হাসান ফেরদৌসি -৩

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৪ অক্টোবর, ২০১৭, ০৭:৩৯:১৪ সন্ধ্যা



হাসান ফেরদৌসি- একটা সঙ্গ, একটা বান্ধব, একটা আদর্শ জুটি। আশপাশের সবাই জানে এরা মানিক জোড়। একসাথে হাসে খেলে আনন্দ করে, যেদিকেই যায় একসাথে যায়। তবে তাদের অধিকাংশ সময় কাটে ঝগড়া ও খোচাখোচি করে। এখন তারা বড় হয়েছে, সব কিছুই বুঝে, এজন্যই একে অন্যকে আঘাত দেয় না। আঘাত দিলেও প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজের মনে আরো বেশি আঘাত পায়। হাসানের গায়ে কোন আঘাত লাগলে সেই আঘাত গিয়ে লাগে ফেরদৌসির মনে। আবার ফেরদৌসি ব্যাথা পেলে সেই ব্যাথা গিয়ে বাজে হাসানের হৃদয়ে। এজন্যই তারা একে অন্যকে ব্যথা দেয়ার চেষ্টা করে না বটে তবে সব সময় খোচাখোচি ও জ্বালাতন করে। ফেরদৌসি কয়দিন ধরে বায়না ধরেছে তাকে বিল থেকে শালুক ও পানিফল এনে দিতে হবে। কিন্তু হাসান জোকের জন্য পানিতে নামতে ভয় পায়, সে আনতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিল। ফেরদৌসিও জেদ ধরল, না এনে দিলে ভাত খেতে দিবে না।

তখন সে নতুন জ্বালাতন শুরু করল। লক্ষ্য রাখে মা কখন হাসানকে ভাত দিয়ে বাইরে যায়, সাথে সাথে সে দৌড়ে গিয়ে ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে ‘উহঃ ঘরটা কি বিচ্ছিরি ময়লা’ বলে ঝাড়ু দিয়ে ধুলা বালু ময়লা হাসানের পাতের দিকে চালিত করে। হাসানও প্রথম দিনের পর থেকে সতর্ক হয়ে গেছে, ফেরদৌসিকে দেখলেই প্লেট হাতে নিয়ে হুট করে দাঁড়িয়ে যায়। ফেরদৌসিও তার কর্ম চালিয়ে যায় আর বলে ‘আমাকে শালুক আর পানিফল না এনে দিলে এমনই করব। রাত্রে হাসানকে খাবার দিয়ে মা পাশের ঘরে গেলেন, ফেরদৌসি দৌড়ে এসে ঝাট দেয়া শুরু করল। হাসানও প্লেট নিয়ে হুট করে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলল, ‘রাখ বজ্জাত, আজ তোর বদামি বের করব। তারপর ফেরদৌসি দরজা দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাসান ডান পা বাড়িয়ে তার পায়ে লেং মারল। আর সাথ সাথে তার দীর্ঘ দেহটা রান্না ঘরের উচু ভিটি থেকে ছিন্নমুল তালগাছের মত ধপাস করে উঠানে মুখ থুবড়ে পড়েই ক্যাত করে উঠল। ব্যথা পেয়ে কেঁদে উঠল, কিন্তু মায়ের ভয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে দৌড়ে ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ কেঁদে শান্ত হল।

ফেরদৌসি স্কুল থেকে এসে হাসানের রুমে গিয়ে বড় করুন সুরে বলল, ভাইয়্যা চল না ভেট শালুক নিয়ে আসি, আমার খুব খেতে মন চাইছে। ঐ যে দেখ ছেলেরা কত কত ভেট নিয়ে আসছে। হাসানের মায়া হল, রাতে এতটা ব্যাথা দিল তবুও সে অভিমান না করে তাকেই অনুনয় করছে। আর ফেরদৌসির অনুনয় সে উপেক্ষা করতে পারে না। তাছাড়া অন্য কারো কাছে সে আবদার অনুনয় করেও না, তার যত আবেদন নিবেদন শুধু হাসানের কাছে। সে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে চল, তবে আব্বা স্কুল থেকে আসার আগেই ফিরে আসতে হবে, সে এসে যদি দেখে আমরা বিলে গিয়েছি তাহলে আর রক্ষে থাকবে না। ফেরদৌসি বলল, কতক্ষন আর লাগবে, যাব আর আসব। তারা রওয়ানা হল।

বিল তাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে দিকে, সেখানে প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মায়। বিলের পশ্চিমাংশে কচুরি পানা আর পূর্বাংশের ফাকা জায়গায় পদ্মফুল ফুটে আছে। এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনোহরি কমলকুঞ্জ। সমগ্র বিলে অসংখ্য সাদা লাল গোলাপি পঙ্কজ ফুটে আছে, এ যেন কোকনদ বীথিকা। পদ্মফুল বাত্তি হলে তার পাতাগুলি আস্তে আস্তে ঝড়ে যায় আর তার রেণুগর্ভ কমলা লেবুর মত মন্ডলাকৃতি ধারন করে, স্থানীয় ভাষায় এটাকে ভেট বলে। এর উপরের আবরণ ফেলে দিলে ভিতরের অংশ বেরিয়ে আসে। এ অংশটা চিনির দানার মত অসংখ্য সাদা লাল দানায় গঠিত, দেখতে অনেকটা সাদা মিষ্টি বা কদমার মত, কোষগুলি কমলা লেবুর মত, খেতে সুস্বাদু। ডাটার মত দেখতে পদ্ম গাছকে গ্রামাঞ্চলে ভেট গাছ আর পাতাকে ভেট পাতা বলা হয়। ভেট গাছের গোড়ায় গোল আলুর মত বড় শালুক জন্মায়, এর আবরণ ধুসর বা কাল। আবরণ ফেলে দিলে ভেতরের সাদা অংশ বেরিয়ে আসে, এটাও খেতে সুস্বাদু। আবার বিলের পানিতে সিঙ্গারার মত ত্রিকোনাকৃতি ছোট ছোট সবুজ ফল জন্মে, এটাকে পানিফল বলে। এর আবরন সবুজ ভীতরে সাদা। এসবই গ্রামিন পোলাপানের লোভনীয় খাবার। তারা এগুলি তুলে এনে খায়, অনেকে আবার বাজারে নিয়ে বিক্রি করে।

বিলের ধারে গিয়ে হাসান লেংটি মেরে পানিতে নেমে পড়ল আর ফেরদৌসি পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকল। অনেক ছেলে মেয়ে ভেট ও শালুক তুলছে, জেলেরা মাছ মারছে। সারা বিলটা উৎফল ও এর পাতায় আচ্ছন্ন। পদ্মফুলের পাপড়ি ঝড়ে ভেটে পরিণত হওয়ার পর ভারী হয়ে যায়, তখন আর পানির উপরে খাড়া থাকতে পারে না, পানির নীচে তলিয়ে যায়, ভেট পাতার নীচে লুকিয়ে থাকে। হাসান পুরাতন গাছ দেখে দেখে হাত চালিয়ে ভেট বের করে ডাটাসহ ছিড়ে কাঁধে রাখছে। আবার সমান তালে পা চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও শক্ত অনুভব হলে পায়ের আঙ্গুল দিয়ে খুচিয়ে শালুক বের করছে। তারপর পানি কম থাকলে গলা জাগিয়ে বসে শালুক এনে পাত্রে রাখছে। কিন্তু পানি বেশি হলে পায়ের আঙ্গুলে চিমটি দিয়ে এনে হাতে নিয়ে পাত্রে রাখছে। এভাবে সে কোমর পানি, পেট পানি, কখনো গলা পানি ভেঙ্গে প্রচুর ভেট ও শালুক তুলল। একইভাবে পানিফল সংগ্রহ করল। পাত্র ভরে গেছে, ওদিকে ফেরদৌসিও ডাকতেছে ‘ভাইয়্যা আর লাগবে না চলে আয়।

হাসান কাঁধের উপর এক বোঝা ভেট, একপাত্র শালুক ও পানিফল নিয়ে এসে পাড়ে উঠল। ফেরদৌসি হাসতে হাসতে পাত্র নেয়ার জন্য এগিয়ে এল, যেই মাত্র হাত বাড়াল তখনি তার দৃষ্টি গেল হাসানের উরুর দিকে আর সাথে সাথে সে ‘ওরে বাপরে’ বলে চিৎকার দিয়ে পশ্চাৎ ফিরে দৌড় দিল। হাসান নিজের উরুর দিকে কটাক্ষে তাকিয়ে ‘ও বাবারে খাইয়্যা ফালাইছে’ বিকট চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ফেরদৌসির দিকে দৌড়াল। কিন্তু ফেরদৌসি ভয়ে কাছে না এসে দৌড়ে আরো দূরে সরে গেল। হাসান ভয়ে চিৎকার করছে, লাফাচ্ছে, আর দৌড়ছে। সে একবার দৌড়ে ফেরদৌসির কাছে যায় কিন্তু সে দূরে সরে যায়। আবার দৌড়ে বিলের দিকে আসে- যেখানে মানুষ মাছ ধরতেছে। আবার ফেরদৌসির দিকে যায় আবার বিলের দিকে আসে আর পাগলের মত নাচতে থাকে। ভয়ে সে পাগল হয়ে গেছে।

তার কাছেই কয়েক জন লোক মাছ ধরতেছে, তারা হাসানকে চিনে। সবাই হাসতেছে কিন্তু একজন দৌড়ে এসে তাকে ধমক দিয়ে বলল, ‘আরে জোক দেখে এত ভয় পাওয়ার কি আছে, দেখি। উরুর উপরি ভাগ থেকে হাটু পর্যন্ত প্রায় একফুট লম্বা জোক দেখে লোকটা শিউরে উঠল, অরে বাপরে কত লম্বা জোক। সে জোকটা ধরে কয়েকটা টান দিল কিন্তু পিছলে গেল ছাড়াতে পারল না। তারপর মুখের থু থু নিয়ে জোকের মুখে লাগিয়ে চিমটি দিয়ে ছাড়াল। উরু থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসছে। হাসান ভয়ে অন্য দিকে ফিরে আছে। জোক একটা নয় তিনটা, বাম পায়ের হাটুর নীচে ছোট ছোট আরো দুইটা কিন্তু হাসান সেগুলি দেখেনি। লোকটা সে দুইটাও থু থু দিয়ে টেনে ছাড়াল। উরুর জোকটা ছিল ভীষণ দর্শন ও ভয়ঙ্কর। সে চোষ দিয়ে যে রক্ত টেনে এনেছিল তার মুখ লাগানো ক্ষতস্থান থেকে তা বেয়ে যাচ্ছে। লোকটা ক্ষতস্থানে ছিপি দিয়ে চোষে আনা রক্তটা বের করে দিল তখন রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেল।

তারপর লোকটা ‘রাখ তোদের গতি করতেছি’ বলে একটা আল থেকে আগাছার কয়েকটা কচি ডাল ভেঙ্গে আনল। কাঠির মত সরু ডাল জোকের মুখ দিয়ে ঢুকিয়ে পুরো শরীরটা উল্টে দিল। অর্থাৎ জোকের ত্বক ভীতরে চলে গেল আর পেট বাহিরে এসে গেল। এভাবে তিনটাকেই উলটিয়ে বলল, এখন একটু চুন লবণ থাকলে ওদেরকে ভাল করে সাইজ করা যেত। তারপর জোক উল্টানো কাঠি গুলি মাটিতে খাড়া করে পুতে দিয়ে হাসানকে বলল, আরে বোকা ছেলে জোক দেখে ভয় পেতে হয় নাকি, এগুলি কি তোমাকে খেয়ে ফেলবে? আরেক বার থেকে জোকে ধরলে ওর মুখে একটু চুল লবণ মেরে দিবে অথবা আমি যে অবস্থা করেছি তেমন করে ছাড়বে’ বলে সে হাসতে হাসতে চলে গেল। হাসান তখনো কাঁপছে, সে জোক দেখে যতটা ভয় পায় বাঘ সিংহ সাপ ইত্যাদি প্রাণীকেও এত ভয় পায় না। ফেরদৌসি এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জোকের পরিণতি দেখছে।

হাসান রাগে হঠাৎ তাকে কষে দুই তিনটা চড় মেরে বলল, তোর জন্যই আজ আমার এই শাস্তি হয়েছে। ফেরদৌসির মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছিল, সে জানে তার জন্যই হাসানের এই কষ্ট। কাজেই সে রাগ না দেখিয়ে কাঁদতে লাগল। হাসান গিয়ে ভেটগুলির ডাটা কাঁধে নিল আর শালুকের পাত্রটা কাখে নিয়ে রওয়ানা হল। ফেরদৌসি তখনো দাঁড়িয়ে আছে দেখে ডাকতে লাগল কিন্তু সে যায় না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। হাসানের মায়া হল, কেন শুধু শুধুই ওকে মারলাম। সে কাছে এসে ভেট ছিলে অর্ধেকটা কামড় দিয়ে রেখে বাকি অর্ধেকটা ফেরদৌসির মুখে তুলে দিল। তারপর একটা শালুক কামড়িয়ে বাকল ফেলে দিয়ে অর্ধেকটা নিজে রেখে বাকিটা তার মুখে দিল। তখন ফেরদৌসির গুমরা মুখে হাসি ফুটল। তারপর দুজনে ভেট ও শালুক খেতে খেতে জোকের আলাপ নিয়ে হাসতে হাসতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হল।

শরৎ কাল। বাড়িতে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে, উদ্দাম আনন্দের বন্যা ছোটে যাচ্ছে। সবাই নতুন কাপড় চোপড় বানাচ্ছে, ঘর দোর পরিস্কার করছে, নতুন আসবাব পত্র আসছে, মেহমান আসছে, বেশি বেশি বাজার সওদা আনছে, খুশিতে ঘরটা থৈ থৈ করছে। আর সেই খুশীর আমেজে হাসান ফেরদৌসি জুটি ভাসছে। তিনদিন পর ফেরদৌসির চতুর্থ বোন হাফসার বিয়ে। জামাই ইসলামী ফাউন্ডেশনের এসিস্ট্যান্ড ডাইরেক্টর (এডি)। আলেম মানুষ, তাবলীগ করে, তবে একটু বয়স্ক আর রোগাও বটে। হাসান ফেরদৌসিকে বলল, শুন আমরা গেইট বানিয়ে বর যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করব। ফেরদৌসি বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল, কিন্তু আব্বা তো গেইট করতে দেয় না, এটা নাকি জায়েয না। হাসান বলল ‘দিবে না কেন, আমরা বানাবই কারো বাধা মানব না।

আনন্দে তাদের চোখ চকচক করে, বরের কাছ থেকে অনেক টাকা নিবে। তারপর টাকা নিয়ে কি করবে দু’জন পরামর্শ সভায় বসল। হাসান একটা খেলনা পিস্তল কিনবে, একটা মিনি সাইকেল, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন আরো অনেক কিছু, লম্বা ফিরিস্তি তার। আর ফেরদৌসির পরিকল্পনা হল, লাল টুকটুকে সুন্দর একটা শাড়ি আর একসেট স্বর্নালংকার কিনবে। তারপর প্রতিদিন গোপনে বউ সেজে হাসানের সামনে এসে দাঁড়াবে। আর স্কুলে যাওয়া আসার সময় লজেন্স, চানাচুর, আইসক্রিম ইত্যাদি কিনে খাবে। এছাড়া আরো অনেক কিছু তার কিনার আছে। দুটি বালক বালিকা স্বপ্ন দেখে গেইটের টাকায় তারা রাজা রাণী হয়ে যাবে।

ফেরদৌসি বলল, কিন্তু গেইট করতে তো টাকা লাগবে, আমরা টাকা পাব কোথায়? হাসান একটু চিন্তা করে বলল, ‘চল আম্মাকে গিয়ে ধরি। তারপর মায়ের কাছে গিয়ে তারা টাকা দাবী করল। মা চোখ কপালে তুললেন, ‘কী সর্বনাশ, তোদের বাপে শুনলে মেরে ফেলবে, গেইট করা জায়েয নাই। কিন্তু তারা মায়ের আঁচল ধরে নাচতে লাগল, গেইট তারা করবেই টাকা চাই। অপরাগ হয়ে তিনি কর্তার কাছে গিয়ে বললেন, পোলাপান যে গেইট করতে চায় কী বলেন? মাস্টার বললেন, না না গেইট করা যাবে না। কর্ত্রি বললেন, কিন্তু তারা যে মানছে না। তিনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে বরের সম্মানে গেইট করতে পারবে কিন্তু টাকা নিতে পারবে না। মানিক জোড় পরামর্শে বসল। টাকা খরচ করে খাটুনি খেটে গেইট করে যদি টাকাই না নেয়া যায় তাহলে গেইট বানিয়ে লাভ কি। তারা মনক্ষুন্ন হল, আশা করেছিল গেইটে অনেক টাকা আদায় করবে, তারপর নিজেদের অপুর্ণ বাসনা গুলি পূর্ণ করবে কিন্তু অতি আশার গুড়ে বালি পড়ল। বিয়ের আনন্দটাই তাদের পানি হয়ে গেল।

বিয়ের দিন দুপুরে তারা একে অন্যের হাত ধরে বিরক্ত মুখে বাড়ির ভিতরে বাহিরে ঘুরতে লাগল। ‘বর এসেছে, বর এসেছে’ বলে পোলাপানের হৈ চৈ পড়ে গেল। হাসান ফেরদৌসি বাড়ির ভিতর থেকে দৌড়ে এল। বর গাড়ি থেকে নেমে ঘরে গেল। দেখে ফেরদৌসি কানে কানে বলল, ভাইয়্যা বর তো বুড়া। হাসান বলল, সে আমাদের বুড়া দুলাভাই। ফেরদৌসি খিক করে হেসে উঠল। হাসান নতুন বরের নতুন নাম রাখল বুড়া দুলাভাই। সেই থেকে উবায়দুল্লাহ মাস্টারের চতুর্থ জামাইয়ের নাম হল, বুড়া দুলাভাই বা বুড়া জামাই।

খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে বিয়ে পড়ানো হল। এবার অন্ধর মহলে অনুষ্ঠান শুরু হবে। বরকে ভিতরে নিয়ে কনের পাটিতে বসানো হল। বর কনের জামা ও শাড়ীর কোণায় গিট্টু বা গিরা দেয়া হল। প্লেটে করে মিষ্টি ও দুধ ভাত আনা হল, এগুলি বর তার নববধূর মুখে তুলে দিয়ে পৃথিবীর পথে তাদের সংসার যাত্রার উদ্ভোধন করবে। নব দম্পতির জড়তা কাটিয়ে তাদেরকে একত্র করে দেয়ার জন্যই সম্ভবত মুরুব্বি মহিলারা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। বর নিজে হাত ধুবে না ছোটদের মধ্যে কেউ ধুইয়ে দিবে, তারপর সে নব বধূর মুখে মিষ্টি ও দুধভাত তুলে দিবে। তাই মহিলারা বলল, বরের হাত ধোয়াবে কে? ‘আমরা থাকতে কোন ভরসা নাই’ বলে মানিক জোর এসে বরের সামনে বসল। আগে টাকা দেন পড়ে হাত ধোয়াব’ বলে হাসান হাত বাড়াল। বর একদম সাদামাটা সহজ সরল ও ভাল মানুষ। সে পকেট থেকে একশত টাকার নোট বের করে দিল। ফেরদৌসি ধমক দিল ‘একশ টাকায় হবে না পাঁচশ টাকা দিতে হবে’। সে আরো একশ টাকা বের করে দিল, সে সময় দুইশত টাকা মণ ধান। হাসান বলল ‘পাঁচশ না দিলে হাত ধোয়াব না। তখন মহিলারা ধমক দিল, এই হয়েছেই তো আর কত, হাত ধোয়া।

অগত্যা হাসান গ্লাস নিয়ে পানি ঢালল, ফেরদৌসি হাত ধোয়াল। প্লেটে চারটা মিষ্টি রাখা, সে গ্লাসটা রেখেই ‘লাল মিষ্টি আমার খুব পসন্দ’ বলে নিয়েই একটা পোরল নিজের মুখে আরেকটা ফেরদৌসির মুখে দিল, বাকি দুইটা হাতে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল। মহিলারা হৈ হৈ করে উঠল, কি করিস কি করিস। ততক্ষনে তারা ঘরের বাইরে। তারা চেচাতে লাগল ‘এদেরকে কে ডেকে আনল, এই দুইটা শয়তান যেখানে যায় হাড় হাড্ডি জ্বালিয়ে খায়। বাইরে গিয়ে হাসান নোট দুটি আঙ্গুলে কচকচাল। তারপর একটা ফেরদৌসিকে দিয়ে বলল, তুই কি খাবি? সে বলল, আইসক্রিম খাব, তুই কি করবি? হাসান বলল, চানাচুর খাব, চানাচুর খুব মজা, আমি এখনই দোকানে যাচ্ছি। ফেরদৌসি বলল, আমিও যাব তোর সাথে। অনুষ্ঠানাদির পর কনের সাথে ফেরদৌসিও চলে গেল, হাসান একা হয়ে গেল।

কারো বাড়িতে দুটি বিড়াল, দুটি কুকুর বা দুটি গরুর মধ্যে একটি মরে গেলে বা হারিয়ে গেলে-সঙ্গী হারিয়ে অপর প্রাণীটির যে অবস্থা হয় হাসানেরও সেই অবস্থা। বেচারা একেবারে মিইয়ে গেছে। খাওয়া পড়া খেলা কোন কিছুতেই মনোযোগ নেই, কারো সাথে কথা বলে না, সব সময় নির্জীব হয়ে থাকে। বিকালে ঘুরতে পর্যন্ত যায় না, ঘরে বসে থাকে। সঙ্গী হারিয়ে সে ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। তার বেদনাবিধুর মুখটা দেখে মায়ের মায়া লাগে, তিনি বলেন, ‘যা, ছেলেদের সাথে খেলা কর গিয়ে। কিন্তু সে কোথাও যায় না, শুধু ফেরদৌসির পথের দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে বলে ‘বোন আমার আমাকে একা ফেলে তুই কোথায় গেলি, তোকে ছাড়া আমার কিচ্ছু ভাল্লেগেনা। আর তোর সাথে খোচাখোচি করব না, তোকে ব্যথা দিব না। তুই যা আবদার করবি আমি তাই এনে দিব। তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। ফেরদৌসির পথপানে তাকিয়ে তার প্রহর কাটে।



ফেরদৌসির বড়াপা মাজেদা বিয়ে অনুষ্ঠানে আসার পর আর বাসায় যায়নি। ইঞ্জিনিয়ার ট্রেনিংয়ে গেছে, এ সময়টা সে বাপের বাড়িতেই থাকবে। সে গত কয়েক দিন ধরে লক্ষ্য করছে, হাসান পরিবারের অন্যদের সাথে বসে খায় না, সকলের শেষে একাকি খায়। তার খুব কৌতুহল জাগল, কারণ অনুসন্ধান করে শীঘ্রই বুঝতে পারল। সে ছিল ভয়ঙ্কর হিংস্র আর জেদি মহিলা, ক্রোধে তার মাথাটা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হল। একটা রাস্তার ছেলে তাদের বাড়িতে রাজার হালে বসে বসে খাবে, তাও আবার ভাল ভাল ব্যঞ্জন দিয়ে গোগ্রাসে খাবে, আর তারা বিষের মত গলধকরন করবে শাক-পাতা ও নদীর জলের মত লম্বা ঝুল। এটা সে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারল না। সকালে সবাই খাওয়া দাওয়া করল আলু ভর্তা আর ঘোলা জলের মত লম্বা ঝুল দিয়ে। খাওয়ার পর সে হাসানের অপেক্ষায় ঘরে গিয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর নিরিবিলি সময়ে হাসান রান্নাঘরে ঢুকে খেতে বসল।

মাজেদা তার বিশাল শরীরটা হেলিয়ে দুলিয়ে গজেন্দ্র গমনে গেল। রান্না ঘরের মুখে তাকে দেখেই মা চমকে উঠে তাড়াতাড়ি ডিশ থেকে পাতে ভাত দিয়ে তরকারিটা ঢেকে দিলেন। সে গিয়ে হাসানের পাশে বসে ‘হাসান ভাইয়্যা কি দিয়ে খাও, খালী ভাত খাচ্ছ নাকি, আহ হা রে খালী ভাত কেমনে খাবে’ বলে পাতে আঙ্গুল চালিয়ে তরকারীটা বের করল। চোখ বিস্পারিত করে তাকিয়ে দেখে চেঁচিয়ে উঠল, ‘শালা ফকিন্নির বাচ্চা, আমাদের বাড়িতে বসে বসে তুই খাবি মাছ মাংস আর আমরা খাব শাক-পাতা, এখানে বাপের তালুক পাইছস’ বলে সামনে থেকে প্লেটটা টান দিয়ে নিয়ে বাইরে চলে গেল। তারপর চিৎকার শুরু করল ‘এই তোরা কে কোথায় আছিস দেখে যা, দেখে যা কাণ্ড, অদ্ভুত কাণ্ড, বাড়ি ওয়ালার বাড়ি না, বাউল্যার মুখে চাপদাড়ি। চিৎকার চেচামেচি শুনে তার ভাই বোনেরা বেরিয়ে এল, আশপাশের ঘরের মানুষও বেরিয়ে এল।

সে প্রত্যেকের সামনে প্লেট ধরে আঙ্গুল দিয়ে তরকারী দেখিয়ে বলল, দেখ দেখ গোশতের তরকারী, আমরা খাই শাক পাতা দিয়ে আর ঐ চাল চামড়া নাই জমিদার- উনি খান মাছ মাংস দিয়ে। পরের উপর বসে বসে ঠ্যাং নাচিয়ে জমিদারী খানা খায় আর আমরা তো হলাম তার চাকর বাকর, আমরা খাব শাক পাতা আর নদীর জল। বড় ছেলে ফরহাদ ঢাকায় এক কলেজে পড়ে, বিয়ে উপলক্ষে এসে ছিল এখনো যায়নি। সে বলল ‘এখন মাংস পেল কোথায়? মাজেদা ব্যঙ্গ স্বরে বলল, আর কোথায় পাবে বিয়ের গোশত, আমাদের মা লুকিয়ে রেখে রেখে ঐ জমিদার পুত্রকে খাওয়ার সময় একটু একটু করে দেয়। ঐ জমিদার পুত্র হল আমার মায়ের পেটের সন্তান আর আমরা সবাই হলাম তার সতীনের সন্তান। এজন্যই তিনি নিজের পুত্রকে খাওয়ান মাছ মাংস আর আমাদেরকে খাওয়ান শাক পাতা। ফরহাদ নিরাশক্ত গলায় বলল, কে কি দিয়ে খেল তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। আমি বাড়িতেও থাকি না, এসবে আমার দরকারও নাই’ বলে সে চলে গেল। বাড়ির অন্যান্য লোকেরা মাজেদার হিংস্রতা সম্পর্কে জানে। একটা ছোট ছেলের খাওয়া নিয়ে ঝগড়া দেখে তারাও নাক ছিটকে চলে গেল।

কেউ কোন মন্তব্য করল না, তবে সবাই বুঝতে পারল ছেলেটির সাথে মাজেদার জিদ আছে। সবাই চলে গেলে সে প্লেট ফিরিয়ে দিতে গেল। মা ক্রোধ ও লজ্বায় লাল হয়ে উনানের ধারে নির্বাক বসে আছেন আর হাসান মাথা নিচু করে বসে আছে। মাজেদা তার সামনে প্লেটটা রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে ডাইনীর মত হাসি দিয়ে বলল, ‘খাও ভাই খাও, নাক ডুবিয়ে খাও, খেতেই তো এসেছ’ বলে আবার উঠানে চলে গেল। মায়ের গায়ে ক্রোধ আর ধরছিল না কিন্তু তিনি মেয়েকে কিছু বলার সাহস পেলেন না। কারণ তিনি জানেন এই ডাইনীকে কিছু বললে গোটা বাড়ি মাথায় তুলবে আর কোন অঘটন ঘটিয়ে ছাড়বে। তাই যদিও হাসান ঠিক সময়েই খেতে এসেছে কিন্তু তিনি ক্রোধ সংবরন করতে না পেরে হাসানের গালে ঢাস ঢাস করে দুইটা চড় মেরে বললেন, এই শয়তান তোকে না কত দিন বলেছি সকলের শেষে নিরিবিলি সময়ে খেতে আসবি, এখন আসলি কেন? হাসান তো ঠিক সময়েই এসেছে, তাই সে রাগে প্লেট ধাক্কা মেরে উঠে চলে যেতে চাইল। মা ছিটিয়ে উঠে তার ঘাড় ধরে আরো দুইটা কিল দিয়ে জোর করে ঠাসিয়ে বসালেন। তারপর বললেন ‘ভাত না খেয়ে যেতে পারবি না, তোর জন্য আমি উপোস করতে পারব না। আসলে কোন দিন হাসান না খেলে মায়েরও খাওয়া হয় না, তার পেটে ভাত যায় না। অগত্যা হাসান আবার খাওয়া শুরু করল।

ডাইনী বাইরে গিয়ে মস্তি মাতঙ্গির নাচন শুরু করে দিল, সত্যি সত্যিই বাড়ি মাথায় তুলল। সে ছিল খাট এবং অসম্ভব মোটা, হাতির পেটের মত ভুরি, ব্যঙ্গের গ্যাগের মত মেদ। তার নাচনে পেট ধাপ পারতে লাগল আর মেদ দুলতে লাগল। তার দেহটা হয়ে উঠল সার্কাসের বামনীর মত একটা দর্শনিয় বস্তু। সে ক্রোধে অন্ধ হয়ে গলা ছাড়ল, সারা বাড়ির মানুষ শুনতে লাগল। প্রথমে সে হাসানের চৌদ্দ গোস্টি উদ্দার করল, তাদের জমিদারির খেতা পোড়ল। তারপর মাকে আক্রমণ করল, যে মা পেটের সন্তানের দিকে ফিরেও তাকায় না, অন্যের সন্তান কোলে নিয়ে ধেই ধেই করে নাচে সে মা না ডাইনী, সে মা নামের কলঙ্ক। মাজেদা এতক্ষণ আশা করেছিল ভাই বোনেরা তার কথায় সায় দিবে, তার পক্ষ নিয়ে অন্তত কিছু কথা বলবে, মাকে তিরস্কার করবে, হাসানকে হয় তার বাসায় কাজে পাঠাবে নয় বাড়ি ছাড়া করবে কিন্তু কেউ কিছু তো বলেছেই না এমনকি নাকের দমটা পর্যন্ত ফেলছে না। তাই সে ক্ষেপে গিয়ে ভাই বোনদের উপর হামলে পড়ল। গলা ছাড়ল, আসলে তোরাই এই জাতের, ঐ রাস্তার ছেলেটা হল মুনিব আর তোরা তার কামলা। এজন্যই সে রাজার হালতে খায় আর তোড়া কামলার মত খাস। তোরা লায় দিয়ে দিয়ে ওকে মুনিব বানিয়েছিস। এক দিন তোদেরকে এর মাসুল দিতে হবে। এই ছেলে এই বাড়ির কর্তা হবে, তখন সে তোদেরকে দিয়ে তার পা ধোয়াবে ইত্যাদি বলে সে ভাই বোনদের ক্ষেপাতে চেষ্টা করতে লাগল।

মাষ্টার এতক্ষণ ঘরে বসে মেয়ের বকোয়াজ শুনছিলেন। তিনি ভাবছিলেন যে, কিছুক্ষণ বকবক করে আপনিই থেমে যাবে, কিন্তু থামছে না দেখে তিনি রাগে উঠে এসে ধমকে উঠলেন, এই কি হয়েছে এত গলাবাজি কিসের? মেয়েও ঝংকার দিয়ে উঠল, গলাবাজি করব না, তোমরা নিজের সন্তানকে খাওয়াতে পার না আর অন্যের সন্তানকে স্বর্ণ রোপা করে খাওয়াও। মাস্টারের কণ্ঠে ঘৃণা ঝড়ে পড়ল, ‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুই এত নিচে নেমে গেছিস। এতটুকু একটা ছেলের সাথে তুই এমন শত্রুতা শুরু করেছিস? সে খেতে পারে না বলে আমিই বলেছি তাকে একটু আলাদা তরকারী দিও। এই সামান্য খাওয়া নিয়ে তুই এত হাঙ্গামা শুরু করেছিস, তুই আর মানুষ থাকলি না। তোকে নিজের মেয়ে ভাবতে আমার লজ্বা হচ্ছে, ছিঃ। তুই কি চাস ছেলেটা না খেয়ে মারা যাক, যদি চাস তাহলে তাই হউক। ছিঃ তোর সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে’ বলে তিনি চলে গেলেন। কিন্তু মেয়েকে এর বেশি কিছু বলতে সাহস পেলেন না, কারণ তাহলে রক্ষে নেই।

মাজেদা এবার মা বাপের গোস্টি উদ্দার করতে লাগল আর নাচতে লাগল। সেই সাথে তার ভুরিও খেমটা তালে নাচছে আর মেদ দুল খাচ্ছে। বোনেরা সবাই এক সাথে বসে বসে তার নাচ দেখছে আর হাসছে। তাদের মধ্যে পঞ্চম বোন ইসুবিসু হল সব চেয়ে ঠাণ্ডা আর ভদ্র। সে হাসানকে খুব আদর করে, মাজেদার বকবকানিতে অসহ্য হয়ে বলল, এই ভেটকি মাগিটা এত গলাবাজি করছে কেন, তার এসব কে শুনে। তখন এক বোন বলল, আসলে সে হাসানকে দেখতেই পারে না। অন্যজন বলল, সে হাসানকে তার বাসায় কাজের ছেলে বানাতে চেয়েছিল আব্বা দেয়নি বলে তার এত রাগ। তাদের তৃতীয় বোন বজলুর বউ অনেকটা মাজেদার স্বভাবের- সে বলল, বড়াপা তো ঠিকই বলেছে, সে একা একা ভাল ভাল খাবে কেন। তখন ইসুবিসু বলল, সে আমাদের মত ঝুল খেতে পারে না বলেই আম্মা তাকে একটু আলাদা তরকারী দেয়, এটা নিয়ে যারা ঝগড়া করে তারা মানুষ না, পশু। ব্যস দু’বোনে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। তখন অন্য বোনেরা থামিয়ে দিয়ে বলল, আরে আরে তোরাও তো দেখছি বড়াপা হয়ে গেছিস। তারা থেমে গেল।

মাজেদা অনেকক্ষণ নাচানাচি করে যখন দেখল কেউ নাচের তালে তালে ঢোল বাজাচ্ছে না, নিজেও ক্লান্ত হয়ে এসেছে, তখন সে রণে ভঙ্গ দিয়ে বকবক করতে করতে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। এরপর থেকে যখন সে হাসানের দিকে তাকাত তখন মনে হত যেন, দৃষ্টির আগুনে ছেলেটাকে পোড়িয়ে মারবে। হাসানও তাকে বাঘের মত ভয় পেত, পারত পক্ষে সামনে পড়ত না। সে বাড়ির ভিতরে আসা একদম কমিয়ে দিল। এরপরেও দুয়েক বার সামনে পড়ে গেলে তার দৃষ্টির দহন থেকে বাঁচতে নিজের দৃষ্টি নীচমুখি করে ফেলত। তার মনে হত যেন, এ মহিলাটা সত্যি সত্যি কুহ কাপের রাক্ষসি, তাকে আস্ত গিলে ফেলবে, তার বিশাল ভুরির মধ্যে লুফে নিবে।

ফেরদৌসিদের বছুরে কামলাটা ছোট বেলা থেকেই তাদের বাড়িতে থাকে। মাষ্টার একজন পরোপকারী এবং পরহিতৈষী মানুষ। তিনি কামলার হাতে টাকা না দিয়ে বছর শেষে বন্ধকি জমি বা গরু কিনে দিতেন। এভাবে তার দশ বছরের টাকায় কিছু জমি কিনা হয়েছে, কিছু বন্ধকি জমি রাখা হয়েছে এবং কিছু গরু কিনে ভাগে দেয়া হয়েছে। এখন আর সে দরিদ্র নয় মধ্যবিত্ত কৃষক হয়ে গেছে। আবার কিছুদিন আগে মাষ্টার দেখে শুনে তাকে পাশের গ্রামের এক সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করিয়েছেন। এখন তার বছর খাটনি শেষ, আর কাজ করবে না বাড়িতে গিয়ে নিজের কৃষি কাজ করবে। হঠাৎ কামলা চলে যাওয়াতে মাষ্টারের সমস্যা দেখা দিল। অন্যান্য কাজ রোজানা বা চুক্তি কামলা দিয়ে করানো যায় কিন্তু গরু রাখাই হল কঠিন দায়। চারটা গরু- দুইটা হালের বলদ দুইটা দুধের গাভি। কামলা ছাড়া এতগুলি গরু রাখা যায় না। মাষ্টার কামলা খোজাখোজি শুরু করলেন, কিন্তু বছুরে কামলা পাওয়াটা খুবই কঠিন। তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই গোয়ালে গিয়ে কাজে লাগেন। গরুগুলি বাহিরে বের করেন, কিছুক্ষণ আশপাশে হাসার দিয়ে ঘাস খাওয়ান, তারপর স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়িতে এনে বেশি করে খড় বা বিছালি দিয়ে যান। গোবর কোন দিন স্কুলে যাওয়ার আগে ফেলে যান, কোন দিন স্কুল থেকে এসে ফেলেন। এভাবে খুব কষ্টে তার সময় যাচ্ছে কিন্তু কামলা পাচ্ছেন না।

এবার মাজেদা সুযোগ পেয়ে হাসানের পিছু নিল। মাষ্টার স্কুলে চলে যেতেই সে নিজের ছেলেকে পাঠিয়ে হাসানকে মাদরাসা থেকে ডাকিয়ে এনে বলল, তোর মত এমন একটা ধামরা ছেলে থাকতে আব্বা এত কষ্ট করতেছে চোখে দেখিস না, যা গোয়ালটা সাফ করে গরুগুলিকে খাবার দে। হাসান এই মহিলাকে যমের মত ভয় পায়, সে অবনত মস্তকে গোয়ালে গিয়ে দাঁড়াল। গোবরে গোয়াল ভর্তি, নাদা- চোনা মিশ্রিত হয়ে তরল কাদার মত বিশ্রিভাবে সমস্ত গোয়ালে ছড়িয়ে আছে, দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। গোবর কিভাবে ফেলতে হয় সে জানে না, জীবনে কোন দিন এ কাজ করেনি। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে, তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। নিরুপায় হয়ে গিয়ে বলল, বড়াপা গোবর কিভাবে ফেলতে হয় আমি তো জানি না, সে মনে করেছিল একথায় মুক্তি পাবে। কিন্তু মাজেদা খেকিয়ে উঠল ‘জানবি কেন, এখানে তো তুই জমিদার পুত্র, ননীর পুতুলের মত বসে বসে খাচ্ছিস দাচ্ছিস স্ফুর্তি করছিস। আমাদের বাড়িতে না থাকলে ঠিকই জানতি, তখন মাইনসের গোয়ালের গোবর ফেলেই পেটের ভাত যোগাতে হত। আচ্ছা যা আমি দেখিয়ে দিচ্ছি’ বলে সে হাসানকে নিয়ে গেল।

তারপর গোয়ালের মুখে দাঁড়িয়ে নাকে কাপড় গুজে কোদাল ও উরি (ত্রিকোনাকৃতি চাটাই পাত্র) দেখিয়ে বলল, কোদাল দিয়ে চেঁচে উরিতে গোবর ভরে মাথায় নিয়ে গোবর গাদায় ফেলবি। তারপর ঝাড়ু দিয়ে ভাল করে পরিস্কার করবি। সাবধান আর যেন আমাকে না আসতে হয়’ বলে সে চলে গেল। হাসান কোদাল এনে উরিতে গোবর তুলতে লাগল, নাদা চোনা মিশ্রিত তরল গোবর তুলতে গিয়ে ঘৃণা ও দুর্গন্ধে একেকবার তার বমি এসে যায়, তখন কখনো উর্ধ্বমুখি হয়ে বমি নিয়ন্ত্রণ করে, কখনো বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, স্বাভাবিক হয়ে আবার এসে গোবর তুলে। এভাবে উরি ভরলে একটানে মাথায় তুলে নিয়ে গোবর গাদায় ফেলল কিন্তু তরল নাদা উরি ছোয়ে তার মাথা বেয়ে সমস্ত শরীর মেখে গেল। দুর্গন্ধ ও ঘৃনায় সে বমি করে দিল। হাসান কাজ করে কিনা মাজেদা তা লক্ষ্য রাখছে, বেচারার অবস্থা দেখে ডাইনিটা হাসতে হাসতে বলল, কিছু হবে না, গোসল করলেই ঠিক হয়ে যাবে, যা গোয়ালটা সাফ করে গোসল করে ফেল।

হাসান কোন রকম দম বন্ধ করে আরেক উরি গোবর ফেলে তাড়াতাড়ি গোয়ালটা ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করল। তারপর গোসল করার জন্য দ্রুত বেরিয়ে গেল। মাজেদা হাসতে হাসতে বলল, যা, গোসল করে এখানে আয় কাজ আছে। হাসান গোসল সেরে আসলে বলল, গরুর চাড়িতে খড় দিয়ে আয়। হাসান শক্তিশালী, মুহুর্তেই খড়ের গাদা থেকে কয়েক পাঞ্জা খড় টেনে বের করে দিয়ে আসল। তখন সে বলল, এখন মাঠ থেকে ঘাস কেটে এনে দে। হাসান কাচি নিয়ে মাঠে গেল, সে ঘাস কাটতে পারে না, আবার আঙ্গুল কেটে ফেলে কিনা ভয় পায়। অতি সাবধানে ও সাধনালব্ধ এক খাঁচা ঘাস এনে গরুর সামনে দিল। তারপর মাজেদা বলল, এখন যা, গরুগুলিকে আশপাশে একটু নেড়ে চেড়ে খাওয়া। মাষ্টার বাড়িতে আসার নির্দিস্ট সময়ের আগে সে হাসানকে ডেকে এনে বলল, এখন গরুগুলিকে চাড়িতে বেধে তুই মাদরাসায় চলে যা। এভাবে সে হাসানকে সারাদিন খাটিয়ে তার মন তৃপ্তিতে ভরে উঠল। পরের দিনও এভাবে খাটাল।

তৃতীয় দিন হাসান ভাবল, ফেরদৌসি আসলে গোবর ফেলবে, দুজনে ধরাধরি করে উরি নিয়ে যাবে, একা মাথায় করে নিলে গোবরে শরীর মেখে যায়। এদিন সে গরু হাসার দেয়া, খড় দেয়া, ঘাস কাটা ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকল। ফেরদৌসি আসলে তাকে চুপিসারে ডেকে নিয়ে গেল। সে গোয়ালের মুখে দাঁড়িয়ে নাক সিটকায়, থু থু ফেলে আর হাসানকে বলে ‘তুই গোবর ফেলবি না, আমি কিন্তু আব্বাকে বলে দিব’। হাসান বলল, বলিস না, এই তো আর মাত্র কয়েক দিন, কামলা আসলে তো আর আমার করতে হবে না। তারপর দু’জনে ধরাধরি করে এক উরি গোবর নিয়ে গেল, দ্বিতীয় উরি নেয়ার সময় রাক্ষসীর চোখে পড়ল, সে ক্রোধে লাল হয়ে কাছে এসেই ফেরদৌসির গালে দুইটা চড় মেরে বলল, তুইও কি ওর মত ফকিরের বাচ্চা নাকি যে গোবর ফেলতে এসেছিস, তুই কামলা? যাঃ আরেকবার ওর সাথে দেখলে একদম মেরে ফেলব। ফেরদৌসি চোখ মুছতে মুছতে চলে যেতে উদ্যত হতেই সে তার হাত ধরে তর্জনিটা নাকের গোড়ায় তাক করে বলল, ‘এসব আব্বাকে বলবি? হাসান গোবর ফেলে গরু রাখে এসব যদি আব্বা আম্মাকে বলবি তাহলে জানে মেরে ফেলব, মনে থাকে যেন। ফেরদৌসিও ভয়ে কাউকে কিছু বলল না।

পরদিন হাসান ঘাস কাটতে গিয়ে হাত কাটল। বিকালে ফেরদৌসি এসে দেখে কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে থাকল। তারপর দৃঢ় গলায় ‘আজ যদি আব্বাকে বলবই’ বলে হনহন করে চলে গেল। গিয়েই মাকে বলল, মা তো আকাশ থেকে পড়লেন। কারণ গোয়ালঘর বাড়ির বাহিরে অনেকটা দূরে। তিনি কখনো বহির্বাড়ির উঠানে যান না, মাজেদা বাড়ি শুদ্ধু ঘোরে, তাই হাসান কি করছে আর মাজেদা কি করছে তিনি কিছুই খবর রাখেন না। বিকালে মাষ্টার এসে গরু গোয়ালে তোলে খড় দিলেন। এখন তিনি মনে মনে খুব খুশি, কাজের মহিলাটা গোয়াল সাফ করে, গরুকে খড় দেয়- তাকে খুব সাহায্য করছে। তিনি মাগরিব পড়ে এসে ঘরে গেলেন। তখনি মা মেয়ে গিয়ে ঘটনা জানাল। শ্রাবণের আকাশের মত সহসা মাষ্টারের মুখটা কাল হয়ে গেল। বিস্ফারিত চোখে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, গোয়াল সাফ করা, খড় দেয়া- এসব কে করে বুসির মা না? অর্থাৎ তিনি কাজের মহিলার কথা জিজ্ঞেস করলেন। মা বললেন ‘আরে না না, বুসির মা বা আমি তো কিছুই জানি না, মাজেদা এসব হাসানকে দিয়ে করাচ্ছে। মাষ্টার গম্ভীর হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন ‘ও আমার মেয়ে না, ওকে আমি এখনি বাড়ি থেকে বের করে দিব। কর্ত্রি তাড়াতাড়ি স্বামীর হাত ধরে বললেন, সর্বনাশ ওকে চেনেন না, কোন অঘটন ঘটিয়ে বসবে কে জানে। চিৎকার করে সারা গায়ের লোক জড়ো করবে। তাকে কিছু বলার দরকার নাই, হাসানকে মাদরাসায় পাঠিয়ে দেন।

তারপর তারা হাসানের রুমে গেল। মাষ্টার বলল, বাজান, কাল থেকে তুমি মাদরাসায় থাকবে, সকালে আমি খানা দিয়ে যাব, দুপুরে ফেরদৌসি দিয়ে আসবে, রাত্রে এসে খেয়ে শুয়ে থাকবে। সকালে আবার চলে যাবে, আমি আর তোমার মা ছাড়া অন্য কেউ ডাকলে আসবে না, বাড়িতে আগুন লাগলেও মরা মরলেও আসবে না, কথাটা মনে রাখবে। হাসানের সুবিধাই হল, সে নিরিবিলি এক রুমে বসে খাবার খায়। দুপুরে ফেরদৌসি খানা নিয়ে যায়, প্লেট ধুয়ে পাকা গিন্নির মত ভাত বেড়ে দেয়, পাতে তরকারী দেয়, হাসান খায় সে চেয়ে থাকে, তখন তার মুখেও লোকমা তুলে দেয়। নব দম্পতির মত দু’জন একসাথে খায়, আলাপ করে, হাসাহাসি করে। খাওয়া শেষে ফেরদৌসিই থালা ও টিফিন ক্যারি ধুয়ে নিয়ে যায়। এসব দেখে মাজেদা ফুসতে থাকে আর অন্যদের সাথে বলতে থাকে ‘এই ছেলে আমার মা বাপকে যাদু করেছে, এখন তারা ঐ ছেলেকেই নিজের সন্তান মনে করে আর আমাদেরকে পর মনে করে। সে বোনদের ক্ষেপানোর চেষ্টা করতে লাগল ‘তোরা যদি বাঁচতে চাস তাহলে এখনি সতর্ক হ, নিশ্চয়ই ঐ ফকিরের বাচ্চাটা আব্বা আম্মাকে যাদু করেছে, সে সব সম্পত্তি লিখে নিবে, তোরা এক কানাকড়িও পাবি না। একদিন সে তোদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। হাসানের প্রতি তার বিদ্বেষ দেখে বোনেরা অবাক হয়ে যায়, ঘৃনায় তাদের মন বিষিয়ে উঠে, তারা মনে মনে তাকে গালি দেয় কিন্তু ঝগড়ার ভয়ে মুখে কিছু বলার সাহস পায় না।

হাসান মাদরাসায় উঠার দুইদিন পর রাত্রে ঘটনাটা ঘটল। মাষ্টারের বড় বড় দুইটি হালের বলদ ছিল। সকালে গোয়ালে গিয়ে দেখল বলদ দুটি নাই, তিনি মনে করলেন হয়ত দড়ি ছিঁড়ে গিয়ে কারো ধান খাচ্ছে। কিন্তু চুরে নিয়েছে এমনটা তার ধারনাও হল না, কারণ কোনদিন তার কোন জিনিস চুরি যায়নি। তিনি পেরেশান হয়ে বাইরে খোজা খোজি করতে লাগলেন। তখন বাড়ির সামনের মাঠের শেষ প্রান্তে খালের পাড়ে মানুষের জটলা দেখা গেল। কেউ কেউ সেদিকে এগিয়ে গেল, একজন লোক মাষ্টারকে ডেকে নিয়ে গেল। তিনি গিয়ে জটলার মধ্যে দাঁড়ালেন, সামনে বিশাল বড় বড় জবাই করা দুইটা গরু পড়ে আছে। চামড়া ছিলে নিয়ে গেছে, মাংস অক্ষত আছে। পাশে একটি কাগজের টুকরা পড়ে আছে। মাষ্টার হাতে নিয়ে দেখলেন তাতে লেখা ‘এই গরু ভাল আলেম দিয়ে জবাই করা হয়েছে এর গোশত খাওয়া সম্পূর্ণ হালাল। আমরা শুধু চামড়ার জন্য এ কাজ করি’। তখন চামড়ার বাজার ছিল অগ্নিমুল্য। সবাই বুঝতে পারল চোরেরা গরু চুরি করেনি, চামড়া চুরি করেছে। মাষ্টার শুধু ‘আল্লাহ্‌র মাল আল্লাহয় নিয়া গেছে, আমার বলার কিছু নাই’ এটুকু বলে সোজা চলে এলেন। গোশত যেহেতু খাওয়া যাবে বিধায় গ্রামের দরিদ্র লোকেরা গোশত কেটে কেটে নিয়ে যেতে লাগল।

মাষ্টারের মনে প্রবল বিশ্বাস জন্মাল যে, হাসানকে দিয়ে গোবর ফেলানো ও গরুর কাজ করানোর জন্য আল্লাহ তার উপর গজব নাযিল করেছেন। তিনি রাগে অন্ধ হয়ে গেছেন, বাড়িতে গিয়ে সোজা মাজেদার রুমে গিয়ে তার গালে ঢাস ঢাস করে কয়েকটা চড় মেরে বললেন, তুই এক্ষন এই মুহুর্তে আমার বাড়ি থেকে চলে যা, তুই থাকলে আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। তুই একটা ইয়াতিম ছেলেকে দিয়ে গরুর কাজ করিয়ে আল্লাহর গজব টেনে এনেছিস। কোনদিন আমার কোন কিছু চুরি হয়নি অথচ আজ তোর কারণেই আমার এই সর্বনাশ হয়েছে। তুই চলে যা, নইলে আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। মাজেদা লাফিয়ে উঠতে চাইল ‘একটা রাস্তার ছেলের জন্য তুমি আমাকে মারলা? ‘অনেক সহ্য করেছি আর না’ বলে মাষ্টার তার মুখের উপর সমানে চড় মারতে লাগলেন। তখন মা ও মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ল, বাপকে ধাক্বিয়ে তার রুমে পাঠিয়ে দিল।

মাজেদা ক্রোধোন্মত্ত হয়ে উঠেছে ‘এই বাড়িতে আমার কেউ নাই, আমার কোন মা বাপ নাই। এরা আমার সৎ মা বাপ’ ইত্যাদি বকোয়াজ করতে করতে সে চলে যেতে চাইল। তখন মা ও অন্যান্য বোনেরা তাকে তাফাতং দিয়ে শান্ত করল। তারপর সে সারাদিন বাড়ি শুদ্ধু ঘুরল, কাঁদল আর সকলের সাথে নালিশ করল যে, একটা রাস্তার ছেলের জন্য আমার বাপ আমাকে মেরেছে। এই লোক আমার বাপ না, আমি জীবনেও তার মুখ দেখব না, সে মরলেও তাকে দেখতে আসব না’ ইত্যাদি- যাকেই সামনে পেল তার সাথেই বিষোদগার করল। মুরুব্বীরা শুনে বলল, এতবড় বিবাহিত মেয়েকে আবার মারে কেমনে, মাষ্টার কাজটা ঠিক করেনি। পরদিন সকালে সে বাসায় চলে গেল।

বিষয়: সাহিত্য

১০২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File