যুবক- তোমার সমীপে.......
লিখেছেন লিখেছেন আজাদ আরিফ ১০ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৮:২৬:০১ সকাল
গতকাল একটি ডিভোর্সের গল্প শুনলাম।আমার খুব ভালো একজন বন্ধু।একটি পত্রিকার বার্ষিক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের পরিচয়।সেই থেকে সম্পর্কটি গভীর হয়ে উঠেছে।আমরা খুব ক্লোজ ফ্রেন্ডে পরিণত হই, যদিও বয়স,শিক্ষা-দীক্ষা সবদিকে সে আমার চেয়ে বেশ সিনিয়ার।সে যাইহোক, কাল সে আমার সাথে তার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপারটি শেয়ার করেছে।ডিভোর্স হয়েছে এক সপ্তাহ হলো।
তাদের সম্পর্কটি হয়েছিল প্রেমের মাধ্যমে।দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেম অবশেষে পরিণতি পেয়েছিল।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তৃতীয় বর্ষ থেকে তারা প্রেমসূত্রে আবদ্ধ হয়েছিল।বিয়ের আগ পর্যন্ত দু'জন চুটিয়ে প্রেম করেছে।তাদের মাঝে কতো শেয়ারিং -কেয়ারিং,কতো শপথ।সারাজীবন একসাথে থাকার,একসাথে পথ চলার।হাতে হাত রেখে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেবে এই মর্মে কতো হাজারবার তারা মোবাইলে,চ্যাটে,সরাসরি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে।
কতো ভ্যালেন্টাইনস ডে তারা একসাথে কাটিয়েছে।ভালোবাসা আদান-প্রদান হয়েছে গোলাপ ফুলে,রঙীন লাভ কার্ডে।সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়েছে।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা।ভালোবাসাও গড়াগড়ি খেয়েছে ঝালমুড়ি থেকে ফুঁচকা, ফুঁচকা থেকে আইসক্রিমে।
আমার বন্ধুটি ছিল মারাত্মকরকম স্মোকার।অথচ, মেয়েটি নিকোটিনের উৎকট গন্ধ সহ্য করতে পারতোনা বলে আমার বন্ধুটি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। কি আশ্চর্য ব্যাপার! একবার আমার বন্ধুটির মা ছেলের হাত নিজের মাথায় রেখে বললো,- 'আমাকে ছুঁয়ে বল তুই আর কোনদিন সিগারেট খাবিনা।'
সেই ছেলেটি তবু মায়ের দিব্যি দেওয়া সত্বেও লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট টেনেছে।বাসায় যাওয়ার আগে গলগল কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে গেছে যাতে মায়ের চোখে ধরা না খায়।
যে ছেলেটিকে তার বাবা-মা শত অনুরোধ,শত বাঁধা দিয়েও স্মোকিং ছাড়াতে পারেনি,সেই ছেলেটি একটি মেয়ের জন্য রাতারাতি পুরোপুরি স্মোকিং ছেড়ে দিলো।আগে যার বেশিরভাগ সময় কাটতো আড্ডায়,হঠাৎ বন্ধুমহলের আড্ডায় ছেলেটি হয়ে গেলো অমাবস্যার চাঁদ।কদাচিৎ দেখা মেলে এরকম।ছেলেটি পুরো পাল্টে গেলো,ঠিক মেয়েটি যেমন চেয়েছে সেরকম। রাত জাগেনা।যদিওবা জাগে,তাহলে সময়টা কেবল দু'জনার।
নাটক-সিনেমায় একটি সুন্দর,সার্থক ভালোবাসা পর্ব যেমন চলে,ঠিক তেমনভাবেই সবকিছু চলতে লাগলো।
ছেলে-মেয়ে দুই পরিবারের সবার গোচরে আসে তাদের রিলেশানের ব্যাপারটি।প্রেম তখন গোপনীয়তা ছেড়ে প্রকাশ্য হবার সনদপত্র পায়।দুই পরিবার তাদের সম্পর্ক সহজেই মেনে নেয়।বাড়তে লাগলো তাদের এক পরিবারের বাসায় অন্য পরিবারের যাওয়া-আসা।বৃদ্ধি পেতে লাগলো তাদের মধ্যকার সুহৃদ্যতা।ছেলেটি তার বন্ধুদের বিয়েতে,বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেয়েটিকে নিয়ে দাওয়াতে যাওয়ার পারমিশান পেলো।এতে কোন পক্ষের কোন অভিযোগ ছিলোনা।তাদের বিয়ে হলো খুব ঘটা করে।কিন্ত কি এমন হলো যে এরকম একটি সম্পর্ক এরকম শুভ পরিণতি পাওয়ার পরও সেটি এক বছরও টিকলোনা?
'
সেই ব্যাপারটি গোপন থাক। ঠিক এইজন্যেই ইসলাম বিবাহ পূর্ববর্তী সকল প্রকার প্রেম-ভালোবাসাকে নিষিদ্ধ করেছে।
বিবাহ পূর্ববর্তী প্রেম-ভালোবাসাগুলোতে আমরা খালি চোখে যে ভালো লাগা,আশ্বাস-বিশ্বাসের প্রতিশ্রুতি দেখি, সেগুলো আসলে শয়তানের রঙীন ধোঁকা।ইসলাম যেখানে আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে 'আপনি যদি মুমিন হন,তাহলে আপনার জন্য অবশ্যই স্ত্রী রূপে মুমিনা নারী অপেক্ষা করছে', সেখানে শয়তান মিশনে নামে আপনাকে কোনভাবেই সে মুমিন হতে দেবেনা।প্রেমের নামে,ভালোবাসার নামে আপনাকে কামনা-বাসনাতে ডুবিয়ে রাখে।ভ্যালেন্টাইনস ডে,পহেলা বৈশাখ,থার্টি ফাষ্ট নাইট,ফ্রেন্ডশিপ ডে'র নামে অসংখ্য ফাঁদ আপনার সামনে সে পেতে রাখে।আপনি হয়ে পড়েন মোহগ্রস্ত।নারীর সঙ্গ পেতে,হাত ধরতে, চুমু খেতে,চোখে চোখ রাখতে আপনি উন্মাতাল হয়ে উঠেন।আপনি কি তখন আর মুমিন থাকেন?
প্রেম করেন আবার নামাজও পড়েন।তাহলে কি আপনি মুমিন? না।
বেগানা নারীর সাথে কামনা-বাসনার কথা বলা,কামুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকানো,তার চোখে নিজেকে হারিয়ে ফেলা,তার নরম হাতে নিজের হাত রাখা প্রত্যেকটির মাধ্যমে আপনি একইসাথে চোখের,মুখের,কানের,হাতের যিনা করছেন।
কোরআন আমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আমি মুমিন পুরুষ হলে আমার জন্যে তৈরি রয়েছে মুমিন নারী।আর দু:শ্চরিত্র পুরুষ হলে আমার জন্য তৈরি আছে দু:শ্চরিত্রা নারী।
নিজে বিয়ের আগে হাজারটি পাপ করবো,চোখের,মুখের,কানের,হাতের যিনা করবো,
ভ্যালেন্টাইন পালন করবো,রমনার বটমূল থেকে টি.এস.সি, এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আমি আমার প্রেমের স্মৃতি চিহ্ন রেখে আসবোনা,
রাত জেগে প্রেয়সীনির সাথে মাস্তি করবো,ফোনালাপে আদর,প্রেম-ভালোবাসা দেওয়া-নেওয়া করবো,দুপুর বারোটা'য় আমি ব্রেকফাষ্ট খাবো, আর আশা করে থাকবো যে আমি একজন দ্বীনদার স্ত্রী পাবো?
আমার স্ত্রী পরকিয়া করবে না তো কে করবে?বিয়ের এক বছরের মাথায় আমার সংসার ভাঙবে না তো কার ভাঙবে?
আমি মোবাইলের স্ক্রিনে ক্যাটরিনা কাইফে বুঁদ থাকবো,জেনিফার লোপেজে মত্ত হবো,আর আমার স্ত্রী বুঝি শীতের রাতে তাহাজ্জুদে দাঁড়াবে?
আমি ডেইলি কয়েকটা খ্রাশ খাই আর সানন্দে,সগর্বে তা ফেইসবুকে বলে বেড়ায়।তাহলে আমার ভবিষ্যৎ সহধর্মিণীও হয়তো একই টাইমে কাউকে সঙ্গ দিচ্ছে,কারো চুমু নিচ্ছে,কাউকে দিচ্ছে।কারো সাথে হয়তো বিছানায় যাচ্ছে।সিম্পল।এটি মুসলমানদের জন্য কোরআনের ওয়াদা।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিয়ের পূর্বে অ্যাফেয়ার করে যেসব রিলেশান হয়,সেগুলোর ৯০ ভাগ সংসার টিকেনা।টিকলেও সেসব সংসারে শান্তি থাকেনা।থাকে অবিশ্বাস,সন্দেহ,কলহ।এরকম অবিশ্বাস, সন্দেহ-কলহের মধ্যে বাঁচাটাকে সংসার বলেনা,নরক বলে।
কোন পরিসংখ্যানের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই।পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকান।দেখুন সেখানে ক'টা সংসার টিকে? প্রতি সেকেন্ডে সেখানে কয়েক হাজার সংসার ভাঙে।এর কারন কি? এর কারন হলো বিবাহের পূর্বে তারা একশ জনের সাথে অকাম-কুকাম করেছে।বিয়ের পরও সে অভ্যাস ছাড়তে পারেনা।না স্বামী পারে? না স্ত্রী।অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে,পশ্চিমা বিশ্ব থেকে বিয়ে প্রথাই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।তারা 'লিভ টুগেদার' এ ঝুঁকে গেছে।একজন মুসলিম হিসেবে আমার নিশ্চয় এমন হওয়া উচিত নয়?
'
রাসুল(সা আপনাকে বিবাহ পূর্ববর্তী পাপ থেকে,যিনা থেকে বাঁচার জন্য পথ দেখিয়ে গেছেন।
বিয়ের উপযুক্ত যুবকদের সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করতে বলা হয়েছে।এতে আপনি জৈবিক চাহিদা মেটানোর বৈধতা পাবেন,যিনা থেকে বাঁচবেন।
যার সামর্থ্য নেই তাকে রোজা রাখতে বলা হয়েছে।রোজা অবশ্যই আমাদের যিনার গুনাহ থেকে রক্ষা করে।পর নারী,পরনিন্দা থেকে মুক্তি দেয়।
কোরআনই বলছে, 'নিশ্চয় সরল পথ বক্র পথ থেকে আলাদা হয়ে গেছে।'
এখন আমি কোন পথ ধরবো সেটা আমার ব্যাপার।আমি কি শয়তান প্রদর্শিত রঙীন পথ ধরে হাবিয়ায় নিক্ষিপ্ত হবো? নাকি আল্লাহ প্রদত্ত রাসূল(সা প্রদর্শিত পথ ধরে জান্নাত কিনে নেবো?
'
আমার আইডল শাহরুখ খান,সালমান খান,শচীন,মেসি,রোনালদো,ম্যারাডোনা।আমার আইডল হুমায়ুন আহমেদ,হুমায়ুন আজাদ,জাফর ইকবাল। আমি হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে হিমু সাজি।খালি পায়ে মধ্যরাতে রাস্তার মাঝখানে শুয়ে আমি জোসনা দেখি।অথচ, আমার শৈশবের সেসব হিরোরা,যারা আমায় বাধ্য করেছে হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে হিমু সাজতে,যারা আমায় বাধ্য করেছে রাস্তার মাঝে শুয়ে জোছনা দেখতে,যাকে দেখে আমি শচীন হতে চাচ্ছি,মেসি-রোনালদো হতে চাচ্ছি, তাদের নিজস্ব জীবনটা কতোটা গোছানো? দেখা গেলো, আমার মত কোটি কোটি ভক্তদের জন্য দু একটি উপদেশ বাণী কপচিয়ে উনি হয়তো মদের আড্ডায় গিয়ে বসেছেন।হতে পারে কোন বেগানা মহিলাকে নিয়ে মেতে উঠেছেন ফূর্তিতে।আর আমরা এদিকে আপসোস করে মরি, ইশ! যদি উনার মতো হতে পারতাম!!
কিন্ত আমার সত্যিকার অর্থেই যার মত হওয়া দরকার,
যার মত হতে পারলে আমার দুনিয়া-আখিরাত দু'টোই পাকাপোক্ত হয়ে যায়, তার ব্যাপারে আমি কতোই না উদাসীন!সেজন্যেই কোরআনে আল্লাহ সময়ের কসম করে বলেছেন, 'নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত।'
নবীজীর সীরাত তো দূরের কথা, উনার চারজন স্ত্রীর নাম বলতে বললে আমার মতো ৯০ ভাগ বিড়ালতপস্বী ধার্মিকেরা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।এই আমাদের ইসলাম!! এই আমাদের শিক্ষা!!
সূর্য উঠার ঠিক কতো দেরি,পাঞ্জেরি?
বিষয়: বিবিধ
২২৪২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যথার্থ বলেছেন, সুন্দর বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন