সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- 26- 27
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৪:৪২:৪৬ বিকাল
খিলাফত ইশতিহারঃ
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
কেন্দ্রীয় খিলাফতের দায়িত্বঃ
(১) খিলাফতের প্রধান কাজ হবে পৃথিবীর ত্রিব্ব তথা বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও বিশ্ব নেতৃত্ব দখল করা।
বানিজ্যঃ কেন্দ্রীয় খেলাফতের অধিনে ইসলামী ব্যাংক বা বাইতুল মাল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই সব ব্যাংক বিনা সুদে অর্থায়ন করবে। তখন কেন্দ্রীয় খেলাফতের তত্ত্বাবধানে ব্যাংক ঋণ বা ধনী দেশগুলির অর্থায়নে মুসলিম বিশ্বের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার মিল- কারখানা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলা হবে। সুলভে শ্রমশক্তি পাওয়া যায় এমন দরিদ্র দেশগুলিতে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। আর ধনী দেশগুলোতেও শ্রমিকরা বিনা ভিসায় চাকরির সুবিধা পাবে। এতে ধনী দরিদ্র রাষ্ট্রগুলীর বৈষম্য কমে আসবে। মুসলিম বিশ্ব কোন কিছু আমদানি করবে না, রপ্তানি করবে। নিজেরা সকল পন্য উৎপাদন করে ক্রমান্বয়ে মুসলমানরা বিশ্ব বাজার দখল করে নেবে। বিশেষত কোন ইহুদি পন্য ব্যবহার করবে না। ভাল হউক মন্দ হউক নিজেদের উৎপাদিত পন্য ব্যবহার করবে। এভাবে ইহুদিদের কড়ার ভিখারি বানিয়ে শায়েস্তা করতে হবে। কেন্দ্রীয় খেলাফত বানিজ্যে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।
বিজ্ঞানঃ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে পৃথিবীর বাস্তবতা হল, যে জাতি জ্ঞান বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ তারাই বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন সভ্যতা পরাম্পরায় পারস্য, গ্রিক, রোমান, মুসলমানগণ বর্তমানে পাশ্চাত্য। কাজেই খেলাফতের প্রধান দায়িত্ব হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন শাস্ত্র গবেষণার জন্য সংশ্লিষ্ট শাস্ত্রের উপযোগি দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেমন কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে কৃষি গবেষণাগার। সমুদ্র গবেষণার জন্য দ্বীপদেশ ইন্দোনেশিয়া। ইতিহাস ঐতিহ্য ও প্রত্ততত্ব গবেষণার জন্য প্রাচীন ঐতিহ্যের দেশ মিশর। হারুনুর রশিদ ও মামুনুর রশিদের প্রতিষ্ঠিত বাগদাদের মান মন্দিরের স্থানে হবে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র- নাসা। এভাবে যেদেশ যে শাস্ত্রের জন্য উপযোগি সেখানেই ঐ শাস্ত্রের গবেষণাগার হবে। আর এসব গবেষণাগারে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানি ও বিজ্ঞানীদের সর্বোচ্চ মুল্যে কিনে এনে নিয়োগ দেয়া হবে। এভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলমানরা বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে।
বিশ্ব নেতৃত্বঃ বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে যখন মুসলমানরা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবে তখন তারা বিশ্বনেতৃত্বের আসনে এমনিতেই অধিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
(২) দরীদ্র ও শ্রমিক জনগোস্টির কর্ম সংস্থান করবে এবং মুস্তাদআফ-কর্মক্ষম জনগোস্টির বৃত্তির ব্যবস্থা করবে।
(৩) মরক্বো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত হবে এক দেশ, এক আইন, এক মুদ্রা, এক শিক্ষা ব্যবস্থা-এক সিলেবাস।
(৪) ইউরোপীয় ইউনিয়নের ন্যায় ভিসা প্রথা উঠে যাবে। কর্ম সংস্থান হবে উন্মুক্ত।
(৫) প্রতোক দেশের নির্বাচন, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ মিমাংসা, অর্থনৈতিক সুষম বন্টন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র বিমোচন, তৃনমূল পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা, নিরক্ষরতা দুরিকরণ, সুষ্টু নির্বাচন ও অন্যান্য মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
(৬) অমুসলিম দেশের নির্যাতিত মুসলিমসহ সমগ্র জাতির বৈশ্বিক স্বার্থ সংরক্ষন হবে খিলাফতের প্রধান কাজ।
(৭) ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আরাকান, জিংজিয়াং ইত্যাদি মুসলিম আগ্নেয়গিরি গুলীর সম্মান জনক ও শান্তিপুর্ন মিমাংসা করবে খিলাফত। আরো অন্যান্য বিষয়াবলী।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গঃ আমরা জানি হুট করেই মুসলিম বিশ্বে বা সমগ্র বিশ্বে খিলাফত প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আগে কোথাও এর সুচনা করতে হবে। আর পুর্বে আলোচনা হয়েছে প্রারম্ভিক খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে উপযোগি।কাজেই এখন আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খিলাফত ইশতিহার ঘোষণা করছি। খিলাফতের অধিনে জনগণ যেসব নাগরিক অধিকার পাবে- সংক্ষেপের খাতিরে তন্মধ্যে পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করছি। যথা- ১। অর্থব্যবস্থা ২। বিচার ব্যবস্থা ৩। অধিকার ৪। চিকিৎসা ৫। শিক্ষা ব্যবস্থা।
১। অর্থব্যবস্থাঃ ইসলামী বিধান অনুসারে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের পোষ্য। কাজেই কর্মে সক্ষমদের আমরা দেশে বা বিদেশে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করব। আর কর্মক্ষমদের সরকারী ভাতায় প্রতিপালন করা হবে।
ব্যখ্যাঃ ইসলাম ও সমাজতন্ত্রের দৃষ্টিতে জনগন দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। দুর্বল ও অক্ষম শ্রেনিকে মুস্তাদআফ বা প্রলেতারিয়েত বলা হয়। আর শাসক ও শোষক শ্রেণিকে মুস্তাকবির বা বর্জোয়া বলা হয়।
মুস্তাদআফ শ্রেনীঃ মুস্তাদআফ অর্থ দুর্বল, অর্থাৎ সমাজের দর্বল শ্রেনী। সমাজ তান্ত্রিক প্রলেতারিয়েত আর ইসলামিক মুস্তাদআফ কাছাকাছি অর্থবোধক হলেও উভয়টির মধ্যে পার্থক্য আছে। পরিভাষাদ্ধয়ে আম খাস মতলক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন এঙ্গেলসের মতে ‘প্রলেতারিয়েত হল আজকালকার মজুর- শ্রমিকরা, উৎপাদনের উপায় উপকরন নিজেদের হাতে না থাকার দরুন যারা বেঁচে থাকার জন্য স্বীয় শ্রমশক্তি বেচতে বাধ্য হয়। পক্ষান্তরে ইসলামী পরিভাষায় দুর্বল ও কর্মক্ষম শ্রেনিকে মুস্তাদআফ বলা হয়। দুর্বল যেমন- বাস্তুহীন, দরীদ্র, শোষিত, মজলুম, অবহেলিত ইত্যাদি, ইসলামী সরকার এদের পুনর্বাসন ও ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করবে। আবার কর্মক্ষম শ্রেনি যেমন- ইয়াতিম, বিধবা, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধ, হিজড়া ইত্যাদি। খিলাফত বা সরকার তাদেরকে জীবন ধারণ উপযোগি ভাতা দিয়ে প্রতিপালন করবে। কিন্তু সোস্যালিজম সমাজের এই দুর্বল শ্রেনী সম্পর্কে কিছুই বলে না, এখানেই ইসলাম ও সমাজতন্ত্রের পার্থক্য।
মুস্তাকবিরঃ সমাজতন্ত্রের বর্জোয়া আর মুস্তাকবির সমজাতীয় হলেও পার্থক্য আছে। এখানেও আমখাস মতলক সম্পর্ক। যেমন এঙ্গেলসের সংজ্ঞা ‘বর্জোয়া বলতে আধুনিক পুঁজিপতি শ্রেনিকে বুঝায়, যারা সামাজিক উৎপাদনের উপায়গুলির মালিক এবং মজুরি শ্রমের নিয়োগকর্তা। অর্থাৎ শিল্প কারখানার মালিক যারা শ্রমিকদের শোষণ করে, শ্রমিকদের রক্ত ঘামে উৎপন্ন ফসল ছিনতাই করে নিজেরা বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলে- তারাই বর্জোয়া। কার্ল মার্ক্স এখানে বর্জোয়া শোষকদের বিরুদ্ধে শ্রেনী সংগ্রামের জন্ম দিয়েছেন এবং পৃথিবীতে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে, মুস্তাকবির অর্থ দাম্ভিক, অহংকারি বড়লোক ইত্যাদি। কিন্তু পরিভাষায় যাদের কারনে সমাজের বৃহত্তম অংশটা দুর্বল হয়ে পড়ে বা দুর্বল করে রাখে তারাই মুস্তাকবির। যেমন শাসক শোষক পুজিপতি বিত্তবান শক্তিমান অত্যাচারি ইত্যাদিরা মুস্তাকবিরের শ্রেণীভুক্ত। সমাজতন্ত্র যেখানে শ্রেণী সংগ্রামের জন্ম দিয়ে ব্যক্তি স্বাধিনতা হরন করেছে ইসলাম সেখানে ইনসাফ ভিত্তিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে। ইসলাম বিধান দিয়েছে, কোন শ্রেণী সংগ্রাম নয়, সংঘাত সংঘর্ষ নয়- মুস্তাকবিরের টাকায় অর্থাৎ যাকাত উশর খুমুস ইত্যাদি দ্বারা মুস্তাদআফ প্রতিপালিত হবে, অত্যাচারিত হলে মুস্তাকবিরের উপর কিসাস, দিয়ত ইত্যাদি প্রযোজ্য হবে। আহ কতই না সুন্দর ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা।
মুস্তাদআফ শ্রেনি রাষ্ট্রের পোস্য- এর উপর কোরানের দলিলঃ আল্লাহ তালা বলেন--
وَكَأَيِّن مِّن دَابَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا اللَّهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿العنكبوت: ٦٠﴾
এমন অনেক জন্তু আছে, যারা তাদের খাদ্য উৎপাদন করে না। আল্লাহই রিযিক দেন তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (২৯: ৬০)
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ ﴿هود: ٦﴾
ভু- পৃষ্টে বিচরণশীল সকল প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর উপর, তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে। (১১: ৬)
ব্যখ্যাঃ কিন্তু আল্লাহ্ তা’লার পক্ষে তো বাড়ি বাড়ি জনে জনে গিয়ে রিজিক পৌঁছে দেয়া সম্ভব নয় বিধায় এ দায়িত্ব তিনি অর্পণ করেছেন খলিফার উপর। পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সুষম বণ্টন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ্ তালা খিলাফতের বিধান দিয়েছেন। খলিফা আল্লাহ্ ও রাসুলের দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। অত্র আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রানির রিজিক তথা জীবনোপকরনের ব্যবস্থা করা খলিফা বা সরকারের দায়িত্ব। কাজেই সরকার সক্ষমদের দেশে বা বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে আর অক্ষম মুস্তাদআফদের বৃত্তি প্রদান করে প্রতিপালন করবেন। আর মুস্তাদআফের বৃত্তি বা প্রতিপালনের আর্থিক উৎস সম্পর্কে আল্লাহ্ তালা কোরানে যে বিধান দিয়েছেন- তা পর্যালোচনা করলে দুটি অর্থনৈতিক দর্শন বেরিয়ে আসে।
১। নিয়ন্ত্রিত পুজিবাদ ২। ইসলামি সমাজতন্ত্র।
নিয়ন্ত্রিত পুজিবাদঃ এর তাৎপর্য হলো, কারো অধিকার নষ্ট না করে, অবৈধ পন্থা অবলম্বন না করে, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি নকরি ইত্যাদির মাধ্যমে যে যত খুশি সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে- তাতে কোন বাধা নাই। তবে শর্ত হলো নিয়ম মাফিক যাকাত ও ইনফাক আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, হযরত আবু যর গিফারির সাথে হযরত আমির মোয়াবিয়ার মতানৈক্যের পর এ পদ্ধতি অবলম্বন করেন- যাতে হযরত উসমানও সম্মতি প্রদান করেন। পরবর্তি খলীফাগণও এই নীতি অবলম্বন করেন। যাকাতের বিধান সম্পর্কে সকলেই অবগত বিধায় এ সংক্রান্ত আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। তবে এখানে দুটি আলোচনা অত্যাবশ্যক।
১। আলেম সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ
যাকাত উসুলঃ হক দুই প্রকার, হক্বুল্লাহ ও হক্বুল ইবাদ। হক্বুল্লাহ হল নামাজ রোযা আমল ইবাদত ইত্যাদি। আর হক্বুল ইবাদ হল মানুষের অর্থ বিচার ও অন্যান্য অধিকার, তন্মধ্যে যাকাত অন্যতম। কোরানে নামাজের নির্দেশ এসেছে বিরাশি বার আর যাকাতের নির্দেশ এসেছে নব্বইয়েরও উপরে। তাছাড়া ইনফাক ও অন্যান্য আর্থিক নির্দেশ তো আছেই। এখন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সকল ফিরকা শুধু হক্বুল্লাহ নিয়ে ব্যস্ত, হক্বুল ইবাদ সম্পর্কে কারো কোন তৎপরতা নেই। যেমন তাবলীগিরা শুধু নামাজ রোযা শিক্ষা দিচ্ছে, পীর মুর্শিদরা যিকর কিভাবে করতে হবে, কয় লতিফায় টানতে হবে ইত্যাদির ট্রেনিং দিচ্ছে। মাদরাসা গুলি নামাজের আশি হাজার মাসআলা ও তালাকের কলা কৌশল শিখাচ্ছে। কিন্তু কেউ হক্বুল্লাহ তথা যাকাত ও ইনফাক সম্পর্কে কিছুই শিখাচ্ছে না।
এজন্যই দেখা যায় মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ গড়ে উঠেছে কিন্তু যাকাত আদায়ের কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। আর ইমাম মোয়াজ্জিনরা শুধু নামায রোযার দায়িত্ব পালন করছে কিন্তু যাকাত উত্তোলন ও বিতরনের দায়িত্ব কেউ পালন করছে না। অথচ প্রত্যেক ইমামের উপর ওয়াজিব ছিল স্ব স্ব মহল্লার ধনীদের কাছ থেকে যাকাত উত্তোলন করে দরীদ্রদের মধ্যে বিতরন করা। কিন্তু তারা কেউ হক্বুল ইবাদ তথা দরিদ্র জনগণের দায়িত্ব পালন করছে না, শুধু হক্বুল্লাহ নিয়ে পড়ে আছে। এখন প্রশ্ন হল কেন এমন হচ্ছে? এর উত্তর হল, হক্বুল্লাহর ক্ষেত্রে কারো স্বার্থের ব্যাঘাত হয় না। যেমন তুমি সাড়া রাত নামায পড়, সারা বছর রোযা রাখ তাতে কারো স্বার্থের ব্যাঘাত হচ্ছে না। কিন্তু যাকাত ও ইনসাফ আদায় করতে গেলে মুস্তাকবির, তাগুত, শাসক ও দাজ্জালের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটে। এজন্যই নিরাপত্তা ভোগি আলেমরা কারো সাথে দ্বন্দে না জড়িয়ে মসজিদ মাদরাসা ও খানকার চার দেয়ালের নিরাপত্তায় শুধু নামায রোযা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তাছাড়া মাদরাসা গুলিতে এ জাতীয় শিক্ষা দেয়া হয় না।
ইমামতির বেতনঃ ইমামতি মোয়াজ্জেনি করে, কোরান হাদিস শিক্ষা দিয়ে বেতন নেয়া জায়েয নেই। এটা পরবর্তি ইমামগণ ইস্তেহসান- কল্যাণের দৃষ্টিতে জায়েয করেছেন। কিন্তু আমরা প্রত্যেক মসজিদ ভিত্তিক স্থানীয় সরকার বা গ্রামিন শালিসি বোর্ড গঠন করব। এর প্রধান হবেন ইমাম সাব। তখন তার কাজ হবে স্ব স্ব মহল্লার যাকাত ও ইনফাক আদায় করে দরিদ্রের মাঝে বণ্টন করা, গ্রামিন বিচার ফয়সালা করা, দরিদ্রের জন্য বাইতুল মাল থেকে বিনা মুল্যে ঋণ প্রদান এবং উসুল করা, দুর্যোগ ও বন্যার সময় ভুক্তভোগিদের সংখ্যা নিবন্ধন, ত্রানের পরিমান নির্ধারন ও বিতরন করা। এ ছাড়াও অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবেন। তৃনমূল পর্যন্ত আর্থিক সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতি নাই। তখন ইমাম সাব শালিসি বোর্ড প্রধান হিসাবে সরকারি বিধি মোতাবেক বেতন পাবেন, ইমাম হিসাবে নয়।
২। যাকাত, জিহাদ ও শ্রেনি সংগ্রাম সমার্থকঃ
জিহাদ হল বিশ্ব মানবের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ম্যাগনাকার্টা। কারো গর্দান মেরে কলেমা পড়ানোর নাম জেহাদ নয়। কারণ এটা কোরানে নিষেধ, যেমন -لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ - দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই, নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। (২: ২৫৬)। কাজেই জেহাদ হলো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নাম। সশস্ত্র জিহাদের ইসলামী বিধান এবং রাসূল (সাঃ) থেকে পরবর্তি সকল যুগে এর অনুসৃত পদ্ধতি হচ্ছে তিনটি।
ক। প্রথমে অমুসলিমদেরকে হিকমত ও মাওয়িযায়ে হাসানা তথা উত্তম বাক্যে কলেমার দাওয়াত দিবে। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ধর্ম গ্রন্থে রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে যেসব প্রফেসি আছে- সেগুলির উদৃতি দিয়ে দাওয়াত দিতে হবে। যেমন খৃষ্টানদেরকে বলা হবে তোমরা বাইবেলের উস্ট্রারোহি বা প্যারাক্লিতের উপর ঈমান আন। ইহুদিদেরকে বলা হবে তোমরা ফারানের ভাববাদী বা ইব্রাহীম বংশের শেষ নবীর প্রতি ঈমান আন। হিন্দুদের বলা হবে তোমরা বেদ পুরানের কল্পি নরাশংশের উপর ঈমান আন। বৌদ্ধদের বলা হবে তোমরা অন্তিম বুদ্ধ- মৈত্রেয় বুদ্ধের উপর ঈমান আন।
খ। তখন তারা যদি ঈমান আনতে অস্বিকার করে তাহলে জিযিয়া দিতে হবে। এখন প্রশ্ন হল এই জিযিয়াটা কি, এটা কি অমুসলিমদের জন্য অপমানজনক নয়? এর উত্তর হল, জিযিয়া অমুসলিমদের উপর ইসলামের অকল্পনীয় অনুগ্রহ। কারণ একজন মুসলমানকে সদকা, ফেৎরা, যাকাত, ইনফাক প্রয়োজনে সমাজতন্ত্র তথা প্রয়োজনাতিরিক্ত সকল সম্পদ দান করে দিতে হয়। অথচ ইসলামী হুকুমতের অধিন অমুসলিমদের শুধু একটি দায়িত্ব- জিযিয়া দেয়া, তাও যদি সে ধনী হয়। আর যদি দরিদ্র হয় বা কর্মে অক্ষম হয় তাহলে সে তো জিযিয়া দিবেই না বরং ইসলামী সরকার তার ব্যয়ভার বহন করবে। কাজেই ইসলাম অমুসলিমদের উপর অসীম অনুগ্রহ করেছে।
গ। যদি জিযিয়াও দিতে অস্বিকার করে তবে তার সাথে যুদ্ধ হবে, তলোয়ার দিয়ে ফয়সালা করতে হবে। কারণ সে মানবতার শত্রু, তার জিযিয়া থেকে দরিদ্র অক্ষমদের ভাতা দেয়া হয়। আবার সে নিজে অক্ষম হলে ইসলামী সরকার থেকে ভাতা পায়- তাতেও সে রাজি নয়, কাজেই সে সমাজের জন্য ক্ষতিকর। হয় সে পথে আসবে অথবা ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন প্রশ্নটা হল, অমুসলিমদের সাথে যে যুদ্ধ সেটা কি কালেমা পড়ানোর জন্য নাকি জিযিয়া বা অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য? উত্তর পরিস্কার, কালেমা পড়ানোর জন্য হলে তো কালেমা গ্রহন না করলেই যুদ্ধ শুরু করা হত। কিন্তু না, ইসলামে এমন বিধান নেই। তাকে প্রথমে কলেমার দাওয়াত, তারপর জিযিয়ার দাওয়াত দেয়া হবে, অস্বিকৃত হলে তারপর যুদ্ধ। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ হক্বুল্লাহ অথা কালেমার অধিকার ত্যাগ করেছেন কিন্তু তাকে হক্বুল ইবাদ আদায় করতে হবে, জিযিয়া দিয়ে দরিদ্র মানুষের হক আদায় করতে হবে। অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় যদি সে রাজি না হয় তাহলেই তার সাথে যুদ্ধ হবে। এটাকেই সমাজতন্ত্রের পরিভাষায় শ্রেণী সংগ্রাম বলে।
কিন্তু পার্থক্য হল ইসলামের শ্রেণী সংগ্রাম তথা অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ইনসাফ পূর্ণ ও যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু কম্যুনিজমের শ্রেণী সংগ্রাম অযৌক্তিক ও পৈশাচিক। এরা আর্থিক সাম্য প্রতিষ্ঠার নামে পৃথিবীতে ধ্বংস আগুন আর রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। এরপরেও দাজ্জাল বাহিনী ও তাদের বশংবদ এক শ্রেণীর মুসুলমানের কাছে জিহাদ হল সন্ত্রাস আর শ্রেণী সংগ্রাম হল শান্তি। হায় বিবেক। অবশ্য এর জন্য সন্ত্রাসে জড়িত বিপদগামী কিছু মুসলমান দায়ী।
যাই হউক এখন প্রশ্ন হল, জিযিয়া না দিলেই অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করা হবে এটাকি তাদের প্রতি অবিচার হল না? উত্তর পরিস্কার, অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুসলিম অমুসলিম উভয় শ্রেণীর জন্য একই বিধান। যেমন অমুসলিম কর্তৃক প্রদত্ত অর্থকে বলা হয় জিযিয়া আর মুসলমানদের ক্ষেত্রে যাকাত। কোন মুসলমান যদি যাকাত দিতে অস্বিকার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ওয়াজিব যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। যেমন হযরত আবু বকর (রাঃ) যাকাত অস্বিকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদেরকে বাধ্য করেছিলেন। ঠিক একইভাবে কোন অমুসলিম জিযিয়া দিতে অস্বিকার করলে তার বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে হবে। কাজেই প্রমাণিত হল অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুসলিম অমুসলিমের জন্য একই বিধান। আরো প্রমাণিত হল, কাউকে কালেমা পড়ানোর নাম জিহাদ নয়, বরং অমুসলিমদের যাকাত ওরফে জিযিয়ার মাধ্যমে আর্থিক সাম্য প্রতিষ্ঠার নাম জিহাদ আর সমাজতন্ত্রীদের মতে এটাই শ্রেণী সংগ্রাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিশ্ববাসীর সামনে জিহাদের প্রকৃত সংজ্ঞাটা তুলে ধরতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।
ইনফাকঃ কিন্তু শুধু যাকাতে যদি মুস্তাদআফের প্রয়োজন না মিটে তবে ইশরিন –বিশ ভাগের এক ভাগ দিতে হবে, তাতেও প্রয়োজন না মিটলে উশর দশমাংশ , তাতেও প্রয়োজন না মিটলে খুমুষ- পঞ্চমাংশ দিতে হবে। এর দলীল হচ্ছে-
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ [٢:٣]
যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে
25) وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ﴿البقرة: ٢٠١﴾
আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে-হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। (২: ২০১)
لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ ﴿آلعمران: ٩٢﴾
কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (৩: ৯২)
وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ﴿البقرة: ١٩٥﴾
আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। (২: ১৯৫)
الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿البقرة: ٢٧٤﴾
যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, রাত্রে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্যে তাদের সওয়াব রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোন আশংঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না। (২: ২৭৪)
(16) وَأَنفِقُوا مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِينَ ﴿المنافقون: ١٠﴾
আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (৬৩: ১০)
(26) مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿البقرة: ٢٦١﴾
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। (২: ২৬১)
) لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ ﴿البقرة: ١٧٧﴾
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার। (২: ১৭৭)
ব্যাখ্যাঃ উপর্যুক্ত আয়াত সমুহের বিশেষ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নাই। কারণ রাসুল (সাঃ) এর অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, যাকাতে মুস্তাদআফের প্রয়োজন না মিটলে ইনফাক তথা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে। এ ব্যাপারে ফকীহগনও ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। যেমন-
২। ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন ‘যাকাত দ্বারা যদি অভাবগ্রস্থদের অভাব মোচন সম্ভব না হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় কোষ থেকে তাদের জন্য অন্যান্য কাজ বাদ দিয়ে হলেও অর্থ ব্যয় করতে হবে, (আস সিয়াসাতুশ শারইয়া)।
৩। ইবনে আবেদিন বলেন ‘বিচারপতি যেমন অক্ষম দরিদ্র ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের জন্যে তার ধনী অভিভাবক বা নিকটাত্মীয়কে বাধ্য করবে, তেমনি রাষ্ট্রপ্রধানকেও বিচারের মাধ্যমে এজন্যে বাধ্য করবে, (আত তাশরীউল ইসলামী)।
৪। ফিকাহবিদদের সর্বসম্মত অভিমত ‘যাকাত ও বায়তুল মালের সাধারণ অর্থ সম্পদ যদি অসমর্থ হয়, তাহলে বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান ও অভুক্তকে অন্নদান প্রভৃতি জরুরী কাজ আনজাম দেয়ার দায়িত্ব পড়বে তাদের মধ্যে সচ্ছল ও সামর্থবান লোকদের উপর। এ দায়িত্ব তাদের জন্য ফরযে কেফায়া হিসাবে অতিরিক্তভাবে চাপবে। (আল মিনহাজ, ইমাম নবভী এবং তার শরাহঃ ৭ম খণ্ড, ১৯৪ পৃ)।
৫। ইবনে হাজম বলেন ‘যাকাত ফান্ড রাষ্ট্রীয় কোষাগার দরিদ্র জনগণের প্রয়োজন পূরণে অক্ষম হলে তখন তাদের পেটভরা খাবার ও শীত গ্রীষ্মের উপযোগী পোশাক এবং বর্ষা, শীতের, রৌদ্রতাপ ও পথচারীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। (আল মুহাল্লা, ইবনে হাজম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৫৬ পৃ)।
ইসলামি সমাজতন্ত্রঃ এটা রাসুল (সাঃ), হযরত আবু বকর, উমর, আলী, আবু যর, দ্বিতীয় উমর –তাদের গৃহিত অর্থ ব্যবস্থা। আর এটাই ইসলামের মূল বিধান। এর তাৎপর্য হচ্ছে সম্পদ কেউ সঞ্চয় করতে পারবে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ বাইতুল মালে বা মুস্তাদআফের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। এর স্বপক্ষে আমরা দুই প্রকারের দলীল পেশ করব। কোরানের নির্দেশনা এবং রাসূল (সাঃ) ও খলীফাগণের জীবন পদ্ধতি। যেমন ইরশাদ হচ্ছে -
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿التوبة: ٣٤﴾
আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (৯: ৩৪)
মুফাসসিরিনে কেরামের অভিমতঃ ইমাম তাবারি উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তিন প্রকার উক্তি নকল করেছেন। কেউ বলেছেন কানয (সম্পদ জমা কর) অর্থ যাকাত কিন্তু এই অভিমত সঠিক নয়, কারণ তাহলে অন্যান্য আয়াত ও হাদিসের খেলাফ হয়ে যাবে এবং এতদসংক্রান্ত আয়াত গুলির মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব হবে না। বাকি দুই প্রকার মতামত তুলে ধরা হল। যেমন-
وقال آخرون: كل مال زاد على أربعة آلاف درهم فهو كنز أدَّيت منه الزكاة أو لم تؤدِّ.
* ذكر من قال ذلك:
২। কেউ বলেছেন চার হাজার দিরহামের অতিরিক্ত সম্পদ কানয বলে গন্য হবে, তার যাকাত আদায় করা হউক বা না হউক। তাদের দলীল –
عن جعدة بن هبيرة، عن علي رحمة الله عليه في قوله: (والذين يكنزون الذهب والفضة) ، قال: أربعة آلاف درهم فما دونها نفقة، وما فوقها كنز.
জা’দা বিন হুবাইরা থেকে বর্নিত, হযরত আলি (রাঃ) বলেন, চার হাজার দিরহামের কম হলে সেটা পারিবারিক ব্যয় আর বেশি হলে কানয হিসাবে গণ্য হবে।
وقال آخرون: "الكنز" كل ما فضل من المال عن حاجة صاحبه إليه.
* ذكر من قال ذلك:
৩। কেউ বলেছেন পরিবার ও পোষ্যদের জন্য ব্যয়ের পর যা অতিরিক্ত থাকবে তাই কানয। তাদের দলীল –
أنه سمع أبا مجيب قال: كان نعل سيف أبي هريرة من فضة، فنهاه عنها أبو ذر وقال: إن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: "من ترك صَفْرَاء أو بيضاء كُوِي بها.
অর্থাৎ আবু মুজিব বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর তলোয়ারের বাট ছিল রুপার। হযরত আবু যর (রাঃ) এ বিষয়ে তাকে নিষেধ করে বললেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে স্বর্ণ রৌপ্য রেখে যাবে তাকে সেগুলি দ্বারা পরকালে দাগ দেয়া হবে।
عن سالم بن أبي الجعد قال: لما نزلت: (والذين يكنزون الذهب والفضة ولا ينفقونها في سبيل الله) ، قال النبي صلى الله عليه وسلم: "تبًّا للذهب! تبًّا للفضة! يقولها ثلاثًا، قال: فشق ذلك على أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، قالوا: فأيَّ مال نتخذ؟! فقال عمر: أنا أعلم لكمذلك! فقال: يا رسول الله، إن أصحابك قد شق عليهم، وقالوا: فأيَّ المال نتخذ؟ فقال: لسانًا ذاكرًا، وقلبًا شاكرًا، وزوجةً تُعين أحدكم على دينه.
অর্থাৎ সালেম বিন আবু জা’দ বলেন যখন উক্ত আয়াত নাযিল হয় তখন রাসূল (সাঃ) বলেন, ধ্বংস স্বর্ণের ধ্বংস রৌপ্যের। কথাটা তিনি তিনবার বলেন। তখন বিষয়টা সাহাবায়ে কেরামের উপর কঠিন হয়ে দেখা দেয়। তারা বলাবলি করতে লাগলেন, তাহলে আমরা কোন মাল গ্রহন করব, বা জমা করব? তখন হজরত উমর বললেন, আমি শীঘ্রই তোমাদেরকে জানাচ্ছি। তারপর রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল বিষয়টা তো আপনার সাহাবিদের উপর কঠিন হয়ে গেছে। তারা বলছে ‘তাহলে আমরা কোন মাল জমা করব। তখন রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন ‘যিকিরকারী জিহ্বা, কৃতজ্ঞ অন্তর, পুন্যবতি স্ত্রী- যে তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে সহযোগী হবে। অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) সম্পদ জমা করতে পরোক্ষভাবে নিষেধ করেছেন।
ইমাম কুরতুবির অভিমতঃ ইমাম কুরতুবি অত্র আয়াতের এগারটি ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তৃতীয় ব্যাখ্যাটি এখানে তুলে ধরা হল।
الثالثة- واختلفت الصَّحَابَةُ فِي الْمُرَادِ بِهَذِهِ الْآيَةِ، فَذَهَبَ مُعَاوِيَةُ إِلَى أَنَّ الْمُرَادَ بِهَا أَهْلُ الْكِتَابِ وَإِلَيْهِ ذَهَبَ الْأَصَمُّ لِأَنَّ قَوْلَهُ:" وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ" مَذْكُورٌ بَعْدَ قَوْلِهِ:" إِنَّ كَثِيراً مِنَ الْأَحْبارِ وَالرُّهْبانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوالَ النَّاسِ بِالْباطِلِ". وَقَالَ أَبُو ذَرٍّ وغيره: المراد بها أهل الكتاب وغير هم مِنَ الْمُسْلِمِينَ. وَهُوَ الصَّحِيحُ، - -----قَالَ السُّدِّيُّ: عَنَى أَهْلَ الْقِبْلَةِ. فَهَذِهِ ثَلَاثَةُ أَقْوَالٍ.
অর্থাৎ এ সম্পর্কে সাহাবাগনের মধ্যে মতভেদ আছে, যেমন হযরত আমির মোয়াবিয়া (রাঃ) বলেন, উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্য আহলে কিতাব। কারণ আয়াতের শুরুতে আহবার রুহবান তথা ইহুদি খৃষ্ট আলেমদের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু হযরত আবু যর বলেন, এ আয়াত দ্বারা আহলে কিতাব ও মুসলমান সবাই উদ্দেশ্য। কারণ আয়াতের আল্লাযীনা- যারা, সর্বনাম দ্বারা সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আর এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। সুদ্দি বলেন, উক্ত আয়াত দ্বারা আহলে কিবলা তথা মুসলমানরা উদ্দেশ্য।
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ عَلِيٌّ: أَرْبَعَةُ آلَافٍ فَمَا دُونَهَا نَفَقَةٌ، وَمَا كَثُرَ فَهُوَ كَنْزٌ وَإِنْ أَدَّيْتَ زَكَاتَهُ،
হযরত আলি (রাঃ) বলেন, চার হাজার দিরহামের কম হলে সেটা পারিবারিক ব্যয়, আর বেশি হলে কানয হিসাবে গণ্য হবে তার যাকাত দেয়া হউক বা না হউক।
وَقِيلَ: الْكَنْزُ مَا فَضَلَ عَنِ الْحَاجَةِ. رُوِيَ عَنْ أَبِي ذَرٍّ، وَهُوَ مِمَّا نُقِلَ مِنْ مَذْهَبِهِ، وَهُوَ مِنْ شَدَائِدِهِ وَمِمَّا انْفَرَدَ بِهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ. قُلْتُ: وَيَحْتَمِلُ أَنْ يَكُونَ مُجْمَلُ مَا رُوِيَ عَنْ أَبِي ذَرٍّ فِي هَذَا،
৩। কানয বলা হয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে সম্পদ থাকে। এটা হযরত আবু যরের অভিমত।
مَا رُوِيَ أَنَّ الْآيَةَ نَزَلَتْ فِي وَقْتِ شِدَّةِ الْحَاجَةِ وَضَعْفِ الْمُهَاجِرِينَ وَقِصَرِ يَدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ كِفَايَتِهِمْ، وَلَمْ يَكُنْ فِي بَيْتِ الْمَالِ مَا يَسَعُهُمْ، وَكَانَتِ السُّنُونُ الجوائح هاجمة عليهم، فنهوا عن إمساك شي مِنَ الْمَالِ إِلَّا عَلَى قَدْرِ الْحَاجَةِ وَلَا يَجُوزُ ادِّخَارُ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ فِي مِثْلِ ذَلِكَ الوقت.
তারপর ইমাম কুরতুবি বলেন, বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি নাযিলের সময় কঠিন অভাব ছিল, মুহাজিরগন খুবই দুর্বল ছিলেন, তাদের ন্যুনতম প্রয়োজন পূরণে রাসূল (সাঃ) অক্ষম ছিলেন, তাদেরকে স্বচ্ছলতা দেয়ার মত বাইতুল মালে সম্পদ ছিল না, তখন তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ও বিপদাপদ আপতিত ছিল। কাজেই তখন তাদের প্রয়োজনা তিরিক্ত সম্পদ আটকে রাখতে নিষেধ করা হয়। আর এমন সময় স্বর্ণ রৌপ্য বা সম্পদ সঞ্চয় করা জায়েয নাই।
ব্যাখ্যাঃ দুর্ভিক্ষ, অভাব ও প্রয়োজনের সময় সম্পদ জমা করা যাবে না- এটাই সঠিক কথা। কারণ সর্বদার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য হলে যাকাত ও মিরাছের বিধান অর্থহীন হয়ে পড়ে। সাধারণ অবস্থায় সম্পদ জমা করা যাবে তবে চার হাজার দিরহামের উর্ধ্বে নয়।
وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ ﴿البقرة: ٢١٩﴾
আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার। (২: ২১৯)
তাফসিরকারদের মতামতঃ ইমাম তাবারি বলেন, অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় একাধিক মতামত রয়েছে, তন্মধ্যে প্রধান অভিমত হল আফবু অর্থ অতিরিক্ত, অর্থাৎ সংসার ব্যয়ের অতিরিক্ত সম্পদ। ইবনে আব্বাস, কাতাদা, সুদ্দি, হাসান বসরী প্রমুখগণ এ অভিমত পোষণ করেন।
ইমাম কুরতুবি বলেন,
قال أبو جعفر: وأولى هذه الأقوال بالصواب قول من قال: معنى"العفو": الفضلُ من مالِ الرجل عن نفسه وأهله في مؤونتهم ما لا بد لهم منه. وذلك هو الفضل الذي تظاهرت به الأخبار عن رسول الله صلى الله عليه وسلم بالإذن في الصدقة، وصَدقته في وجوه البر: ذكر بعض الأخبار التي رويت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم بذلك:
অর্থাৎ আবু জাফর বলেন, উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন মতামতের মধ্যে উত্তম অভিমত হল আফবু অর্থ কোন ব্যক্তি তার নিজের ও পরিবারের পিছনে প্রয়োজনীয় ব্যয় সংকুলানের পর যা অতিরিক্ত থাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ সওয়াবের নিয়তে ব্যয় করতে হবে- এটা রাসূল (সাঃ) এর বিভিন্ন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
عن أبي هريرة قال: قال رجل: يا رسول الله، عندي دينار! قال:"أنفقه على نفسك. قال: عندي آخر! قال:"أنفقه على أهلك. قال: عندي آخر! قال: أنفقه على ولدك! قال: عندي آخر؛ قال: فأنتَ أبْصَرُ! –
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) আমার কাছে একটি দিনার আছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, তা নিজের জন্য ব্যয় কর। লোকটা বলল, আমার কাছে আরো একটি আছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার পরিবারের পিছনে ব্যয় কর। লোকটা বলল আরো আছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার পিতা মাতার পিছনে ব্যয় কর। লোকটা বলল, আরো একটি আছে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, এখন তুমি চিন্তা করে দেখ কোথায় ব্যয় করবে। অর্থাৎ সম্পদ জমা করা যাবে না ব্যয় করে দিতে হবে।
جابر بن عبد الله يقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا كان أحدكم فقيرًا فليبدأ بنفسه، فإن كان له فضل فليبدأ مع نفسه بمن يعول، ثم إن وجد فضلا بعد ذلك فليتصدق على غيرهم".
জাবির বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ ফকির হয়ে যায় মানে কিছু সম্পদ থাকে তখন প্রথমে নিজের পিছনে ব্যয় করবে, যদি আরো কিছু অতিরিক্ত থাকে তাহলে পোষ্যবর্গের উপর ব্যয় করবে। এরপরেও যদি অতিরিক্ত থাকে তাহলে অন্যদেরকে দান করে দেবে।
4172 - حدثنا عمرو بن علي قال، حدثنا يزيد بن هرون قال، حدثنا محمد بن إسحاق، عن عاصم بن عمر بن قتادة، عن محمود بن لبيد، عن جابر بن عبد الله قال: أتى رسولَ الله صلى الله عليه وسلم رجلٌ ببيضة من ذهب أصابها في بعض المعادن، فقال: يا رسول الله، خذ هذه مني صدقة، فوالله ما أصبحت أملك غيرها! فأعرض عنه، فأتاه من ركنه الأيمن فقال له مثل ذلك، فأعرض عنه. ثم قال له مثل ذلك، فأعرض عنه. ثم قال له مثل ذلك، فقال: هاتها! مغضبًا، فأخذها فحذفه بها حذفة لو أصابه شجَّه أو عقَره، ثم قال:"يجيء أحدكم بماله كله يتصدق به، ويجلس يتكفف الناس!! إنما الصدقة عن ظهر غِنًى. (2)
- حدثنا محمد بن المثنى قال، حدثنا محمد بن جعفر قال، حدثنا شعبة، عن إبراهيم المخرّمي قال: سمعت أبا الأحوص يحدث، عن عبد الله، عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: ارضَخْ من الفضل، وابدأ بمن تعول، ولا تُلام على كَفاف". (1)
مَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ مِنْ أَهْلِ الْقُرَىٰ فَلِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنكُمْ ﴿الحشر: ٧﴾
আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন, তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে, যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়। (৫৯: ৭)
মুস্তাদআফ শ্রেনি রাষ্ট্রের পোষ্য- এর উপর হাদিসের দলিলঃ রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন-
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ بُدَيْلٍ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ رَاشِدِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِي عَامِرٍ الْهَوْزَنِيِّ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ لُحَىٍّ، عَنِ الْمِقْدَامِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ تَرَكَ كَلاًّ فَإِلَىَّ " . وَرُبَّمَا قَالَ " إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ " . " وَمَنْ تَرَكَ مَالاً فَلِوَرَثَتِهِ وَأَنَا وَارِثُ مَنْ لاَ وَارِثَ لَهُ أَعْقِلُ لَهُ وَأَرِثُهُ وَالْخَالُ وَارِثُ مَنْ لاَ وَارِثَ لَهُ يَعْقِلُ عَنْهُ وَيَرِثُهُ " .
সুনান আবু দাউদ - ফারাইয অধ্যায় ১৯ - হাদিস ২৮৯৯
ইবন ‘উমার (র) -মিক্দাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলূল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন :যে ব্যক্তি দেনা বা নাবালক সন্তান- সন্ততি রেখে যাবে, তার যিম্মাদারী আমার। অথবা তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ এবং তার রাসূলের উপর। আর যে মাল রেখে যাবে, তবে তা উত্তরাধিকারীদের। আর যার কোন ওয়ারিছ নেই, আমি তার ওয়ারিছ। আমি তার পক্ষে দিয়্যাত (রক্তপণ) আদায় করব এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তির ভাগও দেব। আর মামা তার ওয়ারিছ হবে, যার কোন ওয়ারিছ নেই। সে তার দিয়্যাত আদায় করবে এবং তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিছ হবে।
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، - فِي آخَرِينَ - قَالُوا حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ بُدَيْلٍ، - يَعْنِي ابْنَ مَيْسَرَةَ - عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ رَاشِدِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِي عَامِرٍ الْهَوْزَنِيِّ، عَنِ الْمِقْدَامِ الْكِنْدِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَنَا أَوْلَى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ فَمَنْ تَرَكَ دَيْنًا أَوْ ضَيْعَةً فَإِلَىَّ وَمَنْ تَرَكَ مَالاً فَلِوَرَثَتِهِ وَأَنَا مَوْلَى مَنْ لاَ مَوْلَى لَهُ أَرِثُ مَالَهُ وَأَفُكُّ عَانَهُ وَالْخَالُ مَوْلَى مَنْ لاَ مَوْلَى لَهُ يَرِثُ مَالَهُ وَيَفُكُّ عَانَهُ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ الزُّبَيْدِيُّ عَنْ رَاشِدِ بْنِ سَعْدٍ عَنِ ابْنِ عَائِذٍ عَنِ الْمِقْدَامِ وَرَوَاهُ مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ عَنْ رَاشِدٍ قَالَ سَمِعْتُ الْمِقْدَامَ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ يَقُولُ الضَّيْعَةُ مَعْنَاهُ عِيَالٌ .
সুনান আবু দাউদ - ফারাইয অধ্যায় ১৯ - হাদিস ২৯০০
সুলায়মান ইবন হারব(র) -মিকদাম কিনদী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ আমি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তার নিজের সত্তা হতেও অধিক নিকটবর্তী। তাই যে ব্যক্তি দেনা বা সন্তান রেখে মারা যাবে, তার যিম্মাদারী আমার উপর (অর্থাৎ আমি তার দেনা পরিশোধ করব এবং তার সন্তানদের রক্ষনাবেক্ষণ করব )। আর যে ব্যক্তি মাল রেখে মারা যাবে, তা তার ওয়ারিছের জন্য। আর যার কোন মালিক নেই, আমি তার মালিক এবং তার মালেরও মালিক হব,( অর্থাৎ তার মাল বায়তুল মালে সংরক্ষণ করব।) এবং তার কয়েদীদের মুক্ত করব। আর যার কোন মালিক নেই, মামা তার ওয়ারিছ হবে। সে তার মালের উত্তরাধিকারী হবে এবং কয়েদীদের মুক্ত করবে।
আবূ দাঊদ (র) বলেনঃ ‘‘ যায়‘আ’’ শব্দের অর্থ সন্তান- সন্ততি। আবূ দাঊদ (র) আরো বলেনঃ যুবায়দী রাশিদ থেকে এরূপ বর্ণণা করেছেন। বি্ন আইয মিকদাম থেকে এবং মু‘আবিয়া ইবন সালিহ- রাশিদ থেকে বর্ণনা করেছেন। রাবী বলেছেনঃ আমি (রা) থেকে শুনেছি।
حَدَّثَنَا عَبْدُ السَّلاَمِ بْنُ عَتِيقٍ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُبَارَكِ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ حُجْرٍ، عَنْ صَالِحِ بْنِ يَحْيَى بْنِ الْمِقْدَامِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " أَنَا وَارِثُ مَنْ لاَ وَارِثَ لَهُ أَفُكُّ عَانِيَهُ وَأَرِثُ مَالَهُ وَالْخَالُ وَارِثُ مَنْ لاَ وَارِثَ لَهُ يَفُكُّ عَانِيَهُ وَيَرِثُ مَالَهُ " .
সুনান আবু দাউদ - ফারাইয অধ্যায় ১৯ - হাদিস ২৯০১
আবদুস সালাম ইবন ‘আতীক দিমাশকী (র) -সালিহ্ ইবন ইয়াহইয়া ইবন মিকদাম (রা) তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) - কে এরূপ বলতে শুনেছিঃ আমি তার ওয়ারিছ যার ওয়ারিছ নেই, আমি তার কয়েদীদের মুক্তি করি এবং তার পরিত্যক্ত মালের উত্তরাধিকারী হই। আর যার কোন ওয়ারিছ নেই, তার মামা তার ওয়ারিছ হবে, যে তার কয়েদীদের মুক্ত করবে এবং তার মালের উত্তরাধিকারীও হবে।
2972) حَدَّثَنَا عَمْرٌو النَّاقِدُ، حَدَّثَنَا عَبْدَةُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: وَيَحْيَى بْنُ يَمَانٍ، حَدَّثَنَا عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «إِنْ كُنَّا آلَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَنَمْكُثُ شَهْرًا مَا نَسْتَوْقِدُ بِنَارٍ، إِنْ هُوَ إِلَّا التَّمْرُ وَالْمَاءُ»،
يَعْنِي: لِلرَّسُولِ قَسْمَ ذَلِكَ " قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسََازِنٌ وَاللَّهُ يُعْطِي
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا أُعْطِيكُمْ وَلاَ أَمْنَعُكُمْ، إِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ أَضَعُ حَيْثُ أُمِرْتُ»
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " كُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالإِمَامُ رَاعٍ، وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ فِي أَهْلِهِ رَاعٍ، وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالْمَرْأَةُ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا رَاعِيَةٌ وَهْىَ مَسْئُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالْخَادِمُ فِي مَالِ سَيِّدِهِ رَاعٍ، وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ". قَالَ فَسَمِعْتُ هَؤُلاَءِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَحْسِبُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " وَالرَّجُلُ فِي مَالِ أَبِيهِ رَاعٍ، وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ".
সহিহ বুখারী - খন্ড ৩ - অধ্যায় ৪১ - হাদিস ৫৯২
আবুল ইয়ামান (র)..... আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা) কে বলতে শুনেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক। আর প্রত্যেকেই তার অধীনস্হদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে। নেতা (ইমাম) একজন রক্ষক, সে তার অধীনস্হদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে তার পরিবারের লোকজন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের রক্ষক, তাকে তার রক্ষনাবেক্ষন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইব্ন উমর (রা) বলেন, আমি এ সকলই রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে শুনেছি। আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, ছেলে তার পিতার সম্পত্তির রক্ষক এবং সে জিজ্ঞাসিত হবে তার রক্ষনাবেক্ষন সম্বন্ধে। অতএব, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্হদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।
- حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ قَالَ: ثنا سُفْيَانُ قَالَ: ثنا طَلْحَةُ بْنُ يَحْيَى عَنْ عَمَّتِهِ عَائِشَةَ بِنْتِ طَلْحَةَ، عَنْ خَالَتِهَا عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَقَالَ «هَلْ مِنْ طَعَامٍ؟» فَقُلْتُ: مَا عِنْدَنَا مِنْ طَعَامٍ قَالَ «فَأَنَا صَائِمٌ»
সমাজতন্ত্রঃ রাসুল (সাঃ) ও খলিফাগণের গৃহিত পদ্ধতিঃ
বস্তুতঃ পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের জন্মদাতা রাসুল (সাঃ)। কারন খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব জনগণের উপর ন্যাস্ত করে তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আবার রাসুল (সাঃ) এর গৃহীত অর্থ ব্যবস্থাটাই সমাজ তান্ত্রিক ব্যবস্থা। তবে মার্ক্সিয় দর্শনের সাথে এর বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। কারন মার্ক্সিয় সমাজতন্ত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়া হয় না, এটা মানবতা বিরোধী- যা সমাজের জন্য অনুপযোগী প্রমাণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে ইসলামি সমাজতন্ত্র পুর্নাংজ্ঞ ইনসাফ ভিত্তিক, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য নিরসনে ফলপ্রসূ, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অতিশয় উপযোগী, এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় না। বস্তুতঃ ইসলামি সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদের একটি সমন্বিতরূপ। যাই হউক আমরা রাসুল (সাঃ) এর গৃহীত পদ্ধতী পর্যালোচনা করব।
আমরা জানি রাসুল (সাঃ) আরবের শ্রেষ্ঠ ধনাঢ্য মহিলা খাদিজাকে (রাঃ) বিয়ে করে ছিলেন। তারপর নিজের ও হযরত খাদিজা থেকে প্রাপ্ত সকল সম্পদ মুস্তাদআফের মধ্যে দান করে দিয়েছিলেন, নিজের জন্য কিছুই রাখেননি। তিনি ধনীদের কাছ থেকে সম্পদ উসুল করে দরিদ্রের মাঝে বন্টন করে দিতেন। কখনো নিজের কাছে জমিয়ে রাখতেন না- যা আসত সাথে সাথে বন্টন করে দিতেন। বিভিন্ন হাদিসে দেখা যায় মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন উৎস থেকে বাইতুল মালে যে সম্পদ আসত রাসুল (সাঃ) সাথে সাথে তা বণ্টন করে দিতেন, নিজের ঘরে কিছুই জমা রাখতেন না।
যেমন আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, একদিন আসর নামাযের ইকামত হল, রাসূল (সাঃ) নামায শুরু না করে কাতার ছিঁড়ে- ফেড়ে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে গেলেন এবং সাথে সাথেই ফিরে এসে নামায পড়ালেন। নামাযের পর সাহাবাগণ এভাবে ছুটে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘কারন অন্য কিছু নয়। ঘরে একটা স্বর্ণের টুকরা আছে, নামায পড়ে ঘরে যেতে যেতে গোধুলি বেলা হয়ে যাবে, তখন হয়ত আর কোন সওয়ালি আসবে না। তাই ঘরে বলে এলাম কেউ আসলে যেন স্বর্ণের টুকরাটা দিয়ে দেয়। কারণ কোন সম্পদ নিয়ে রাত্রি যাপন করা আমি পসন্দ করি না’। এই ছিল মানব জাতির ত্রানকর্তার অর্থনৈতিক দর্শন। এখন আমরা দেখব, রাসুলের সম্পদ যা আসত সাথে সাথে দান করে দিতেন, তাহলে তিনি খাওয়া পরার জন্য কি ব্যবস্থা করতেন।
১। হজরত জাবের ও আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) জীবনে কোন দিন পেট ভরে তৃপ্তি সহকারে খেতে পান নাই।
২। মায়মুনা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) সাধারণত চাশতের সময় কিছু খাওয়ার জন্য স্ত্রীদের ঘরে আসতেন। কিছু পেলে খেতেন আর না পেলে বলতেন ‘আনা সায়েম- আমি রোযা রাখলাম।
৩। ওরওয়া বলেন, একদিন আমি হযরত আয়েশার (রাঃ) কাছে গেলাম। তিনি কথায় কথায় বললেন, ‘আমি খেতে পারি না’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন, খেতে পারেন না কেন? তিনি বললেন, ‘ঘরে যখন ভাল কোন কিছু রান্না হয় তখন আমি সব কিছু সামনে নিয়ে বসি, ভাবি আজ তৃপ্তি সহকারে খাব। কিন্তু যখন খেতে বসি তখন রাসূল (সাঃ) এর কষ্টের কথা মনে পড়ে যায়। তিনি দুনীয়াতে ছিলেন অথচ কোন দিন পেট ভরে খেতে পাননি। এমনও সময় গেছে তিনদিন চারদিন চলে গেছে উনুনে আগুন জ্বলেনি। তখন আমার কান্না আসে। আর বসে বসে কাঁদতেই থাকি কাঁদতেই থাকি, এক সময় খানা ফেলে উঠে চলে যাই, আর খাওয়া হয় না’। সুবহানাল্লাহ, আজ রাসুলের উম্মত আমরা কোথায় যাচ্ছি, রাসুলের কতটুকু অনুসরণ করছি।
যাই হউক রাসুল (সাঃ) এর গৃহীত পদ্ধতি দ্বারা ইসলামি সমাজতন্ত্র প্রমাণিত হয়। কারন তিনি কোন সম্পদ জমা করতেন না এবং অন্যদেরকে সম্পদ জমা করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। আর ধনীদের থেকে যাকাত, উশুর , খুমুশ ইত্যাদি ছাড়াও অর্থ সংগ্রহ করে দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করেছেন এবং যুদ্ধ ও দরিদ্র মুজাহিদদের জন্য ব্যয় করেছেন। যারা দরিদ্রের হক আদায় করে না তাদের জন্য জাহান্নামের সংবাদ দিয়ে গেছেন। ওফাতের সময় তার ঘরে কোন সম্পদ ছিল না।
খলিফাগণের গৃহীত ব্যবস্থাঃ
হযরত আবু বকর রাঃ- তিনি খলিফা হয়েই ঘোষণা দেন আমি ততক্ষন পযর্ন্ত ক্ষান্ত হব না যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেকের হক বুঝিয়ে দিতে পারি এবং মজলুমের হক আদায় করে দিতে পারি। এজন্যই দরিদ্রের হক নষ্টকারী, যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ পরিচালনা করেন। খেলাফতের প্রথম পর্যায়ে তিনি কোন ভাতা গ্রহণ করতেন না, কাপড়ের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বিভিন্ন দেশ জয় হওয়ার সাথে সাথে খেলাফতের ব্যস্ততা বেড়ে গেল, তখন সকলের পরামর্শে ব্যবসা বাদ দিয়ে সামান্য ভাতা গ্রহণ করেন। খলিফার স্ত্রী ভাতা থেকে অল্প অল্প করে পয়সা জমিয়ে মিঠাই কিনে আনার জন্য খলিফাকে টাঁকা দিলে তিনি তা বাইতুল মালে ফিরিয়ে দেন এবং ভাতা আরও কমিয়ে দেয়ার জন্য খাজাঞ্জিকে নির্দেশ দেন। মৃত্যুর সময় তার ঋণ ছিল। আর এসবই ইসলামি সমাজতন্ত্রের প্রমাণ।
হযরত উমর রাঃ - হযরত উমরের যুগে বিভিন্ন রাজ্য জয় হতে থাকে। বিশেষতঃ পারস্য সম্রাটরা মানুষের রক্ত শোষণ করে যে সম্পদের পাহাড় জমিয়ে ছিল তা মুসলমানদের মাঝে সমতার ভিত্তিতে সমহারে বণ্টন করা হয়। কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, কর্মচারি, এমনকি খলিফাও একরত্তি বেশি গ্রহণ করতেন না। এর প্রমাণ হচ্ছে লম্বা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে হযরত উমর খুৎবা দেয়ার সময় জনৈক সাহাবীর প্রশ্ন উত্থাপনের ঘটনা। যাই হউক খিলাফতের আর্থিক সঙ্গতি অর্জিত হওয়ার সাথে সাথেই হযরত উমর রাঃ ঘোষণা দিলেন ‘সুদুর ফোরাতের তীরেও যদি একটি ছাগল ছানা না খেয়ে মরে তবে আল্লাহ্র দরবারে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে’। তিনি রাত্রিতে ঘুরে ঘুরে প্রজাদের খোজ খবর নিতেন, নিজের পিঠে আটার বস্তা বহন করে দুঃখি-অভাবির ঘরে দিয়ে আসতেন। নিজের স্ত্রীকে নির্জন মরুতে আটকা পরা প্রসূতির দাঈ বা নার্স–এর কাজে নিয়োগ করেছেন, ইত্যাদি আরো অনেক ঘটনা। হযরত উমরের সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা এবং অন্যান্য মহৎ কাজ নিজেকে মহান ও অতুলনীয় করার জন্য করেননি বরং এটাই ইসলামের বিধান, খলিফার উপর আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এটাই মৌলিক দায়িত্ব। আর খলিফা হিসেবে হযরত উমর নিজের দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন মাত্র। মৃত্যুর সময় তার ঋণ ছিল।
হযরত উসমান রাঃ- হযরত উসমান (রাঃ) এর উপাধি ছিল ‘গনী’ অর্থাৎ বিত্তশালী। তিনি আরবের বিশিষ্ট ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু তার ওফাতের পর দেখা গেছে, একটি বাগান ব্যতিত তার সকল সম্পদ খেলাফতের পিছনে ব্যয় হয়ে গেছে। তার খিলাফতের শেষ পর্যায়ে, তার বার্ধক্য ও সরলতার সুযোগে উমাইয়্যারা খেলাফতের প্রকৃত ধারাকে পাল্টাতে থাকে। বিশেষতঃ হযরত আবু যর গিফারির সাথে বিতর্কের পর ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা পুঁজিবাদের দিকে রূপ নেয়।
হযরত আবু যরঃ- ইসলামের পঞ্চম মুসলিম রাসুলের অতীব প্রিয় সাহাবা আবু যর গিফারি হযরত উসমান রাঃ এর সময় দামেস্কে ছিলেন। সেখানে হযরত আমির মোয়াবিয়ার সাথে নিম্নোক্ত আয়াত নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয় -
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿التوبة: ٣٤﴾
আর যারা স্বর্ণ ও রূপা কানয (জমা) করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (৯: ৩৪)
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আবু যর বলেন সম্পদ জমা করা যাবে না, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দান করে দিতে হবে। হযরত আমির মোয়াবিয়া বলেন, এ আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাকাত। দ্বিতীয়তঃ এ আয়াত ইহুদী খৃস্টানের শানে নাযিল হয়েছে, এটা মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এ অবস্থায় হযরত মুয়াবিয়া রাঃ কেন্দ্রিয় খেলাফতের কাছে আবেদন জানালেন আবু যরকে মদিনায় ফিরিয়ে নেয়া হউক, সে দামেস্কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তখন হজরত উসমান তাকে ডেকে নিলেন। তারপর তিনি নির্জন মরু প্রান্তর রাবাযায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে গেলেন।
হযরত আলী রাঃ- খলিফা হওয়ার পর একদা হযরত আলী রাঃ কনকনে শীতের রাতে পাতলা পিনপিনে চাদর গায়ে দিয়ে থরথর করে কাঁপছেন। তখন লোকেরা জিজ্ঞেস করল, মোয়াবিয়া (রাঃ) এত আরাম আয়েশে জীবন কাটাচ্ছেন, আর আপনি বাইতুল মালে প্রচুর চাদর থাকতেও এত কষ্ট করছেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, বাইতুল মাল তো আমার সম্পদ নয়, সেটা জনগণের সম্পদ। আর আমি তো জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করতে পারি না। তা ছাড়া রাসুল (সাঃ) তো কখনো আমাকে এর চেয়ে ভাল চাদর দিতে পারেননি। এমন আরও অসংখ্য ঘটনা রয়েছে।
দ্বিতীয় উমরঃ- উমর বিন আব্দুল আজিজ এতটাই সৌখিন এবং বিলাসি ছিলেন যে, তিনি যখন রাস্তায় বের হতেন তখন রাস্তার দু’ধারে লোকেরা দরজা জানালা খুলে দাড়িয়ে থাকত তার ব্যবহৃত উচ্চ মুল্যের আতরের ঘ্রান পাওয়ার জন্য। তাকে যখন প্রথম খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের কথা বলা হল তখন তিনি অস্বীকার করে বললেন আমি কখনই উমাইয়্যাদের পাপের বোঝা বহন করব না। কিন্তু দামেস্কের মসজিদে জনসাধারণ যখন তাকে চাইল ও চাপ দিল তখন রাজি হলেন, সবাই তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করল।
বাইয়াত গ্রহণের পর তিনি নিজের এবং স্ত্রী ফাতেমার সকল সম্পত্তি বাইতুল মালে জমা দিলেন। সর্বশেষে তার স্ত্রীর কাছে বহু মূল্যবান একটা মতি ছিল- যা তার পিতা আব্দুল মালিক তাকে দিয়েছিলেন। তিনি স্ত্রীকে বললেন, হয়তো এই মতি বাইতুল মালে জমা দাও নয়তো আমাকে অনুমতি দাও যে, আমি তোমা থেকে পৃথক হয়ে যাই। কারণ এ মতি থাকা অবস্থায় তোমার সাথে একই ঘরে অবস্থান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন ফাতেমা মতি দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি পুঁজিবাদী উমাইয়্যা লোটেরাদের সকল সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে জনগণের মাঝে বণ্টন করে দিলেন। ফলে জনগণের এতটা আর্থিক সঙ্গতি এল যে, প্রদেশের পর প্রদেশ ঘুরেও যাকাত গ্রহন করার মত কোন দরিদ্র পাওয়া যেত না।
খলিফা সুলায়মানের অসিয়্যত অনুযায়ি উমর বিন আব্দুল আযিযের পর ইয়াযিদ বিন আব্দুল মালিক খলীফা হওয়ার কথা। কিন্তু ইয়াযিদ স্বীয় দুশ্চরিত্রতার কারণে আশংখা করতে লাগল উমর অন্য কোন যোগ্য ব্যক্তিকে পরবর্তি খলীফা নির্বাচন করবেন। তখন সে উমরের গোলামকে দশ দিনার দিয়ে তার খাদ্যে বিষ প্রয়োগ করায়। মৃত্যু শয্যায় শায়িত খলীফা টের পেয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে গোলামকে ডেকে এনে সেই দশ দিনার চেয়ে নিয়ে বললেন ‘জীবন বাচাতে চাইলে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যাও’। তারপর সেই দশ দিনার বাইতুল মালে জমা দিয়ে দেন। আহ, আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন এবং তার থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নেয়ার তাওফিক দান করুন। যাই হউক, রাসুল (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদার সম্পুর্ন জীবন চিত্রই এমন ছিল। সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনার সংক্ষেপে আলোচনা করা হল নিম্নোক্ত বিষয় গুলি প্রমাণ করার জন্য।
১।বর্তমানের আলেম সমাজ মনে করেন ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় যাকাত ব্যতিত অন্য কিছুর বিধান নেই। মুস্তাদআফের প্রয়োজনে উশর খুমুস এমনকি সমাজতন্ত্রের বিধান যে ইসলামের রয়েছে তা তারা জানেন না, এবং স্বীকারও করেন না। এখন আশা করি তাদের ভ্রম অপনোধন হবে।
২। আলেমগন মনে করেন, সম্পদের যাকাত আদায় করে পুজিবপাতিরা যত খুশি সম্পদ জমা করতে পারবে। তাদের আর কোন দায়িত্ব নাই। কিন্তু ইসলামি বিধান অনুসারে মুস্তাদআফের প্রয়োজনে আরো অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে।
৩। আলেম সমাজ আবু যর (রাঃ) এর সাম্যবাদি মতবাদকে ভুল আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করেন। অথচ তা রাসুল (সাঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদার গৃহীত ব্যবস্থার দ্বারা প্রমাণিত।
৪। দ্বিতীয় উমরসহ খোলাফায়ে রাশেদার গৃহীত ব্যবস্থাপনা দ্বারা প্রমাণ হয়েছে যে, প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের পোষ্য। খলিফা সক্ষমদের কর্ম সংস্থান করে দেবেন আর অক্ষমদের ভাতা দিয়ে প্রতিপালন করবেন।
৫। যারা মনে করে ইসলাম একটি সামস্ত তান্ত্রিক ব্যবস্থা তাদের ভুল অপনোদন হয়েছে আশা করি।
কল্যাণয়তাঃ খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রে স্বর্গীয় সুখ শান্তি বিরাজ করবে। তখন কোন বুভুক্ষু নিঃস্ব দিগম্বরের হাহাকার থাকবে না। সর্বত্র অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তখন কেউ অবৈধ উপার্জনের চিন্তাও করবে না। কারণ, প্রথমত তখন কোন অভাব অনটন থাকবে না, কাজেই কারো অবৈধ অর্থোপার্জনের প্রয়োজন পড়বে না, করলে বিপদে পড়বে। কারণ তখন তাকে শাস্তি পেতে হবে, আর তার অবৈধ অর্থ সরকার ফিরিয়ে নেবে। সুদ ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার অবসান ঘটবে।
দ্বিতীয়তঃ প্রত্যেক ব্যক্তি পৈত্রিক সুত্রে যা পায় এবং নিজের উপার্জনে তার জীবন স্বচ্ছন্দেই কেটে যায়। কিন্তু মানুষ সুদ খায়, অবৈধ অর্থোপার্জন করে, সম্পদ জমা করে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য। তার মৃত্যুর পর যেন সন্তানরা সুখে স্বচ্ছন্দে জীবন কাটাতে পারে- এই আশায়। কিন্তু খিলাফত প্রতিষ্ঠার পর মানুষ যখন দেখবে- ইয়াতিম, বিধবা, বয়োবৃদ্ধ ও অন্যান্য অক্ষমদের সরকার ভাতা দিয়ে প্রতিপালন করছে- তখন মানুষের মধ্যে অবৈধ অর্থোপার্জনের স্পৃহা কমে যাবে। ফলে সমাজ থেকে চুরি, ডাকাতি, সুদ, ঘোষ, দুর্নিতি, চোরাচালান, পাচার, সিণ্ডিকেট ইত্যাদি অপকর্ম আমনিতেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বিচার ব্যবস্থাঃ-
মুস্তাদআফের হক আদায়ের পড় ইসলাম ন্যায় বিচারের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানব রচিত আইনে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা করলে ঈমান থাকবে না। কারণ এটা ফরয, আর ইসলাম এ বিষয়ে সাতিশয় কঠোরতা আরোপ করেছে। যেমন কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
ۚوَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ [٥:٤ ]
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [٥:٤٧]
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٥:٤٥]
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ [٥:٥٠]
১। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারাই কাফের।
২। যারা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ি রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারাই ফাসেক।
৩। যারা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ি রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারাই জালেম।
৪। তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?
ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ্র বিধান অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা না করলে যালেম এ জন্য যে, তারা দরিদ্র ও মজলুমের উপর যুলুম করল। কারণ দরিদ্রের আর্থিক সাম্য ও মজলুমের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করল না, মানবাধিকার লঙ্ঘন করল। ফাসিক এজন্য যে, তারা নিঃস্ব সর্বহারা ও মজলুমের অধিকার আদায় না করে উল্টো মানব রচিত আইনে শোষণ ও যুলুম করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। কাফের এজন্য যে, তারা আল্লাহ্র বিধান প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা ফরয অন্যথায় পরকাল নষ্ট হবে। আর এ দায়িত্ব আলেম সমাজের।
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ [٢٤:٥١]
মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম।
وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُم مُّعْرِضُونَ [٢٤:٤٨]
তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে আহবান করা হয তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়।
(7) فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿النساء: ٦٥﴾
অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে। (৪: ৬৫)
) إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ وَلَا تَكُن لِّلْخَائِنِينَ خَصِيمًا ﴿النساء: ١٠٥﴾
নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না। (৪: ১০৫)
27) وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿البقرة: ١٨٨﴾
তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। (২: ১৮৮)
(36) إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿النور: ٥١﴾
মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম। (২৪: ৫১)
(40) أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُدْعَوْنَ إِلَىٰ كِتَابِ اللَّهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ وَهُم مُّعْرِضُونَ ﴿آلعمران: ٢٣﴾
আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহবান করা হয়েছিল যাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (৩: ২৩)
) قُلِ اللَّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِي مَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ﴿الزمر: ٤٦﴾
বলুন, হে আল্লাহ আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, আপনিই আপনার বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন, যে বিষয়ে তারা মত বিরোধ করত। (৩৯: ৪৬)
) أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا ﴿النساء: ٦٠﴾
আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে শয়তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। (৪: ৬০)
কাজেই মুসলিম জাতী আল্লাহ্র আইন অনুযায়ি বিচার ফয়সালা করতে বাধ্য, নচেৎ ঈমান থাকবে না। কিন্তু বর্তমানে ইংরেজ প্রবর্তিত যে গাজাখুরি বিচার ব্যবস্থা চলছে এটা নৃশংসতম প্রহসন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, মনুষ্যত্বের অবমাননা। কারন এতে মজলুম কোন ক্ষতিপূরণ তো পায়ই না এমনকি বিচারটা পর্যন্ত পায় না। পক্ষান্তরে ইসলামী বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত ইনসাফপূর্ণ, যুক্তিসঙ্গত ও মানবতার রক্ষাকবচ। সংক্ষেপের খাতিরে এখানে দুয়েকটা বিষয় তুলে ধরা হল।
ইসলামী আইনঃ
১। খুনের বিধানঃ খুন পাঁচ প্রকার। তন্মধ্যে এক প্রকার হল কতলে আমদ, অর্থাৎ খুনের উদ্দেশ্যে খুনের উপযোগী কোন অস্ত্র দ্বারা কাউকে হত্যা করলে এটাকে কতলে আমদ বা ইচ্ছাকৃত খুন বলে। এ জাতীয় খুনের ক্ষেত্রে কিসাস ও দিয়ত- দুটি বিধান দেয়া হয়েছে। দিয়ত অর্থ রক্ত মূল্য, এর পরিমাণ ১০০ উট। কিসাস অর্থ নিহতের পরিবার খুনের বদলায় খুন করে প্রতিশোধ নিতে পারবে। কিন্তু ইসলাম কিসাস জায়েয রাখলেও এটাতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, অবজ্ঞা করা হয়েছে। দলীল -
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنثَىٰ بِالْأُنثَىٰ فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ ذَٰلِكَ تَخْفِيفٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ فَمَنِ اعْتَدَىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴿البقرة: ١٧٨﴾
হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। (২: ১৭৮)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رُفِعَ إِلَيْهِ شَيْءٌ فِيهِ قِصَاصٌ، إِلَّا أَمَرَ فِيهِ بِالْعَفْوِ»
অর্থাৎ আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি দেখি নাই রাসুল (সাঃ) এর দরবারে কিসাস সংক্রান্ত কোন বিচার উপস্থাপিত হয়েছে আর তিনি ক্ষমার নির্দেশ দেন নাই। অর্থাৎ কিসাস ক্ষমা করে দিয়ত গ্রহনের নির্দেশ দিতেন।
খ) দিয়তঃ পাঁচ প্রকার খুনের মধ্যে বাকি চার প্রকারের জন্য দিয়ত বা রক্ত মূল্যের বিধান দেয়া হয়েছে। আর কতলে আমদেও দিয়তকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কাজেই আমরা সর্ব ক্ষেত্রে দিয়তের বিধান জারি করব। কিন্তু অপরাধ যদি একাধিক হয় যেমন ধর্ষণ করা হল, তারপর হত্যা করা হল, তারপর আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হল এসব ক্ষেত্রে কিসাস যুক্তিযুক্ত। আর বাকি সকল ক্ষেত্রে দিয়ত প্রযোজ্য হবে। আর দিয়তের পরিমান হছে ১০০ উট বা বিশ হাজার দিরহাম। যা বর্তমান বাজার মুল্যে প্রায় কোটি টাকার মত হবে। এ পদ্ধতি প্রয়োগ করলে দেশে খুন খারাবি কমে যাবে। কাজেই আমরা পারত পক্ষে কিসাসের অনুমতি দিব না, দিয়ত আদায় করে দিব।
২) ধর্ষণের বিধানঃ ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড । দলীল -
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى النَّيْسَابُورِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، عَنْ إِسْرَائِيلَ، حَدَّثَنَا سِمَاكُ بْنُ حَرْبٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ الْكِنْدِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ امْرَأَةً، خَرَجَتْ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تُرِيدُ الصَّلاَةَ فَتَلَقَّاهَا رَجُلٌ فَتَجَلَّلَهَا فَقَضَى حَاجَتَهُ مِنْهَا فَصَاحَتْ فَانْطَلَقَ وَمَرَّ عَلَيْهَا رَجُلٌ فَقَالَتْ إِنَّ ذَاكَ الرَّجُلَ فَعَلَ بِي كَذَا وَكَذَا . وَمَرَّتْ بِعِصَابَةٍ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ فَقَالَتْ إِنَّ ذَاكَ الرَّجُلَ فَعَلَ بِي كَذَا وَكَذَا . فَانْطَلَقُوا فَأَخَذُوا الرَّجُلَ الَّذِي ظَنَّتْ أَنَّهُ وَقَعَ عَلَيْهَا وَأَتَوْهَا فَقَالَتْ نَعَمْ هُوَ هَذَا . فَأَتَوْا بِهِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا أَمَرَ بِهِ لِيُرْجَمَ قَامَ صَاحِبُهَا الَّذِي وَقَعَ عَلَيْهَا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا صَاحِبُهَا . فَقَالَ لَهَا " اذْهَبِي فَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكِ " . وَقَالَ لِلرَّجُلِ قَوْلاً حَسَنًا وَقَالَ لِلرَّجُلِ الَّذِي وَقَعَ عَلَيْهَا " ارْجُمُوهُ " . وَقَالَ " لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا أَهْلُ الْمَدِينَةِ لَقُبِلَ مِنْهُمْ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيحٌ . وَعَلْقَمَةُ بْنُ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ سَمِعَ مِنْ أَبِيهِ وَهُوَ أَكْبَرُ مِنْ عَبْدِ الْجَبَّارِ بْنِ وَائِلٍ وَعَبْدُ الْجَبَّارِ بْنُ وَائِلٍ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ أَبِيهِ .
সহিহ আত্ তিরমিজি :: হাদ্দ বা দণ্ডবিধি অধ্যায়
অধ্যায় ১৭ :: হাদিস ১৪৫৪
মুহাম্মদ ইবন ইয়াহইয়া (র).................আলকামা ইবন ওয়াইল কিনদী তার পিতা ওয়াইল কিন্দী (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সময়ে জনৈকা মহিলা সালাতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছিল। পথে তাকে এক ব্যক্তি স্বীয় কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলে এবং তার প্রয়োজন পূরণ করে। মহিলাটি চিৎকার করলে লোকটি চলে যায়। এই সময় মহিলাটির পাশ দিয়ে আরেক ব্যক্তি যাচ্ছিল। মহিলাটি বলতে লাগল ‘এই পুরুষটিই তার সাথে এমন এমন করেছে। তখন একদল মুহাজির সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। মহিলাটি বলল, ‘এই লোকটিই আমার সঙ্গে এমন এমন করেছে। তখন তারা লোকটিকে ধরে নিয়ে এলে মহিলাটি বলল, এ-ই সেই লোক। তখন তারা এই লোকটিকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে এলেন। তিনি তাকে ‘রাজম’ এর নির্দেশ দিলেন। এই সময় যে লোকটি প্রকৃত পক্ষে উপগত হয়েছিল সেই লোকটি উঠে দাঁড়াল। বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আসলে আমি অপরাধী। রাসূলুল্লাহ ﷺ মহিলাটিকে বললেন, যাও, আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিয়েছেন। ধৃত পুরুষটি সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করলেন। আর প্রকৃত পক্ষে যে লোকটি উপগত হয়েছিল তাকে রাজম-এর নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, সে এমন তওবা করেছে যে, সমগ্র মদীনাবাসী যদি তা করে তবে তাদের তওবাও কবুল হয়ে যাবে।
ব্যাখ্যাঃ কিন্তু আমরা মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে কতলে আমদের উপর কিয়াস করে এ ক্ষেত্রেও দিয়তের বিধান প্রয়োগ করব। কারণ ধর্ষককে হত্যা করলে মেয়েটির তো কোন উপকার হচ্ছে না। কাজেই দিয়ত আদায় করে দিলে সে বেঁচে থাকার অবলম্বন পাবে। আবার অর্থের লোভে কোন ছেলে তাকে বিয়ে করতেও আগ্রহি হবে।
৩) অন্যান্য অঙ্গঃ অন্যান্য অঙ্গহানির ক্ষেত্রে কিসাস ও দিয়ত উভয়টার বিধান আছে। কিন্তু আমরা দিয়তের বিধান প্রয়োগ করব। যেমন চোখ নষ্ট করলে অর্ধেক দিয়ত তথা ৫০টি উট অথবা দশ হাজার দিরহাম। যেমন আমর বিন হাযম (গভর্নর) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) কর্তৃক তার নিকট প্রেরিত বিচার সম্বলিত পত্রে লিখিত ছিল, চোখের দিয়ত ৫০ উট।
عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ، قَالَ: «فِي كِتَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ وَفِي الْعَيْنِ خَمْسُونَ»
খ। পায়ের জন্য ৫০ উট। যেমন রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, পায়ের দিয়ত ৫০ উট।
ِنْ آلِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فِي الرِّجْلِ خَمْسُونَ»
গ। হাতের জন্য ৫০ উট। যেমন রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, হাতের দিয়ত ৫০ উট।
عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ، قَالَ: كَانَ فِي كِتَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ: «فِي الْيَدِ خَمْسُونَ»
ঘ। জিহ্বার জন্য পুর্ন দিয়ত মানে ১০০ উট। যেমন ইমাম যুহুরি বলেন রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, জিহ্বার দিয়ত পুর্ন অর্থাৎ ১০০ উট।
َنِ الزُّهْرِيِّ، رَفَعَهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فِي اللِّسَانِ إِذَا اسْتُؤْصِلَ الدِّيَةُ كَامِلَةً»
ঙ। কানের জন্য ৫০ উট। যেমন মোজাহিদ বলেন কানের দিয়ত ৫০ উট।
عَنْ مُجَاهِدٍ، أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: «فِي الْأُذُنِ إِذَا اسْتُؤْصِلَتْ خَمْسُونَ مِنَ الْإِبِلِ»
চ। দাতের জন্য ৫ উট। উমর বিন আব্দুল আযিয বলেন, দাতের দিয়ত ৫ উট অথবা সমপরিমাণ স্বর্ন- রৌপ্য বা তৎমুল্য।
عَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ، قَالَ: «فِي السِّنِّ خَمْسٌ مِنَ الْإِبِلِ أَوْ عَدْلُ ذَلِكَ مِنَ الذَّهَبِ أَوِ الْوَرِقِ»
ছ। আঙ্গুলের জন্য ১০ উট। যেমন রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, আঙ্গুলের দিয়ত ১০ উট।
عَنْ أَبِي مُوسَى، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَضَى فِي الْأَصَابِعِ بِعَشْرٍ مِنَ الْإِبِلِ»
ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত বিধানে মতভেদ আছে। তাই উলামা পরিষদ বা কেন্দ্রীয় খেলাফত যে সিদ্ধান্ত দিবে সেই মোতাবেক বিচার- ফয়সালা হবে।
পর্যালোনাঃ Bmjvgx AvBb m¤ú~Y© hyw³ m½Z Ges Bbmvd c~Y©| যেমন evস্তবZvq †`Lv hvq, †Kvb cwiev‡ii GKgvÎ DcvR©bkxj e¨w³wU Lyb nj| A_ev †Kvb †g‡q awl©Zv nj ev GwmW Avµvন্ত nj| ZLb gyRwigUv‡Zv gqgbwmsn †_‡K cvwj‡q PUªMÖvg e›`‡i wM‡q KvR K‡i Pj‡Z _vKj ev †bŠKv‡hv‡M mvMi cvo n‡q gvj‡qwkqv ev KjKvZvq wM‡q fvjB ‡ivRMvi K‡i ivRvi nvj‡Z Pjj| Zvi cwieviwUI wfKwUg cwiev‡ii `y`©kv †`‡L gyPwK †n‡m cvQv dzwj‡q Pj‡Z _vKj| c¶vন্তরে wbnZ e¨w³i cwieviwU DcvR©‡bi GKgvÎ Aej¤^b nvwi‡q wf¶vi Szjv wb‡q c‡_ bvgj, Z`ycwi _vbv-cywjk I gvgjvq UvKv w`‡Z w`‡Z RxebUv g„Zy¨i †P‡qI wewfwlKvgq n‡q DVj| Avevi wfKwUg ‡g‡qwU‡K wb‡q Zvi cwievi wPwKrmvi UvKvi Rb¨ †`Šov‡`Šwo শুরু Kij| Rwg-evwo wewµ K‡i nq‡Zv ev wPwKrmvi GKUv MwZ nj wKš‘ †g‡qwUi Rxe‡b †Kvb MwZ (weevn) n‡e bv|
GLb cwievi¸wj hw` UvKv Xv‡j Zvn‡j nqZ ev `yB hyM c‡i wKQzUv wePvi †c‡j †c‡ZI cv‡i A_ev bvI †c‡Z cv‡i| Avi wePvi †c‡jই ev jvf wK Zv‡`i ¶wZ †Zv Avi KvwU‡q DV‡e bv| Kv‡RB eySv †Mj cÖPwjZ `v¾v‡ji AvB‡b hvwjg‡K me©gq my‡hvM-myweav †`qv nq| Avi †ePviv gRjyg †gwK mf¨Zvi fvMv‡o c‡o †av‡K †av‡K, wZ‡j wZ‡j wbt‡kl n‡q hvয়| Kvib cÖ‡Z¨KwU ধর্ষিতা †g‡q Zvi cwiev‡i Rxeন্ত Awfkvc iƒ‡c Ae¯’vb করে| GUv gvbeZvi বিরুদ্ধে Aciva| GUv বিচারের নামে প্রহসন, এটা সভ্যতার Avei‡b b„ksm ee©iZvi Dj½ b„Z¨, GUv gbyl¨‡Z¡i civRq| GLv‡b wePv‡ii evbx Kvu‡` bxi‡e wbf„‡Z¡| AvR Bmjvgx AvBb Pvjy _vK‡j wbnZ e¨w³i cwieviwU gyRwi‡gi m¤úwË Øviv RxweKv wbev©n Ki‡Z cviZ| †g‡qwUi wPwKrmv nZ, m‡ev©cwi †mB m¤úwË †g‡qwUi Aej¤^b nZ, nqZ UvKvi †jv‡f †Kvb †Q‡j Zv‡K we‡q KiZ| Gfv‡e cwievi ¸wj‡K evuPv‡bv †hZ, hw` Bmjvgx AvBb cÖwZwôZ _vKZ|
তখন একজন কলেজ শিক্ষক দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, আপনি তো শুধু ইসলামের চমকপ্রদ বিধান গুলি বর্ননা করলেন কিন্তু সাতিশয় নিষ্ঠুর ও জঘন্য বিধান- খুনের বদলায় খুন, যিনার শাস্তি পাথর মেরে হত্যা, হিল্লা বিয়ে ও চোরের হাত কাটা সম্পর্কে কিছুই বললেন না, নাকি লোকুচুরি করছেন? মোজাহিদ হাসল, এখানে ঠিক এখানেই কথাটা। হায় ইসলামের এত সুন্দর বিধান গুলি দাজ্জাল কত নিকৃষ্ট ভাবেই না উপস্থাপন করেছে, মানুষকে ইসলামের প্রতি বিতশ্রদ্ধ করে তুলেছে। অথচ আলেম সমাজ দাজ্জালের ঐ গোয়বলসিয় অপপ্রচার প্রতিরোধ তো করতে পারেইনি, এমনকি এই বিধানগুলির সঠিক ব্যাখ্যাও জনগণের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়নি।
এর কারণ আসলে তারা নিজেরাই জানে না। কারণ কওমি ও আলিয়া মাদরাসার সিলেবাসগুলি এত দায়সারা ভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যে, সেখানে ছাত্ররা ইসলামী অর্থ, রাষ্ট্র ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানার সুযোগ পায় না। এজন্যই এসব মাদরাসা থেকে যেসব ছাত্র আলেম হয়ে বেরিয়ে আসে তাদেরকে যদি ইসলামী অর্থ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তাহলে কিছুই বলতে পারবে না। আর যদি বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তাহলে দাজ্জালের প্রচারিত ঐ কথাগুলিই বলবে, অর্থাৎ চোরের হাত কাট, যিনাকারিকে পাথর মার ইত্যাদি। অথচ এ বিধানগুলি কত যুক্রিযুক্ত ও মানবিক- তা তারা নিজেরাই জানে না। আমি সংক্ষেপে এর ব্যাখ্যা দিচ্ছি। পূর্বে কিসাসের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, এখানে বাকি গুলি তুলে ধরলাম।
যিনার শাস্তিঃ যিনাকারি যদি কুমার কুমারী হয় তাহলে তাদের শাস্তি হল, জঘন্য কাজের জন্য হালকা শারীরিক শাস্তি- যেমন বেত্রাঘাত করা হবে। তারপর উভয়ের মধ্যে সমতা থাকলে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হবে। আর যদি বিবাহিত নর নারী হয় তাহলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আর এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের শর্ত হল তিন জন পুরুষ অথবা ছয়জন মহিলা চাক্ষুস স্বচক্ষে দেখতে হবে যে, কোয়ার মধ্যে বালতি উঠানামা করতেছে। তারা যদি এরুপ না দেখে শুধু শায়িত অবস্থায় দেখল বা জড়াজড়ি অবস্থায় দেখল, তাহলে এই বিচার কার্যকর করা যাবে না, অন্য লঘুদণ্ড হতে পারে। কাজেই বুঝা যাচ্ছে, এই কঠিন শর্তের মাধ্যমে কোন দিনই অন্তত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না। ইসলামের গোড়া থেকেই এ বিধান চলে আসছে। এই বিধান নুহ (আঃ) এর পরবর্তি থেকে নিয়ে মুসা (আঃ) ঈসা (আঃ) হয়ে মুহাম্মদি শরীয়তেও বহাল রাখা হয়েছে। আসলে এই বিধানের মাধ্যমে যিনার মত জঘন্য ও গর্হিত কাজ সম্পর্কে মানুষের মধ্য ভিতি ছড়িয়ে তা থেকে দূরে রাখাই মুল উদ্দেশ্য।
বিবেচ্য বিষয়ঃ দেশের বাস্তবতায় দেখা যায়, আনুমানিক শতকরা ৯০ নারী সতি- কোন পুরুষ তাদের গায়ে হাত দিতে পারেনি। কিন্তু শতকরা ৭০ পুরুষ অসৎ চরিত্রহীন। পুরুষ যত ভাল মানুষই হউক জীবনের কোন না কোন অংশে নারীর গায়ে সে হাত দিয়েছে। আরো বাস্তবতা হল, পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে স্ত্রী ব্যভিচারিনী বা পরকিয়া করলে স্বামী তাকে বাঁচিয়ে রাখে না। কিন্তু স্বামী একটা না একশটা করলেও তাকে কেউ কিছু বলার নেই। দাজ্জালের বিধান ও মানব রচিত আইন এটাকে বৈধ করে দিয়েছে। অথচ ইসলামের বিধান কত ইনসাফপূর্ণ। নারী হউক পুরুষ হউক অন্যায় করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে, তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। কাজেই এই আইন নারীর জন্য রক্ষাকবচ, তাদের সমানাধিকারের দলীল। কিন্তু আমাদের মুসলিম মেয়েরা যখন দাজ্জালের শিখানো বুলি আওড়ায়, সমানাধিকার চাই সম অধিকার চাই, তখন হাসি পায়। কারণ ইসলামই একমাত্র নারীর রক্ষা কবচ, ইসলাম নারীর যে অধিকার দিয়েছে পৃথিবীর কোন ধর্ম কোন মতবাদ এর ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি। অথচ আমাদের মেয়েরা ইসলাম বাদ দিয়ে তাদের বুলি আওড়ায়- যারা তাদেরকে ভোগের পন্য বানিয়েছে। যে দাজ্জাল তাদেরকে একেবারে বাজারি পন্য বানিয়ে ছেড়েছে তারা সেই দাজ্জালকে প্রভু মানে। হায় সেলুকাস।
হিল্লা বিয়েঃ ইসলামের বিধান মতে স্ত্রী দুটি কাজে বাধ্য, বিছানায় স্বামিকে সঙ্গদান ও আড়াই বছর পর্যন্ত সন্তান লালন পালন। এর বাইরে সংসারি কোন কাজের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করা যাবে না। যেটুকু করে সেটা তার অনুগ্রহ। কিন্তু সে যদি শরীয়ত বহির্ভুত কাজ করে, যেমন নামায রোযা আদায় না করা, বেপর্দায় চলা, ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়া ইত্যাদি নাজায়েয কাজ করলে সুরা নিসায় উল্লেখিত আয়াতের বিধান অনুসারে তাকে সাধ্যমত বুঝাতে হবে। যদি বুঝ না মানে তাহলে দেহের নিম্নাংশে লঘু প্রহার করতে পারবে, তবে মুখে বা উর্ধ্বাংশে মারতে পারবে না। তাতে সংশোধন না হলে বিছানা পৃথক করে দিতে হবে। এতেও ঠিক না হলে সতর্ক বার্তা হিসাবে এক তালাক দিবে। তাতেও যদি সংশোধন না হয় তাহলে আরেক তালাক দিবে।
এরপরেও সংশোধন না হলে বুঝা গেল সে আর ইহজীবনে সংশোধন হবে না। আর এমন স্ত্রী নিয়ে ঘর করা মানে ইহকালে পরকালে জাহান্নামে নিজের আবাস গড়ে তোলা। অগত্যা তাকে তিন তালাকে বায়েন দিয়ে বিদায় করে দিতে হবে। এরপর স্ত্রী লোকটির অন্য পুরুষের সাথে বিয়ের পর সে যদি নিজের ভুল বুঝতে পারে, আগের স্বামিকেই সে ভালবাসে, তার জন্য মন কাঁদে, আবার তার ঘরেই ফিরে যেতে চায়। তখন ইসলাম এই মহিলাটির উপর যথার্থ অনুগ্রহ করেছে। দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রথম স্বামীর ঘরে যাবার অনুমতি দিয়েছে। এটাই হল হিল্লা বিয়ে। কাজেই বুঝা যাচ্ছে, ইসলামের এত সুন্দর এত অনুগ্রহের একটা সুন্দর বিধানকে অপপ্রচার করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর কিছু অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী মোল্লা মুন্সি সেই অপপ্রচারে ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে। কাজেই হিল্লা বিয়ের ব্যাপারে শরিয়া বোর্ড যা সিদ্ধান্ত দিবে সে অনুযায়ি কাজ হবে।
চোরের হাত কাটাঃ চোরের হাত কাটার শর্ত হল- ১। চোরাইকৃত মাল এক চতুর্থাংশ দিনার বা চার দিরহাম হতে হবে। যা বর্তমান বাজার অনুযায়ি সম্ভবত পঞ্চাশ হাজারের কম হবে না। ২। অভাবের তাড়নায় চুরি করলে তার হাত তো কাটা যাবেই না বরং বাইতুল মাল থেকে তার ভাতা জারি করে দিতে হবে। ইসলামী শাসনামলের এমন হাজার হাজার দৃষ্টান্ত আছে। যেমন খলীফা হারুনুর রসীদ এক অসহায় অভাবি মহিলা চোরের বিচার করলেন। খলিফার উদাসিনতার জন্য বেত্রাঘাত তিনি নিজে গ্রহণ করলেন আর মহিলা ও তার পরিবারের জন্য ভাতা জারি করলেন। দানবীর হাজি মহসিন নিজে খাদ্য বহন করে চোরের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
কাজেই বুঝা গেল, চোরের হস্ত কর্তন বিধান কার্যকর করা হলে গ্রামের আতরা- পাতরা চোর, ধান চাল ও গরু চোরের কখনোই হাত কাটা যাবে না। কিন্তু যারা ক্ষমতার চেয়ারে বসে বসে দেশের সম্পদ লুট পাট করে মোঘল হেরেম বানায়, বাইরে পাচার করে, এদের কারো হাত আস্ত থাকবে না। এজন্যই এরা এ বিধানটাকে এত ভয় পায়। যাই হউক উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা গেল ইসলামের অতিসুন্দর বিধানগুলি অপপ্রচার করে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারনার জন্ম দেয়া হয়েছে। কাজেই আমরাও দাজ্জালকে বলতে চাই ‘কামা তাদিনু তুদানু’ যেমন কর্ম তেমন ফল। অর্থাৎ এ বিধানগুলি আমরা বাস্তবায়ন করব না। পঞ্চাশ সালা পরিকল্পনার আওতায় ঝুলে থাকবে। জনগন কখনো চাইলে বাস্তবায়িত হবে, না চাইলে হবে না।
বিচার পদ্ধতিঃ
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষে আমরা ইউনিয়ন ভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে জুরি বোর্ড গঠন করব।প্রত্যেক ওয়ার্ডের মেম্বার, প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, প্রধান মসজিদের ইমাম, প্রধান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পুরোহিত- এ চারজন মিলে ওয়ার্ডের জুরী বোর্ড গঠিত হবে। একইভাবে ইউ পি চেয়ারম্যান, প্রধান প্রতিষ্ঠান প্রধান, প্রধান মসজিদের ইমাম ও প্রধান পুরোহিত এ চারজন মিলে ইউপি জুরী বোর্ড গঠিত হবে। তারপর উপজেলায় কাজী বা বিচারপতি থাকবে, জেলায় থাকবে, সুপ্রিম কোর্ডে প্রধান কাজী/বিচারপতি থাকবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থার সুবিধা এই যে, জুরী বোর্ড অকুস্থলে উপস্থিত হয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে বাদী- বিবাদীর সামনে, চাক্ষুস সাক্ষ্য- প্রমাণের ভিত্তিতে চার জন পরামর্শ করে একমত হয়ে বিচার ফয়সালা করবেন বা রায় দেবেন।
বিচারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় খিলাফত বা দেশীয় শরিয়া বোর্ড যে আইন প্রণয়ন করবে- তা অনুসরণ করতে হবে। যেমন হাস-মুরগী বা গরু ছাগল মেরে ফেললে বা ফল ফসলের ক্ষতি করলে বা অন্য কোন ক্ষতি করলে এর জরিমানা বা ক্ষতিপুরন আদায় করে দেয়া, রক্তপাতহিন আঘাতের জন্য ক্ষতিপূরণ বা বেত্রাঘাত ইত্যাদি ছোট খাটো বিষয়গুলি বিচারের দায়িত্ব থাকবে জুরী বোর্ডের উপর। কিন্তু খুন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, পাচার ইত্যাদির বিচার হবে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে। তবে সেসব ক্ষেত্রে ওয়ার্ড ও ইউপি জুরী বোর্ডের দায়িত্ব থাকবে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে প্রত্যক্ষ সাক্ষিদের জবান বন্দী রেকর্ড করে বিচারকদের কাছে পাঠিয়ে দিবেন। অর্থাৎ সাজাযোগ্য ক্রাইমগুলির বিচার হবে বিচারালয়ে। ওয়ার্ডের বিচারে যদি কেউ সন্তুষ্ট না হয় তাহলে নারাজি দিয়ে ইউপি তে যাবে। সেখানেও সন্তুষ্ট না হলে নারাজি দিয়ে থানা বা জেলায় এমনকি হাইকোর্ট পর্যন্ত যেতে পারবে। এ ব্যবস্থার প্রবর্তন করলে আশা করা যায় পুর্নাংগ ইনসাফ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। কারন -
১। বিচারকরা যখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাদী- বিবাদী ও প্রত্যক্ষ সাক্ষিদের জবানবন্দী শুনে গ্রামবাসীদের সামনে বিচার ফয়সালা করবে তখন ভুলের সম্ভবনা খুব কম থাকবে।
২। বিচারক চারজন হওয়া ন্যায় বিচারের অনুকুল। কারন তারা তর্ক-বিতর্ক ও পরস্পর বুঝা পড়ার মাধ্যমে রায় দিবে বিধায় ভুলের সম্ভাবনা কম থাকবে। তাছাড়া রাজনীতিবিনরা দুর্নীতি করলেও শিক্ষক, ইমাম, পুরুহিত এ জাতীয় লোকেরা সাধারণত দুর্নীতি করে না। আর যদি করেও বা পক্ষপাতিত্ব করে বা ঘুষ খায় তাহলে তার চাকরি চলে যাবে এবং সাজার যোগ্য হবে। সবাই তাদের ঘৃণা করবে।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন