সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- 23
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০২:২১:৪৭ দুপুর
(হতাশার হুতাশনঃ ফের একবার বুঝতে পারলাম আমি আসলেই একটা বোকা লোক এবং ইসলাম পন্থীরা কখনই নাস্তিকদের মত আদর্শবাদী নয়। কারন আমি বলেছিলাম, আসুন আমরা কিছু লোক মিলে একটা ঐক্যের ফ্লাটপর্ম গড়ে তুলি শাহবাগীদের ন্যায়। কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। মনটা ভেঙ্গে গেল, যাঃ অরন্যে রোদনের চেয়ে বসে বসে উপন্যাস লিখি। লিখলাম ‘হাসান ফেরদৈসি’ আসা করি ভাল লাগবে। কিন্তু আরাকান আমাকে পাগল বানিয়ে দিল, আবার লিখতে বসলাম ফিরকাবাজদের সমাধি রচনার উদ্দেশ্যে)।
পর্যালোচনাঃ তারপর মাওঃ মোজাহিদ দাঁড়িয়ে বলল, যাই হউক এতক্ষণ ইসলামের মূলধারার ৬টি ফিরকার প্রত্যেকটির বিদাত ও আক্বিদা সম্পর্কে নিরপেক্ষ আলোচনা হল। আসলে ফিরকা ৬টি নয় চারটি। কারণ তাবলীগ জামাতের জন্ম দেওবন্দ থেকে, দেওবন্দি মাদরাসাগুলিতে ছাত্রদেরকে আরবি ভাষা সাহিত্য কোরান হাদীস শিক্ষা দেয়া হয়। এর বাইরে বিশাল জনগোস্টির কাছে ইসলামি শিক্ষা পৌঁছে দেয়ার লক্ষে তাবলীগের জন্ম। দেওবন্দি আলেমগনই তাবলীগকে সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তাবলীগের অনেক সমস্যা আছে কিন্তু দেওবন্দি আলেমগন যেদিকে মোড় নিবেন তাবলীগও সে দিকেই যাবে। কাজেই তাবলীগকে আলাদা ফেরকা গন্য না করে দেওবন্দের মধ্যেই গণ্য করা উচিত। আবার আহলে হাদীসের জন্ম ভারত বর্ষে হলেও তাদের আক্বিদা বিশ্বাস সালাফীদের মতই। কাজেই আহলে হাদীস সালাফীদের মধ্যেই গণ্য হবে। সুতরাং ইসলামের মুল ধারার ফিরকা হল চারটি। বেরেলভী, দেওবন্দি, জামাতে ইসলামী ও সালাফী।
এখন পর্যালোচনা করে দেখতে হবে এই ফিরকাগুলির আক্বিদা বিশ্বাসে কুফর জাতীয় কিছু আছে কিনা, অর্থাৎ তারা ইসলামের গন্ডি থেকে বেরিয়ে গেছে কিনা। যদি ইসলামের বাইরে চলে যায় তাহলে সেগুলি বাদ দিতে হবে এবং ঐক্যে ফিরে আসতে হবে। কিন্তু যদি ইসলামের মধ্যে থাকে অর্থাৎ মুসলিম থাকে তাহলে তাদের মধ্যে ঐক্য ফরয বিভক্তি হারাম। আর যদি কোন ফেরকার মধ্যে শিরক বিদাত থাকে কিন্তু তারা সেগুলি বর্জন করতে অস্বিকার করে তাহলে তাদের সাথে বিভক্তি শুধু জায়েযই নয় বরং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে ঐক্যে ফিরে না আসা পর্যন্ত।
অনন্তর আমরা জানি যে, আহলে হাদীস ও সালাফীরা শিরক বিদাতের ধারে কাছেও নেই। শিরক বিদাতের মুলোৎপাটনের লক্ষ্যেই তাদের উত্থাপিত ছয়টি বিষয়কে তারা হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছে। যদিও দেওবন্দি এবং অন্যরা বলছে আলোচ্য ছয়টি বিষয় জায়েয এবং এর পক্ষে দলীল আছে। কিন্তু সালাফিরা শিরক বিদাতের বীজ অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দিয়েছে বিধায় তাদের সাথে বিভক্তির সুযোগ নেই। এবার বাকি থাকল তিন ফিরকা, দেওবন্দি, জামাতে ইসলামী ও বেরেলভী। এই তিনটি ফেরকার মধ্যে মুল বিতর্কিত বিষয় চারটি। এ চারটি ব্যতীত অন্যান্য বিষয়গুলি অতীব সাধারণ, তুচ্ছাতিতুচ্ছ নগন্য বিষয়, জায়েয বিষয়- সেগুলির আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। এখানে শুধু বিতর্কিত চারটি বিষয় আলোচনা করছি -
বেরেলভী মতবাদঃ ১। রাসূল (সাঃ) গায়েব জানেন, ২। তিনি নুরের সৃষ্টি।
১। রাসূল (সাঃ) এর গায়েবজ্ঞান তত্ত্বঃ কোরান হাদিসের অসংখ্য নস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল (সাঃ) গায়েব জানেন না। এজন্যই তারা সরাসরি বলে না যে, রাসূল (সাঃ) গায়েব জানেন। যদি সরাসরি বলত তাহলে তাদেরকে কাফের আখ্যা দিয়ে যুদ্ধ করা যেত। কিন্তু তারা ইহুদি ও মু’তাযিলাদের মত সুক্ষ্মাতিসুক্ষ দর্শন খাটিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রমাণ কারার প্রয়াস পেয়েছে যে, রাসূল (সাঃ) গায়েব জানেন। অর্থাৎ তারা গায়েব জ্ঞান তত্ত্বটাকে জায়েয সীমার মধ্যে নিয়ে এসেছে। কাজেই তাদের এই মতবাদ এখন আর শিরক বিদাতের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সাদামাটা জায়েয। এ বিষয়ে পুর্বে আলোচনা হয়েছে।
২। রাসূল (সাঃ) নুরের সৃষ্টি তত্ত্বঃ এটা একটা নিরর্থক বিতর্ক। কারণ কেউ যদি বলে রাসূল (সাঃ) নুরের সৃষ্টি তাহলে তার সওয়াবও হবে না গুনাহও হবে না। আবার কেউ যদি বলে রাসূল (সাঃ) মাটির সৃষ্টি তাহলেও তার সওয়াবও হবে না, গুনাহও হবে না। ইহকালে পরকালে কোথাও জবাবদিহিও করতে হবে না। কাজেই বুঝা গেল, এটা জায়েয বিতর্ক, ফিরকাবাজির স্বার্থে বিতর্ক। সুতরাং এ বিষয়টা বিতর্কের আওতা থেকে বাদ গেল কিন্তু গায়েব জ্ঞান তত্ত্বটা অতি বিশ্লেষণের কারণে ধর্তব্যের মধ্যে থাকল।
আর বাকি দুটি বিষয় হলো মাওঃ মওদূদী (রহঃ) এর বক্তব্যঃ ১। নবীগন মা’সূম নয়, ২। সাহাবায়ে কেরাম মি’ইয়ারে হক বা অনুসরনযোগ্য নয়।
১। মাওঃ মওদূদী (রহঃ) কখনো সরাসরি একথা বলেননি যে, নবীগন ইচ্ছাপুর্বক কবিরা বা ছগিরা গুনাহ করেছেন। কোরানের বিভিন্ন আয়াতে কয়েকজন নবীর ভুলের কথা বলা হয়েছে। যেমন, হযরত আদম (আঃ) এর গন্ধম ফল ভক্ষন, মুসা (আঃ) এর এক ঘুষিতে কিবতি হত্যা, ইউনুস (আঃ) কে আল্লাহ্র নির্দেশের পুর্বেই দেশত্যাগ, দাউদ (আঃ) কর্তৃক উরিয়া হিত্তিয়ার স্ত্রীকে বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ। ইউসুফ (আঃ) এর অর্থমন্ত্রির পদ দাবী ইত্যাদি। আর এসব আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়েই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ মওদূদী (রহঃ) ছিলেন স্বাধীন মুজতাহিদ। তিনি আসলাফের অনুসরণ করতেন না, নিজে যা বুঝেছেন সেই অনুযায়ি তাফসীর করেছেন। আর তা আসলাফের রীতির খেলাফ হয়ে গেছে। তখন বিতর্ক উঠেছে কিন্তু তার কোন ব্যাখ্যা জায়েয সীমা লঙ্ঘন করেনি।
২। আবার সাহাবায়ে কেরামের আদালতের প্রতি ঈমান রাখা বা বিশ্বাস রাখা বুনিয়াদি বিষয় নয় অর্থাৎ ঈমানের অঙ্গ নয়। যদি তাই হত তাহলে শিয়ারা কাফের বলে গণ্য হত। কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, হযরত আলী (রাঃ), সালমান ফারেসি, আম্মার বিন ইয়াছার ও আরো কয়েকজন মুস্তাদআফ সাহাবী ব্যতীত বাকি সকল সাহাবী রাসূল (সাঃ) এর ওফাতের পর কুফুরিতে ফিরে যায় (নাউযুবিল্লাহ)। প্রথম তিন খলীফা হযরত আলীর অধিকার হরন করেছেন। এজন্য তারা মিম্বারে দাঁড়িয়ে সাহাবাগনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এর পরেও সুন্নীদের সর্ব সম্মত অভিমত হল শিয়ারা মুসলমান, কাফের নয়। যদি সাহাবায়ে কেরামের আদালতের প্রতি ঈমান রাখা ফরয হত তাহলে শিয়ারা কাফের বলে গণ্য হত।
পক্ষান্তরে মাওঃ মওদূদী (রহঃ) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মসলক অনুযায়ি সকল সাহাবায়ে কেরামের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা পোষণ করেন। তবে তার খেলাফত ও মুলকিয়্যত গ্রন্থে হযরত উসমান (রাঃ), মোয়াবিয়া (রাঃ) ও মুগিরা ইবনে শু’বার (রাঃ) ভুলগুলি তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ সর্বজন গ্রাহ্য অতীত ইতিহাস গ্রন্থগুলি থেকে তিনি উদৃতি তুলে দিয়েছেন মাত্র, নিজে কোন মন্তব্য করেননি। কিন্তু উক্ত তিন মহান ব্যাক্তির ভুলের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ব্যাখ্যা হল, সেগুলো ছিল তাদের ইজতিহাদি ভুল। কিন্তু মাওঃ মওদূদী উক্ত গ্রন্থের প্রশ্ন উত্তর পর্বে বলেছেন ‘ভুল ভুলই, সেগুলিকে ইজতিহাদি বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করার প্রয়োজন নাই। ব্যস এখানেই বাধল গোল, বিতর্ক হল, ফিরকা হল। অথচ এটা জায়েয বিতর্ক।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা গেল, দেওবন্দি, জামাতি, বেরেলভী- এ তিনটি ফিরকার মধ্যে মুল বিতর্কিত বিষয় হল তিনটি। ১। রাসূল (সাঃ) এর গায়েব জ্ঞান তত্ত্ব, ২। নবীগণের নিষ্পাপ তত্ত্ব, ৩। সাহাবায়ে কেরামের সত্যের মাপকাঠি তত্ত্ব। আর এই তত্ত্বগুলির মধ্যে কোনটাই শিরক ও কুফর সীমার মধ্যে নেই, যা হয়েছে সব জায়েয বিতর্ক। কাজেই সবাই মুসলমান, খাটি মুসলমান। আর জায়েয বিষয়ে বিতর্ক করে মুসলমানের মধ্যে ফিরকাবাজী হারাম। কারণ ইমানদারদের মধ্যে ঐক্য ফরয বিভক্তি হারাম। আর ঈমানের সংজ্ঞায় কোরান হাদীস বলছে -
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالنَّصَارَىٰ وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ [٢:٦٢]
নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে পুরুস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالصَّابِئُونَ وَالنَّصَارَىٰ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ [٥:٦٩]
নিশ্চয় যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, ছাবেয়ী বা খ্রীষ্টান, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না
عَنْ عُبَادَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَالجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، أَدْخَلَهُ اللَّهُ الجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ العَمَلِ» قَالَ الوَلِيدُ، حَدَّثَنِي ابْنُ جَابِرٍ، عَنْ عُمَيْرٍ، عَنْ جُنَادَةَ وَزَادَ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ أَيَّهَا شَاءَ
অনুবাদঃ উবাদা ইবনে সাবেত হতে বর্নিত, রাসূল(সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এ মর্মে সাক্ষ্য দেবে যে, এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই, তার কোন শরীক নাই, এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্র বান্দা ও রাসূল, ঈসা (আঃ) আল্লাহ্র বান্দা ও রাসূল, তিনি মরিয়মের প্রতি প্রেরিত আল্লাহ্র কালেমা ও রুহ (শক্তি)। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। তাহলে তার আমল যেমনই হউক না কেন আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করাবেন। অন্য হাদীসে এসেছে অষ্ট জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে তার ইচ্ছানুযায়ি প্রবেশ করবে।
أَنَّ أَبَا ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حَدَّثَهُ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ ثَوْبٌ أَبْيَضُ، وَهُوَ نَائِمٌ، ثُمَّ أَتَيْتُهُ وَقَدِ اسْتَيْقَظَ، فَقَالَ: " مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلَّا دَخَلَ الجَنَّةَ " قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: «وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ» قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: «وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ» قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: «وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ عَلَى رَغْمِ أَنْفِ أَبِي ذَرٍّ»
২। হযরত আবু যর গিফারি (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূল (সাঃ) এর কাছে আগমন করলাম তখন তিনি সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর আবার এসে দেখলাম তিনি জাগ্রত। তখন আমাকে দেখে তিনি বললেন, যে কোন বান্দাহ স্বীকৃতি দিবে যে আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই, আর এই স্বিকৃতির উপর যদি তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন আমি বললাম, যদি সে যিনা করে ও চুরি করে। রাসূল (সাঃ) বললেন, যিনা ও চুরি করলেও জান্নাতে যাবে। আমি আশ্চর্য্য হয়ে কথাটা তিনবার জিজ্ঞেস করলাম আর প্রতিবারই রাসূল (সাঃ) উত্তর দিলেন, যিনা ও চুরি করলেও জান্নাতে যাবে, তাতে আবু যর যতই অসন্তুষ্ট হউক না কেন।
" ذَاكَ جِبْرِيلُ أَتَانِي، فَقَالَ: مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ، قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: وَإِنْ زَنَى، وَإِنْ سَرَقَ "
৩। রাসূল (সাঃ) বলেন, আমার নিকট জিবরাঈল এসে বললেন, আপনার উম্মতের যে কেউ মৃত্যুবরণ করবে এ অবস্থায় যে, সে আল্লাহ্র সাথে শিরক করেনি তাহলে সে জান্নাতে যাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম যদি যিনা ও চুরি করে? জিবরাঈল (আঃ) বললেন, যিনা ও চুরি করলেও জান্নাতে যাবে।
أَبَا ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " أَتَانِي جِبْرِيلُ فَبَشَّرَنِي أَنَّهُ مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ، قُلْتُ: وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى، قَالَ: وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى "
৪। আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, একদা জিবরাঈল (আঃ) এসে আমাকে সুসংবাদ দিলেন, যে কেউ আল্লাহ্র সাথে শিরক না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে যাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি সে চুরি করে ও যিনা করে। রাসূল (সাঃ) উত্তর দিলেন, যিনা ও চুরি করলেও জান্নাতে যাবে
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ "
৫। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাআল্লাহ বলবে, এর দ্বারা একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা করবে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন।
حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمُعاذٌ رَدِيفُهُ عَلَى الرَّحْلِ، قَالَ: «يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ»، قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: «يَا مُعَاذُ»، قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَسَعْدَيْكَ ثَلاَثًا، قَالَ: «مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ»، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ: أَفَلاَ أُخْبِرُ بِهِ النَّاسَ فَيَسْتَبْشِرُوا؟ قَالَ: «إِذًا يَتَّكِلُوا» وَأَخْبَرَ بِهَا مُعَاذٌ عِنْدَ مَوْتِهِ تَأَثُّمًا
৬। আনাস (রাঃ) বলেন, একবার রাসূল (সাঃ) ও মুয়ায বিন জাবাল একই সওয়ারে আরোহী ছিলেন। তখন রাসূল (সাঃ) ডাকলেন, হে মুয়ায বিন জাবাল। মুয়ায উত্তর দিলেন, আপনার খেদমতের সৌভাগ্যে আমি হাজির হে আল্লাহ্র রাসূল। নবী (সাঃ) গুরুত্বপূর্ণ কথার পূর্বে তাকে সতর্ক করার জন্য এভাবে তিনবার ডাকলেন, অতঃপর বললেন, যে ব্যক্তি অন্তরের বিশ্বাসের সাথে সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মদ (সাঃ) আলাহর রাসূল। তার জন্য আল্লাহ জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন। তখন হযরত মুয়ায বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল, আমি কি মানুষকে এই সংবাদ দিব না যাতে তারা খুশি হতে পারে? রাসূল (সাঃ) বললেন, না তাহলে তারা এর উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে, আমল বাদ দিবে। তারপর মুয়ায (রাঃ) মৃত্যুর সময় হাদীস গোপনের গুনাহের ভয়ে এ হাদীস বনর্না করে গেছেন।
ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত কোরান হাদীসের নস দ্বারা প্রমাণ হল, যে কালেমা পড়বে সে অবশ্যি জান্নাতে যাবে (তবে পাপ পুন্যের হিসাবের পর)। কিন্তু সমস্যা হল আল্লাহ রাসূল (সাঃ) জান্নাত দিলে কি হবে ফিরকাবাজরা প্রতিপক্ষ ফিরকাকে কখনোই জান্নাতের অনুমতি দিবে না। এরা এতটাই নিকৃষ্ট, এতটাই ঘৃনিত, এতটাই নিষ্ঠুর, এতটাই জঘন্য, এতটাই অমানবিক পশু যে, একমাত্র নিজেদের ফেরকা ব্যতীত অন্য কাউকে জান্নাতের অনুমতি দিতে রাজি নয়। আজ যদি জান্নাত জাহান্নাম পৃথিবীতে এনে এদেরকে অথরিটি দেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে তারা নিজেদের ফেরকার সদস্যদের জান্নাতে ঢুকাচ্ছে আর প্রতিপক্ষ ফেরকাগুলিকে ঠেলে ধাক্বিয়ে ঝাঁটা মেরে জাহান্নামে ঢুকাচ্ছে। এটাই হল তিক্ত বাস্তবতা। এরা সবাই যেহেতু প্রতিপক্ষ ফেরকাকে জাহান্নামে ঢুকাতে চায় কাজেই শুরু হবে ঠেলাঠেলি। তারপর দেখা যাবে ঠেলাঠেলি করে সবাই জাহান্নামে চলে গেছে আর জান্নাত খালী পড়ে আছে। আর বাস্তবেও ফেরকাবাজরা জাহান্নামে যাবে, ওদের কপালে জান্নাত জুটবে না। কারণ এদের কারণেই ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হচ্ছে। তখন আসরে হাসির রুল পড়ে গেল, সবাই হাসতে লাগল। মোজাহিদ বলল, ‘যাই হউক ইসলামী চিন্তাবিদগণ ঈমানের জামে মানে- পূর্নাংগ সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন, সেটাকে আমরা ইমানে মুফাসসাল বলি এবং সবাই মক্তব থেকেই মুখস্ত করে এসেছি। অর্থাৎ ইমান ও মুমিনের সংজ্ঞা হল-
আমানতু বিল্লাহি ওয়া মালায়িকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি...... অর্থাৎ আল্লাহ, ফিরিস্তা, আসমানি কিতাবসমূহ, সকল নবী রাসূল, কিয়ামত দিবস, তাকদিরের ভাল-মন্দ, পুনরুত্থান- এই বিষয়গুলিতে যে বিশ্বাস করবে সেই পাক্বা মুমিন। আর একথা সর্বজন বিদিত ও স্বীকৃত যে, শিয়া সুন্নি নির্বিশেষে প্রত্যেক মুসলমান এগুলিতে বিশ্বাস করে, কেউ কোন এখতেলাফ করে না। কাজেই সবাই মুসলমান, খাটি মুসলমান। সুতরাং এদের মধ্যে ফিরকাবাজি করা, বিভক্ত হওয়া হারাম, সম্পুর্ন হারাম।
আকাবীর সমস্যাঃ একজন স্কুল শিক্ষক প্রশ্ন করল, আপনার আলোচনায় বুঝা গেল আল্লাহ রাসুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যে কেউ কলেমা পাঠ করবে সে খাটি মুসলমান, জান্নাতে যাবে। আর মুসলমানের মধ্যে ফিরকাবাজি হারাম। এখন প্রশ্নটা হল, তাহলে আমরা এতসব ফিরকায় বিভক্ত হয়ে আছি কেন, আর কোন যম রাজাই বা বিভক্ত করল? মোজাহিদ বলল, এর কারণ হল আকাবির সমস্যা, আমরা তো কোরান হাদিস মানি না, মানি স্ব স্ব ফিরকার মুরুব্বীদের। আর এই মুরুব্বিরাই উম্মাহকে বিভক্ত করে রেখেছে। যেমন দেওবন্দীরা আকাবিরে দেওবন্দের অনুসরণ করে, তাবলীগীরা আকাবীর বা মুরুব্বীদের অনুসরণ করে, এভাবে প্রত্যেকটি ফেরকা স্ব স্ব ফেরকার আকাবীর বা মুরুব্বীদের অনুসরণ করে, কোরান হাদিসের নয়। এখানে দু’টি বিষয় আলোচ্য, আকাবির শব্দ ও আনুগত্য।
১। আকাবীর শব্দের মূলধাতু কিবর থেকে গঠিত কোন শব্দ যখন আল্লাহ্র দিকে নিসবত হয় তখন ইতিবাচক অর্থ প্রদান করে। যেমন আল্লাহু আকবর বা কাবির অর্থাৎ আল্লাহ্ মহান, এটা আল্লাহ্র গুনবাচক নামও বটে। যেমন হাদীসে কুদসীতে বলা হয়েছে –الكبرياء رداءي لا تنازعوا برداءي – ( অহংকার আমার চাদর, তা নিয়ে টানাটানি করো না)। কিন্তু কিবর ধাতু মুলের কোন শব্দ যখন মানুষের প্রতি নিসবত হয় তখন তা বয়স ও আকৃতিতে বড়- এ দু’টি অবস্থা ব্যতিত অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতিবাচক অর্থ প্রদান করে। যেমন, মুতাকাব্বির, মুস্তাকবির অর্থাৎ অহংকারী, দাম্ভিক, বড়লোক।
কোরান থেকে আমি কিছু শব্দের কোটেশন দিচ্ছি- كَبَائِرَ الْإِثْمِ- বড় বড় গোনাহ। مُتَكَبِّرٍ جَبَّارٍ – দাম্ভিক স্বৈরাচারী। مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ – অহংকারীদের আবাসস্থল। إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ - যদি তোমরা বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার, ইত্যাদি। কাজেই প্রত্যেক ফেরকার অনুসারীরা স্ব স্ব বুজুর্গদের আকাবীর নামকরণ করে তাদের অপমান করছে এবং মন্দ ভাবার্থের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথবা অন্য দৃষ্টিতে ঠিকই আছে, কারণ তারাই বিভিন্ন ফিরকা বিভক্তি সৃষ্টি করে উম্মত ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত করে দিয়ে গেছেন।
২। আনুগত্যঃ আবার আকাবীর নামের কোন শ্রেণী- গোষ্টির তাকলীদ বা অনুসরণ জায়েয কিনা উলামায়ে কেরামকে আগে তা শনাক্ত করতে হবে। কারণ কোরান হাদীসের কোথাও কোন আলেম, ফকিহ, মুহাদ্দিস বা পীর মুর্শিদের অনুসরণের কথা বলা হয়নি। বরং কোরানে দৃঢ়ভাবে বলা হয়েছে -
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ – আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য কর।
مَّن يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ - যে রাসুলের আনুগত্য করল সে আল্লাহরই আনুগত্য করল।
রাসূল (সঃ) দৃঢ়ভাবে বলে গেছেন -- تركت فيكم أمرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنة نبيه – অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে আমি দুটি জিনিস রেখে গেলাম- তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না যতক্ষণ সে দুটি আঁকড়ে ধরে থাকবে, তা হল কোরান ও সুন্নাহ। তিনি কোন আকাবীর বা বুজুর্গের অনুসরণ করতে বলেননি। সুতরাং কোরান হাদীসের নির্দেশ উপেক্ষা করে এখন আমরা বুজুর্গানে দ্বীন- যারা দ্বীনের খেদমত করে গেছেন, তাদেরকে রাসূলের স্থলাভিষিক্ত করে নবী রাসূলের মতই অনুসরণ শুরু করে দিয়েছি, নিঃশর্ত আনুগত্য করছি। আর এভাবেই আমরা ধর্ম গুরুদের রব হিসাবে গ্রহণ করে অত্র আয়াতের প্রতিপাদ্য হয়েছি- اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّه – তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে ধর্মগুরুদের রব হিসাবে গ্রহণ করেছে।
মোজাহিদের ছাত্র জামাল প্রশ্ন করল, অনুসৃতদের কি অবস্থা হবে? অর্থাৎ যেসব বুজুর্গানে দ্বীন ইসলামের খেদমত করে গেছেন। এরপর তাদের অনুসরণে একেকটা ফেরকার জন্ম হয়ে গেছে। যদিও এসব মনিষীগণ কখনো বলেননি যে, আমি যা বলেছি- করেছি বা আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি নির্ভুল, তোমরা আমার আনুগত্য করবে, আমার মতামত নির্ভুল জানবে আর অন্যেরটা ভ্রান্ত বলবে। এতদসত্তেও পরবর্তী লোকেরা যখন তাদের নামে ফিরকা বিভক্তি করেই ফেলল তখন আল্লাহ তা’লাও তো তাদেরকে কঠোর অভিসংশনের মুখোমুখি করবেন। কারণ যেখানে তিনি ঈসা (আঃ) কে অভিসংশনের মুখোমুখি করবেন সেখানে ঐসব বুজুর্গরা তো নস্যি। যেমন -
وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيْنِ مِن دُونِ اللَّهِ - যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদেরকে বলে দিয়েছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর ?
তদ্রুপ তিনি তাদেরকেও প্রশ্ন করবেন যে ‘তোমরা কি আমাকে বাদ দিয়ে তোমাদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করে নিঃশর্ত আনুগত্য করার কথা বলেছিলে ? তখন তাদের উত্তর কি হবে? মোজাহিদ বলল, শুনে যাও, শুনে যাও হে ফেরকাবাজরা তাদের উত্তর -
قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚ إِن كُنتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ [٥:١١٦]
مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ ۚ وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْ ۖ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنتَ أَنتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِ شَيْءٍ شَهِيدٌ [٥:١١٧]
إِن تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ ۖ وَإِن تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
(১১৬) তিনি বলবেন -- ''তোমারই সব মহিমা! এটি আমার পক্ষে সম্ভবপর নয় যে আমি তা বলবো যাতে আমার কোনো অধিকার নেই। যদি আমি তা বলতাম তবে তুমি তা নিশ্চয়ই জানতে। আমার অন্তরে যা আছে তা তুমি জানো, আর আমি জানি না কি আছে তোমার অন্তরে। নিঃসন্দেহে কেবল তুমিই অদৃশ্য সন্বন্ধে পরিজ্ঞাত।
(১১৭) ''আমি তাদের বলিনি তুমি যা আমাকে আদেশ করেছ তা ছাড়া অন্য কিছু, যথা - 'তোমরা আল্লাহ্র উপাসনা করো যিনি আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভু’, আর আমি তাদের সাক্ষী ছিলাম যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, কিন্তু যখন তুমি আমার মৃত্যু ঘটালে তখন তুমিই ছিলে তাদের উপরে প্রহরী। আর তুমিই হচ্ছো সব-কিছুরই সাক্ষী।
(১১৮) ''তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই দাস, আর যদি তাদের তুমি পরিত্রাণ করো তবে তুমিই তো মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।’’ কাজেই বুঝা গেল পরকালে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই।
একজন প্রফেসর প্রশ্ন করল, আপনার বর্ননায় বুঝা যাচ্ছে তারা সম্পূর্ণ দায়মুক্ত। আল্লাহ্র দরবারে তাদের কোন জবাবদিহিতা নাই। অথচ এসব ফিরকার মুল উৎস তারাই, তাদের প্রবর্তিত পন্থা অনুসরণে একেকটা ফেরকার জন্ম হয়েছে। কাজেই আমার মতে তারা অভিযুক্ত। মাওঃ মোজাহিদ বলল, তারা তো অভিযুক্ত নয়ই বরং তারাই হল ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের ত্রানকর্তা। তাদেরকে আপনি শ্রদ্ধা করবেন নাকি অবজ্ঞা করবেন তা জানতে হলে আগে তাদের অবদান ও ইতিহাস জানতে হবে। আমি সংক্ষেপে তা বর্ননা করছি।
দেওবন্দের অবদানঃ ইংরেজরা মুসলমানের সাম্রাজ্য কেড়ে নিয়েছিল বিধায় তারা ছিল ইংরেজের প্রতি ক্ষিপ্ত। আর ধুর্ত ইংরেজ ‘বিভক্ত কর ও শাসন কর’ নীতি অনুযায়ি হিন্দুদের হাতে নিল এবং মুসলিম ধ্বংসের তৎপরতায় লিপ্ত হল। হিন্দুদেরকে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা দিল আর মুসলমানদেরকে চাকরি, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করল, এমনকি তাদের সম্পদ কেড়ে নিল। সরকারী ব্যয়ে পরিচালিত আশি হাজার মাদরাসা বন্ধ করে দিল। তখন সর্ব প্রথম শাহ আঃ আজিজ মুহাদ্দেসে দেহলভী (রঃ) ভারত বর্ষকে দারুল হরব ঘোষণা দিলেন। মুসলমানরা ইংরেজ বিরোধি যুদ্ধে লিপ্ত হল।
১৮৫৭ সালের ব্যর্থ সিপাহি বিপ্লবের পর নিলচক্ষু কুকুরের জাতেরা শুধু আলেম হত্যা করেছিল ৫১ হাজার ৫০০ জন। সেই হত্যাযজ্ঞে সাধারণ মুসলমানের সংখ্যা কত ছিল তা আমার জানা নাই। গ্র্যান্ড সার্কেল রোডের প্রতিটা গাছে অসংখ্য মুসলমানকে লটকে দেয়া হয়েছিল। অবশিষ্ট আলেমগন যখন দেখলেন ভারত থেকে ইসলাম ও মুসলিম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, কিন্তু ইংরেজের সাথে সন্মুখ সমরে বিজয়ের কোন সম্ভব নাই, তখন তারা ইসলাম ও উম্মাহ রক্ষার স্বার্থে ১৮৬৬ সালে উত্তর প্রদেশে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করলেন। এটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল ইসলামী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে মুসলমানের ঈমান টিকিয়ে রাখা এবং ইংরেজ বিরোধি সৈনিক তৈরি করা। সময় ও সুযোগমত ইংরেজ তাড়িয়ে মুসলিম সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করা। এরপর বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাই দেওবন্দের এমন কোন ছাত্র ছিল না যারা ইংরেজ বিরোধি আন্দোলন করেনি। সর্বোপরি যদি দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত না হত তাহলে উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষা কিছু থাকত বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র দেখুন, সরকার প্রতিটি নাগরিককে স্বাক্ষর বানানোর জন্য কোটি কোটি টাকা ঢালছে অথচ এখন পর্যন্তও অর্ধেক মানুষ নিজের নাম লিখতে পারে না। পক্ষান্তরে ইসলামী শিক্ষার জন্য সরকার একটি পয়সাও ব্যয় করে না অথচ এমন কোন মুসলমান নেই, যে আমপারা বা কোরান শরীফ পড়তে পারে না, নামাযের প্রয়োজনীয় সুরা জানে না, দরুদ তাশাহুদের মত কঠিন কঠিন দোয়া জানে না। আর এসবই হল একক দেওবন্দের আবদান। কিন্তু আলিয়া মাদরাসা ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ক্ষেত্রে কোন অবদান তো নেয়ই বরং তারা নিজেরাই শুদ্ধ রুপে কোরান পড়তে পারে না। তবে যারা মক্তবে পড়েছে তারা ভিন্ন। দেওবন্দি আলেমরাই মক্তব নাদিয়া নুরানি ইত্যাদি কোরান শিক্ষার পদ্ধতি আবিস্কার করে জাতিকে কোরান ও ইসলামী শিক্ষা দিয়ে চলেছেন।
অর্থাৎ আমরা মুসলিম ঘরে পৌত্তলিক হিসাবে জন্ম নেই, তখন কওমি পন্থি আলেমরাই আমাদেরকে কোরান শিক্ষা দিয়ে মুসলমান বানান। দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, এম পি, মন্ত্রী থেকে নিয়ে রিকশা ওয়ালা পর্যন্ত সকলকে কোরান শিক্ষা দিয়ে মুসলমান বানিয়েছে মক্তব ও নাদিয়া নূরানির শিক্ষকরা। যারা শাপলা চত্বরে কওমিপন্থীদের হত্যা করেছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন ‘কোরান কার কাছে পড়েছেন, আপনার খৎনা বিয়ে কে করিয়েছে, আপনার বাবা মায়ের জানাযা কে করিয়েছে? অবশ্যি বলবে যে, অমুক মাদরাসার হুজুর বা মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিন। আজ যদি দেওবন্দের অবদান বাদ দেয়া হয় তাহলে উপমহাদেশে ইসলামের অবস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। কোরান শিক্ষার জন্য, ইমামতি মুয়াজ্জিনির জন্য, জানাযা বিয়ে পড়ানো, ইত্যাদির জন্য লোক খুঁজে পাবেন না। কাজেই বুঝা যাচ্ছে ভারতীয় ইসলাম বলতে সিংহভাগ দেওবন্দিদের অবদান।
এখন প্রশ্ন হল, এত অবদান সত্ত্বেও যারা দেওবন্দের বিরোধিতা করে ওরা কারা, কেন করে? এর উত্তর হল, এরা ইসলামের দুশমন। কারণ এরা চায় না ইসলামের সন্তানরা কোরান শিক্ষা করে ইসলাম ও ঈমানের উপর অটুট থাকুক। কাজেই এরা ইসলাম ও উম্মাহর দুষমন। আর উম্মাহর দায়িত্ব হল এই দুষমনদের চিহ্নিত করে বিচার করা।
জামাতে ইসলামীঃ পুর্বে আলোচনা হয়েছে ইংরেজরা এ দেশের মাদরাসাগুলি বন্ধ করে দিয়ে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদি শিক্ষার প্রবর্তন করে। লর্ড ম্যাকলের বক্তব্য থেকে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়। তখন বস্তুবাদি শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলমানের সন্তানরা ভাবতে লাগল, ইসলামে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপযোগি কোন বিধি বিধান নাই, যা আছে শুধু প্রাচীন গোত্র ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার কিছু নিয়মকানুন। তখন তারা সমাজতন্ত্র ও গনতন্ত্রের দিকে ঝুকতে লাগল। মাওঃ মওদূদী দেখলেন অত্যন্ত ইনসাফ পূর্ণ ও মানবাধিকার পূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা বাদ দিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতেরা কার্লমার্ক্স ও মেকিয়াভেলির উম্মত হয়ে যাচ্ছে। তখন তিনি ইসলামের যুগোপযোগী ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেয়া শুরু করলেন।
ফল হল এই, মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত উম্মতই থাকল। তারা ইসলামকে জীবনের সংবিধান হিসাবে গ্রহন করল। কাজেই বুঝা গেল ইসলামের জন্য মাওঃ মওদূদীর অবদান অপরিসীম। তিনি না থাকলে আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীটা হয় নাস্তিক্যবাদি সমাজতন্ত্র করত অথবা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদি গণতন্ত্রী হত। তখন আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোন লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। আহঃ দ্বীনের জন্য কতই না উত্তম সেবা। কাজেই যে ইসলামকে ভালবাসে সে মাওঃ মওদূদী (রহঃ) কেও ভালবাসবে। কারণ তিনি সারা জীবন ইসলামের জন্য কাজ করে গেছেন।
এখন প্রশ্ন হল, যারা মওদূদী ও জামাতের বিরোধিতা করে ওরা কারা, কেন করে? এর উত্তর হল, এরা ইসলাম ও উম্মাহর শত্রু। কারণ এরা চায় না আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীটা ইসলামের পথে চলুক, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করুক। এরা চায় আধুনিক শিক্ষিতরা জামাত শিবির না করে কমিউনিস্ট , ছাত্র ইউনিয়ন বা ধর্মনিরপেক্ষ ছাত্র লীগ, ছাত্রদল করুক। এর প্রমাণ হল, এরা ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ইত্যাদির বিরোধিতা করে না, বরং বাপ ডাকে। যেমন হেফাজতের মার খাওয়ার পর তাদের নেতারা ছাত্রলীগের প্রশংসা করল আনুগত্য করল, প্রভু হিসেবে স্বীকৃতি দিল কিন্তু ছাত্র শিবিরের বিরোধিতা করেই চলল। কাজেই এদের বিচার না করা পর্যন্ত ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তির কোন পথ নেই।
কওমি মাদরাসার একজন শিক্ষক দাঁড়িয়ে বলল, আমরা তো জামাত শিবিরের বিরোধিতা করি মাওঃ মওদূদীর ভুলের কারণে। সেই ভুলগুলি মীমাংসা করে নিলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, ফিরকাবাজিও মিটে যায়। মোজাহিদ খেকিয়ে উঠল, ‘ভুল ভুল শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে আর কত। উপমহাদেশে ইতিপূর্বে ইসলামের উপর মাওঃ মওদূদীর মত এত ব্যাপক লেখালেখি আর কেউ করেনি। সঙ্গত কারণেই কিছু ভুল হয়েছে, আপনিও লেখেন না দেখি কয় পৃষ্ঠা লেখতে পারেন, কয়টা ঠিক করেন আর কয়টা ভুল করেন। যাদের নিজের মুরোদ নাই তারা অন্যের ভুল ধরতে খুব পটু। যাই হউক, আগে বলা হয়েছে ঐ ভুল গুলি বুনিয়াদি কোন বিষয় নয় ফুরুয়ি বিষয়। আর ফুরুয়ি বিষয়ে এখতেলাফ জায়েয তবে এফতেরাক (বিভিক্তি) হারাম। আর উভয় শ্রেনি এই হারামে লিপ্ত। জামাত মাওঃ মওদূদীর ভুল গুলি আঁকড়ে থাকার জন্য, আর বিরোধিরা ফুরুয়ি বিষয়ে ফিরকাবাজি করার কারণে অপরাধি। কাজেই আমি উভয় শ্রেণীর বিচার দাবী করছি।
মাওঃ ইলিয়াসঃ ইংরেজ আমলে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ মুসলমানদের হিন্দু বানানোর জন্য ঘর ওয়াপসি আন্দোলন শুরু করল। খৃষ্টান পাদ্রীরা বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান খুলে খৃষ্টান বানানোর তৎপরতা শুরু করল। তখন দেওবন্দি আলেম মাওঃ ইলিয়াস (রঃ) দেখলেন, মুসলমানদের বৃহত্তর অংশ ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানে না, এমনকি কলেমা পর্যন্ত জানে না। আর এরাই তুচ্ছ মুল্যের বিনিময়ে নিজেদের দ্বীন ঈমান বিকিয়ে দিছে। তখন তিনি তাবলীগের সুচনা করেন। কথিত আছে তিনি রোজানা কামলা নিয়ে কাজ না করিয়ে সারা দিন মসজিদে বসে তা’লীম দিতেন। এভাবে তিনি তাবলীগের প্রবর্তন করেন। তদীয় ভাতিজা ও জামাতা মাওঃ যাকারিয়া (রঃ) অশিক্ষিত প্রান্তিক মানুষের বুঝার সুবিধার্থে ফাযায়েলে আমল রচনা করেন। একেবারে প্রান্তিক অশিক্ষিত মানুষের জন্য উপযোগী করতে গিয়ে গ্রন্থটিতে অনেক কিসসা কাহিনী ও জাল হাদীস সঙ্কলিত হয়ে গেছে।
উপমহাদেশে তাবলীগ দ্বীনের বিরাট খিদমত করছে। মাদরাসা শিক্ষিতদের বাইরে বিরাট জনগোস্টির কাছে ইসলামী শিক্ষা ও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছে। আজ তাবলীগ না থাকলে মাদরাসার বাইরে অবস্থিত কৃষক শ্রমিক ব্যবসায়ি আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীর জন্য ইসলাম শিক্ষার এমনকি নামায রোযা শিক্ষার মতও কোন সুযোগ ছিল না। ফলে তাদের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থেকেই কবরে যেতে হত। কিন্তু মাওঃ ইলিয়াস ইসলাম শিখার জন্য তাবলীগ নামের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলে দিয়ে গেছেন। আহঃ কতই না চমৎকার খিদমত। কাজেই যারা ইসলামের কল্যাণ চায় তারা মাওঃ ইলিয়াস (রহ) এর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তিনি দ্বীনের বিরাট খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। যারা তার বিরোধিতা করে তারা ইসলামের দুষমন। কারণ তাবলীগের মাধ্যমে মানুষ দ্বীন ইসলাম শিখুক, ইবাদাত বন্দেগির পাবন্দ হউক, পাক্কা ইমানদার হউক- এটা তারা চায় না। তাদের ভাব গতিক হচ্ছে মাদরাসার বাইরে এই বিশাল জনগোস্টি ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে বেঈমান হয়ে মরুক। কাজেই এদেরও বিচার হওয়া উচিত।
এখন প্রশ্ন হল, দেওবন্দি মুরুব্বিগণ, রেজাখান বেরেলভী, মাওঃ মওদূদী, মাওঃ ইলিয়াস, ইবনে ওয়াহাব নজদী এইসব মনিষীগণ তাগুতের পক্ষে কাজ করতেন নাকি ইসলামের পক্ষে কাজ করতেন, তারা কি উম্মাহর হেদায়েতের চেষ্টা করেছেন নাকি গুমরাহ করার চেষ্টা করেছেন, তারা কি ইসলামের পক্ষে নাকি বিপক্ষে কাজ করতেন, তারা ইসলামের খিদমতে জীবন উতসর্গ করেছেন কিনা, তারা নামায রোযা হজ্ব যাকাত ইত্যাদি আমল ইবাদাত করতেন কিনা, তারা আল্লাহ্র খাটি বান্দাহ ছিলেন কিনা, সবাই উত্তর দিন। সকলেই সমস্বরে বলল, হ্যাঁ তারা আল্লাহ্র খাটি বান্দাহ ছিলেন। মোজাহিদ বলল, ‘বেশ তো, তারা যদি আল্লাহ্র খাটি বান্দা হয়ে থাকেন তাহলে তুই বেটা কে যে তাদের সমালোচনা করবি, আল্লাহ্র বান্দাদের অবজ্ঞা করার অথরিটি কোথায় পাওয়া গেল? কাজেই বুঝা গেল যারা ঐসব মনিষীদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে এরা আসলে শয়তান। আল্লাহই এদের বিচার করবেন।
একজন কলেজ ছাত্র দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, কিন্তু তাদের নামে যে একেকটা ফেরকা হয়েছে, তাদের অনুসরণেই তো উম্মত বিভক্ত হয়েছে- এসবের দায় কি তাদের উপর বর্তাবে না? মোজাহিদ বলল, না তাদের উপর বর্তাবে না। কারণ তাদের নামে ফিরকা করার জন্য তারা বলে যাননি। যেমন দেওবন্দি মুরুব্বিগণ একথা বলে যাননি যে, দেওবন্দের মধ্যেই একমাত্র ইসলাম, এর বাইরে ইসলাম নাই। মাওঃ ইলিয়াস বলে যাননি যে, তাবলীগই একমাত্র নবীওয়ালা কাজ এর বাইরে নবীওয়ালা কাজ নেই। মাওঃ মওদূদী বলে যাননি যে, তিনি যা লিখেছেন সব ভুলের উর্ধ্বে, তার রচনাবলিই একমাত্র ইসলাম। যদি তারা এরুপ বলে যেত তবে তারা দোষী সাব্যস্ত হত। কিন্তু তারা সাধারণ ভাবে ইসলামের খিদমত করে গেছেন, ফিরকাবাজীর অনুমতি দিয়ে যাননি। তবে পরবর্তি প্রতিভাহীন, মুর্খ ও গুমরাহ লোকেরা তাদের নামে ফিরকা করেছে। আর তা করেছে নিজেদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব ফলাও করার জন্য, কারণ এরা নিজেদের প্রতিভায় কর্তৃত্ব পাওয়ার উপযোগী নয় বিধায় ঐসব মনিষীদের ঘাড়ে চড়ে নেতৃত্বের পথ অবলম্বন করেছে। কাজেই এই পরবর্তি ফেরকাবাজরা হল প্রকৃত দোষী।
যাই হউক, আমি এই কথাগুলি বললাম ফিরকাবাজ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে। তারা স্ব স্ব ফির্কার মুরুব্বীদের নবীর স্থলাভিষিক্ত করে নিয়েছে কিন্তু প্রতিপক্ষ ফিরকার মুরুব্বীদের শয়তানের মত গালিগালাজ করে, এরা অপরাধী। অতিভক্তি যেমন চোরের লক্ষণ তেমনি আল্লাহ্র বান্দাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা মানে জাহান্নামের পথে দৌড়ে যাওয়া। ইসলামের বিধান হল খাইরুল উমুরি আওসাতুহা, অর্থাৎ সর্বাবস্থায় মধ্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে। ঐসব মুরুব্বীদের অন্ধের মত নিঃশর্ত আনুগত্য করা যাবে না। এটা হারাম, নবী রাসূল ব্যতীত কারো নিঃশর্ত আনুগত্য জায়েয নেই। রাসূল (সাঃ) কোন মনিষীর অনুসরণ করতে বলেননি, তিনি শুধু কোরান সুন্নাহর অনুসরণ করতে বলেছেন।
কাজেই আমাদের এমন এক্বীন থাকতে হবে যে, ঐসব মনিষীগণ আল্লাহ্র খাটি বান্দা ছিলেন কিন্তু নবী রাসূল ছিলেন না। আমাদের মতই সাধারণ মানুষ ছিলেন। আর সাধারণ মানুষ হিসাবে তারা ভুল করেছেন, করতে বাধ্য। কাজেই আমরা শুধু কোরান সুন্নাহর অনুসরণ করব, তাদের অনুসরণ করার দরকার নাই। আমিও তাদের মতই মানুষ, কাজেই তাদের অনুসরণ না করে তারা যেভাবে দ্বীনের খেদমত করে আল্লাহ্র খাটি বান্দা হয়েছেন আমিও তদ্রুপ দ্বীনের খেদমতে নিজেকে উতসর্গ করে আল্লাহ্র খাটি বান্দাহ হব। আর একান্তই অনুসরণ করার দরকার হলে তাদের ভুল গুলি বাদ দিয়ে অনুসরণ করব। অন্যথায় কারো আনুগত্য করা হারাম, বিলকুল হারাম।
পক্ষান্তরে, যারা আল্লাহ্র ঐসব খাটি বান্দাহদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তারা উম্মাহর শত্রু ও জাহান্নামী। কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে আল্লাহ্র অলিদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে যেন আল্লাহ ও রাসূল এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল। কাজেই সাধু সাবধান, ভণ্ডামি রেখে আমরা সবাই খাটি মুসলমান হয়ে যাই তাহলে ঐক্যও হয়ে যাবে, আর আমাদেরও মুক্তি জুটবে।
অবশেষে মোজাহিদ বলল, যাই হউক আমার আলোচ্য বিষয় ছিল ঐ বিতর্কিত তিনটি বিষয়- যেগুলি শিরক ও কুফর সীমার মধ্যে নয় বরং জায়েয সীমার মধ্যে বিতর্ক। কাজেই এগুলি সহই আমি ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি, তাদেরকে ঐক্যের উপর বাধ্য করার দাবী জানাচ্ছি।
একজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে বললেন, না এসব ভাওতাবাজি আমরা মানি না। ভুল ভুলই, এসব ভুল বাদ দিতে হবে। এগুলি আমাদের ইহকালে পরকালে কোন কাজে লাগবে না। আচ্ছা যারা এখানে উপস্থিত আছেন তারা আমার কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দিন। বিবাহিতরা বলেন, বিয়ের সময় কি আমাদেরকে এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, নবীগণ মা’সুম কিনা, সাহাবাগণ মিয়ারে হক কিনা, রাসূল (সাঃ) গায়েব জানেন কিনা? সবাই সমস্বরে বলল, না না এমন আজগুবি প্রশ্ন করা হয়নি। ডাঃ বলল, আমাদের মেয়েদের বিয়ের সময় কি এমন প্রশ্ন করা হয়? সবাই বলল, না না এমন প্রশ্ন হয় না। ডাঃ আবার বলল, যারা কম শিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিত তারা উত্তর দিন, আপনার কোন পাবলিক পরীক্ষায়, বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশন টেস্টে, বি সি এস পরীক্ষায় বা চাকরির ইন্টার্ভিউয়ে কোন দিন এ জাতীয় প্রশ্ন হয়েছে? সবাই বলল, না না।
ডাঃ বলল, তাহলে কি জন্ম মৃত্যু বিয়ে আমল ইবাদত ইত্যাদির ক্ষেত্রে ঐ বিতর্কিত বিষয়গুলি কোন কাজে লাগে? সবাই বলল, না না কোন কাজে আসে না। ডাঃ বলল, তাহলে কি আল্লাহ তা’লা পরকালে ঐ জাতীয় কিছু প্রশ্ন করবেন নাকি আমলের বিচার করবেন? সবাই বলল, না না, আল্লাহ্ এ জাতীয় প্রশ্ন করবেন না বরং এ জাতীয় বিতর্ক সৃষ্টি করে যারা উম্মাহকে বিভক্ত করেছে, ফিরকাবাজি করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। ডাঃ বলল, ঠিক হ্যায়, নবীগণ মা’সুম কিনা, সাহাবাগন অনুসরণ যোগ্য কিনা, রাসূল (সাঃ) গায়েব জানতেন কিনা- এ বিষয় গুলি ইহকাল ও পরকালের কোন প্রয়োজনীয় বিষয় নয়। এগুলি হল ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংসের জন্য প্রয়োজনীয় তত্ত্ব বা উপাদান। আর এ কাজটা হল শয়তানের।
কাজেই যারা এগুলি জন্ম দিয়েছে আর বিতর্ক জিইয়ে রেখে উম্মাহকে বিভক্ত করে রেখেছে এরা হল সাক্ষাত আযাযিল ও মুর্তিমান শয়তান। আর এ শয়তানদের যদি আমরা ধ্বংস না করি তাহলে ইসলাম ও উম্মাহও মুক্তি পাবে না, আর আল্লাহও আমাদের ক্ষমা করবেন না, আপনারা কি বলেন? সবাই সমস্বরে চিৎকার করল, অবশ্যই, এদের ক্ষমা করলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন না। ডাঃ বলল, কাজেই আঙ্গুলটা সোজা করে বলছি, যেসব ফিরকায় ঐসব ভুল আছে সেগুলি বাদ দিয়ে উম্মাহর সাথে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। অন্যথায় ওদের হত্যা করা হবে। কারণ ইসলাম কারো কাছে ইজারা দেয়া হয়নি, ইসলাম কারো বাপ দাদার সম্পত্তি নয় যে, যার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই তসরুফ করবে আর ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করবে। কাজেই আমরা ঐসব ফিরকাবাজ ও ফিৎনাবাজদের মৃত্যুদণ্ড চাই।
তারপর সে চেয়ার চাপরিয়ে মজলিসে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করল আর চিৎকার করতে লাগল, ‘ঐ ফিরকাবাজরা ইসলামের জারজ। এরা ইসলামের মুখোশ পরে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে, এরা আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) এর শত্রু, উম্মাহর রক্তে এদের হাত রঞ্জিত হয়ে আছে, এদের হত্যা ব্যতীত উম্মাহর মুক্তি জুটবে না, এরা ইসলামের লেবাস পরে শয়তানের দায়িত্ব পালন করছে, এদের ক্ষমা করলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন না........ তার চিৎকার চলতে লাগল। উত্তেজনায় আসরের সবাই দাঁড়িয়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করল, আমরা ফেরকাবাজদের মৃত্যুদণ্ড চাই, ফাসি চাই, আপনি ওদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করুন। হাসান মুসান্না দু’হাত বাড়িয়ে তাদেরকে শান্ত করে বললেন, মৃত্যুদণ্ডটা তো আর মামার হাতের মুয়া নয় যে চাইলেই দিয়ে দেয়া যায়। এর পক্ষে কোরান হাদীসের দলীল থাকতে হবে, যদি থাকে তাহলে পেশ করুন। তখন আর আমাকে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করতে হবে না, কোরান হাদীসের ঘোষণাই যথেষ্ট হবে। ডাঃ বলল, আমি তো কোরান হাদীস জানি না, মোজাহিদ সাব দাঁড়ান, আপনি দলীল পেশ করুন।
বিষয়: রাজনীতি
১০৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন