সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- ৩৩- ৩৪

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০১ অক্টোবর, ২০১৭, ১০:২৩:২২ সকাল



হাসান মুসান্নার মিশন তখনো মুসলিম বিশ্বে প্রচারিত হয়নি। কোন মুসলিম দেশে এর প্রভাব না পরলেও কিন্তু দাজ্জালের মসনদে কাঁপন ধরে গেল। দাজ্জাল (ইহুদি খৃষ্টান) জানে যে, হাসান মুসান্না যে ডাক দিয়েছে একবার যদি এ বার্তা মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে মুসলিম দুনিয়ার যুব সমাজ মহাসমুদ্রের গর্জন তুলে জেগে উঠবে। আর তখন ভোরের সুর্যালোকের সামনে রাতের আধারের ন্যায় দাজ্জাল বিলীন হয়ে যাবে। কারণ দাজ্জাল জানে, মুসলমানরা পৃথিবীর মুল ভূখণ্ড, মুল সম্পদ ও মুল জনশক্তির মালিক। যুগে যুগে যারা মধ্যপ্রাচ্য শাসন করেছে তারাই পৃথিবী শাসন করেছে। কাজেই তাদেরকে পদানত করার জন্য দাজ্জাল প্রথমে তাদেরকে বিভিন্ন ভূখণ্ডে বিভক্ত করে জাতীয়তাবাদের বুলি শিখিয়েছে, তারপর তাদেরকে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী ও মৌলবাদী দুই ভাগে ভাগ করেছে। ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদেরকে বহুদলীয় গনতন্ত্রের নামে রাষ্ট্র রাজনীতি ও রাজত্বের অথরিটি দিয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে মৌলবাদী ধ্বংসের সার্বভৌম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

পক্ষান্তরে মৌলবাদীদের মধ্যে বিভিন্ন ফিরকার জন্ম দিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে কুকুরের মত লেলিয়ে দিয়েছে। ফলে তারা বহির্শত্রুর চেয়ে একে অন্যকে বড় শত্রু ভাবছে, পরস্পরকে ধ্বংসের চূড়ান্ত কসরত করছে। তাদের যুদ্ধ বিগ্রহে মুসলিম দুনিয়া শ্বশানে পরিণত হয়েছে। দাজ্জাল বিভিন্ন দল ফেরকা জন্ম দিচ্ছে, প্রতিপালন করছে, তারপর যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষ দলকে ধ্বংস করতে সর্বাত্মক সহযোগীতা দিচ্ছে। এভাবে তারা মুসলমানদের বিভক্ত করে দুর্বল করে শাসন করছে, শোষণ করে তাদের সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে, আর এই সম্পদ মুসলিম ধ্বংসে কাজে লাগাচ্ছে। এ অবস্থায় যদি হাসান মুসান্নার ডাক মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়ার যুব সমাজের কানে পৌঁছে যায় তাহলে দাজ্জালের শবদেহের উপর মুসলিম নেতৃত্বের মসনদ গড়ে উঠবে। এ জন্যই পশ্চিমা দাজ্জালের মসনদে ভূকম্পন শুরু হয়ে গেছে।

কয়েক ডজন বিদেশী গোয়েন্দা ময়মনসিংহে এসে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের সাথে আছে দেশীয় কিছু দালাল। এরা ছায়ার মত হাসান মুসান্না ও মোজাহিদের পিছু লেগে থাকে। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় এখানকার সংবাদ পশ্চিমে যাচ্ছে আর পশ্চিমের ঘুম হারাম হয়ে উঠেছে। তারা জরুরি মন্ত্রক আহ্বান করে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসল। সভায় বঙ্গসাগরের তীরে হাসান মুসান্না নামক ব্যক্তির কার্যক্রম বিস্তারিত আলোচনার পর গুরুত্ব দেয়া হল যে, এই একটি মাত্র ব্যক্তি ওজনে পৃথিবীর চেয়েও ভারী, পৃথিবীর সকল সম্পদের চেয়েও মূল্যবান। কারণ এই একটি মাত্র ব্যক্তি পৃথিবীর কক্ষপথ পাল্টে দিবে। ভূপৃষ্ঠে আমাদের কর্তৃত্ব ধ্বংস করে মুসলমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। শুধু তাই নয় বিগত কয়েক শতাব্দি ধরে আমরা মুসলমানদের উপর যে শাসন শোষণ ও গণহত্যা চালিয়েছি এর প্রতিটা ফোটা বিন্দু রক্তের প্রতিশোধ নিবে। ভূপৃষ্ঠ থেকে আমাদের অস্তিত্ব মুছে ফেলবে। কাজেই এক্ষনে এর প্রতিকার নির্ণয় করা অপরিহার্য।

প্রস্তাব হল, তাকে হত্যা করা হউক। অধিবেশন কর্তা বললেন, প্রস্তাবটা মুর্খের মত হল। বিষয়টা যদি এত সহজ হত তাহলে এই অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন ছিল না, শুধু কয়েক জন গোয়েন্দা পাঠিয়ে দুয়েকটা বুলেট খরচ করলেই ল্যাঠা চুকে যেত। কিন্তু বিষয়টা তত সহজ নয়। হাসান মুসান্নাকে হত্যা করলে মুসলিম দুনিয়া প্রশ্ন তুলবে, কেন তাকে হত্যা করা হল? তখন তার অনুসারীরা বিশ্ব মিডিয়ায় ঝড় তুলবে যে, হাসান মুসান্না মুসলিম জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন, মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, মুসলিম উম্মাহকে ইহুদি খৃষ্টান এন্টিক্রাইস্ট- এর দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। এ জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর এই বার্তা মুসলিম দুনিয়ায় পৌছার সাথে সাথে টর্নেডোর তাণ্ডব শুরু হয়ে যাবে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে, হাসান মুসান্নার মতবাদে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তখন মুসলমানদের ঐক্য হবে, খিলাফত হবে আর আমাদের সমাধি হবে। কাজেই বুঝা গেল, তাকে সরাসরি হত্যা করা মানে আমাদের নিজের খুড়ে নিজের কবর খোড়ার নামান্তর।

তারপর প্রস্তাব হল, তাহলে সে দেশের কোন রাজনৈতিক দল দিয়ে তাকে হত্যা বা ফাসির ব্যবস্থা করা হউক। এক্ষেত্রে বিতর্ক আসল, তাহলে ধর্মীয় ফেরকাগুলি ঐ রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে চলে যাবে, তখন সেই দলটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কারণ ধর্ম হল একটা জাতীর শিকড় ও কাণ্ড আর রাজনৈতিক দল লতা পাতার ন্যায় পরগাছা। এরপর দীর্ঘ আলোচনা শুরু হল, বিভিন্ন যুক্তি তর্ক চলতে লাগল। সর্বশেষে সিদ্ধান্ত হল, কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হবে অর্থাৎ যেভাবে বিভিন্ন ফেরকাকে উসকে দিয়ে মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংস করা হচ্ছে, একই কায়দায় হাসান মুসান্নাকেও ধ্বংস করা হবে। প্রত্যেক ফেরকাকে কিনে নেয়া হবে, প্রত্যেক ফেরকার ধর্মীয় নেতাদের দেহের ওজনে সোনা দিয়ে কিনে নিতে হবে, প্রয়োজনে বঙ্গসাগরের উপকুলের ছোট্ট ব- দ্বীপটি কিনে নিতে হবে।

তারপর এদের সবাইকে হাসান মুসান্নার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে হবে। ফিরকাগুলিকে কিনতে আমাদের সকল অর্থ এমনকি পৃথিবীর সকল অর্থ ঢেলে দিতে হবে। কারণ এটা আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন, আমাদের বিশ্ব নেতৃত্বের প্রশ্ন। কাজেই পৃথিবীর সকল সম্পদের বিনিময়ে হলেও এ একটি মাত্র ব্যক্তির ধ্বংস নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া আমাদের মিডিয়াগুলি শিয়ালের হুক্কাহুয়ার ন্যায় এক ডাকে তার বিরুদ্ধে প্রচারে নামবে। যেমন সে ফিরকাবাজদের কাফের বলে, তাদের মৃত্যুদণ্ড চায়, এ বিষয়গুলি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। এই সিদ্ধান্তের উপর অধিবেশন সমাপ্ত হল।

শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। পশ্চিম থেকে আসা প্রতিটা ফ্লাইটে কয়েক জন করে সাদা চামড়ার মানুষ আসতে লাগল। এভাবে কয়েক দিন পর্যন্ত আসল। সেই সাথে বৈধ - অবৈধ পথে বস্তার বস্তা টাকা আসতে লাগল। তারপর হঠাৎ একদিন হাসান মুসান্নার শিরোনামে সংবাদ ছাপল। সংবাদটির প্রথম দিক দিয়ে তার খুব প্রশংসা করা হল, তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান, মুসলিম জাতিকে বর্তমান দুরাবস্থা থেকে মুক্তি দিতে চান, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান, দরিদ্র অসহায় মানুষের জন্য সরকারি ভাতা জারি করতে চান ইত্যাদি। তবে শেষ লাইনটির মন্তব্য ছিল এ রকম ‘কিন্তু বড় বড় আলেমদের তিনি কাফের বলেন, এটা মেনে নেয়া যায় না।

টকশোতে আলোচনা চলল, সবাই প্রশংসা করল। একজন বলল, তার একটি কথা আমার ভাল লাগে না, তিনি সকল ফেরকার মুরুবিদের কাফের বলেন। কিন্তু কেন বলেন, সে কথা কেউ বলল না। তখন অন্যান্য বক্তারা জেনেও না জানার ভান করে বলল, তাই নাকি? না না, এটা উনি বলতে পারেন না। ইসলামের যেটুকু অবদান তা আলেমদেরই। রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে আলেমদের সাথে আমাদের মতবিরোধ থাকতে পারে- তজ্জন্য হয়ত আমরাও অনেক সময় কটু কথা বলে ফেলি কিন্তু তাদেরকে আমরা প্রাতঃস্বরনীয় মনে করি। কারণ আলেম না থাকলে ইসলাম থাকবে না। আবার কয়েকটা পত্রিকায় একসাথে রিপোর্ট আসল, রিপোর্টের শুরুতে বেশ প্রশংসা করা হল, শেষ লাইনে বলা হল ‘কিন্তু তিনি একটু বাড়াবাড়ি করতেছেন। বিভিন্ন ফেরকার মুরুব্বীদের তিনি কাফের আখ্যা দিয়ে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন, তাদেরকে হত্যা করতে চান।

এরপর থেকে মুসান্নার বিরুদ্ধে ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ঝড় উঠল। টকশো গুলিতে মহাসমুদ্রের ফেনিল বীচিমালার ন্যায় বক্তাদের মুখে ফেনা ছুটতে লাগল। কারণ মিডিয়াগুলির উপর দিয়ে বানের পানির মত বিদেশী টাকার বান ডেকে যাচ্ছিল। এবার এল প্রত্যেক ফেরকার নেতা ও মুরুব্বি নামক আলেমদের পালা। তাদের মধ্যে যেসব আলেমের জীবনে একটা সাইকেল চালানোর সামর্থ ছিল না, তাদের অনেকেই চার চাকায় চড়ে ঘোরাফিরা করে, চেহারায় উজ্বল্য উপছে পড়ছে, নতুন নতুন বাসা বাড়ি করছে। আবার প্রত্যেক ফেরকার বিভিন্ন কার্যক্রম বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সম্ভবত তারা টাকার খনি পেয়েছে। এখন পত্র পত্রিকা ও চ্যানেল গুলিতে ফিরকাবাজ মুরুব্বীদের বক্তব্য বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার আসতে লাগল। কেউ বলল, হাসান মুসান্না কে, কি, সে কোরান হাদিসের কী জানে, আসলে সে একটা বেকার মানুষ, নিজের নাম ফাটাতে চায় আর কিছু উপার্জন করে খেতে চায়।

কেউ বলল, মুসান্নাটা কে, ইসলামের জন্য তার কি অবদান আছে, সে ইসলামের কে? দুদিন আগেও তো তাকে কেউ চিনত না। যুগ যুগ ধরে আমরাই ইসলামের খিদমত করছি, একমাত্র আমরাই ইসলামের রক্ষক। অথচ সে আমাদেরকে কাফের বলে, সাহস কত বড়, সে একটা কাফের, ঔদ্ধত্যের সীমা থাকা চাই, ওকে দেশ ছাড়া করে তসলিমার কাছে পাঠাব। কেউ বলল, আসলে সে ইহুদি খৃস্টানের দালাল, সি আই এ ও মুসাদের চর। সে ইসলামী দলগুলির মুরুব্বিদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে, জাতীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। তারপর বিশৃংখলার অজুহাতে আমেরিকাকে ডেকে এনে দেশটা তাদের হাতে তুলে দিতে চায়। কারণ আমেরিকা বহুদিন ধরেই চাচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে চীনের সিমান্ত পর্যন্ত খৃষ্টরাজ্য স্থাপন করে সামরিক ঘাটি বানিয়ে চীনকে শায়েস্তা করবে। মুসান্না এই সুযোগটা করে দিতে চায়। কাজেই সে বিদেশী চর, জাতীর গাদ্দার, আর আমরা সরকারের কাছে এই গাদ্দারের বিচার চাই, ফাসি চাই। এভাবে প্রত্যেক ফেরকার মুরুব্বি নামক কিছু নামধারি আলেম মুসান্নার বিরুদ্ধে মাঠে নামল। অথচ তখনো বৃহত্তর আলেম সমাজ ও ছাত্র সমাজ তার পক্ষেই আছে।

পশ্চিমারা জানে মুসলমানদের আবেগ অনুভুতি কি করে বিগড়ে দিতে হয়। এখন মুসান্নাকে সি আই এ বা মুসাদের চর সাব্যস্ত করতে পারলেই কেল্লা ফতেহ। আর এই কথাটি কোন নির্ভর যোগ্য ব্যক্তির মুখ থেকে প্রচার করার জন্য তেমন কাউকে তারা খুঁজতে লাগল আর পেয়েও গেল। তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ আলেম, অন্যতম বুজুর্গ, বয়োবৃদ্ধ মুরুব্বি, দল মত নির্বিশেষে সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে, দেশের মানুষ তার আনুগত্য করে। তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ব, কোরান হাদিসের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ও ভাষ্যকার হিসাবে স্বিকৃত। এই বুজুর্গ যখন টাকার বস্তা দেখল তখন তার ঈমান ফিকে হয়ে গেল। কারণ এতগুলি টাকা একসাথে তিনি জীবনেও দেখেননি। তার ঠোঁটের কোণায় কুটিল হাসি ফুটে উঠল, সারা জীবন কোরান হাদীস শিখে যদি একজন মানুষকে কাফের প্রমাণ না করতে পারলাম, বিদেশী চর প্রমাণ না করতে পারলাম, মৃত্যুদণ্ডের আসামী ছাবেত না করতে পারলাম, তাহলে আমি কিসের আলেম, আমার ইলম ব্যর্থ। তারপর তিনি কোরান হাদীস ও তাফসীরের ভাণ্ডার খুলে বসলেন।

এক যোগে অনেকগুলি টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় সেই সাক্ষাৎকার প্রচারের ব্যবস্থা করা হল। নির্ধারিত দিনে সেই বুজুর্গ সাক্ষাৎকার দিলেন। কোরান হাদীস দ্বারা প্রমাণ করলেন যে হাসান মুসান্না কাফের, বিভিন্ন দলীল- আদিল্লা ও যুক্তি প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করলেন যে, সে সি আই এ বা মুসাদের দালাল, মুসলিম জাতীর শত্রু। তারপর আঁকলি ও নকলি দলীল দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড প্রমাণ করে জনগণ ও সরকারের কাছে ফাসির দাবী জানালেন। অনুষ্ঠান পর্ব শেষ করে তিনি পশ্চিমা প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। অর্থের কৃতজ্ঞতায়, সামনে আরো প্রাপ্তির আশায় একেবারে নুইয়ে পড়ে এমন মোসাহেবি শুরু করলেন যে, প্রতিনিধি ভাবতে বাধ্য হল, এর চেয়ে নীচ প্রকৃতির কোন মানুষ হতে পারে না।

বুজুর্গ মুসলিম জাতির উপর পশ্চিমাদের অনুগ্রহের বিবরন দিতে লাগল, পশ্চিমারা শিয়া ইরানকে ধ্বংস করার জন্য সাদ্দামকে সাহায্য করেছিল। আবার সাদ্দাম গোয়ার্তুমি করে কুয়েত দখল করলে তাকে ধ্বংস করে কুয়েত স্বাধীন করে দেয়। স্বৈরাচারী সাদ্দাম ও তার দেশকে ধ্বংস করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। লিবিয়া, সিরিয়া ইয়ামানে গণতন্ত্রের শত্রুদের ধ্বংস করার জন্য অস্ত্র সাহায্য দিচ্ছে। আবার গণতন্ত্র না থাকলেও আরব রাজাদের উপর অনুগ্রহ করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রী মৌলবাদী মুরসীকে ধ্বংস করে লিবারেল সি সিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। লাদেনকে জন্ম দিয়ে অবাধ্যতার জন্য সন্ত্রাসী আফগানকে সাইজ করেছে। আবার ছিন্নমূল ইহুদীদেরকে ফিলিস্তিনে থাকার জায়গা দিয়ে তারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ভাবে তিনি মুসলিম জাতীর উপর পশ্চিমাদের অনুগ্রহের বিবরন দিতে লাগলেন। প্রতিনিধি অসহ্য হয়ে উঠেছে অথচ বুজুর্গের প্রগলভতা বেড়েই যাচ্ছে। অবশেষে সে ধৈর্যচ্যুত হয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ঠিক আছে হুজুর আরেক দিন আসেন আলাপ করব, আজ আমি একটু ব্যস্ত। সহসা হুজুরের মুখ শুকিয়ে গেল, কারণ ভবিষ্যতে আরো প্রাপ্তির আশায় তার মোসাহেবি এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যেই বিদায় করে দিচ্ছে দেখে তিনি মনক্ষুন্ন হলেন।

প্রতিনিধি তখনো হাত বাড়িয়েই আছে। তিনি তাড়াতাড়ি পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা আতরের শিশি তার হাতে গুজে দিয়ে বললেন, এটা আমি কয়দিন আগে ওমরাহ করার সময় মক্বা শরীফ থেকে কিনে এনেছি। একদম মক্বার খাটী আতর অনেক দামী’ বলে প্রতিনিধির হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকলেন, যেতে চাচ্ছেন না। সে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ঠিক আছে আসেন। অগত্যা হুজুর বিদায় নিল। প্রতিনিধি তার গমন পথের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তার ঠোঁটের কোনায় অবজ্ঞার হাসি ফুটে উঠেছে। সে ভাবছে, এদের ঈমান কত সস্তা, কত তুচ্ছ মুল্যেই না এদেরকে কিনে নেয়া যায়। মুসলিম জাতীর মধ্যে যত দিন এ ধরনের আলেম আল্লামা আর বুজুর্গ থাকবে ততদিন এই জাতীর উপর আমাদের প্রভুত্ব বলবৎ থাকবে, কোন সন্দেহ নাই। হঠাৎ তার মনে হল যেন তার হাতে বিষের শিশি। চোখের সামনে এনে মুষ্টিটা খুলল আর সাথে সাথে প্রচণ্ড ঘৃনায় আতরের শিশিটা জানালা দিয়ে বাইরে নিক্ষেপ করল।

এবার দাজ্জালের মিডিয়া মাঠে নামল। বিশ্বময় প্রচারের ঝড় ছুটিয়ে দিল যে, বাংলাদেশে হাসান মুসান্না নামে এক ব্যক্তি পৃথিবীর বড় বড় আলেমদের কাফের বলছে, এমনকি মক্বা মদিনা আল আযহারের আলেমদেরও কাফের বলছে এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে। তার অনুসারীদেরকে হত্যার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। কিন্তু কেন বলছে, আদৌ মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে কিনা, করলেও কেন করেছে- এসব বিষয় প্রচারের তালিকা থেকে বাদ থাকল। এটা বিশ্বের মুসলমান ও আলেমরা বিশাস করল এবং ক্ষেপে গেল। তখন বড় বড় আলেমদের বিবৃতি কাট ছাট করে প্রচার হতে থাকল যে, হাসান মুসান্না মুসলিম জাতীর শত্রু, সে বিদেশিদের ক্রিড়নক হিসাবে কাজ করছে, তার বিচার হওয়া উচিত। পশ্চিমারা তদবীর করে কতক আলেমকে কিনে নিয়ে তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পত্র পাঠাল। তাতে হাসান মুসান্নার ফাসির দাবী জানানো হয়েছে। এভাবে তারা মুসলমান তো বটেই সারা দুনিয়াকে মুসান্নার বিরুদ্ধে দাড় করে দিল।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি নীরব ভুমিকা পালন করল, মুসান্নার সাথে তাদের চুক্তি ছিল বিধায় প্রথমাবস্থায় তারা তার পক্ষে মুখ খুলতে চেয়েছিল কিন্তু তখন পশ্চিম থেকে চোখ রাঙ্গানো হল আর মুসান্নার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়া হল। কিন্তু তারা জানত, মুষ্টিমেয় স্বার্থবাদী ফিরকাবাজ কিছু আলেম ছাড়া বাকি সকল আলেম সমাজ, ছাত্র সমাজ ও সাধারণ জনগন মুসান্নার পক্ষে, তাই তারা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সমিচিন মনে করল না। আবার দাজ্জালের নির্দেশ উপেক্ষা করার সাহসও পেল না। কাজেই তারা নীরব দর্শকের ভুমিকায় অবতির্ন হল।

যদিও মুষ্টিমেয় কিছু স্বার্থবাদী ফিরকাবাজ ছাড়া বাকি বৃহত্তর আলেম সমাজ, ছাত্র সমাজ ও সাধারণ জনগণ ছিল হাসান মুসান্নার আন্দোলনের পক্ষে, কিন্তু আরাকানসহ অন্যান্য দেশে যখন মুসলিম গণহত্যা চলে, দাজ্জাল মুসলমানের রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করে- তখন তারা যেভাবে প্রতিবাদী না হয়ে দরস- তাদরিস, মসজিদ- মাদরাসা ও খানকায় উট পাখির ন্যায় মাথা গুজে থাকে এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। তারা জানে এখানে দাজ্জালের খেলা চলছে, কাজেই প্রতিদ্ধন্ধিতায় না জড়িয়ে দরস ও তাদরীসের মধ্যে তারা নিজেদের দ্বীনি ফরযিয়্যত আদায়ে মশগুল থাকল। আবার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এরাবিক শিক্ষিতরা মনকে বুঝাল, সুখে থাকতে ভূতে কিলায়, এখানে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের খেলা চলছে। কজেই ঝামেলায় জড়ানোর দরকার কি। তার চেয়ে চাকরি বাকরি করছি, বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে স্বচ্ছন্দে আছি সেই ভাল, বিপদ টেনে আনার দরকার নাই।

আবার সাধারণ মানুষ মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারে বিভ্রান্ত হচ্ছিল। তারা ভাবতে লাগল মুসান্না বাড়াবাড়ি করেছে, সীমালঙ্ঘন করেছে। ওদিকে বিশ্বমিডিয়ায় মুসান্নার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার ঝড় তীব্রবেগে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে বিশ্ব জনমত তার বিপক্ষে চলে গেছে। পক্ষান্তরে মুসান্নার অনুসারিদের কোন প্রচার মাধ্যম দিল না, তারা মৌখিকভাবে নিজেদের মতামতগুলির ব্যাখ্যা দিতে লাগল আর অপপ্রচারের প্রতিবাদ করতে লাগল। কিন্তু বিশ্বমিডিয়ার বজ্রনাদের সামনে তাদের কণ্ঠনাদ প্রতিধ্বনি তুলতে পারল না। দাজ্জাল যখন বুঝল, গোয়েবলসীয় এটমের ঘায়ে ঘায়ে হাসান মুসান্না ঘায়েল হয়ে গেছে, তার অনুসারিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তখনি তারা মরণ কামড় দেয়ার জন্য মাঠে নামল।

প্রত্যেক ফেরকার মুরুব্বীদের পক্ষ থেকে মুসান্নার অনুসারীদের উপর কঠোরতা আরোপ করা হল। কওমি ও আলিয়া মাদরাসার ছাত্রদের হুমকি দেয়া হল ‘মুসান্নার সাথে সম্পর্ক রাখলে নাম কেটে মাদরাসা থেকে বের করে দেয়া হবে। ছাত্রসেনা, ছাত্র শিবির, ছাত্র মজলিস ইত্যাদি ইসলামী সংগঠনের ছাত্রদের দল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হল। তেমনি ভাবে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ ছাত্রদল ইত্যাদি সংগঠনে মুসান্নার অনুসারীরা স্ব স্ব দলের নেতৃবৃন্দের তোপের মুখে পড়ল। ফলে ছাত্র সমাজ মুসান্নার একনিষ্ঠ সমর্থক হওয়া স্বত্বেও নিজ নিজ পদ সম্মান ও জীবন রক্ষার্থে পিছিয়ে পড়ল। এতদসত্ত্বেও তাদেরকে এভাবে ছেড়ে দেয়া হল না, মুসান্নার বিরুদ্ধে মিটিং মিছিলে অংশগ্রহন করতে বাধ্য করা হল। যারা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে অস্বিকার করল তাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা দল থেকে বের করে দেয়া হল। এমনকি মুসান্নার অনুসারিদের পিছনে অন্যান্য ছাত্রদের গোয়েন্দার মত লাগিয়ে রাখা হল যাতে ইত্তেহাদুল উম্মাহর কোন কার্যক্রমে তারা অংশ গ্রহন করতে না পারে। এভাবে তার অনুসারীদেরকে বয়কট করে রাখা হল। সর্বত্র মুসান্নার বিরুদ্ধে ভীতি ছড়িয়ে দেয়া হল।

এবার আন্দোলন আরো চাঙ্গা হল। বিভিন্ন জেলায় মিটিং মিছিল হতে লাগল, আর সর্বত্র মুসান্নাকে ইহুদি খৃস্টানের দালাল, উম্মাহর গাদ্দার বলে প্রচার চালানো হল। মিছিলে মিছিলে তার ফাসির দাবী চলতে লাগল। সর্বত্র প্রচারনার কাজ শেষ হল, মুসান্নাকে উম্মাহর গাদ্দার আর ইহুদি খৃস্টানের দালাল হিসাবে চিহ্নিত করনের কাজ শেষ হল। দেশে বিদেশে মুসান্নার বিরুদ্ধে জনমত ফুসে উঠল। তখন হঠাৎ একদিন সম্মিলিত ফিরকার মুরুব্বিরা সম্মেলন আহ্বান করলেন। মুসান্না যেহেতু ময়মনসিংহে থাকে বিধায় ময়মনসিংহের সার্কিট হাউজ ময়দানে সম্মেলন ডাকা হল। শুক্রবার জুমার নামাযের পর শুরু হবে। তখন বিদেশী গোয়েন্দারা সম্মেলন সফল করতে বস্তার বস্তা টাকা ঢালতে লাগল।

কয়েকদিন আগে থেকেই দাজ্জালের টাকায় সারা দেশে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালানো হল। জ্ঞানবান মানুষরা দেখছিল শুধু প্রচারের মাধ্যমে একটা সত্যকে কিভাবে মিথ্যায় রুপান্তরিত করা হচ্ছে। উম্মাহর চিন্তাবিদরা দেখছিল, হতভাগ্য জাতির মুক্তির বীজটা অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এতকিছু বুঝে না, তারা দেখল প্রত্যেক দলের আলেমরা মুসান্নার বিরোধি, সে অপরাধী না হলে সবাই তার বিরোধিতা করবে কেন, আবার অনেকেই হুজুগে বাঙ্গালি। কাজেই তারা মনে করল, এ ব্যক্তির বিচার হওয়া দরকার। এভাবে জনমত মুসান্নার বিরুদ্ধে চলে গেল। তার অনুসারীরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে জড়বৎ পড়ে রইল।

শুক্রবার সকাল থেকেই সার্কিট হাউজে ময়দানে খণ্ড খণ্ড মিছিলের আগমন শুরু হল কিন্তু জুমার পর যেন প্রলয় ঘটে গেল। নামাযের পর প্রত্যেক মসজিদের মুসুল্লিরা ইমাম সাবের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে রওয়ানা হল। ময়মনসিংহ বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে হাজার হাজার বাস ট্রাক মিছিল সহকারে আসতে লাগল। অন্যান্য বিভাগ থেকেও অসংখ্য বাস ট্রাক রিজার্ভ করে লোকজন আসছে। ময়মনসিংহ শহর পরিণত হল সমুদ্রে, জন সমুদ্রে। সারা শহরে তিল ঠাই নাই, শুধু মানুষ আর মানুষ। মানুষ মানুষের মাথা খায়। মানুষের ঢল, মানব বন্যা, পদ্মা মেঘনা যমুনা ব্রহ্মপুত্র যেন ময়মনসিংসের রাস্তায় উঠে এসেছে, মানুষের নিঃসীম প্রবাহ ধেয়ে যাচ্ছে। ধেয়ে যাচ্ছে বানের পানির মত, এ যেন মানুষের প্রাচীর, কিয়ামতের ময়দান, লোকারণ্য।

ময়মনসিংহের মানুষ বহু বছর আগে ইসলাম রক্ষার্থে এর শতাংশ একটা আন্দোলন দেখেছিল তসলিমার বিরুদ্ধে। আজ আবার দেখছে সর্বগ্রাসি ও সর্বব্যাপি এক আন্দোলন, কিন্তু এই আন্দোলনের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য হচ্ছে ইসলাম ও উম্মাহর চিতা জ্বালানো। মধ্যহ্ন সুর্য ময়মনসিংহের বুকে এমন গণজাগরণ আর কখনো দেখেনি। লক্ষ লক্ষ মানুষের গর্জনে শহরটা বার বার কেঁপে উঠছে, যেন প্রলয় ঘটতে যাচ্ছে। মানুষের পদভারে ও শ্লোগানে ভূকম্পন শুরু হয়ে গেছে।

কয়েক সপ্তাহ আগে অনুসারীরা যখন মুসান্নার জীবনাশংখা বোধ করল তখন তাকে জীর্ণ কুটির থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। ইঞ্জিনিয়ার শরীফের বহুতল বিশিষ্ট ভবনের একটা ফ্ল্যাট খালী ছিল, সেখানে তাকে নিরাপদে রাখা হল। নিরাপত্তার জন্য পালাক্রমে তার সাথে দুয়েকজন থাকে। আজ মোজাহিদ ও জামাল তার সাথে আছে। জুমার নামাযের পর ভু- কাপানো শ্লোগান শুনে তারা দেখার জন্য বাড়ির ছাদে উঠে গেল। মুসান্না দেখল, দিগন্ত মণ্ডল বিস্তৃত মানুষের ঢল, ব্জ্রনাদবৎ শ্লোগান, সবাই তাকে অভিশম্পাত করছে। এত মানুষ সে জীবনে কখনো দেখেনি, এ যেন দুরন্ত দুর্বার শক্তি, মহাপ্রলয়ংকরি কাল বৈশাখী, সর্ববিধ্বংসি টর্নেডো, সর্বগ্রাসি মহাসমুদ্রের গর্জন, এ শক্তি যেদিকে ধাওয়া করবে সব কিছুই খড় কোটার মত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। তাদের শ্লোগান মেঘ গর্জনের মত আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনি তুলছে।

সে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠল, আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। দু’হাত উর্ধ্বে নিক্ষেপ করে চিৎকার করল, ‘হে মহাবিশ্বের শক্তির উৎস, এই তো চেয়েছিলাম এটাই তো চেয়েছিলাম। ইসলামের এই যে বিপুল শক্তি, অফুরন্ত শক্তি, এই শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে আরাকান কাশ্মির ফিলিস্তিন জিংজিয়ায়ের দিকে মার্চ করবে, কুফর শক্তি পদতলে পিষ্ট হয়ে যাবে। তোমার অসহায় বান্দাদের মুক্তি জুটবে। পশ্চিমা দাজ্জালের বিরুদ্ধে মার্চ করবে, দাজ্জাল হাওয়া হয়ে যাবে। কিন্তু আজ একি হল, বল হে মুহাম্মদ (সাঃ) এর রব, আমার হতভাগ্য কওমের একি হল, আজ তারা শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মিলিত মার্চ না করে আমার মত একটা তুচ্ছ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীট পতঙ্গের বিরুদ্ধে মার্চ করছে। আর তা এজন্য যে, আমি তাদের ঐক্যের কথা বলেছি, তাদের মুক্তির কথা বলেছি, বিশ্বনেতৃত্ব ও সম্মানের কথা বলেছি, ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের কথা বলেছি। এজন্য আজ তারা আমাকে ধ্বংস করতে চায়।

হায় কষ্ট, এই দুঃখ রাখার স্থান কোথায়? এই অভিশপ্ত জাতিকে কেন তুমি এমন মুর্খ, অপরিনামদর্শি ও আত্মঘাতি বানালে। যে দাজ্জাল তাদেরকে ধ্বংস করছে সেই দাজ্জালের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়িয়ে আজ তারা আমাকে ধ্বংস করতে চায়। কবে তুমি এদেরকে বুঝ দিবে, কবে এরা শত্রু- মিত্র চিনবে, কবে এ অভিশপ্ত উম্মাহ মুক্তি পাবে? ইজ্জত ও লাঞ্চনার মালিক ওগো, এই অভিশপ্ত কওমকে আর লাঞ্চিত করো না, এবার তাদের মুক্তি দাও, ইজ্জত দাও। এই হতভাগ্য উম্মাহর জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করলাম। ওরা আমায় মেরে ফেলুক, আমার রক্তের বিনিময়ে তুমি এই ভাগ্য বিরম্বিত জাতিকে মুক্তি দাও। তারপর সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।

সার্কিট হাউজ ময়দান, মানব অরন্য, মানুষের মহাসমুদ্র। দিগন্ত বিস্তৃত মানুষ আর মানুষ, ময়দান পূর্ণ হয়ে রাস্তা ঘাট বাড়িঘর সর্বত্র মানুষের পাহাড়। কিছুক্ষণ পরপর মেঘ গর্জনের মত শ্লোগানে শ্লোগানে মাটি কেঁপে উঠছে। সম্মেলনে প্রত্যেক ফেরকার প্রধান প্রধান সেইসব মুরুব্বিগণ তাশরীফ আনয়ন করলেন- যারা রাসূল (সাঃ) এর ওয়ারিশ দাবী করে, ইসলামের গলায় ছুরি দিয়ে একক উম্মাহকে ভেঙ্গে হাজারটা ফিরকায় বিভক্ত করে ধ্বংসের শেষ ঘাটিতে পৌঁছে দিয়েছে। যারা রাসূল (সাঃ) এর লেবাস গায়ে জড়িয়ে আযাযিলের দায়িত্ব পালন করছে, যারা কোরান হাদীস শিখে রাসূল (সাঃ) এর অনুসারী না হয়ে শয়তানের অনুসারি হয়েছে। এরা দাজ্জালের দোসর এবং এক চোখা দাজ্জালের বিশ্বায়ন সহযোগি। এরাই হল ইসলাম ও উম্মাহর প্রকৃত দুষমন।

যুগ যুগ ধরে এরা ইসলাম নিয়ে বাণিজ্য করছে, ইসলামকে রোজি রুটির অবলম্বন বানিয়েছে, নেতৃত্বের সোপান বানিয়েছে। এরা নিজেদের ভাল মন্দ লাভ ক্ষতি সবই বুঝে, ইসলাম বিক্রি করে দু পয়সা কামানোর কলা কৌশল সুন্দর বুঝে কিন্তু এই বাংলা কথাটা বুঝে না যে, তাদের ফিরকাবাজীর কারণে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইসলাম ও উম্মাহ বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত থাকত। দুনিয়া জোড়া মুসলমানদের মার খেতে হত না। কাজেই এরাই হল প্রকৃত প্রতারক, এন্টিক্রাইস্ট বা দাজ্জাল। এই বুজুর্গরা কোন দিন ইসলাম ও উম্মাহর জন্য এক মঞ্চে উঠতে পারেনি, আরাকান কাশ্মীর ফিলিস্থিন চায়না তুর্কিস্থানের মজলুম মুসলমানের জন্য এক মঞ্চে দাঁড়াতে পারেনি, এক কাথার নীচে শুইতে পারেনি। কিন্তু আজ তারা এক মঞ্চে উঠল সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে- যে উম্মাহর ঐক্য চায়, মুক্তি চায়।

খোদা প্রদত্ত প্রতিভা ও বাগ্বিতার বদৌলতে তারা বক্তৃতা করল, ষাঁড়ের মত হুঙ্কার ছাড়ল, মাটি কাঁপিয়ে তুলল। দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বক্তৃতা করে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করল যে, হাসান মুসান্না ইহুদি খৃস্টানের দালাল, উম্মাহর শত্রু, জাতীয় গাদ্দার। সে উম্মাহকে বিভক্ত করে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চায়, তারপর ভারত বা আমেরিকার হাতে দেশ তুলে দিয়ে মুসলমানদের ধ্বংস করতে চায়, সে কাফের। কাজেই এই গাদ্দারকে শীঘ্রই ফাসি দিতে হবে, অন্যথায় টেকনাফ তেতুলিয়ার দৈর্ঘে প্রস্তে দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে আগুনের প্রাচীর। আর সেই আগুনে সরকার জ্বলে পোড়ে খাক হয়ে যাবে। তারপর সম্মেলন সমাপ্ত হল আর শ্রোতারা ‘হাসান মুসান্নার ফাঁসি চাই দিতে হবে’ শ্লোগান দিতে দিতে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেল।

এরপর মুসান্নার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা ঠুকে দেয়া হল। কিন্তু কোন ফল হল না, সে এ্যারেস্ট হল না। কারণ তখন রাজনৈতিক দলগুলি কৌশলী ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা জানে দেশের ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ ও সাধারণ জনগণ মুসান্নার পক্ষে। এখন তারা পশ্চিমা প্রচেষ্টা ও প্রপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে নীরব আছে। এই অবস্থায় মুসান্নার গায়ে হাত দিলে একদিন তারা এর প্রতিশোধ নিবে। হয়ত ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে অথবা ক্ষমতায় যেতে অন্তরায় হবে। এ জন্য তারা নীরব দর্শকের ভুমিকা অবলম্বন করল। পশ্চিমা গোয়েন্দারা যখন দেখল, মামলায় মুসান্নার কিছুই হবে না। কারণ তার এমন কোন অপরাধ নাই যে যাবজ্জীবন বা ফাঁসি হতে পারে। কাজেই তারা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের কৌশল অবলম্বন করল।

তখন দেশের প্রধান বুজুর্গ- যিনি আতরের শিশি দিয়েছিলেন- সকল ফেরকার মুরুব্বীদের বৈঠক আহ্বান করলেন। যে মুরুব্বিগণ সারা জীবন প্রতিপক্ষ ফেরকার বিরুদ্ধে বিষবাষ্প উদগার করেছে, গালি গালাজ করেছে, বিদ্বেষ ছড়িয়েছে, কাফির মুশরিক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, পথে ঘাটে সাক্ষাৎ হলে সালাম তো দূরের কথা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, পৃথিবীর সব চাইতে ঘৃনিত জীব হিসাবে গন্য করেছে- আজ তারাই একত্রে বসার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে টাকার বস্তা পৌঁছে গেছে। টাকার ধাক্বায় যদিও এল কিন্তু প্রমাদ গুনল। কারণ তারা তো সারা জীবন একে অন্যকে শত্রু ভেবেছে, এখন পরস্পর শত্রুরা একসাথে পাশপাশি চেয়ারে বসে থাকা কঠিন পীড়াদায়ক হয়ে উঠল। কেউ কারো সাথে কথা বলে না, সবাই মাথা নিচু করে বসে আছে। লজ্বা থেকে বাঁচার জন্য কেউ শরীর চুলকাচ্ছে, কেউ চুল দাড়ি বা পিঠ চুলকাচ্ছে, কেই আঙ্গুল ফোটাচ্ছে। আহ হা রে, জন্মের পর থেকে সম্ভবত বেচারারা এতটা অসহায়ত্ব কখনো বোধ করেনি। তারা বিমর্ষ হয়ে বসে আছে।

একজন বৈঠকের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখছে, কিন্তু তার টুপি পাঞ্জাবী নাই, দাড়ি কাটছাট। বুজুর্গরা এ ব্যক্তিকে সহ্য করতে পারছে না, মনে মনে বলছে, এই খৃস্টানী চেহারা নিয়ে আমাদেরকে জ্ঞান দিতে চায় সাহস কত বড়। একজন অসহ্য হয়ে খেকিয়ে উঠলেন, আমাদেরকে এখানে কেন ডাকা হয়েছে? বক্তা থতমত খেয়ে বলল, আমরা সম্মিলিত ইসলামিক মোর্চা সরকারের কাছে মুসান্নার ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি, তাতে প্রত্যেক দলের প্রধানদের স্বাক্ষর লাগবে। মুরুব্বি ঝাঝিয়ে উঠলেন ‘স্বাক্ষর নিলেই তো হয় এত বক্তব্য বিবৃতির কি দরকার। তারপর স্বাক্ষর দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হল। কে কার আগে স্বাক্ষর দিয়ে বিদায় নিবে হুরোহুড়ি পড়ে গেল। স্বাক্ষর দিয়ে তারা ঘর থেকে এত দ্রুততার সাথে বের হলেন যেন ঘরটা একটা গ্যাস চেম্বার। আর ব্যস্ততার মধ্যে জুতা পায়ে দিতে গিয়ে ডান পায়ে বাম জুতা বা এক পায়ে নিজের জুতা আরেক পায়ে অন্যের জুতা ঢুকিয়ে উর্ধ্বাশ্বাসে বেড়িয়ে গেলেন। তারপর বাইরে গিয়ে কাফের মুশরিকদের সাথে একসঙ্গে বসার অপরাধে উর্ধ্বে তাকিয়ে আল্লাহ্‌র দরবারে তওবা- এস্তেগফার করলেন, আর কোনদিন বসবেন না বলে আল্লাহকে প্রবোধ দিলেন। এত কিছুর পরেও গোয়েন্দারা যখন দেখল হাসান মুসান্না তাদের কাংখিত শাস্তি পাবে না তখন তারা অন্য ফিকিরে নামল।



নিয়মানুযায়ী শুক্রবার মাগরিব পর অধিবেশন বসেছে। প্রথমেই প্রশ্ন উঠল ফিরকাবাজরা এত বিশাল সমাবেশ কি করে করল, এত লোক কিভাবে সন্নিবেশ করল। তারপর একেকজন নিজেদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগল। একজন বলল, আসলে ওদের এত জন সমর্থন নাই। ওরা টাকা ছিটিয়ে লোক এনেছে। বিদেশীরা এখানে বস্তার বস্তা টাকা ঢালছে। মাদরাসা স্কুল কলেজের নেতৃস্থানীয় শিক্ষকদের টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে, জন প্রতিনিধিদের কিনেছে। গাড়ি ভাড়া করেছে, সবাইকে খাবার প্যাকেট দিয়েছে। ফ্রি আনাগুনা, তার উপর খাবার পেয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই আমাদের সমর্থকরাও সেখানে গিয়েছে। আসলে হুজুগে বাঙ্গালি, অনেকেই হুজুগের জোশে এসেছে, ফিরকাবাজদের সমর্থনের জন্য নয়। একজন মাদরাসা ছাত্র দাঁড়িয়ে বলল, আমাদের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা, কেউ হাসান মুসান্নার সমর্থন করতে পারবে না। এমনকি তার পক্ষে কথা বললেও মাদরাসা থেকে বের করে দিবে। তাদের সমাবেশের আগে ঘোষণা দেয়া হল কয়েকটা গাড়ি আসবে, সকল ছাত্রকে বাধ্যতা মুলক সভায় অংশগ্রহণ করতে হবে। যারা অংশগ্রহণ করবে না তারা মুসান্নার অনুসারী বলে গণ্য হবে, তাদেরকে নাম কেটে মাদরাসা থেকে বের করে দেয়া হবে। অথচ আমাদের মাদরাসার সকল ছাত্র এমনকি অধিকাংশ শিক্ষক উস্তাদজীর সমর্থক। তখন আমরা গোপনে গোপনে পরামর্শ করলাম সভায় গেলে তো আর ক্ষতি নাই বরং ভাল, বিনে পয়সায় ভ্রমণ হবে আনন্দ হবে, তার উপর খাবারও পাওয়া যাবে। ব্যস আমরা গেলাম। আর এভাবেই অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র অংশ নিয়েছে। কিন্তু মনে মনে তারা সবাই উস্তাদজীর অনুসারী।

একজন গ্রাম্য লোক দাঁড়িয়ে বলল, আমাদের এলাকার সবাই উস্তাদজির অনুসারী কিন্তু গ্রামের মানুষ সাধারণত ভ্রমণের সুযোগ পায় না, তারা যখন শুনল মাগনা ভ্রমণ খাবারও আছে তখন সবাই হুজুগে মাতল, এমনকি আমিও এসেছিলাম। আসলে তাদের সমাবেশের অধিকাংশ লোক আমাদের আন্দোলনের সমর্থক, ওরা মজা করার জন্য তাদের সভায় যোগ দিয়েছে। তখন হাসান মুসান্না বললেন, এসব ফাও আলোচনা করে লাভ নেই, এখন আমাদের করনীয় কি তা নিয়ে আলোচনা করা দরকার। কারণ আমরা হুজুগে বাঙ্গালি, আর ঘটনা দুর্ঘটনা যা ঘটে হুজুগেই ঘটে। সবাই মনে মনে আমাদের সমর্থক কিন্তু প্রকাশ্যে বুঝা যাচ্ছে, জনগণ ওদের সাথে, আমাদের পক্ষে তেমন কেউ নেই। তাহলে এই সমর্থনের মূল্য কি থাকল। কাজেই আমাদের এমন কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে যাতে আমাদের সমর্থকরা কারো চাপে ভীত না হয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে। আর এ বিষয়ে আমরা কি পদক্ষেপ নিতে পারি তার উপর আলোচনা হউক।

মজলিসের অধিকাংশই মত দিল পাল্টা সমাবেশ করে জনগণকে প্রকাশ্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানাতে হবে। মুসান্না বললেন, আগেই সমাবেশ করার দরকার নাই। জনগণ ও ছাত্র সমাজ তো আমাদের পক্ষেই আছে কিন্তু ফিরকাবাজ আলেমরা বিপত্তি ঘটাচ্ছে। বিদেশী গোয়েন্দারা তাদের কিনে নিয়েছে। এখন তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদের ভুলটা ধরিয়ে দিতে পারলেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি বড় বড় আলেমদের কাছে প্রতিনিধি দ্ল পাঠাব। কিন্তু সাধারণ আলেম ও তৃনমূল পর্যন্ত জনগণকে বুঝানোর জন্য এক যোগে আমাদের সকলকেই কাজ করতে হবে, কেউ পিছিয়ে থাকলে চলবে না।

আপনারা জনগণ ও আলেমদেরকে বুঝাবেন যে, পশ্চিমারা মুসলমানদেরকে মৌলবাদি ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী দুই দলে ভাগ করে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। আবার মৌলবাদীদের মধ্যে বিভিন্ন দল ও ফেরকার জন্ম দিয়ে পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ উসকে দিয়ে ধ্বংস করছে। যেমন তালেবান, আল কায়েদা, আইসিস, বুকো হারাম ইত্যাদি অসংখ্য জঙ্গি সংগঠনের জন্ম দিয়েছে পশ্চিমারা, এদের হাতে অস্ত্রও তুলে দিয়েছে তারা। আর এসব অস্ত্র শুধু মুসলমানের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হচ্ছে, একটা অস্ত্রও ইসরাইল বা অন্য কোন কাফেরের দিকে তাক হচ্ছে না। এভাবে তারা শিয়া- সুন্নি ও রাজতন্ত্রী- গণতন্ত্রীর বিদ্বেষ ছড়িয়ে মুসলিম দুনিয়াকে শ্মশানে পরিণত করেছে। আমাদেরকে দুর্বল করে ধ্বংস করছে, শাসন করছে লোটপাট করছে। কাজেই আমরা যদি পশ্চিমা দাজ্জালের বিভক্তি নামক পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাই তাহলে খিলাফত বা মুসলিম জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। আর তখন দাজ্জাল বরফের মত গলে যাবে।

খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে ইসলাম ও উম্মাহ মুক্তি পাবে। আরাকান, কাশ্মির ও ফিলিস্তিনের মত অগ্নিকুন্ড গুলি নিভে যাবে। মুসলমানদের দুঃখ দুর্দশা দূর হবে, মানাবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এসব ক্ষেত্রে আলেমরাই নেতৃত্ব দিবে বিধায় সর্বাগ্রে আলেমদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ইসলাম ও উম্মাহর স্বার্থে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ফিরকাবাজীর উর্ধ্বে উঠে খিলাফতের লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এরপরেও যদি কোন আলেম বা ফিরকা বিভক্তিতে অটুট থাকে তাহলে সে আল্লাহ- রাসূল, ইসলাম ও উম্মাহর দুষমন। উম্মাহর বর্তমান দুর্গতির দায় তাকে বহন করতে হবে। কাজেই উম্মাহর প্রধান দায়িত্ব হবে এ জাতীয় আলেম ও ফিরকাবাজদের ধ্বংস করা। আপনারা সবাই এভাবে আলেম সমাজ ও সাধারণ জনগণকে দাওয়াত দিবেন। তখন এ জাতি যদি একান্তই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যি ঐক্যের পথে ফিরে আসবে।

তারপর তিনি বিশজন আলেম ও বিশজন সাধারণ শিক্ষিত লোক রেখে বাকিদের বিদায় দিয়ে দিলেন। এই চল্লিশ জনকে দুই জন করে বিশটি দলে ভাগ করলেন, এরা হল প্রতিনিধি দল। তাদেরকে বিভিন্ন ফেরকার মুরুব্বি ও বড় বড় আলেমদের কাছে পাঠানো হবে। তারপর কোন দল কোন আলেমের কাছে যাবে- তা লিস্ট করে তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় দিলেন।

প্রতিনিধিরা ব্যাপক কাজ করতে লাগল কিন্তু ফল হল শূন্য। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছাত্র শিক্ষক মুসান্নার অনুসারী। কিন্তু মুরুব্বী গোচের যারা গোয়েন্দাদের সুবিধাভোগী তাদের দাপটে এরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। প্রতিনিধি দল গিয়ে ঐসব সুবিধা ভোগীদের বুঝায়, তখন তাদের কেউ বলে, আপনাদের উদ্দেশ্য ভাল, চালিয়ে যান, কাজ হলে হতেও পারে। কিন্তু সে নিজে কিছু করতে অপারগতা প্রকাশ করল। একজন বলল, এটা অসম্ভব, এই শত শত হাজার হাজার ফেরকার মাঝে কখনোই ঐক্য সম্ভব নয়, এসব গাজাখোরি গপ্প বাদ দেন। ময়মনসিংহের এক বড় হুজুর বললেন, কাফেরের সাথে কি মুসলমানের ঐক্য হতে পারে? আমরা জামাত- শিবির, বেরেলভী, মাযারপন্থী ইত্যাদিদের কাফের বলি, বেরেলভী ও আহলে হাদীসরা আমাদেরকে কাফের বলে, আমরা ছাড়া বাকি সবাই তাবলীগকে কাফের বলে। কাজেই পাগল ছাড়া কোন সুস্থ মানুষ এইসব পরস্পর শত্রু- কাফের গুলির মাঝে ঐক্যের কামনা করতে পারে না।

ঢাকার এক গউসুল আকবর, কুতুবুল আলম, আল্লামাতুত দহর বড় হুজুরের সামনে মোজাহিদ বসে আছে, হুজুর দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে হেঃ হেঃ করে কিছুক্ষণ হাসলেন। তারপর বললেন, আপনাকে দেখে তো আলেম মনে হচ্ছে কিন্তু আসলে আপনি একটা মুর্খ। আপনি কি জানেন না যে, ইমাম মাহদী আগমনের আগে এ উম্মত কাফেরদের হাতে মার খেতেই থাকবে। তিনি আসলে ঐক্য হবে, খিলাফত প্রতিষ্ঠা হবে কিন্তু তার আগে এভাবেই চলতে থাকবে। কাজেই আপনি এখন ঐক্যের কথা, খেলাফতের কথা বলেন কোন আক্বেলে। মোজাহিদ বলল, কোন মহান ব্যক্তি আগমনের পুর্বে তার রাস্তা পরিস্কার করতে হয়, মঞ্চ তৈরি করতে হয়, আমরা সেই কাজটি করতে মাঠে নেমেছি। হুজুর বললেন, আপনি তো আসলেই পাগল, অতিথির খবর নাই আপনি আগেই রাস্তা ও মঞ্চ তৈরি শুরু করে দিয়েছেন। হাদীসে কি আপনাকে এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে?

মোজাহিদ আগুনের ঢোক গিলে বলল, না আমাকে নির্দেশ দেয়নি কিন্তু আপনাকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে- তা আপনি মানছেন না কেন? – আমি কি মানছি না? - রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ইমাম মাহদি আগমনের পূর্বে যে অন্ধকার ফেৎনা হবে তখন ঈমান বাচাতে চাইলে নিজেদের সম্বল বা জীবনোপকরন নিয়ে জনপদ ছেড়ে পাহারে গিয়ে আশ্রয় নিবে, সেখানে গাছের শিকড় কামড়ে পড়ে থাকবে। কাজেই আপনি তো এই নির্দেশ মানছেন না, বসে বসে জনগণের অন্ন ধ্বংস করছেন। হাদীস মানলে আপনি পাহাড়ে বা বনবাসে চলে যান। হুজুর ক্ষেপে গেল, আরে মুর্খ আমি ইমাম মাহদির অপেক্ষায় আছি। মোজাহিদ জানে এই শয়তানরা ইমাম মাহদীর দোহাই দিয়ে নিজ নিজ অনুসারীদেরকে ঐক্য ও খিলাফত থেকে বিমুখ করে রাখে। কাজেই একে বুঝিয়ে লাভ নেই বরং পাছায় আঙ্গুল দেয়াই ভাল। তাই সে বলল, ইমাম মাহদী তো এসে গেছেন, আপনি এখনো বসে আছেন কেন, তাড়াতাড়ি গিয়ে বাইয়্যাত হোন।

হুজুর ক্ষ্যাপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, কে ইমাম মাহদী? মোজাহিদ মুচকি হেসে বলল, কেন, হাসান মুসান্না? হুজুর লাফিয়ে উঠলেন ‘কাফের, এই বুঝি তোদের মতলব? এটাই বুঝি তোদের খেলাফত প্রতিষ্ঠার নমুনা। যা বেরো, বেরো আমার খানকা থেকে। মোজাহিদ বেড়িয়ে এল, সে হাসছে এজন্য যে, শয়তানকে উপযুক্ত খোচাটা দেয়া গেল। কিন্তু পরদিন পত্রিকায় খবর আসল যে, মুসান্না নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করেছে। সাথে সাথে বিশ্ব মিডিয়ায় ঝড় উঠল, প্রাচি প্রাতিচি সর্বত্র চাউর হয়ে গেল যে, হাসান মুসান্না নিজেকে ইমাম মাহদি দাবী করে।

শুক্রবারের আসরে সকলের কারগুজারি শুনার পর মোজাহিদ গর্জন তুলল, আর কোন ফেরকাবাজের কাছে যাওয়া হবে না, দাওয়াত দেয়া হবে না, তেল মারা হবে না। কারণ এরা মরে গেলেও ঐক্য হবে না। আল্লাহ ফিরকাবাজী এদের কলবে মোহরাঙ্কিত করে দিয়েছেন, এদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। কাজেই এখন ইসলাম ও উম্মাহকে বাঁচাতে চাইলে, ঐক্য চাইলে, খিলাফত চাইলে একটা মাত্র পথ খোলা আছে, সেটা হল ফিরকাবাজদের ধ্বংস করা। আগেই তাদের মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু প্রস্তাব পাশ হয়নি এজন্য যে, তাদের হাতে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অপর্ন করা হবে। যদি তারা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসে তো ভাল, অন্যথায় তাদেরকে ধ্বংস করা হবে। জামালুদ্দিন আফগানী সর্বাত্নক ঐক্য প্রচেষ্টার পর আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘মুসলমানরা একমত হয়েছে যে তারা একমত (ঐক্যবদ্ধ) হবে না’। কাজেই আমরাও একমত হয়েছি যে, ওদেরকে ছাড়ব না, ভূ-পৃষ্ঠে ফিরকাবাজ নামের কোন প্রানির অস্তিত্ব থাকবে না। ফিরকাবাজ থাকলে ইসলাম ও উম্মাহ থাকবে না, ইসলাম না থাকলে আমরা থাকব না, আমরা থাকলে ফিরকাবাজ থাকবে না। কাজেই হয় আমরা থাকব নয় ফিরকাবাজ থাকবে। সুতরাং ফিরকাবাজদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করা হল।

কয়েকজন দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল ‘কিন্তু এ যুদ্ধটা কিভাবে হবে, এর পদ্ধতি কি? মোজাহিদ বলল, এখন আমরা একটা সমাবেশ করব, মহাসমাবেশ। জনগণের মাঝে ফিরকাবাজদের মুখোশ উম্মোচন করব, তাদের মাঝে ঐক্য ও খেলাফতের উপকারীতা তুলে ধরে গনবিস্ফোরন ঘটাব। তারপর প্রকাশ্যে আন্দোলন শুরু করব, সরকারের কাছে দাবী জানাব শরীয়া আদালত গঠন করে ফিরকাবাজদের বিচার করতে, যদি সরকার রাজি না হয় তাহলে আমাদের এই দাবী যে মানবে তাদেরকে ভোট দিয়ে সরকারে পাঠাব। সেই সরকার শরীয়া আদালত গঠন করে ইসলামী বিধান মতে ফিরকাবাজদের বিচার করবে। অথবা আমরা নিজেরাই সরকার গঠন করব। এভাবে বা অন্য যে করেই হউক আমরা ইসলাম ও উম্মাহকে ফিরকাবাজীর অভিশাপ থেকে মুক্ত করবই ইংশাল্লাহ। মজলিসে সর্ব সম্মতিক্রমে মহা সমাবেশের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হল।

প্রচারের জন্য দুই সপ্তাহ পর শুক্রবার দিন সভার তারীখ ধার্য্য হল। তারপর জোর প্রচারনা শুরু হল। ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতে প্রচার করতে লাগল। বয়স্করা গ্রাম গঞ্জে ও বাজারে গিয়ে প্রচারে নামল। আলেমরা মসজিদে মসজিদে গিয়ে ঐক্য ও খিলাফতের গুরুত্ব তুলে ধরে সমাবেশের ঘোষণা দিল। কয়েকটা প্রতিনিধি দল বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে প্রচারনায় নামল কিন্তু তেমন ফল হল না। কারণ রিজার্ভ গাড়ি দিলে বহুদর থেকে লোক আসার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু গাড়ি দেয়ার মত সামর্থ তাদের ছিল না। জামাল মসজিদ থেকে পনের দিনের ছুটি নিয়ে তার উস্তাদ মোজাহিদের সাথে প্রচারনায় নামল। অতিরিক্ত পরিশ্রমে মোজাহিদ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হল।

তারা পত্রিকায় নিউজ করতে চাইল কিন্তু কোন পত্রিকাই ছাপতে রাজি হল না। শুধু মুখে মুখেই প্রচারের কাজ চলল, এতেই গণজোয়ার সৃষ্টি হয়ে গেল। আর তা দেখে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের মাথায় আগুন ধরে গেল। তারা ময়মনসিংহে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।পশ্চিমা অর্থ ভাণ্ডারের মুখ ময়মনসিংহে খুলে গেল। তারা প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গাদ্দার শিক্ষকদের কিনতে লাগল আর প্রত্যেক এলাকার জন প্রতিনিধিদের টাকার ওজনে কিনে নিল। এবার তারা মরণ কামড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যারা মুসান্নার সমাবেশে যাবে তাদেরকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হবে। ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলি ঘোষণা দিল, কেউ সমাবেশে গেলে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হবে। জনপ্রিতিনিধিরা সাধারণ মানুষের মাঝে এই বলে ভীতি ছড়িয়ে দিল যে, মুসান্নার সমাবেশে গণ্ডগোল হবে। পুলিশ আর্মি বেষ্টন করে থাকবে। সেখানে যারা যাবে কেউ জীবিত ফিরে আসতে পারবে না। এভাবে তারা সর্ব ক্ষেত্রে বাধার দেয়াল তুলে দিল। এতে মানুষ ভয় পেল, অধিকাংশ মানুষ দমে গেল।

কিন্তু যারা মুসলিম জাতীয় উত্থানের জন্য ছিল পাগলপারা তারা কোন বাধাই মানল না। ছাত্ররা শিক্ষকদের এবং জনসাধারণ এম পি ও চেয়ারম্যানদের বয়কট উপেক্ষা করে দলে দলে আসতে লাগল। দুপুর লাগাদ সার্কিট হাউজ ময়দান পূর্ণ হয়ে গেল। ফিরকাবাজ আলেমদের সমাবেশের সময় রিজার্ভ গাড়ি ও খাবার দেয়া হয়েছিল, তাছাড়া বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল গুলিতে ব্যাপক প্রচারনা চালানো হয়েছিল। এজন্য তাদের সমাবেশে প্রচুর লোক সমাগম ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও লোকজন এসেছিল। পক্ষান্তরে মুসান্নার সমাবেশের জন্য গাড়ি ও খাবার তো দূরের কথা ঠিকমত প্রচারনাই সম্ভব হয়নি। শুধু ময়মনসিংহের আশপাশ এলাকার সমর্থকদের একাংশ আসল, বাকি বিশাল সমর্থক গোস্টি ভয় ও আশংখায় আসতে সাহস পেল না। আবার দেশের অন্যান্য এলাকার মানুষ তো আসলই না। এতদসত্ত্বেও ফিরকাবাজদের সমাবেশের চেয়ে তাদের সমাবেশে লোক সমাগম বেশি ছিল।

কিন্তু এই সমাবেশে তোলপাড় হল কম। মুসান্নার পূর্ব ঘোষিত নির্দেশ অনুসারে কোন মিছিল নাই, শ্লোগান নাই, সবাই শান্তভাবে নিজ নিজ যানবাহনে চড়ে আসল আর নিরিবিলি গিয়ে সভাস্থলে মাটিতে বসে পড়ল। ফিরকাবাজদের সমাবেশে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল কিন্তু এই সমাবেশে কোন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নেই। কিছু ভলান্টিয়ার নিরিবিলি কাজ করে যাচ্ছিল। জুম্মার নামাযের পর যথারীতি অনুষ্ঠান শুরু হল। সর্বত্র সুশৃঙ্খল নীরব জনসমুদ্র, কোন কোলাহল বা বিশৃঙ্খলা নাই। হাসান মুসান্না সভাপতির আসনে বসে আছেন, অন্যান্য বক্তারা সবাই উপস্থিত হয়েছে। মাওঃ মোজাহিদ হাসপাতালে ভর্তি। তাই ডাঃ সাইফুল ইসলামকে সভা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হল।

ডাঃ সাইফুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেয়ার পর বললেন, ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস। আজ পৃথিবীর হিন্দু বৌদ্ধ ইহুদি খৃষ্টান নিজেদের মধ্যে হাজারটা মতবিরোধ থাকলেও একটি বিষয়ে একমত, আর তা হল মুসলিম নিধন। আজ দুনিয়ার সম্মিলিত কুফর শক্তি মুসলিম জাতিকে ভুজঙ্গের মত পেছিয়ে ধরেছে। আমাদেরকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। এহেন সংকটকালে উম্মাহর উপর ফরযে আইন হয়ে গেছে ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মিলিতভাবে শত্রু প্রতিরোধ করা- ইসলাম ও উম্মাহর অস্তিত্ব রক্ষা করা। কিন্তু ইসলামের রক্ষক ও উম্মাহর জামিনদার আলেম সমাজ এখনো ফিরকাবাজির বিষ উদগিরন করে যাচ্ছে। তারা ইসলাম ও উম্মাহর শত্রুদের প্রতিরোধ না করে প্রতিপক্ষ ফিরকাগুলিকে ধ্বংস করা ফরয মনে করছে। আর এজন্যই এ হতভাগ্য উম্মাহর দুঃসময়ের কাণ্ডারি হাসান মুসান্না জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তিনি মরক্বো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত সমগ্র উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করে মুসলিম জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তির ডাক দিয়েছেন।

আর এজন্যই ফিরকাবাজ আলেমরা তার পিছু নিয়েছে, আমাদেরকে ধ্বংসের তৎপরতায় নেমেছে। বিগত কয়েক শতাব্দি ধরে এটা ফিরকাবাজ আলেমদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যে, যখনি কেউ ইসলামের কাজ করতে চায় তখনি তারা তার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাকে ধ্বংস করতে চায়। যেমন ইংরেজ আমলে যখন সমগ্র মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইংরেজ প্রতিরোধে তৎপর হল তখন বেরেলভীরা দেওবন্দিদের বিরুদ্ধে মাঠে নামল। তাদেরকে কাফের ঘোষণা দিয়ে ইংরেজের সাথে হাত মিলিয়ে তাদেরকে ধ্বংসের তৎপরতায় লিপ্ত হল। একই ভাবে মাওঃ মওদূদি যখন ইসলামের কাজ করছেন তখন তার কয়েকটা ভুলের অজুহাত দাড় করে দেওবন্দি ও অন্যরা তাকে ধ্বংসের তৎপরতায় লিপ্ত হল। ডাঃ যাকির নায়েক যখন ইসলামের জন্য ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন তখন ফিরকাব্জরা তার বিরুদ্ধে মাঠে নামল, তাকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে ছাড়ল।

ঠিক একইভাবে হাসান মুসান্না যখন উম্মাহর মুক্তির লক্ষ্যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, খিলাফতের ডাক দিয়েছেন তখন ইসলাম ও উম্মাহর শত্রু এই ফিরকাবাজরা তার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। বিদেশীদের সাথে হাত মিলিয়ে তাকে ধ্বংস করতে চাইছে। এই ফিরকাবাজদের নিয়ম হলো তারা ইসলাম ও উম্মাহর শত্রুদের দাসত্ব করে, পুজো করে, প্রভু মানে কিন্তু ইসলামের খাদেমদের প্রতিরোধ করে। কাজেই এরাই হল ইসলামের প্রকৃত দুষমন। এরা নিজেদের দুনিয়াদারী ঠিকমতই বুঝে, যেখানে দু’পয়সা কামাই হবে সেখানে গিয়ে মোসাহেবি করে, বিস্টা থেকে কামড় দিয়ে পয়সা তুলে আনে। অথচ এই বাংলা কথাটা বুঝে না যে, ঐক্য ব্যতীত এই হতভাগ্য উম্মাহর মুক্তির দ্বিতীয় কোন পথ নেই। এজন্যই আল্লাহ তালা বলেছেন, এরা চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বরং এর চেয়েও নিকৃষ্ট। আর এরাই হল গাফেল অর্থাৎ জাহান্নামী।

এরা দাজ্জালের সাথে হাত মিলিয়ে হাসান মুসান্নাকে ধ্বংসের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তার অপরাধ? তার অপরাধ হল, তিনি উম্মাহর ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, খিলাফত বা মুসলিম জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছেন, ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তির ডাক দিয়েছেন, মুসলিম জাতিকে বিশ্ব নেতৃত্বের আসন গ্রহণ করার ডাক দিয়েছেন- এটাই তার অপরাধ। কিন্তু ফিরকাবাজরা তা হতে দিবে না, তারা দাজ্জালের সাথে হাত মিলিয়ে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত রাখবে। কাজেই আপনারাই বলুন এরা কি ইসলাম ও উম্মাহর শত্রু না মিত্র? মেঘ গর্জনের মত সভাস্থলে প্রতিধ্বনি উঠল, এরা উম্মাহর শত্রু।

ডাঃ সাইফুল বলল, এখন এদের ব্যাপারে আপনাদের সিদ্ধান্ত কি, ধ্বংস করবেন নাকি আনুগত্য করবেন? আবার গর্জন উঠল ‘ওদেরকে ধ্বংস করতে হবে, এরা ধ্বংস না হলে উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাবে। ডাক্তার বলল, তাহলে আল্লাহ্‌র নামে শপথ গ্রহণ করুন, এদেরকে জলে স্থলে অন্তরীক্ষে নিরিক্ষে বয়কট করবেন। তাদেরকে মসজিদ মাদরাসা থেকে বের করে দিতে হবে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে, এক ঘরে করে দিতে হবে। এরা কাফের, মুসলিম মেয়েদের সাথে এদের ঘর সংসার জায়েয নাই বিধায় এদের স্ত্রী সন্তানকে আলাদা করে দিতে হবে। এদের জন্য পৃথিবীর নিঃশ্বাস হারাম করে তুলতে হবে যতক্ষণ না তারা ঐক্যে ফিরে আসে। আর যদি একান্তই তারা ঐক্য ও খিলাফতের ডাকে সাড়া না দেয় তাহলে তাদেরকে ধ্বংস করা ফরয এবং এটাই উম্মাহর উপর প্রধান কর্তব্য। তারপর সবাইকে শপথ করিয়ে ডাক্তার তার স্বাগত বক্তব্য শেষ করল।

তারপর বক্তারা বিভিন্ন বিষয়ের উপর বক্তব্য দিতে লাগল। কেউ বর্তমান মুসলিম দুনিয়ার অবস্থা তুলে ধরল, ফিলিস্তিন কাশ্মির ও আরাকানে মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরে নিজে কাঁদল ও অন্যদের কাঁদাল। কেউ প্রমাণ করল, ঐক্য ও খিলাফত ব্যতীত এ জাতির মুক্তির অন্য কোন উপায় নাই। কেউ প্রমাণ করল, আল্লাহ রাসূল (সাঃ) ইসলাম ও উম্মাহর একমাত্র দুষমন আলেমরা। কেউ আকলি নকলি দলীল দিয়ে প্রমাণ করল যে, ফিরকাবাজরা কাফের, তাদেরকে ধ্বংস করা ওয়াজিব। এদের ধ্বংস না করলে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাবে। কেউ প্রমাণ করল যে, পোরুহিত রাব্বাইরা যেভাবে ইহুদি খৃষ্ট ধর্মগুলি বিকৃত করে ধ্বংস করেছিল, একইভাবে ফিরকাবাজরা ইসলামকে বিকৃত করে ফেলেছে। রাসূল (সাঃ) এর প্রকৃত ইসলামটা এখন আর কোথাও নাই। এরা পোরুহিত রাব্বাইদের চেয়েও হাজার গুনে বেশি অপকর্ম করে ফেলেছে। কাজেই এখন ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তি চাইলে এদেরকে ধ্বংস করতে হবে। এভাবে একেকজন বক্তা একেকটা বিষয়ের উপর যুক্তি প্রমানসহ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতে লাগল। আর জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে লাগল।

ফিরকাবাজ আলেমদের সম্মেলনে আলেম ছাড়া কোন সাধারণ শিক্ষিত বক্তা ছিল না। কিন্তু এ সম্মেলন ছিল সার্বজনিন, সর্বব্যাপি, সর্বপ্লাবি। এখানে আলেম, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, ব্যবসায়ি সর্বস্তরের বক্তা ছিল। তারা নিজ নিজ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে লাগল আর জনগণ তন্ময় হয়ে শুনতে লাগল। বিশাল সমাবেশের সর্বত্র সুশৃঙ্খল সুনিবন্ধিত পিনপতন নীরবতা, কোথাও টু শব্দটা পর্যন্ত নাই। সবাই প্রশান্ত চিত্তে মনোযোগ সহকারে বক্তব্য শুনছে। তখনো কিছু কিছু লোক আসছে। আর এদের আগমনের সাথে সাথে সম্মেলনের শেষ প্রান্তে কিছুটা গোলযোগ শুরু হয়েছে। কারণ এরা বলছে, অসংখ্য গাড়ি যেতে তারা দেখেছে।পরবর্তিরা এসে বলল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামাঞ্চলে তারা মানুষের জটলা দেখে এসেছে। আরো পরে আগমনকারীরা বলল, তারা বিভিন্ন জায়গায় লাঠির স্তুপ দেখে এসেছে। সভাস্থলের শেষ প্রান্তে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। তারা কানাঘোসা শুরু করল, গাড়ি, মানুষের জটলা, লাঠি এসবের অর্থ কি? তারা কিছুটা আশংখা বোধ করতে লাগল কিন্তু কি ঘটতে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারল না। তবে বুঝতে বেশি সময় লাগল না।

বিষয়: রাজনীতি

৮৬৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384110
০১ অক্টোবর ২০১৭ রাত ১০:৫৫
ইসলামিক রেডিও লিখেছেন : বিশাল পোস্ট

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File