সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- 24

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৩:১২:৪৭ দুপুর

ফিরকাবাজদের বিচারঃ আকলি ও নকলি দলীল -

মাওঃ মোজাহিদ দাঁড়িয়ে বলল, আমরা জামাত শিবিরের কারো মুখে কোন দিন শুনিনি যে, তারা বলে বেড়িয়েছে ‘নবীগণ মা’সুম নয়, সাহাবাগন অনুসরণ যোগ্য নয়। আবার বেরেলভীরাও ঢোল পিটিয়ে বেড়ায় না যে, রাসূল (সাঃ) গায়েব জানেন। এখন প্রশ্ন হল, তাহলে এ বিষয়গুলি তাদের ফেরকার মুলনিতিতে আছে কেন? এর উত্তর পরিস্কার, ফিরকাবাজি করার জন্য, উম্মাহকে বিভক্ত করে ধ্বংস করার জন্য। কাজেই এ ফিরকাবাজদের জন্য মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন চিকিৎসা আছে বলে আমার মনে হয় না। একজন আলেম দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, আপনি প্রথমেই মৃত্যুদণ্ডের দাবী করেন কেমনে? আগে তাদেরকে তিনবার ঐক্যের দাওয়াত দিতে হবে, যদি ফিরে না আসে তখন মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টা আসবে, আগেই নয়।

মোজাহিদ উত্তর দিল, আপনি তিনবার কি বলছেন, হাজার হাজার বার ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই জামালুদ্দিন আফগানী থেকে নিয়ে বর্তমান ইসলামের দায়ি ডাঃ জাকির নায়েক, ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির, মাওঃ শামছুল হক ফরিদপুরী, অধ্যাপক গোলাম আজম ও অন্যরা বার বার ঐক্যের দিকে ডেকেছেন। কিন্তু ফিরকাবাজরা সাড়া তো দেয়ইনি বরং তাদের পরোক্ষ উত্তর এ রকম-

قَالُوا بَلْ وَجَدْنَا آبَاءَنَا كَذَٰلِكَ يَفْعَلُونَ --তারা বলে -- ''না, আমাদের পুর্ব পুরুষদের আমরা দেখতে পেয়েছি এইভাবে তারা চলেছে (২৬: ৭৪)

إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِم مُّهْتَدُونَ '' – আমরা তো আমাদের পিতৃপুরুষদের একটি সম্প্রদায়ভুক্ত (মযহাব বা ফিরকা) পেয়েছি আর আমরা নিঃসন্দেহে তাদেরই পদচিহ্নের উপরে পরিচালিত হয়ে আসছি (৪৩: ২২)

قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا -- তারা বলে -- ''না, আমরা অনুসরণ করব আমাদের মুরুব্বিদের যাতে পেয়েছি তার।

قَالُوا حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا -- তারা বলে -- ''আমাদের জন্য এই যথেষ্ট যার উপরে আমাদের মুরুব্বিদের দেখেছি)।

ব্যাখ্যাঃ তারা প্রত্যেকেই স্ব স্ব আকাবিরদের ধর্ম নিয়ে আছে, আপনার আহ্বান শুনবে না। আপনি যদি ঐক্যের ডাক দেন তখন দেওবন্দিরা বলবে, আরে মিয়া আমরা গাড়ি গাড়ি কারী কারী কিতাব পড়ছি আর তুমি আমাদেরকে জ্ঞান দিতে এসেছ, না? জামাত বলবে, আরে বেটা, আমাদের মধ্যে আলেম আল্লামা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কম আছে নাকি যে তোমার জ্ঞান খরিদ করতে হবে। বেরেলভীদের কাছে গেলে বলবে, আগে মুরীদ হয়ে মাযারে আস, তারপর আলাপ। তাবলীগের কাছে গেলে প্রশ্ন করবে তিন চিল্লা হয়েছে? আর সালাফিদের ইলমের গরমে তো তাদের কাছেই ঘেষতে পারবেন না। মোটকথা তাদের বক্তব্য হল, আল-ফাদলু লিল-মুতাকাদ্দিমিন, পূর্ববর্তী বুজুর্গরা আমাদের চেয়ে কম জ্ঞানী ছিলেন না, তারা চিন্তা গবেষণা ও ইজতিহাদ করে যে পথ ও মত দিয়ে গেছেন- আমরা তাঁর উপরই আছি এর বাইরে যেতে রাজি নই, ঐক্যের দরকার নাই। কাজেই এই জাতের ফিরকাবাজ ফিৎনাবাজ আলেমদের জন্য মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন উপায় নাই। আর মৃত্যুদণ্ডের দলীল হচ্ছে,

إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿المائدة: ٣٣﴾

যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আর দেশে ফাসাদ বাঁধাতে তৎপর হয় তাদের একমাত্র প্রাপ্য হচ্ছে -- তাদের কাতল করো অথবা শূলে চড়াও অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলো অথবা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করো। এটি হচ্ছে তাদের জন্য ইহলোকে লাঞ্ছনা আর তাদের জন্য পরকালে রয়েছে কঠোর শাস্তি (৫: ৩৩)

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ- রাসূল (সাঃ) ঐক্য ফরয ও বিভক্তি হারাম করেছেন। ফিরকাবাজরা এ সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলে না বটে কিন্তু তাদের কর্মকান্ড থেকে যে উত্তর বেরিয়ে আসে তার সারমর্ম এই যে, ‘আরে মিয়া আল্লাহ রাসূল (সাঃ) কি জানেন, তারা বললেই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে নাকি। আমরা তো আল্লাহ রাসূল (সাঃ) মানি না, মানি স্ব স্ব ফেরকার মুরুব্বি। আমরা কোরান হাদীস মানি না, মানি স্ব স্ব ফিরকার সিলেবাস। কাজেই আমাদেরকে আল্লাহ রাসূল (সাঃ) ও কোরান হাদীসের দোহাই দিয়ে লাভ নেই।

আবার আল্লাহ রাসূল (সাঃ) বলেছেন যারা আল্লাহ্‌র আইন অনুযায়ি রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারা যালিম, ফাসেক, কাফের। এ ক্ষেত্রে ফিরকাবাজদের পরোক্ষ উত্তর হল, ‘আরে মিয়া আল্লাহ রাসূল (সাঃ) এর মাথায় কিছু আছে নাকি, থাকলে এমন অবিবেচকের মত কথা বলতেন না। কারণ ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে ঐক্য প্রয়োজন। অথচ এটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তেল পানিতে মিশ্রিত হতে পারে কিন্তু আমাদের ফিরকাগুলির একত্রে মিশ্রন কল্পনাতিত। আমরা হিন্দু বৌদ্ধ ইহুদি খৃষ্টান যে কারো সাথে ঐক্য হতে পারি কিন্তু ফিরকাগুলির মধ্যে নয়। এতে যদি ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যায় তো যাক, তাতে আমাদের কি, এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমাদের ফিরকাগুলি ঠিকমত থাকতে পারলেই হল। আমরা কখনো ইসলাম জিন্দাবাদ উম্মাহ জিন্দাবাদ শ্লোগান দেই না। আমাদের শ্লোগান হল, দেওবন্দ জিন্দাবাদ, জামাত জিন্দাবাদ, তাবলীগ জিন্দাবাদ, বেরেলভী জিন্দাবাদ, সালাফি জিন্দাবাদ। তাছাড়া আমরা লেবাস ও মুখে ইসলামের কথা বললেও বাস্তবে আমরা পশ্চিমা দাজ্জালের কর্তৃত্ব চাই। এজন্যই আমরা ঐক্যবদ্ধ হই না। কারণ ঐক্য হয়ে গেলে দাজ্জাল বরফের মত গলে যাবে, তখন ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করবে কে?

তারপর মোজাহিদ বলল, এখন আপনারাই বলুন, ফেরকাবাজরা প্রকাশ্যে কিছু বলে না বটে কিন্তু এগুলি কি তাদের পরোক্ষ উত্তর নয়? সবাই বলল, হাঁ হাঁ তাই তো মনে হয়। এবার মোজাহিদ চিৎকার করল, তাই যদি হয় তাহলে ফিরকাবাজ নামের যেসব মোনাফিক ইসলামী লেবাস ধরে রাসূল (সাঃ) এর প্রতিনিধিত্বের আসন দখল করে আল্লাহ রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, ফিরকাবাজি করে ভূপৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টি করছে, ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হতে পারে যে, তাদের হাত পা উল্টা দিক থেকে কেটে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হবে? সবাই সমস্বরে বলল, ঠিক হ্যায়, ঠিক হ্যায়।

﴿وَإِن طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا ۖ فَإِن بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَىٰ فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّىٰ تَفِيءَ إِلَىٰ أَمْرِ اللَّهِ ۚ فَإِن فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا ۖ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ﴾

৯) ঈমানদারদের মধ্যকার দু’টি দল যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। তারপরও যদি দু’টি দলের কোন একটি অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে তবে যে দল বাড়াবাড়ি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করো- যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। এরপর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মাঝে ন্যায় বিচারের সাথে মীমাংসা করিয়ে দাও এবং ইনসাফ করো। আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।

ব্যাখ্যাঃ ফিরকাবাজদের পরস্পরের মধ্যে যে লড়াইটা- তা বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ। এর বাস্তব নমুনা হচ্ছে, পাকাফগান, ইরান- ইরাক- আরব, সিরিয়া, ইয়েমেন, মিসর। আর বাংলাদেশসহ আন্যান্য দেশে তাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না থাকলেও পরোক্ষ যুদ্ধ ভয়াবহ। কাজেই এসব ফিরকাবাজ যতক্ষণ না ঐক্যে ফিরে আসবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরয।কারণ আয়াতে –ٰ فَقَاتِلُوا (যুদ্ধ কর) আমর বা অনুজ্ঞার শব্দ এসেছে- যা দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।

﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴾

১০) মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই ৷ অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও৷ আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করা হবে৷

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿الأنفال: ٣٩﴾

ফিতনা নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। (৮: ৩৯)

ব্যাখ্যাঃ ইসলাম ও উম্মাহর জন্য পৃথিবীতে ফিরকাবাজির চেয়ে বড় কোন ফিৎনা নাই। এই একটি মাত্র ফিৎনার কারণে আজ উম্মাহ প্রলয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। কাজেই ফিরকাবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরয যতক্ষণ না তারা ঐক্যে ফিরে আসে। কারণ আয়াতে –ٰ فَقَاتِلُوا (যুদ্ধ কর) আমর বা অনুজ্ঞার শব্দ এসেছে- যা দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।

কারণ এই ফিরকাবাজরা হল - حزب الشيطان - অথবা সরাসরি শয়তান। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-

وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا

আর এইভাবে আমরা প্রত্যেক নবীর জন্যে সৃষ্টি করেছি শত্রু, মানুষ ওজ্বীন-এর মধ্যেকার শয়তানদের তারা একে অন্যকে প্ররোচিত করে চমক্‌প্রদ বাক্য দ্বারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে।(৬: ১১২)। আলেম নামধারি এ মানব শয়তানরা চমক্‌প্রদ কথা দ্বারা বিভক্তি সৃষ্টি করে উম্মাহর ইহকাল-পরকাল ধ্বংস করছে।

২। এরা গাফেল, ইতর প্রাণীর চেয়েও নিকৃষ্ট। যেমন -

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ ﴿الأعراف: ١٧٩﴾ =

আর আমরা জাহান্নামের জন্য নিশ্চয়ই সৃষ্টি করেছি জ্বীন ও মানুষের মধ্যের অনেককে। কারণ তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে বুঝে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না, আর তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না। এরা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়, বরং এর চেয়েও নিকৃষ্ট। আর তারাই হচ্ছে গাফেল (জাহান্নামী)। (৭: ১৭৯)

ব্যাখ্যাঃ ইসলামে হারাম সত্বেও আলেমরা উম্মাহকে শত শত ফিরকায় বিভক্ত করেছে। আর প্রতিটি ফেরকা পরস্পরের জানী দুশমনে পরিণত হয়েছে। ফলে মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি দেশে ভ্রাতৃঘাতি কামড়া কামড়ি চলছে। তারা দুর্বল থেকে দুর্বলতর সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগে পৃথিবীর সকল অমুসলিম জাতি মহাউল্লাসে মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, নির্যাতন করছে, শোষণ করছে। বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমান মাতম করছে, আর্তনাদ করছে। কিন্তু ফিরকাবাজ আলেমরা সে দিকে ফিরেও তাকায় না, তারা নিজেদের ফিরকাবাজি নিয়েই ব্যস্ত আছে। যেমন-

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا ﴿النساء: ٧٥﴾

আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোন ত্রানকর্তা নিযুক্ত করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও)।

ব্যাখ্যাঃ কিন্তু তাদের সাহায্য করার কেউ নেই। বিভক্তিবাদী আলেমদের অন্তর আছে, কিন্তু সেই অন্তর দ্বারা তারা মজলুম মুসলমানের দুঃখ অনুভব করে না, তাদের কর্ন আছে, কিন্তু সেই কর্নকুহরে মজলুম মুসলমানের আর্তনাদ পৌছে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু সেই চোখ দিয়ে তারা ফিলিস্তিন, আরাকান, জিংজিয়াং, কাশ্মিরে আবাল বৃদ্ধ বনিতার ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে পায় না। ফিরকাবাজি না থাকলে, উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ অবস্থার উদ্ভব হতো না বরং মুসলমানরা পূর্বপুরুষের ন্যায় বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত থাকত। অন্তর থাকা সত্ত্বেও তাদের সেই অনুভূতি নেই। কাজেই আল্লাহ তাদেরকে চতুস্পদ জন্তুর সাথে তুলনা করেছেন বরং এর চেয়েও নিকৃষ্ট সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং এরাই গাফেল আর গাফেলের জন্য জাহান্নাম অবধারিত।

একজন দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, এ আয়াত কাফেরদের জন্য প্রযোজ্য মুসলমানের জন্য নয়। মোজাহিদ খেকিয়ে উঠল, এটা মিথ্যা দাবী। কারণ আয়াতের মধ্যেই এর উত্তর নিহিত আছে। যেমন আয়াতে আল্লাহ তা’লা বলেন, তিনি জ্বীন ইনসানের অধিকাংশকে জাহান্নামের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। এখানে তিনি কাফের মুশরিক নির্ধারিত না করে ইনসান- আম বা ব্যাপকার্থক শব্দ উল্লেখ করেছেন - যার মধ্যে মুসলিম অমুসলিম উভয় শ্রেণী অন্তর্ভুক্ত। আর জাহান্নামের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন হৃদয়- চক্ষু- কর্ন থাকা সত্ত্বেও এগুলোকে সঠিক বিবেচনাধিন প্রয়োগ না করার অপরাধ। আর এ অপরাধটি কাফেরদের চেয়েও বর্তমান আলেম সমাজের উপর অতি উত্তমরূপেই প্রযোজ্য হয়। কারণ নিজেদের অপকর্মের কারণে চোখের সামনে স্বজাতি ধ্বংস হয়ে গেলেও যাদের হৃদয়-চক্ষু-কর্ন জাগ্রত হয় না, তারা কাফেরের চেয়েও নিকৃষ্ট। কাজেই একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই তাদের যথার্থ প্রাপ্য। মাত্র একটা উদাহারন পেশ করছি।

মানবতার মহাশ্মশান আরাকানঃ

আরাকান একটা ফুটন্ত আগ্নেয়গিরির নাম, রোহিঙ্গা একটা জলন্ত চিতার নাম। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ন্যাড়া বৌদ্ধরা সেখানে যে নারকীয় তাণ্ডব চালায় তখন মানবতার মৃত্যু হয় এবং তার শবদেহ নাফ নদীর স্রোতে ভেসে যায়। এ ট্র্যাজেডি প্সেন ট্র্যাজেডিকেও ম্লান করে দেয়। এখন প্রশ্ন হল, খৃষ্টান সম্প্রদায়ের কোন জাতী গোস্টি যদি এভাবে নির্যাতিত হত তাহলে পোপ কি করতেন? অবশ্যি তিনি ক্রুসেডের ডাক দিতেন। কিন্তু বাইতুল মোকাররম ও মক্বা মদিনার ইমামগণ এবং সমগ্র আলেম সমাজ কী দায়িত্ব পালন করেছেন তা আলোচনার দাবী রাখে।

আলেমরা আমাদেরকে শিখিয়েছেন মুসলমান আক্রান্ত না হলে সাধারণ অবস্থায় জিহাদ ফরয ওয়াজিব কোনটাই নয়। কিন্তু মুসলমান আক্রান্ত হলে, মুসলিম অধিকার খর্ব হলে জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। ক্রমান্বয়ে তা নারী ও অক্ষমদের উপরও ফরয হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল, সম্মিলিত আলেম সমাজ কি জিহাদের ডাক দিয়েছে? না দেয়নি, তারা বরং নীরবতা অনবলম্বন করেছে যেভাবে জেরুযালেম ও বাগদাদের আলেমরা নিরবতা অবলম্বন করেছিল। সম্রাট নেবুচাদ নেজার যখন জেরুযালেম ধ্বংস করতে যায় তখন ইহুদি রাব্বিরা বাইতুল মুকাদ্দাসে বসে বিতর্ক করছিল মর্যাদায় কে শ্রেষ্ঠ, দাউদ নাকি সুলায়মান (আঃ)। কিন্তু তখন যদি তারা নিজেদের মধ্যে খোঁচাখোঁচি না করে নেবুচাদ নেজারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করত তাহলে জেরুজালেম ও ইহুদি জাতী ধ্বংস হত না।

আবার হালাকু খান যখন বার শতকে বাগদাদ নগরী ও তার চল্লিশ লক্ষ অধিবাসী ধ্বংসের জন্য এগিয়ে আসে তখন আলেমরা বাগদাদের মোড়ে মোড়ে বিতর্ক করছিল যে, মহিলার দুধ বাজারে বিক্রি করা জায়েয কিনা, মেসওয়াক নিচের মাড়ি নাকি উপরের মাড়ি থেকে শুরু করতে হবে ইত্যাদি হাস্যকর বিষয়। কিন্তু তখন যদি সম্মিলিত আলেম সমাজ তাতারিদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করত তাহলে গোবির এ দস্যুরা মোশিকের গর্তে আত্নগোপন করেও জীবন রক্ষা করতে পারত না। মাশাল্লাহ বাংলাদেশের আলেমরাও তাদের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। আরাকানে যখন চিত জ্বলছে, আর সেই চিতায় মুসলমান পোড়ে ভস্ম হচ্ছে তখন বাংলাদেশের আলেম ও ইসলামী দলগুলি নিজ নিজ ফেরকা নিয়ে আত্মতৃপ্ত হয়ে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করল। তাদের কোন মন্তব্য নেই, নাড়াচাড়া নেই।

একদম নাড়াচাড়া নেই বলা ঠিক নয়। কারণ তখন তারা ইসির সাথে বৈঠক করে নির্বাচনি আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত। ইসলামী ফ্রন্ট নামের একদল ইসিকে দশটি শর্ত দেয়। কাজেই আরাকানের দিকে তাদের ফিরে তাকানোর অবকাশ কোথায়? এ অবস্থা দেখে অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আলেমদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠল। এক পত্রিকা শিরোনাম করল ‘আরাকানে যখন মুসলমানদের কোরবানি দেয়া হচ্ছে তখন বাংলাদেশের আলেমরা কোরবানির গোশত খেয়ে লম্বা ঘুম দিয়েছে’। তখন কেউ কেউ কাছিমের মত একটু গলা বের করল। তাও ইমানি দায়িত্ব ও মুসলিম ভ্রাতৃত্বে নয়, সমালোচনার ভয়ে। তারা মুখ রোচক বিবৃতি দিতে থাকল। যেমন দুইশ জন সমর্থক নাই এমন এক অখ্যাত ইসলামী দলের নেতা ঘোষণা দিল ‘বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ না করলে আমরা আরাকান দখল করে নেব’। এভাবে বিড়াল মাসী লেজ ফুলিয়ে বাঘ হতে চায়। যেমন শাপলা চত্বরে সরকার উৎখাতের ঘোষণা দিয়ে বিপর্যয় ডেকে এনেছিল।

তখন আবার সমালোচনা শুরু হল। অন্যরা এটাকে মুর্খের আস্ফালন বলে মন্তব্য করল। কারণ যেখানে বাংলাদেশ সরকার সাহস পায় না সেখানে তার দল আরাকান দখল করবে। এ মুর্খ বার্মার শক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের তুলনামূলক শক্তি –

মিয়ানমারের আয়তন ৬ লক্ষ ৭৬ হাজার বর্গমাইল ও লোকসংখ্যা ৭ কোটি আর বাংলাদেশের আয়তন ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গমাইল ও লোকসংখ্যা ১৬ কোটি। আবার রোহিঙ্গারা বসতি স্থাপন করছে বাংলাদেশে। মিয়ানমার গোপনে গোপনে তার সামরিক শক্তিও বাড়াচ্ছে। নিয়ানমারের একটিভ সেনা সদস্য ৪ লক্ষ ৯২ হাজার, বাংলাদেশের ৪ লক্ষ ১০ হাজার। মিয়ানমারের বাটল ট্যাংক ৮০০ টি, বাংলাদেশের ৬০০টি। মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান ১২৮টি, বাংলাদেশের ৮০টি। মিয়ানমারের এটাক হেলিকপ্টার ১০০টি, বাংলাদেশের মাত্র ২৯টি। মিয়ানমারের যুদ্ধাস্ত্রের সংখ্যা ৭৪৬০০০ আর বাংলাদেশের ৫৪৭০০০। মিয়ানমারের পক্ষে প্রকাশ্য ভুমিকায় রয়েছে চীন, ইসরাইল ও ভারত। বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াবে কোন দেশ? (২০১৭ সালের হিসাব)

হাঁ যদি সকল ইসলামী দল ফিরকা সম্মিলিতভাবে জেহাদের ডাক দিত তাহলে ন্যাড়া ভিক্ষুদের হৃদপিণ্ডে কাঁপন ধরে যেত। কিন্তু তারা ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংসে রাজি আছে তবুও ঐক্যে রাজি নয়। রোহিঙ্গাদের এই দুর্দিনে যেখানে সমগ্র বিশ্ব উত্তাল হয়ে উঠেছে, অমুসলিমরাও আন্দোলন করছে, আফ্রিকান বর্নবাদ বিরোধি নেতা নোবেল বিজয়ী ডেসমন্ড টুটু পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য সূচির কাছে পত্র লিখেছেন। অথচ তখন বিশ্বের আলেম সমাজ নীরব।

বাইতুল মোকাররম ও মক্বা মদীনার ইমামগণ, দেওবন্দ, করাচি, মক্বা মদীনা ও আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় আল্লামাগণ নীরব। যেখানে তারা সম্মিলিত ভাবে জেহাদ ঘোষণা করার কথা, সমগ্র উম্মাহকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার কথা, সেখানে তাদের মুখে রা পর্যন্ত নেই। উম্মাহর চিন্তা তাদের নাই। আসলে তারা আলেম নয়, তারা ধর্ম ব্যবসায়ি, কোরান হাদীস বিক্রি করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছে। এরা জাতীর চাকর, এরা অভিশপ্ত, এরা কোরান হাদীস শিখে ইসলাম ও উম্মাহর দায়িত্ব পালন না করে ধর্ম ব্যবসা করছে। অথচ এ অবস্থা খৃস্টানের বেলায় দেখা দিলে পোপ পৃথিবীতে প্রলয় ঘটিয়ে দিত।

আবার মুসলিম নেতৃবৃন্দের অবস্থা তো আরো শোচনীয়। একমাত্র এরদোগান চেষ্টা করছে, কিন্তু একা এ বেচারা আর কত করবে। আর যে শিয়াদের আমরা ঘৃণা করি, গালি দেয়া ফরয মনে করি সেই শিয়া ইরানই প্রথম মগ ডাকুদের বিরুদ্দে সোচ্চার হয়। সাথে সাথে ত্রানসামগ্রি পাঠায়, বার্মা সরকারকে চাপ দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের সুন্নিদের হুজুর কেবলা আরব রাজারা মুখে কুলুপ এটে বসে আছে, তাদের মুখেও কোন রা নেই। এমনকি সৌদির ‘আল- শার্ক এবং আল- আওসাত নামের দুটি পত্রিকা ঘাতক বার্মা সরকারকে সমর্থন করেছে এবং রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা দিয়েছে। পত্রিকা দুটি সুচিকে সমর্থন জানিয়ে বলে, মিয়ানমারের এই নেত্রি তার দেশে সন্ত্রাস দমনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং যেসব রোহিঙ্গা মুসলমান প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে তারা সন্ত্রাসী। এই তথ্য সন্ত্রাসের কারণ হল, ইসরাইলের সমর্থন সু চির দিকে। আবার বাংলাদেশের এক মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের শবদেহ আর ধ্বংসস্তুপ মাড়িয়ে চাউল কিনার অজুহাতে মিয়ানমার গিয়েছে দাসত্ব ও আনুগত্য যাহির করতে, তাও আবার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। এই হল মুসলমানদের অবস্থা।

পাকিস্তানের জিও টিভির নির্বাহি পরিচালক হামিদ মীর বলেছেন ‘বড়ই আফসোস, মুসলিম বিশ্বের সংগঠনগুলো এবং ও আই সি মুসলিমদের শত্রুদের চেয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধেই বেশি কথা বলে। লেবানন থেকে সিরিয়া, ইরাক থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত ইসলামের শত্রুরা ফেরকাগত সংগঠন গুলোকে লালন পালন করে ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে’।

পক্ষান্তরে রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণের সাথে সাথে মোদি দৌড়ে গিয়ে সুচিকে সমর্থন জানিয়ে ঘোষণা দিয়েছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত সূচির সাথে আছে। বার্মার কাছে অস্ত্র বিক্রিতে আমেরিকা ও বৃটেনের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু ইসরাইল তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে আর রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণের সময় অস্ত্র বিক্রি আরো বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া চীন তো বার্মার সাথে আছেই। অর্থাৎ ইসলাম বিরোধি সকল শক্তি মগ ডাকাতদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন আলেম সমাজের উপর ফরয ছিল ফিরকাবাজি না করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এসব বিপর্যয় মোকাবেলা করা। কিন্তু এ অনুভুতি তাদের নেই, এমনকি পশুর বিবেচনাটুকুও তাদের নেই। কারণ সিংহ যখন গরু মহিষের পালে আক্রমণ করে তখন তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরস্পরের সাথে মাথা লাগিয়ে শত্রুমুখি ফিরে থাকে, তাকে প্রতিরোধ করার জন্য। কাজেই বুঝা যাচ্ছে ফিরকাবাজ আলেমরা পশুর চেয়েও অধ্ম। কোরানে এদেরকে গাফেল বলা হয়েছে।

যাই হউক এই দুর্দিনে আলেমদের কর্তব্য ছিল সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর মোকাবেলা করা। আর আলেম শুধু কওমি ও আলিয়া শিক্ষিতরাই নয়। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত সবাই আলেম। কাজেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী শিক্ষিত যারা স্যুটেড বুটেড ও গলায় টাই মেরে কৃত্রিম খৃষ্টান হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত তারাও আলেম, এরা দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ। কাজেই এই বিপুল শক্তি যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেহাদের ডাক দিত, মুসলিম বিশ্বকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করত, বা বার্মার দিকে লংমার্চ করত তাহলে ঐ মগের মুল্লুকে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যেত। কিন্তু তারা তা করেনি।

ইসলামের বিধান হল, নিজের মাত্র এক মুঠো খাদ্য থাকলেও ক্ষুধার্ত মুসলিম ভাইকে আধা মুঠি দিতে হবে। এজন্যই মদিনার আনসাররা মক্বার মুহাজিরদের জন্য নিজেদের সম্পদের অর্ধেক এমনকি স্ত্রী পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে রোহিঙ্গারা যখন খোলা আকাশের নিচে প্যাক কাদায় পড়ে না খেয়ে মরছে তখন বাংলাদেশের ফিরকা বিভক্ত আলেমরা গলা অব্ধি খাদ্য পুর্তি করে বউ বাচ্চা নিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। অথচ তাদের উপর তো ফরয ছিল নিজের দশটি টাকা থাকলে পাঁচটি টাকা, এক মুঠো চাল থাকলে আধা মুঠো চাল নিয়ে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দেয়া। কিন্তু তা তো তারা করেইনি, এমনকি কোন ইসলামী দল বা ফেরকা ত্রান নিয়ে সেখানে গেছে তেমনটা আমার জানা নেই।

কিন্তু আমি গিয়েছিলাম। আমার নিতান্তই ক্ষুদ্র সামর্থ নিয়ে আরো কিছু চাঁদা তুলে কয়েক জন মিলে গিয়েছিলাম। দেখেছিলাম বিপন্ন মানব সন্তানের রক্তাশ্রু আর মানবতার মহাশ্মশান। রাস্তায় দেখে দেখে যেতে থাকি, মাঠে ঘাটে পথের ধারে বিপন্ন মানবতার ঢল। খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে নারী, শিশু, ক্ষুধার্ত ও আহত মানুষ, প্যাক কাদায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। কেউ পলিথিন বা লতা পাতা দিয়ে পোকা মাকড়ের মত ঝুপড়ি বানিয়েছে। ক্ষুধার জ্বালায় শিশুগুলি ছটফট করছে। হতাশা নৈরাশ্য আর মৃত্যু ভয়ে মানুষ গুলির চোখ পাথরের মত জমাট বেঁধে গেছে। কত অচল অসহায় অশিতিপর বৃদ্ধ, শিরখার শিশু, আহতের গোঙ্গানি- এ যেন অন্তিম যাত্রায় মানুষের মিছিল, শবযাত্রীর মিছিল, লক্ষ লক্ষ বনী আদমের মৃত্যু কারাগার।

আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, এগিয়ে গেলাম। কিন্তু নাফ নদীর এক জায়গায় গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম, আমার হৃদপিন্ডে যেন রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছে, বুকটা চেপে ধরলাম। হায় আল্লাহ, তুমি কোথায়, কোথায় উমর, আলী, খালিদ, মাহমুদ, কালাপাহাড়? আমি কি দেখলাম। কোন মানুষ যেন এমন বীভৎস দৃশ্য না দেখে, শুধু নারী ও শিশুর চল্লিশ পঞ্চাশটা লাশ পানিতে ভাসছে, ফুলে ফেটে গেছে, বীভৎস হয়ে গেছে, মাছ ও জলজ প্রানি ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে। ও আল্লাহ গো’ বলে সে দুহাতে মাথা চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল। তারপর চেয়ারে গড়িয়ে পড়ল। আর সাথে সাথে একটা বিষাদের কালিমা আসরটা ঢেকে ফেলল। কান্নার গুঞ্জন উঠল, গুঞ্জন চিৎকারে রুপ নিল, চিৎকার বিলাপে রুপান্তরিত হল। সেখানে কারবালার মাতম উঠল।

কিছুক্ষণ পর মোজাহিদ দাঁড়াল। তারপর ধরা গলায় ও নাকি সুরে বলতে শুরু করল, অনেক হয়েছে আর নয়, শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে ইসলামী চিন্তাবিদ্গন ফিরকাবাজদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে কিন্তু ঐক্য তো দূরের কথা ফিরকার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কাজেই আর সুযোগ দেয়া হবে না। আরো সুযোগ দিলে একদিন ইসলাম ও উম্মাহই মিটে যাবে। কোন ফেরকাই একথা প্রমাণ করতে পারবে না যে, তারা ইসলাম ও উমাহর জন্য কিছু করছে। বরং প্রত্যেক ফেরকাই ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করছে, জীবিকার অবলম্বন বানিয়েছে মাত্র। কাজেই আর বেশি কিছু বলতে চাই না, বলার দরকারও নাই। এক কথা এক দাবী, ফেরকাবাজদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করুন। শরীয়া আদালত বা ইনকুইজিশন কোর্ট গঠন করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। প্রত্যেক ফেরকার প্রধান কয়েকজনকে লটকে দিলেই ফেরকারও মৃত্যু ঘটবে। কিন্তু এদের হত্যা না করলে কোন দিন ফিরকাবাজি মিটবে না, ইসলাম ও উম্মাহও মুক্তি পাবে না। সুতরাং ফিরকাবাজদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হউক। তখন সবাই দাঁড়িয়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করল ‘মৃত্যুদণ্ড চাই, ফাসি চাই... ইত্যাদি।

এদিকে হাসান মুসান্নার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এমনিতেই ফিরকাবাজির নাম শুনলে তার রক্ত কণিকায় আগুন ধরে যায়। এখন এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের বিবরন শুনে তার উত্তেজনা চরমে পৌঁছে গেছে। তিনি মাথা নিচু করে আছেন, ঘামে শরীর ভিজে গেছে, নাক বেয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে, শরীর কাঁপছে। এ অবস্থা বুঝে তার খাদেম আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র রুহুল আমিন দৌড়ে গেল। ‘ওস্তাদজি উঠেন’ বলে তাকে নিয়ে তার কামরায় রওয়ানা হল। মোজাহিদ আরো কিছু কথা বার্তা বলে আসর সমাপ্ত ঘোষণা করল। তারপর কয়েকজন মিলে ওস্তাদজীকে দেখতে গেল। হাসান মুসান্না বিমর্ষ হয়ে শুয়ে আছেন। তাদেরকে দেখে বললেন ‘আগামি শুক্রবার খেলাফত নিয়ে আলোচনা হবে, দেখে এসো’ বলে তিনি পাশ ফিরে শুইলেন, তখন তারাও চলে গেল।

বিষয়: রাজনীতি

৭৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File