয়ের বাবার বুকে প্রচণ্ড ব্যথে।
এতটা ব্যথা যে মনে হচ্ছে আজই তার শেষ দিন।
অন্যদিকে বাবার এই অবস্থা দেখে নিলয়ও অনেকটাই দিশেহারা, ভয়ে গুরমুর খাচ্ছে।
কি করবে এখন, বাবাকে নিয়ে সে কোথায় যাবে।
নিজের কাছেও এতো বেশি টাকা নেই, মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিদের হয়তো এটাই নিয়তি, টাকা তখন অসহায়।
পথ এক্টাই আছে, খুব কাছের ক্লিনিক নিরুপমার বাবার।
সেখানেই তার বাবাকে নিয়ে যায়।
কিন্তু টাকার অভাবে আর নিরুপমার বাবার চিকিৎসার অবহেলায় তার বাবাকে বাঁচাতে পারেনি।
অনেক কষ্ট হয়েছে নিলয়ের।
নিজে বেঁচে থেকেও বাবাকে বাঁচাতে পারলোনা। টাকার কাছে হার মানতে হয়েছে, এর ছেয়ে নির্লজ্জ আর কি হতে পারে।
এই সমস্ত কিছু ভাবতে ভাবতে
আস্তে আস্তে নিলয়ের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যায়।
অন্য দিকে নিরুপমার বাবার অহংকারের প্রতিদান দিতে হারিয়ে যাচ্ছে সে ক্রোদের সাগরে।
.
নিরুপমাকে সে অপহরণ করে মেরে পেলবে।
আপনজন হারানোর আর্তনাদ তার বাবাকে দেখাবে।
সকাল বিকাল সন্ধ্যা সবসময় সে নিরুপমাকে ফলো করতে থাকে।
কিন্তু নিরুপমার মানবসেবায় তাকে অপহরণ করতে পারেনা।
বরং নিলয় একটু একটু করে তার প্রেমে পড়ে যায়।
একপর্যায় তাদের প্রেম ভালবাসা হয়ে যায়।
কিভাবে হয়েছে সেটা না বললেও চলবে।
.
বর্তমান সমাজে প্রেম ভালবাসা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু তা টিকিয়ে রাখাটাই কঠিন।
.
নিলয় আবার পড়ালেখা করতে থাকে,
নিজেও ছোট কয়েকজন বাচ্চাকে টিউশানি করায়,
দুইজনের টাকায় তার এদিক হলে সেদিক হয়না।
তখন নিরুপমাই তার সম্ভল হয়ে পাশে দাঁড়ায়।
নিরুপমার টাকায় সে পড়ালেখা করতে থাকে, আর টিউশনির টাকায় নিজের পকেট খরচ সহ যাবতীয় সব খরচ চলতে থাকে।
.
দুইবছর তাদের এইভাবেই প্রেম ভালবাসায় মুগ্ধ দেউলিয়া।
দুইবছর পর নিলয় এখানে ------উঠে এন্ড প্রথম স্থান অর্জন করে।
অপরদিকে নিরুপমার বিয়ের বয়স হয়েছে।
তার বিয়ের জন্যে এদিক সেদিক থেকে আসতে থাকে।
নিরুপমার বাবাও কিছুদূর জানতে পারে, নিলয় আর নিরুপমার সম্পর্কের কথা।
তিনি এই সম্পর্ক কিছুতেই মেনে নিবেনা।
.
এক বাবার এক সন্তান, নিরুপমাও চায়না বাবাকে কষ্ট দিয়ে নিলয়কে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যেতে।
এমন এক সময় নিরুপমা নিলয়কে বলে দেয় তাকে ভুলে যেতে।
তখনি যেনো নিলয়ের মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরে।
.
২৩তারিখ নিরুপমা সাজে বিয়ের পিরিতে অন্য দিকে কান্না আর সম্পর্ক বিচ্ছেদে নিলয় নিজেকে বেঁচে নিয়েছে এক অন্ধ পথে।
তার পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যায়।
নিজেও ধংশের পথে,
.
কয়েকদিন পর পর তাকে শুয়ে থাকতে হয় হাস্পাতালের বেডে।
.
সমাপ্তি....
বিদ্রঃ এই গল্পের টপিক দিয়েছে নিরুপমা. ইহা সম্পূর্ণ কাল্পনিক চরিত্র...
-নিরুপমা সমগ্র আমার গল্পগুলো-
→নিরুপমার নীলকান্না.
→নিরুপমার মধ্যরাত.
→নিরুপমার নিলয়.
→নিরুপমার নীলটিপ.
বিষয়: বিবিধ
১১৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন