ইসলামী দল ও ফিরকাগুলি বিলুপ্তির আবেদন- মাহমুদুল হাসান

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০২:০০:৪৮ দুপুর

লাঞ্ছনা ও দারিদ্রতা তাদের ভাগ্যলিপির শামিল করে দেয়া হয়েছে, তারা আল্লাহর ক্রোধ টেনে এনেছে (বাকারা-৬১)। আয়াতটি ইহুদিদের শানে নাযিল হলেও বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রযোজ্য। কারণ দুটি- নামায রোজা ব্যতীত বাকি ইসলাম বাদ পড়ে গেছে এবং ফিরকার প্রবর্তক মুরুব্বিদের রব হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য দায়ী আলেম সমাজ এবং বিভিন্ন ফিরকার মুরুব্বীরা। এ বিষয়ে কিছু বলার যোগ্যতা ও সাহস কোনটাই আমার নেই বিধায় আমি শুধু কোরআনের বক্তব্য নকল করে যাব। কুরআন পরিত্যক্তঃ তোমরা কি কিতাবের কিয়দাংশ মান আর কিয়দাংশ অস্বীকার কর? (বাকারা-৮৫) হক্কুল্লাহ সংক্রান্ত নামাজ-রোজার শ’খানেক আয়াত ব্যতীত হক্কুল ইবাদ সংক্রান্ত বাকি কুরআন-সুন্নাহ এবং রাসূল সা. ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাহ ইসলাম তথা মাদরাসা সিলেবাস থেকে বাদ পড়ে গেছে। যেমন-

মৌলিক চাহিদাঃ কুরআনের বিধান অনুযায়ী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার চাহিদা পূরণ করতে হবে। তজ্জন্য ইসলাম ক্রমান্বয়ে যাকাত, ইনফাক ও সম্পদের সমবন্টন- এ তিনটি আর্থিক খাত নির্ধারণ করে দিয়েছে। মৌলিক অধিকারঃ বিচারের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান নাই কিন্তু ইসলাম শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের (দিয়ত) বিধান দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছে। ফিরকাঃ ফিরকাবাজদের সম্পর্কে কুরআনের ঘোষণা হলো- তারা শয়তান (আনআম- ১৫৩, তাবারি), কাফের (আল-ইমরান- ১০৬, কুরতুবি), এ উম্মতের ইহুদি (আল-ইমরান- ১০৫), ফিরকার প্রবর্তককে রব হিসাবে গ্রহণ করেছে (তওবা- ৩১), রাসূলের (সাঃ) সাথে কোন সম্পর্ক নাই (আনআম- ১৫৯), শয়তানের মত উম্মাহর মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ায় (মায়েদা- ৯১), মুসলিম-১৮৫২ নং হাদিসে তাদেরকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ইত্যাদি আরো অসংখ্য দলীল। বিদআতঃ হক্কুল্লাহর ক্ষেত্রে নামাজ-রোজার বাইরে রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম কিছুই করেননি বিধায় আমরা নামাজ-রোজার বাইরে ইসলামের নামে যা কিছু করছি সবই বিদআত। আকিদাঃ হাদিসে জিবরাঈলে বলা হয়েছে, ইসলামের বুনিয়াদি বিষয় পাঁচটি- কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত। আর আকিদাগত বিষয় হল ‘আমান্তু বিল্লাহি’ এর সাতটি। কাজেই মোট ১২টি বিষয় হলো ইসলাম। কিন্তু প্রত্যেক ফিরকার বিদআতকে আকিদার স্থলবর্তী করে আকিদার দোহাই দিয়ে উম্মাহকে অসংখ্য বিদআত-ফিরকায় বিভক্ত করা হয়েছে। জিহাদ-খিলাফতঃ জিহাদ-খিলাফতের উদ্দেশ্য দরিদ্রের হক যাকাত-জিযিয়া আদায় করা, মজলুমের হক প্রতিষ্ঠা করা এবং যুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে জিহাদ করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বিধানটাকে উল্টে দিয়ে জিহাদের নামে সন্ত্রাস হচ্ছে।

রব হিসাবে গ্রহণঃ তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের ধর্মগুরুদের রব (বিধানদাতা) হিসাবে গ্রহণ করেছে (তাওবা-৩১)। রব অর্থ ধর্মগুরুদের ইবাদত বন্দেগী করা নয় বরং তারা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করেন আর অনুসারীরাও তা মেনে নেয় (সকল তাফসির)। আল্লাহ তাআলা হক্কুল ইবাদ, ঐক্য, জিহাদ-খেলাফত ইত্যাদি ফরজ করেছেন কিন্তু আমরা এসব বর্জন করে নামাজ-রোজা ব্যতীত বাকি সকল ক্ষেত্রে নিজ নিজ ফিরকার প্রবর্তক মুরুব্বির অনুসরণ করে তাদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করেছি। সিলেবাসঃ তারা নিজেদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে ফিরকার কিতাবাদির ভিত্তিতে (মুমিনুন-৫৩, তাবারি)। আমরা প্রত্যেক ফিরকা কুরআন-হাদিস বর্জন করে নিজ নিজ ফিরকার সিলেবাসকে একমাত্র ইসলাম হিসাবে গ্রহণ করেছি।

রাসূলের দায় মুক্তিঃ যারা নিজেদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং দলে দলে ভাগ হয়ে গেছে তাদের সাথে রাসূলের সা. কোন সম্পর্ক নেই (আনআম-১৫৯)। আয়াতের দুটি অংশ- দলে দলে ভাগ হওয়াঃ ইংরেজ আমলে ইসলাম, উম্মাহ ও ঈমান রক্ষার স্বার্থে দেওবন্দ, তাবলীগ, জামাআতে ইসলামী, বেরলভি, আহলে হাদিস এবং আরবে শিরক বিদআতের মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে সালাফিজম- এই ছয়টি মতবাদের জন্ম হয়। ইংরেজ বিদায়ের পর ফরজ ছিল এই সকল ফিরকা-বিভক্তি মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া কিন্তু উল্টো প্রত্যেক ফিরকার প্রবর্তক মুরুব্বি ও সিলেবাসের অনুসরণে আমরা প্রধান ছয়টি দলে বিভক্ত হয়ে গেছি। দ্বীনকে বিভক্ত করাঃ দ্বীন অর্থ জীবন ব্যবস্থা বা কর্মপদ্ধতি। আর আমাদের প্রত্যেক ফিরকার কর্মপদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন-যার সাথে রাসূলের সা. কর্মপদ্ধতি এবং আন্তফিরকার কর্মপদ্ধতির মধ্যে কোন মিল নেই। যেমন ইসলামী দলগুলি ইসলাম বাদ দিয়ে পশ্চিমা বুর্জোয়া গণতন্ত্রের অনুসরণ করছে, তাবলীগ হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদের বাইরে ছয় উসুল ও ফাজায়েলে আমলের অনুসরণ করছে, সুফীবাদিরা মিলাদ-কিয়াম, যিকির, ওরস, মাজারের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, কওমি-আলীয়া মাদ্রাসাগুলি শুধু ইমাম ও আরবি ভাষার শিক্ষক পয়দা করছে। এসব কর্মকাণ্ড রাসূল সা. করেননি বিধায় এগুলি বিদআত। এভাবে প্রত্যেক ফিরকা নিজেদের সিলেবাস অনুযায়ী নতুন স্বতন্ত্র ধর্মে রূপান্তরিত হয়ে গেছে বিধায় রাসূলের সা. সাথে সম্পর্ক নাই।

অনুসরণ ও ভোট দানের বিধানঃ তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু (কুরআন ) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো (আল ইমরান-১০৩)। উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হলো, প্রত্যেক ফিরকা নিজ নিজ ফিরকার প্রবর্তক মুরুব্বীকে রব হিসাবে গ্রহণ করেছে, কুরআন-হাদিস বাদ দিয়ে ফিরকার সিলেবাসকে ইসলাম হিসাবে গ্রহণ করেছে, ফিরকা-বিভক্তির কারণে রাসূলের সা. সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নাই। কাজেই কুরআনের ঘোষণা হলো, যে কোন ফিরকার অনুসরণ, আর্থিক সাহায্য দান এবং তাদেরকে ভোট দেয়া হারাম। মুকায়্যাদ মুসলিমঃ আল্লাহর নির্দেশ ‘তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না (৩-১০২) অথচ আমরা দেওবন্দী বা তাবলীগী বা সালাফী বা জামাতী ইত্যাদি হয়ে তারপর শর্তযুক্ত মুসলিম। কাজেই আমাদের মূল ছয়টি ফিরকাসহ সকল ফিরকার নাম বিলুপ্ত করে মতলক মুসলমান হয়ে “ইত্তেহাদুল উম্মাহ” এর ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা ফরজ। সবাই নিজ নিজ ফিরকাকে একমাত্র ইসলাম মনে করছে বিধায় ফিরকার নাম বিলুপ্ত না করা পর্যন্ত সঠিক ইসলামে ফিরিয়ে আনা যাবে না। দ্বীন প্রতিষ্ঠাঃ তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর, এতে কখনো বিভক্ত হয়ো না (শুরা-১৩)। আয়াতের দুটি শর্ত- (১) ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা ফরয। দ্বীন অর্থ- হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদ। হক্কুল্লাহ সংক্রান্ত নামাজ-রোজার যথেষ্ট খেদমত হচ্ছে মাশাল্লাহ। কিন্তু হক্কুল ইবাদ- রাষ্ট্র-রাজনীতি ও মানবাধিকার সংক্রান্ত পার্থিব সকল বিষয় ইসলাম থেকে বাদ পড়ে গেছে। আর ইসলাম থেকে বাদ পড়া বিষয়গুলি পর্যবেক্ষণে আমার মনে হয়েছে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সাতটি বিষয় বা সাত দফা বাস্তবায়ন করা ফরজ।

১। মুস্তাদআফের অধিকারঃ এটাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। মুস্তাদআফ অর্থ দুর্বল, পরিভাষায় সম্পদ ও শক্তির দিক দিয়ে সমাজের অক্ষম দুর্বল শ্রেণী। তাদের অধিকার হলো (১) মৌলিক চাহিদাঃ নিঃস্ব, দরিদ্র, হিজড়া, পতিতা ইত্যাদি সক্ষম শ্রেণীকে প্রত্যেক জেলায় বসবাসের ভবন এবং সংলগ্ন স্থানে শিল্প কারখানা নির্মাণ করে কর্মসংস্থান করতে হবে। অক্ষম শ্রেণী- এতিম, বিধবা, বৃদ্ধ, বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী ইত্যাদিদের ভাতা দেয়া হবে। (২) মৌলিক অধিকারঃ বিচারের ক্ষেত্রে শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ উভয়টির বিধান থাকবে। যেমন গত সরকারের গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে জিহাদ করা আলেমদের উপর ফরজ ছিল কিন্তু ছাত্ররা সে দায়িত্ব পালন করে জাতির ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কাজেই নিহতদের শহীদ হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে, তাদের পরিবারকে দিয়ত (একশত উটের মূল্য) প্রদান করতে হবে, আহতদের চাকরি অথবা আমৃত্যু সপরিবার ভাতা দিতে হবে (৩) নারী-শিশু ও সংখ্যালঘুদের সার্বিক নিরাপত্তাসহ দরিদ্র-অক্ষমদের পুনর্বাসন ও ভাতা দেয়া হবে (৪) শ্রমিক শ্রেণী অর্থাৎ শিল্প শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমিক ও কৃষক মজুর। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের উপযোগী বেতন, সরকারি উদ্যোগে প্রবাসী শ্রমিক পাঠানো, রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সর্বত্র সম্মানের ব্যবস্থা, কৃষি খাতে ভর্তুকি ইত্যাদি দিতে হবে। আমার গ্রন্থাবলীতে এসবের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

এসব অধিকার আদায় করা সকল মুসলমানের উপর ফরজ। এ ফরজ আদায় না করলে মসজিদ ও কুরআন থাকার প্রয়োজন নাই। কারণ শুধু নামাজ পড়লে পরকালে মুক্তি জুটবে না, দলিল-বাকারা-১৭৭, মুদ্দাচ্ছির-৪৪। আর কুরআন প্রদত্ত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা না করে শুধু ঝাড়ফুক আর তাবিজ কবজের ব্যবসার জন্য কুরআন থাকার দরকার আছে কি? কাজেই আলেম সমাজের দায়িত্ব হল, এ ফরজ আদায়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা। অন্যথায় ইসলাম প্রদত্ত অধিকার থেকে বিপন্ন মানবতাকে বঞ্চিত করার পাপ এবং পতিতাদের পাপ আলেমদের উপর বর্তাবে। ২০২৪ দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর সবাই ক্ষমতা ও নিজ নিজ স্বার্থ আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে কিন্তু মুস্তাদআফের কথা কেউ বলছে না। কাজেই আমি স্বয়ং মুস্তাদআফ হিসাবে অধিকার আদায়ে আমরা “ওয়ার্ল্ড মুস্তাদআফ মুভমেন্ট” (প্রস্তাবিত নাম) সংগঠন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলাম। যে দল মুস্তাদআফের অধিকারসহ সাত দফা দাবি মানবে আমরা তাদেরকে ভোট দিবো, ক্ষমতায় পাঠাবো। কেউ এগিয়ে না আসলে আমরা রাজনৈতিক ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার ঘোষণা দিলাম।

২। শিক্ষা সংস্কারঃ নামাজ রোজার শ’'খানেক আয়াত ব্যতীত বাকি কুরআন-সুন্নাহ এবং রাসূল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাহ মাদ্রাসা সিলেবাস এবং সকল ফিরকার সিলেবাস থেকে বাদ পড়ে গেছে। এটাই ইসলাম ও উম্মাহ পতনের মূল কারণ। কাজেই কুরআন-সুন্নাহ, আমাদের পূর্বপুরুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং তা গ্রহণ করে পাশ্চাত্য কর্তৃক বর্তমান পর্যন্ত উন্নীত আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান- এ তিনটির সমন্বয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে কওমি-আলিয়া উভয় ধারায় পাঠ্যভুক্ত করে জাতীয়করণ করতে হবে। তারপর উন্নত সিলেবাস হিসাবে ক্রমান্বয়ে আধুনিক ধারায়ও পাঠ্যভুক্ত হবে। (৩) শরিয়া আদালতঃ আমাদের প্রত্যেকটা ফিরকা কুরআন-সুন্নাহ এবং রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের কর্মপদ্ধতি বাদ দিয়ে নিজ নিজ ফিরকার মুরুব্বী ও সিলেবাসকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে। কাজেই প্রত্যেক ফিরকা থেকে একজন করে বিজ্ঞ আলেম নিয়ে শরিয়া আদালত গঠন করে তাদের ভুলগুলি হাতেনাতে ধরিয়ে দিয়ে কুরআনে ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় উম্মাহর মুক্তির উপায় নাই।

৪। দুর্নীতি নির্মূলঃ দুর্নীতি নির্মূলের একমাত্র পথ হল- মসজিদ ভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে অর্থাৎ, প্রত্যেক ওয়ার্ডের প্রধান মসজিদের ইমাম, মসজিদ কমিটি, প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হেড/অধ্যক্ষ মিলে বোর্ড গঠন করবেন। এ বোর্ড জুমার দিন সকলের সামনে সবকিছু ফায়সালা করবে বিধায় ন্যূনতম দুর্নীতির সম্ভাবনা থাকবে না। ইমামগণ সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতন পাবেন। কাজেই সাড়ে তিন লক্ষ মসজিদের ১০ লক্ষ ইমাম মোয়াজ্জেম খাদেম তাদেরকে ভোট দিবেন-যারা এ দাবি মানবে। (৫) অবৈধ সম্পদঃ ইসলামী বিধান অনুযায়ী দেশ-বিদেশের সকল অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত করতে হবে, বিত্তশালীদের চার হাজার দিরহামের অতিরিক্ত সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত করা যাবে (দলিল- তওবা-৩৪, তাবারি)। এ সম্পদ দিয়ে মুস্তাদআফ পুনর্বাসন ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। (৬) গণতন্ত্রের বিষবৃক্ষঃ প্রচলিত বুর্জোয়া গণতন্ত্র একটা নিষ্ঠুর পৈশাচিক জাহেলী মতবাদ। রাজনৈতিক দলগুলোর গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি অর্থপাচারের মূল উৎস হলো এ মতবাদ। কাজেই এ মতবাদে শান্তির আশা সুদূর পরাহত বিধায় ইসলামী গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। (৭) মুসলিম জাতিসংঘঃ মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করে ফিলিস্তিন আরাকানসহ মুসলিম বিশ্বের সকল সমস্যা সমাধান করতে হবে। এ লক্ষে মুসলিম দূতাবাসগুলি অবরোধ করতে হবে যতক্ষণ না ৫৭টি মুসলিম দেশ মিলে এ সংগঠনের ঘোষণা দেয়। এ ৭ দফা বাস্তবায়নে সর্বস্তরের জনগণকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আলেম সমাজের দায়িত্বঃ পশ্চিমাদের বিশ্ব নেতৃত্ব আর উম্মাহ ধ্বংসের জন্য তাদের চাহিদা মাফিক ইসলাম থেকে পার্থিব যাবতীয় বিষয় বর্জন করে পারলৌকিক নামায-রোযার সাথে কিছু বিদআত মিশ্রন করে উম্মাহর দৃষ্টি বিদয়াত-ফিরকার দিকে ঘুড়িয়ে দিয়ে পরস্পরের শত্রু বানিয়ে উম্মাহর ধ্বংস আর পশ্চিমাদের বিশ্ব নেতৃত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। এ জন্য দায়ী আমরা আলেমরা এবং ফিরকার মুরুব্বিরা। কাজেই সকল ফিরকার নাম বিলুপ্ত করে ৭ দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে ইসলাম প্রদত্ত মানবাধিকার বা শেষ যমানার খিলাফত প্রতিষ্ঠা করুন। আর যদি কুরআনের নির্দেশ অমান্য করেন তাহলে উম্মাহর উপর যে গজব চলছে তার জন্য “আলাইকুম ইছমুল আরিসিয়্যীন” আল্লাহর আদালতে জবাবদিহি করতে হবে।

জনগণের দায়িত্বঃ আমরা জনগণ মনে করি নিজ নিজ ফিরকার মুরুব্বিরা আমাদেরকে জান্নাতের টিকেট (indulgence) দিচ্ছেন কিন্তু আসলে তারা গোটা উম্মাহকে জাহান্নামের ঘাট উৎরে দিচ্ছেন, আল্লাহর গজব টেনে এনেছেন এবং পশ্চিমাদের দাস বানিয়েছেন। কাজেই সঠিক ইসলাম নির্ণয়ের জন্য কোন নিরপেক্ষ আদালতে আমার রচনাবলী ও বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়া জনগণের ফরয দায়িত্ব। কুরআন বলছে, যাচাই ব্যতীত কোন ফিরকার অনুসরণ, সাহায্যদান এবং ভোট দান করা হারাম, সম্পূর্ণ হারাম।

রাষ্ট্র চালকদের দায়িত্বঃ চ্যালেঞ্জটা হল, ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মতবাদ কিন্তু ইসলাম থেকে মানবাধিকার সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় বাদ পড়ে গেছে। প্রমাণ আমার গ্রন্থাবলী। কাজেই বুর্জোয়া গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ইসলাম- এ তিনটির প্রত্যেকটি বিধান পর্যালোচনা করে মানব কল্যাণে যেটি শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত হয়-তার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। তজ্জন্য একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করতে হবে, সেখানে ইসলামের পক্ষে আমি থাকবো ইনশাআল্লাহ। অন্যথায় রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান রচনা আমরা মানিনা, কখনোই মানবো না।

ছাত্র সমাজের দায়িত্বঃ আমি চিৎকার করে বলছি এবং আমার গ্রন্থাবলিতে প্রমাণ করেছি যে, বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের অবস্থান ইসলামের হাঁটুর নিচে। কিন্তু পার্থিব যাবতীয় বিষয় মাদরাসা সিলেবাস থেকে বাদ দিয়ে একটা ভিক্ষার ধর্ম হিসেবে ইসলামকে চরম লাঞ্চিত করা হয়েছে আর মাদরাসা শিক্ষিত-যারা বিশ্ব শাসন করতো তারা জাতির ভিক্ষুক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। কুরআন বলছে, এ বিকৃত সিলেবাস হারাম। কাজেই একজন মাদরাসা শিক্ষক (মুহাদ্দিস) হিসেবে কওমি-আলিয়ার ছাত্ররা আমার ছাত্র বা ছাত্রতুল্য বিধায় আবেদন, তোমরা ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংসের মূল উৎস মাদরাসার বর্তমান সিলেবাস প্রত্যাখ্যান করো। তেমনি বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের ছাত্ররা- ছাত্রশিবির, ছাত্রজমিয়ত, ছাত্রআন্দোলন, ছাত্রসেনা, তাবলীগ ইত্যাদি ছাত্রদের প্রতি আবেদন, কুরআন ফিরকা ও ফিরকার সিলেবাসের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। কাজেই তোমরা ফিরকার মুরুব্বি ও সিলেবাস ত্যাগ করে কুরআনে ফিরে আসো। তাহলে যা হারাবে তা হল দাসত্বের শিকল আর যা পাবে তা হল বিশ্ব নেতৃত্ব এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। কাজেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃবৃন্দের সাথে ঐক্য গড়ে তুলে রাষ্ট্র ও বিশ্ব সংস্কারে এগিয়ে যাও। এরপরেও যদি কুরআনে ফিরে না আসো তাহলে তোমরা পৃথিবীর অজাত কুজাত বেজাতের হাতে কীট পতঙ্গের মত মারা পড়বে। আর উম্মাহর উপর যে গজব চলছে তা ঈসার আঃ ভাষায় ‘এটা তো প্রসব ব্যথার সূচনা মাত্র’।

হাইকোর্টের দায়িত্বঃ প্রত্যেকটা ফিরকা মুসলমানদের ইহকাল-পরকাল নষ্ট করে শুধু মানবাধিকারই লঙ্ঘন করছে না বরং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। কাজেই সংবিধানের ৪৪ এবং জাতিসংঘ সনদের ৮ নং ধারা অনুযায়ী এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব হাইকোর্টের। সুতরাং হাইকোর্টের মাননীয় বিচারক এবং আইনজীবীগণের দায়িত্ব হল তিনটি রিট করা- কওমি আলীয়ার বোর্ডগুলির বিরুদ্ধে, ফিরকাগুলির বিরুদ্ধে এবং বুর্জোয়া গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ও ইসলাম- এ তিনটির মধ্যে যেটি শ্রেষ্ঠ সে অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গে।

এ পর্যন্ত আমার বক্তব্যের দলিল প্রমাণ দেয়া হয়েছে- আলেমদের পতনে বিশ্ব কি হারালো, মানবাধিকার প্রশ্নে ইসলাম ও জাতিসংঘ সনদ, ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার সংঘাত ও অন্যান্য গ্রন্থে।

বিষয়: রাজনীতি

৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File