"বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ" ও "গণতন্ত্র"...

লিখেছেন লিখেছেন ইরফান ভাই ০৩ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০১:২৮ রাত



=>বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।বাংলাদেশের প্রাচীন একটি সংগঠন।বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে থেকেই এই দলটির সূচনা।তৎক্ষালীন পূর্ব পাকিস্তান যখন সাধারন নীরহ বাঙ্গালীদের উপর নির্যাতন চালাত তখন থেকেই বাঙ্গালীদের পক্ষে কথা বলাই খুব অল্প সময়েই জনপ্রিতা পেয়েছিল দলটি।এরই ধারাবাহিতায় তৎক্ষলীন পূর্ব-পাকিস্তানের সাধারন নির্বাচনে "ব্যালেট" যুদ্ধে বিপুল ভোটে জয়ী হয় দলটি।পশ্চিম পাকিস্তানের তৎক্ষালীন সামরিক জান্তারা এই জয় মেনে নিতে পারল না এবং তারা বিভিন্ন কৌশলে দলটিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাকার বিভিন্ন চক্রান্ত করে।কিন্ত সাধারন জনগন তাদের এই চক্রান্তের কথা জেনে যায় এবং দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলনের সৃষ্টি করে।যার শেষ হয় এক রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্য দিয়ে।আমরা পাই এক "স্বাধীন" দেশ যার নাম "বাংলাদেশ"

=>পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয় নতুন এক মানচিত্রের।৫৬ হাজার বর্গ মাইলের এই দেশের ৯০% মানুষই হয় শান্তিপ্রিয় "মুসলমান"।তবে যেই গণতন্ত্রের জন্য বাংলার মানুষ তাদের প্রাণ দিল সেই গণতন্ত্রকেই হত্যা করার জন্য দেশী-বিদেশি কাপুরুষরা নিরব যুদ্ধ ঘোষনা করল।স্বাধীনতার পরবর্তী যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বা স্বপ্ন ছিল গণতন্ত্রের।কিন্তুু বাংলার মানুষের কাছে সেটা "স্বপ্ন" হিসেবেই থেকে যায়।

=>স্বাধীনতার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দলের মধ্যে "আওয়ামী লীগ" অন্যতম।মজার ব্যাপার হল এই দলটির মাধ্যমেই স্বাধীন বাংলার প্রথম "বাকশাল" শাসন শুরু হয়!!!যে ব্যাক্তিটি গণতন্ত্র,স্বাধীনতা সহ জনগণের অধিকারের জণ্য "যার যা কিছু তা নিয়ে যাপিয়ে পরার জন্য" সেই ব্যাক্তিটিই অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর একদলীয় বাকশাল শাসন ব্যবস্থার পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন।একই বছরের নভেম্বর মাসে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন দলগুলোও সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে কৌশলে সরকারকে একদলীয় শাসন কায়েম করার জন্য আহ্বান জানায়।কেননা ততদিনে আওয়ামি লীগের একটা প্রভাবশালী অংশ মস্কো পন্থি কমিউনিষ্টদের দখলে চলে যায়।শেখ মুজিবের একান্ত

বিশ্বস্ত তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব

মনসুর আলীকে সোভিয়েত ইউনিয়নের দূতাবাসে ডেকে একদলীয় সরকার কায়েমের পরামর্শ দেয়া হয়।মনসুর আলী,শেখ মনি এবং মস্কোপন্থী আওয়ামী লীগের একটি অংশ প্ররোচণা এবং শেখ মুজিবের

নিজের ক্ষমতাকে আরো বাড়িয়ে তোলার বাসনা ও রাষ্ট্রকে সবদিক দিয়ে তার এবং তার দলের অনুগত রাখার জন্য একদলীয় সরকার

কায়েমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

১৯৭৫ সালের জানুয়ারী মাসের ১৮ তারিখে একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার নামমাত্র প্রস্তাব যখন সংসদীয় দলের মিটিং এ উত্থাপন করা হয় তখন প্রস্তাবটির বিপক্ষে মত প্রকাশ করেন সংসদীয় দলের বেশিরভাগ সদস্য।এ অবস্থায় মিটিং এ বলা হয়-এই প্রস্তাব এর

বিরোধিতা করা হলে শেখ মুজিব পদত্যাগ করবেন নতুবা একটি মেরুদন্ডহীন সংসদ সৃষ্টি করে এ প্রস্তাব পাশ করানো হবে।এই কথা শোনার পর শেখ মুজিবের ইচ্ছাকে

অনেকটা বাধ্য হয়েই সবাইকে মেনে নিতে হয়।১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারী জরুরী আইন ঘোষণার মাত্র ২৭দিন পর দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল

কায়েম করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করে এক আদেশ জারি করলেন শেখ মুজিব।এই ক্ষেত্রে স্বার্থ লোভে অন্ধ বামদের একটা বড় অংশ শেখ মুজিব তার পাশে পাই।তার বা তাদের এই ক্ষমতার দখলের লড়াই এর ফাকে দেশে স্বরণকালের শেষ্ট সংকটে পরে যায়।সারা দেশে খুন,চুরি,ধর্ষন,পাচারকারী থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ নাই যা করা হচ্ছে না।এমন অবস্তায় স্বাধীনতার মূল "প্রশান্তি" ভুলে গেল বাংলার স্বাধীন জনতা।এদিকে শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধা বা রাজাকার কারও পুরষ্কার বা বিচার করল না।পক্ষন্তরে নব্য স্বাধীন দেশের নতুন ক্ষমতালোভীদের জম্ন হল।যাদের ভাইরাসে আক্রান্ত হল "বাংলাদেশে"।মুলত একদলীয় "বাকশাল" প্রতিষ্টার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বা শেখ মুজিবের বিরোধী সব দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়।"পরবর্তীতে "রক্ষীবাহিনী" দ্বারা নির্মমভাবে বিরোধী মতালম্বীদের হত্যা করার মাধ্যমে তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার নীল নকশা বাস্ত্যবায়নের পরিকল্পনা করা হল।

=>স্বাধীন বাংলার অবস্তা যখন পরাধীন পূর্ব পাকিস্তানের অবস্তার চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না তখন হতাশ জনগনের মত সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশও হতাশ হয়ে গেল।তারা বিদ্রোহ করল এবং শেখ মুজিবকে হত্যা করল।

=> শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর দেশের অবস্তা আরও খারাপ হয়ে গেল।এমন একটা সময়ে রণাঙ্গনের সাহসী যুদ্ধা "জিয়াউর রহমান"-কে বাংলাদেশের জনগন ও সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশের সমর্থনে ক্ষমতা দেওয়া হল।

=>বিশ্বের সব সামরিক জান্তাকে অবাক করে দিল জিয়াউর রহমান।দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন করার মাধ্যমে দেশের মানুষের একটা বিশাল অংশের সমর্থন পেল জিউয়ার রহমান যা বিশ্বের সামরকি শাসকদের অবাক করে দিল।তবে "জিয়াউর রহমান" জনগনকের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা "গণতন্ত্র"-কে মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে জনগনের মনের মধ্যে যায়গা করে নিল।তিনি একদলীয় শাসন ব্যাবস্তাকে বাতিল করে "বহুদলীয়" শাসন ব্যাবস্তা ফিরিয়ে আনল।ভারতে অবস্হান করা শেখ হাসিনাকে দেশে আশার ব্যবস্তা করে দিলেন।জনগনের সমর্থন নিয়ে তৈরী করলেন একটি দল।ঠিক এই মুহুর্থে সেনাবাহিনীর একটা রহস্যময় অংশ দেশী-বিদেশী চক্রান্তের মাধ্যমে দেশের মানুষকে অবাক করে দিয়ে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করল।

=>"শেখ মুজিবুর রহমানের" মেয়ে "শেখ হাসিনা" দেশে আসার পর আওয়ামী লীগের প্রধান হন।

=>জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর তার প্রতিষ্টিত দলের প্রধান হন তার স্ত্রী "বেগম খালেদা জিয়া"

=>জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর সামরিক বাহিনীর এরশাদ ক্ষমতা দখল করে।এরশাদ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করার মাধ্যমে খুব দ্রুতই তার গ্রহণযোগ্যতা হারায়।সে নিজেকে সৈরশাসক হিসেবে প্রমান করল। ইতি মধ্যে দেশের মানুষ তার বিরোদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করে।জনগনের একটা বড় অংশকে সাথে নিয়ে "বেগম খালেদা জিয়া" সৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করল।এবার এরশাদ সাজানো নির্বাচনের ডাক দিল।বেগম জিয়া সেটা বর্জন করল।শেখ হাসিনা প্রথমে সেটা বর্জন করে ঘোষনা দিল যে,"যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা জাতীয় বেইমান" কিন্তুু দেশের জনগনকে অবাক করে দিয়ে কোন এক ইশারায় শেখ হাসিনা ও তার দল সৈরশাসক এরশাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নিজেদেরকেই "জাতীয় বেইমান" হিসেবে জাতির কাছে উপস্হাপন করল।স্বাধীন বাংলায় "আওয়ামী লীগ" "শেখ মুজিব" ও তার মেয়ে "শেখ হাসিনা" আবারও গণতন্ত্রের বিরোদ্ধে চলে গেল।কিন্তু "জিয়াউর রহমান" ও তার স্ত্রী "বেগম খালেদা জিয়া" আবারও গণতন্ত্রের পরীক্ষায় ১ম স্হান পেয়ে গেল।বেগম খালেদা জিয়ার "ক্ষমতার চেয়ে গণতন্ত্র বড়" এই নিতীর কাছে হার মানতে হল "শেখ হাসিনার" অবশেষে বিএনপি-আওয়ামী লীগ-অন্যান্য দলের সমন্বয়ে এরশাদের পতন হল।

=>মৃতপ্রায় গণতন্ত্রের দেশ "বাংলাদেশ" এ অনুষ্টিত হল নির্বাচন যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে "বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল" ক্ষমতা গ্রহন করল এবং নির্বাচনে মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হল।মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তিনিই।

=>নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দল নিরেপেক্ষ ব্যাক্তি বা তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্তা বাতিল করে "দলীয় সরকার" এর অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করলে "আওয়ামী লীগ" তার বিরোধীতা করে তীব্র আন্দোলনের সৃষ্টি করে।তার পাশে তারা জামায়ত ইসলামীকে কাছে পায়।আওয়ামী-জামায়ত জোটের আন্দোলন ও দেশের মানুষের মতামতকে সমর্থন করে বেগম খালেদা জিয়া তত্বাবধায়ক সরকার পুনরায় প্রতিষ্টা করে।

=>স্বাধীনতার পর আলোচিত গণতন্ত্রের হত্যার এই প্রত্যেকটি পরীক্ষাতেই আওয়ামী লীগ তাদের ব্যর্থ দল হিসেবে প্রমান করেছে।শুধুমাত্র ক্ষমতা অথবা অদৃশ্য শক্তির আশা পূরণ করার জন্যই তারা বাংলার জনগনকে ব্যবহার করেছে।বারবার তারা ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যমে "বাকশাল" প্রতিষ্টা করতে ছেয়েচে এবং সঙ্গী হিসেবে সব সময়ই কিছু বিশেষ লোক বা দেশকে তারা তাদের পাশে পেয়েছে।

=>আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতার জন্য যাকে প্রয়োজন তাকে সাময়ীকভাবে ব্যাবহার করেছে তারপর ফেলে দিয়েছে।তারা বাংলাদেশ জামায়ত ইসলামীর সাথে জোট করেছিল।এখন যখন আওয়ামী লীগের জামায়তের প্রয়োজন তাদের কাছে শেষ হয়ে এসেছে তখনই তাদের ত্যাগ করে যুদ্ধাপরাধীর মামলায় ফাসি দয়ে দিচ্ছে।মনে আছে "কাদের সিদ্দিকীর" কথা?

=>তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে কিন্তুু "শেখ হাসিনা"র মেয়েকে ঠিকই রাজাকারের ঘরের বউ বানাল।তার ছেলে বিদেশে লেখা-পড়া কলাল।তার ছেলের বউ একজন ইহুদী এবং বিদেশী...এই হল তার দেশপ্রেম।

=>স্বাধীনতার পর থেকেই তারা শুধু তাদের ক্ষমতা ছেয়েছে আর সব কিছুই তাদের কাছে তুচ্ছ।আজ দেখুন তারা দেশের জনগনের সাথে কত বড় "প্রতারণা" করেছে।৫-ই জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের নীল নকশার বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করেছে।সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে তারা আবারও জনগনের ইচ্ছাকে তুচ্ছ প্রমান করেছে।সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে আবারও তারা জনগনকে দোকা দিয়েছে।

=>উপর থেকে যারা পড়েছেন তারা মিলিয়ে দেখুন বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ও তার দল ৭১ পরবর্তী শেখ মুজিবের বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান? উত্তর নিশ্চয়:-হ্যাঁ।এটাই সত্য.....

=>বাংলার জনগন বারবার দেশের বিরোধীদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।সময় এসেছে এই দলটিকেও প্রত্যাখ্যান করার।ইতিহাসের আস্তাখুড়ে নিক্ষেপ করার।দেশ বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করার।

বিষয়: রাজনীতি

১১৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File