শেখ হাসিনা এবং তার দলের প্রভাব শেষ হয়ে যাবে এবং এটা তাদের নিজেদের প্রত্যাশিত সময়ের অনেক আগেই হবে।

লিখেছেন লিখেছেন আজাদ আরিফ ০৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:২৪:৪১ সকাল

'দ্য টেলিগ্রাফ' পত্রিকার উপ-সম্পাদকীয়তে ভারতের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহের

'Too quiet for comfort-The looming political crisis in Bangladesh Politics and Play' শিরোনামে লেখা কলাম-

"সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত

জনসংখ্যার ভারে দারিদ্র্যে নিপতিত হওয়া দেশগুলোর একটি জলন্ত উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা হতো।দেশটি ছিল এমন এক ‘বটমলেস বাস্কেট’ বা 'তলাহীন ঝুড়ি' , যাকে পশ্চিমাবিশ্ব থেকে নিয়মিত জাহাজে আসা গমের চালানের ওপর নির্ভর করে ‘ভেসে থাকতে’ হতো।

তখনকার প্রভাবশালী জীববিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে 'গ্যারেত হার্ডিন' আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে সব ধরনের ত্রাণ পাঠানো বন্ধ করে দিতে, যাতে বাংলাদেশিরা ওভাবেই মারা যায়। তাদের (বিজ্ঞানীদের) কাছে মনে হয়েছিল এদেশের মানুষরা এভাবেই মরা উচিত।

জীববিজ্ঞানীরা নিউইয়র্ক টাইমসসহ যেসব উন্নতমানের জার্নালে তাদের এসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন সেগুলো বাংলাদেশের আম-জনতা পড়েনি।বরং তারা তাদের নতুন অর্জিত দেশটিকে পুনঃনির্মাণে মনোযোগ দিয়েছিল। গত ২৮ নভেম্বর টেলিগ্রাফে প্রকাশিত আমার আগের নিবন্ধে বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের মানুষের বিস্ময়কর কর্মক্ষমতার কথা তুলে ধরেছি। তারা উৎপাদন শিল্পে চমকপ্রদ উন্নতি করেছে।

এছাড়া 'জনস্বাস্থ্য' এবং 'নারী অধিকার বাস্তবায়নে'

ভারতের চেয়েও বেশি সফলতা দেখিয়েছে। এসবের পাশাপাশি নিজেদের সাহিত্য এবং ঐতিহ্যকেও সমৃদ্ধ করেছে।

গৃহযুদ্ধ, সাইক্লোন ও উপদলীয় রাজনীতির প্রকোপ থেকে বিকশিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সে কারণে গুরুত্ববহ।

তবে এর মধ্যে যেটা উদ্বেগের কারণ হয়ে থেকে গেছে তা হল, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনগ্রসরতা। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের একমাত্র কারণটি হচ্ছে

পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা রাজনীতিতে যথেষ্ট জায়গা না দিতে চাওয়া। কিন্তু এখন নিয়তির পরিহাস হল,সেই আওয়ামী লীগই

এখন বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস সব সময়ই দুর্গম ছিল।একাত্তর পরবর্তী সরকার পরিচালনা

করেছেন পশ্চিম পাকিস্তানের নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার আওয়ামী লীগের কর্ণধার শেখ মুজিবুর রহমান।যদিও পঁচাত্তরে মুজিব রাজনীতিতে এক-দলীয় শাসন কায়েমে করেন।

অনেক বিরোধী রাজনীতিক কারাবন্দি হন। জনরোষ সৃষ্টি হয়। অবশেষে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘটে, জুনিয়র অফিসাররা মুজিবকে হত্যা করে এবং সরকারের কর্তৃত্ব সিনিয়র অফিসাররা ক্ষমতা গ্রহণ করে।

১৯৮১ সাল পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিল। তিনিও হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার পর ‘ইসলামপন্থী’ বলে পরিচিত

জেনারেল এইচ এম এরশাদ ক্ষমতাসীন হন।

প্রায় এক দশক এরশাদ ক্ষমতায় ছিলেন।তারপর লাগাতার বিক্ষোভ শেষে ১৯৯১সালে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের বিধবা পত্নী

বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট পার জয়লাভ করে।পাঁচ বছর পর শেখ মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সাথে 'ব্যালট-বাক্সের' লড়াইয়ে

তিনি হেরে যান।

২০০১ সালে বিএনপি ফিরে আসে এবং ২০০৬ সাল নাগাদ ক্ষমতায় থাকে।এ সময় একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফের শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়। এরপর ২০১৩ সালের নির্ধারিত নির্বাচনের আগে বিএনপির দাবি ছিল একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আওয়ামীলীগ যেন ক্ষমতা হস্তান্তর করে যাতে নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়।

আওয়ামী লীগ তা মেনে নেয়নি।ফলে বিএনপি ও

অপরাপর বিরোধীদল সেই নির্বাচন বয়কট করে। সেই থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেখ হাসিনা ও

আওয়ামী লীগ সরকার, পার্লামেন্ট ও প্রশাসনের কর্তৃত্ব বাধাহীনভাবে করায়ত্ত করেছে।

শেখ হাসিনা তার বর্তমান আমলে বলিষ্ঠভাবেই ১৯৭১ সালে সাধারণ মানুষের উপর পরিচালিত

যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত পাকিস্তানের সমর্থনকারীদের

বিচার পরিচালনা করছেন।

নভেম্বরের শেষে ঢাকা থাকাকালীন দেখেছি দু’জন

সিনিয়র রাজনীতিককে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। একজন ধর্মীয় গ্রুপ জামায়াতে ইসলামীর নেতা, যারা বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের বিরোধিতা করেছে।আরেকজন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের প্রভাবশালী পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিকের সন্তান এবং বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির উপদেষ্টা ছিলেন।একদিন পর বেগম জিয়া দীর্ঘদিন বিদেশ কাটিয়ে ঢাকা ফিরে আসেন।পরদিনই জামায়াত

দেশব্যাপি হরতাল ডাকে।অতীতে দেখা গেছে, জামায়াতের হরতালে রাস্তাঘাট শূন্য এবং দোকানপাট বন্ধ থাকতো।হাজারো বিএনপি

নেতাকর্মীরা রাজপথে নামতো তাদের নেতাদের সমর্থনে।কিন্তু এবার প্রাত্যহিক ঢাকার চিত্র বদলায়নি।পুলিশ,প্যারামিলিটারি ও সামরিক বাহিনীর সহায়তায় আওয়ামী লীগ সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দৃশ্যমান।কোনো জনগণের দ্বিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি ভয়ঙ্কর অপরাধ সাধন করেছে, যাতে স্থানীয় দালালেরা সহযোগিতা জুগিয়েছে।তা সত্ত্বেও এই বিচার পরিচালনা এবং পরিণতিতে মৃত্যুদন্ডের বিষয়ে মারাত্মক আপত্তি রয়েছে।

এমনকি আরো বড় দুর্ভাবনার বিষয়টি হচ্ছে,রাষ্ট্র ও সমাজে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সংহত করতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এই বিচারকে যেভাবে ব্যবহার করেছে সেটি।সংসদের কোনো বিরোধিতা না থাকার কারণে আওয়ামী লীগ উপকৃত হয়েছে। আর যেসব সাংবাদিক বিচারের যথাযথ

প্রক্রিয়া নিয়ে যৌক্তিক সমালোচনা করছেন, তারাও

নিগৃহীত হয়েছেন।যেসব শিক্ষাবিদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারাও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আজকের বাংলাদেশে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমানের ইমেজকে ঘিরে একটি পূজনীয় আবহ তৈরি হয়ে গেছে।

ভারতীয়রা গান্ধীকে 'গান্ধী' বলতে পারলেও মুজিবকে মুজিব বলে অভিহিত করতে পারার দৃষ্টান্ত সেখানে (বাংলাদেশে) দুর্লভ।

তিনি অবশ্যই ‘বঙ্গবন্ধু’, বাঙ্গালীর বন্ধু।

এই মুজিব দীর্ঘকাল পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন

এবং তারপর যখন খুন হন তখনো তাকে ঘিরে পূজনীয় আবহ বিরাজমান ছিল।শেখ হাসিনার

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পরিচালনা আংশিক, এমনকি বড় আকারেই তার পিতার প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা থেকে উৎসারিত। তারপরও এটা বলা প্রয়োজন যে, যেভাবে তার প্রশাসন কাজ করছে তা তার পিতার নিন্দনীয় সময়কালকেই স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন ১৯৭৫ সালের সূচনার দিকে তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সংবিধান সংশোধন করে দ্বিমত প্রকাশ করাকে নিষিদ্ধ করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও জামায়াত এখন পরাস্ত ও মনোবলহীন।ইতিমধ্যে দ্বিপাক্ষিক

সুবিধার্থে সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রশাসন জোট বেঁধেছে।

সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়নক হিসেবে হাজির থাকা সেনাবাহিনীকে রাস্তাসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি দিয়েছে।ধারণা করা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বিপজ্জনক পর্যায়ে বাড়ছে। যেমন একটি ঘটনায়, সেনাবাহিনীর সমালোচনায় তৎপর জনপ্রিয় একটি পত্রিকায় টেলিকম কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন দেয়া বাহিনীটি বন্ধ করিয়ে দিয়েছে।শেখ হাসিনা এবং তার উপদেষ্টারা ভাল করবেন যদি তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে একদলীয় শাসন কায়েম করা অতীতে সরকারগুলোর ইতিহাসের সাথে

নিজেদেরকে পরিচিত করান।

নাৎসীরা মাত্র ১২ বছর ক্ষমতায় ছিল, অথচ তাদের সমর্থকদের হাজার বছরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তাকালে,ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস, পাকিস্তানের পিপলস পার্টি এবং শ্রীলংকায় ফ্রিডম পার্টি- সবাই একদল শাসিত রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিল, কিন্তু কেউই মাত্র কয়েক

বছরের বেশি টেকেনি। সে জন্যই একদলীয় রাষ্ট্রের ভাগ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।কিন্তু যে সময়টা তারা ক্ষমতায় থাকে তখন ব্যাপক বিনাশ সাধন করে।

ইন্ধীরা গান্ধী ও কংগ্রেস (ভারতের) প্রশাসন ও বিচার বিভাগের এমন ক্ষতি সাধন করে গেছেন যে, আজো সেগুলো কার্যকর স্বায়ত্তশাসন ফিরে পায়নি।তেমনিভাবে ভুট্টো ও পিপিপি আর্মিকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রবেশের সুযোগ করে দিয়ে

ইসলামী মৌলবাদের বিকাশ ঘটিয়েছেন। মাহেন্দ্র রাজাপাকশে এবং এসএলএফপি গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়সহ গণতন্ত্রের জন্য জরুরি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতি কোনো খেয়াল না দিয়ে সিংহলদের জন্য মাত্রাতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে দেশটির অনেক বড় ক্ষতি করেছিলেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিষয় একদম নিশ্চিত যে, শেখ হাসিনা এবং তার দলের প্রভাব

শেষ হয়ে যাবে এবং এটা তাদের নিজেদের প্রত্যাশিত সময়ের অনেক আগেই হবে। এমনও হতে পারে যে, বর্তমানের প্রচলিত দ্বিমত

প্রকাশের সব রাস্তা যখন বন্ধ হয়ে যাবে, সমাজের একটি অংশ ইসলামপন্থী গ্রুপগুলোর প্রতি

সহযোগিতার হাত বাড়াবে।কিংবা সেনাবাহিনী নতুন করে ক্ষমতা হস্তগত করার চেষ্টা করবে।

এ দুই বিকল্পের যে কোনো একটি ঘটলেই কার্যকর বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরা আরো বিলম্বিত হবে।

আজকের বাংলাদেশের অনেক কিছুই প্রশংসা করার মতো।যেমন- নারীদের অগ্রগতি, উদ্যোক্তা

শ্রেণীর সৃজনশীলতা, চমৎকার নাগরিক সমাজ এবং এখানকার প্রকৃতিপ্রদত্ত্ব মেধাবী শিল্পী ও

লেখকরা।

কিন্তু এখানকার সরকারের প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণের কারণে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আরো অগ্রগতি এখন থমকে গেছে।"

মূল লেখাটির লিঙ্ক- http://www.telegraphindia.com/1151203/jsp/opinion/story_56299.jsp#.VmV7JTNDZG8

বিষয়: বিবিধ

৫৬৯১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

356518
০৯ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১১:০৭
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : সবকিছুরই শুরু আছে শেষও আছে। তাই ক্ষমতা নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি বা অহংকার করার কিছুই নেই। যারা বাড়াবাড়ি করছে তাদের পতন একসময় হবেই।
356523
০৯ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:০২
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে যা যা করার তা তা আলীগ করেছে। সুতরাং বিম্পি জামাত যে আর কোনদিন ক্ষমতার আলো দেখবে না সেটা ১০০% নিশ্চিত।
356526
০৯ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:৪২
আজাদ আরিফ লিখেছেন : ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্যে যা যা করা দরকার তার সবকিছুই ফেরাউন করেছিল।করেছিল গাদ্দাফি,ষ্ট্যালিন,হিটলার,মাও সে তুং।করেছিল বুশ,শেখ মুজিব।কেউ কি পেরেছে চিরস্থায়ী হতে? পারেনি।শেষ জয়টি জনগনের হয়।বাকশালের পতন যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে।হবেই।কিন্ত সমস্যা হলো বাকশাল আর তাদের মদদপুষ্ট সমর্থকরা আত্মপ্রসাদে ভুগে। ভাবে, তারা হয়ত অনন্তকালের জন্য ক্ষমতা দখল করে ফেলেছে।তাদের এই বদ্ধমূল ধারনা তাদের পতনকেই ত্বরান্বিত করে।
356549
০৯ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
পৃথিবির ইতিহাসে কেউ চিরস্থায়ি ক্ষমতার অধিকারি হতে পারেনি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File