সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- 25

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৫:৫৭:২৯ বিকাল

খিলাফত সংক্রান্ত প্রাথমিক আলোচনা

সন্ধ্যার পর আবার অধিবেশন শুরু হল। হাসান মুসান্না কিছুক্ষণ পায়চারি করলেন। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলা শুরু করলেন, ‘গত অধিবেশনে সবাই ফিরকাবাজদের মৃত্যুদণ্ড দাবী করেছিলেন এবং কোরান হাদীস দ্বারা তা প্রমাণও হয়েছিলে। কিন্তু প্রশ্ন হল, তারা শ্রদ্ধেয় আলেম, আমাদের উস্তাদ ও মুরুব্বি, সমগ্র জাতিকে তারাই ইসলাম শিক্ষা দিচ্ছেন, ইসলামের দিকে টেনে ধরে রাখছেন, ইসলামের প্রচার প্রসার করছেন, ইসলামের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছেন। এক কথায় আমরা পৃথিবীতে ইসলামের যে আলো দেখছি এসবই আলেম সমাজের অবদান। তাহলে কেন আমরা এ মহান ব্যক্তিদের নিয়ে টানা হেঁচড়া করছি। এর উত্তর হল, তারা মহান, তারা ফেরেস্তার মত পবিত্র, তারা আমাদের প্রাতঃস্বরনীয় সবই ঠিক আছে কিন্তু তাদের একটি মাত্র ভুল। এই একটা ভুল তাদের সকল সফলতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে দিয়েছে, তাদের আমল বরবাদ করে দিয়েছে, তাদেরকে মনুষ্যত্বের স্তর থেকে পশুত্বের স্তরে নামিয়ে দিয়েছে, জান্নাতের দরজা থেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে তারা অভিশপ্ত হয়ে গেছে যেভাবে শয়তান একটি ভুলের কারণে অভিশপ্ত হয়েছিল।

তাদের এই একটি মাত্র ভুলের কারণে আজ ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে উপনিত হয়েছে। আর সেই ভুলটির নাম ফিরকাবাজি।এই ফিরকাবাজির কারণে তারা মৃত্যুদণ্ডের হকদার হয়ে থাকল কিন্তু আগেই এর ঘোষণা দেয়া হবে না। তাদের সামনে এমন একটি লাভ তুলে ধরা হবে যা তাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণকর, ইসলাম ও উম্মাহর জন্য কল্যাণকর, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবতার জন্য কল্যাণকর। আর সেই মহাকল্যানকর বিষয়টি হল খিলাফত। কিন্তু ঐক্য ব্যতীত খিলাফত প্রতিষ্ঠা কখনোও কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কাজেই আমরা খিলাফত ইশতিহার ঘোষণা করে তাদেরকে তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যের পথে তিনবার আহ্বান জানাব। যারা আসবে না বা ঐক্যের পথে অন্তরায় হবে তাদের ধ্বংসের রায় দেয়া হবে।

একজন প্রফেসর দাঁড়িয়ে বললেন ‘শ্রদ্ধেয় ইমাম, আমার তিনটি প্রশ্ন।

১। খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হতে হবে কেন, আরব কান্ট্রিগুলি আছে, পাকাফগান আছে, ইন্দোনেশিয়া - মালয়েশিয়া আছে, ওরা করুক আমরা পরে তাদের সাথে যোগ দিব।

২। খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আলেমদের পিছু নেব কেন, ঐক্যের পথে তাদেরকে জোর পূর্বক ঢেঁকি গেলাব কেন? তারচেয়ে রাজা ও রাজনীতিবিদদের কাছে দাবী করে, আন্দোলন করে বা চাপ দিয়েও তো খিলাফত প্রতিষ্ঠা করিয়ে নিতে পারি।

৩। এটা কোন খেলাফত, তালেবানি আর আইসিস মার্কা খিলাফত হলে আপনাকেও সালাম আপনার খেলাফতকে ও সালাম। তখন আমি আর আপনাদের সাথে তো নেইই বরং আপনাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামব।

হাসান মুসান্না বললেন, অত্যন্ত মূল্যবান প্রশ্ন। আপনার এক নং প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- রাসূল (সাঃ) শেষ যমানায়, ফিৎনার যুগে ইসলামী বিপ্লবের একটা ভবিষ্যৎ বাণী করে গেছেন। তিনি আরব জগত বা আফ্রিকার কোন দেশের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেননি বরং আমাদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। যেমন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: «يَخْرُجُ مِنْ خُرَاسَانَ رَايَاتٌ سُودٌ، لَا يَرُدُّهَا شَيْءٌ حَتَّى تُنْصَبَ بِإِيلِيَاءَ»

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, খুরাসান থেকে কালো পতাকাধারী মোজাহিদ দল বের হবে, কোন শক্তিই তাদেরকে রুখতে পারবে না। অবশেষে তারা এসে ফিলিস্তিনে পতাকা স্থাপন করবে।

عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا رَأَيْتُمُ الرَّايَاتِ السُّودَ قَدْ جَاءَتْ مِنْ قِبَلِ خُرَاسَانَ، فَأْتُوهَا؛ فَإِنَّ فِيهَا خَلِيفَةَ اللَّهِ الْمَهْدِيَّ»

হযরত ছওবান থেকে বর্নিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যখন তোমরা খোরাসান থেকে আবির্ভুত কালো পতাকাধারী জামাত দেখবে তখন তাদের সাথে যোগ দিবে। কারণ তাদের মধ্যেই থাকবেন আল্লাহ্‌র খলীফা মাহদী (আঃ) । (তিরমিযি)

ব্যাখ্যাঃ হাদিসে খোরাসানের বাহিনি বলতে শুধু খোরাসান উদ্দেশ্য নয় বরং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সমগ্র এলাকা উদ্দেশ্য। আর তা হল উজবেকিস্থান- আফগান থেকে নিয়ে আরাকান পর্যন্ত। এতদাঞ্চলের সব এলাকার নাম রাসুলের জানা ছিল না বিধায় রুপকভাবে শুধু খোরাসানের নাম উল্লেখ করেছেন। এখানে আশার কথা হল, রাসুল (সাঃ) এর ভবিষ্যৎবানী অনুযায়ি বুঝা যায়, এ অঞ্চল আখেরী যমানায় ইসলামি বিল্পব ঘটাবে।আল্লাহ্‌ তাদের হাতে ইসলামের বিজয় দান করবেন। তারা ঈমাম মাহদীর সাথে যোগ দেবে এবং দাজ্জাল (ইহুদি- খৃষ্টান) ধ্বংস করবে।

(وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ) : بِفَتْحٍ فَضَمٍّ (قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: لَنْ يَبْرَحَ) : أَيْ لَا يَزَالُ (هَذَا الدِّينُ قَائِمًا يُقَاتِلُ) : بِالتَّذْكِيرِ وَيَجُوزُ تَأْنِيثُهُ ; أَيْ يُجَاهِدُ (عَلَيْهِ) : أَيْ عَلَى الدِّينِ (عِصَابَةٌ) : بِكَسْرِ أَوَّلِهِ ; أَيْ جَمَاعَةٌ (مِنَ الْمُسْلِمِينَ) : وَالْمَعْنَى لَا يَخْلُو وَجْهُ الْأَرْضِ مِنَ الْجِهَادِ إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي نَاحِيَةٍ يَكُونُ فِي نَاحِيَةٍ أُخْرَى (حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ) : يَقْرُبَ قِيَامُهَا. قَالَ الطِّيبِيُّ: جُمْلَةُ يُقَاتِلُ مُسْتَأْنَفَةٌ بَيَانٌ لِلْجُمْلَةِ الْأُولَى، وَعَدَّاهُ بِعَلَى لِتَضْمِينِهِ مَعْنَى يُظَاهِرُ ; أَيْ يُظَاهِرُونَ بِالْمُقَاتَلَةِ عَلَى أَعْدَاءِ الدِّينِ يَعْنِي: إِنَّ هَذَا الدِّينَ لَمْ يَزَلْ قَائِمًا بِسَبَبِ مُقَاتَلَةِ هَذِهِ الطَّائِفَةِ، وَمَا أَظُنُّ هَذِهِ الْعِصَابَةَ إِلَّا الْفِئَةَ الْمَنْصُورَةَ بِالشَّامِ، وَفِي نُسَخِهٍ زِيَادَةُ بِالْمَغْرِبِ قُلْتُ: وَالْأَغْلَبُ فِي هَذَا الزَّمَانِ بِالرُّومِ نَصَرَهُمُ اللَّهُ وَخَذَلَ أَعْدَاءَهُمْ. قَالَ النَّوَوِيُّ: وَرَدَ فِي الْحَدِيثِ لَا يَزَالُ أَهْلُ الْغَرْبِ ظَاهِرِينَ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ. قِيلَ: هُمْ أَهْلُ الشَّامِ وَمَا وَرَاءَ ذَلِكَ. قُلْتُ: فِيهِ بَحَثٌ فَإِنَّ أَهْلَ الْمَغْرِبِ ; أَيْضًا وَغَيْرَهُمْ يُحَارِبُونَ الْكُفَّارَ ; أَيَّدَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى. فَالتَّحْقِيقُ أَنَّ الْمُرَادَ بِالطَّائِفَةِ الْجَمَاعَةُ الْمُجَاهِدَةُ لَا عَلَى التَّعْيِينِ، فَإِنَّ فِيمَا وَرَاءَ النَّهْرِ ; أَيْضًا طَائِفَةٌ يُقَاتِلُونَ الْكَفَرَةَ قَوَّاهُمُ اللَّهُ تَعَالَى، وَجَزَى الْمُجَاهِدِينَ عَنَّا خَيْرًا حَيْثُ قَامُوا بِفَرْضِ الْكِفَايَةِ وَأُعْطُوا التَّوْفِيقَ وَالْعِنَايَةَ. قَالَ النَّوَوِيُّ: وَفِيهِ مُعْجِزَةٌ ظَاهِرَةٌ فَإِنَّ هَذَا الْوَصْفَ لَمْ يَزَلْ بِحَمْدِ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ زَمَنِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - إِلَى الْآنَ، وَلَا يَزَالُ حَتَّى أَمْرِ اللَّهِ تَعَالَى اه. وَهُوَ لَا يُنَافِي أَنْ يَكُونَ خَبَرًا مَعْنَاهُ الْأَمْرُ، كَقَوْلِهِ تَعَالَى: {إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ} [الحجر: 9] فَإِنَّا مَأْمُورُونَ وُجُوبًا أَنْ نَحْفَظَ الْقُرْآنَ بِالْقِرَاءَاتِ الْمُتَوَاتِرَةِ عَلَى سَبِيلِ الْكِفَايَةِ. (رَوَاهُ مُسْلِمٌ) : كَذَا أَبُو دَاوُدَ، وَفِي مَعْنَاهُ حَدِيثُ: " «لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ ظَاهِرُونَ» ". رَوَاهُ الشَّيْخَانِ عَنِ الْمُغِيرَةِ، وَحَدِيثُ: " «لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي قَوَّامَةً عَلَى أَمْرِ اللَّهِ، لَا يَضُرُّهَا مَنْ خَالَفَهَا» ". رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ. وَحَدِيثُ: " «لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ» ". رَوَاهُ الْحَاكِمُ عَنْ عُمَرَ، نَعَمْ هَذِهِ الْأَحَادِيثُ شَامِلَةٌ لِلْعُلَمَاءِ أَيْضًا حَتَّى قِيلَ: الْمُرَادُ بِهِمْ عُلَمَاءُ الْحَدِيثِ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ عَنْ

ر২। প্রান্তিক কৃষকের দেশঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-

، عَنْ هِلَالِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: سَمِعْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ وَرَاءِ النَّهْرِ يُقَالُ لَهُ الْحَارِثُ بْنُ حَرَّاثٍ، عَلَى مُقَدِّمَتِهِ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ: مَنْصُورٌ، يُوَطِّئُ - أَوْ يُمَكِّنُ - لِآلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا مَكَّنَتْ قُرَيْشٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَجَبَ عَلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ نَصْرُهُ " أَوْ قَالَ: «إِجَابَتُهُ»

হেলাল বিন আমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, ট্রান্স অক্সিয়ানা থেকে এক ব্যক্তি বাহিনী নিয়ে বের হবে, তার নাম হবে হারেস বিন হাররাছ অর্থাৎ কৃষকের পুত্র কৃষক। তার বাহিনির অগ্রভাগে থাকবে মনসুর নামক ব্যক্তি। সে মুহাম্মদ (সাঃ) এর আহলে বাইতকে প্রতিষ্ঠিত করবে যেভাবে কুরাইশরা রাসূল (সাঃ) কে সহযোগিতা করেছিল। প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব ঐ ব্যক্তিকে সাহায্য করা বা তার আহ্বানে সাড়া দেয়া। (আবু দাউদ)

ব্যাখ্যাঃ হাদিসের মাউরাউন্নাহার বলতে শুধু আমু দরিয়া বা ট্রান্স অক্সিয়ানা বা তৎপার্শ্ববর্তি অঞ্চলকেই বুঝানো হয়নি। বরং এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে নহর বা নদীর পেছনের সম্পূর্ণ ভুখন্ড। আর সেই ভু-খণ্ডটি হল আফগান থেকে আরাকান পর্যন্ত। কারণ আফগান টু আরাকান একক একটা ভূখণ্ড। কাজেই আন্দোলনটা শুরু হতে হবে এই বাংলা থেকে। বঙ্গসাগরের তীরে যে ঢেউ উঠবে যতক্ষণ কাবেরির তরঙ্গমালার সাথে একাকার না হবে ততক্ষণ ইসলামের বিজয় হবে না। যখন এই ভূখণ্ডে ইসলামী দল ও আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে তখনি খেলাফত প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। আর তখন সমগ্র মুসলিম বিশ্বে কারো প্রচেষ্টা ব্যতীত এমনিতেই খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

আবার হাদিসের হারেছুল হাররাছ অর্থ সম্পূর্ণ কৃষিজীবি, একেবারে প্রান্তিক কৃষক, কৃষি নির্ভর দেশ। আমরা ছোট সময় প্রাইমারির সমাজ বিজ্ঞানে পড়েছি এদেশের ৯৫% মানুষ কৃষির সাথে জড়িত। যদিও এখন শিল্প বিপ্লব ও বিদেশে শ্রমের বদৌলতে কিছুটা হেরফের হয়েছে কিন্তু মুল জনসংখ্যা এখনো কৃষি নির্ভর। কাজেই এ বাংলাদেশ থেকে সর্বাগ্রে খিলাফতের আন্দোলন শুরু করতে হবে। এটাই রাসুল (সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণী।

৩। মীর জাফরের বংশধরঃ এক মীর জাফরের গাদ্দারির কারণে সমগ্র মুসলিম জাহানকে আজো মাসুল দিয়ে যেতে হচ্ছে। কারণ মীর জাফরের গাদ্দারির বদৌলতে ইংরেজরা বাংলার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের মাধ্যমে সমগ্র ভারত বর্ষে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায়। তারপর উপমহাদেশ শোষণের টাকায় তারা কুয়েতে ইন্ডিয়ান অফিস নামে একটা কার্যালয় খোলে। তখন আরব বিশ্বে হাত দেয়ার পথে তাদের সামনে হিমালয় সমান বাধা ছিল উসমানী খেলাফত। পদ্ধতি তাদের জানা ছিল বিধায় তারা মীর জাফরের মত আরেকটা গাদ্দার খুঁজতে লাগল আর পেয়েও গেল। শরীফ হুসাইন নামের আরব মীর জাফরকে কিনে নিয়ে উসমানী খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাল। লাল কুত্তারা উপমহাদেশ থেকে লোটপাটের টাকায় আরব গাদ্দারকে সহযোগিতা করতে লাগল। ফলে উসমানী সাম্রাজ্য তছনছ হয়ে গেল।

আর তখন বৃটেন ফ্রান্স মিলে আরব বিশ্ব ভাগাভাগি করে নিয়ে গেল এবং ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিন দিয়ে দিল। তাহলে ফলাফল এই দাঁড়াল যে, মীর জাফরের গাদ্দারির ফলে ইংরেজরা উপমহাদেশে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করল। আর উপমহাদেশ শোষণের টাকায় আরব বিশ্ব দখল করল। কাজেই মীর জাফরের গাদ্দারির পরিণতি হল সমগ্র উম্মাহর পতন। আর নিয়ম হল পাপ যে করে তওবা তাকেই করতে হয়, অন্যায় যে করে মাসুল তাকেই দিতে হয়। সুতরাং মীর জাফর এই বাংলার পূর্ব পুরুষ, কাজেই তার উত্তর পুরুষ আমাদেরকেই সেই পাপের মাসুল দিতে হবে। এই বাংলা থেকে ইসলামী বিপ্লব বা খিলাফত আন্দোলন শুরু করে আলমে ইসলামকে পশ্চিমা দাজ্জালের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে।

৪। ইংরেজ আবর্জনাঃ ডাঙ্গার প্রাণী পানিতে বাস করতে পারে না, আর পানির মাছ ডাঙ্গায় বাচতে পারে না। ঠিক একইভাবে ইংরেজরা যে বস্তুবাদি শিক্ষা, আইন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা রেখে গেছে তাতে মুসলমান বাস করতে পারে না, বেঁচে থাকতে পারে না। পাশ্চাত্য সভ্যতার চাঁচে মুসলমানরা দিন দিন ক্ষয়ে যাবে কিন্তু উত্থিত হতে পারবে না। আর এ বিষয়টা মুর্খ মুসলমানরা চিন্তা না করলেও পাশ্চাত্য দার্শনিকরা ঠিকই চিন্তা করে। আর এজন্যই প্রফেসর হান্টিংটন লিখেছেন ‘দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন’ অর্থাৎ সভ্যতার সংঘাত। এর দ্বারা তিনি খৃষ্ট সভ্যতার সাথে মুসলিম সভ্যতার সংঘাতকেই বুঝিয়েছেন।

এ কারণেই ইউরো মার্কিন শক্তি ভাল করেই জানে যে তাদের সামনে একমাত্র চ্যালেঞ্জ মুসলিম সভ্যতা ও মুসলিম দুনিয়া। ফলে তারা মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে যুদ্ধ লাগিয়ে দমিয়ে রাখছে, কর্তৃত্ব করছে ও শোষণ করছে। এখন তা প্রতিরোধের একমাত্র পথ হচ্ছে সমগ্র উম্মাহর ঐক্য। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইংরেজ লাল কুত্তারা যে বাস্তুবাদি শিক্ষা আইন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার আবর্জনা রেখে গেছে তা কুদাল দিয়ে কেটে নিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে মুসলিম সভ্যতার প্রবর্তন করতে হবে। তবেই এই জাতীর মুক্তি জুটবে। আর এই কাজটি বাংলা থেকেই শুরু করতে হবে। কারণ ইংরেজরা প্রথম আবর্জনা এ বাংলাতেই রেখেছিল।

৫। দার্শনিক তত্ত্বঃ আবার বাংলাদেশ হল ইসলামী আন্দোলন সফল হওয়ার সবচেয়ে উপযোগি স্থান। উদাহারনতঃ রাসূল (সাঃ) কে আরব দেশে পাঠানোর কারণ হিসাবে ঐতিহাসিকগণ বলেন, আরবরা জীবন্ত কন্যা সন্তান কবর দিত, মারামারি খুনাখুনি করে তারা পশুত্বের স্তরে নেমে গিয়েছিল- এ যুক্তি সঠিক নয়। কারণ তখন ভারত বর্ষে জলজ্যান্ত জীবন্ত যুবতীকে মৃতস্বামীর সাথে শ্বশানে পাঠানো হত। রোমানরা গোলামদের ধরে ধরে বাঘ সিংহের খাচায় ঢুকিয়ে দিত, গোলামদের বীরত্ব প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান করে একে অন্যকে দিয়ে হত্যা করাত, সর্বশেষ বেঁচে যাওয়া বিজয়িকে তারা বিজয়মাল্যে ভূষিত করত। আরবরা আর যাই হউক অন্তত এতটা বর্বর ছিল না। আর বাকি দুনিয়ার অবস্থা ছিল আরো শোচনীয়। কাজেই নারী রক্ষা ও মানবতা রক্ষার জন্য রাসূল (সাঃ) কে পাঠালে তো অন্য কোন দেশে পাঠানো দরকার ছিল। কিন্তু না, আরব দেশে নবী প্রেরণের মুল কারণ হল, আরবরা ছিল তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব। আর গরীবই গরীবের দুঃখ বুঝে, অর্থনৈতিক সাম্য কামনা করে। এজন্যই রাসুলের মাধ্যমে দুর্ধর্ষ আরব জাতীর উপর পৃথিবীতে অর্থনৈতিক ও বৈচারিক সাম্য আনয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, আর তারাও যথার্থ ভাবে সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রুম পারস্যের স্বৈরাচারী শাসকরা শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে জনগনের রক্ত শোষণ করে যে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিল সেই পাহাড় তারা কুদাল দিয়ে কেটে নিয়ে জনগনের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিল। ফলে পরবর্তিতে যাকাত নেয়ার মত কোন লোক খুঁজে পাওয়া যেত না।

একইভাবে বাংলাদেশও মুসলিম বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ। ধনী আরব দেশ গুলোর প্রত্যেকটা পেট্টোডলারে তাদের নাগরিকদের যতটুকু অধিকার আছে ইসলাম আমাদের জন্য ও প্রত্যেকটা মুসলমানের জন্যও ঠিক ততটুকুই অধিকার নিশ্চিত করেছে। তাদের একজন নাগরিক নটি নর্তকীর পেছনে যে অর্থ ব্যয় করে আমদের একশটা পরিবার জীবন ধারনের জন্য তা পাই না। অথচ আমরা গিয়ে তাদের দাসত্ব করি আর আমাদের মেয়েরা তাদের যৌন চাহিদা মিটায়। এ জন্যই দরিদ্র বাঙ্গালীরা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে তাদের অধিকার আদায় করে নিবে, অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করবে, খিলাফতের অধিনে মুসলিম বিশ্বে অর্থনৈতিক কোন ফারাক থাকবে না।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর- রাজা ও রাজনীতিবিদদের কোন ধর্ম নাই, তাদের ধর্মের নাম ক্ষমতা। তারা ইসলামের ধার খুব কমই ধারে। তাছাড়া বর্তমানে তারা পাশ্চাত্যের দাজ্জালের প্রতিনিধিত্ব করছে, দাজ্জালের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তারা নিজেদের খেয়াল খুশিমত আইন রচনা করছে। এ অবস্থায় তাদের কাছে খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবী করলে দাবী মানা তো দূরের কথা উল্টো নিশ্চিহ্ন করবে।

পক্ষান্তরে ঐক্যের নিউক্লিয়াস হচ্ছে আলেম সমাজ। আর বাংলাদেশের আলেমগন সাতিসয় সহজ সরল নিষ্পাপ নিষ্কলুষ সাদা মনের মানুষ। আমাদের প্রগতিবাদীরা রাজনৈতিক স্বার্থে বা কায়েমি স্বার্থে আলেম সমাজকে মৌলবাদী জঙ্গিবাদী বলে যতই গালাগালি করুক না কেন তারা নিজেরাও ভাল করেই জানে যে, আলেমরাই এদেশের প্রকৃত নাগরিক, তারা কখনো কোন অন্যায় করে না, সৎ জীবন যাপন করে। যদিও আমরা ফিরকাবাজির কারণে তাদের সমালোচনা করছি কিন্তু একথা সর্ব স্বীকৃত যে, আলেমদের চেয়ে ভাল মানুষ আর কেউ নেই। এই সমালোচনার কারণে এর বিপক্ষে কোন আলেম মাথা তুলে দাঁড়াবে না। বস্তুত উপমহাদেশে ইসলামের যতগুলি ফিরকা হয়েছে- সে গুলি ভারত পাকিস্থান থেকে আমদানি হয়েছে, বাঙালি আলেমরা করেননি। ইসলামের নেতৃত্ব তাদের হাতে থাকলে সম্ভবত এসব ফিরকা বিভক্তির সৃষ্টি হত না।

সর্বোপরি আলেম সমাজ হচ্ছে আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি, কোরানের সাথে তাদের অন্তর দৃঢ়সূত্রে গ্রথিত। কোরানের বাস্তবতা তাদের সামনে তুলে ধরলে যে কোন অবস্থায় তারা মাথা নত করতে বাধ্য। কাজেই তাদের সামনে কোরানের নির্দেশ পেশ করা হবে ‘আল্লাহর বিধান অনুযায়ি যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে না তারা যালিম ফাসিক কাফের’ এই বিধানের সামনে তারা মস্তক অবনত করতে বাধ্য। তখন আমরা একটু মধ্যস্থতা করে তাদেরকে এক টেবিলে বসাতে পারলেই এদেশের সরল প্রান আলেমগন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবেন এবং সমগ্র জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন। এ জন্যই আমরা রাজা ও রাজনীতিবিদদের পিছনে না গিয়ে আলেমদের পিছু নিয়েছি। তাদের মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা সহজ। কারণ এটা ফরয, আর এ দায়িত্ব তাদেরই। ইত্যাদি কারণে সর্ব প্রথম বাংলাদেশ থেকেই আন্দোলন শুরু করতে হবে।

আর আপনার তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর হল, আমরা যা প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি আলেম সমাজের কাছে এর নাম খিলাফত, রাজা ও রাজনীতিবিদদের জন্য মুসলিম জাতীসংঘ, ব্যবসায়ি ও সাধারণ জনগনের নিকট আফ্রেশিয় ইউনিয়ন। এটা কোন ব্যক্তি বা রাষ্ট্র কেন্দ্রিক হবে না, এটা হবে জাতীসংঘের মত। এ বিষয়ে বেশি আলোচনার দরকার নাই, এখনি খিলাফত ইশতিহার ঘোষণা করা হবে তখনি বুঝতে পারবেন। মোজাহিদ দাঁড়াও’ বলে তিনি বসে পড়লেন।

খিলাফতের প্রয়োজনিয়তাঃ

মাওঃ মোজাহিদ দাঁড়িয়ে সালাম ও দরুদের পর শুরু করল, খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা ফরয। আর তা তিনটি অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে। যেমন -

১। হক্বুল্লাহঃ আল্লাহ তালা বলেন -- أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ- তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর, কখনো বিভক্ত হয়ো না। এখানে দ্বীন অর্থ খিলাফত।

ۚوَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ [٥:٤ ]

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [٥:٤٧]

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٥:٤٥]

أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ [٥:٥٠]

১। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারাই কাফের।

২। যারা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ি রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারাই ফাসেক।

৩। যারা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ি রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারাই জালেম।

৪। তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ্‌র বিধান অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা না করলে যালেম এ জন্য যে, তারা দরিদ্র ও মজলুমের উপর যুলুম করল। কারণ দরিদ্রের আর্থিক সাম্য ও মজলুমের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করল না, মানবাধিকার লঙ্ঘন করল। ফাসিক এজন্য যে, তারা নিঃস্ব সর্বহারা ও মজলুমের অধিকার আদায় না করে উল্টো মানব রচিত আইনে শোষণ ও যুলুম করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। কাফের এজন্য যে, তারা আল্লাহ্‌র বিধান প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা ফরয অন্যথায় পরকাল নষ্ট হবে। আর এ দায়িত্ব আলেম সমাজের।

২। হক্বুল ইবাদঃ হক্বুল ইবাদ হচ্ছে মানবাধিকার, আর খিলাফত ব্যতিত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। মানবাধিকারের প্রশ্নে খিলাফত প্রতিষ্ঠার যে চিরন্তন সংগ্রাম তাকেই জিহাদ বলা হয়। পৃথিবীর নিয়ম হল সবলরা দুর্বলদের খেয়ে ফেলে । শাসক, বর্জোয়া বেনিয়া শ্রেনী দুর্বলদের শোষণ করতে করতে সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠীতে পরিণত করে। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য পৃথিবীতে দুটি মতবাদ চলছে- সমাজ তন্ত্র ও ধনতন্ত্র। সমাজতন্ত্রের ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যু সম্পর্কে আমরা অবগত বিধায় এর আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। আর বর্তমান পুজিবাদী অর্থব্যবস্থায় পৃথিবীর এক শতাংশ মানুষ নিরানব্বই শতাংশের সম্পদ চোষে নিয়ে যাচ্ছে, তারা ভোগ বিলাসের সিন্ধুতে প্রমোদ ভ্রমন করছে আর বাকী নিরানব্বই শতাংশ মানুষ মৌলিক চাহিদা পুরন করতে পারছে না । সমাজের বৃহত্তর একটা অংশ ছিন্নমুল ভাসমান জীবন যাপন করছে, তারা দুবেলা দুমোঠো খাদ্য সংস্থান করতে পারছে না। বিভিন্ন দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা পড়ছে। পুঁজিবাদের বদৌলতে একজন খাচ্ছে নিরানব্বই রুটি, আর নিরানব্বই জনে খাচ্ছে এক রুটি। কাজেই পৃথিবীর বাস্তবতায় প্রমানিত হয়েছে যে, এ দুটি মতবাদ ভ্রান্ত, ব্যর্থ ও মানধিকার পরিপন্থি। আল্লাহ্‌ মানব জাতীর মধ্যে অর্থনৈতিক সাম্য ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য খিলাফতের বিধান দিয়েছেন। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে শোষিত, নিগৃহিত নির্যাতিত আর্তমানবতা মুক্তির আশায় ত্রাহি ত্রাহি করছে। কাজেই আর্ত মানবের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য খিলাফতের বিকল্প নাই।

৩। ইসলাম ও উম্মাহঃ সর্বোপরি বর্তমানে মুসলিম জাতি অস্তিত্ব সঙ্কটের মোকাবিলা করছে, অমুসলিমরা তাদের শিয়াল কুকুরের মত মারছে, তাদের উপর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চালাচ্ছে, তাদের সম্পদ লুটপাট করে শোষণ করে নিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, জিংজিয়াং ইত্যাদিতে মাবনবতার বিপর্যয় ঘটছে, আমাদের নাকের ডগায় আরাকানে মানবতার সমাধি রচিত হচ্ছে। তাছাড়া তারা নিজেরাও বিভিন্ন ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের গর্দান মারছে। আবার গোদের উপর বিষফোড়ার ন্যায় উম্মাহর শত শত ফেরকা একে অন্যকে ধ্বংসের চূড়ান্ত কসরত করে যাচ্ছে। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় মুসলিম জাতির এ লাঞ্চিত, দলিত, অভিশপ্ত ধ্বংসগহ্বর থেকে মুক্তির উপায় কি? অবশ্যি উত্তর একটাই হবে খিলাফত। অর্থাৎ একটি কেন্দ্রের আওতায় উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলেই তাদের শুধু মুক্তিই জুটবে না, চোখের পলকে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্টিত হয়ে যাবে। পৃথিবীর তাবৎ সম্মান, সম্পদ ও শক্তি তাদের পদতলে লুটোপুটি খাবে। কাজেই উম্মাহর অস্বিত্বের প্রশ্নে খিলাফত প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।

তাছাড়া তুরকি খেলাফত উৎখাতের পর বিগত ১০০ বছরে প্রমাণ হয়েছে যে, মাছ যেভাবে পানি ব্যতীত বাচতে পারেনা, মুসলিম জাতিও একটা কেন্দ্রের অধিন ব্যতীত বেঁচে থাকতে ও টিকে থাকতে পারবে না। পৃথিবীর সম্মিলিত কুফর শক্তি তাদের ধ্বংস করে দেবে। কাজেই বর্তমানে খিলাফত ফরজে আইন হয়ে গেছে। সঙ্গত কারণেই যে কোন মূল্যের বিনিময়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা অত্যাবশ্যক। কাজেই যে কোন কলা কৌশলে, আন্দোলন বিপ্লব, খুন হত্যা এমনকি মুর্তি পূজা করে হলেও খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নচেৎ ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তির কোন পথ নেই। আর খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যের প্রয়োজন ।

এখন আমি খেলাফত ইশতিহার ঘোষণা করছি। তবে একটা বিষয় জ্ঞাতব্য যে, এই কঠিন ফেৎনার যুগে পশ্চিমা দাজ্জালের সার্বভৌমত্বের মধ্যে ইসলামের সকল বিধি বিধান এক সাথে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। রাসূল (সাঃ) সাধারণ জাহেলি যুগে ২৩ বছরে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু এই কঠিন জাহেলি যুগে পঞ্চাশ সালা পরিকল্পনা নিয়ে আমাদেরকে সামনে এগুতে হবে। আমাদের মুল উদ্দেশ্য পশ্চিমা বস্তুবাদি সভ্যতা ও দুশ বছরের ইংরেজ শাসন সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে অর্থ, বিচার ও শিক্ষা ব্যবস্থার যে কাটা ফুটিয়ে দিয়ে গেছে একটা একটা করে সেই কাটা তুলে সেখানে ইসলামের মলম লাগিয়ে দেয়া। অর্থাৎ ইংরেজ প্রবর্তিত নিয়ন্ত্রণহীন পুজিবাদি অর্থ ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, আইন, শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি তুলে দিয়ে ক্রমান্বয়ে ইসলামী বিধান প্রয়োগ করা।

অনন্তর এই ইশতিহার ঘোষিত হল আলেম সমাজ ও ইসলামী দলগুলির উদ্দেশ্যে। আমরা তাদের দৃষ্টি অন্তর মুখি থেকে বহির্মুখি করতে চাই, মসজিদ শাসন থেকে বিশ্ব শাসনে অধিষ্ঠিত করতে চাই, ইংরেজের আবর্জনা দূর করে ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আলো ছড়িয়ে দিতে চাই। কাজেই তারা বসবেন, খিলাফতের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হবেন, তারপর এই ইশতিহার নিয়ে বিবেচনা করবেন কিন্তু আমার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারবেন না। যারা বিতর্ক করবে, দলাদলি করবে তারা দুষ্কৃতিকারী বলে গন্য হবে, তাদেরকে ইনকুইজিশন কোর্টে সোপর্দ করা হবে।

খিলাফতের কাঠামোঃ খিলাফতের উদ্দেশ্যে আমরা প্রথমে একটি উলামা পরিষদ গঠন করব। এর সদস্য সংখ্যা ছয় থেকে বিশ পর্যন্ত হতে পারে। তবে বার/১২ সংখ্যাটাই সবচেয়ে পসন্দনীয়। কারণ রাসূল (সাঃ) এর হাতে দ্বিতীয় বয়াতে আকাবার নকীব ছিলেন বারজন। আবার হযরত ঈসা (আঃ) এর apostul বা হাওয়ারী ছিলেন ১২ জন। এই বার জনের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ বা আটজন হবেন আলেম। আর এক তৃতীয়াংশ বা চারজন হবেন আধুনিক শিক্ষিত বা বুদ্ধিজীবী। আবার এ চার জনের মধ্যে দুয়েকজন থাকবে অমুসলিম, তারা সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করবে। এভাবে প্রত্যেক দেশে উলামা পরিষদ গঠন করা হবে। এই পরিষদ সকল ইসলামী দল ও আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করবে। কেউ ঐক্যে না আসতে চাইলে তাকে হত্যা করা হবে। তারপর এই উলামা পরিষদের প্রত্যক্ষ ভোটে মুসলিম জাতীর সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে খলিফা নির্বাচন করা হবে। এভাবে কেন্দ্রীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা হবে। তখন এই খলীফা উলামা পরিষদের মাধ্যমে তার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

তবে উল্লেখ্য যে, এই খেলাফত বা খলীফা কোন ব্যক্তি ও রাষ্ট্র কেন্দ্রিক হবে না, তাহলে স্বৈরাচারিতার চূড়ান্ত হবে। এটা হবে অনেকটা জাতীসংঘ বা ইউরোপিয় ইউনিয়নের ন্যায় একটা সংস্থার মত- যেখানে ৪/৫ বছরের জন্য খলীফা নির্বাচিত হবেন। তবে পার্থক্য হলো- ক্ষমতার দিক থেকে এ খেলাফত হবে অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রিয় ফেডারেল সরকার ব্যবস্থার ন্যায়। কারণ তখন মরক্বো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটি রাষ্ট্র কেন্দ্রিয় খেলাফতের অধিনে একেকটা প্রদেশ বলে গন্য হবে। অর্থাৎ মরক্বো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত একদেশ, একজাতি, এক শিক্ষা (মৌলিক সিলেবাস), এক আইন, এক ভাষা (অর্থাৎ দ্বিতীয় ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হবে আরবি) কার্যকর হবে। ভিসা প্রথা উঠে যাবে, চাকরি ও কর্মস্থল হবে উন্মুক্ত অবারিত।

বিষয়: রাজনীতি

৯৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File