সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- 28
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৯:৫৬ রাত
অধিকার সমুহঃ এখানে আমরা শুধু কৃষক, শ্রমিক ও নারী অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করব।
১। শ্রমিক অধিকারঃ পুর্বেই বলা হয়েছে ইসলামি অর্থব্যবস্থার দুটি দর্শন, ইসলামি সমাজতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদ। সমাজতান্ত্রিক দর্শন অনুযায়ী একজন শ্রমিক তার উৎপাদিত পন্য থেকে যা মুনাফা আসে- সবটাই সে পাবে। যেমন তার উৎপাদিত পণ্যের মুনাফা আসল বিশ হাজার টাকা, তখন সে পুর্ন বিশ হাজার টাকাই পাবে। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদের দর্শন অনুসারে সে একটা যোক্তিক বেতন পাবে। যেমন বিশ হাজার টাকা থেকে পনের হাজার টাকা সে পাবে, বাকী পাঁচ হাজার মালিকের থাকবে।
আকলি ও নকলি দলিলঃ ইসলাম শ্রমের পার্থক্য করে কিন্তু পারিশ্রমিকের পার্থক্য করে না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, ক্ষেতে খামারে, মাঠে-ঘাটে, বনে- জঙ্গলে, মহাকাশে- জলাশয়ে যেখানেই কাজ করুক না কেন- তাদের সকলের মৌলিক চাহিদা সমান। কাজেই সমানভাবে তাদের মৌলিক চাহিদা পুরন করা হবে। কারো মৌলিক চাহিদা অসম্পুর্ন রাখা হবে না। তবে অতিরিক্ত যোগ্যদের অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা থাকবে। অনন্তর রাসুল (সাঃ) শ্রমের অর্থমুল্য নির্ধারন না করে শ্রমিকের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত বিধান দিয়ে গেছেন। রাসুল সাঃ যদি এমন নির্ধারন করতেন যে, একজন শ্রমিক দৈনিক দশ দিরহাম পাবে, তাহলে পৃথিবীতে স্থান কাল, পাত্র ভেদে শ্রমের মুল্য ও দিরহামের মুল্যে তারতম্য হওয়ার কারণে কঠিন সমস্যার সৃষ্টি হত। এজন্যই মানব জাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক শ্রমিকের মৌলিক অধিকার নির্ধারন করে গেছেন। যেমন তিনি বলেন, মালিক যা খাবে তার শ্রমিকও তাই খাবে, মালিক যা পরবে সেও তাই পরবে, মালিক যেখানে থাকবে সেও সেখানে থাকবে। অর্থাৎ মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রে মালিক- শ্রমিক কোন পার্থক্য থাকবে না, তবে মালিকের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা থাকতে পারে। এভাবে রাসুল (সাঃ) শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
২। কৃষক অধিকারঃ ভু- স্বামিদের নির্দিস্ট পরিমান যেমন ৫০ একরের উর্ধ্বে জমি থাকলে তা ভুমিহীন ও প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে। কেউ নাগাতার ৩/৪ বছর জমি আবাদ না করলে, পতিত ফেলে রাখলে তা বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে, অর্থাৎ ভুমিহীন চাষিকে দিয়ে দেয়া হবে। অর্থাৎ জমির ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও হযরত উমরের ‘লাঙ্গল যার জমি তার’ নীতি অনুসরণ করা হবে।
খ। কৃষি খাতে সম্পুর্ন জ্বালানি ফ্রি দেয়া হবে। অর্থাৎ বুরো মওসুমে পানি উত্তলনের জন্য বিদ্যুৎ বিল ফ্রি থাকবে। সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে, তা সম্ভব না হলে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। অথবা নদীতে বাঁধ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করা হবে।
গ। কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। চারা রোপন, ধান কাটা ও ধান মারাইয়ের মেশিন সরবরাহ করা হবে। প্রত্যক ওয়ার্ডে কৃষকদের একাধিক সমিতি গঠন করে সেই সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের মেশিন প্রদান করা হবে।
ঘ। কৃষক জাতির মেরুদণ্ড, কৃষক বাচলে দেশ বাচবে। বর্তমানে কৃষকের মরনাপন্ন অবস্থা। এক মন ধান উৎপাদন করতে তাদের ৫/৭ শত টাকা খরচ হয় আর সেই ধান বিক্রি করতে হয় পাঁচ- ছয় শত টাকা। ফলে দেশের কৃষকরা মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়। তারা নিজের রক্ত ও অর্থ ব্যয় করে ফসল উৎপাদন করে বর্জোয়া লোটারাদের ভোগের অন্ন যোগায়। তারপর ছেলে মেয়ের গার্মান্টেস ও শিল্প কারখানায় শ্রম বিক্রির টাকায় বা গরু ছাগল, হাস মুরগি বিক্রির টাকায় কৃষির লোকসানে ভর্তুকি দিয়ে নিজেরা কোন রকম হ্যান্ড টুঁ মাউথ জীবন যাপন করছে। এজন্যই কৃষি নির্ভর পরিবারগুলি ভেঙ্গে যাচ্ছে, তারা শ্রমিকের চেয়েও দারিদ্রতর জীবন যাপন করছে। কাজেই এ অবস্থার অপনোদন কল্পে আমরা কৃষি খাতে এমন ব্যবস্থা গ্রহন করব যাতে দেশের সকল নাগরিক সমান ভাবে উপকৃত হতে পারে।
ঙ। কৃষি খাতে জ্বালানি ভর্তুকি দিলে প্রতি মন ধানের উৎপাদন ব্যয় এক দেড় শত টাকা কমে আসবে। আবার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে অর্থাৎ চারা রোপন, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মেশিন ব্যবহার করলে কৃষি ব্যয় অর্ধেকের চেয়েও বেশি কমে আসবে। তখন একমন ধানের উৎপাদন ব্যয় হবে দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন শত টাকার মধ্যে। আর তখন এক মণ ধানের পাঁচ শত টাকা বাজার মুল্য নির্ধারন করলে কৃষক যথেষ্ট উপকৃত হবে। সে তার পেশায় সন্তুষ্ট থেকে স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারবে। আবার ধান চালের মুল্য কম থাকার কারণে দেশের সর্বস্তরের মানুষ সমানভাবে উপকৃত হতে পারবে। কাজেই কৃষি খাতের ভর্তুকী সকলের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে।
অনন্তর কৃষি খাতে যান্ত্রিক ব্যবহার প্রয়োগ করলে এ খাতের বিশাল গনশ্রম বেঁচে যাবে। দেশের দুই তৃতীয়াংশ শ্রমিক কৃষিখাতে নিয়জিত আছে- তখন আর তাদের শ্রমের প্রয়োজন পরবে না, তারা শিল্প কারখানায় কাজ করবে। সে সময় কেন্দ্রিয় খেলাফতের অধিনে দেশে দেশে বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। আর তখন কৃষি খাতে নিয়োজিত শ্রমিকরা সে সব শিল্প কারখানায় শ্রম দেয়ার সুযোগ পাবে। ফলে কৃষি ও শিল্প কারখানায় উত্তরোত্তর উন্নতি হতে থাকবে। আর এভাবেই বাঙালি জাতি ও মুসলিম জাতি দেখতে দেখতে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যাবে এবং বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিস্টিত হবে ইনশাল্লাহ।
নারী অধিকারঃ নারির তিনটি আবস্থা ঝি, জায়া ও জননী। ইসলাম প্রত্যেক অবস্থার জন্য আলাদা আলাদা অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। যেমন -
(ক) কন্যা সন্তানের অধিকারঃ বর্তমানে আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের ন্যায় কন্যা সন্তান অর্থাৎ কন্যা ভ্রুন হত্যা করা হয়। কাজেই কন্যা সন্তানের গর্ভবতিকে গর্ভাবস্থায় ভাতা দেয়া হবে। প্রসবের পর মা- শিশু উভয়কেই দুগ্ধ পোষ্যকাল- আড়াই বছর পর্যন্ত ভাতা দেয়া হবে। দলীল-
وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِالْأُنثَىٰ ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ ﴿النحل: ٥٨﴾
১। যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তাদের মুখ কাল হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। (১৬: ৫৮)
وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِمَا ضَرَبَ لِلرَّحْمَٰنِ مَثَلًا ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ ﴿الزخرف: ١٧﴾
তারা রহমান আল্লাহর জন্যে যে কন্যা-সন্তান বর্ণনা করে, যখন তাদের কাউকে তার সংবাদ দেয়া হয়, তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং ভীষণ মনস্তাপ ভোগ করে। (৪৩: ১৭)
بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ [٨١:٩] - وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ - - যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল?
وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا ﴿الإسراء: ٣١﴾
দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমি তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও জীবনোপকরণ দান করব। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্নক অপরাধ। (১৭: ৩১)
وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُم مِّنْ إِمْلَاقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ
তোমরা স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের ভয়ে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দিব। (৬: ১৫১)
ব্যাখ্যাঃ প্রথম দুই আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে কন্যা জন্মের সংবাদ শুনলে পিতার চেহারা কালো হয়ে যায়, ক্রোধান্বিত হয়। পরের আয়াতে বুঝা যাচ্ছে তারপর সে কন্যা শিশুকে হত্যা করে। তৃতীয় দুই আয়াতে আল্লাহ তা’লা সন্তান হত্যার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং সন্তান ও তার পিতা মাতাকে রিজিক দানের অঙ্গিকার করেছেন। কাজেই এ অঙ্গিকার খলিফা বা রাষ্ট্র প্রধান আদায় করবেন। দুগ্ধপোষ্য কাল পর্যন্ত ভাতা দিবেন। কিন্তু পুত্র শিশু এ অধিকারের আওতায় আসবে না। কারণ পৃথিবীতে কেউ কোন দিন পুত্র সন্তান হত্যা করে না, এ নিষ্ঠুর কর্মটি কন্যা শিশুর উপর প্রয়োগ করা হয়- বিধায় খলিফা তার প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহন করবেন।
খ) কোন দরিদ্র পিতা মাতা কন্যা শিশু প্রতিপালনে অক্ষম হলে বা ভাতার জন্য আবেদন করলে – কন্যা সন্তানকে ষোল বছর পর্যন্ত ভাতা দেয়া হবে।
দলীলঃ অভিভাবক দুই প্রকার, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ হলেন মূল অভিভাবক, আর জন্মের মাধ্যম হিসাবে পিতা মাতা। কাজেই পিতা মাতা অক্ষম হলে মূল অভিভাবক আল্লাহ্ তার প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহন করবেন। অর্থাৎ খলিফা তাকে ভাতা দিয়ে প্রতিপালন করবেন।
বৈবাহিক অবস্থা বা স্ত্রীর অধিকারঃ নারীর আর্থিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে পৃথক ব্যাংক স্থাপন করে অথবা প্রচলিত ব্যাংকে আলাদা নারী শাখা থাকবে। তখন স্বামী তার স্ত্রীর একাউন্টে মোহরের টাকা জমা দিয়ে দেবে। তাছাড়া স্ত্রীর হাস মুরগি বেচার টাকা, চাকরি নকরি, ব্যবসা- বানিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন পন্থায় স্ত্রী যা আয় করবেন তা সেই একাউন্টে জমা করবে। তারপর দরিদ্র পিতা মাতা, ভাই- বোন বা স্বামির সংসার বা অন্য যে কোন খাতে নিজের ইচ্ছানুযায়ী ব্যয় করতে পারবে। পিতার সম্পত্তিতে কন্যা তার ভাইয়ের অর্ধেক হারে অংশিদার হবে। সে যা পাবে হুবহু আদায় করতে হবে-কোনরূপ টালবাহানা চলবে না। স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীকে বিছানায় সঙ্গদান এবং আড়াই বছর পর্যন্ত সন্তান লালন-পালন। এর বাইরে স্ত্রীর উপর কোন কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া যাবে না বা বাধ্য করা যাবে না।
দলীল প্রমাণঃ স্ত্রী স্বাধিন স্বত্তা, সে কারো অনুগামী নয়। নিজেদের দৈহিক প্রয়োজন এবং আল্লাহর সৃষ্টি ধারাকে অক্ষুন্ন রাখার লক্ষে তারা বৈবাহিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। কাজেই স্ত্রীর টাকা পয়সার হিসাব তার কাছেই থাকবে। সেখানে স্বামীর কোন অধিকার স্বীকৃত নয়।
জননীর অধিকারঃ ইসলাম পিতা মাতার যে হক্ব বা অধিকার নির্ধারন করেছে তা রীতিমত লোমহর্শক এবং ভিতিজনক।
وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا [١٧:٢٣] وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا [١٧:٢٤]
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।
তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে বাহু অবনত করে রাখ এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।
ব্যাখ্যাঃ অত্র আয়াতে আল্লাহ তা’লা নিজের পরে পিতা মাতাকে সম্মানের আসন দিয়েছেন, তাদের খিদমত ইবাদতের মধ্যে গণ্য করেছেন। যে কোন অবস্থায় তাদেরকে ‘আহ’ শব্দটা পর্যন্ত উচ্চারন হারাম করেছেন।
: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: «جَاءَ رَجُلٌ إلَى رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي؟ قَالَ أُمُّك. قَالَ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: أُمُّك: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: أُمُّك، ثُمَّ أَبُوك ثُمَّ أَدْنَاك فَأَدْنَاك» ،
হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ), মানুষের মধ্যে আমার উত্তম ব্যবহারের (খিদমতের) সর্বাধিক হকদার কে? রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার মা। - তারপর কে? - তোমার মা। - তারপর কে? – তোমার মা। তারপর কে? – তোমার বাবা। তারপর ক্রমান্বয়ে তোমার আপনজন।
وَفِي رِوَايَةٍ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - يَقُولُ: «رَغْمَ أَنْفِهِ رَغْمَ أَنْفِهِ قِيلَ: مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَوْ أَحَدَهُمَا وَلَمْ يَدْخُلْ الْجَنَّةَ» .
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর অন্য বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সে ধ্বংস হউক, সে ধ্বংস হউক। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, কার কথা বলছেন হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি পিতা মাতার দু’জনকেই বা একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ তাদের খিদমতের মাধ্যমে সে জান্নাতে প্রবেশ করল না।
ব্যাখ্যাঃ সন্তানের খিদমত প্রাপ্তির অধিকারে রাসূল (সাঃ) মাতাকে পিতার চেয়ে দুই বা তিন গুন অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এর কারণ যেমন ইরশাদ হচ্ছে –
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ﴿الأحقاف: ١٥﴾
আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থে পৌছল এবং চল্লিশ বছরে উপনিত হল, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করতে পারি- যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করতে পারি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম। (৪৬: ১৫)
অর্থাৎ সন্তানের ক্ষেত্রে মায়ের তিনটি অবস্থা। গর্ভধারন, আড়াই বছর পর্যন্ত দুগ্ধদান, পরবর্তি লালন পালন। এখানে প্রথম দুই অবস্থায় বাবার কোন অংশিদারিত্ব নাই একক মায়ের কষ্ট ও যন্ত্রণা। পরবর্তি লালন পালনে পিতা মাতা উভয়েই সমান। এজন্যই খিদমত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দুইবার মাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তৃতীয় বারে দু’জনেই সমান।
حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا جَرِيرُ بْنُ حَازِمٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " كَانَ رَجُلٌ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، يُقَالُ لَهُ جُرَيْجٌ، يُصَلِّي، فَجَاءَتْهُ أُمُّهُ فَدَعَتْهُ، فَأَبَى أَنْ يُجِيبَهَا، فَقَالَ أُجِيبُهَا أَوْ أُصَلِّي ثُمَّ أَتَتْهُ، فَقَالَتِ اللَّهُمَّ لاَ تُمِتْهُ حَتَّى تُرِيَهُ الْمُومِسَاتِ. وَكَانَ جُرَيْجٌ فِي صَوْمَعَتِهِ، فَقَالَتِ امْرَأَةٌ لأَفْتِنَنَّ جُرَيْجًا. فَتَعَرَّضَتْ لَهُ فَكَلَّمَتْهُ فَأَبَى، فَأَتَتْ رَاعِيًا، فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا فَوَلَدَتْ غُلاَمًا، فَقَالَتْ هُوَ مِنْ جُرَيْجٍ. فَأَتَوْهُ، وَكَسَرُوا صَوْمَعَتَهُ فَأَنْزَلُوهُ وَسَبُّوهُ، فَتَوَضَّأَ وَصَلَّى ثُمَّ أَتَى الْغُلاَمَ، فَقَالَ مَنْ أَبُوكَ يَا غُلاَمُ قَالَ الرَّاعِي. قَالُوا نَبْنِي صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَبٍ. قَالَ لاَ إِلاَّ مِنْ طِينٍ ".
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৩ :: অধ্যায় ৪৩ :: হাদিস ৬৬২
মুসলিম ইবন ইবরাহীম (র.) ......... আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরায়জ নামক একজন লোক ছিলেন। একদিন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাঁর মা তাকে ডাকলেন। কিন্তু তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন না। তিনি বললেন, সালাত আদায় করব, না কি তার জবাব দেব। তারপর মা তাঁর কাছে এসে আবার ডাকলেন কিন্তু সাড়া না পেয়ে বললেন, হে আল্লাহ ! তাকে মৃত্যু দিও না যে পর্যন্ত তুমি তাকে কোন বেশ্যার মুখ না দেখাও। একদিন জুরায়জ তার ইবাদত খানায় (গীর্জায়) ছিলেন। এমন সময় এক মহিলা বললেন, আমি জুরায়জকে ফাসিয়ে ছাড়ব। তখন সে তার নিকট গেল এবং তার সাথে কথাবার্তা বলল। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। তারপর সে মহিলা এক রাখালের কাছে এসে স্বেচ্ছায় নিজেকে তার হাতে সঁপে দিল। তার কিছুদিন পর সে একটি ছেলে প্রসব কর। তখন সে বলে বেড়াতে লাগল যে, এ ছেলে জুরায়জের! একথা শুনে লোকেরা জুরায়জের নিকট এলো এবং তার ইবাদতখানা ভেঙ্গে তাকে বের করে দিল এবং তাকে গালিগালাজ করল। এরপর তিনি (জুরায়জ) উযূ করলেন এবং সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি ছেলেটির কাছে এসে বললেন, হে ছেলে, তোমার পিতা কে ? সে জবাব দিল, রাখাল। তখন লোকেরা বলল, আমরা তোমার ইবাদত খানাটি সোনা দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরায়জ বললেন, না মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও ( যেমনটা পূর্বে ছিল)।
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীস অশনি সংকেত। এখানে বুঝা যাচ্ছে, সন্তানের উপর মায়ের অধিকার স্রষ্টার সমপর্যায়ের। কাজেই আল্লাহ ও মায়ের অধিকার- উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে। নারী অধিকারের ক্ষেত্রে এমন বিধান পৃথিবীর কোন ধর্ম বা ইজম পেশ করতে পারেনি। হায় আফসোস ! এরপরেও মুসলিম নারীরা রাস্তায় নেমে দাজ্জালের অনুসরনে ‘সমানাধিকার চাই সমানাধিকার চাই’ বলে চেঁচাচ্ছে।
আকলি দলীলঃ যাদের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীতে এসেছি, তারা নিজেদের চাহিদা পুরন না করে আমাদের চাহিদা পুরন করেন, আমাদের সুখের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। তদুপরি নিজেদের প্রতিটি ফোটা- বিন্দু রক্ত পানি করে মানব সভ্যতাকে উন্নিত করেন। পৃথিবীকে আমাদের বাসযোগ্য রূপে গড়ে তোলেন। পৃথিবীর সেই সব নিঃস্বার্থ বিদায়ি অতিথিদের সাথে আমাদের অঙ্গিকার- আমরাও তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করব, তাদের খেদমতে তাদের পায়ের কাছে সর্বদা হাযির থাকব। কাজেই খিলাফতের দায়িত্ব হচ্ছে- তাদের জন্য উপযুক্ত ভাতা তো নির্ধারন করবেই, সেই সাথে তাদের চিকিৎসা ও আরাম আয়েশের সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে হবে। তাদের চিকিৎসা সেবার জন্য প্রত্যেক হসপিটালে আলাদা বিভাগ থাকবে। ‘বয়োবৃদ্ধ চিকিৎসা কেন্দ্র’ নামে পৃথক হসপিটাল স্থাপন করতে হবে এবং তাদের ভ্রমনের জন্য ট্রেন, বাস কোচে আরাম দায়ক পৃথক সিট বরাদ্দ রাখা হবে। এভাবে সকল ক্ষেত্রে তাদের আরাম আয়েশের সকল উপকরণ সম্পন্ন রাখতে হবে। এক কথায় আল্লাহ্ তা’লা যেমন সৃষ্টি কুলের মধ্যে পিতা মাতার সর্বোচ্চ অধিকার নির্ধারন করেছেন- তদ্রুপ খেলাফতও তাদের জন্য সর্বোচ্চ ব্যয়, সর্বোচ্চ ত্যাগ ও সর্বোচ্চ সেবাদানে বাধ্য থাকবে।
নারী শিক্ষাঃ ছেলে হউক মেয়ে হউক মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহন বাধ্যতামূলক। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে।
খ) নারীর শিক্ষা ও কর্ম সুগম এবং নির্ভিঘ্ন করার জন্য কর্ম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাগ করে দেয়া হবে। প্রত্যেক ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও জেলার প্রতিষ্ঠানগুলি দুভাগ করে অর্ধেক ছেলেদের জন্য ও অর্ধেক মেয়েদের জন্য নির্ধারন করা হবে। কোথাও ঘাটতি থাকলে নতুন প্রতিষ্ঠান নির্মান করা হবে। প্রাইমারীর পর থেকে সহশিক্ষা উঠিয়ে দেয়া হবে। ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে পুরুষ শিক্ষক আর মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষক থাকবে। তবে পঞ্চার্শোধ নারী পুরুষ ইন্টারসেন্স হতে পারবে। কারন পঞ্চাশোর্ধ প্রোঢ়-প্রোঢ়া ছাত্র ছাত্রীদের সন্তানের মত দেখবে আর ছাত্র ছাত্রীরাও তাদেরকে পিতা মাতার দৃষ্টিতে দেখবে। কাজেই তখন অপ্রীতিকর কোন কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না। অনুরূপভাবে নারীর কর্ম ক্ষেত্রও আলাদা থাকবে। তবে পঞ্চাশোর্ধ নারী পুরুষ ইন্টারসেন্স হতে পারবে। কারন তখন আর প্রেম প্রেম খেলার মত ভাব ও মন- মানসিকতা থাকে না।
দলিলঃ ইরশাদ হচ্ছে -
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ [٩٦:١] - পড় তোমার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ ﴿الزمر: ٩﴾ - বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। (৩৯: ৯)
ইত্যাদি আয়াতে নারী- পুরুষ অনির্ধারিত কিন্তু রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। যেমন তিনি বলেন - "طَلْبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ وَ مُسْلمة " অর্থাৎ জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর - নারীর উপর ফরয। তাছাড়া নারী যদি শিক্ষা ও কর্ম নাই করবে তাহলে পর্দার বিধান কেন? ঘরে বসে থাকলে তো আর পর্দার প্রয়োজন নাই।
গ। সহশিক্ষা ও সহকর্ম আজ নারির ধ্বংস ডেকে আনছে। ইভটিজিং, হত্যা, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ ও বখাটের অত্যাচারে নারী সমাজ অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে। এর মূল কারন সহশিক্ষা ও সহকর্ম। কাজেই এ দুটির অপনোদন করলেই নারী নির্যাতন ধীরে ধীরে শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। সুতরাং খেলাফতের দায়িত্ব হবে নারির শিক্ষা ও কর্মস্থল আলাদা করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
কিন্তু সহশিক্ষা ও সহকর্মের জন্য যারা কান্না কাটি করবে, সমালোচনা করবে তাদের জন্য আমরা সে ব্যবস্থা রাখব। প্রত্যাক জেলা সদরে একটি বা দুটি সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠান থাকবে। সে গুলি বেশ্যা বিদ্যালয় নামে পরিচিত হবে। কারন এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীরা প্রেম, যিনা, ইভটিজিং, ধর্ষণ ইত্যাদি খোলামেলা করতে পারবে, কোন বাধা নিষেধ থাকবে না, কোন বিচার হবে না। সেগুলি হবে মুক্তাঞ্চল। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের ছেলে মেয়েরা পরস্পরকে বিয়ে করতে হবে। এখানকার কোন মেয়ে বাইরের ছেলেকে বা কোন ছেলে বাইরের মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না। কারণ এটা ইসলামে হারাম। যেমন-
الزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ ﴿النور: ٣﴾
ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করবে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করবে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে। (২৪: ৩)
কাজেই জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে যেসব পিতা মাতা সহশিক্ষা ও সহকর্ম কামনা করবে তাদেরকে এভাবেই উচিত শিক্ষা দেয়া হবে। কামা তাদীনু তুদানু- যেমন কর্ম তেমন ফল।
নারী নির্যাতনঃ শিক্ষা ও কর্মস্থল আলাদা করে দিলে নারী নির্যাতন খুব একটা থাকবে না। এরপরেও ধর্ষণ, হত্যা, এসিড নিক্ষেপ, বেশ্যালয়ে বিক্রি, পাচার ইত্যাদি অপরাধের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। কারণ যিনা ও ধর্ষনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু ইসলামে মৃত্যুদন্ডের বিকল্প হিসাবে দিয়ত বা ক্ষতিপূরণের বিধান দেয়া হয়েছে। কাজেই নির্যাতিতা মেয়েটিকে একশত উটের মুল্য দিতে হবে। এখন মুজরিম যদি এত টাকার মালিক না হয়- তাহলে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নির্যাতিতার অনুকুলে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। তবে তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি যদি যৌক্তিক পরিমান যেমন বিশ ত্রিশ লক্ষের চেয়েও কম হয়, তবে ব্যাংক ঋণ বা অন্য কোন উপায়ে নির্যাতিতাকে যৌক্তিক পরিমান অর্থ প্রদান করতে হবে। যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। আর এ প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। উল্লেখ্য যে, ক্ষতিপুরনের পর মুজরিমের সাথেই মেয়েটির বিয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। মেয়েটির জন্য উত্তম এ জন্য যে, অন্য কোন ছেলে তাকে গ্রহন করতে চাইবে না, ঘৃনা করবে। আর ছেলেটির জন্য উত্তম এজন্য যে, তার সম্পদের মালিক হয়ে গেছে মেয়েটি- এখন তাকে অবলম্বন করে সে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। তদপরি মেয়েটি অন্যের জন্য অপবিত্র কিন্তু ধর্ষকের জন্য পবিত্র।
কিন্তু নারীর শিক্ষা ও কর্মস্থল আলাদা না করে, পর্দার বিধান জারি না করে, আগেই ধর্ষণের বিধান প্রয়োগ করা যাবে না। তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে এবং ছেলেরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কারন কোন নারী রাজি না থাকলে তাকে ধর্ষণ করা এমনই অসম্ভব যেমন অন্ধকারে বা ধাক্কাধাক্কির মাঝে সুচের ছেদায় সুতা লাগানো অসম্ভব। দ্বিতিয়তঃ ধর্ষণের জন্য লোকচক্ষুর অন্তরালে নির্জন, নিরিবিলি কোন স্থানের প্রয়োজন। আর কোন যুবতী নারী মুহরিম আত্মীয় ছাড়া এমন স্থানে যাওয়া ইসলাম কঠোর ভাবে নিষেধ করেছে। বর্তমানে দেখা যায়, প্রেমিক প্রেমিকা আনন্দ ফুর্তি করে, সুখ ভোগ করে তারপর প্রেমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে যে, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সম্ভবতঃ এই জন্যই ইসলাম ধর্ষনের সংজ্ঞা বুঝতে চায় না। উল্লেখ্য যে, ধর্ষন বা এজাতীয় অপরাধের ক্ষেত্রে নারীর যদি কোন উসকানি থাকে অর্থাৎ পোশাক-পরিচ্ছেদ, চাল-চলন, ভাব-ভঙ্গি যদি আপত্তিজনক থাকে তাহলে মুজরিমের লঘু শাস্তি হবে। অর্থদন্ডের ক্ষেত্রে অর্ধেক বা তৃতীয়াংশ ধর্তব্য হবে।
ইভটিজিং- ইভটিজিংয়ের জন্য অর্ধেক মহর জরিমানা হবে। আর মহরের সর্বনিম্ন পরিমান ১০ দিরহাম বা সমমুল্য। কাজেই ইভটিজিংয়ের সর্বনিম্ন জরিমানার পরিমান হতে পারে পঞ্চাশ থেকে পঁচাত্তর হাজার টাকা।
দলিলঃ যে নারীর বিয়ে হল কিন্তু স্বামীর সাথে সাক্ষাত হলো না, এ অবস্থায় তালাক হয়ে গেলে স্ত্রী অর্ধেক মহরের হকদার হয়। যেমন ...............
এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিয়ে হল কিন্তু স্ত্রীর আচরণ পেল না। এ অবস্থায় স্ত্রী অর্ধেক মহরের হকদার। পক্ষান্তরে ভিকটিম মেয়েটির বিয়ে হল না কিন্তু সে স্ত্রীর আচরণ পেল অর্থাৎ ইভটিজার তার থেকে এমন বিষয় কামনা করল যা একমাত্র স্ত্রীর কাছে কামনা করা যায়। কাজেই মেয়েটি স্ত্রীর আচরণ পেল। সুতরাং এ অবস্থাটি প্রথম অবস্থার বিপরীত হয়েছে। আর মাফহুমে মুখালেফ (বিপরিতার্থ) শরিয়তের দলীল। কাজেই ভিকটিমের উপর প্রথম মেয়েটির বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ সেও অর্ধেক মহরের হকদার হবে। কাজেই ইভটিজিংয়ের জন্য মহরের অর্ধেক জরিমানা নির্ধারিত হবে, অর্থাৎ পাঁচ দিরহাম। তবে আশা করা যায় নারীর শিক্ষা ও কর্মস্থল আলাদা করে দিলে ইভটিজিং তেমন থাকবে না, নিতান্তই কমে যাবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ ইসলামের মুল বার্তা হল, মানুষ আল্লাহ্র নিয়ামত ভোগ করবে, ফিৎনা নির্মূল করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে ও আল্লাহ্র আনুগত্য করবে। কাজেই খিলাফতের উদ্দেশ্য হল, সর্বোচ্চ উৎপাদন, সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা প্রদান, মুসলমানের সকল অভাব অভিযোগ ও অশান্তির মূলোৎপাটন এবং আল্লাহ্র ইবাদাত। আর আল্লাহ্র ইবাদাত করতে হলে পেটে ভাত থাকতে হবে- এর জন্য ইসলাম যাকাত ইনফাকের অর্থ ব্যবস্থা দিয়েছে, মনে শান্তি থাকতে হবে - এর জন্য ইসলাম সুন্দর বিচার ব্যবস্থা দিয়েছে, শরীর সুস্থ থাকতে হবে –এর জন্য ইসলাম চিকিৎসা সেবার নির্দেশ দিয়েছে। কাজেই আমরা প্রতিটা ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলব। নারী শিশু ও বৃদ্ধের জন্য আলাদা আলাদা সেকশন থাকবে। প্রত্যেক মুসলিম দেশে আন্তর্জাতিক মানের পুর্নাংগ হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ফ্রি থাকবে, সম্ভব হলে ঔষধও ফ্রি দেয়া হবে।
বিষয়: রাজনীতি
৬৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন