স্বপ্ন(ছোটগল্প)
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ কামাল হুসাইন ০৯ মার্চ, ২০১৬, ১০:১৭:৩১ রাত
স্বপ্ন (ছোটগল্প)
.
কি করছেন স্যার?
প্রফেসার ম্যাথ পড়ান। ক্লাস শেষে কমন রুমে বসে একটা বই পড়ছিলেন। চোখ উপরে
তুলে সরাসরি মঞ্জুর দিকে তাকালেন। তুমি তো অন্ধ নও জানি, বই পড়ছি দেখতে পাচ্ছনা?
মঞ্জু কিছুটা লজ্জিত হলো। মাথা নিচু করে চুপ দাঁড়িয়ে রইল।
:-কি হলো? কথা বলছোনা কেন? প্রফেসার ধমকানোর স্বরে প্রশ্ন করলেন।
মঞ্জু তবুও চুপ। কোন গভীর ভাবনায় যেন যুক্ত, তাই কথা বলতে পারছেনা।
:-টাকা লাগলে বলো, কত লাগবে?'
:-না স্যার, টাকার জন্য আসিনি।
মঞ্জু আড়চোখে প্রফেসারের দিকে তাকিয়ে ফের মাথা নিচু করে।
:'-তবে কি জন্য এসেছ?'
গলা খাঁকারি দেন প্রফেসার।
:'-আপনাকে কয়েকদিন বলেছি, আপনি শুনবেন বলেছিলেন। মঞ্জু মাথা থেকে টুপি সরায়। চুলের ভিতর দিয়ে ডান হাত ঢুকিয়ে চুলকাতে থাকে।
আমার এখন মনে পড়ছেনা, মাথা প্রচন্ড জ্যাম। প্রফেসার বইয়ের প্রতি মনোযোগী হন।
:-স্যার আমার জীবনের একটা গল্প, অবশ্য আমি এটাকে আমার স্বপ্নের গল্প বলি।' মঞ্জু আশারত চোখে প্রফেসারের দিকে তাকায়। প্রফেসার চোখ উপরে তুললেন না, বইয়ের দিকে তাকিয়েই বললেন
"অন্যদিন শুনব।"
মঞ্জুর মনে এলেও বলতে গিয়ে ভাবল, প্রফেসার মানুষ- উনাকে প্রশ্ন করা, "আপনি অনেকবার বলেছেন পরে শুনবেন, অথচ সেই দিন আর এলোনা, না শুনলে না বলুন?" বেয়াদবিই হবে। তাই বললো, "তবে কী আসবো স্যার?"
:-'হ্যাঁ এসো।' প্রফেসার থামলেন। "আজ বের হওনি?"
মঞ্জু দু পা সামনে এগিয়ে বলল,
-'আজ শরীরটা খুব খারাপ।'
প্রফেসার বই বন্ধ করলেন। বুক পকেটে হাত দিয়ে শূন্য হাত বের করেন। দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেট থেকে একশো টাকার নোট বের করে বলেন, '-এই নাও ঔষধ কিনো।'
মঞ্জু পিছনে ফিরে তাকায়, দু কদম সামনে গিয়ে অল্প সময় দাঁড়িয়ে থেকে কী যেন ভাবে। একশো টাকা খরচের একটা হিসাব করে। পঞ্চাশ টাকা দিয়ে চার কেজি আলু কিনবে। আর পঞ্চাশ টাকা জমা করে রাখবে। ঘরে আরো পঁয়তাল্লিশ টাকা জমানো আছে, পঁচানব্বই টাকা হলো। আরো কিছু টাকা জমিয়ে আধাকেজি খাসির মাংস কিনবে। মঞ্জু অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারেনা, শেষ কবে সে খাসির মাংস খেয়েছিল।
টাকাটি নিয়ে হাত উঁচু করে প্রফেসারকে সালাম দেয়। সহসা মঞ্জুর মনে হয়, টাকা হলেই টেনশন আসে। আরোও দরকার বা এটা লাগবে ওটা লাগবে এমন কিছু চিন্তা। যদি না থাকে তবে অন্যরকম চিন্তা।
টাকা ও টেনশন দুটো শব্দের মধ্যে বাহ্যিকত যেমন মিল দেখা যায় তেমনি অভ্যন্তরীণ একটা মিলও আছে। যদি টাকা থাকে সাথে টেনশন থাকে, যদি না থাকে তবুও টেনশন থাকে।
তাই টেনশন ও টাকা দুটো শব্দ একে অন্যের সহযোগী বলা যায়।
টাকার কারণে এতো বেশি মৃত্যু হয়, যা অন্যকোন কারণে হয়না। টাকার কারণে শত্রু সৃষ্টি, বন্ধুর আবির্ভাব। অপরদিকে টেনশনের কারণেও অধিক মৃত্যু সংঘটিত হয়, যা ক্যান্সারেও হয়না। একদিন টাকা এনে দিতে পারে় জয বা় ক্ষয়, তেমনি টেনশনও এনে দেয় জয বা় ক্ষয়।
তবে টেনশন কখনো টাকা এনে দেয়না, যদিও টাকা টেনশন এনে দেয়।
জীবনের দেনা পাওয়ার হিসাব মিলাতে মিলাতে মঞ্জু বুঝতে পারে।
প্রফেসার সাহেব এ পর্যন্ত কত টাকা দিয়েছেন তা মনে নেই মঞ্জুর, অবশ্য মনে রাখার প্রয়োজনও নেই। ভিক্ষার টাকা মনে রাখতে হয়না। মানুষ যদিও হিসাব করে দান করে, কিন্তু দান গ্রহনে হিসাবে রাখা হয়না।
"স্যার গল্পটা কিন্তু আমি আপনাকেই বলব। অনেক দিন অপেক্ষায় আছি।"
মঞ্জু টাকাটি পাঞ্জাবির পকেটে রাখে।
'-ঠিক আছে শুনব।'
'-কিসের গল্প ইলিয়াস ভাই?'
কমন রুমে অন্য একজন প্রফেসার এসে কম্পিউটারের সামনে বসেন।
ওর যেন কী একটা গল্প আছে, স্বপ্নের গল্প।
জবাব দেন প্রফেসার সাহেব।
"বছর দেড়েক আগে এক বিকেলে তার সাথে প্রথম দেখা, পৌষের মাঝামাঝি সময়ে এক সন্ধ্যায়। তীব্র শীত তখন। আমি পোড়াকান্দুলীয়া বাজারে একটা বই কিনতে গিয়েছিলাম। বাজার থেকে বের হয়ে যখন স্কুল মাঠের পাশে পুকুর পাড়ে আসি তখন সূর্য ডুবে যাচ্ছে। পরিচিত একজন ডাক দেয়। আমি হোন্ডার থেকে নেমে দাঁড়াই শহীদ মিনারের কাছে, বড় রেইনট্রি গাছটির নিচে। খুব শীত লাগছিল। তখন হঠাৎ দৌড়ে আসে মঞ্জু। পাগলের মতো, ধুলো মাখা দেহ। ছেঁড়া শার্ট পরা, শার্টের নিচে পাঞ্জাবি পরা। লু্ঙ্গি পেছিয়ে গলায় দিয়ে রেখেছে। দেখে মনে হলো পাগল। বুঝলেন আকবর ভাই?
প্রফেসার আকবর মাথা নাড়লেন, তারপর? উদ্বেগ নিয়ে জানতে চাইলেন।
আমরা দুজন কথা বলছিলাম। মঞ্জু নিঃশব্দে দাড়িয়ে থাকে। আমি প্রশ্ন করি কি ব্যাপার?
স্যার শীতে মরে যাচ্ছি। আমার কোন সোয়েটার নেই। একটা সোয়েটার কিনে দিবেন?
মঞ্জু কথা বলার সময় কাঁপছিল। পান খাওয়া লাল দাঁত গুলো একটার সাথে একটা লেগে যাচ্ছিল।
দেখে খুব মায়া হলো। সোয়েটার কিনে নিয়ে আসার সময় মঞ্জু আমার ঠিকানা জানতে চায়। তারপর থেকে মাঝে মাঝে যাওয়া আসা করে।
আকবর সাব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, মানুষের জীবন কত বিচিত্র,কত দুঃখ থাকে লুকিয়ে জানেনা কেউ।
-
মঞ্জু যে ঘরটিতে থাকে তা দু'চালা টিনের। একপাশে দুটো গরু থাকে, মাঝখানে খড়, অন্যপাশে সে। রাতে যখন গরু প্রসাব শুরু করে মঞ্জুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। মনে হয়ে টিনের চাল ছিদ্র হয়ে পানি পড়ছে। গোবরের গন্ধ আসে, মঞ্জু নাকে চেপে ধরে ঘুমায়। মাঝে মাঝে লেবু পাতা এনে পাশে রাখে। গন্ধ যখন বেশি থাকে লেবু পাতার গন্ধ নেয়। ছেঁড়া একটা মশারি, যার ভিতরে শত শত মশা এসে গান শুনায়। মঞ্জু রাগে কখনো নিজের গালে থাপ্পর মারে। অসহ্য লাগে। ঘরটা তার দূর সম্পর্কের এক মামার। কয়েক বছর ধরে এ ঘরেই থাকছে, আর যে তার কিছু করার নেই। শুয়ে শুয়ে সে অনেক কথা ভাবে। জন্মের পাঁচ বছর পরেই মা চলে গেছেন, বাবা চলে গেছেন জন্ম নেওয়ারই আগে। মাঝে মাঝে মঞ্জুর ইচ্ছে হয় বাবা-মা কে গালি দিতে। কিন্তু পরক্ষনেই বুঝে আসে যে তাদের কিছু করার ছিলনা। রাগ করে একা একা কাঁদে, সে কান্নার শব্দ হয়না। বারান্দার সামনে ডালিম গাছের সাথে নিজেকে মিলায়। গাছটি খুব একা। পাতা নেই, ফুল নেই, নিঃসঙ্গ গাছটি যেন নিজেরই প্রতিচ্ছবি।
ছোট চাচা মরে যাবার পর বাধ্য হয়ে পড়া ছাড়তে হয়। মঞ্জু তখন কেবল কলেজে ভর্তি হয়েছিল। মানসিক অশান্তি, চাচা বিয়োগ, সব মিলিয়ে মহাশূন্যতায় ভাসে মঞ্জু। কী করে কুলিয়ে উঠবে বুঝতে পারেনা। সেই থেকে একা অসহায় মঞ্জু, ডালিম গাছটির মতোই নিঃসঙ্গ। পৃথিবীতে কেউ নেই তার, কিছুই নেই।
একটা স্বপ্ন তবুও বুকের ভিতর লালিত ছিল। সেই স্বপ্ন তাকে সারাক্ষণ খুঁড়ে খুঁড়ে খায়। তার অসহ্য লাগে, চায় এ ব্যর্থ স্বপ্নের গল্প কাউকে বলে একটু হালকা হতে।
মঞ্চু আজ একটা শার্ট পরেছে। সে এমনি মাঝে মাঝে শার্ট, কখনো পাঞ্জাবি, কখনো বা গেঞ্জি পরে। এই শার্টটি তাকে দিয়েছিল স্কুল জীবনের এক বন্ধু। গত বছর মঞ্জু শম্ভুগঞ্জ গিয়েছিল। সেখানেই পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা। তার বিশাল গার্মেন্টস দোকান। মঞ্জুকে দেখে বন্ধুটি এতই অবাক হয়েছিল যে প্রথমে কোন কথাই বলতে পারেনি। কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থেকে বলেছিল, "তুই মঞ্জু?তোর এই অবস্থা?"
তার চোখ জলে ভরে গেল।
মঞ্জুও কম অবাক হয়নি। হাসতে হাসতে বলেছিল সবই চার আঙ্গুলের কপালের ব্যপার।
"তোর এমন হলো কি করে?"
মঞ্জু জবাব দেয়নি প্রশ্নের। "সে অনেক লম্বা গল্প, সময় করে একদিন বলব।"
ফিরে আসার সময় মিনহাজ শার্টটি হাতে ধরিয়ে দেয়। সুতি কাপড়। কালোর মধ্যে সাদা ডোরা কাটা। মঞ্জুর আজ সে বন্ধুর কথা মনে পড়লো। শার্টটি পরার আগে শার্টের এক কোণা থেকে সামান্য অংশ কেটে ফেলে। পরে ডায়েরী খুলে কাপড়ের সামান্য অংশ ডায়েরীর পাতার সাথে পিন মেরে লাগিয়ে দিল। লিখলো, দাতা মিনহাজ। মঞ্জু এমনি। ষষ্ট শ্রেণী থেকেই এ কাজটি করে আসছে। সে সময় থেকে যতো শার্ট পাঞ্জাবি গেঞ্জি পাজামা লুঙ্গি পরেছে সবগুলোরই সামান্য অংশ ডায়েরীর পাতায় পিন দিয়ে আটকিয়ে রেখেছে।
-
.
এক বাটি গোশত দেখে মঞ্জু অবাক হলো। মামার বাসায় মাঝে মাঝে তাকে খেতে দেয়। বেশিরভাগ সময়ের খাদ্যগুলো হয় বাসি। দু তিন দিন আগের, ফেলে দেওয়ার উপযুক্ত খাদ্যগুলো দেওয়া হয়। খেতে শুরু করে বুঝতে পারে গোশতগুলো ফ্রিজের। অনেক দিন আগে ফ্রিজে রাখা। কোন স্বাদ নাই। বিড়ালটি পাশে মিউ মিউ করছিল।নিজের জীবনটাকে বিড়াল জীবন মনে হয়।যেন তার বলার কিছু নেই।যা দিবে তাই খেতে হবে। বিড়ালের সামনে গোশতের টুকরো ছুঁড়ে মারে। তখন খুব ঘৃনা উৎপন্ন হয় তার মনে। দুনিয়ার বড় লোকগুলোর মন সবচেয়ে নোংরা, সবচেয়ে ছোট নিঃশব্দে বলে উঠে মঞ্জু। চুপ করে ভাতে লবণ মেখে দ্রুত খাওয়া শেষ করে। আজ সে প্রফেসার কে গল্প বলবেই। অনেক দিন থেকে যে গল্পটি জমানো।
শুক্রবারে ছুটি থাকায় প্রফেসার আসতে বলেছিলেন। মঞ্জু তাই আজ নতুন শার্ট পরেছে। বড় রাস্তা দিয়ে কিছু সময় হাঁটে।
তারপর পথ সংক্ষিপ্ত করতে ধানক্ষেতের আইল দিয়ে হাঁটা শুরু করে। চারদিকে সবুজ ছড়িয়ে। যেন সবুজের অরণ্য। কেউ একজন ক্ষেতের আইলে বসে ভাত খাচ্ছে। মঞ্জুর মনে হয় এই খাদ্যে অনেক সুখ, যা বড় লোকের অট্রালিকাতেও নেই। আমার জীবনটা কেন এমন হলোনা? কেন হলোনা কৃষকের সাধারণ জীবন? মঞ্জু ভাবে। পঞ্চানন্দপুর বাজার পেরিয়ে এসেছে মঞ্জু। কলেজ রোড দিয়ে যাওয়া শুরু করেছে। সামনে গ্রামীন ব্যাংক, তার পিছনেই প্রফেসারের বাসা।
সকাল দশটা। প্রফেসার পত্রিকা পড়ছিলেন।ভঘরের পশ্চিম কোণে কদলী বৃক্ষের নিচে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দেয় মঞ্জু। প্রফেসার জানালা দিয়ে উঁকি দেন।
-
মঞ্জুকে দেখে ঘরে আসতে বলেন। মঞ্জু আস্তে করে হাঁটে। সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।
একটা টুল এগিয়ে দেন প্রফেসার। নীরবে বসে মঞ্জু।
"তা কি খবর? খেয়ে তারপর গল্প শুরু করো।"
:-না স্যার, আমি খেয়ে এসেছি।
প্রফেসার আর জোর করেন না।
:-তবে তো চা খাবে?
মঞ্জু মাথা নাড়ে।
"স্যার শুরু করব?"
:-হ্যাঁ শুরু করো।
:'-জন্মের সময় থেকে এতিম আমি। চাচার কাছেই মানুষ হয়েছি। অভাব অনটনে জীবন কাটতো। তবুও স্যার একটা স্বপ্ন দেখতাম।'
:'-কি স্বপ্ন?'
ততক্ষণে চা আসে। প্রফেসার চায়ের কাপ হাতে নেন।
:'-আকাশে যে সূর্য উঠে সেই সূর্য হওয়ার স্বপ্ন।'
প্রফেসার বিস্মিত হন।
:'-কি বলো?'
:'-স্যার সূর্য বলতে আসলে সূর্যের মতো আলোকিত হতে। পৃথিবী যেমন সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়, তেমনি আমার ছড়ানো সুশাসনের আলোতেও অন্ধকার দূর হবে।'
:'-আমি বুঝতে পারছিনা। বুঝিয়ে বলো।'
:'-অজ্ঞনতার আঁধার, বর্বরতার আঁধার দূর করতে আলো ছড়াতে চেয়েছিলাম।'
মঞ্জু কথা বলছে ঠিক তবে একবারও প্রফেসারের দিকে তাকায়নি।
:'-তুমি আসলে কি বুঝাতে চাচ্ছ?' চায়ে চুমুক দেন প্রফেসার।
:'-স্যার আমি এই দেশের একজন শাসক হতে চেয়েছিলাম।'
'-এটাতো বড় কঠিন স্বপ্ন। কেন দেখেছিলে এই স্বপ্ন?'
:-স্যার, আমি দেখতাম মানুষ চুরি করে, খুন করে, মিথ্যা বলে, অনেক রকম অন্যায় করে। আমি চাইতাম দেশটা এসব থেকে পবিত্র হবে। এখানে কোন অন্যায় থাকবেনা। টাকার বান্ডেল চোখের সামনে পরে থাকবে, কেউ লোভ করবেনা। চুরি করার সাহস করবেনা।
প্রফেসার চুপ থাকেন। কি বলা উচিত হয়তো বুঝতে পারেন না।
মঞ্জু আবার বলে,
:'-স্যার আমার প্রথম কখন এই ইচ্ছে হয় জানেন?'
:-বলো।
:-'স্যার আমি যখন প্রথম দেখি, একজন নারী টাকার জন্য নিজের দেহ বিক্রি করে দেয়। আমার খুব কষ্ট লাগে, ভাবি তার জন্য কিছু করা দরকার।'
প্রফেসার এক দৃষ্টিতে মঞ্জুর দিকে তাকিয়ে থাকেন। কথা বলেন না।
স্যার আজ কেউ আমাকে কোন কাজ দেয়না। সবাই পাগল বলে। তাড়িয়ে দেয়।
স্যার, আমি কি পাগল?
প্রফেসার নীরব।যেন কথা বলতে ভুলে গেছেন।
:-স্যার, আমি আর এখন শাসক হবার স্বপ্ন দেখিনা। আমি একটা সাধারণ জীবন চাই। তা হউক কৃষিকাজ করে বা হউক রিক্সা চালিয়ে।
:-'স্যার, আমি কি একটা সাধারণ জীবন পাবোনা?'
স্বচ্ছ সুন্দর আকাশও হঠাৎ কখনো মেঘলা হয়ে যায়, বৃষ্টি পড়ে। এভাবে প্রফেসারের হাসিমুখ মঞ্জুর এ কথায় মলিন হয়ে চোখ থেকে বৃষ্টি পড়ে। ডান হাতে চোখ মুছেন।
:'-স্যার আমি কি ভুল স্বপ্ন দেখেছিলাম?'
যার মাধ্যমে অগণন ছাত্র জীবনের বিচিত্র রঙের কথা শিখেছে। শিখেছে মানুষ হওয়ার উপায়। শিখেছে দুনিয়ার নানা নিয়ম। সে প্রফেসার আজ জবাবহীন। এর উত্তর হয়তো তাঁর জানা নেই।
তাই একদৃষ্টিতে মঞ্জুর দিকে তাকিয়েই থাকেন।
--
সৈয়দ কামাল হুসাইন
বিষয়: সাহিত্য
১৩৪৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসসালামুআলাইকুম।
গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লেগেছে!
আসলেই স্বপ্ন দেখে মন -আকাশে যে সূর্য উঠে সেই সূর্য হওয়ার স্বপ্ন।' এই অংশটুকু পড়ে!
আরো লিখুন, শুভকামনা
মন্তব্য করতে লগইন করুন