সারা দেশেই একযোগে হওয়া উচিত একুশের বইমেলা
লিখেছেন লিখেছেন Raya ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:৫৭:২২ সকাল
একুশের বইমেলা আমাদের অহঙ্কারের বিষয়। এ মেলাকে ঘিরে যত উৎসবমুখরতা, আবেগস্পন্দন, প্রাণচাঞ্চল্য তা অন্য কোনো আচার-অনুষ্ঠানে নেই। মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার যেমন অবিচ্ছেদ্য একটি অনুষঙ্গ, বইমেলাও তেমনটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একুশের বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনে একটি শ্লাঘার উৎস। এটি হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সাংস্কৃতিক উৎসব। একইসঙ্গে সার্বজনীনও বটে। কারণ সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব বয়সী মানুষ মহতী এ আয়োজনে অংশীদার। কিন্তু একুশের বইমেলা শুধু ঢাকায় হবে কেন? সারা দেশে একযোগে হতে বাধা কোথায়? একসময় তো প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি জাতীয় গ্রন্থ দিবস উদযাপিত হতো দেশব্যাপী। সব জেলায় একযোগে বইয়ের জমজমাট চমৎকার মেলা হতো সে উপলক্ষে। কয়েকটায় যোগ দেয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ঢাকায় হতো আন্তর্জাতিক বইমেলা। সে কার্যক্রম সফল হয়েছিল। আমাদের ট্র্যাজেডি হচ্ছেÑ এই কোনো ভালো কিছু আমরা ধরে রাখতে পারি না। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক ভালো কার্যক্রমও বাদ দিয়ে দেয়া হয়। বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। এ কার্যক্রমে তো কোনো রাজনীতি ছিল না। তারপরও কেন প্রতিহিংসার শিকার হতে হলো? এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
একুশের বইমেলাকে সারা দেশে সম্প্রসারিত করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব। এটি অবাস্তব কোনো দাবি নয়। ধরা যাক, মাটিরাঙ্গা উপজেলা কিংবা খানসামা উপজেলার কোনো কোনো বইপ্রেমী তরুণ-তরুণী (বয়স্ক হলেও ক্ষতি নেই) নতুন বই কিনতে চান। একুশের বইমেলা দেখার জন্য, প্রিয় লেখকের নতুন বইটি পাওয়ার নিমিত্ত আকুলিবিকুলি তার/তাদের যথেষ্ট। কিন্তু বাধাবিঘœ তো কম নেই; যথেধষ্টই। এই ‘তুচ্ছ’(?) উপলক্ষে অতি দূরের শহর ঢাকায় আসা-যাওয়া তো সময়সাপেক্ষ, কিছুটা ব্যয়বহুলও বটে। ঢাকায় এসে তার পক্ষে কি বইপত্র কেনা সম্ভব? সাধারণ একটা তথ্য সবাই জানেন, যারা প্রকৃত বইপ্রেমী, তারা ততটা সচ্ছল হন না। আবার যারা সচ্ছল-বিত্তবান, তাদের মধ্যে গ্রন্থের জন্য ভালোবাসা মোটেও নেই। বিকর্ষণ ও বিরাগই আছে বলতে গেলে। স্বল্প সামর্থ্যরে বইপিপাসু মানুষটির হাতের নাগালে আমরা কি বই পৌঁছে দিতে পারছি? কেন পারছি না? শুধুমাত্র ঢাকায় বইমেলার আয়োজন সে কারণেই খ-িত উদ্যোগ। বৃহত্তর জনমানুষ চাইলেও এই কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন না। এ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা কবে আমরা করবো? দেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর তো পার হয়ে গেল। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহারই আজো নিশ্চিত করা যায়নি। সেক্ষেত্রে একুশের বইমেলাও দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার স্বপ্নটি হয়তো সোনার পাথরবাটি হয়েই থাকবে।প্রতি বছর জেলা পর্যায়ে বইমেলা হতে পারে। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে না হোক, আপত্তি নেই। ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি বা সুবিধামত অন্য কোনো তারিখ ও মেয়াদে (পাঁচ দিন/তিন দিন/ নিদেনপক্ষে দুই দিন) এই বইমেলার আয়োজন করা যেতে পারে। এজন্য যা যা দরকারি, সরকারের অবকাঠামো, জনবল তো আছেই। আনন্দের বিষয়, দেশে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নতি হয়েছে। সুতরাং বই পাঠানো কোনো সমস্যাই না। সার্বিক তত্ত্বাবধান, আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতা সরকারি প্রশাসনযন্ত্র করতে পারে। আন্তরিক বলছি এই কারণে যে আলু পটলের সঙ্গে বইকে মেলানো ঠিক হবে না। বইও একপ্রকার পণ্য বটে, তবে এর সঙ্গে জ্ঞান ও মননের বিষয় জড়িত। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি জেলায় এই উদ্যোগ এ বছরই নেয়া সম্ভব। ব্যাপারটি নির্ভর করে সরকারের শুভবোধ ও সদিচ্ছার ওপর। নিশ্চিতভাবেই বলা চলে, সংশ্লিষ্ট জেলার বিদ্বান সমাজ, সুশীল সমাজের নাগরিকরা এ উদ্যোগে সর্বাত্মক সহায়তা দেবেন। না দেয়ার কোনো সঙ্গত কারণ নেই।
আমাদের দেশে সৃজনশীল গ্রন্থের প্রকাশনা মূলত ফেব্রুয়ারি মাসেই হয়ে থাকে। লেখক-পাঠক, প্রকাশক তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ থাকেন শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত এই মাসটির জন্য। বছরের অন্য সময় যে সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশিত হয় না, এমন নয়। তবে তার পরিমাণ খুবই সামান্য। সেই পরিমাণ যাতে বাড়ানো যায়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। পাঠাভ্যাস বৃদ্ধিতে কার্যকর প্রয়াস বাস্তবায়নের বিষয়টিও জরুরি। বই বিপণন ও বিক্রয়ে সরকারের আরো সহযোগিতা প্রত্যাশিত। দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে বই বিক্রি বিশেষ একটা হয় না। সেই বন্ধ্যত্ব কাটানোও অবশ্য কর্তব্য। বলাবাহুল্য, সেক্ষেত্রেও প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই।
এবারের একুশের বইমেলার পরিসর বাড়ানো হয়েছে। প্রথম দিন মেলায় গিয়ে দেখেছি, সুষ্ঠু পরিকল্পনার ছাপ নেই। সবকিছুই কেমন যেন অগোছালো। কেমন ছাড়া ছাড়া, কোনো কোনো জায়গায় অতিরিক্ত ঘিঞ্জি ভাব। ইপ্সিত স্টল খুঁজে পেতে ভালোই হয়রানি পোহাতে হয়। ভালো সময়ও লাগে। লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়। ডিজিটাল সাহায্য-সহযোগিতার তেমন কিছু চোখে পড়লো না।
অগণতি বই বেরোচ্ছে প্রতি বছর। মানের কথা যদি ওঠে, তবে জোর গলায় আমরা বলতে পারি না যে মানসম্পন্ন বই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেরোচ্ছে। মোটা দাগে একটা কথা বলা চলে, একটি বই যে সুসম্পাদিত হওয়া প্রয়োজন, সেই বোধ বা তাগিদ আমাদের লেখক/প্রকাশক কারো তরফেই নেই। মহা দরকারি এই সচেতনতা কবে আসবে, আদৌ কোনোদিন আসবে কিনা জানি না। শ্রদ্ধেয় ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। তবে সেই সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। বাক্য ভুল, বানান ভুলসহ মারাত্মক ত্রুটি নিয়ে বই জন্মাচ্ছে অজস্র। মাশরুম গ্রোথ বলেন অনেকে। বইয়ের সংখ্যা দিয়ে তো প্রাপ্তি ও অর্জনের বিষয়টি বিচার করা চলে না। গুণবিচারিও হতে হবে আমাদের।
এবারের বইমেলায় আমার নিজের ও সম্পাদিত বেশ কয়েকটি বই আসছে। এর মধ্যে মেলার প্রথম দিনেই এসেছে চারটি। এগুলো হচ্ছেÑ চট্টগ্রামের শব্দশিল্প থেকে প্রকাশিত ‘ডজনখানেক রূপকথা’, চন্দ্রদীপ থেকে প্রকাশিত ‘ছড়া ১০১’, শোভাপ্রকাশ থেকে কবিতার বই ‘কেমন আশ্চর্য পাপ’ এবং ঝিঙেফুল থেকে ‘আট দেশের রূপকথা’। আরো প্রকাশিত হচ্ছেÑ অনন্যা থেকে কবিতার বই ‘অভিমান মৃত্যু ও পাথর’, অক্ষর প্রকাশনী থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘পিপাসা ও পরম্পরা’, সময় প্রকাশন থেকে ‘নির্বাচিত ১০০ ছড়া’, মিয়াজী পাবলিকেশন্স থেকে ‘এক চাঙ্গাড়ি ছড়া’, শোভাপ্রকাশ থেকে সম্পাদিত গ্রন্থ ‘ভালোবাসার ১০০ কবিতা’, বাংলা একাডেমি থেকে সম্পাদিত গ্রন্থ ‘খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন রচনা সংগ্রহ’, অন্য প্রকাশ থেকে সম্পাদিত গ্রন্থ ‘হুমায়ূন আহমেদ সমকালের চোখে’, মাওলা ব্রাদার্স থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘হারানো পুরানো’ ইত্যাদি।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইজতেমাও টঙ্গী থেকে অন্য কোন জায়গায় সরিয়ে নেওয়া উচিত । তাহলে এসব সমাবেশকে ঘিরে ঐসব এলাকাগুলোতে প্রানচান্চল্য তৈরি হবে , অবকাঠামো নির্মাণ হবে এবং তৈরি হবে আয় রোজগারের পথও ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন